বিশেষ-সংবাদ
সুনামগঞ্জে ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, ১৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি
সাম্প্রতিক বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার অন্তত দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন অধিকাংশ সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব রাস্তায় পায়ে হাঁটাও কষ্টকর। মোটরসাইকেল বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চললেও এটি যেন মরণ ফাঁদ।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক জয়নাল মিয়া জানান, সুনামগঞ্জ-দোয়ারা-ছাতক সড়কের মান্নারগাঁও এলাকার পুটিপুসি সড়কের বান্দেরবাজার যাওয়ার আগে গভীর খাল হয়ে গেছে, ওখানে এখন নৌকা চলে।
এছাড়া ডাউকাখালি-ব্রাহ্মণগাঁও-আমবাড়ী সড়কে ব্যবহৃত বিটুমিন ও পাথর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এই এলাকায় আগে রাস্তা ছিল তা এখন দেখে বোঝাই যায় না।
পড়ুন: দৃশ্যমান হলো রূপসা রেল সেতু
দৃশ্যমান হলো রূপসা রেল সেতু
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন রূপসা রেল সেতুর সপ্তম ও সর্বশেষ স্প্যানটি বসেছে। রূপসা নদীর ওপর সবগুলো স্প্যান বসানোতে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের রেল সেতু। ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মোংলা-খুলনা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সেই সাথে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সাথে খুলনা ও মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগের পথ সুগম হবে। ভারতের সঙ্গে মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন করা যাবে।
খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ। রূপসা নদীর ওপরে যুক্ত হচ্ছে পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এছাড়া ২১টি ছোটখাটো ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মাণ এবং খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত আটটি স্টেশন নির্মাণকাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: খুলনার পর্যটন শিল্পের দুয়ার উন্মোচন
ইতোমধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণ কাজ করছে। বাকি কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণের এই প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় বহুজাতিক প্রযুক্তি, প্রকৌশলী, নির্মাণ, উৎপাদন ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান লার্সেন এ্যান্ড টার্বো (এলঅ্যান্ডটি)।
জমি অধিগ্রহণ, রেল লাইন ও রেল সেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা হয়েছে ।
জানা গেছে, রূপসা রেল সেতুটি দুই দশমিক পাঁচ মিটার ব্যাসের এবং এর গড় গভীরতা ৭২ মিটার। রেলসেতুর ভায়াডাক্টের ৮৫৬টি পাইলের সবগুলোই বসানো হয়েছে। এর মোট পাইল বেস-গ্রাউটিং ৮৫৬টি, পাইল ক্যাপ ১৩৬টি, পিয়ার ১৩৬টি, স্প্যান ইর্যাকশান ১৩৬টি ও ব্যাক স্ল্যাব ১৩৬টির সবগুলোই সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর পাইল ৭২টি, পাইল ক্যাপ আটটি, বিয়ারিং ৩২টি সম্পন্ন হয়েছে। ব্রিজটির উপরিভাগ স্টিলের গার্ডার এবং আরসিসি ডেকের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। মূল সেতুর উপরিভাগে সাতটি স্প্যান বসানো হয়েছে। প্রধান সেতুর জন্য নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স স্ট্যান্ডার্ড হাই-ওয়াটার লেভেল (এসএইচডাব্লিউএল) থেকে ১৮ দশমিক ২৯ মিটার।
সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বলেন, রূপসা রেল সেতুর মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। ইতোমধ্যে রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ স্প্যান বসেছে গত ২৫ জুন। নদীর ওপরে সাতটি স্প্যান বসানো হয়েছে। আর নদীর দুই পাশে রেল সেতুর সংযোগে ২ কিলোমিটার করে চার কিলোমিটার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। ফলে এখন আর কোনো কাজ বাকি নেই। শুধুমাত্র পেন্টিংয়ের কাজ চলছে। এমন টুকটাক কাজ চলতে থাকবে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
তিনি বলেন, এখন যে কোনো দিন রেল সেতুর অংশের কাজ বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে বুঝিয়ে দিতে পারবো। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেল সেতু আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।
তিনি বলেন, রূপসা সেতুর ওপর দাঁড়ালে সম্পূর্ণ রেল সেতু দেখা যাচ্ছে। রেলপথ নির্মাণকাজ চলছে। রেলপথ বসাতে তেমন সময় লাগবে না। ছোটখাটো কিছু ব্রিজ এবং আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলোও শেষ পর্যায়ে। আগামী চার মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংয়ের কাজও সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। এর মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ট্রায়েল রান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগেও দু-একবার ট্রায়েল রান করানো হবে। সবশেষে আলোচনা সাপেক্ষে রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: বাগেরহাট হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব
দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তনের আশাব্যক্ত করে রেল সচিব বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের রেল সংযোগ তৈরি করবে। একইসঙ্গে পদ্মা রেল সেতু চালু হলে মোংলা থেকে মালামাল খুলনা-যশোর হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে সরাসরি ট্রেন ঢাকায় যাবে। সময় ও পথ কমে আসবে। এতে মোংলা বন্দরের কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে। মোংলায় নতুন জেটিরও নির্মাণ কাজ চলছে। জাহাজও আসবে। সব মিলিয়ে মোংলা বন্দরের চাহিদা বেড়ে যাবে-ইনশাআল্লাহ।
কোরবানির ঈদ: জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার পশুর হাটগুলো
আসন্ন পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার পশুর হাটগুলো। হাটে গরু-ছাগলের সংখ্যা এবং বিক্রেতার জনসমাগম বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু ও বিক্রেতার সমাগম থাকলেও ক্রেতা ছিল কম।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে শিয়ালমারি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, মানুষে লোকারণ্য পুরো হাট। কেউ এসেছেন গরু কিনতে, আবার কেউ এসেছেন কোরবানির গরু দেখতে। হাটের সামনে জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট। কয়েকজন পুলিশ সদস্য যানজট নিরসনে কাজ করছেন।
হাট ব্যবস্থপনার দায়িত্বে থাকা চঞ্চল বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় গরু যেন বাজারে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
হাটে আসা পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি হাটে গরু বিক্রি করতে আইছি। গরুর দাম দিয়েছি দেড় লাখ টাকা। মানুষ আমার গরু দেখছে কেনার জন্য দামও জিজ্ঞাসা করছে আমি এক লাখ ২০ হলে গরুটি বিক্রি করে দেব।’
জীবননগর উপজেলার আরেক বিক্রেতা বকতিয়ার আলী বলেন, ‘আমি আমার গরু বিক্রি করতে এসেছি, দাম দিয়েছি দুই লাখ টাকা। গরুর ওজন অনুযায়ী ক্রেতা ও দালালেরা দাম বলছে কম। যে কারণে গরু দিতে পারছি না। তবে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা হলে গরুটি বিক্রি করে দেব।’
গরুর ক্রেতা মো. কাশেম বলেন, ‘আমি কোরবানির গরু কিনতে এসেছি। গরুর দাম এবার অনেক বেশি, তাই গরু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার বাজেটের মধ্যে যদি হয়, আমি এই হাটেই গরু কিনে নিয়ে যাব।’
বাজারে ছাগল বিক্রি করতে আসা মো. আক্কাচ আলী বলেন, গতবার কোরবানির ঈদের তুলনায় এ বছর ছাগলের দাম কম। ক্রেতাও অনেক কম।
ছাগল ব্যবসায়ী মো. সমসের আলী বলেন, বাজারে বড় ছাগলের তুলনায় ছোট ছাগলের চাহিদা বেশি। এই জন্য এসব ছাগলের দাম এখন তুলনামূলক বেশি।
বাজারের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, শিয়ালমারী পশুর হাটে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাস্তায় পুলিশের অনেক লোকজন রয়েছে।
পড়ুন: ঈদুল আজহা: হাটের জন্য প্রস্তুত ঠাকুরগাঁওয়ের ‘বারাকাত’
ডুগডুগি পশুর হাটের ইজারাদার জনি শাহ পশুর হাটের বেচা-বিক্রি সম্পর্কে বলেন, গত বছরের করোনার প্রভাবের কারণে খুব খারাপ অবস্থা ছিল। এবার আবার সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার বন্যার কারণে ব্যাপারীরা আসতে না পারায় খুব বেশি ভালো বেচা-বিক্রি নেই। তারপরও ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হয়েছে। আশা করি ঈদের সামনের হাটগুলোতে বেচা কেনা আরও বাড়বে।
হাটের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল খালেক বলেন, শিয়ালমারী পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে পুলিশ এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হাটের নিরাপত্তায় জীবননগর থানা-পুলিশের পাঁচটি দল কাজ করছে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, শিয়ালমারি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এবং পশুর হাটে জাল টাকা শনাক্তের জন্য মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি পশু ক্রয় করতে এসে যাতে কোনো ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষ হয়রানি বা প্রতারণার শিকার না হয়, সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে।
পড়ুন: ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে ৪৪০০টির বেশি পশুর হাট বসবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনায় ট্রেনের যাত্রী অর্ধেক
কিছুদিন আগেও ভিন্ন চিত্র ছিল খুলনা রেল স্টেশনে। কাঙ্ক্ষিত টিকিটের জন্য যুদ্ধে নামতে হতো যাত্রীদের। টিকিট পেতে তদবির করতে হতো প্রভাবশালীদের মাধ্যমে। তবে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর সেই চিত্র আর নেই। ২ জুলাই পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে খুলনা থেকে ঢাকাগামী ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
খুলনা শহরের মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা আশরাফী চুমকি বলেন, ‘এখন বাসে অল্প সময়ে ঢাকায় পৌঁছানো যায় এবং পদ্মা সেতুর নৈসর্গিক সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। আগে ট্রেনের টিকিট পেতে অনেক ভোগান্তি ছিল।’
খুলনা রেলস্টেশনের বুকিং সহকারীরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে ট্রেনের যাত্রীর সংখ্যা বেশ কমে গেছে। এখন সড়কপথে যাতায়াতে সুবিধা হওয়ায় ঢাকাগামী যাত্রীরা আর আগের মতো ট্রেনে আসছেন না।
পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কপথে মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে মানুষ। সেতু চালুর দিন থেকে মোটামুটি এই সময়ের মধ্যে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন পরিবহন। যাত্রী বাড়ায় নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি দেশের বেশ কয়েকটি নামিদামি কোম্পানি এই রুটে চালু করেছে তাদের বিলাসবহুল বাস।
গ্রীন লাইন পরিবহনের রয়্যালের মোড়ের কাউন্টারের বুকিং সহকারী রিপন হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুলনা-ঢাকা রুটে যাত্রীর তিন চার গুণ চাপ বেড়েছে।
খুলনা রেল স্টেশনের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর শামীমুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ভালো হয়ে গেছে। যার কারণে ঢাকায় যাওয়ার সময় কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে ট্রেনের ওপর। ট্রেনে প্রায় ৫০ শতাংশ যাত্রী কমেছে।’
পড়ুন: ৬ষ্ঠ দিনে পদ্মা সেতু থেকে রেকর্ড ৩.১৬ কোটি টাকা টোল আদায়
পদ্মা সেতু নতুন বাংলাদেশের প্রতীক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বন্যায় কুড়িগ্রামে কৃষি খাতে ক্ষতি ১২৭.৫৪ কোটি টাকা
কুড়িগ্রামে সাম্প্রতিক বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় জেলার কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার কারণে কুড়িগ্রামে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বন্যায় জেলার মোট ৮০ হাজার ৩৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরেক দফা বন্যার আশঙ্কা
চলতি মৌসুমে জেলার কৃষকরা ৩৪ হাজার ৩১০ হেক্টর কৃষি জমি আবাদ করেছেন। কিন্তু আকস্মিক বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কারণে প্রায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ দিনের বন্যায় ৭ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া বন্যার পানিতে প্রায় ৮ হাজার ৪২৭ হেক্টর ফসলি জমির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে মোট ৩৫ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা মোট ফসলের ২৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ধান ও পাট চাষে। এরপরই রয়েছে সবজি।
কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে পাটের ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমির মধ্যে ৯ হাজার ৫২১ হেক্টর; আউশ ধানের ৮ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমির মধ্যে ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর এবং সবজির ৪ হাজার ৩৪ হেক্টর জমির মধ্যে এক হাজার ১৬১ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কমিটি গঠনের সুপারিশ
এছাড়া জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন বীজতলা, পাট, আউশ ধান, তিল, সবজি, চিনাবাদাম, কলা, ভুট্টা, মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, আখ ও মসুর ডাল।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ছড়ারপাড় গ্রামের সবজি চাষি শামসুল আলম বলেন, ‘আমি আট বিঘা জমিতে পটল চাষ করেছি। আমার ক্যাশ ছিল ৫০ হাজার টাকা, এনজিও থেকে (ঋণ) নিছি ৩০ হাজার টাকা এবং সুদের পর নিছি ২০ হাজার টাকা। এবার আমি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।’
একই গ্রামের আরেক কৃষক জব্বার আলী বলেন, ‘এ বছর আমরা মোটা অঙ্কের লাভ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় আমাদের স্বপ্ন ভেসে গেছে।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য ক্ষতি নিরুপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সাত হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য একটি বরাদ্দ পেয়েছি যা তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে সাহায্য করবে।’
ডিএনসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ড: নাগরিক সেবায় নেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড
পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের হাজার হাজার বাসিন্দা এখনও তাদের প্রাপ্য নাগরিক সেবা পায়নি। ওয়ার্ডের নাগরিক সেবায় সিটি কর্পোরেশনের নেই কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
তবে সেবা না পেলেও সিটি কর্পোরেশন থেকে চিঠির মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে বলা হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এতে নাগরিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ।
অনেক বাসিন্দা জানান, তারা শুধু নামেই সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। গত পাঁচ বছরে কোনো সেবা পাননি তারা।
সম্প্রতি ডিএনসিসির আওতাধীন কয়েকটি ওয়ার্ড সরেজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ ওয়ার্ডের সড়ক উন্নয়নে হাত পড়েনি, নেই ফুটপাত ও সড়ক বাতি। বেশিরভাগ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট কাঁচা, নেই সড়কবাতি ও ফুটপাত খালগুলো ময়লার ভাগাড়, দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগ পুহাতে হচ্ছে অথচ বাড়ির মালিকদের হোল্ডিংস ট্যাক্স দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে সিটি কর্পোরেশন থেকে।
আরও পড়ুন: ডিএনসিসির মশক নিধন অভিযান: প্রায় ৮ লাখ টাকা জরিমানা
৪০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য ওয়াহিদ বলেন, আমরা পাঁচ বছর আগে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু সিটি করপোরেশন আমাদের ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়ন কাজ করেনি। এখন ডিএনসিসি বাসিন্দাদের হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে যা স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে নাগরিক সেবা না পেয়ে আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স কেন দিব? এটা অন্যায়।
৪২ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ কিরন বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডের সব রাস্তাই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমাদের রাস্তা মেরামত করতে হবে।
ডিএনসিসির দাবিকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সেরও প্রতিবাদ জানান তিনি।
২০১৬ সালের ২৮ জুন নাগরিক সেবা বাড়াতে হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, বাড্ডা, সাতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে ১১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়েন নতুন ১৮টি ওয়ার্ড হিসাবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের যুক্ত করা হয়। এসব অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলো নিয়ে ৫টি অঞ্চল তৈরি করা হয়। কিন্তু সিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা পায়নি এসব এলাকার নাগরিকগরা।
ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন কাজের জন্য ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন করে। চলতি বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। তবে তহবিলের অভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উন্নয়ন কাজ শুরু করেনি। দ্বিতীয় দফায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই নতুন ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
আরও পড়ুন: ডিএনসিসির সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের ১৩ খাল পুনরুদ্ধার করা হবে: মেয়র
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, সিটি করপোরেশনের অধীনে ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ঠিকাদারি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার মধ্যে পেয়েছি মাত্র ৮৯ কোটি টাকা। বাকি টাকা দ্রুত পাবো বলে আশা করছি। এখন কম টাকা দিয়েই সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।’
এ বিষয়ে নগর বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ ইউএনবিকে বলেন, একটি আদর্শ ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রশস্ত রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সুয়ারেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাকেন্দ্র, শরীর চর্চা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাদুঘর নাট্যমঞ্চ, খেলার মাঠ, পার্ক, পশু জবাই খানা, গনচৌচাগার, বাস টার্মিনাল থাকা অবশ্যক। অথচ নতুন ওয়ার্ডগুলোতে একেবারেই এসব সুবিধা নেই।
তিনি বলেন, নতুন ওয়ার্ড এর জন্য পর্যাপ্ত সরকারি জায়গা থাকলেও তা বেদখল হয়ে গেছে, বেশিরভাগ স্থানে বহুতল ভবন উঠে গেছে আবার অনেক সরকারি জায়গায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে সব কিছু অধিগ্রহণ করে প্রকল্পের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) অতিরিক্ত সচিব সেলিম রেজা ইউএনবিকে বলেন, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডকে উন্নয়ন করতে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা প্রকল্প আনুমদোন হয়েছে। তবে সব টাকা এখনো পাওয়া যায়নি। কিছু টাকা আমরা পেয়েছি এবং সাথে সিটি কর্পোরেশন থেকে আরও কিছু টাকা মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজ আপাতত শুরু হয়েছে। ৪৪ ও ৪৬ ওয়ার্ডে কাজ শুরু করেছি। কাজটি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রকল্পের আরও টাকা পেলেই বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও কাজ শুরু হবে শিগগিরই।
২০১৬ সাল থেকে সিটি কর্পোরেশনে হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়ার বিষয়ে সেলিম রেজা বলেন, সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর বাসিন্দাদের হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে।
আরও পড়ুন: যানজট নিরসনে জোড়-বিজোড় নম্বরের ভিত্তিতে গাড়ি চলবে: মেয়র আতিক
পদ্মা সেতু: খুলনার পর্যটন শিল্পের দুয়ার উন্মোচন
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলনার পর্যটন খাতে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ইতোমধ্যে ইউনেস্কো ঘোষিত মসজিদের শহর বাগেরহাটের ১৭ স্থাপনা, সুন্দরবন ও কুয়াকাটাকে ঘিরে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে এবং কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সেতুর চালুর ফলে এ অঞ্চলের সরকারি-বেসরকাররি পর্যটন খাতের আয় ব্যাপ্তি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে দুটিই বাগেরহাটে অবস্থিত। ইউনেস্কো ঘোষিত সুন্দরবন ও ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মজসিদসহ ১৭টি স্থাপন। ২০২১-২২ অর্থবছরে সুন্দরবনের বাগেরহাট অংশে এক লাখ ২০ হাজার পর্যটক এসেছেন। এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় এসেছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। একই সময়ে ষাটগম্বুজ মসজিদে এক লাখ ৮০ হাজার দর্শনার্থীর কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: বাগেরহাট হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব
সুন্দরবন টুরিস্ট ক্লাবের শেখ শাকির হোসেন বলেন, বাগেরহাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য যাতায়াতের প্রধান ব্যবস্থা হচ্ছে সড়ক পথ। আর এই সড়ক পথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের দুর্ভোগে পড়তে হতো। তবে পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সেই চিরচেনা রূপ একেবারেই পাল্টে যাবে। সম্ভাবনাময় বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পও ঘুরে দাঁড়াবে।
মোংলার ট্রলার ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, সুন্দরবনের ইকো টুরিজমকেন্দ্র ও বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্র করমজলকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যবসা। মোংলা থেকে ট্রলার করে আধাঘণ্টায় করমজল যাওয়া যায়। কিন্তু সড়ক পথে ভোগান্তি থাকার কারণে দর্শনার্থী কম আসত। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আশাকরি সুন্দরবনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে সেই সঙ্গে আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
মোংলা জয়মনির ঘোল এলাকার বিজন কুমার রায় বলেন, সুন্দরবনের কাছেই আমাদের বসবাস। তাই বন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে আমরা জড়িত। পদ্মা সেতুর চালুর ফলে সুন্দবনের বিভিন্ন পয়েন্টের অবকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ফলে আমাদেরও ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হবে।
স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফার সোহেল হোসেন বলেন, বাগেরহাটে যে পরিমান দর্শনার্থী বর্তমানে ঘুরতে আসে, পদ্মা সেতুর ফলে সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। দর্শনার্থী বাড়লে গাইডের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। ফলে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
খানজাহান আলী (রহ.) মাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান বলেন, পথের ভোগান্তির কারণে বাগেরহাটে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে। এ কারণে হোটেল ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পদ্মা সেতু চালু ফলে বাগেরহাটে পর্যটকদের আগমন ঘটবে। হোটেল-মোটেল গুলোতেও চাপ থাকবে।
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সেতুর ফলে বাগেরহাটসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ জানান, পদ্মা সেতু যে অমীত সম্ভাবনা দেখাচ্ছে তাতে দর্শনার্থী সংখ্যা ধারণার চেয়েও বেশি হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াক ওয়ে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, আগত পর্যটকদের সুবিধার্থে পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে খানজাহান আলী (রহ.) এর মাজার মোড়ে একটি তিন তারকা মানের হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে। যার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে কয়েক গুণ বেশি পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সুন্দরবনকে আরও বেশি পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে সুন্দরবনের আলীবান্ধা ও আন্ধারমানিক দুটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো.আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটে অসংখ্য দর্শনীয় স্থাপনা রয়েছে। এসবের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি যাতায়েত ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি পদ্মা সেতুর হাত ধরে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। এই খাতে ব্যাপক আর্থিক উন্নতি ঘটবে।
গাইবান্ধায় বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে রোগব্যাধি
একটু সাহায্যের আশায় বাড়ির সামনে কলাগাছের ভেলায় বসে থাকলেও গাইবান্ধার বন্যা কবলিত খরজানির চরের করিমন বেগমসহ অনেকের মিলছে না কোনো সহায়তা।
করিমন বেগম ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা কীভাবে বেঁচে আছি, আমরা কী খাচ্ছি তা দেখতে এখনও কেউ আসেনি।’
গাইবান্ধার চর উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে বন্যার পানির কারণে সৃষ্ট চর্মরোগ। ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগও উদ্বেগের বিষয়।
আর কোনো সমাধান না পেয়ে ওই এলাকার করিমন ও তার প্রতিবেশী হালিমা, মতিন কোবাজ্জামান, মিঠু মিয়াসহ আরও অনেকে জানান, ক্রমাগত চুলকানি থেকে কিছুটা উপশমের জন্য কেরোসিন তেলের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে লাগাচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন: বন্যা: আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৪
করিমন বলেন, রাত দিন চুলকায়। পায়ে কেরোসিন তেলে হলুদ মেখে কষ্ট নিবারনের চেষ্টা করেন। রাতে ঘুম নেই, কখন সাত বছরের ছোট ছেলেটা পানিতে ভেসে যায় সেই ভয়ে। যেমনটা অন্য অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যা কবলিত অঞ্চলে পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে কিন্তু করিমনরা এখনও সেই সহায়তা পান নি।
করিমন আরও বলেন, এ অঞ্চলে পানীয় জলের সংকট প্রকট। এমনকি এই পরিস্থিতিতেও দিনের বেলা নদীর ওপার থেকে পানীয় জল আনতে আমাদের নৌকা ভাড়া দিতে হয়।
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রবিবার কিছুটা কমছে।
কামারজানীর চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, সুন্দরগঞ্জ,সাঘাটা,ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার বেশ কয়েকদিন যাবৎ পানি বন্দি কামারজানি, মোল্লারচর, কাপাসিয়া, হরিপুর, ফজলুপুর, উড়িয়া, রতনপুর, ফুলছড়ি,গজারিয়া, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, কঞ্জিপাড়া, শ্রীপুর, তারাপুর, বেলকা সহ ২৫টি চর ইউনিয়নের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যার পানিতে আটকা পড়েছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি নামায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান
তিনি বলেন, অনেকের ঘরে খাবার আছে। কিন্তু রান্না করার মতো জায়গা নাই। তাই পানিতে নেমে কলার ভেলায় চুলা রেখে তাতে রান্না করছেন। এক বেলার রান্না খাচ্ছেন তিন বেলায়। খাবার পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি কোনো টয়লেটও নেই।
কর্তৃপক্ষের মতে, জেলায় মোট ৬০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে তবে মাত্র ১২টিতে আশ্রয় নিতে পেরেছে মানুষ। কারণ অধিকাংশ কেন্দ্রই পানির নিচে অথবা নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অনেক লোক তাদের একমাত্র আয়ের উৎস, গবাদি পশু নিয়ে লড়াই করছে যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রাখা যাচ্ছে না।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম ফয়েজ উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত পুরুষ, নারী এবং শিশু সহ মাত্র ১৩৫ জন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১২৫ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় কনসার্ট সোমবার
চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চাহিদার অতিরিক্ত ৫২ হাজার ২২২টি পশু রয়েছে। খামার ও পারিবারিকভাবে এসব পশুকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লালন পালন করা হয়েছে। এবার করোনা মহামারি না থাকার কারণে পশু হাট জমে উঠার আশা করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে খামারিরা ভালো দাম পাবেন বলে আশা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
তবে পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারিরা। তারা বলছেন, বাজারে গো-খাদ্যের দাম চড়া। বাধ্য হয়ে তাই বেশি দামে খাবার কিনে গবাদি পশুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় হাটে কোরবানির পশুর বেচা কেনা ভালো হবে বলে আশা খামারিদের।
আরও পড়ুন: এবার ১.২১ কোটির বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত: মন্ত্রী
জেলা প্রণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলায় কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৩ টি পশু। আর কোরবানির জন্য মোট পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৫টি। অর্থাৎ ৫২ হাজার ২২২টি পশু অতিরিক্ত রয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় খামারি রয়েছেন ১১ হাজার ৫৪৯ জন। খামারে ও পারিবারিকভাবে এসব পশু লালন পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ৮৮ হাজার ৩০০টি, ছাগল ৬৮ হাজার ৭২টি, ভেড়া ৯ হাজার ৬৭টি ও মহিষ রয়েছে ১৭৬টি। যা চাহিদার তুলনায় বেশি।
সদর উপজেলার নামোনিমগাছি এলাকার খামারি ইকবাল হোসেন জানান, তার খামারে এবার কেরবানির জন্য ২৩টি গরু ও ৭টি মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এক লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে তিন লাখ পর্যন্ত দামের গরু রয়েছে।
তিনি জানান, গরু লালনপালনে বা মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট বা ইনজেকসান ব্যবহার না করেন সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পুষ্টিকর খাবার দিয়েছেন। তবে এই বছর পশু খাদ্যের দাম দ্বিগুন। আগে ভুট্টা ছিল ১৮ টাকা কেজি সেটা এখন ৩৫ টাকা, গম ছিল ২২ টাকা কেজি সে গম এখন ৪০ টাকা। গমের ভুষি ৪৮ টাকা কেজি।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে অপসারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আহ্বান
উপররাজারামপুর এলাকার আরেক খামারি এসএম কামাল জানান, তার খামারে বর্তমানে কোরবানির জন্য ২০টি গরু আছে। এবার করোনার সমস্যা না থাকলেও পশু খাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লালনপালন খরচ অনেক বেশি। তাই গরুর দাম এবার কম হবে না। তাছাড়া চাহিদার ওপর দাম পাওয়া যাবে, চাহিদা ভালো থাকলে দাম ভালো পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর কোনো ঘাটতি হবে না। ভারত বা মিয়ানমার থেকে গরু আনার দরকার নেই। সরকার এদিকে নজর দিলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বটতলা হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম জানান, সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শুক্রবার এ দুই দিন হাটবার। করোনার কারণে বিগত বছরে গরুর বেচাকেনা ভালো না হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার করোনার সমস্যা নেই আশা করা যায় জুলাই মাসের প্রথম দিক থেকে কোরবানির পশু বেচাকেনা জমে উঠবে।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশু নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়েছে ‘ক্যাটল স্পেশাল’ ট্রেন
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় এবার চাহিদার অতিরিক্ত কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাড়তি পশু অন্যান্য জেলার চাহিদা পূরন করতে পারবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ভারত থেকে গরু আসা একেবারেই বন্ধ। এছাড়া এই বছর করোনা পরিস্থিতিও ভালো থাকায় পশু হাটগুলোতে বেচা কেনা জমে উঠবে এবং খামারিরা লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু: বাগেরহাট হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটের অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলার সামগ্রিক অর্থনীতি কৃষি, মৎস্য, পর্যটন এবং মোলা বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। পদ্মা সেতু চালু হলে বাগেরহাটে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে, কৃষি ও মৎস্য, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। আর সবজিসহ বাগেরহাটের চিংড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে সহজ হবে।
এই অঞ্চলে এরই মধ্যে ক্ষুদ্র-মাঝারি এবং বড় ধরণের শিল্প কল-কারখানা নির্মাণের আভাস মিলেছে। হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান পাবেন এখানে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সেই সাথে মানুষের ভাগ্যোর আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
ইতিহাস-ঐতিহ্য আর পুরাকৃত্তির জেলা বাগেরহাট। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, দেশের দ্বিতীয় সমুন্দ্র বন্দর মোংলার অবস্থান এই জেলায়। পদ্মা সেতু নিয়ে উপকূলের এই জেলার মানুষ নতুন নতুন স্বপ্ন বুনছেন। কলা ও সবিজ বিক্রেতা থেকে শুরু করে সবপর্যায়ের ব্যসায়ীদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে এমন আশায় বুক বেঁধেছেন।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পর্যটন বিভাগ, কৃষি,মৎস্য বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন পদ্মা সেতু চালু হলে এই অঞ্চল অর্থনীতির টানিং পয়েন্ট হবে। মোংলা বন্দরের কয়েক গুণ রাজস্ব আয় বাড়বে। একই সঙ্গে বাগেরহাটে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়বে। সেই সঙ্গে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বাগেরহাটসহ এই অঞ্চলে মিল-কল-কারখানা তৈরি হলে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন জানান, পদ্ম সেতু চালু হলে কৃষকরা মধ্যসত্ত্বভোগী ছাড়াই তাদের উৎপাদন করা কৃষিপণ্য সরাসরি ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন। সেই সঙ্গে বিদেশে চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক প্রবিদ্ধির হার এক দশমকি ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পাবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতির দার উন্মোচন করবে। এই অঞ্চলে বড় ধরনের কর্মযোগ্য হবে। মোংলা বন্দর, ইপিজেড, বিশ্বঐতিহ্যর অংশ সুন্দরবন এবং ষাটগম্বুজ মসজিদকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এরই মধ্যে পর্যাটন ভিত্তিক ৫০ জন গাইডকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, ঢাকা থেকে যে কোনো বন্দরের চেয়ে এখন মোংলা বন্দর কাছে। পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরের অগ্রগতি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মোংলা বন্দর থেকে শুরু হবে। সহজ যোগযোগ ব্যবস্থার কারণে বন্দর ব্যবহারকারীরা মোংলা বন্দরের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভুক্তভোগী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছে পুলিশের সাইবার টিম
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে বাগেরহাটে কৃষিক্ষেত্রে বিল্পব ঘটবে এবং কৃষিভিত্তিক প্রসেসিং জোন গড়ে উঠবে। কৃষি উদ্যাক্তা তৈরি হবে এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে। বিভিন্ন সময়ে পদ্মা পাড়ি দিতে ফেরিঘাটে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কৃষক নিজেই তার কৃষিপণ্য ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করে দিনে দিনে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমানের তথ্য মতে, জেলায় বর্তমানে বছরে দুই লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হয়। যার ৭২ হাজার মেট্রিক টন জেলার বাইরে বিক্রি হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে এক লাখ মেট্রিক টন জেলার বাইরে বিক্রি হবে। কৃষি পণ্য উৎপাদনে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে এই অঞ্চলে মাছ প্রসেসিং কারখানা তৈরি হবে। চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ নষ্ট এবং অপচয় কম হবে। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে বাগেরহাটের চিংড়ি টেকনাফ থেকে তেতুলিয় সর্বত্রই হাট-বাজারে বিক্রি হবে। চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে মুনাফা বাড়বে। আর চিংড়ি চাষিরা লাভবান হবেন। মুনাফা পেলে চিংড়ি চাষিরা চিংড়ি চাষের আয়াতন বাড়াবে।
তিনি জানান, গত বছর বাগেরহাটে চিংড়ি, সাদা মাছ, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। এই বছরে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৯৭ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে উৎপাদন এক লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। গত অর্থ বছরে চিংড়ি রপ্তানি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে আগামীতে ১০০ কোটি টাকা আয় বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
বাগেরহাট ষাটগম্বুজ যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন এবং ষাটগম্বুজ মসজিদ দর্শনে দেশ-বিদেশি পর্যটকদের আসা-যাওয়া বেড়ে যাবে। পর্যটকরা বাগেরহাটে এসে বিভিন্ন পর্যটন স্পর্ট দেখে দিনে দিনে আবার ফিরে যেতে পারবেন। গত বছর পাঁচ লাখ পর্যটক ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে আসেন। ওই বছর পর্যটকদের কাছ থেকে ৫৭ লাখ টাকা আয় হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে পর্যটক আসা-যাওয়া বাড়বে এবং সেই সঙ্গে রাজস্ব বাড়বে।
আরও পড়ুন: নিজেদের প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হচ্ছে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
বাগেরহাট চেম্বর অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন জানান, পদ্মা সেতুর কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে শিল্প কল-কারখানা তৈরি করতে কৃষি জমি ক্রয় করছে। ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলের বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দুরত্ব অন্য বন্দরের চেয়ে কম হওয়ার কারণে বন্দর ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দরে ভিড়বে।
বাগেরহাট আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম মন্টু জানান, তারা ইতোমধ্যে বাগেরহাট-ঢাকা রুটে বিলাসবহুল বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৫ জুন) সেতুটি উদ্বোধন করবেন। ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে কয়েক লাখ মানুষ পদ্মার তীরে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।