বিশেষ সংবাদ
করোনার ঢেউয়ের মধ্যে ‘গ্রন্থমেলা’: লোকসান গুনছেন প্রকাশকরা
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে চলতি বছরের বইমেলা ছিল অন্যান্য বছরের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র।
বইমেলায় স্টল এবং বই থাকলেও দর্শনার্থী এবং বই কেনার অগ্রহী মানুষ খুবই কম।
সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকায় এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ বইমেলার পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে, যে কারণে প্রকাশকরা বিশাল লোকসানের আংশঙ্কায় রয়েছেন।
বিশেষ করে ছোট প্রকাশকদের পক্ষে এটি কঠিন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সুপারিশ উপেক্ষা করে বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজন করেছে।
মেলার বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছে, খুব কমই বই বিক্রি হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবশেষে বইমেলা শুরু
তারা জানান, বেশিরভাগ লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন, বই কেনার জন্য নয়।
একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘দর্শনার্থী, লেখক এবং প্রকাশকদের সাধারণ ভিড় অনুপস্থিত। বিক্রয় হতাশাজনক।’
১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন, আজ প্রজ্ঞাপন
করোনাভাইরাসের লাগাম টেনে ধরতে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে আজ প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ‘দেশব্যাপী করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নতুনভাবে কঠোর লকডাউন আসছে।’
আরও পড়ুন: ভয়ংকর হচ্ছে করোনা: পরিপূর্ণ লকডাউনে যাচ্ছে বাংলাদেশ
‘আজ দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে। কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই আমরা ১৪ এপ্রিল থেকে পরিপূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’ বলেন তিনি।
১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হলে মাঝে ১২-১৩ এপ্রিল এই দুইদিনের বিষয়ে কী নির্দেশনা থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২ ও ১৩ এপ্রিল বিষয়ে লকডাউন নিয়ে রবিবার যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে সেখানে সব নির্দেশনা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, 'এই অবস্থায় মানুষের ঘরে থাকাটাই জরুরি। মানুষ যদি এই কয়েকদিন ঘর থেকে না বের হয় এবং যে যেখানে আছে এভাবে থাকতে পারে তাহলেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুহার নিম্নমুখী হয়ে আসবে।'
আরও পড়ুন: ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের চিন্তা করছে সরকার: কাদের
তিনি আরও বলেন, তাই মানুষকে কীভাবে ঘরে রাখা যায় সরকার সে ব্যবস্থা করছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে গ্রাম, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনগুলোতে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ এই লকডাউনে যাতে তাদের খাবারের সমস্যা না হয় এবং খাবারের জন্য যাতে ঘর থেকে বের হতে না হয় সে বিষয়ে সরকার আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এসব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মানুষ তো সরকারের নির্দশনা মানছে না। মানুষকে সরকারের নির্দশনা মানাতে সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনী নামানোর কোনো তথ্য এখনও আমি পাইনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। আর যদি এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আসে তাহলে যথাসময়ে নিশ্চয়ই জানতে পারবেন।'
এর আগে শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইউএনবিকে বলেছিলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত অত্যন্ত কঠোর লকডাউন আসছে।
আরও পড়ুন: সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি: বিশ্বে মৃত্যু ২৯ লাখ ১৪ হাজার ছাড়াল
তিনি আরও বলেন, জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়া সব অফিস ও গার্মেন্টস শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে। লকডাউনে কোনো ধরনের যানবাহন চলবে না।
২০ তারিখের পর কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি দেখে সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ২০ তারিখের মধ্যেই জানিয়ে দেয়া হবে।'
করোনাভাইরাসের ২য় ঢেউয়ে সংক্রমণবৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশ শপিংমল, দোকান-পাট, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ গনণপরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
সরকারের প্রজ্ঞাপনে ১১ দফার নির্দশনায় সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, ব্যাংক জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে খোলার রাখার কথা বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: দেশব্যাপী চলমান লকডাউনকে 'অবৈজ্ঞানিক ও আংশিক' মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
কোভিড-১৯ আক্রান্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গণনপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করলেও সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত বুধবার থেকে ঢাকাসহ দেশের সকল সিটিতে বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।
এরপর কয়েকদিন ধরে শপিংমল ও দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে দোকান মালিক কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার লকডাউনের মধ্যেই ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শপিং ও দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয়।
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যা একদিনে সর্বোচ্চ।
এর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৬৬১ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে আরও ৫ হাজার ৩৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে।
সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় ২৪৩টি পরীক্ষাগারে ২৫ হাজার ১৮৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ পরীক্ষা করা হয় ৩৬ হাজার ৭৭টি নমুনা।
আরও পড়ুন: করোনায় একদিনে মৃত্যুতে আগের সব রেকর্ড চুরমার, শনাক্ত কমেছে
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০.৪৯ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৮৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ভয়ংকর হচ্ছে করোনা: পরিপূর্ণ লকডাউনে যাচ্ছে বাংলাদেশ
জনগণ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সরকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরিপূর্ণ লকডাউনে যাচ্ছে।
‘১৪ এপ্রিল থেকে জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত অত্যন্ত কঠোর লকডাউন আসছে,’ শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইউএনবিকে এ কথা বলেন।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশ শপিংমল, গণপরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার।
সরকারের প্রজ্ঞাপনে ১১ দফার নির্দেশনায় সরকারি ও বেসরকারি অফিস আদালত, ব্যাংক জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখার কথা বলা হয়েছিল।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করলেও কর্মজীবীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত বুধবার থেকে ঢাকাসহ দেশের সকল সিটিতে বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।
এরপর কয়েকদিন ধরে শপিংমল ও দোকান খোলার দাবিতে দেশব্যাপী
দোকান মালিক ও কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার লকডাউনের মধ্যেই ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শপিং ও দোকান পাট খোলা রাখার অনুমতি দেয়।
গত সপ্তাহে দেশে রেকর্ড পরিমান করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে। কোভিড নির্দেশনা না মানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
ফরহাদ বলেন, লকডাউনের সময় মানুষ যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে।
‘কেউ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে পারবে না। অতি জরুরি সেবা ছাড়া কোনোভাবেই মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না। সে ব্যবস্থা করা হবে,’ বলেন তিনি।
কবে প্রজ্ঞাপন জারি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশা করছি আগামী রবিবার বা ১৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।’
শুক্রবার কোভিড-১৯ জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং মন্ত্রিসভার নির্দেশনা জনগণ মানছে না।
দুই সপ্তাহের পরিপূর্ণ লকডাউন ছাড়া পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না বলে জানায় কমিটি।
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ হাজার ৪৬২ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এনিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জনে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে করোনায় আরও ৬৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৫৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় ২৪৩টি পরীক্ষাগারে ৩১ হাজার ৮৭৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ পরীক্ষা করা হয় ৩১ হাজার ৬৫৪টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৩.৫৭ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের চিন্তা করছে সরকার: কাদের
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৫১১ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪১ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমকি ৪০ শতাংশ।
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনা: ফেসবুক-ইউটিউবে ব্যস্ত ঘরবন্দী শিক্ষার্থীরা, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। শিশু, কিশোর ও তরুণদের ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটছে গৃহবন্দী জীবন। ঘরে কী করছে শিক্ষার্থীরা? কেমন করে কাটছে তাদের সময়?
একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পড়ার বইয়ের সাথে তাদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। লেখাপড়ায় মনোযোগও নেই আগের মতো। পুরো সময় কাটছে টিভি দেখে আর স্মার্ট ডিভাইসে। অনেকের আচার ব্যবহারেও এসেছে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ অভিভাবকেরা।
এই অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের সামনের দিনগুলো কেমন হতে পারে? জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এ এম নাজমুল আহসান বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের শরীরে যেমন পুষ্টি দরকার, তেমনি মস্তিকেরও পুষ্টি দরকার হয়। সারা দিন ফেসবুক-ইউটিউবে থাকলে মস্তিকের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। চিন্তায় পরিবর্তন আসে। ভালো চিন্তা বাদ দিয়ে খারাপ চিন্তাগুলো মস্তিকে ভর করে। আচার-আচরণ বদলে যায়। মানুষের সাথে ব্যবহারও খারাপ হতে থাকে। ফলে এখনই শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিশেষ নজর দিতে হবে ঘরে বন্দী থাকা তরুণ শিক্ষার্থীদের দিকে। ’
আরও পড়ুন: খুলনায় কথিত জিনের বাদশা গ্রেপ্তার
নিরালা আবাসিকের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমার ছেলে বাপ্পী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছুটির এই পুরো সময়টাতে আমরা চেষ্টা করেও তাকে বইয়ের কাছে নিতে পারিনি। সারা দিন নিজ রুমে বসে হয় ল্যাপটপে নতুবা মোবাইল ফোনে মাথা গুঁজে থাকে। প্রতিদিন শেষরাতে ঘুমাতে যায়, বিকালে ঘুম থেকে ওঠে। ওর কোনো কাজে বাধা দিলেই মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করে। কেমন যেন খিটমিটে স্বভাবের হয়ে গেছে ছেলেটা।’
একই কথা জানালেন বড়মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী আনিসুর রহমান। তার ছেলে আটরা শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ সময়ই ছেলের সময় কাটে নিজের ঘরে। সেখানে কী করে কিছুই জানি না। এখন বড়ো হয়েছে, বেশি কিছু বললে মাইন্ড করে। কিন্তু লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা দিন ফেসবুক নিয়ে থেকে ওর যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু কী করব ?’
বানিয়া খামার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, স্কুল পর্যায়ে অনলাইনে আমার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু ক্লাস হচ্ছে, এটা ভালো দিক। প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পৃথক ফেসবুক গ্রুপ আছে। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোনও আছে। পড়াশোনা বাদ দিলাম, ওই গ্রুপগুলোতেও যদি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত এ্যাকটিভ থাকে, তাহলেও কিন্তু তাদের মানসিক অবস্থাটা কিছুটা হলেও ভালো রাখা যেত।
আরও পড়ুন: খুলনায় ঘুমন্ত শিশুকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে সৎ মা আটক
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের রক্ষায় আমাদের শিক্ষকদের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এমন অসংখ্য অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছেন।
করোনাকালীন অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সময় কাটছে মোবাইল, ল্যাপটপ আর টিভি দেখে। অনেক তরুণ ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে । সারাদিন ইন্টারনেটে থেকে পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকছে অনেক তরুণরা।
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল কবীর বলেন, ‘এখনকার তরুণরা বেশ সেনসেটিভ। তাদেরকে বেশি বিরক্ত না করাই ভালো। পাশাপাশি তাদের লেখাপড়ার মধ্যেও রাখতে হবে। টিভি দেখা বা ঘরের মধ্যে অন্য ধরনের খেলাধুলার (লুডু, দাবা, ক্যারাম) ব্যবস্থা করতে হবে। এখন আপনি যদি নিজেই সারা দিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে তো আপনার সন্তান সেটাই করবে। করেনাকালীন এ সময়ে সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দেয়া প্রয়োজন, এটা কিন্তু ভালো সুযোগ। পাশাপাশি তাদের সাথে সদ্ব্যবহারও করতে হবে।
গমের বাম্পার ফলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাষিদের মুখে হাসি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে গমের ফলন ও দর ভালো। বিঘা প্রতি ফলন গড়ে ১৪ মন, আর বাজার দর প্রতি মন গম ১ হাজার ৫০ টাকা। ফলন ও দর দুটোই ভালো পেয়ে খুশি গম চাষিরা।
সদর উপজেলার কয়েকটি ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে গম কাটা প্রায় শেষের দিকে। চাষিরা ব্যস্ত ক্ষেত থেকে ফসল ঘরে তুলতে।
চাষিরা জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গমের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৬ মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গমের বাজার দর বর্তমানে প্রতি মন ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা।
চাষিরা বলছেন, সার বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম কমালে তাদের জন্য ভালো হতো।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় শত্রুতা করে বোরো ধানের ৬ বিঘা বীজতলা নষ্টের অভিযোগ
সদর উপজেলার যাদুপুর এলাকার গম চাষি সুমন আলী বলেন, আমি প্রতি বছর গম চাষ করি। গতবারের থেকে এবারে গমের ফলন ভালো হয়েছে। কারণ গতবার বৃষ্টি বাদলের কারণে তেমন যত্ন নিতে পারিনি। এবার আবহাওয়া ভালো ছিল, ফলনও ভালো পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘গতবার ফলন হয়েছিল প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৩ মন। এবার আমি ১২ মন, ১৪ মন, ১৬ মন পর্যন্ত গমের ফলন পেয়েছি। বিঘায় খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। গতবার ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা মন করে বিক্রি করেছি। এবার জমিতেই বিক্রি করেছি ১ হাজার, ১ হাজার ৫০ টাকা মন। ফলন দাম দুটোই ভালো থাকায় এবার গম চাষ লাভজনক হয়েছে।’
আরও পড়ুন: হাওরে ৯৯ ও সারা দেশে ৩৯ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ
আরেক চাষি বলেন, বর্তমানে দামটা মন্দ না, কিন্তু সার, বীজ, কীটনাশক, হালচাষ, পানি এতে উৎপাদন খরচটা বেশি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম হলে আরও ভালো হতো।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার গম চাষি নেজাম উদ্দিন বলেন, এবার আমি ৬ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছি। এরই মধ্যে গম কাটা হয়ে গেছে। এ বছর আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকায় বিঘাতে ১৫ মন করে ফলন হয়েছে। গমের দর পেয়েছি এক হাজার টাকা মন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন করেছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, এবার জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর থেকে ৪১০ হেক্টর বেশি। গম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে গম বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। চাষিরা বারি গম-৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৩ জাতের গমের আবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলোনায় চাষিরা এবার ফলন ভালো পেয়েছেন। গড়ে ১৩, ১৪ মন ফলন পাওয়া গেছে। বর্তমানে গম কাটাই মাড়াই শেষের পথে। গমের বাজার মূল্য বর্তমানে ১ হাজার ৫০ টাকা মন।
দেশব্যাপী চলমান লকডাউনকে 'অবৈজ্ঞানিক ও আংশিক' মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধের আশায় দেশব্যাপী জারি করা ৭ দিনের লকডাউনকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা 'অবৈজ্ঞানিক ও আংশিক' মনে করছেন যেখান থেকে কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তারা বলছেন, লকডাউনের প্রথম দিনে কাঁচাবাজার এবং অন্যান্য স্থানে জনগণের ব্যাপক সমাগম, চলাচল ও জনসমাবেশ দ্বারাই বোঝা যায় জনগণ এই 'আংশিক' শাটডাউনটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়নি যেহেতু একই সাথে অফিস, কারখানা এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলা খোলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সেই আলোচিত ইউএনও এবারও লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে
বিশেষজ্ঞরা জরুরি পরিষেবা ব্যতীত সকল অফিস, কল-কারখানা, বইমেলা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ১৪ দিনের একটি সম্পূর্ণ লকডাউন কার্যকর করার এবং কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে এটিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার উভয়েরই ঊর্ধ্বগতি কমিয়ে আনার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে এক সপ্তাহব্যাপী দেশব্যাপী লকডাউন চলছে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এটিই বাংলাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক লকডাউন। গত বছরের ২৬ মার্চ সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন কার্যকর করার পরিবর্তে পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল।
আংশিক লকডাউন নিরর্থক
ইউএনবির সাথে আলাপকালে ডব্লিউএইচও-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রাক্তন উপদেষ্টা প্রফেসর মুজাহেরুল হক বলেন, 'সরকার কল-কারখানা, অফিস এবং এমনকি বইমেলা খোলা রাখায় আমরা এটিকে লকডাউন বলতে পারি না। এটি জনসাধারণের চলাচলকে সীমাবদ্ধ করার বৈজ্ঞানিক উপায় নয়।'
আরও পড়ুন: দেশে ৭ দিনের লকডাউনে যানজট কম রাস্তাঘাটে
তিনি বলেন, লকডাউন মানে পুরোপুরি মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। "লকডাউন মানে সবকিছু বন্ধ হয়ে থাকবে। কেবল কয়েকটি জরুরি পরিষেবা, ওষুধের দোকান এবং নির্দিষ্ট কিছু বাজার যেখান থেকে জনগণ খাবার কিনতে পারবে তা খোলা থাকতে পারে।"
মুজাহেরুল বলেন, সরকারের জারি করা ৭ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা লকডাউনের নীতি ও সংজ্ঞার সাথে মেলে না। "এটি একটি অবৈজ্ঞানিক, অপরিকল্পিত এবং আংশিক লকডাউন। এটি ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জাতিকে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করবে না।"
জাতীয় প্রযুক্তি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, লকডাউন হলো জরুরি সেবা ব্যতীত সবকিছু বন্ধ করে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার সর্বজনস্বীকৃত ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছে সরকার অনেক কিছুই খোলা রেখে আংশিক লকডাউন কার্যকর করেছে। সারাদেশে নয়, কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে একটি আংশিক লকডাউন কার্যকর করা যেতে পারে। এটি কেবল শক্তি অপচয়, অর্থের অপচয়। এর মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না।'
আরও পড়ুন: লকডাউন মানা হচ্ছে না কেরানীগঞ্জে, গণপরিবহনসহ সকল যান চলছে
অধ্যাপক নজরুল আরও বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য কোনো আইন ও এর কার্যকর প্রয়োগ না থাকায় জনগণ লকডাউনটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়নি।
লকডাউন ১৪ দিনের হওয়া উচিত
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এম এইচ চৌধুরী (লেনিন) বলেছেন, ভাইরাসের সংক্রমণকে কমিয়ে আনতে কমপক্ষে ১৪ দিনের সম্পূর্ণ একটি লকডাউন কার্যকর করা উচিত।
তিনি জানান, মানবদেহে করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশনের সময়সীমা ২ সপ্তাহ। তাই ভাইরাসের সংক্রমণ চক্রটি ৭ দিনের লকডাউন দিয়ে ভেঙে ফেলা যায় না।
লেনিন বলেন, জনগণ প্রথম দিনেই সরকারের জারি করা ৭ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন করেছে। কেননা তাদের মধ্যে এই শাটডাউন নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
আরও পড়ুন: করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি: আরও ৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত, মৃত্যু ৫২
'আমি মনে করি সরকারের অবিলম্বে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। আইন প্রয়োগকারীদের তদারকি বাড়াতে হবে যাতে কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে আসতে না পারে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত যাতে মানুষ অকারণে বাইরে ঘোরার সাহস না করতে পারে। নতুবা, আমরা এই শিথিল লকডাউন থেকে কোন ফলই পাবো না।'
জনপ্রতিনিধিদের জড়িত করা
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিটি স্তরের মানুষের বিশেষত জন প্রতিনিধিদের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা ব্যতীত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষে এককভাবে এই লকডাউন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। 'তবে লকডাউন বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিদের জড়িত করার জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।'
তিনি বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে এবং জনসাধারণের অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ করতে প্রতিটি এলাকায় একটি মনিটরিং টিম গঠন করা উচিত।
আরও পড়ুন: করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু: প্রধানমন্ত্রী
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এই লকডাউনে কঠোরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া দরিদ্রদের পাশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কীভাবে দাঁড়াতে পারে সে বিষয়ে সরকারকে নির্দেশনা দেয়া উচিত। "বাড়িতে খাবার না থাকলে লোকেরা বেরিয়ে আসবেই।"
এছাড়াও এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে জনগণ কীভাবে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করবে সে সম্পর্কেও একটি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত।
'বড় ভুল'
আটটি বিভাগের জন্য গঠিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেছেন, লকডাউনের আগে জনগণকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে সরকার ভুল করেছে। 'লকডাউনের আগে ভাইরাস বহনকারী অনেক লোক বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিল যা সারা দেশে কেবল ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়বে।'
তিনি বলেন, লোকদের তাদের গ্রামের বাড়িতে যেতে না দেয়ার জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। 'যে যেখানে অবস্থান করছেন সেখানে থাকার জন্যই এটি প্রয়োগ করা হয়েছে যাতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে না পড়ে।'
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, 'লকডাউনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই সরকারের উচিত ছিল পরিবহন পরিষেবা বন্ধ করা। ফলে লোকেরা ঢাকা ছাড়তে পারত না।'
লকডাউন বাস্তবায়ন
ডা. ফয়সাল বলেন, 'লকডাউন কার্যকর করার আগে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। ১০টি মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত সরকার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল।'
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সোমবার থেকে মাঠে থাকার ঘোষণা ডিএসসিসি মেয়রের
তিনি বলেন, সরকার লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা না করেই কার্যকর করেছে। "কিছু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে লকডাউনটিকে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ এখনও রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, 'দোকান ও শপিংমল এবং পরিবহন ছাড়া সবকিছুর খোলা রেখে এই লকডাউনের যৌক্তিকতা কী? বইমেলা অকারণে খোলা। এই মেলা এখনই বন্ধ করা উচিত। প্রয়োজনে এটি ভার্চুয়ালি চালানো যেতে পারে। মেলা ও অফিস খোলা রেখে জনগণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।'
মাগুরায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
চলতি বছর মাগুরার চার উপজেলায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার চার উপজেলার মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ফলে জেলার কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
কৃষি বিভাগ বলছে, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে বেশি লাভবান হবে।
জেলায় মোট পেঁয়াজ চাষ হয়েছে দশ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে সদরে এক হাজার ১৯০ হেক্টর, শ্রীপুরে ছয় হাজার ৩৫০, শালিখায় এক হাজার ১৪০ এবং মহম্মদপুরে এবং হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এবার হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ১৪ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১.৪৭ টন।
জেলায় এবার বারী ১, ৪, তাহেরপুরী, লাল তীর, সুপার এবং কিং জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের মর্কদ্দখোলা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে জমিতে পেঁয়াজ ভালো হয়েছে। আমি এবার দুই বিঘা জমিতে লাল তীর জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পৌষ মাসের মাঝামাঝিতে জমিতে বীজ বপন করেছি। পাশাপশি সার ও সেচ দিয়েছি। পেঁয়াজের চারা বের হলে জমিতে বাড়তি যত্ন নিয়েছি। সময়মতো সেচ ও সার দেওয়ার ফলে আমার পেঁয়াজ ভালো হয়েছে। চলতি চৈত্র মাসে পেঁয়াজ জমি থেকে তুলতে শুরু করেছি। এবার বিঘায় ৮০-৯০ মণ পেঁয়াজ পাব বলে মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বীজ, সারসহ সব মিলিয়ে আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন প্রতি মণ পেঁয়াজ ৯৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হতে পারে।’
উপজেলার জয়নগর গ্রামের নির্মলকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এবার সুপার জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি। এ জাতের পেঁয়াজের রঙ, আকার ও গঠন খুবই ভালো। এটি দেশি জাতের পেঁয়াজের মতো। আশা করছি ভালো আয় করতে পারব।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকার কারণে জেলায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকার কারণে পেঁয়াজ চাষিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলার চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে এ চাষের জন্য জেলার কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করা হবে।’
জীবনযুদ্ধে হার না মানা প্রতিবন্ধী মাজহারুল, অনেক ঘুরেও পাননি সরকারি ভাতা
মাজহারুল ইসলামের (৩০) জন্ম থেকেই দু হাত, দু পা আঁকাবাঁকা। সমাজের সবাই কেমন যেন তুচ্ছ করে তাকায়। ছোটবেলা থেকেই মনটা বিধ্বস্ত। কিভাবে চলবে জীবন! কে ভালোবাসবে!
জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে বসে বসে মোবাইল সার্ভিসিং কাজকে বেছে নিয়েছেন জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী এই মাজহারুল ইসলাম। বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ও নিজের আগ্রহে শিখেছেন মোবাইল মেরামতের কাজ। এরপর ধার-দেনা করে মোবাইল সাভির্সিংয়ের দোকান দিলেন বাড়ির আঙ্গিনাতেই, অভয়পাড়া রাস্তার পা্শে। তার নিজ নামেই রাখা হয়েছে দোকানের নাম ‘মাজহারুল মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার’।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী ও চাকরিদাতাদের সেতুবন্ধনে কাজ করবে ‘ইমপোরিয়া’: প্রতিমন্ত্রী পলক
চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের (৫ নং ওয়ার্ড) অভয়পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান মোল্লার ছোট ছেলে মাজহারুল। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। স্থানীয় অভয়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর সংসারের হাল ধরেছেন। বাবা-মায়ের কথায় ২০১৬ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সংসার ছেড়ে চলে যান তার স্ত্রী। গত বছর মারা যান তার বাবা।
দুঃখ করে বললেন, দীর্ঘদিন একটি প্রতিবন্ধী ভাতার বইয়ের জন্য এলাকার মেম্বর,ও চেয়ারম্যানের অফিসে ঘোরাঘুরি করেও তা ভাগ্যে জুটেনি মাজহারুলের। আশা ছেড়ে দেন মাজহারুল ইসলাম। পরে মা ও বড় ভাইয়ের উপদেশে সিদ্ধান্ত নেন কারো কাছে হাত না পেতে নিজ উদ্যোগে কিছু করার। এলাকায় এক বড় ভাইয়ের দোকানে মোবাইল সার্ভিসিং, মোবাইল রিচার্জ ও ইলেক্ট্রনিক্সের যাবতীয় খুঁটিনাটি কাজ শেখেন। পরে নিজেই বাড়ির কাছে ছোট্ট একটি দোকান দিয়েছেন। এতেই ধীরে ধীরে তিনি হয়ে যান মোটামুটি স্বাবলম্বী। প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ টাকার মতো আয় করেন তিনি। পরিবারের কাজেই খরচ করতে হয়। তার এই আঁকাবাঁকা হাতগুলোই এখন রুটি রোজগারের ও পরিবারের একমাত্র চালিকাশক্তি।
আরও পড়ুন: ট্রেনে নারী-শিশু-প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন বরাদ্দে হাইকোর্টের রুল
মাজহারুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে একটা প্রতিবন্ধীর কার্ড পেয়েছেন বটে কিন্তু কোনো ভাতার বই আজও পাননি।
স্থানীয় মেম্বর ইউনুস অফিসের ঝামেলার কথা বলে ভাতার বইয়ের জন্য যেতে বললেন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে।
নিজের কাজ করার ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত যন্ত্রাংশ ও অর্থাভাবে এগিয়ে যেতে পারছেন না মাজহারুল। তাই সরকারি কিংবা বেসরকারি একটু সহায়তা পেলে তিনি দোকানটির কর্মপরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন আর মেয়ে, মা ও বোনকে নিয়ে মোটামুটিভাবে চলতে পারতেন।
মাজহারুল বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও সংসার করার স্বপ্ন দেখি, কিন্তু কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। শুধু আমার চার বছরের মেয়েটা আমায় ভালোবাসে। বিয়ে করলেও বউ আমাকে ছেড়ে চলে যায় আড়াই বছর পরে। রেখে যায় ছোট্ট এ মেয়েটাকে।’
আরও পড়ুন: ভিক্ষা নয়, কাজ করেই জীবন বদলাতে চান প্রতিবন্ধী রহিম
মাজহারুল ইসলামের মা নিলুফা বেগম (৫৬) বলেন, ‘সরকার যদি আমার অসহায় প্রতিবন্ধী ছেলেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা করতেন তাহলে ছোট্ট দোকানটিতে কিছু মালামাল তুলে কোনোভাবে বাকি জীবন পার করে দিতে পারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে পুতুল তো দেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক কাজ করছেন, দেশও এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এর কোনো ফল এখনো পাচ্ছি না। কবে পাবো আশায় আছি।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে কচুয়া উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ আকতারুদ্দীন প্রভাত ইউএনবিকে বলেন, ‘মাজহারুল ইসলাম অফিসে এসে দেখা করলে আমরা তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার জন্য কাযর্কর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
রমজানের আগেই যশোরে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি
যশোরে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এতে স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
যশোরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শাকসবজি বাদে সব পণ্যেরই কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে। বাজারে মসুর ডাল মান ভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৮৫ টাকা, যা আগে বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা প্রতি কেজি, যা আগে বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়।
এদিকে সুপার তেল বিক্রি হচ্ছে (প্রতি কেজি) ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা (প্রতি কেজি), যা আগে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, যা আগে ছিল ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা। ছোলা প্রতি কেজি মান ভেদে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। খেজুর মানভেদে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। দেশি পেঁয়াজ কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। রসুন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ৪৫ টাকা। দেশি শুকনা মরিচ কেজি ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ২২০ থেকে ২৩৫ টাকা। দেশি হলুদ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, আগে ছিল ১৯০ থেকে ২২০ টাকা।
আরও পড়ুন: রমজানের আগেই খুলনায় নিত্যপণ্যের বাজার চড়া
ব্রয়লার মুরগি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি কেজি, আগে ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। প্রতি কেজিতে দাম বেড়ে সোনালি মুরগি (কক) বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। ব্রয়লার ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিচ ৬ টাকা ৫০ পয়সা করে। দেশি হাঁসের ও মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে পিচ ১০ টাকা করে।
ক্রেতা আনোয়ার জাহিদ জানান, আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের বাজার কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি তাদের। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তি দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করেন তারা।
শহরে মুরগি বিক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, এখন মুরগির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে। শীতে ফার্মগুলোতে মুরগি বেশি মারা যায়। এর প্রভাব পড়েছে। এ কারণে এখন বাজারে মুরগির দাম বাড়ছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় বিক্রেতাবিহীন নিত্যপণ্যের দোকান
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং চলছে। তবে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করা হবে। দাম বৃদ্ধি করা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দাবি ক্যাবের
কোভিড-১৯: নিরাপদে নিত্যপণ্য কেনা ও জীবাণুমুক্ত করবেন কীভাবে?
ফরিদপুরে হটলাইনে মিলছে নিত্যপণ্য
কুষ্টিয়ার সচল একমাত্র সিনেমা হলও বন্ধের উপক্রম
কুষ্টিয়া শহরে চারটি, উপজেলায় আটটিসহ জেলায় মোট ১২টি সিনেমা হল গড়ে উঠেছিল। সেই ৬০’র দশকে দুর্বল কাহিনী, গুণগত মান নিম্নমুখী, আকাশ শিল্প’র দাপটের কারণে এখন একটি মাত্র সিনেমা হল টিকে থাকলেও করোনা মহামারির কারণে সেটিও এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার ১১টি হল এখন হাড়ি-পাতিলের গোডাউন আর কমিনিটি সেন্টারে রূপ নিয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরা। ৬০’র দশকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে সর্বপ্রথম গড়ে উঠেছিল ‘রকসি সিনেমা হল’। সেটিও ২০০৩ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে হলটি হাড়ি পাতিলের গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়া শহরের একেবারে প্রাণ কেন্দ্র এনএস রোডে পরিমল থিয়েটার কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেছিলেন ‘কেয়া সিনেমা হল’। সেটি ভেঙে সেখানে গড়ে উঠেছে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন পরিমল টাওয়ার।
আরও পড়ুন: সিনেমা হল খুলছে ১৬ অক্টোবর
‘পৌরসভার বাণী’ সিনেমা হলটি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। এখন সেটি পৌরসভার কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কুষ্টিয়া পৌরসভার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন আজাদ নামে একজন ব্যবসায়ী হলটি পরিচালনা করতেন।
তিনি জানান, ছবির মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হওয়ায় এবং আকাশ সংস্কৃতির দাপটের কারণে দর্শকরা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় অব্যাহত লোকসানের কারণে তিনি হল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
সিনেমা হলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে হলে বুকিং এজেন্টে তদারকির বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। সেই সাথে ট্যাক্স, খাজনা কমাতে হবে বলে জানান বনানী সিনেমা হল কর্মচারী খালেক বারী।
শহরের রকসী সিনেমা হলের মালিক জামাল হোসেন জানান, আগে হলে যে ছবি আসতো সে সময় প্রায় প্রতিটি ছবিই হাউজ ফুল হতো। কিন্তু এখন দর্শকরা আর হলে আসতে চান না। তাই বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরা। তারা সবাই ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র আরাফাত জানান, সবার আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সামাজিক, কাহিনী নির্ভর ও আধুনিক ডিজিটাল প্রিন্টে ছবি নির্মাণ করতে হবে। তবেই বাংলা সিনেমার সেকাল ফিরে আসবে বলে তিনি দাবি করেন।
আরও পড়ুন: সিনেমা হল খুলছে ১৬ অক্টোবর
শহরের ব্যস্ততম বনানী সিনেমা হল মালিক বকুল হোসেন জানান, ভালো কাহিনী নির্ভর ছবি নির্মাণ, সিনেমা হলের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি ঋণ সহায়তা পেলে বন্ধ সিনেমা হলগুলো আবার চালু করা সম্ভব।