বিশেষ-সংবাদ
দুর্গাপূজা: এমন উৎসব যা বাংলাদেশকে এক করে
প্রেম ও সৌহার্দ্যের চেতনায় পরিপূর্ণ দুর্গাপূজা বাংলাদেশে একতার উৎসব।
সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠ যেই হোক না কেন, এই উৎসবে মণ্ডপে ভিড় করার, ঢাকের (একটি বিশেষ বাজনা যন্ত্র) ধ্বনিতে নাচার ও মনোরম ভোগ নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন না।
ফরিদপুর, নেত্রকোণা ও খুলনাসহ সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত দিন পার করছেন ‘পাল’ নামে পরিচিত প্রতিমা কারিগররা।
১ অক্টোবর উৎসব শুরু হবে ষষ্ঠী উপলক্ষে দুর্গার অবতারণার মাধ্যমে এবং প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে ৫ অক্টোবর।
প্রতিমাগুলো যেন সময়মতো প্রস্তুত হয় তা নিশ্চিত করতে পালরা দিনরাত কাজ করে চলেছে। উৎসব দরজায় কড়া নাড়ছে বলে প্রতিমার কারিগররা প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা কাজ করছে।
ফরিদপুর জেলার প্রতিমা কারিগর সুকুমার পাল বলেন, ‘প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিটি প্রতিমার জন্য ৪০ হাজার টাকা নিচ্ছি, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।’
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের আয় তেমন বাড়েনি।
এ ব্যাপারে জেলার বেলেশ্বরের বিশ্বজিৎ পাল জানান, শোভারামপুর বোর্ড অফিসের সামনে তিনি প্রতিমা তৈরি করছেন। এবছর প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করতে তিনি ৫০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। মোট আটটি প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি। এর মধ্যে ফরিদপুর শহরে একটি প্রতিমা তিনি গড়াচ্ছেন। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে তার প্রতিমা বেশি।
তিনি বলেন, এবছর জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে এই টাকা নেবার পরও তার হাতে তেমন কিছু থাকবে না।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, জেলার ৯টি উপজেলার ৮২৯টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি জানান, ‘শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে পূজা উদযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
এক্সপেরিমেন্ট করে ভুল করতে চাই: নুহাশ হুমায়ূন
তরুণ নির্মাতাদের অনেকেই এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের কনটেন্টকে। তাদেরই একজন নুহাশ হুমায়ূন। নাটক ‘হোটেল আলবাট্রোস’, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘৭০০ টাকা’ এবং সম্প্রতি ওয়েব সিরিজ ‘পেট কাটা ষ’ দিয়ে নিজের নির্মাণের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি। আর সম্প্রতি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’ ও আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হুলু’তে কনটেন্ট তৈরি নুহাশের ক্যারিয়ারে যোগ করেছে সফলতার নতুন পালক।
‘অস্কার কোয়ালিফাইং’ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মশারি’র জয় জয়াকারের পর সবার প্রশ্ন এখন একটাই, দেশের মানুষ কবে চলচ্চিত্রটি দেখতে পারবেন।
এপ্রসঙ্গে নুহাশ হুমায়ূন ইউএনবিকে জানান, অক্টোবরে আসতে যাচ্ছে প্রতীক্ষিত এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি। এছাড়া কাজের পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্মাতার একটি কাজের জন্য দর্শকদের আগ্রহ অনুপ্রেরণা জোগায়। মশারির জন্য হয়তো আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। আশা করি অক্টোবরে কাজটি সবাই দেখতে পারবে।’
আরও পড়ুন: ক্যারিয়ারের রোমাঞ্চকর একটি কাজ ‘বিউটি সার্কাস’: জয়া আহসান
তিনি আরও বলেন, ‘কাজের অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন। ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে এটি নির্মাণ করতে। মূলত ১০ বছর আগে এর গল্প মাথায় আসে। কিন্তু সেই সময় এমন একটা ফিকশন নির্মাণের জন্য যেমন সাহস করতে পারিনি, তেমনি সাপোর্ট ছিল না। যখন নির্মাণ শুরু করি তখনও অনেক ক্রিয়েটিভ সাপোর্টের অভাববোধ করেছি। তবে শেষ পর্যন্ত কাজটি শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ সাড়া পেয়েছি। এখন অপেক্ষা বাংলাদেশের দর্শকদের প্রতিক্রিয়ার।’
নুহাশ হুমায়ূনের মশারি নিয়ে আলোচনা শেষ না হতেই খবর বের হয় প্রথমবার কোনো নির্মাতা আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হুলু’র জন্য কনটেন্ট নির্মাণ করছেন। এরই মধ্যে কনটেন্টটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে রয়েছেন দেশের অনেক পরিচিত অভিনয়শিল্পী। কাজটির ব্যাপারে বেশ গোপনীয়তা বজায় রাখছেন নুহাশ। তার কারণ হুলু থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারের অপেক্ষা।
হুলুর কনটেন্ট নিয়ে নুহাশ বলেন, ‘হ্যালোইন উপলক্ষে হুলু কয়েকটি কনটেন্ট প্রযোজনা করেছে। সেগুলোর একটি আমার নির্মাণ করা। অক্টোবরে হ্যালোইন ডে’তে এটি প্রচার হবে। এটি একটি সিঙ্গেল কনটেন্ট। এর চেয়ে বেশি এখনি বলা সম্ভব নয়। হুলু অফিশিয়ালি ঘোষণার পর সবাই বিস্তারিত জানতে পারবেন।’
হুলুর কনটেন্টটি পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্যও লিখেছেন নুহাশ। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় এটি নির্মাণ হয়েছে। এ বছরই জানা যায়, হলিউডের দুই এজেন্সি অ্যানোনিমাস কনটেন্ট ও ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট এজেন্সির (সিএএ) সঙ্গে চুক্তি হয় নুহাশের। এর মাধ্যমেই হুলুর সঙ্গে যুক্ত হোন তিনি।
আরও পড়ুন: আমার সিদ্ধান্তে কোনো ভুল ছিল না: নাসির উদ্দিন খান
হুলুর কাজটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে ইউএনবিকে নুহাশ বলেন, ‘আমার কয়েকটি কাজ দেখে তারা আমাকে কাজটি দেয়। লস এঞ্জেলসে হুলুর অফিসে যখন যাই তখন বেশ ভয়ে ছিলাম। তবে মিটিংয়ের অভিজ্ঞতা বেশ পজিটিভ ছিল। তারা আমার সব পরিকল্পনার বেশ প্রশংসা করেছে। যা আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেয়।’
কাজের ক্ষেত্রে সবসময় এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করেন নুহাশ। প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন। তার নির্মাণ যেমন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের স্বীকৃতি পাচ্ছে, পাশাপাশি দর্শকদের মাঝেও জনপ্রিয় পাচ্ছে। তবে গল্প ভাবনার ক্ষেত্রে দর্শকের পছন্দ নাকি আন্তর্জাতিক পুরস্কারকে গুরুত্ব দেন তিনি? এমন প্রশ্ন রাখা হয় নুহাশের কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন,‘এভাবে আলাদা করে ভাবিনি। এটা ডিপেন্ড করে। তবে আমি সবসময় নিজের ভাবনাগুলো এক্সপেরিমেন্ট করতে চেয়েছি। ‘৭০০ টাকা’ স্বল্পদৈর্ঘ্যটি যখন জনপ্রিয়তা পায়, অনেকেই বলেছিলেন এমন কিছু আরও নির্মাণ করতে। আমি সেটা চাইনি। আমি প্রতিটি কাজ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই। এক্সপেরিমেন্ট করে ভুল করতে চাই। সেখান থেকে শিখতে চাই। আর একটি ব্যাপার,আমার এক্সপেরিমেন্ট করা কাজগুলোই দর্শক বেশি পছন্দ করেছেন। যার একটি ওয়েব সিরিজ ‘পেট কাটা ষ’।’
নুহাশ হুমায়ুনের ক্যারিয়ার খুব বেশি দিনের নয়। তার কথায়,পাঁচ বছর হয়তো। কিন্ত এই সময়ের মধ্যে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। তার ভিন্ন গল্পভাবনা জনপ্রিয় হয়েছে,দর্শকও প্রশংসা করেছে। এখন অপেক্ষা আলোচনায় থাকা মশারি ও হুলুর কনটেন্টটির জন্য।
তবে, নুহাশের ক্যারিয়ার গ্রাফ দেখার পর আশা করাই যায়,এবারও তার দারুণ মুন্সিয়ানা দেখতে পাবেন দর্শকেরা।
আরও পড়ুন: ঢাকার দর্শকদের মুগ্ধ করেছে শিরোনামহীন!
প্রাকৃতিক দুর্যোগে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চাষের পরামর্শ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবছরই বিপর্যয় ঘটছে সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি চাষে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অতিরিক্ত খরা আর ভাইরাসে উজাড় হচ্ছে চিংড়ি ঘের। এতে করে চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে বাগেরহাটে চাষিরা। এ অবস্থায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের পরামর্শ দিচ্ছে মৎস্য বিভাগ
ক্লাস্টার হলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত খামার সমষ্টি যা সাধারণত একই অঞ্চল ও পরিবেশে খুব কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত হয়। ক্লাস্টার পদ্ধতিতে খামারগুলোর মধ্যে বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য। যেমন: একই ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ বা অবকাঠামোর ব্যবহার, (যেমন- পানির উৎস, বর্জ্য নির্গমন ব্যবস্থা ইত্যাদি) একই বা কাছাকাছি চিংড়ি চাষ পদ্ধতির অনুসরণ, একই প্রজাতির মাছ বা চিংড়ি চাষ বা মিশ্রচাষ করা, উদ্যোগী সংশ্লিষ্ট দল হতে হবে।
চিংড়ি ক্লাস্টার এমন একটি সংগঠন যা একটি নির্দিষ্ট এলাকার চিংড়ি চাষিদের নিয়ে গঠিত হয় এবং সদস্যরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমন্বিত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: ভরা মৌসুমেও খুলনায় ইলিশের দাম চড়া
মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, সম্প্রতি বৃষ্টি এবং অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে জেলায় আট হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা সাত হাজার। জেলায় ৬৯ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ৭৭ হাজার ৬৫৭টি মৎস্য ঘের রয়েছে। জেলায় মোট মৎস্য চাষির সংখ্যা ৬২ হাজার।
বিদেশের বাজার ধরার স্বপ্ন দেখছে বাগেরহাটের ফল চাষিরা
বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি নানা জাতের ফল চাষ করে সাড়া ফেলেছে বাগেরহাটের কচুয়ার শিয়ালকাঠি গ্রামের কামরুল হাসান (৪০) নামের এক ব্যক্তি। তার ২১ বিঘার বাগানে দেশি-বিদেশি নানা ফল চাষ করে, মাত্র একবছরে তিনি ২৭ লাখ টাকা আয় করেছেন। বর্তমানে তিনি তার বাগানের ফল বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন।
কামরুল হাসান জানান, মাত্র ৪ বছর আগে শখের বসে বাড়িতে ১০টি ড্রাগনের চারা রোপণ করেন। প্রথম বছর ভাল ফলন না পেলেও হাল ছাড়েননি তিনি।
পরের বছর ড্রাগনের ভাল ফলন মেলে। এর পর একে একে ড্রাগন চাষ বাড়াতে থাকেন। সেইসঙ্গে আমেরিকা, জাপান,ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের নানা জাতের ফলগাছ লাগাতে থাকেন। কয়েকটি প্লটে বিভক্ত করে ২১ বিঘা জমিতে দেশি-বিদেশি নানা ফল লাগিয়ে গড়ে তোলেন এই ফলবাগান।
পরবর্তীতে কামরুলের দেখাদেখি ওই এলাকার অনেক যুবক বিদেশি ফল চাষে ঝুঁকেছে।
কামরুলের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে বিদেশি নানা জাতের ফলের সমারোহ। গাছে গাছে বিভিন্ন দেশের নানা জাতের ফল ঝুলছে, আর বাতাসে দোল খাচ্ছে। বাগানে ড্রাগন, মাল্টা, আম, পেয়ারা, বাতাবিলেবু (জাম্বুরা), কমলা, আনারস,বেল,আতা,শরিফাসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশি ফল দেখা গেছে। আবার কোন গাছে ফুল ধরেছে।
আরও পড়ুন: ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ বাংলাদেশ: কৃষিমন্ত্রী
ভরা মৌসুমেও খুলনায় ইলিশের দাম চড়া
ভরা মৌসুমেও দাম বেশি হওয়া খুলনায় ইলিশ মাছ সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। বিভিন্ন বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা, ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় দাম কমার আশায় আছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা।
খুলনার পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১ জুলাই থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও চাহিদার তুলনায় মাছের সরবরাহ কম থাকাতে এখন প্রতিটি পাইকারি ও খুচরা বাজারে ইলিশ দাম বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই বাজারে যাচ্ছেন কিন্তু ইলিশ না কিনে ফিরছেন।
খুলনার গল্লামারি বাজার, সন্ধ্যা বাজার, নিউমার্কেট বাজার, রুপসা বাজার, নতুন বাজার, বয়রা বাজার, খালিশপুর বাজারসহ সকল বাজারে ইলিশের দাম চড়া।
আরও পড়ুন: তীব্র খরায় বাগেরহাটে আমন উৎপাদন ব্যাহত
খুলনার পাইকারি মাছ বাজারের দেড় কেজি ইলিশ প্রতি মণ (৫৫ হাজার থেকে ৫৭ হাজার) টাকা, এক কেজি ইলিশ প্রতি মণ (৫০ হাজার থেকে ৫২ হাজার) টাকা, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ (৪৩ হাজার থেকে ৪৪ হাজার) টাকা এবং ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ (৩২ হাজার থেকে ৩৩ হাজার) টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফলে বড় ইলিশ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ভাগ্যে জুটছে না।
খুলনার ৫ নং ঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের আওতাধীন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং রূপসা মাছ বাজার খুলনায় পাইকারি ইলিশের উল্লেখযোগ্য দুটি ব্যবসা কেন্দ্র।
এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রায় ছয় দশক ধরে পাইকারি মৎস্য বিক্রয় করছেন শেখ সাইদুল ইসলাম। ১৯৫৯ সাল থেকে তার বাবা এই ব্যবসা শুরু করেন এবং বাবার হাত ধরে তিনি এই ব্যবসায় আসেন। তিনি ছাড়াও এই কেন্দ্রে ছয় জন মৎস্য ব্যবসায়ী (মহাজন) রয়েছেন।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
শেখ সাইদুল ইউএনবিকে জানান, দক্ষিণ বাংলার বরিশাল, বরগুনা, ভোলা থেকে এখানে ট্রলারে করে ইলিশ মাছ আসে। যা সকাল ১০টার মধ্যে খুচরা বিক্রেতারা ক্রয় করে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন সড়ক ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় জেলেরাই ট্রাক ও পিকআপে করে ইলিশ নিয়ে যায়। আগে মহাজনরা মাছ বিক্রি করে পাঁচ শতাংশ কমিশন পেত, এখন সেটি তিন শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি জানান, গত বছর তিনি আট কোটি টাকার মাছ বিক্রি করলেও তেমন মুনাফা অর্জন করতে পারেননি।
এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর ফলে আরেক দফা ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুলনা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীতে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে যা ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
আরও পড়ুন: খুলনায় ‘অপরিকল্পিত’ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মরে যাচ্ছে শত শত গাছ
খুলনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, এবার ইলিশের দাম বেশি হওয়ার কারণ ডিজেলের (তেল) দাম বৃদ্ধি, আশানুরূপ মাছ না পাওয়া এবং একশ্রেণির ধনী মানুষের নিম্নবিত্তের দিকে না তাকিয়ে ফ্রিজে ইলিশ কিনে ভর্তি করে রাখা।
উল্লেখ, গত ১ নভেম্বর ২০২১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। ১ জুলাই থেকে মাছ ধরা শুরু হলেও গত বছরের তুলনায় এবারের উৎপাদন কম। আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শেষ দিন পর্যন্ত মা ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে: বিশেষজ্ঞরা
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন, চীনা পোশাক শিল্পের শেয়ার কমে যাওয়ায় ইউরোপ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সম্ভাব্য বাজার তৈরি।
২০৩০ সালে বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্প বাজারের আকার হবে প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এই সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা বৈশ্বিক বাজারের অন্তত ১০ শতাংশ বা ১০ হাজার কোটি ডলার পাওয়ার আশা করছেন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্প বাজারের আকার প্রায় ৫৬ হাজার কোটি ডলারের। যেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি অংশ হচ্ছে চার হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুনের হিসাবে ৩৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে একটি ভালো সূচনা দেখা যাচ্ছে। জুলাই থেকে আগস্টের আয় ৭১১ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দায়িত্বশীল হতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ইউএনবিকে জানিয়েছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের জন্য সম্ভাব্য ক্রমবর্ধমান বাজার।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের দুই হাজার ডলারের অতিরিক্ত রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে। আবদুর রাজ্জাক তথ্যটি উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে এই বাজারে দেশটি তার রপ্তানি সম্ভাবনার ৬০ শতাংশেরও কম ব্যবহার করতে পারে।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপম্যান্টেরও চেয়ারম্যান রাজ্জাক জানিয়েছেন, ১০ হাজার ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেশটিকে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বার্ষিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
তিনি তার মতামত দিয়েছেন- পশ্চিমা ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে পশ্চিমা দেশের বাজারে যেহেতু চীনা পোশাক রপ্তানির শেয়ার হ্রাস পাচ্ছে, তাই বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে।
তিনি বলেন, চীন কম মূল্য সংযোজিত পোশাক থেকে সরে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে।
আরও পড়ুন: কানাডায় পোশাক রপ্তানি বাড়াতে চায় বিজিএমইএ
রাজ্জাক পরামর্শ দেন, ইইউ পোশাক বাজারের আকার ২০ হাজার কোটি ডলার, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি ডলার। চীনের বাজার প্রায় এক হাজার ১০০ ডলার, এদিকে ভারতের বাজার ১১০ কোটি ডলার। তাই বাংলাদেশকে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এর রপ্তানি অংশ যথাক্রমে ১২ ও ১৫ শতাংশ বাড়াতে হবে।
২০৩০ সালে ইইউ বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি অংশ হবে ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং যুক্তরাষ্টের বাজারে সংখ্যাটি দাঁড়াবে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারে। যা করোনা মহামারি সত্ত্বেও দেশের স্থিতিস্থাপকতার বিবেচনায় অর্জনযোগ্য দিক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে দেশের মানুষের স্থিতিস্থাপকতার কারণে দেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মেয়াদে ইইউয়ের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। যা উক্ত বাজারে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখায়।
ডা. রাজ্জাক অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ১০ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা মসৃণ পথের হবে না। লজিস্টিক সুবিধা, বন্দর পরিচালনার ক্ষমতা ও দক্ষ শ্রম, পরিবেশ এবং শ্রমিক অধিকার উল্লেখযোগ্য বিবেচ্য দিক হতে পারে।
আগামী বছরগুলোতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে অবশ্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রপাতি সজ্জিত দক্ষ শ্রম এবং শ্রমিকদের মজুরি সন্তুষ্টির ওপর জোর দিতে হবে।
আরও পড়ুন: রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষিকে আরও উন্নত করতে চাই: কৃষিমন্ত্রী
তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সেবা উন্নত করতে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে ইউএনবিকে বলেছেন, সংস্থাটি দেশিয় বা যেকোনো বিদেশি কোম্পানি হতে পারে, তবে এর মান অবশ্যই আন্তর্জাতিক হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান বলতে শুধু বিদেশি কোম্পানিকে বুঝানো হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মানের দেশিও হতে পারে বা বিদেশিও হতে পারে।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, মূলত গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আর যাত্রী ভোগান্তির কারণে তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করা হবে।
যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড এবং কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের কাছে আউটসোর্স করা হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে অনেকবার যথেষ্ট কঠোরভাবে বলা হয়েছে একটি লাগেজও যাতে নষ্ট না হয়। লাগেজটাকে যেন মানুষের মতো ফিল (অনুভব) করা হয় কিন্তু তারা শুনছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।
পড়ুন: ঢাকার নদী দূষণে মূল দায়ী ওয়াসা: এনআরসিসি চেয়ারম্যান
তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা, যেখানে যাত্রীর কোনো অভিযোগ থাকবে না। দ্রুত সেবা দেয়া যাবে। যাতে কোনো যাত্রী ভোগান্তি না হয় এবং সরকারের আয়ও বাড়বে।’
তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ইউএনবিকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করার কথা ভাবছি। তখন সমস্ত নিয়ম ও শর্ত পরিপালন করে যারা যোগ্য বিবেচিত হবেন তারাই এই টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ পাবেন। আমাদের লক্ষ্য যাত্রীদের উন্নত সেবা প্রদান করা, তার জন্য করণীয় সকল কাজ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের কাজের মান নিয়ে কোন ধরনের আপোষ করা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। দরপত্রে উল্লেখিত মানের পণ্যই এই প্রকল্পের কাজে সরবরাহ নেয়া হবে, অন্য কোন কিছু গ্রহণ করা হবে না। রাষ্ট্রের বা জনগণের এক পয়সা ক্ষতি হয় এরকম কোন কিছু এখানে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান উন্নত দেশে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে এমন প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হবে। বিমানবন্দরের সেবার মান নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো আপস করব না।
মাহবুব আলী বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রীরা যাতে কোন হয়রানির শিকার না হন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন এয়ারপোর্টে যে সেবা দেয়া হয়, সেই ধরনের আন্তর্জাতিক সেবা যাতে দেয়া হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করবো।
পড়ুন: তীব্র খরায় বাগেরহাটে আমন উৎপাদন ব্যাহত
কফি, একাকীত্ব বা সুখ: বিশ্বের ‘উদ্ভট’ যত মন্ত্রণালয়
তীব্র খরায় বাগেরহাটে আমন উৎপাদন ব্যাহত
আমন ধান উৎপাদনে বিপর্যয় বাগেরহাটে আসন্ন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাগেরহাটে ৪৮৯ মিলিমিটার কম বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমন মৌসুম প্রায় শেষের দিকে খরার পরিস্থিতির কারণে জেলার প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে আছে।
পানির অভাব কৃষকদের আমনের চারা রোপণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে এবং যারা ইতোমধ্যে চারা রোপণ করেছেন তারা তাদের ফসল হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ধান চাষ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা এবং কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাতের কথা ভাবছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে মোট দুই লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮টি কৃষক পরিবার রয়েছে। ১ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন ধান রোপনের মৌসুম। বাগেরহাট জেলায় এ বছর ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত আবাদ হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় বন্ধ হওয়া ৬ ট্রেন চালু হয়নি, দুর্ভোগে যাত্রীরা
এছাড়া বাগেরহাটে চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত দুই হাজার ৫৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে তিন হাজার ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সে হিসাবে জেলায় ৪৮৯ মিলিমিটার কম বৃষ্টি হয়েছে।
বাগেরহাটের কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানকার সব ধান খেতে ফাটল ও আগাছা দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটে উদ্বিগ্ন কৃষকরা সেচের মাধ্যমে চারা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। জেলার সদর, শরণখোলা ও মোল্লারহাট উপজেলায়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয় কৃষক শেখ আসাদুর রহমান প্রতি বছর পাঁচ একর জমিতে ধান লাগান। জমিতে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে তিনি সংসার চালান। এ বছর মৌসুমের শুরুতে জমিতে প্রথমবার যে বীজপাতা তৈরি করেছিল তা বীজতলায় মারা গেছে। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে অল্প পরিমাণ জমিতে বীজপাতা তৈরি করেছে। দুইবারের চেষ্টার বীজপাতা এখন গরু-ছাগলে খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
কৃষক আসাদ বলেন, শুকনো জমিতে চারা রোপণ করা যায় না। এ মৌসুমে পানির অভাবে কোনো চারা রোপন করতে পারিনি। আমন চাষের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, মানে এ বছর আমি ধান চাষ করতে পারব না। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।
বিভিন্ন দেশে কৃষি সেক্টর ঘুরে দেখা ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, নেদারল্যান্ডে শতকরা ৬০ শতাংশ পানি নদী-খালে বাষ্পীভূত হয়। কীভাবে ওই বাষ্পীভূতকে রোধ করে সেচের ব্যবস্থা করা যায় কি না তা নিয়ে তারা গবেষণা করছে। মাটি এবং পানি নিয়ে গবেষণা করলেও আমরা কিন্তু তা করছি না।
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাস অনেক দেশের কৃষি পদ্ধতি দেখেছেন। ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জেলায় চলমান কৃষি সঙ্কট নিরসনে কিছু ধারণা দেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় ‘অপরিকল্পিত’ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মরে যাচ্ছে শত শত গাছ
তিনি বলেন, পানি ও মাটি নিয়ে গবেষণা করে ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সৌরশক্তি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া বর্তমান সেচ পদ্ধতিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে এবং বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে।
বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান পানি সংকট মোকাবিলায় ধান চাষে পানির পাম্প ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর জানান, ক্ষতি কমানোর জন্য, আমরা কৃষকদের বিআর-২৩ জাতের ধান চাষ করতে এবং সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। বর্তমানে জেলায় চার হাজার ৫০০ সেচযন্ত্র চালু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জনবল সংকটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ও এইচডিইউ সেবা বন্ধ
তিনি জানান, চারা রোপণের সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
আজিজুর বলেন, সরকার এ বছর আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হারাবে কি না তা জানতে আমাদের ফসল কাটার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কফি, একাকীত্ব বা সুখ: বিশ্বের ‘উদ্ভট’ যত মন্ত্রণালয়
সরকার সৃজনশীল হলে কি সে দেশ ‘উদ্ভট’ সব মন্ত্রণালয় পায়? এই যেমন ধরুন কফি, একাকীত্ব, সুখ অথবা যোগ মন্ত্রণালয়!
বিশ্বের এরকম ‘উদ্ভট’ কিছু মন্ত্রণালয় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:
পাপুয়া নিউগিনির কফি মন্ত্রণালয়
পাপুয়া নিউগিনিতে সবচেয়ে বেশি চাষ হওয়া ফসলের মধ্যে কফি অন্যতম। দেশের কৃষি রপ্তানির প্রায় ২৭ শতাংশই কফি। তাছাড়া দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে ছয় শতাংশ কফি শিল্পের অবদান।
সম্ভবত সে কারণেই পাপুয়া নিউগিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে ২০২২ সালের আগস্টে জো কুলিকে দেশের প্রথম কফিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। মারাপেকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় গণমাধ্যম উল্লেখ করেছে, ‘মন্ত্রীর কাজ কফি, কফি ও কফির দিকে মনোযোগ দেয়া।’
জাপানের একাকীত্ব মন্ত্রণালয়
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপান সরকার তেতসুশি সাকামোটোকে একাকীত্ব মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে অনন্য এক মন্ত্রিসভার দৃষ্টান্ত তৈরি করেন।
জাপানি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে জাপানে এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো; বিশেষ করে নারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার হার মোকাবিলা করাই মন্ত্রণালয়টির লক্ষ্য।
একাকীত্ব মন্ত্রী সাকামোটো তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি সামাজিক একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতা দূর করতে এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষার জন্য নানা কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
জাপান সম্ভবত যুক্তরাজ্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মন্ত্রণালয়টি শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য ২০১৮ সালে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মতো সমস্যাগুলোয় মানুষকে সাহায্য করতে ট্রেসি ক্রাউচকে একাকীত্বের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করে।
আরও পড়ুন: গ্রীন কফি: উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বানানোর নিয়ম
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুখ মন্ত্রণালয়
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি সুখ মন্ত্রণালয় স্থাপন করে এবং ওহুদ আল রৌমিকে তার নাগরিকদের মধ্যে সুখ বাড়ানোর দায়িত্ব অর্পণ করে এর মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করে।
একাধিক টুইট বার্তায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম আরও সুখী মানুষ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রৌমি পরিকল্পনা, প্রকল্প, প্রোগ্রাম ও সূচক প্রকাশ করার মাধ্যমে জনগণের সাধারণ মেজাজের উন্নতি করবে।
আরও পড়ুন: ‘সুখী নেপাল, সমৃদ্ধ নেপাল’ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ: রাষ্ট্রপতি
এখানে আরও উল্লেখ করা যেতে পারে যে ২০১৪ সালে জাপান হারুকো আরিমুরাকে দেশের প্রথম বেসরকারি টয়লেট মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়।
ভারতের যোগ মন্ত্রণালয়
একই বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় চিকিৎসা ও যোগব্যায়ামকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি অনন্য মন্ত্রণালয় তৈরি করেন, যোগ মন্ত্রণালয়। আর শ্রীপদ নায়েককে যোগমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এক বছর পরে দেশটি প্রথমবারের মতো যোগ দিবস উদযাপন করে।
আরও পড়ুন: করোনা: উদ্বেগ দূর আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে যোগব্যায়াম
ঢাকার নদী দূষণে মূল দায়ী ওয়াসা: এনআরসিসি চেয়ারম্যান
নদী বাঁচাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও দূষণ ও দখল রোধে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাই ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলো এখনও দূষিত হচ্ছে।
ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করেছেন।
ঢাকা ওয়াসার পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন লাইন নির্মাণে ব্যর্থতায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা ও এর আশেপাশের কারখানাগুলো নদীতে বর্জ্য ফেলে। গৃহস্থালি ও শিল্প কারখানার বর্জ্যের সংমিশ্রণে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার মতো নদীগুলোকে পরিণত করেছে ‘ইকোলজিক্যালি ডেড’।
আরও পড়ুন: নিজের বাসার পানিতেও গন্ধ পান ওয়াসার এমডি
মনজুর বলেন, ‘ঢাকা শহরে উৎপাদিত মানববর্জ্য সব চলে যায় আশপাশের চারটি নদীতে। ঢাকা ওয়াসার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার কারণে এমনটি হয়েছে। মলমূত্র ও বৃষ্টির পানি একই পাইপের মাধ্যমে নদীতে যায়। বর্জ্যের সঠিক প্রবাহের জন্য আলাদা পাইপ স্থাপন করা ওয়াসার দায়িত্ব। তারা তা করেনি, ফলে নদীগুলো দ্রুত দূষিত হচ্ছে।’
এনআরসিসি চেয়ারম্যান যোগ করেন, যদিও নদীগুলোর দখলকৃত জমির বেশিরভাগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, তবে দায়ীদের আইনের আওতায় না আনায় দূষণ বন্ধ করা যায়নি।
মনজুর আরও বলেন, ‘ঢাকা ও এর আশেপাশে অন্তত চার কোটি মানুষ বাস করে। কিন্তু এমন একটি নদী বা জলাশয় নেই যেখানে মানুষ গোসল করতে পারে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন, উজানে পানি প্রত্যাহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন দেশের নদীগুলোতে প্রভাব ফেলছে। নদী সংরক্ষণের জন্য কাজ করা একটি সংস্থা হিসাবে এনআরসিসি এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে সূক্ষ্মভাবে সচেতন।’
এনআরসিসি সম্পর্কে মনজুর বলেন, সংস্থাটির ভূমিকা হল সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ প্রদান করা।
মনজুর বলেন, ‘এনআরসিসি একটি অপেক্ষাকৃত নতুন সংস্থা। আমাদের দেয়া কিছু সুপারিশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং বাকিগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহায়তায় এ পর্যন্ত আমরা ৫৭ হাজার অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করেছি এবং তাদের মধ্যে ১৪ হাজার উচ্ছেদ করেছি।’
আরও পড়ুন: খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার সহযোগিতা তেমন পাইনি: প্রতিমন্ত্রী
নদীর সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে এনআরসিসি চেয়ারম্যান বলেন যে এটি একটি কঠিন কাজ।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি নদীগুলোরও ধীরে ধীরে সীমানা নির্ধারণ করা হবে বলে আশা করছি।’
এনআরসিসি যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে সে বিষয়ে মনজুর বলেন যে এটি সম্পূর্ণ হওয়া এখনও বাকি।
এনআরসিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মাস্টার প্ল্যান তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। আমি আশা করি আমরা অল্প সময়ের মধ্যে মাস্টার প্ল্যান সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’
সাক্ষাৎকারের সময় তিনি ইউএনবিকে জানান, তার সংস্থার লক্ষ্য ২০২৩ সালের ১৭ মার্চের মধ্যে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ বন্ধ করা। কারণ দিনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।
মনজুর বলেন, ‘আমরা শিগগিরই শহরের চারপাশের নদী দূষণ বন্ধ করতে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করব। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে ও নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: পানিতে ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করবে ঢাকা ওয়াসা: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী