বিশেষ-সংবাদ
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় চিংড়ির চাহিদায় রদবদল, জনপ্রিয় হচ্ছে ভেনামি চিংড়ি
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি রপ্তানি শিল্পে। কারণ, বিশ্ববাজারে দেশের গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাহিদা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। অন্যদিকে, চিংড়ির মূল্যে ৪০ শতাংশেরও বেশি পতন দেখা গেছে। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হচ্ছে ভেনামি জাতের চিংড়ি।
তুলনামূলক কম দামের কারণে বিদেশের বাজার অনেকটাই দখল করেছে ভেনামি জাতের চিংড়ি। সেজন্য দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে চিংড়ির দরপতন ঘটেছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর বাগেরহাটের হাট-বাজারে কেজিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ির দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কমেছে। ঠিক এ কারণেই এই মাছ চাষের সঙ্গে জড়িতরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। সেজন্য হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারকরা বিশ্ববাজার ধরে রাখতে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের কথা বলছেন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে চিংড়ি চাষে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ও অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাষের তাড়াও রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের পরামর্শ দিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারে চিংড়ির চাষ বেশি হয়। এর মধ্যে বাগেরহাটে বেশি পরিমাণ ঘেরে বাগদা ও গলদা চিংড়ির চাষ করা হয়। কখনো জলোচ্ছ্বাসে ঘের ডুবে চিংড়ি ভেসে যাচ্ছে। আবার কখনো বা অনাবৃষ্টি আর ভাইরাসের কারণে ঘেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। নানা কারণে একের পর এক বিপর্যয় লেগেই আছে চিংড়ি শিল্পে। তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিংড়ি রপ্তানিতেও পড়েছে প্রভাব।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বারাকপুর পাইকারি মৎস্য আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে ১২টি চিংড়ি ধরে এমন আকারের বাগদা কেজি প্রতি এক হাজার ১০০ টাকা, ১৫টির ক্ষেত্রে ৯০০ টাকা ও ২০টির ক্ষেত্রে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গলদা চিংড়ির ক্ষেত্রে ৮টি ধরে এমন আকারের কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়।
উৎপাদন খরচের তুলনায় কম মূল্যে বিক্রি করার কারণে লোকসানের মুখে অনেক চাষি বিকল্প পেশা খুঁজছেন।
আরও পড়ুন: রপ্তানিতে সুদিন ফেরাতে পারে ভেনামি চিংড়ি, বাণিজ্যিক চাষ দাবি
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন এ বছরই চালু হবে: রেলমন্ত্রী
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের কাজ পুরোদমে চলছে। চলতি বছরে ডিসেম্বরের মধ্যেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে রেল যোগাযোগ চালু হবে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার জন্য তারা কাজ করছেন। ‘আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। আর কোনো কারণে জুনে কাজ শেষ না হলে আরও এক থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে। তারপরও আমরা এ বছরের মধ্যেই ট্রেনে করে কক্সবাজার যেতে পারব।'
মন্ত্রী বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি ২০ শতাংশ এই সময়ের মধ্যে শেষ হবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নতুন রেললাইনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে যাত্রা 'আনন্দদায়ক ও আরামদায়ক' হবে।
এছাড়া এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেনে চড়ে সহজে কক্সবাজারে আসবেন পর্যটকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। তেমনি সহজভাবে দেশের সব প্রান্তে যাবেন কক্সবাজারবাসীও। সহজ হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেয়া। এতে বাড়বে কক্সবাজারে পর্যটক স্রোত। 'ভ্রমণকারীরা খুব সহজেই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ পাবেন,' বলেও জানান বলেন।
প্রকল্প অনুযায়ী সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু ও কক্সবাজার সদরসহ ১০০ কিলোমিটার রেলপথে মোট আটটি স্টেশন রয়েছে।
আরও পড়ুন: সব যানবাহনে ভাড়া বাড়লেও ট্রেনের ভাড়া বাড়েনি: রেলমন্ত্রী
পর্যবেক্ষকদের মতে, রেলপথ সচল হলে সবদিক দিয়ে ঘুরে যাবে কক্সবাজার অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাকা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প থেকে জানা যায়, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদরসহ স্টেশন থাকছে আটটি। এজন্য সাঙ্গু, মাতামুহুরি ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় সেতু।
এছাড়া রেলপথে তৈরি হয়েছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ১০০ কিলোমিটার রেললাইনে এরইমধ্যে ৫০ কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান। বেশির ভাগ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলো আগামী কয়েক মাসেই শেষ হবে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে, আমরা চেষ্টা করছি ২০২৩ সালের জুন-অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করতে। সেইসঙ্গে রেলস্টেশনগুলোর নির্মাণকাজও চলমান আছে।
আরও পড়ুন: চিলাহাটি-মঙ্গলা রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে জুনে: রেলমন্ত্রী
তিনি আরও জানান, কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। স্টেশনটিকে সৈকতের ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। এর পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: জুনের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন চালু হবে: রেলমন্ত্রী
মাগুরায় ভারতীয় নাসিক এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে সফলতা
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় পরীক্ষামূলক ভারতীয় নাসিক এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে সফলতা এসেছে। জাতটি মূলত গ্রীষ্মকালীন। ফলে দেশে শীতকালীন পেঁয়াজ শেষ হলে বাজারে যে সংকট দেখা দেয় তা মোকাবিলায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলার কৃষি অফিসের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় মূলত পরীক্ষামূলক জাতটির চাষ করা হয়েছে।
পেঁয়াজের বাজারদরে যে কতোটা আগুন লাগতে পারে তা এর আগে মোটামুটি সবাই দেখেছে। ভারতসহ একাধিক দেশ থেকে তখন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এ কারণেই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এবার বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ৩০ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে জাতটির চাষ শুরু করা হয়। এই পেঁয়াজের বীজ, সার ও বীজতলা করার পলিথিনসহ বীজতলা তৈরির সকল উপকরণ চাষিদের বিনামূল্যে দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় পেঁয়াজ চারা সঙ্কটের আশঙ্কা
গত সেপ্টেম্বরে চাষিরা বীজতলা করেন। এরপর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করেছেন। এখন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলাতে ৩০ হেক্টর জমিতে এ পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। এই পেঁয়াজ চাষে উপজেলার ২২৫ জন চাষিকে এক কেজি বীজ ও সারসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল।
চলতি মৌসুমে ৫৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি টাকা। হেক্টর প্রতি ১৮ মেট্রিক টন ফলনের আশা কৃষি বিভাগের।
ডিসেম্বরে প্রথম সপ্তাহ থেকে নাসিক এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ মণ। লাল রঙের প্রায় প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন হয়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন কম হলেও ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশা করছেন তারা। অসময়ে চাষ ও ফলন ভালো হওয়ায় অনেক এই পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগামী বছর এ পেঁয়াজ চাষ আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ সংরক্ষণে আলোর মুখ দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’
উপজেলার আমলসার ইউনিয়নের কুদলা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আমি এই পেঁয়াজের চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছি। এক একটি পেঁয়াজের ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম হয়েছে। এই পেঁয়াজ তোলার পর এই জমিতে আবারও পেঁয়াজ লাগাবো। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ, সারসহ সব জিনিস বিনামূল্যে দিয়েছে। বিভিন্ন সময় কৃষি উপ-সহকারী অফিসাররা খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী বছর এ পেঁয়াজ আরও বেশি লাগাবো।
উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের কৃষক মোকাদ্দেশ হোসেন বলেন, আশেপাশের কৃষকেরা পেঁয়াজ দেখে অবাক হচ্ছেন এবং এ পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফলন ভালো হয়েছে। পাট কিংবা আউশ ধান তোলার পরে জমিটা আগে পতিত পড়ে থাকতো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার নাসিক এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে বাড়তি আয় হলো। আগামী বছরও এই পেঁয়াজ চাষ করবো।’
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী মেহেদি হাসান জানান, শীতকালে তাদের এলাকায় স্থানীয় ‘মুড়িকাটা’ নামের একটি জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। বর্ষাকালে দেশে বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ হয়। কিন্তু এই পেঁয়াজের বীজের খুব সংকট। এ জন্য বর্ষাকালে কোনো পেঁয়াজই চাষ হতো না। এবার নাসিক এন-৫৩ জাতের (গ্রীষ্মকালীন) চাষ হয়েছে। পতিত পড়ে থাকা জমিতে এই পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকেরা বাড়তি টাকা আয় করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সালমা জাহান নিপা বলেন, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো ও আমদানি নির্ভরতা কমানোর উদ্দেশ্যে নাসিক এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। আগামীতে চাষ আরও বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: হিলির আড়তগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে
বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সিস্টেমের ওপর চলে মেট্রোরেল, বাস্তবায়নে এল অ্যান্ড টি
রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক(ই অ্যান্ড এম) মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সফলভাবে শুরু হয়েছে। এটি ঢাকা মেট্রোরেলের লাইন-৬। সিস্টেমটি বাস্তবায়ন করেছে রেলওয়ে পরিবহন অবকাঠামো ব্যবসায়ী লারসেন অ্যান্ড টুব্রো কন্সট্রাকশন।
মেট্রো জগতে, সামগ্রিক সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনসহ ইন্টিগ্রেটেড ইএন্ডএম সিস্টেমের কাজগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করেছে ভারতীয় বহুজাতিক সংস্থা, লারসেন অ্যান্ড টুব্রো যা এল অ্যান্ড টি নামে পরিচিত।
এই মাইলফলক অর্জনের পর ঢাকা মেট্রো লাইন-৬ এর ফেজ-১ (১১ দশমিক চার কি.মি.) এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ডিসেম্বর এটির উদ্বো্ধন করেন।
আরও পড়ুন: নিউ ইয়ার উদযাপনের ফানুস বৈদ্যুতিক তারে, ২ ঘণ্টা পর মেট্রোরেলে চালু
মেট্রোরেলে থাকবেন ৬ নারী চালক, উদ্বোধনে চালাবেন মরিয়ম আফিজা
আর মাত্র একদিন পরই অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল।
এ যাত্রায় সংযুক্ত রয়েছেন ছয় নারী চালক। তাদের মধ্যে মরিয়ম আফিজা উদ্বোধনী দিনই চালকের আসনে বসার যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক ইউএনবিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, মেট্রোরেল উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া মেট্রোরেল চালাতে পর্যাপ্ত চালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
যাদের মধ্যে ছয়জন নারী চালক রয়েছে।
তিনি আরও জানান, দক্ষ চালক হিসাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রত্যকটি ট্রেন যাতে দক্ষতার সঙ্গে চালাতে পারে, আমরা তাদের সেভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
আরও পড়ুন: টিকিট কাটা থেকে শুরু করে আসনব্যবস্থা: ঢাকা মেট্রোরেলে প্রথম ভ্রমণের আগে যা জানা দরকার
নারী চালক বিষয়ে তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে মেট্রোরেলের চালক হিসাবে নিয়োগ পান মরিয়ম আফিজা।
২০২১ সালের ২ নভেম্বর চালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, মরিয়ম টানা এক বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকা চালক হিসাবে নিজেকে তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে মরিয়ম আফিজা চট্টগ্রামের হালিশহরে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি থেকে দুই মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় ফিরে আবারও আরও চার মাস প্রশিক্ষণ নেন।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে উত্তরা দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের বিপরীতে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেখানে মেট্রোরেলের নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান জাপানের মিতসুবিশি কাওয়াসাফি কোম্পানি বিশেষজ্ঞরা ট্রেন পরিচালনা ও কারিগরি ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
অন্যদিকে যাত্রীদের মেট্রোরেল স্টেশনে আসা যাওয়ার জন্য থাকবে বিআরটিসি'র ৫০টি দ্বিতল বাস। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর সঙ্গে বিআরটিসির চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে সম্প্রতি।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক ইউএনবিকে জানান, দিয়া বাড়ি এলাকায় স্টেশনে উত্তরা ও আশপাশের বাসিন্দাদের মেট্রোরেলে চলাচল করতে হলে কিছুটা সময় নিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও জানান, উত্তরা ও আশেপাশের এলাকায় যাত্রীদের দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল স্টেশনে আনা-নেয়া করবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস। দিয়াবাড়ি থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসা যাওয়া করবে বিআরটিসি বাস। তেমনি একইভাবে আগারগাঁওয়ের যাত্রীদের পরিবহনের জন্য মতিঝিল থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাস সেবা দেবে বিআরটিসি।
এছাড়া যাত্রীদের জন্য দুটি রোড করেছে বিআরটিসি। একটি রোড আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট-কাওরানবাজার, শাহবাগ, গুলিস্তান হয়ে মতিঝিল যাবে। একইভাবে মতিঝিল থেকে গুলিস্তান, শাহবাগ, কাওরানবাজার, ফার্মগেট হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত আসা যাবে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউএনবিকে জানান, ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন মেট্রোরেল। পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর থেকে সাধারণ যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে এ মেট্রোরেলে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক প্রথম দিকে মেট্রোরেল সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘন্টা চলবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে চলাচলের পথে কোথাও থামবে না ট্রেনটি, বিরতিহীনভাবে চলবে।
কারণ মানুষকে অভ্যস্ত করার জন্য প্রথম দিকে বেশি যাত্রী নেয়া হবে না। মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে আস্তে আস্তে তিন মাসের ভেতরে আমরা পূর্ণভাবে চালাতে পারবো।
ভাড়া নিয়ে আলোচনা-
মেট্রোরেল সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা। উত্তরা উত্তর থেকে উত্তরা স্টেশন (মধ্য) ও উত্তরা-দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা।
এছাড়া প্রথম স্টেশন উত্তরা উত্তর থেকে পল্লবী ও মিরপুর ১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএল সুত্রে জানা যায়, র্যাপিড পাস নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
এছাড়া অনলাইনে ফরম থাকবে।
রেজিস্ট্রেশন করে স্টেশন থেকে কার্ড নিতে হবে। কার্ডের জন্য ২০০ টাকা লাগবে। পরে কার্ডে ২০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানোর দাবি আইপিডি’র
মেট্রোরেল: বিশেষায়িত ইউনিট গঠন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দেবে ডিএমপি
কক্সবাজারের মিষ্টি পান যাচ্ছে বিদেশেও
‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মইশখাইল্ল্যা পানর খিলি তারে বানাই হাবাইতাম’
‘মইশখাইল্ল্যা পানের খিলি, শাড়ির কোনত বাঁধি রাখি, ওগ্গ্যা মনের মানুষ পাইলে নিজের হাতে দিতাম হাবাই’
‘টেকনাইফ্ফা ছল সুয়ারি, মইশখাইল্ল্যা পান রে কি মাইয়া লাগাইলো মোরে ও সুন্দরী বোইনরে’
এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় গান কক্সবাজারের পান নিয়ে রচিত হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারের মিষ্টি পানের সুনাম বিশ্বজুড়ে রয়েছে। কারণ কক্সবাজারের মিষ্টি পান দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানায় নৌ চলাচল ব্যাহত: সীমাহীন দুর্ভোগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
টিকিট কাটা থেকে শুরু করে আসনব্যবস্থা: ঢাকা মেট্রোরেলে প্রথম ভ্রমণের আগে যা জানা দরকার
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের বহু প্রতীক্ষিত প্রথম মেট্রোরেল শিগগিরই জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। তবে যাত্রীদের সম্পূর্ণ পরিষেবা পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, কারণ প্রথম পর্যায়ে এটি শুধুমাত্র উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানায়, মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। পরবর্তীতে যাত্রার সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে। প্রথম দিকে সীমিত পরিসরে শুরু হবে। পরিপূর্ণভাবে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে সময় লাগবে আরও দুই থেকে তিন মাস।
১৫ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপটি ২৮ ডিসেম্বর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন: কাদের
মেট্রোরেলে প্রথম যাত্রা কেমন হবে?
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক ইউএনবিকে বলেন, প্রথম পর্যায়ে অল্প সংখ্যক যাত্রী বহনকারী সীমিত সংখ্যক ট্রেন সকাল ও বিকালে স্বল্প সময়ের জন্য চলবে এবং যাত্রীদের অভ্যস্ত হওয়ার জন্য তিন মাস ধরে গতি স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকবে।
যাত্রীদের নতুন আসন ও টিকিট ব্যবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে সাহায্য করার জন্য ট্রেনগুলো প্রথমে স্টেশনে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি সময় অপেক্ষা করবে। ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনগুলোতে কম সময় অপেক্ষা করবে, যা ভ্রমণের সময় কমিয়ে আনবে।
শুরুতে সব স্টেশনে ট্রেন থামবে না। ট্রেন উত্তরা স্টেশন থেকে ছেড়ে পল্লবীতে থামবে, তারপর না থামিয়ে আগারগাঁও যাবে। মধ্যবর্তী স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামানো হবে পরবর্তীতে।
এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘বিশ্বের সব দেশেই যখন প্রথম মেট্রোরেল চালু হয় তখন পরিপূর্ণ ভাবে চলাচল করে না। প্রথমে সীমিত যাত্রী নিয়ে চালু করে, তারপর পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে। প্রথম সীমিত যাত্রী নিয়ে এমআরটি লাইন-৬ চালু হবে।’
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে ট্রেনে ২০০ থেকে ২৫০ জন যাত্রী নিয়ে চলবে, পরে ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী। এভাবে যাত্রীদের প্রথমে অভ্যস্ত করা হবে।
সিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচলের জন্য প্রস্তুত রাখা ১২টি ট্রেনের মধ্যে ১০টি নিয়মিত চলবে এবং দুটিকে যেকোনো সমস্যার জন্য স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে।
মেট্রোরেলে আসনব্যবস্থা
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেলের কোচগুলো হবে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি ট্রেনে দুই প্রান্তে দুটি চালক কোচসহ মোট ছয়টি কোচ থাকবে। দুটি চালক কোচে ৪৮ জন যাত্রী বসতে পারবে। বাকি চার কোচে বসবেন ৫৪ জন। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে ৩০৬ জন যাত্রী বসতে পারবেন।
উদ্বোধনের পর প্রথম দিকে ২০০ থেকে ২৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। এরপর ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ১৭০০ যাত্রী বহন করা হবে।
ডিএমটিসিএল অনুসারে, প্রাথমিকভাবেই এটি এক হাজার ৭০০ যাত্রী বহন করতে পারবে। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়েও ভ্রমণ করতে পারবেন। দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সুবিধার জন্য উপরে হাতল এবং একটু পর পর খুঁটি রয়েছে। কোচের ভেতরে দুই সারিতে সবুজ রঙের লম্বা আসন রয়েছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে দুই হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের মালামাল নিয়ে আরও একটি জাহাজ মোংলা বন্দরে
টিকিট ব্যবস্থা ও ভাড়া
ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্টকার্ড ও টিকিটিং ব্যবস্থা। মেট্রোরেলের টিকিট কাটার জন্য অটো ও ম্যানুয়াল দুটি মাধ্যমই রয়েছে। অটো পদ্ধতিতে যাত্রীরা নিজেদের টিকিট নিজেরাই কাটতে পারবেন। একজন যাত্রীর সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকিট সংগ্রহের সুযোগ রাখা হয়েছে।
যারা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকেট কাটতে পারবেন না তাদের জন্য রয়েছে প্রচলিত পদ্ধতিতে কাউন্টার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে তা স্মার্টকার্ড পাসের মাধ্যমে গেট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে।
মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল ভ্রমণের জন্য খরচ করতে হবে ১০০ টাকা। প্রথম ধাপে উত্তরা স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা। উত্তরা (উত্তর) থেকে উত্তরা (মধ্য) এবং উত্তরা (দক্ষিণ) স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা। এছাড়া প্রথম স্টেশন উত্তরা (উত্তর) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০টাকা। মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিপূর্ণ চালু হতে কত সময় লাগবে?
ডিএমটিসিএল থেকে জানা যায়, মতিঝিল পর্যন্ত আগামী ২০২৪ সালের শেষদিকে চালুর কথা রয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আগারগাঁও থেকে কমলাপুর রুটে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে। তখন চব্বিশটি ট্রেন চলবে পুরোদমে। ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার যেতে সময় লাগবে ৩৮ থেকে ৪০ মিনিট।
ডিএমটিসিএল সূত্রে আরও জানা যায়, মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি করার পর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পথে উত্তরা (উত্তর - দিয়াবাড়ি),উত্তরা (মধ্য), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী,মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও মোট নয়টি স্টেশন রয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে ৭টি। বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল। এছাড়াও কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে।
সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে ২৮ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করবেন।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের ভাড়া ৫০% কমানোর দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
গ্রীষ্মের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় তথ্য সংগ্রহ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের দাম বিষয়ে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুটি বিভাগ এবং তাদের সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন গ্রীষ্মে একটি কঠিন সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিষয়গুলো আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকতে পারে- এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য পিএমও শিগগিরই সম্প্রতি স্থগিত হওয়া বৈঠকের পুনঃআবেদন করবে।
তারা বলেছে যে পিএমও ১৫ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বৈঠক ডেকেছিল। বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ‘কিন্তু শেষ মুহূর্তে বৈঠক স্থগিত করা হয়।’
আরও পড়ুন: জাতীয় উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করুন: জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন সভা স্থগিত করা হয়েছিল সেদিন প্রধানমন্ত্রীর একজন নতুন মুখ্য সচিব ও একজন নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আমরা আশা করি শিগগিরই স্থগিত সভা ডাকা হবে যেখানে দুই শীর্ষ আমলা উপস্থিত থাকতে পারেন।’
তিনি বলেন যে খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়টি প্রস্তাবিত বৈঠকে শীর্ষ অগ্রাধিকার পাবে। বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় নাম প্রকাশ করেননি।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন যে তার প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পিএমও ও বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে।
সরকারি সূত্র বলছে, পাওয়ার সেক্টরের রাজস্ব সংগ্রহের বিশাল ত্রুটি ঢাকতে খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর সরকারের পরিকল্পনার পটভূমিতে পিএমও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।
বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের কাছে কম দামে বিক্রির কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান হয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
কর্মকর্তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর পাইকারি বাজারে বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে লোকসান মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।
অবশিষ্ট ক্ষতি পূরণের জন্য ছয় বিতরণ কোম্পানিকে বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবনা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে জমা দিতে বলেছে। তারা ইতোমধ্যেই বিইআরসিতে খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
কিন্তু সরকারের খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজনে বিইআরসিকে এই বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একটি গণশুনানি অনুসরণ করতে হবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য প্রায় ৯০ দিন সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: বিজিবির প্রতি প্রধানমন্ত্রী
এমতাবস্থায়, কমিশনের গণশুনানি ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে সরকারকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজস্বভাবে জ্বালানি দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়ার জন্য ২৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বিইআরসি অধ্যাদেশ ২০২২ এর একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছে।
খুচরা বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের জন্য গণশুনানির আয়োজন করবে না-কি সরকার নিজেই খুচরা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তা নিয়ে বিইআরসি এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন যে পিএমও পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়, যাতে এটি ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে একটি নির্দেশ দিতে পারে।
কর্মকর্তারা আরও বলেছেন যে পরবর্তী গ্রীষ্মে পরিস্থিতি মোকাবিলায় পিএমও সভা থেকে একটি নির্দেশনাও আশা করা হচ্ছে, যা সাধারণত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে অতিরিক্ত লোড দিয়ে শুরু হয়। সাধারণত প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াটের অতিরিক্ত লোড আগামী গ্রীষ্মে কৃষি সেচ খাত থেকে আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আগামী বছরের মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া রোজার মাসেও আরও তিন হাজার মেগাওয়াটের লোড পড়বে।
তবে প্রাথমিক জ্বালানি সংকটের কারণে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর চাপে রয়েছে এবং আগামী বছরে একটি বড় ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই সমস্ত বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে যেখানে প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেছেন, উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হলেও সরকার ভর্তুকি মূল্যে সবাইকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু বৈশ্বিক মন্দা বিবেচনায় কম দামে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত মূল্যই দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দামও বেড়েছে। দেশের ব্যবসায়ীসহ সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে এবং গ্যাসের (বর্ধিত) মূল্য ও পরিবহন খরচের জন্য ব্যয়িত অর্থ পরিশোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তা না হলে আমরা বিদ্যুৎ দিতে পারব না। আপনি যদি বিদ্যুৎ চান, তাহলে আপনাকে আসল দাম দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানির খরচ মিতব্যয়িতার মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, যেখানে প্রাথমিক জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
আরও পড়ুন: বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের ডাককে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ: প্রধানমন্ত্রী
ভয়াবহ দূষণের মুখে পর্যটন শহর কক্সবাজার
কক্সবাজারের পর্যটন এলাকায় পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। কিন্তু স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (এসটিপি) রয়েছে মাত্র চারটি হোটেলে। যার কারণে ভয়াবহ দূষণের মধ্যে পড়েছে পর্যটন এলাকা।
জেলা প্রশাসনের র্যটন সেলেপর দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, কক্সবাজারে এসটিপি রয়েছে তিনটি পাঁচ তারকা ও একটি তিন তারকা হোটেলে। এছাড়া এসটিপিবিহীন তারকা মানের আরও আটটি হোটেল রয়েছে।
কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সংলগ্ন এলাকায় মাঝারি, ছোট, বড় আবাসিক হোটেল রয়েছে পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে শুধু পর্যটন শহরে রয়েছে সাড়ে তিন শতাধিক হোটেল।
তিনি জানান, তারকা মানের হোটেলকে নিজস্ব এসটিপি করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে অন্যান্য সব হোটেলের জন্য সেন্ট্রাল এসটিপি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ আইন না মেনে কক্সবাজার পর্যটন এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত আবাসিক হোটেল, বহুতল ভবন, স্টুডিও এপার্টমেন্ট। কক্সবাজার শহরের সাড়ে তিন শতাধিক আবাসিক হোটেলকে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (এসটিপি) স্থাপনের নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ হোটেলে এসটিপি করার জায়গা নেই। তাই জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে সেন্ট্রাল এসটিপি করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার সৈকতে বিশাল ‘প্লাস্টিকের দৈত্য’
তিনি আরও বলেন, এসটিপি না থাকায় ভয়াবহ পবিবেশ দূষণের কবলের পড়েছে পর্যটন জোন। পয়ঃনিষ্কাশনের ময়লাপানি আসে নালায়। যার কারণে পর্যটন এলাকায় থাকা নালা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
সেভ দ্য ন্যাচার এর চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন জানান, দেশবিদেশের পর্যটকরা নির্মল পরিবেশে ভ্রমণ করতে কক্সবাজারে আসেন। কিন্তু নানা কারণে এখানকার পরিবেশ দূষিত হওয়ায় পর্যটকদের মাঝে কক্সবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। হোটেলে এসটিপি স্থাপন না করায় পর্যটন শহরের পরিবেশ দূষিত হয়েছে। পর্যটকদের নাকে মুখে হাত দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ভয়াবহ দূষণে পড়েছে পর্যটন জোন। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি দুর্গন্ধের শহরে পরিণত হবে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুনাইদ জানান- এসটিপি স্থাপন তো দূরের কথা, এখনও পরিবেশ আইন না মেনে যেভাবে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এতে বসবাস অনুপযোগী হয়ে উঠছে পুরো শহরটি। তাই বর্তমান পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনগুলোর স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন। আর যারা আগে নির্মাণ করেছে তাদের স্থাপনা পরিবেশবান্ধব করতে পুনঃসংস্কার করা জরুরি। সেইসঙ্গে এসটিপি বাধ্যতামূলক করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করে। তাদের মলমূত্র এসটিপি ছাড়াই সাধারণ টয়লেট রিং এ জমা হয়। সেখান থেকে সরাসরি যায় নালায়। আর নালা থেকে সরাসরি যাচ্ছে স্থানীয় বাঁকখালী নদীতে। আর বাকঁখালী নদী হয়ে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। এসটিপি না থাকার কারণে পর্যটন, এলাকা, নদী ও বঙ্গোপসাগর দূষিত হচ্ছে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে পর্যটকরা যেমন বিমুখ হবে, তেমনি স্থানীয়দের জন্য বসবাস অনুপোযোগী হয়ে পড়বে এই কক্সবাজার শহর।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রঘুরে দেখলেন ৩৮ ভারতীয় ট্যুরিস্ট
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, দ্রুত সময়ে সেন্ট্রাল এসটিপি করা হবে। তা না হলে দূষণের মুখে পড়বে পর্যটন শহর কক্সবাজার শহর। তবে বর্তমানে যে সব নালা নর্দমা রয়েছে তা নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার জানান, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তিনস্তর বিশিষ্ট তার উর্ধ্ব হোটেলে নিজস্ব এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ‘সাধারণ আবাসিক হোটেল, মোটেল, কটেজ, গেস্ট হাউসের জন্য সেন্টাল এসটিপি করতে বলা হয়েছে। এসটিপি স্থাপন করা না হলে সংশ্লিষ্ট হোটেলের বিরুদ্ধে জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, কক্সবাজার শহরে আগে থেকে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এখন থেকে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী স্থাপনা হবে। এছাড়া পর্যটন শহরকে দূষণমুক্ত করতে এসটিপি স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারে ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেছেন, কক্সবাজারে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। তারকা মানের অসংখ্য হোটেল হয়েছে। এখন এসটিপি না থাকায় পরিবেশ প্রতিবেশ দূষণের মুখে পড়েছে। এতে পর্যটকরা বিমুখ হতে পারে। তাই কক্সবাজারে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল এসটিপি স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ২৯ টি প্রকল্পের উদ্বোধন, ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী
যুব মহিলা লীগ কি পাবে নতুন নেতৃত্ব?
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মহিলা যুব শাখার উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ নেত্রীরা গত ২০ বছরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। পাঁচ বছর পর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির তৃতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সবার প্রশ্ন একটাই- এই সম্মেলনে কি নতুন নেতৃত্ব আসবে?
নাজমা আক্তার ও অপু উকিল ২০০৪ সাল থেকে যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুটি পদে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই ইউএনবিকে তাদের আক্ষেপ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন।
এমন বাস্তবতায় পাঁচ বছর পর বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংগঠনটির তৃতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এদিকে এই সম্মেলনের মাধ্যমে যুব মহিলা লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আশা করছেন দলটির নেতারা।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী নেতারা এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে শীর্ষ দুই পদে নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছেন।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বলেন, ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘নেতৃত্বের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তিনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে। তিনি আমাকে যেখানে কাজ করতে দেবেন আমি সেখানে কাজ করব।’
আরও পড়ুন: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন আ.লীগের
যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, ‘সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্মেলন হচ্ছে। যুব মহিলা লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার তৈরি সংগঠন। জন্মলগ্ন থেকেই আমি সংগঠনের সঙ্গে আছি। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের অভিভাবক। আমরা তার ওপর ভরসা ও আস্থা রাখি। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা সেটাই মেনে চলবো। আমাদের প্রার্থী হওয়া মুখ্য বিষয় না। সবকিছুই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি বলেন, যুব মহিলা লীগের সৃষ্টি হয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রীদের জন্য। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এমন একটা সময়ে সংগঠনটি তৈরি করেছেন যখন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নারীদের ওপর পাশবিকতা চলছিল। রাজপথের যোদ্ধা হিসেবে তখন তিনি যুব মহিলা লীগ তৈরি করেন। আমরা চাই, নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ছাত্রলীগ করেছে তারা এবং তারুণ্য প্রাধান্য পাবে। তবে যুব মহিলা লীগের নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) যে সিদ্ধান্ত নিবেন, আমরা সবাই সেটা মেনে নিব।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সফাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপি, বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে জাকিয়া নূর লিপি এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার।
আরও পড়ুন: তদন্তের স্বার্থে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ: তথ্যমন্ত্রী
এছাড়া যুব মহিলা লীগ থেকে সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন- সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, সহ-সভাপতি শিরিনা নাহার লিপি, কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আলেয়া সারোয়ার ডেইজী ও আফরোজা মনসুর লিপি।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠাকালে যুব মহিলা লীগের ১০১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির প্রথম সম্মেলনে নাজমা আক্তার সভাপতি ও অপু উকিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৩ বছর পর যুব মহিলা লীগের দ্বিতীয় ও শেষ সম্মেলন ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে নাজমা আক্তার সভাপতি ও অপু উকিল সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় বিশৃঙ্খলা না করার আহ্বান কাদেরের