বিশেষ-সংবাদ
অরক্ষিত রেলক্রসিং: ফেনীতে ৭ মাসে ৯ জনের মৃত্যু
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ফেনী অংশে শশর্দী থেকে মুহুরীগঞ্জ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে অনুমোদনহীন অরক্ষিত ১২টি ও ২১টি অনুমোদিত রেলক্রসিং রয়েছে। চলতি বছরের ৭ মাসে রেলপথের ফেনী অংশে ট্রেনে কাটা পড়ে ৯ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
ট্রেনকে ভ্রমণের অন্যতম নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা সত্ত্বেও প্রতি বছর বাংলাদেশে রেল দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা যায়। জানুয়ারি ২০২২ সালে প্রকাশিত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ১২৩টি রেল দুর্ঘটনায় প্রায় ১৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
গত ২৯ জুলাই মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ১১ তরুণের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও দুজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে নিরাপদ রেলক্রসিংয়ের বিষয়টি ফের সামনে উঠে আসে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী (পথ) রিটন চাকমা জানান, প্রতিনিয়ত ইচ্ছেমতো রেলের ওপর দিয়ে পথ তৈরি করা হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব ক্রসিংগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মুহুরীগঞ্জে। এখানে ৬টি অনুমোদনহীন রেলক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শর্শদী, দেওয়ানগঞ্জ, ফাজিলপুরে রয়েছে আরও ৬টি। সবচেয়ে ঝূকিপূর্ণ হচ্ছে মুহুরীগঞ্জ।
ফেনীর বারাহীপুর রেলক্রসিং এলাকার দায়িত্বে থাকা গেটম্যান জীবন জানান, ট্রেন আসার আগেই গেট বন্ধ করা হয়। কিন্তু গাড়ীর ড্রাইভার ও পথচারীরা দ্রুতত রেল লাইন পার হওয়ার চেষ্টা করে। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়।
অনুমোদনহীন এসব রেলক্রসিং প্রসঙ্গে ফেনী রেলস্টেশন মাস্টার সাইফুল ইসলাম বলেন, রেলপথের পাশে বসতঘর থাকায় বিভিন্ন সময় অনুমোদনহীন ক্রসিং তৈরি করা হয়। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা অনেক বেশি বাড়ছে।
রেলওয়ে পুলিশের ফেনী ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নফিল উদ্দিন জানান, চলতি বছরের ৭ মাসে রেলপথের ফেনী অংশে ট্রেনে কাটা পড়ে ৯ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় ৯টি অপমৃত্যুর মামলাসহ ১২ মামলা রেকর্ড হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত বছরের ১১ অক্টোবর ভোরের দিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফতেহপুর রেলক্রসিংয়ে যাত্রীবাহি বাস রেললাইনে উঠে পড়লে ট্রেনের সাথে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ৪ ব্যক্তি প্রাণ হারান। এছাড়া বারাহীপুর রেলক্রসিং, শহরের রেলগেট ক্রসিংয়ে সাম্প্রতিককালে দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রাণহানিও হয়।
পড়ুন: মিরসরাই ট্রাজেডি: আয়াতের পর এবার চলে গেলেন তাসমির হাসান
বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
বঙ্গোপসাগরে পশুর এবং বলেশ্বর নদীর মোহনায় বেহুন্দিসহ নানা ধরনের জাল পেতে রাখার কারণে ইলিশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঝাঁক বেঁধে ইলিশ নির্বিগ্নে উপকূলের নদ-নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে করে সাগর এবং নদ ও নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য কমে গেছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইলিশের ওপর পড়েছে।
বিচরণ কমে যাওয়ায় জেলেরা জাল ফেললেও কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। ট্রলারের সক্ষমতা না থাকায় এই অঞ্চলের জেলেরা গভীর সাগরে যেতে পারেনা। ফলে উপক‚লীয় জেলা বাগেরহাটের পাইকারি মাছের আড়তে ইলিশের সরবারহ অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় জেলে, ট্রলার মালিক, আড়তদার এবং ইলিশ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, মাছের প্রজননের সময় কেবলমাত্র বাংলাদেশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণায় আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে সাগরে অবরোধের দাবি করেছেন সুন্দরবন অধ্যুষিত উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার জেলেরা। তবে প্রজনন বাড়াতে নদ ও নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার পক্ষে মৎস্য বিভাগ।
অপরদিকে, জেলা মৎস্য বিভাগ এবং সুন্দরবন বিভাগ সাগর মোহনায় ইলিশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
বাগেরহাট অঞ্চলের জেলে ও ট্রলার মালিকরা বড় বড় টোলিং জাহাজ বন্ধ এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অবরোধের দাবি জানিয়েছে। জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
মৎস্য বিভাগ বলছে, সুন্দরবন মাছের অনেক বড় প্রজনন ক্ষেত্র। এজন্য গোটা সুন্দরবনের নদ-নদীতে সারা বছর জুড়ে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা গেলে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে।
সুন্দরবন বন বিভাগ জানায়, গোটা সুন্দরবনে সারা বছর মাছ আহরণ বন্ধ রাখতে হলে আগে জেলেদের বিকল্প কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
শনিবার বাগেরহাট কেবি বাজার পাইকারি মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশ নিয়ে কোনো ট্রলার ঘাটে ভেড়েনি। ট্রলার শূন্য আড়তের ঘাট। আড়তে ইলিশ নেই বললেই চলে। সামান্য পরিমাণ ইলিশ ছিল যা কোল্ডস্টোর থেকে আড়তে তোলা হয়েছে। তবে আড়ত জুড়ে ইলিশের ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে বিপর্যস্ত যশোরের সবজির বাজার
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে যশোরের সবজি বাজারে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। দাম বেড়েছে পাইকারি বাজারেও। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
দেশের চাহিদার বেশিরভাগ সবজির জোগান দেয়া হয় যশোর থেকে। শহরে পশ্চিম-উত্তর প্রান্তে সাতমাইলে বাজারে রয়েছে পাইকারি সবজির হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখান থেকে সবজি কিনে বিক্রি করেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে সবজির হাটে।
হাটের দিন রবিবার সাতমাইল-বারীনগরে দেখা মেলেনি আগের সেই জৌলুস। পাইকার ও চাষিদের পদচারণায় সেখানটি মুখরিত হলেও এদিনের চিত্র ছিল ভিন্ন।
ব্যাপারিরা বলছেন, তেলের দাম বৃদ্ধিতে ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধির কারণে প্রায় সব সবজিতে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে। এখন সবজি কিনলে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন কিনা লোকসানে পড়ার আশংকা থেকে তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন।
স্থানীয় ব্যাপারি বাবু বলেন, তরকারি বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে করে আমাদের ব্যবসা করার কোন পরিস্থিতি নেই। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সবজি ঢাকায় নিতে পরিবহন খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি কেজিতে ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৫ টাকা। সব মিলিয়ে কতটুকু লাভ করতে পারবো সেই সংশয়ে অনেক ব্যাপারি গতকাল হাটে আসেনি।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে মাটি ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষ
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: বাড়ছে গণপরিবহন ও লঞ্চের ভাড়া
দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে গণপরিবহন ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শনিবার সকাল থেকে সরকার নির্দেশিত নতুন দাম কার্যকর হওয়ায় সড়ক ও নৌ উভয় রুটের পরিবহন খাতের জ্বালানি খরচ ১৩ দশমিক ১৬ থেকে ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এনার্জি অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্স ডিভিশনের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১১৪ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম যথাক্রমে ১৩০ ও ১৩৫ টাকা লিটারে বাড়িয়েছে সরকার।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৩৪ টাকা বৃদ্ধির ফলে প্রতি কিলোমিটার যাত্রীপ্রতি ৫২ সিটের দূরপাল্লার বাস ভাড়া ০.২৯২ টাকা বা ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়বে এবং শহর এলাকায় ৫২ সিটের বাসের ভাড়া ০.২৮৩ টাকা বা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যানুসারে, একইভাবে ডিজেল চালিত মোটর লঞ্চের প্রতি কিলোমিটার যাত্রীপ্রতি ভাড়া ০.৪২ টাকা বা ১৯.১৮ শতাংশ বাড়তে পারে।
বিশ্লেষণ অনুসারে, প্রতি কিলোমিটার দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বর্তমান ১.৮০ টাকার বিপরীতে ২.০৯২ টাকা হতে পারে।
একটি সিটি কোচের জন্য, বর্তমান ২.১৫ টাকা থেকে প্রতি কিলোমিটার যাত্রীপ্রতি ভাড়া বেড়ে ২.৪৩ টাকা হবে।
একইভাবে প্রতি কিলোমিটার লঞ্চ ভাড়া বর্তমান ২.১৯ টাকা থেকে বেড়ে ২.৬২ টাকা হবে বলে জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছিল।
শুক্রবার জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) পেট্রোলিয়ামের দাম সামঞ্জস্য করেছে। কারণ বিশ্ব বাজারে এগুলোর দাম দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘যতদিন সম্ভব হয়েছে সরকার জ্বালানির দাম বাড়ায়নি। এখন বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু সমন্বয় করতে হবে।’
তবে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হলে দাম কমতে পারে বলে কিছুটা আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানির দাম কমায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেই অনুযায়ী জ্বালানির দাম সংশোধন করা হবে।’
নসরুল হামিদ আরও বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় অনেক দেশই নিয়মিত দামের সমন্বয় করছে।
এছাড়াও, বিপিসি ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গত ছয় মাসে পেট্রোলিয়াম বিক্রিতে আট হাজার ১৪ দশমিক ৫১ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
আরও পড়ুন: ১২ কেজি এলপিজির দাম কমল ৩৫ টাকা
ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ল: কৃষি মন্ত্রণালয়
বাগেরহাট: লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি বাড়ছে, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
বাগেরহাটে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। দিন-রাতে তিন থেকে চার বার লোডশেডিং করা হচ্ছে শহরে। আর গ্রাম অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বেশি। লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাসা-বাড়িতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতির মুখে রয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিদিন চাহিদায় তুলনায় ২৫ মেগাওয়াট এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদার তুলনায় আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে। সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।
জানা গেছে, বাগেরহাটের গ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবারহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। আর বাগেরহাট পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহের দায়িত্বে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। সব ধরণের ব্যবসা-বার্ণিজ্য এবং উৎপাদনমুখী কলকারখানায় লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মালটিমিডিয়া ক্লাশ করানো সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় ঘুরছে না ফ্যান আর জ্বলছে না লাইট।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিড থেকে বাগেরহাট ১৩২/৩৩ কেবি গ্রিড উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবারহ করা হয়। এই উপকেন্দ্র থেকে বাগেরহাট জেলা এবং পিরোজপুরের সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবারহ করে। বাগেরহাট উপকেন্দ্রের প্রতিদিন পিক আওয়ারে চাহিদা ৯৮ মেগাওয়াট। সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন জানান, জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক সংখ্যা তিন লাখ ৪০ হাজার। ৬১টি ফিডারের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবারহ করা হয়। প্রতিদিন তাদের চাহিদা রয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু সেখানে তারা পাচ্ছে ৫০ মেগাওয়াট। ২৫ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। দিন-রাতে চার বারে চার ঘণ্টা লোডশেডিং করে বিদ্যুতের ঘাটতি মিটানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর ইউনিয়নে সতী নদীতে বাঁশ এবং ড্রাম দিয়ে ৫০ ফুট দীর্ঘ ভাসমান সেতু নির্মাণ করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন শালমারা ঘোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম আলী (৪৫)।
ইব্রাহিম আলীর এই উদ্যোগের কারণে শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১৫ হাজার গ্রামবাসী এখন সেতুটি ব্যবহার করে নদী পার হতে পারছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় ‘অপরিকল্পিত’ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মরে যাচ্ছে শত শত গাছ
প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম আলী বলেন, নদীর ওপর কংক্রিটের ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পরও যখন কেউ মেরামতের জন্য এগিয়ে আসেনি, তখন আমি শিক্ষার্থীসহ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য স্থানীয় দু-চারজন লোকের সহায়তায় নিজেই একটি ভাসমান বাঁশের সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিই। আর এই সেতু নির্মাণে ২০টি ড্রাম এবং শতাধিক বাঁশ ব্যবহার করেছি।
নওদাবাস দাখিল মাদরাসার সুপার মো. রুহুল আমিন বলেন, সেতুতে লাখেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। সতী নদীর ওপর কংক্রিটের সেতুটি এক বছর ধরে ভেঙে পড়ায় নদীর দুই পাড়ের গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
খুলনায় ‘অপরিকল্পিত’ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মরে যাচ্ছে শত শত গাছ
অপরিকল্পিতভাবে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার শিবসার চরে বনায়ন প্রকল্পের শতাধিক গাছ মরে যাচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলার শিবসার নিম্নাঞ্চলে লবণ পানির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এই বেড়িবাঁধের উদ্বোধন করেন।
বেড়িবাঁধের কারণে মাত্র তিন মাসের মধ্যে বাঁধের ভেতরে পানি জমে এলাকার গাছপালা মারা যাচ্ছে। ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় পৌরসভাকে বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন পাইকগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
আরও পড়ুন: গণপরিবহন বন্ধ, খুলনাবাসী নগর পরিবহন ফেরার অপেক্ষায়
শিবসা উপজেলায় নদীর তীরে অবস্থিত পাইকগাছা পৌরসভা ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এপ্রিল মাসে নির্মিত একটি বাঁধ ছাড়া গত ২৪ বছরে এই এলাকায় কোনো বাঁধ নির্মিত হয়নি। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় নদীর পানি ফুলে উঠে এবং পুরো এলাকার ঘরবাড়ি, দোকান-পাট এবং রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়।
এছাড়া গত কয়েক বছর থেকে খুলনা সদর থেকে হাড়িয়া নদী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ভরাট করছে দখলকারীরা। এই সময় দখল ঠেকাতে ভরা অংশের বিভিন্ন এলাকায় বনায়ন গড়ে তুলে উপজেলা প্রশাসন। এতে একদিকে যেমন বন্ধ হয় দখল প্রক্রিয়া অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
শিবসা নদীতে শহর রক্ষা বাঁধের ফলে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ করতে না পারলেও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বাঁধ এলাকা।
আরও পড়ুন: গণপরিবহন বন্ধ, খুলনাবাসী নগর পরিবহন ফেরার অপেক্ষায়
পাইকগাছা উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় জানান, শিবসা নদীর চর ভরাটি জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনাঞ্চলীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে বনায়ন করা হয়েছে। যার মধ্যে বাইন, কেওড়া, ওঁড়া, সুন্দরী ও গোলপাতাগাছ রয়েছে।
তিনি বলেন, এ গাছগুলো জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়, তা হলে জলাবদ্ধতার কারণে সেখানকার সব গাছ মরে যাবে। ইতোমধ্যে গাছ মরা শুরু হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে ক্রমশ সব গাছের মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, নদীর মাঝখানে না করে লোকালয়ের পাশে বাঁধ তৈরি করলে গাছগুলো বেঁচে থাকত।
পাইকগাছা উপজেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, নদী দখলের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাঁধের কারণে শিবসা নদী তার গভীরতা হারাচ্ছে। এছাড়া নদীটি সংকুচিত হয়ে উপচে পড়া পানিতে পৌর এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
পাইকগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু নদীর মাঝখানে বাঁধ নির্মাণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: খুলনার পর্যটন শিল্পের দুয়ার উন্মোচন
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, ‘নদীর জায়গা দখল করে শহর রক্ষা বাঁধ দেয়া যাবে না। মানুষের প্রয়োজনে শহর রক্ষা বাঁধটি হতে হবে শহরের পাশ দিয়ে। বনায়ন ও নদীর ক্ষতি করে এমনভাবে বাঁধ দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, বাঁধ অপসারণে পৌরসভাকে সাত দিনের সময় দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধ অপসারণ না করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা অপসারণ করা হবে।
ছিটমহল বিনিময়ের ৭ বছর: উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে দাসিয়ারছড়া
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের সাত বছর পূর্তি আজ। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দিদশা ও গ্লানি কেটে প্রথম নাগরিক পরিচয় পায় সাবেক ছিটবাসীরা। সংযুক্ত হয় স্ব-স্ব দেশের মূল ভূখন্ডে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার মানুষ জানিয়েছে এই সাত বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া। বদলে গেছে তাদের জীবনমান।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিল সাবেক ছিটমহলবাসীদের জন্য একটি মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। এইদিনে রক্তপাতহীনভাবে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ পান রাষ্ট্রীয় অধিকার। এসময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে এবং ৫১টি ছিটমহল একীভূত হয় ভারতের সাথে। এর ফলে মুজিব-ইন্দিরা ছিটমহল বিনিময় চুক্তির সফল সমাপ্তি ঘটে শেখ হাসিনা ও মোদি সরকারের উদ্যোগের কারণে।
ছিট মিনিময়ের পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চালায় দেশের বৃহত্তম ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায়। এই সাত বছরে সরকার ৫৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে ২ হাজারেরও বেশি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। পাকা করা হয়েছে ২৬ কিলোমিটার সড়ক ও পাঁচটি ব্রীজ-কালভার্ট। নতুনভাবে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে। এমপিওভুক্ত করেছে নিম্নমাধ্যমিক ও মাদরাসাসহ চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দিরসহ তৈরি করে দেয়া হয়েছে রিসোর্স সেন্টার। ৩ হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এছাড়াও শতভাব সেচের আওতায় নেয়া হয়েছে কৃষি জমি। সরকারের এই উন্নয়ন পদক্ষেপে ব্যাপক খুশি সাবেক ছিটমহলবাসী।
সুন্দরবনে বাঘ স্থানান্তর করতে চায় বন বিভাগ
বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে বাঘের অবাধ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নিজেদের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন হওয়ায় বাঘ রোগাক্রান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আন্তঃপ্রজনন রোধ করতে সুন্দরবনের মধ্যে বাঘ স্থানান্তর করতে চায় বন বিভাগ।
এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনের মধ্যে শিপশা, পশুর ও পাঙ্গাশিয়াসহ বড় বড় নদীর কারণে বাঘ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সুন্দরবনের কিছু অংশে বাঘের ভ্যারাইটি কমে গেছে। ফলে নিজেদের মধ্যে বাঘের আন্তঃপ্রজনন হচ্ছে। আন্তঃপ্রজননের কারণে বাঘ নানা ভাবে দুর্বল এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছে। সুন্দরবনের একস্থান থেকে নিয়ে অন্য স্থানে বাঘ স্থানান্তর করা গেলে প্রজননের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন।
‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুক্রবার (২৯ জুলাই) বাগেরহাটে সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় আলাদা ভাবে বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, শতবছরে বিশ্বের বনাঞ্চল থেকে বাঘের সংখ্যা এক লাখ থেকে কমে মাত্র চার হাজারের নিচে দাঁড়িয়েছে। বাঘের আটটি উপ-প্রজাতির তিনটি এরইমধ্যে বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশে বাঘ ছিল। সেখান থেকে আরও একটি দেশ বাঘ হারিয়েছে। এখন বাংলাদেশসহ মাত্র ১২টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। সারা বিশ্বের বন উজাড়, চোরশিকারি ও পাচারকারিদের কারণে বাঘ মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের আনাগোনা দেখা গেছে। পর্যটক এবং বন বিভাগের সদস্যদের নজরে পড়ছে বাঘ ও তার বাচ্চা। এ অবস্থায় সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিচরণের খবর আশার আলো জাগিয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বাঘের আটটি উপ-প্রজাতির মধ্যে ইতোমধ্যে বালিনীজ টাইগার, জাভানীজ টাইগার ও কাম্পিয়ান টাইগার বিশ্ব হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে পাঁচটি উপ-প্রজাতি কোন রকম টিকে আছে। সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার ও আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরিত প্রটোকল অনুসারে সুন্দরবনে বাঘ রক্ষার জন্য বন বিভাগ কাজ করছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে টাইগার অ্যাকশান প্লান নামে ১০ বছর মেয়াদি প্লানের আওতায় বাঘ রক্ষায় কাজ চলছে।
জানা গেছে, দেশে বাঘের একমাত্র আবাসস্থল সুন্দরবন। চোরাশিকারীচক্র ও জলদস্যু-বনদস্যুদের তৎপরতার কারণে কয়েক বছর আগেও সুন্দরবনে অনেকটা হুমকির মুখে ছিল বাঘ। দস্যুরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায়, বিগত কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনে দস্যুতা প্রায় শুন্যের কোঠায়। এছাড়া চোরাশিকারিদের তৎপরতাও কমে এসেছে। একারণে সুন্দরবনে বাঘ অনেকটা সুরক্ষিত এবং বাঘের বিচারণ ক্ষেত্র নিরাপদ বলে মনে করছে বন বিভাগ।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
বন বিভাগ জানায়, ২০১৩-২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রথম জরিপ করে বাঘ পাওয়া গেছে ১০৬টি। দ্বিতীয় বার ২০১৭-২০১৮ একই পদ্দতিতে জরিপ করে সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে বাঘের ১১৪টি সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
জানা গেছে, সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে সুন্দরবনের মোট আয়াতনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আর গোটা সুন্দরবন জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগার কম বেশি বিচরণ করে থাকে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে নানা ভাবে প্রায় অর্ধশত বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২২ টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা ১১টি বাঘের চামড়া এবং বাঘের অঙ্গপ্রতঙ্গ উদ্ধার করে।
বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার দেলোয়ার হোসেন, জামাল হোসেন, ইউসুফ আকনসহ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সম্প্রতি তারা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় নদী-খালের চড়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছে। মাঝে মধ্যে তাদের কানে বাঘের ডাক ভেসে আসে।
বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী আরও জানান, চোরাশিকারী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে সুন্দরবনে বাঘ হুমকির মুখে রয়েছে। বাঘের আবাস্থল নিরাপদ রাখতে বন বিভাগ কাজ করছে।
বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর তথ্যমতে, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের পর সুন্দরবনে আর বাঘ গণনা হয়নি। সম্প্রতি সুন্দরবন ‘বাঘ সংরক্ষণ’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন হলেও এখন পর্যন্ত অর্থবরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। অর্থবরাদ্ধ পাওয়া গেলে চলতি বছরের শীত মৌসুমে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ শুরু করা হবে। নতুন করে বাঘ গণনা হলে জানা যাবে সুন্দরবনে বাঘের সঠিক সংখ্যা।
বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনে বাঘের ধারণক্ষমতা ২০০টি। বাঘের বর্তমান সংখ্যা থেকে ২০০টিতে উন্নীত করতে বন বিভাগ নানা উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করছে। বাঘসহ সব ধরণের বন্যপ্রাণির প্রজনন নির্বিঘ্নে করতে জুন, জুলাই ও আগস্ট-এই তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক ও জেলেসহ সব ধরণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তবে সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে পর্যটক ও বনের স্টাফরা ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের বাঘ দেখেছে। একই সাথে বনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের চিহ্ন দেখা গেছে; এতে করে মনে হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন আরও জানান, বাঘ শিকারিদের তৎপরতা রুখে দিতে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি স্মার্ট পেট্রোল চলছে সুন্দরবনে। বন বিভাগের পাশাপাশি সিএমসি, সিপিজি ও বিটিআরসি নিয়মিত সুন্দরবন বাউন্ডারি এলাকায় নিয়মিত টহল দেয়।
বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষ্যে বাগেরহাটে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় পৃথক র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। চাঁদপাই রেঞ্জে বাঘ দিবসের আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ২১ বছরে ৪০ বাঘের মৃত্যু
বাঘ সংরক্ষণে সুন্দরবনে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে: পরিবেশ উপমন্ত্রী
নারায়ণগঞ্জে চুরি করা বিদ্যুতে চলছে ৫০ হাজার অটোরিকশা
দেশে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির মধ্যে নারায়ণগঞ্জে অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে চুরি করা বিদ্যুতে চলছে প্রায় ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) কর্মকর্তাদের মতে, অধিকাংশ গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ।
সারাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের পদক্ষেপ নিলেও কর্তৃপক্ষ এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা গ্যারেজ মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করছে। বিশেষ করে ব্যস্ত নগরী নারায়ণগঞ্জ, শিল্পাঞ্চল ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকায় এর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারের মতো।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন করে অটোরিকশা আমদানি বন্ধ ও পুরনোগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি গত কয়েক বছরেও। এমনকি মহাসড়কগুলোতে এই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
জানা গেছে, একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে জেলার প্রায় ৫০ হাজার ইজি বাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫৫ মেগাওয়াট এবং মাসে ১৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু ৮০ ভাগ গ্যারেজে চুরি করে ও লুকিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ব্যাটারি রিচার্জ করায় সরকার প্রায় ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশার গ্যারেজগুলোতে অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক অটোরিকশার গ্যারেজের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি কোটি টাকার ওপরে জরিমানাও করেছে ডিপিডিসি ও টাস্কফোর্স। কিন্তু করোনাকালের পর এই অভিযান থেমে গেছে।
পড়ুন: ব্যাপক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
বেশ কয়েকটি এলাকার অটোরিকশা গ্যারেজে ঘুরে জানা গেছে, এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অনেক বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যে কারণে গ্যারেজ মালিকরা খরচ কমিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে থাকে। তবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার পেছনে রয়েছেন ডিপিডিসি ও পল্লী বিদ্যুতের একদল অসাধু কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসি ফতুল্লা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা প্রায় সময়ই অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা বলছেন, দমন-পীড়ন হলে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
জেলা শহরের একজন অটোরিকশা চালক মো. রহমান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে খাবারের ব্যবস্থা করা আমার পক্ষে সত্যিই কঠিন হবে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকর করার আগে সরকারের উচিত আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থান দেয়ার কথা ভাবা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই জাতীয় অটোরিকশা জেলায় যাতায়াতের সবচেয়ে সস্তা এবং দ্রুততম উপায়।
এ ব্যাপারে বন্দর পল্লী বিদ্যুতের উপমহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এই ধরনের ব্যবহারকে বিদ্যুতের অপচয় বলে মনে করি। তাই অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান এখনই বাড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, শুধু চুরি করা বিদ্যুতের উৎস নয়, সরকারের উচিত এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অপারেটরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।’
পড়ুন: বাগেরহাটে মাটির চুলার কারিগরদের জীবন চরম দুর্ভোগে