বিশেষ-সংবাদ
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর কোনো অগ্রগতি নেই
বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালু বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই (এমওইউ) হয়েছে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে। তারপরও বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও থমকে আছে।
বাংলাদেশি ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণেই গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তির কার্যক্রম স্থগিত ও বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আটকে আছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশি শ্রর্মীকদের জন্য অন্যতম গন্তব্য মালয়েশিয়া। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাত লাখ প্রবাসী সেখানে কর্মরত আছেন বলে ব্যবসায়ীক সূত্রে জানা গেছে।
২০১৮ সালে মাহাথির মোহাম্মদের তৎকালীন মালয়েশিয়ার সরকার উভয় দেশে সংস্থার নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য দেশটির শ্রমবাজারের দরজা বন্ধ করে দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে আশাবাদী মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত
সর্বশেষ বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মালয়েশিয়া সরকার ২৫ বাংলাদেশি এজেন্সির একটি নির্বাচিত গ্রুপের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে চায়। ঢাকা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ এটি বাস্তবায়িত হলে ১৫০০ এরও বেশি সংস্থা এই ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়বে।
মালয়েশিয়া কেন বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করল?
২০০৯ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
তবে ২৬ নভেম্বর, ২০১২ এ দুই দেশ জিটুজি মডেলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পর এটি পরিবর্তিত হয়। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যোগ দেয়ায় সুযোগ পায়।
কিন্তু শিগগিরই সরকারের মধ্যকার সমঝোতা ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসন বেড়ে যায়।
২০১৬ সালে এসে সরকার আবার জিটুজি প্লাস মডেল চালু করে যার অধীনে শুধুমাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারে। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিক চাকরি পেয়েছেন।
তবে অভিযোগ ওঠে এই সংস্থাগুলো চাকরিপ্রার্থীদের শোষণ শুরু করে তাদের কাছ থেকে অন্যায্যভাবে উচ্চ ফি আদায় করে নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে আরও জনবল নেবে
তারা প্রথমে ইমিগ্রেশন খরচ ৩৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করে পরে তা বাড়িয়ে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা করে নেয়। একপর্যায়ে এসব বেসরকারি সংস্থা অভিবাসন খরচ বাবদ মাথাপিছু সাড়ে তিন লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা দাবি করতে থাকে।
যেটা মালয়েশিয়া সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি বড় ধাক্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং এর ভিত্তিতে জিটুজি চুক্তি বাতিল হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিষয়কমন্ত্রী এম. সারাভান মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের জন্য ঢাকায় একটি চিঠি পাঠানোর পর সর্বশেষ এমওইউ দ্বারা উত্থাপিত আশা দ্রুত ভেঙ্গে যায়।
জবাবে, বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ তার মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন ঢাকা এই শর্ত মেনে নিতে পারবে না।
তিনি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) সার্টিফিকেট এবং বাংলাদেশ কম্পিটিশন অ্যাক্ট, ২০১২-এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার সীমিত সংখ্যক এজেন্সিকে কাজ দিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বৈধ লাইসেন্সধারী সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সমান সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের স্বচ্ছ, অনিয়মমুক্ত ও নিরাপদ অভিবাসন চায়।
আরও পড়ুন: বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা চায় না মালয়েশিয়া সরকার
বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর পদ্ধতি নির্ধারণে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের প্রস্তাবও করেন ইমরান। কিন্তু চিঠি পাঠানোর তিন মাস পরও কুয়ালামপুর এখনও সাড়া দেয়নি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহীন ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়া আমাদের অনলাইনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের জন্য একটি তারিখ পাঠিয়েছিল কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি কারণ আমাদের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয় করতে হয়েছিল। পরে আমরা অনলাইন সভার জন্য একটি তারিখ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব বলেন, ২৫ মে অনুষ্ঠিতব্য কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
কেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিরোধিতা?
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনার রিক্রুটি এজেন্সিজ’র (বায়রা) সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোটের নেতারা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মলেন করে দাবি করেছেন, আগের ন্যায় নতুন করে আবার এই সিন্ডিকেটের হোতা বাংলাদেশ বায়রা সাবেক মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন।স্বপনসহ ২৫ টি সিন্ডিকেটে নাম আসা সকল রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ মালিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে বিচারের দাবি জানায়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার ভূমিকার প্রশংসা বক্তাদের
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান বলেন, ‘এক-দুটি বাদে আগের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রায় সবকটি নতুন ২৫ এজেন্সি সিন্ডিকেটে তালিকাভুক্ত ছিল এবং তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রুহুল আমিন স্বপন। আমরা এবার মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটমুক্ত শ্রমবাজারের প্রবেশাধিকার চাই।’
সিন্ডিকেট বিরোধী জোটের সংগঠক ও বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেছেন, ১০ এজেন্সি সিন্ডিকেট অভিবাসন ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়েছে। মূলত এই সিন্ডিকেটের বিদ্বেষপূর্ণ প্রচেষ্টার কারণে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে বিলম্ব হচ্ছে।
সিন্ডিকেট বিরোধী জোটের সংগঠক ও বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন,‘বাংলাদেশে এক হাজার ৫৩০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সি আছে এবং তাদের বৈধভাবে শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানোর অধিকার রয়েছে। সিন্ডিকেট গঠনের অর্থ হবে তারা কাজ করতে পারবে না এবং দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হবে।’
বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম), অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ২০ সংস্থার একটি প্ল্যাটফর্ম উভয় সরকারকে সিন্ডিকেট সিস্টেমের মতো বিষয়গুলো পুনরাবৃত্তি না করার অনুরোধ করেছে।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, শ্রমিকদের একটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠানো উচিত যাতে অভিবাসী শ্রমিকরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সমস্ত নিবন্ধিত সংস্থাগুলোকে সমান নিয়োগের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তারা।
অভিযুক্ত সিন্ডিকেট নেতা বিদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে সরকারি আলোচনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্যান্য সংস্থার মালিকদের মতো আমিও একজন সাধারণ ব্যবসায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত যে তারা সীমিত সংখ্যক সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে চায়। সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, সীমিত সংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগে খরচ বাড়লে আমি কথা দিচ্ছি এই ব্যবসা ছেড়ে দেব।
দুই বছর পর পর্যটকে মুখর কক্সবাজার
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বিপুল পর্যটক আগমনে সন্তুষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর সৈকত এলাকা পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় সৈকত এলাকা উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। পর্যটকদের উপস্থিতিতে খুশি কক্সবাজারের হোটেল ও মোটেল মালিকরা।
এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, আনসার সদস্য ও লাইফগার্ড কর্মীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্ট ও সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান এবং যান্ত্রিক জীবন থেকে নিজেকে সতেজ করতে পর্যটকরা ওই এলাকায় ভিড় করেছেন। অনেককে আবার মোটরসাইকেলে করে সৈকত এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে।
হোটেল কক্স টুডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবু তালেব শাহ জানান, দুই বছরের দীর্ঘ বিরতির পর পর্যটকদের আগমনে সন্তুষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ঈদের ছুটির পরও হোটেল, মোটেল ৯০ ভাগ রুম আগামী ১১ মে পর্যন্ত বুকিং রয়েছে।
পড়ুন: ঈদের ছুটিতে জাফলংয়ে পর্যটকের স্রোত
হোটেল ব্যবসায়ী সেলিম নেওয়াজ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১০ মে পর্যন্ত আরও বেশি পর্যটক আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এতে পর্যটন শিল্প আরও উন্নয়ন হবে।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেস জানান, এবার ঈদের ছুটির পরের এক সপ্তাহেও ৭০ ভাগ রুম বুকিং রয়েছে। নিজের গ্রামে বা শহরে যারা ঈদ উদযাপন করেছেন তাদের অনেকে ঈদের ছুটির পর কক্সবাজার ভ্রমণে আসছেন। তবে আবহাওয়া ঠিক থাকলে আরও অনেকদিন পর্যটকে ভরপুর থাকবে কক্সবাজার।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, ঈদের ছুটির পরেও এক সপ্তাহেও ৭০ ভাগ রুম বুকিং রয়েছে। নিজের গ্রামে বা শহরে যারা ঈদ উদযাপন করেছেন তাদের অনেকে ঈদের ছুটির পর কক্সবাজার ভ্রমণে আসছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারে সেই লক্ষ্যে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পর্যটকদের চিকিৎসা সেবা ও খাবার পানির ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতায় এ পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ উদ্দীন জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিকে চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফ গার্ড, বিচ কর্মী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
এখানে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজে দুই লাখেরও বেশি পর্যটকের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
পড়ুন: ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নিকলী হাওর উপজেলার ধানচাষিরা এবার বোরো ধান কাটার মৌসুমে চামরাঘাট, ভৈরব, আশুগঞ্জের পাইকারি বাজারে ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।
ফলে মণ প্রতি ধানচাষিরা ১৫০-২৫০ টাকা লোকসান গুনছেন। যা তাদের আর্থিক সমস্যার মুখে ঠেলে দেবে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় হাওরের চাষীরা ইতোমধ্যে দু’বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কায় হাওর এলাকার কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটার ফলে এগুলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। এতে তারা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাছাড়া বোরো শ্রমিক সঙ্কটে লোকসান বেড়েছে। কারণ কৃষকেরা বোরো ফসল কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পেতে অতিরিক্ত টাকা গুনছেন।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
এবার ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া হাওরের কৃষকেরা হতাশায় নিমজ্জিত করছে। তারা এখন বিলাপ করছে এবং কীভাবে তারা স্থানীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে নেয়া তাদের ঋণ শোধ করবে তা ভেবে দিন পার করছে।
ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিরা। কৃষকেরা ব্রি ধান ২৮ বিক্রি করতে পাইকারি বাজারে যাওয়ার পর থেকে তাদের হতাশা আরও বেড়েছে।
চামরাঘাট চালের বাজার পরিদর্শন করে ইউএনবি প্রতিনিধি দেখতে পান হাওর এলাকার কৃষকেরা নদীপথে ধান নিয়ে আসছেন। রাইস মিল মালিকেরা এখান থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন।
এ বছর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। কারণ হাওর এলাকায় উৎপাদিত ধান খুব কম দামে কিনছেন মিল মালিকেরা।
শ্রম খরচসহ মোটা ধানের প্রতি মণের উৎপাদন খরচ ৯০০ টাকার কাছাকাছি, যেখানে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়, যেগুলোর উৎপাদন খরচ ১০০০ টাকার কাছাকাছি।
ইটনা উপজেলার ধনপুরের কৃষক করিম মিয়া জানান, এক মণ ধান উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে এক হাজার টাকার বেশি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কম দামে ধান বিক্রি করায়।
অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরব বাজারের পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক আমিন মিয়া জানান, অষ্টগ্রামের অধিকাংশ কৃষকই মালিকদের কাছ থেকে ফসলি জমি ইজারা নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় পাওনাদারদের কাছ থেকে টাকাও ধার নিয়েছেন। তাই কৃষকেরা এ বছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করে জীবিকা নির্বাহ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ইটনা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘হাওর এলাকার অধিকাংশ কৃষকই অতিদরিদ্র। ধারের টাকা পরিশোধ করতে বৈশাখের প্রথম দিকেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। কারণ বৈশাখ মাসে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে মহাজনরা। তারা কয়েকদিন পর ধান বিক্রি করতে পারলে ধানের ভালো দাম পাবে।’
আরও পড়ুন: বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
ঈদের ছুটিতে জাফলংয়ে পর্যটকের স্রোত
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আনন্দ ভাগাভাগি করতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। ঈদের পরদিন বুধবার সকাল দেশের অন্যতম এ পর্যটন কেন্দ্র জনস্রোতে মুখর হয়ে উঠে।
পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দ কাটাতে জাফলংয়ে ভিড় করেছেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো জাফলং যেন লোকে লোকারণ্য। পিকআপ, প্রাইভেট কার, বাস ও ট্রাকযোগে যে যেভাবে পেরেছে পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছেছে। পুরো এলাকা ছিল পর্যটকবাহী যানবাহনের সারি। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের গুচ্ছগ্রাম থেকে তামাবিল পর্যন্ত দীর্ঘকায় যানযট ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে প্রচণ্ড গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পর্যটকরা।
অপরদিকে পর্যটক স্বেচ্ছাসেবক ও জাফলংয়ে নিযুক্ত টুরিস্ট পুলিশদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যটন স্পটের গুরুত্বপূর্ণ সবকটি পয়েন্টে সার্বক্ষনিক পর্যটক নিরাপত্তায় থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) এমরুল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মশিউর রহমানের সমন্বয়ে একাধিক টিমের টহল চোখে পড়ে।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের বেডে ঈদ
পর্যটন পুলিশের ইন্সপেক্টর রতন শেখকে সাঁতার না জানা পর্যটকের উদ্দেশে হ্যাণ্ড মাইকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দিতে দেখা যায়।
এমনকি লাইফ জ্যাকেট জরুরি উদ্ধার সরঞ্জাম নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও প্রস্তুত রয়েছেন।
পর্যটক দম্পতি সোহেল মাহমুদ ও তামান্না ইসলাম বলেন, সারা দেশ এমনকি বহিঃবিশ্বেও জাফলং পর্যটন কেন্দ্রের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। খুব ভালো এখানকার পরিবেশ প্রকৃতি। পাহাড় টিলা সবুজের সমারোহ, স্বচ্ছ জলারাশি, দিগন্ত জুড়ে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলী হৃদয়ে বাড়তি আনন্দের খোরাক জোগায়।
হাসপাতালের বেডে ঈদ
পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ। সারাদেশ ঈদ উদযাপন করছে। কিন্তু এর মধ্যেও অসংখ্য রোগী রয়েছেন যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই উৎসবের দিনটি তাদের হাসপাতালেই কাটাতে হবে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা এই মানুষগুলোর মধ্যে ঈদ কোনো আনন্দ নেই।
ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকালে ভর্তি হয়েছেন শাকিল হোসেন (৩০)। হাসপাতালের বেডে জায়গা হয়নি তার, বারান্দাতেই চলছে তার চিকিৎসা। শাকিল হোসেনের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলায়। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ফরিদপুরে কর্মরত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঈদের আনন্দ নেই গাইবান্ধার চরাঞ্চলের
শাকিল হোসেন বলেন, সোমবার সকালে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হই। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু কিছুতেই বমি ও পায়খানা কমছে না। সাথে রয়েছে পেট ব্যথা।
রোগী শাকিলের মা আফসানা বেগম বলেন, ছেলের অসুস্থতার কথা শুনেই চলে এসেছি। হাসপাতালেই কেটে যাবে ঈদ। তবুও ছেলে সুস্থ হোক, সামনের বছর ঈদ পালন করবো।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ধুলদী এলাকার বাসিন্দা আজিজ বেপারী। তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার থেকে ভর্তি রয়েছেন। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ।
তিনি বলেন, চারদিন ধরে ভর্তি রয়েছি। এখন কিছুটা সুস্থ। সম্পূর্ন ভালো হতে আরও কয়েকদিন লাগবে। এবার আর ঈদের আনন্দ করা হবে না। হাসপাতালেই থাকতে হবে। বাড়িতে ছেলে মেয়ে রয়েছে, আমার জন্য তাদেরও ঈদ করা হবে না।
আরও পড়ুন: ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
শুধুমাত্র শাকিল, আজিজই নয় ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের ৭০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগীদের সেবার কাজে নিয়োজিত সেবিকা গোলাপী বেগম জানান, রোগী আসছে প্রচুর, জায়গা দিতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে অনেকেই ফ্লোর, বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সেবা নিশ্চিত করতে।
ঈদের আনন্দ নেই গাইবান্ধার চরাঞ্চলের
ঈদুল-ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, আর উৎসব মানে আনন্দ: এই দিনটিকে নতুন পোশাক কিনে বিশেষ খাবারের সঙ্গে উপভোগ করা হয়। কিন্তু গাইবান্ধার ১৬৫টি চর এলাকার তিন লাখের বেশি পরিবারের জন্য তা নয়। খুবই দারিদ্রতার কারণে নতুন জামা-কাপড় কেনা ও উৎসবের জন্য বিশেষ খাবার তৈরি করতে পারে না তারা।
এ বছরও কোনো আনন্দ হবে না কারণ চরের মানুষ তিন বেলা খাবারেরই ব্যবস্থা করতে পারে না।
বাংলাদেশে মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। কিন্তু ঈদ মানেই তাদের জন্য বিশেষ কোনো দিন নয় কারণ চর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বেকার ও ভূমিহীন। ঈদ উপলক্ষে ভালো খাবার ও নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করা তাদের জন্য কঠিন। তাদের নিজস্ব কোন জমি নেই তাই তারা বিভিন্ন জেলায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
চরের মানুষ শিক্ষা, কাজ, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান সহ তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারে না। এসব এলাকার বাসিন্দারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। এছাড়া বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাথে লড়াই করে তাদের বেঁচে থাকার হয়। এমনকি সরকারি কর্মসূচির আওতায় ত্রাণ পাওয়া থেকেও তারা বঞ্চিত।
জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, বেলকা, শ্রীপুর ও হরিপুর তিস্তা নদীর তীরে চারটি চর রয়েছে
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা শহরের উত্তর-পূর্ব কাপাসিয়ার চর পরিদর্শনে গিয়ে কয়েকজন পরিবারের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।
লালচামার গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তারা কোনো ত্রাণসামগ্রী পাননি। ফলে ধান কাটার মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য পুরুষদের বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়।
আরও পড়ুন: ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তির শঙ্কা
ওই গ্রামের নারী ময়না বেগম জানান, তার স্বামী ময়নুল মিয়া কাজে বের হয়ে এখনও ফেরেননি। তবে স্বামী ফোন করে বলেছেন তিনি আসার সময় তার জন্য শাড়ি আনবেন । আর গাইবান্ধা থেকে সন্তানদের জন্য যা লাগে কিনে দিবেন।
ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
ঈদুল ফিতর দরজায় কড়া নাড়ছে। আর তাই অনেক দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষদেরও সচ্ছল মানুষদের মতো কেনাকাটার ব্যস্ততা বেড়েছে।
কম বাজেটের ক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাক, জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাধনী ও গয়নাসহ অন্যান্য পছন্দের জিনিসগুলো কম দামে কেনার জন্য ফুটপাত এবং অন্যান্য অস্থায়ী দোকানে ভিড় করছেন।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় ফুটপাত ও খোলা জায়গায় শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে মূলত নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের লক্ষ্য করে।
বিক্রেতাদের মতে, অনেক মধ্যবিত্ত ক্রেতাও তাদের স্টলে ভিড় করছেন। কারণ তাদের কাছে শপিং মলের মতো বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের পোশাক এবং অন্যান্য সব ধরনের পণ্য রয়েছে।
ফুটপাতের বিক্রেতারা আরও বলেছেন, যে তারা ভালো গ্রাহক টানছেন। কারণ করোনা মহামারির কারণে মানুষ দুই বছর বিরতির পর এবার পুরোদমে কেনাকাটা করার সুযোগ পেয়েছে।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ী, ফকিরাপুল, মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা ও মিরপুর এলাকার অস্থায়ী দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় দেখা যায়।
মেয়েদের পোশাক, শিশুদের পোশাক, প্রসাধনী, পুরুষদের পোশাক যেমন- জিন্স ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ট্রাউজার, জুতো, বেল্ট, ক্যাপ, লুঙ্গি, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন: দুই বছর পর মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হবে শোলাকিয়া
দুই বছর পর মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হবে শোলাকিয়া
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দুই বছর পর আবারও মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে দুই তৃতীয়াংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি। এবার চার স্তরে নিরাপত্তা বলয়ের বেষ্টনী থাকবে। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ।
জানা যায়, ১৭৫০ সাল থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেই হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২শ’ ৭১ বছর। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া। কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থান করে আছে মানুষের হৃদয়ে। স্থানীয় হয়বতনগর সাহেব বাড়ির ঊর্ধ্বতন পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ (র.) ওই জামাতে ইমামতি করেন।
সর্বশেষ ১৯২তম জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মো. ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
শোলাকিয়ার এ ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ৬ষ্ঠ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাদ খান তার মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন। সেই ওয়াক্ফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে, ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কিশোরগঞ্জ মৌজার এ মাঠের মূল আয়তন বর্তমানে ৬.৬১ একর। চারপাশে অনুচ্চ প্রাচীর ঘেরা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে মোট ২৬৫টি কাতার রয়েছে যেখানে একসঙ্গে দেড় লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। এছাড়া মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন খালি জায়গা, রাস্তা এবং নিকটবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে সমসংখ্যক মুসল্লি এ বৃহত্তম ঈদজামাতে শরিক হন।
পড়ুন: ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন ধনী-গরীব নির্বিশেষে। সবার উদ্দেশ্য একটাই, যেন কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া হয়ে না যায় জামাতে অংশগ্রহণ, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার শিক্ষা নিয়েই জামাত শেষে বাড়ির পথে শোলাকিয়া ছাড়েন তাঁরা।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, এবারের জামাতে জায়নামায ও মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। নিরাপত্তা জোরদারে মোবাইল নিয়েও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থধাকবে। শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে ঈদের দিনে কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। ড্রোন ক্যামেরাসহ ৫ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও মাঠে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হবে। এ কাজে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার ব্রিগেডের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে।
ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, এবার ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
পড়ুন: ঈদে পরিবহন খাতে ‘নৈরাজ্যের’ আশঙ্কা আরএসএফের
ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
আগামী ২ মে বা ৩ মে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে। আসন্ন এই ঈদকে সামনে রেখে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেল, মোটেল-কটেজ ও রেস্টুরেন্টগুলো মেরামত ও সাজসজ্জার প্রস্তুতির কাজ প্রায়ই শেষ।
এদিকে ঈদের ১০ দিন আগেই কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের প্রায় ৫০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সৈকতের ব্যবসীয় সমিতি । তবে কটেজ ও ফ্ল্যাট ব্যবসায়ীরা আগাম কক্ষ বুকিং দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া রমজানের শুরু থেকে কক্সবাজারে পর্যটক নেই বলে চলে। একইভাবে পর্যটন জোনের সব ধরনের রেস্টুরেন্টও প্রায় ক্রেতাশূন্য থাকে। তাই অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন: নান্দনিক সড়কবাতিতে ঝলমলে রাজশাহী শহর
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, রমজানের শুরুতেই পর্যটক না থাকায় বহু হোটেল-কটেজে কর্মচারী ছাঁটাই করেছে। এতে পুরো রমজান ও ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্লাহ বলেন, রমজানের পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা হয় না। তাই দোকান বন্ধ রাখা রয়েছে। তবে ঈদের পরে ব্যবসার জন্য নতুন করে মালামাল ওঠানোসহ সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ঈদযাত্রায় যানজটে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে বাজার বসায় এবং প্রায়ই সংস্থার কাজ চলায় এই আশঙ্কা করছেন চালক ও যাত্রীরা।
এছাড়া মহাসড়কে অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার যানবাহন। ব্যস্ততম এই মহাসড়কে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন চলাচলের কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এছাড়া নিষিদ্ধ এসব যানবাহনের কারণে এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে,বর্তমানে মহাসড়কের অন্তত ছয়টি স্থানে বাজার বসায় এবং সংস্থার কাজ চলার কারণে প্রায়ই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কারণে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা ও দাউদকান্দি অংশে যানজটের কারণে অনেক সময় এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে চার থেকে ছয় ঘণ্টা।
তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ঈদযাত্রায় যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়োজিত থাকবে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাউদকান্দি উপজেলার টোলপ্লাজা এলাকা, গৌরিপুর, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনার মাধাইয়া, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড ও বুড়িচং উপজেলার নিমসার এ ছয়টি স্থানে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার ও চৌদ্দগ্রাম বাজারেও যানজট হয়। এসব এলাকায় মহাসড়কের ওপর বাজার বসার কারণে গাড়ি নিয়ে পথ চলতে বেগ পেতে হচ্ছে চালকদের।
আরও পড়ুন: শিগগিরই কমবে যানজট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী