বিশেষ-সংবাদ
বাংলাদেশের ‘বিস্ময়কর’ প্রবৃদ্ধি ও ‘অপ্রকাশিত’ উন্নয়ন সফলতার গল্প রয়েছে: ব্রিটিশ প্রধান অর্থনীতিবিদ
পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয়ের (এফসিডিও) অর্থনীতি ও মূল্যায়ন অধিদপ্তরের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও পরিচালক অধ্যাপক আদনান খান বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে 'বিস্ময়কর' প্রবৃদ্ধির 'অপ্রকাশিত' উন্নয়নের সফলতার গল্প বলে মনে করেন, যা সারা বিশ্বে প্রায়ই বলা হয় না।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় অপ্রকাশিত উন্নয়নের সফলতার গল্প বলে মনে করেন। এটি একটি অলৌকিক গল্প। তবে এটি এমন একটি গল্প যা প্রায়শই সারা বিশ্বে বলা হয় না। আমি আমার কর্মজীবনে যেখানেই ছিলাম, সেখানেই আমি বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধির গল্প বলেছি।’
বুধবার(১৩ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মজীবনে উন্নয়ন অর্থনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, উদ্যোক্তা ও সরকারি খাতের সংস্কারের বোঝার দিকে মনোনিবেশ করেছেন অধ্যাপক আদনান। তিনি বলেছেন, তারা বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি দুর্দান্ত উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ বিস্ময়কর গল্পে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও প্রতিফলিত হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। মানব উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য মাত্রায় সহায়তা করে।’
প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া ও অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে। যেমন- শিক্ষা, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা।
আরও পড়ুন: দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিসহ বাংলাদেশের উত্তরণ আনন্দের উপলক্ষ হবে: ওইসিডি
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের সাবেক শিক্ষক এবং স্কুল অব পাবলিক পলিসির একাডেমিক সাবেক ডিরেক্টর অধ্যাপক আদনান বলেছেন, বড় সাফল্য ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য নিজস্ব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে।
তিনি বলেন,‘এটি কেবল চ্যালেঞ্জ নয়, বিশাল সুযোগ নিয়ে আসে। তাই, আরও অগ্রগতির জন্য, নতুন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
আরও অগ্রগতির জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দেন অধ্যাপক আদনান।
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। শুধু শিক্ষিত জনগণ নয়, ভবিষ্যতের অগ্রগতির জন্য একটি লক্ষ্যযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চিহ্নিত করা প্রয়োজন। কারা দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে এবং কাদের কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা দক্ষতার সঙ্গে চিহ্নিত করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘দক্ষতার সঙ্গে এ কাজ সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জের পরবর্তী ধাপ। একইভাবে, তৈরি পোশাকের গল্পটি আমরা সবাই জানি। মূল্য শৃঙ্খল বৃদ্ধির সঙ্গে আরও অগ্রগতি করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, বাংলাদেশের যদি মালয়েশিয়া বা ভিয়েতনামে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আরও কিছু করতে হবে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সামরিক খাতের আধুনিকীকরণসহ উভয় দেশ একসঙ্গে অনেককিছু করতে পারে: মার্কিন কর্মকর্তা মিরা রেসনিক
অধ্যাপক আদনান বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলা করা প্রয়োজন। ‘সেই অর্থ সঠিক প্রকল্পে ব্যয় করার বিষয়েও চ্যালেঞ্জ থাকে, যাকে আমরা পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বলি।’
অধ্যাপক আদনান বলেন, বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় কর ও জিডিপির অনুপাত জিডিপির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
উন্নত দেশগুলোর গড় কর ও জিডিপি অনুপাত জিডিপির ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে কর ও জিডিপির অনুপাত প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় ১০ দশমিক ৭ শতাংশের কম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে, তাই উচ্চমানের সরকারি সেবা প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজস্বের প্রয়োজন হবে।
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ বলেন, জনসেবা প্রদানে রাষ্ট্রের কার্যকারিতার মধ্যে কর ব্যবস্থার উন্নতির চাবিকাঠি রয়েছে।
তিনি বলেছেন, যে দেশগুলো অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহে ভালো করে, তাদের রাজস্ব ঘাটতি বা বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হতে হয় না। তাদের বাইরের সহায়তার উপরও নির্ভর করতে হয় না।
অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘সুতরাং এটি সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যের জন্য ভালো। উচ্চ মানের সরকারি বিনিয়োগ, রাস্তা, সেতু, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।’
বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশ আক্রান্ত হলেও দেশটির এখনও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক আদনান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়: মাইকেল কুগেলম্যান
তিনি বলেন, ‘সুতরাং বাইরের পরিস্থিতি আরও কঠিন। যাই হোক, আমার মতে, সুযোগগুলো ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি।’
অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার চ্যালেঞ্জের প্রকৃতি উপলব্ধি করে এবং এটি খুবই উন্মুক্ত। ‘তারা জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে অন্যান্য দেশ থেকেও শিখতে আগ্রহী।’
উন্নয়ন সহযোগীদের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চাহিদাও পরিবর্তিত হচ্ছে, এজন্য জোর দেওয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক আদনান বলেন, ‘যে দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করছে, সে দেশ ভালো করেছে। এর জন্য প্রত্যক্ষ আর্থিক সহায়তা কম প্রয়োজন এবং নীতিগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বেশি প্রয়োজন। কারণ সঠিক নীতি, সঠিক প্রতিষ্ঠান থাকলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি হবে, যা প্রচুর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে।’
তিনি চলতি সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সঙ্গে পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দলেও ছিলেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি নতুন সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করার কথা ভাবছে।
তিনি অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ভাঙা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং ২০২২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে সর্বোচ্চ ৫৬১ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে (এফডিআই) সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
এ ছাড়া ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য।
আরও পড়ুন: যারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের ‘উপযোগী নয়’ বলে দাবি করছে, তারা কখনোই রাখাইন যায়নি: চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও
পরিত্যক্ত নৌপথ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে বিআইডব্লিউটিএ
সরকার নদী খনন এবং পলি অপসারণের মাধ্যমে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ চলাচলের জন্য নৌপথ পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করলেও ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাত্র সাত হাজার কিলোমিটার নৌপথ চালু করতে পেরেছে।
এর মধ্যে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে। এর মানে হলো পরিত্যক্ত নৌপথের মাত্র ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রের মতে, ৫৩টি অভ্যন্তরীণ নৌপথ খননের একটি মহাপরিকল্পনার অধীনে প্রথম পর্যায়ে ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪টি নৌপথের ১০ হাজার কিলোমিটার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহারকারী জাহাজ মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন বলছে, কাগজে-কলমে সাত হাজার কিলোমিটার নৌপথ সচল করা হয়েছে। যথাযথ ড্রেজিং ও পলি অপসারণের অভাবে অনেক নৌপথ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে।
অধিকারকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে খনন ও পলি অপসারণের কারণে নাব্যতা উন্নয়নে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খনন যন্ত্র ও ড্রেজার স্বল্পতার কারণে আগে নদী খনন ও ড্রেজিংয়ের কাজ ব্যাহত হলেও এখন তেমন কোনো সংকট নেই।
এমওএস সূত্র জানায়, গত ১৪ বছরে বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে অক্সিলিয়ারি ভেসেলসহ প্রায় ৩৮টি নতুন ড্রেজার যুক্ত হয়েছে। এর বহরে ড্রেজারের সংখ্যা এখন ৪৫টি। এছাড়া বেসরকারি কোম্পানির ৫০টিরও বেশি ড্রেজার নদী খননে নিয়োজিত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদে নৌপথের ২৭ লাখ যাত্রীর চাপ পড়বে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে: জাতীয় কমিটি
২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন যে নৌপথে নাব্যতা রক্ষার জন্য ড্রেজিংয়ের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র মাধ্যমে ১৭৮টি নদী পুনঃড্রেজিং করে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ পুনরুদ্ধার করা হবে। এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ মে নেত্রকোনায় ভোগাই-কংসা নদী খনন উদ্বোধনের সময় প্রতিমন্ত্রী একই পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কালীপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্বোধন শেষে তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছিলেন, সরকার সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩টি নৌপথ ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৪টি নৌপথ খনন করে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার করার জন্য ২০০৯ সালে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল এবং ২০১০ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সায়েদুর রহমান স্বাক্ষরিত হিসাব থেকে জানা যায়, উন্নয়ন ও রাজস্ব তহবিলের আওতায় ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে ৮০০ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে একই সংস্থার নদী নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বর্ষায় ৬ হাজার কিলোমিটার এবং শুকনো মৌসুমে ৪ হাজার ৩৪৭ কিলোমিটার নৌপথে নৌযান চলাচল করেছে।
২০১৭ সালে এই অধিদপ্তরের আরেকটি চিঠিতে বলা হয়েছিল যে সরকারের বিশেষ মনোযোগের কারণে নৌপথের দৈর্ঘ্য ৫৪৭কিলোমিটার বেড়েছে।
উপরোক্ত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রথম ছয় বছরে পরিত্যক্ত নৌপথ পুনরুদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএ কোনো সাফল্য পায়নি। এছাড়া দুই দপ্তরের দুই ধরনের তথ্যের কারণে নদী খনন ও পলি অপসারণে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ খনন করা হয়েছে। এছাড়া, সমস্ত নৌপথে প্রয়োজনীয় নাব্যতা উন্নয়ন করা হয়নি। নদী খননের এই ধীর গতির কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অসম্ভব।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন (যাত্রী পরিবহন) সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল ইউএনবিকে বলেন, ‘নদী খনন ও ড্রেজিং কাগজে কলমে করা হয়েছে। আসলে জলপথগুলো পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ৩০ লাখ মানুষ নৌপথে বাড়ি যাবে: জাতীয় কমিটি
এছাড়া গত এক দশকে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার অনেক রুট পরিত্যক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাদল।
তিনি আরও বলেন, তারা ড্রেজিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য একজন লঞ্চ মালিক ও একজন সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ তা উপেক্ষা করেছে।
পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক, পরিবেশবিদ, প্রকৌশলী এম. ইনামুল হক ইউএনবিকে বলেন, নদী খননের কিছু মেগা প্রকল্প জনস্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ অনেক নদী অপ্রয়োজনীয় খনন করছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো প্রকল্প চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত নদীর আশপাশের এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা।
এম ইনামুল আরও বলেন, নদী খনন ও পলি অপসারণের প্রক্রিয়া অপরিকল্পিত।
বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার দাবি করেন, নদী খনন সঠিকভাবে হয়েছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, প্রথম ধাপে ২০১০ সাল থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের ড্রেজিং নিয়ে অনিয়ম ও জবাবদিহিতার অভাবের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যে কোনো খনন বা ড্রেজিংয়ের কাজ তৃতীয় পক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ অনুযায়ী শুরু হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কাজ শেষ করে নিয়মিত রুট রক্ষণাবেক্ষণ করে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: নৌপথে দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ মাস্টার-চালক তৈরির আহ্বান ১৫ বিশিষ্ট নাগরিকের
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল: ৭ অক্টোবর উদ্বোধনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।
আগামী ৭ অক্টোবর প্রকল্পের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৭ অক্টোবর আংশিকভাবে চালু হলেও যাত্রীরা টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন ২০২৪ সালের শেষের দিকে।
কারণ টার্মিনাল পরিচালনায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ক্যালিব্রেশন করতে সময় লাগবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ অক্টোবর টার্মিনালের সফট ওপেনিং করবেন। উদ্বোধনী অংশে চলমান কাজ শেষ পর্যায়ে। আমরা এখন উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। উদ্বোধনের জন্য যাবতীয় কাজ প্রায় শেষ। আমাদের অবকাঠামো প্রস্তুত, আমাদের ইকুইপমেন্টগুলো বসানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সফট ওপেনিংয়ের পর এয়ারলাইনগুলো নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারবে। পুরোনো টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে ২৯টি বিমান রাখা যায়। সফট ওপেনিং হলে তৃতীয় টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে আরও ৮ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ রাখা যাবে।
অত্যাধুনিক টার্মিনালে কী কী থাকছে—
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান জানান, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ টার্মিনাল চালু হলে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এখানে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য মোট চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ) ১১৫টি।
এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। বর্তমান টার্মিনালে রয়েছে ৮টি লাগেজ বেল্ট। তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি আলাদা বেল্ট। ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরির কাজ চলমান।
বেবিচক জানায়, থার্ড টার্মিনালের নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যানটিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। এ ছাড়াও থাকবে সুপরিসর ডিউটিফ্রি শপ এবং বহির্গমন লাউঞ্জ।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: বিমান সিইও
বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। ধারণ ক্ষমতা প্রতি বছরে ১২ মিলিয়ন যাত্রী। টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার। ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ইকুইপমেন্টসহ ৪ হাজার বর্গমিটার। আমদানি কার্গো টার্মিনাল ২৭ হাজার বর্গমিটার, রপ্তানি কার্গো টার্মিনাল ৩৬ হাজার বর্গমিটার এবং কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। দুটি র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার।
পাশাপাশি থাকবে বিমানবন্দরসংলগ্ন সড়ক (হাইওয়ে), এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগ, যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুয়েপমেন্ট (অটোমেটেড ওয়ার) সব কাজ এখন এগিয়ে চলছে।
এ ছাড়াও, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য কাস্টমের একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল থাকবে, যার আয়তন ১৩০০ বর্গমিটার। ভিআইপি যাত্রীদের জন্য রাখা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ভিভিআইপি ও ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশাল লাউঞ্জ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনালে।
৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের প্রধান বহির্গমন লাউঞ্জ ব্যবহার করবেন ট্রানজিট যাত্রীরা। তবে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না এখন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে করিডোর নির্মাণ হবে।
গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে বহুতল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
চেয়ারম্যান বলেন, এখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০-১৩০টি প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।
প্রতিদিন এসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এ হিসেবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে।
তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
টার্মিনাল পরিচালনায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ক্যালিব্রেশন করতে সময় লাগবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
থার্ড টার্মিনাল খোলার ফলে যাত্রীরা যেই ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন:
যাত্রীরা নিজেরাই ইমিগ্রেশন করতে পারবে—
নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেইট থাকবে। যেখানে যাত্রীরা নিজেরাই ইমিগ্রেশন করাতে পারবেন। তাদের আর ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হতে হবে না।
তবে নিজেরা করতে না চাইলে তাকে সহযোগিতা করতে ৫৬টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারও প্রস্তুত থাকবে। সেখানে ইমিগ্রেশন করবে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এ ছাড়াও যেসব যাত্রী অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকবেন তাদের জন্য ৫টি ই-গেট থাকবে। পাশাপাশি থাকবে ৫৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন কাউন্টার।
যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে—
টার্মিনাল চালু হলে যাত্রীরা আসা-যাওয়ায় ভোগান্তির শিকার হবেন না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ হচ্ছে। এটি যাতায়াতকে সহজতর করবে। একজন যাত্রী টার্মিনাল থেকে বের হয়ে সহজে গাড়িতে চড়ে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগে যুক্ত হতে পারবেন। থাকবে আন্তর্জাতিকমানের অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা।
নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক স্ক্যানিং ব্যবস্হা থাকবে—
এখন শাহজালালে যাত্রীদের হাতে তল্লাশি করা হয়। তবে তখন এমনটি হবে না। বিমানে উঠা পর্যন্ত হাতের স্পর্শ ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তল্লাশি চলবে। তবে সহযোগিতার অংশ হিসেবে যাত্রীকে বডি স্ক্যানার মেশিনের ভেতর দু’হাত তুলে দাঁড়াতে হবে। এর ফলে সবার সময় বাঁচবে। যাত্রী ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সময় বাঁচবে।
আরও যেসব সুয়োগ সুবিধা থাকছে—
অনেকের ট্রানজিট পেলে সময় কাটে না। তাদের কথা মাথায় রেখে তৈরি হচ্ছে মুভি লাউঞ্জ ও ফুড কোর্ট। এ ছাড়াও এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডে-রুম। এ ছাড়াও ঘোরাফেরা ও কেনাকাটার জন্য তৈরি হচ্ছে ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ।
যাত্রীরা টার্মিনালের বাইরে ও ভেতরে পাবেন ফুড কোর্ট, ফুড গ্যালারি, ওয়াই-ফাই ও মোবাইল চার্জিংয়ের সুবিধা। এ ছাড়াও নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থাও থাকছে। যাত্রীদের নিতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য মিটার্স অ্যান্ড গ্রিটার্স প্লাজাও থাকবে নতুন টার্মিনালে।
শিশুদের স্তন্যপানের জন্য মায়েদের সুবিধায় এ লাউঞ্জের ভেতর ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, ডায়াপার পরিবর্তনের জায়গা এবং একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম থাকবে।
এ ছাড়াও বাচ্চাদের স্লিপার-দোলনাসহ একটি চিলড্রেন প্লে এরিয়াও থাকবে। নতুন টার্মিনালে যাত্রীরা পাবেন ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসকসহ হেলথ ইন্সপেকশন সুবিধা, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট-এইড রুম, করোনাসহ নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া।
২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।
এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
আরও পড়ুন: ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং: বেবিচক চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ সামরিক খাতের আধুনিকীকরণসহ উভয় দেশ একসঙ্গে অনেককিছু করতে পারে: মার্কিন কর্মকর্তা মিরা রেসনিক
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে 'বহুমুখী ও বিস্তৃত' উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেসনিক বলেছেন, নিরাপত্তা সম্পর্কসহ দুই দেশ একসঙ্গে অনেককিছু করতে পারে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরকালে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উভয় দেশের সম্পর্ককে 'দৃঢ় ও গভীর' করতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই সম্পর্কে যে অগ্রগতি দেখা গেছে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে এমন কোনো পরিস্থিতি আমরা দেখতে চাই না।’
প্রতিরক্ষা সম্পর্কের বৈচিত্র্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, তারা তাদের প্রতিরক্ষা প্রয়োজনে বাংলাদেশের ক্রয়ের বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানায়।
ঢাকায় উভয় দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত নবম নিরাপত্তা সংলাপে বিষয়টি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিশ্চিত করতে এটি বাংলাদেশের জন্য চমৎকার সুযোগ।’
যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বলেন, সামরিক খাতের আধুনিকীকরণে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সাহায্য করতে পারে সে বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করার এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন উপায় খুঁজছি যাতে বাংলাদেশকে তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণে সহায়তা করতে পারি এবং আপনাদের উপকূলীয় সীমান্তে কী রয়েছে; আকাশ, স্থল, সমুদ্র ও সাইবারস্পেসে কী ঘটছে তা বোঝার জন্য আমরা সামুদ্রিক ডোমেইন সচেতনতায় বিনিয়োগ করতে পারি।’
রেসনিক বলেন, দুই দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও গভীর করতে তাদের অনেক সুযোগ রয়েছে।
সফরকালে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশে 'অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ' নির্বাচনকে সমর্থন করে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক
তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন আমাদের সংশিষ্ট কর্মকর্তারা।’
তিনিও আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে বাংলাদেশ মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও অতীত কর্মের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, দুর্যোগ ত্রাণ, সামরিক আধুনিকীকরণ ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা করেছে। একই সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও ভালো কী করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আগামী বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ সক্ষমতার ব্ল্যাকজ্যাক ইউএএস, ৩৫ ফুট সেফ প্যাট্রোল বোট এবং অতিরিক্ত জোডিয়াক রিজিড হাল বোট সরবরাহ করবে বলে আশা করছে। এসব ব্যবস্থা বাংলাদেশকে জাতিসংঘ মিশন পরিচালনা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়তা করবে।
মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বিশেষ সরঞ্জামগুলোর জন্য জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্টের (জিএসওএমআইএ) প্রয়োজন হয় না, তবে এর জন্য প্রযুক্তি সুরক্ষা ও বিদেশি উন্মোচন পর্যালোচনা প্রয়োজন হবে, যা ওয়াশিংটন করে থাকে।’
তিনি বলেন, এগুলো বিশেষ সরঞ্জাম এবং তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে তাদের সহায়তা করতে পারে এমন সরঞ্জামগুলোর নতুন সরবরাহে সহায়তা করতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত।
তিনি আরও বলেন, ‘আরও উন্নত সংগ্রহের জন্য জিএসওএমআইএ প্রয়োজন। যখন বাংলাদেশ সরকার এর জন্য প্রস্তুত হবে তখন আমরা তাদের সঙ্গে একটি জিএসওএমআইএ সইয়ের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।’
জিএসওএমআইএ ও অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (এসিএসএ) দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের সুযোগ সম্প্রসারণ, তথ্য আদান-প্রদান এবং সামরিক সহযোগিতার জন্য 'অপরিহার্য'।
মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করছি যে, কীভাবে আমাদের সামরিক তথ্য রক্ষা করি তা বুঝতে পারে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আমরাও আরও ভালোভাবে বুঝতে চাই যে বাংলাদেশ কীভাবে এর গোপন সামরিক তথ্য রক্ষা করে যাতে আমরা এটি পেতে পারি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশিদের ‘আকাঙ্ক্ষা’র সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন কর্মকর্তা
পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই মানুষ ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকে থাকতে পারে: জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, পারস্পরিক সহযোগিতা মানবজাতি ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র মাধ্যম।
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো মানুষ ও আমাদের মাতৃভূমি কেবল পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমেই টিকে থাকতে পারে।’
ভারতের প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে (ইসিসি) অনুষ্ঠিত জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন ২০২৩-এ ‘ওয়ান আর্থ’ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের থিম হলো- ‘ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচার’ (এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ)।
মানুষ ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য শেখ হাসিনা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন, যা দারিদ্র্য বিমোচনের সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য প্রযুক্তিগত স্থানান্তরের জন্য অর্থায়ন করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা চাই যা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজের জন্য প্রযুক্তিগত স্থানান্তরের অর্থায়নের জন্য সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট, কোভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জে জর্জরিত।
তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো সমস্ত মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়নের জন্য এক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সম্প্রদায়ের গ্রহণ করা অপরিহার্য করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ খুব নগণ্য ভূমিকা রাখলেও এর পরিণতির শিকার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশেটি।
তিনি বলেন, ‘অতএব সবুজ ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টা। এখন, আমরা সার্কুলার ইকোনমি’র (উপকরণ বা পণ্যের পুনঃব্যবহার ও পুনঃউৎপাদনের উপর ভিত্তি করে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে) পথও বেছে নিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সচেতন অনুশীলন প্রচারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির চালু করা জীবনযাত্রার প্রচারকে সমর্থন করে।
বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যূত হতে পারে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশে প্রশমনের সুযোগ খুব কম, তবুও আমরা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং এসডিজি অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবিলায় অনেক রূপান্তরমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
আরও পড়ুন: নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন: বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৭ সালে তিনি আশ্রয়ণ বা গৃহহীনদের জন্য আশ্রয় নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন।
এই উদ্যোগের আওতায় চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সরকার প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে বাড়ি ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে।
তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জলবায়ু অভিযোজনে শক্তিশালী অর্জন করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আমরা ৪ হাজার ৫৩০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করেছি। আমরা এখন বহুবিধ ব্যবহারের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামে আরও ৫৫০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করছি।’
তিনি কনফারেন্স অন ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিডিআরআই)-এর জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্যোগের প্রশংসা করেন। ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ‘জলবায়ু সমৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে স্থিতিস্থাপকতার দিকে নিয়ে যেতে আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ চালু করেছি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে লাগতে পারে আরও এক বছর
২০২৪ সালের জুলাই মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) ১২০০ মেগাওয়াট প্রথম ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করা কথা রয়েছে। এই সময়সীমা পূর্ণ হতে আর মাত্র ১০ মাস বাকি রয়েছে।
তবে বিদ্যুৎ খাতের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন অবকাঠামো-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অনেকটা বাকি থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
২৪০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের প্রথম ১২০০ ইউনিট চালুর মাত্র ১০ মাস আগে এসে কর্মকর্তারা এখন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য আরও এক বছর বা আরও কিছুটা বেশি সময় প্রয়োজন বলে মনে করছেন।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বিএইসি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) উভয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও প্ল্যান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সারাদেশে গৃহস্থালি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইনের অভাবে এটি কাজে লাগবে না।
বিএইসি-কে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, পিজিসিবি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অপসারণ ও সঞ্চালনের কাজ করবে।
আরও পড়ুন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত
এই প্রথম তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঞ্চালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।
পিজিসিবি-র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউএনবিকে বলেছেন, ‘আরএনপিপি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে আমরা তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি।’
তিনি যে তিনটি চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো- নদী ক্রসিংলাইন নির্মাণ, সাবস্টেশন স্থাপন ও ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের জন্য দুটি নদী ক্রসিং প্রয়োজন—যমুনা নদীর ওপর দিয়ে ৯ কিলোমিটার এবং পদ্মার ওপর দিয়ে ৭ কিলোমিটার।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি পিজিসিবি এই বিষয়ে দুটি পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং প্রকল্পগুলো শেষ করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।’
তিনি আরও বলেন, আরএনপিপি থেকে বিদ্যুৎ ঢাকায় আসবে ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন ডাবল সার্কিট লাইনের মাধ্যমে। যা ধামরাইয়ে একটি নতুন ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড-সাবস্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি একটি ফার্মকে ট্রান্সমিশন লাইন বসানোর চুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং এর কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে।
পিজিসিবি’র আরেকজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইউএনবিকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আরএনপিপি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সিস্টেমে ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখা। কারণ এটি হবে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বিদ্যুৎ, যেখানে সঞ্চালন ও সরবরাহ নেটওয়ার্কে সবসময় স্থিতিশীল চাহিদা থাকবে।’
তিনি বলেন, প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে পিজিসিবি এ বিষয়ে কাজ করার জন্য রাশিয়া থেকে একজন পরামর্শক নিয়োগ করে। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ওই পরামর্শদাতা হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান।
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ের সমাধান খুঁজতে বর্তমানে একটি উচ্চ পর্যায়ের দল রাশিয়া সফর করার পরিকল্পনা করছে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান আরএনপিপি থেকে সময়মতো বিদ্যুৎ অপসারণ ও সঞ্চালন শুরু করার বিষয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করে ইউএনবিকে বলেছেন, প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন অবকাঠামো ২০২৪ সালের জুলাই মাসের মধ্যে প্রস্তুত হবে কি না এ বিষয়ে তার মন্ত্রণালয় এখনও অন্ধকারে রয়েছে।
আরও পড়ুন: রূপপুর এনপিপির ইউনিট-২ এর প্রধান কুল্যান্ট পাইপলাইন ঝালাই শেষ: রোসাটম
পিজিসিবি-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া অফিসিয়াল তথ্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, আরএনপিপি থেকে বিদ্যুৎ অপসারণ নিশ্চিত করতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একীভূতকরণ ও নিরাপদ পরিচালনার জন্য এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য ১০ হাজার ৯৮১ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফর পাওয়ার ইভাকুয়েশন ফ্যাসিলিটিস অব রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট’-শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-১৩ কিলোমিটার নদী ক্রসিংসহ একটি ৪৬৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ এবং ৭ কিলোমিটার নদী ক্রসিংসহ একটি ২০৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, চারটি ৪০০ কেভি বে এক্সটেনশন এবং পাঁচটি ২৩০ কেভি বে এক্সটেনশন।
ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল ও ফ্রিকোয়েন্সি ড্রপ প্রোটেকশন, প্রোটেকশন সিস্টেম, ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ‘কোয়ালিটেটিভ আপগ্রেডেশন অব বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম’ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজগুলো বাস্তবায়ন করাও এই প্রকল্পের অংশ।
ওয়েবসাইটের একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে পুরো প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং বরাদ্দ দেওয়া অর্থের ৪৮ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।
পিজিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, ৪৬৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের ১৩ কিলোমিটার নদী ক্রসিংয়ের মধ্যে- ১৫০ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা, ১৫৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ, ৯০ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া এবং ৫১ কিলোমিটার কালিয়াকৈর-আমিনবাজার সঞ্চালন লাইন নিয়ে গঠিত।
২০৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের ৭ কিলোমিটার নদী ক্রসিংয়ের মধ্যে ১৫৮ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা এবং ৮১ কিলোমিটার রূপপুর-বাঘাবাড়ি লাইনের অংশ রয়েছে।
পিজিসিবি কর্মকর্তারা জানান, জমির ওপর সঞ্চালন লাইন স্থাপনের অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ হলেও সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক নদী পারাপার নির্মাণের কাজও শুরু হয়নি।
আরও পড়ুন: রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন
পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে বৃহস্পতিবার
পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে বৃহস্পতিবার।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, আগামী ১০ অক্টোবর উদ্বোধনের আগে বাংলাদেশ রেলওয়ে বৃহস্পতিবার(৭ সেপ্টেম্বর) কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত নবনির্মিত রেল লাইনে একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে।
তিনি বলেন, আগামী মাসে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকার সঙ্গে সংযোগকারী ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা দেওয়ার জন্য ১০ অক্টোবরকে অস্থায়ী তারিখ ধরে উদ্বোধনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। উদ্বোধনের তারিখ প্রধানমন্ত্রীর সময়সূচির উপর নির্ভর করবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান ইউএনবিকে বলেন, চীন থেকে আমদানি করা সাতটি নতুন কোচ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘একটি নতুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), একটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি), একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার এবং গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর), একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), দু’টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিউজেসিসি) এবং একটি শোভন চেয়ার কোচ (ডব্লিউিইসি) বগি থাকবে।’
এর আগে পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এবার ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার নবনির্মিত ব্রডগেজ রেললাইনে ট্রায়াল করবে কর্তৃপক্ষ।
ট্রায়াল রানে রেলমন্ত্রী, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা ট্রেনে থাকবেন বলে জানান পরিচালক আহসান।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
রেললাইনটি তিনটি ধাপে নির্মিত হচ্ছে (ঢাকা ও গেন্ডারিয়ার মধ্যে একটি ৩ কিলোমিটার সংযোগ নির্মিত হচ্ছে): ৩৭ কিলোমিটার গেন্ডারিয়া-মাওয়া অংশ, একটি ৪২ কিলোমিটার মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ এবং একটি ৮৭ কিলোমিটার ভাঙ্গা জংশন-যশোর অংশ। প্রায় ৪৩ দশমিক ২ কিলোমিটার লুপ, সাইডিং এবং ওয়াই-সংযোগ মোট লাইনের দৈর্ঘ্য ২১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার।
ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ১৪টি নতুন এবং ৬টি ইতোমধ্যে রয়েছে। আগের স্টেশনগুলোও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। একবার সম্পূর্ণ হলে ট্রেনগুলো ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম হবে।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হওয়ায় ঢাকা-যশোর রেললাইনের কোথাও কোনো রেল ক্রসিং থাকবে না।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেনের মতে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গেন্ডারিয়া এবং কেরানীগঞ্জ স্টেশনে রেলওয়ে টার্ন-আউটের কিছু অসমাপ্ত কাজ (একটি রেললাইন থেকে অন্য রেললাইনে স্থানান্তর) ছিল যা 25 আগস্টের মধ্যে শেষ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: শনিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বিমানের ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট বাংলাদেশ-জাপান বাণিজ্য ও সম্পর্ক জোরদার করবে: বিসিসিআইজে সভাপতি
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন জাপান (বিসিসিআইজে)- এর সভাপতি বাদল চাকলাদার জানিয়েছেন, জাপানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালুর ফলে দু’দেশের বাণিজ্য ও সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।
রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে টোকিওর একটি রেস্টুরেন্টে বিসিসিআইজে-এর আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এছাড়াও বিমানবন্দরে হয়রানি, লাগেজ নষ্ট না হওয়ার, লাগেজ হারিয়ে যাওয়া, সময়মত লাগেজ পাওয়া ও বিমানের সেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন বিসিসিআইজে সভাপতি।
এসময় বিসিসিআইজে সভাপতি সরাসরি ফ্লাইট চালু করায় বাংলাদেশ সরকার ও বিমানকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ১৭ বছরে আগের মত যেন ফ্লাইট আবারও বন্ধ না হয়। আমরা সব সময় চাই জাপানিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুক। কিন্তু সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় বাংলাদেশে একবার গেলে দ্বিতীয়বার যেতে অনেক বিনিয়োগকারী আগ্রহী হতেন না। মালামাল পরিবহনেও খরচ বেশি হয়। আমরা এখন চাইবো এই ফ্লাইট আর যেন বন্ধ না হয়।
তিনি আরও বলেন, জাপানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করতে পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিমানের সেবার মানও আরও বাড়াতে হবে। তাহলে দেশি- বিদেশি যাত্রীরা বিমানকেই পছন্দ করে নিবে।
আরও পড়ুন: নারিতার পর বিশ্বের আরও কয়েকটি রুটে ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ বিমানের
উপস্থিত জাপানে বসবাসকারী ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সরাসরি ফ্লাইট না থাকার কারণে জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে যেতে আগ্রহী হন না। বাংলাদেশিদেরও জাপান থেকে দেশে যেতে দীর্ঘ সময় লাগতো। এখন সরাসরি চালু হওয়ায় দু’দেশের জন্য সম্পর্ক ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ হবে। বাংলাদেশি প্রবাসীদের লাশ বিনা খরচে দেশে নিতেও আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়াও, বিমানবন্দরে হয়রানি, লাগেজ নষ্ট না হওয়ার, লাগেজ হারিয়ে যাওয়া, সময়মত লাগেজ পাওয়া ও বিমানের সেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানান ব্যবসীয়া।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপানে ফ্লাইট চালু হওয়ায় ফলে আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। জাপানের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক আরও অনেক বাড়বে। ১৭ বছরে জাপানের টোকিওতে ফ্লাইট চালু করল বিমান। এতে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও সহজ হবে। জাপানে ফ্লাইট চালু রাখা বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা লাগবে।
তিনি আরও বলেন, জাপান ফ্লাইট চালুর ফলে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আসবেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ।
জাপানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপান একটি উন্নত দেশ। আপনারাও যদি তাদের মতো কাজ করেন, তাহলে অনেকদূর এগিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশে জাপানি পর্যটকদের আসার জন্য প্রবাসীদের ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান পর্যটন প্রতিমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ঢাকা-নারিতা রুটে ১ সেপ্টেম্বর ফ্লাইট চালু করবে বিমান
বিমান সেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেন, দীর্ঘদিন পরে ফ্লাইট শুরু করতে পেরেছি। তাই জাপান রুট সফল করতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সেবা নিয়ে কোনো অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দেবে না।
বিমানের এমডি বলেন, প্রবাসীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা সহয়তা করুন, বিমানে ভ্রমণ করুন। বিমানের প্রমোট করুন। বিমান আপনাদেরই সম্পত্তি।
বিমান পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তাফা কামাল বলেন, জাপানে ফ্লাইট জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। উনার ইচ্ছার ফলে ফ্লাইটটি আবার চালু করা গেছে। এর পিছনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং জাপানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত অনেক পরিশ্রম করেছেন।
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা সংবর্ধনা আয়োজনের জন্য।
শুক্রবার রাতে ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ২৪৩ যাত্রী নিয়ে ৬ ঘণ্টায় জাপানে আসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট।
পরদিন শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ফ্লাইটটি জাপানের নারিতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। উদ্বোধনী এই ফ্লাইটে বাংলাদেশি ছাড়াও নেপাল থেকে আসা যাত্রীরা ঢাকা হয়ে জাপানে গেছেন।
নারিতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ফ্লাইটটিকে ‘ওয়াটার ক্যানন’ স্যালুট দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। সেইসঙ্গে ফ্লাইটের যাত্রীদেরও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: বিমান সিইও
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযানের পর বাজারে ডলারের সংকট
উচ্চ বিনিময় হার নিয়ে মুনাফার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউসে অভিযান চালানোর পর খোলা বাজারে ডলারের সংকট আরও বেড়েছে।
গত দুই সপ্তাহে খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ডলারপ্রতি ১১২ টাকা থেকে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় পৌঁছেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে গত সপ্তাহের শেষের দিকে এবং সপ্তাহান্তে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউসে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব অভিযানে এক্সচেঞ্জগুলোকে আগের দরে ১১২ থেকে ১১৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু জানা গেছে, অভিযানের ফলে এই সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে মানি এক্সচেঞ্জগুলো বাজার থেকে ডলার সম্পূর্ণভাবে তুলে নিয়েছে।
চড়া দামে ডলার বিক্রির দায়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও সিলগালা করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে শাস্তির ভয়ে ডলার বিক্রি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো।
ফলে খোলা বাজারে ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতের সংশ্লিষ্টরা।
আজ ১২০ টাকায়ও এক ডলার কেনা যাচ্ছে না।
এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বলেছে, তাদের কাছে বিক্রি করার মতো কোনো ডলার নেই।
আরও পড়ুন: রপ্তানি আয়ের জন্য ডলারের বিনিময় হার বেড়ে ১০৭.৫ টাকা
খোলা বাজারে ডলারের সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাউল হক ইউএনবিকে বলেন, ডলার লেনদেন ঠিকই হচ্ছে, কিন্তু সবাই তা বিক্রি করছে না।
তার মতে যাদের কাছে ডলার আছে তারাই বিক্রি করছে।
মতিঝিল এলাকার মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের মালিক জামান (ছদ্মনাম) রবিবার ইউএনবিকে বলেন, তারা ১১৫ টাকায়ও ডলার কিনতে পারেন না, তাহলে ১১২-১১৩ টাকায় ডলার বিক্রি করা কীভাবে সম্ভব?
ডলারের সরবরাহ সংকটের কারণে রবিবার অন্যান্য অনেক মানি এক্সচেঞ্জ হাউস এবং মার্কিন ডলারের ভাসমান ব্যবসায়ীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে গিয়ে এই হতাশাজনক চিত্র যায়।
আমাদের সংবাদদাতা গুলশান, বনানী, মহাখালী ও ফার্মগেটের মতো অন্যান্য এলাকায় অনুসন্ধান করেও একই চিত্র দেখেছেন।
গত ১২ বছর ধরে ডলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আয়নাল বলেন, ‘মানি চেঞ্জাররা একজনের কাছ থেকে কিনে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে। বর্তমান দামে ডলার বিক্রি করতে মানি চেঞ্জারদের ডলার কিনতে হচ্ছে ১১০ টাকায়। কেউ যদি ১১২ টাকার নিচে ডলার বিক্রি না করে তাহলে মানি চেঞ্জাররা কিভাবে ডলার পাবে? ব্যবসায়ীরা ডলার না পেলে বিক্রি করতে পারবে না, মানি চেঞ্জাররা এ কথা বলছেন।’
গত ৬ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা থাকায় ডলার কিনতে মতিঝিলে আসেন ওমর ফারুক। খরচের জন্য ডলার কিনতে বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়েও পাননি তিনি।
ওমর বলেন, ‘এখন মানি চেঞ্জারের কাছে এসেছি, এখানেও ডলার নেই। আমি গুলশানে এক পরিচিতকে ফোন করেছি ৪০০ ডলার ম্যানেজ করার জন্য। যেখানে প্রতি ডলার হয়ত ১২০ টাকা হতে পারে।’
কেন তিনি এত বেশি দামে কিনতে রাজি হবেন জানতে চাইলে ওমর বলেন, ‘দাম যাই হোক না কেন, ডলার ছাড়া আমি কীভাবে বিদেশে যাব?’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংক রেট ক্যাপসহ 'বাজারভিত্তিক' ডলারের বিনিময় হার চালু করেছে
২০২৩’ অর্থবছরে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, এ যাবৎকালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়: মাইকেল কুগেলম্যান
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ‘চূড়ান্ত রায়’ দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, ‘কারণ আওয়ামী লীগ যদি একাই নির্বাচন করে, যদি ৯৮ শতাংশ ভোটও পায়, আপনারা বলতে পারবেন না যে সেই ভোটগুলো বিএনপির কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই এই বিষয়গুলো এখনও অমীমাংসিত।’
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং দিন শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গেও একটি ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়।
বাংলাদেশ সরকার বারবার বলে আসছে তারা দেশে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরেকটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি তুলে ধরে কুগেলম্যান বলেন, যদি নির্বাচন হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে অবাধ ও সুষ্ঠু না হয়ে কারচুপির নির্বাচন হয়েছে, তাহলে এরপর মার্কিন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তার ভবিষ্যত সম্পর্ক পর্যালোচনা শুরু করলে তিনি অবাক হবেন না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘আমি মনে করি বাইডেন প্রশাসন ঢাকার উপর এত চাপ সৃষ্টি, ভিসা নীতি ঘোষণা, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে তার একটি কারণ হলো তারা ক্ষমতাসীন দলকে চাপ দিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার তা করাতে চায়। যাতে যুক্তরাষ্ট্রকে এই সম্পর্কের ভবিষ্যত কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে না হয়।’
প্রথমবার ঢাকা সফরে আসা কুগেলম্যান বলেছেন, মার্কিন প্রশাসন ঢাকাকে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা সম্পৃক্ততা কমানোর মতো কোনো বিকল্প সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। ‘আমরা সম্পর্ক হ্রাস বা কমানোর ব্যাপারটি উড়িয়ে দিতে পারি না। আমি আশা করি এরকম কিছু হবে না। তবে আমি মনে করি এরকম একটা আশঙ্কা আছে।’
তিনি জানান, যদিও সত্যিই কি ঘটছে সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই; তবে নির্বাচনী ফলাফল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার একটি খুব ভাল সম্ভাবনা আছে।