বিশেষ-সংবাদ
তাহিরপুরে নতুন বাজার থেকে শ্রীপুর বাজারের বেহাল সড়কে ভোগান্তি
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে জেলার তাহিরপুরের শ্রীপুর ইউনিয়নের বালিয়াঘাট নতুন বাজার থেকে শ্রীপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রাসহ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উক্ত ইউনিয়নের আশপাশের বড়ছড়া, ট্যাকেরঘাট, লাকমা, লালঘাট, বাঁশতলা, চারাগাও, কলাগাও, জঙ্গলবাড়ি, বাগলী, সুন্দরবন, রতনপুর, দুধের আউটা, পুটিয়া, ব্যুড়াঘাট, জামালপুর, নবাবপুর, মদনপুর, মন্দিয়াতা, কামালপুর, মুজরাই, জয়পুর, গোলাবাড়ি, তরং, খালা শ্রীপুর, মাটিয়ান, উজ্জলপুর, বালিয়াঘাট, বানিয়াগাও, ইসলামপুর, গোলকপুর, তেঁলীগাও, শিবরামপুরসহ প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষ এ সড়কে দিয়ে যাতায়াত করেন। বিশেষ করে শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও শ্রীপুর ইউনিয়ন ডিহিভাটি ভূমি অফিসে আসা সেবা গ্রহীতরা চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
এ রাস্তায় প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মানুষ যাতায়াত করে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে , বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে রাস্তার দু’পাশের মাটি সরে রাস্তার অধিকাংশ স্থানই বড় বড় ভাঙন দেখা গেছে। ফলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন আরোহীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু গাড়ি চালক নয়, পথচারীদের জন্যও দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে এ রাস্তাটি।
স্থানীয় সোনার বাংলা মোটরসাইকেল সমিতির সভাপতি শাহানশাহ বলেন, ‘আমরা রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধির শরণাপন্ন হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমাদের রাস্তার বেহাল অবস্থা কিন্তু দেখার কেউ নেই। পাকা রাস্তার দু'পাশের মাটি সরে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। পরে আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে যোগাযোগ সচল রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা এ রাস্তা সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ নেননি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি এই রাস্তাটি যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়।
আরও পড়ুন: করতোয়া নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ!
জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোদাচ্ছির আলম সুবল বলেন, ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি। তাই যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল করাই কঠিন। এ কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগে আমার মেয়েও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল।’
রাস্তাটির সংস্কার হলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের চলাচলের পথ সুগম হবে।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন ডিহিভাটি ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘পাঁকা রাস্তার দু’পাশের মাটি সরে যাওয়ায় একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে রাস্তাটি। পুরো রাস্তা জুড়ে ভাঙন আর ভাঙন। গাড়ি চলাচল দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাও কষ্টের বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলার অধিকাংশ লোকই চরম কষ্টে আমার অফিসে আসেন খাজনা ও ভূমি বিষয়ে সেবা নিতে। এমনকি শিক্ষার্থীরাও সময়মতো স্কুলে যেতে পারে না।’
আরও পড়ুন: প্রাণহীন জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি!
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবির বলেন, ‘রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠিয়েছি। বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু করা হবে।’
কয়রায় জরুরি বাঁধ মেরামতের নামে অর্থ আত্মসাৎ!
খুলনার কয়রা উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দে ৪৩ স্থানে জরুরি বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। টেন্ডারবিহীন এসব কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা তালিকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে নিজেদের লোক দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কাজের তালিকায় যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে চলমান কাজ সম্পর্কে তারা কেউ জানে না। ফলে বাঁধ মেরামতের নামে দায়সারা কাজ করে বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ আত্মসাৎ করা।
আরও পড়ুন: প্রাণহীন জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি!
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘আপদকালীন সময়ে জরুরি বাঁধ মেরামত’ এর আওতায় দরপত্র ছাড়াই ডিরেক্ট প্রকিউরম্যান্ট মেথড (ডিপিএম) পদ্ধতিতে উপজেলার ৪৩টি স্থানে কাজ চলমান রয়েছে। এ পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে মাটির কাজসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিং কাজ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এসব কাজ করিয়ে নেয়া কথা। কিন্তু পাউবো কর্মকর্তারা কাগজে কলমে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে রাখলেও বাস্তবে নিজেদের পছন্দের শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিল্লাল হোসেন নামে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বলেন, ‘টেন্ডারবিহীন কাজগুলো পাউবো’র স্থানীয় কর্মকর্তারা সাব কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে করিয়ে নিচ্ছেন। এলাকার শ্রমিকদের সাথে চুক্তিভিত্তিক কাজ শেষে পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে বিল তুলে নেয় তারা। এতে উভয়ই আর্থিকভাবে লাভবান হয়। মাঝখান থেকে সরকারি বরাদ্দ অপব্যবহারের ফল ভোগ করি আমরাই।’
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার গোবিন্দপুর নামক স্থানে ১৫০ মিটার বাঁধ মেরামত কাজে আফজাল হোসেন নামে এক ব্যাক্তি অ্যাক্সক্যাভেটরের সাহায্যে মূল বাঁধের ঢালে মাটি কেটে উচ্চতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এতে ভাঙনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় স্থানীয় মানুষ কাজ বন্ধ করে দিলেও পাউবো কর্মকর্তারা ফের কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তাকে।
ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন বলেন, ‘কার লাইসেন্সের কাজ তা জানিনে। আমি নগদ তিন লাখ টাকায় কাজটি কিনে নিয়েছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দের এ কাজটি মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’
এদিকে, উপজেলায় ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে জোড়শিং এলাকায় দুই গ্রুপে ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬০০ মিটার বাঁধ মেরামতসহ অস্থায়ী ঢাল সংরক্ষণ কাজ চলছে। দু’টি কাজই করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাফ্ফার হোসেন। তালিকা অনুযায়ি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রানা এন্টারপ্রাইজের নাম রয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির মালিক কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম ওই কাজ সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
তিনি বলেন, ‘যতদূর জানি পাউবোর তত্ত্বাবধানে এই মুহূর্তে যেসব কাজ চলমান রয়েছে তার কোনটিই টেন্ডারে ওঠেনি। অফিস থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।’
জানা গেছে, শাকবাড়িয়া ও চৌকুনি নামক স্থানে ৯০ মিটার বাঁধ মেরামতসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিং এবং ৭০০ মিটার মাটির কাজে কেএম মনিরুজ্জামান নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। প্রায় ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দের এ কাজ দু’টি সোলায়মান নামে একজন শ্রমিক সরদার করেছেন। তিনি পাউবো কর্মকর্তাদের নির্দেশে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘আমি কখনই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করিনি। আমি মূলত এলজিইডির কাজ করে থাকি। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার কেন করা হয়েছে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইবো।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাউবো’র স্থানীয় কর্মকর্তারা কাজগুলো বাস্তবায়ন করছে। সেক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
জানা গেছে, পাউবো’র একজন উপসহকারি প্রকৌশলী ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ভাগাভাগি করে তাদের পছন্দের লোকজন দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। দেখা গেছে, কাজের নকশা ও প্রাক্বলন অনুযায়ি প্রতিটি কাজে দ্বিগুন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে বরাদ্দের অর্ধেক অর্থ আত্মসাতের সুযোগ আগে থেকেই করে রেখেছেন তারা। আবার বরাদ্দের অর্ধেক দামে কাজ কিনে নিয়ে স্থানীয় শ্রমিক সরদাররা লাভের আশায় নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে অনেক স্থানে কাজ শেষ হতে না হতেই ধসে পড়তে দেখা গেছে।
তাছাড়া ডাম্পিংয়ের জিও ব্যাগগুলো বাঁধের উপর বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে, ব্যাগের অর্ধেকরও কম বালু ভরে বাঁধের ঢালে প্লেসিং করায় তা নদীতে চলে গেছে।
আরও পড়ুন: বাস্তবে জীবিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা মৃত!
এ ব্যাপারে পাউবো সেকশান কর্মকর্তা (এসও) মশিউল আবেদীন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এ কাজগুলো করা হয়ে থাকে। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে বিল করা হয়। ঠিকাদারের সম্মতিতে এভাবে কাজ করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
নিম্নমানের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, যে যতটুকু কাজ করবে তাকে ততটুকু কাজের বিল দেয়া হবে।
পাউবোর সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, ‘ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কাজ করা হচ্ছে। যদি কোন ঠিকাদার অস্বীকার করে সেটা তার ব্যাপার। এখানে পাউবোর কোন কর্মকর্তা কাজের পার্টনার হওয়ার সুযোগ নেই।’
সুন্দরবনের ১৪ চরে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত জেলেরা
গত ১ নভেম্বর থেকে মৌসুম শুরু হওয়ায় সুন্দরবন উপকূলের দুবলারচরসহ ১৪টি চরে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই মৌসুম চলবে।
প্রায় চার মাস ধরে চলা শুটকি সংগ্রহকে ঘিরে গত ২৬ অক্টোরব (মঙ্গলবার) বনবিভাগের পাস নিয়েই অনেক জেলে আগে ভাগে সাগর পাড়ের দুবলার চরে পৌঁছে মাছ ধরতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, খলিসা, ইছা, ভেদা, পোঁয়াসহ নানা প্রজাতি মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি শুরু করে দিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুটকি সংগ্রহ মৌসুমে বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারিকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিক খালী, কবরখালী, চাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালীর চরে অস্থায়ী পল্লী তৈরি করে প্রায় ১৫ হাজার জেলে-মহাজন শুটকি সংগ্রহ করে থাকে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জে এ চরগুলো অবস্থিত।
অঅরও পড়ুন: করতোয়া নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ!
টানা পাঁচ মাস সেখানে থাকতে হবে জেলেদের। সাগর মোহনায় মাছ শিকার করে সেই মাছ ট্রলারে করে চরে নিয়ে আসেন জেলেরা। চর মারিয়ে কাঁধে বাঁশ চাপিয়ে মাছ ভর্তি ঝুঁড়ি নিয়ে আসেন শুঁটকি পল্লীতে। এরপর তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন তারা।
জেলেরা জানান, ২৬ অক্টোবর নৌকা ও ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনের দুবলারচরের শুটকি পল্লীর উদ্দেশে রওনা দিয়ে ২৭ অক্টোবর পৌঁছে যান। সেখানে নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম ও শুটরি তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করেছে। খুলনা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, রূপসা, বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, সাতক্ষীরার তালা, শ্যামনগর, আশাশুনি, পিরোজপুর, বরগুনার বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলেরা শুটকি পল্লীতে এসে অস্থায়ী বসতি গড়েছেন।
রামপালের সুন্দরপুর গ্রামের জেলে মো. আফতাব উদ্দিন মীর বলেন, ‘শুটকি পল্লীতে পুরো দমে কাজ শুরু হয়েছে। মরা গোনের মধ্যেও রূপচাঁদা, লইট্টা, তেলো পাইস্সা, ছুরিসহ নানা রকমের ভালো মাছ পেয়েছি। গোন যদি এসে ধরতে পারতাম তাহলে আরও বেশি মাছ পাওয়া যেত। চরে আসা অধিকাংশ জেলেরা লোন নিয়ে এখানে এসেছেন। মাছ না পেলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।’
আরও পড়ুন: প্রাণহীন জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি!
জেলেদের দাবি, পাস পারমিট অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে দেয়া হোক। তাহলে তারা গোন ধরতে পারবে এবং মাছও বেশি পাবে।
পাইকগাছার সোলাদানার বেতবুনিয়ার বাসিন্দা শুটকি ব্যবসায়ী কবির হোসেন মিন্টু বলেন, ‘১১ জন জেলে নিয়ে আমি আলোর কোলে এসেছি। জেলেরা সাগরে মাছ ধরাও শুরু করেছে। ২০১২ সাল থেকে আমরা সুন্দরবনের কিছু ব্যবহার করছি না। ঘর-মাচা তৈরির সব খুঁটি-বাঁশ-চটা, কাঠপাট-বেড়া নিয়েই এখানে আসি। পাঁচ মাস থাকতে যা যা প্রয়োজন সবই নিয়ে এসেছি।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, শুটকি মৌসুমে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের এর মধ্যে পাস পার্মিট দেয়া হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও হাজার পনের জেলে বহদ্দার সুন্দরবনের দুবলাসহ বিভিন্ন চরে অবস্থান করবেন। তবে জেলেরা যাতে চরগুলোতে তাদের মাচা তৈরি ও ঘর নির্মাণে অবৈধভাবে সুন্দরবনের কোনো গাছ কর্তন না করে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’
তিনি জানান, জেলেদের সার্বিক সুবিধা দিতে বন বিভাগের কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন। এ বছর জেলে মহাজনদের থাকার জন্য ৯৮৫ ঘর ও ৬৬ ডিপোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব ঘর ও ডিপুতে জেলে ব্যবসায়ী ও ফরিয়াসহ ১৫ হাজার লোক অবস্থান করবেন।
কয়লা সংকটে ফরিদপুরে ইট উৎপাদন বন্ধ
ফরিদপুরে ইটভাটায় জ্বালানি সংকট ও উচ্চ মূল্যের কারণে চলতি মৌসুমে এখনো উৎপাদন শুরু করতে পারেনি ভাটা মালিকরা। এর ফলে প্রায় ২০ হাজার ইট ভাটা শ্রমিক বেকার (কর্মহীন) অবস্থায় রয়েছে।
জেলা ভাটা মালিক সমিতি জানিয়েছে, ফরিদপুর জেলায় ছোট বড় ১২৮টি ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে ৮টি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। চালু রয়েছে ১২০টি ভাটা, এর মধ্যে অটো ইটভাটা রয়েছে ৭টি বাকি ১১৩টি ইটভাটা চলে কয়লা পুড়িয়ে।
গত মৌসুমে ভাটা মালিকরা ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি (কয়লা) টন প্রতি সাড়ে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায় কিনেছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে করোনা মহামারির কারণে কয়লা আমদানি সংকট রয়েছে। এরপরও আবার যা পাওয়া যাচ্ছে তার জন্য টন প্রতি ১৯ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। আর তাই ভাটা মালিকেরা সময় মতো ভাটায় ইট কাটা শুরু করতে পারছে না।
সরেজমিনে ফরিদপুরে সদর উপজেলার ডিক্রীরচর, নর্থচ্যানেল ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, গত বছরের উৎপাদিত ইট এরই মধ্যে বিক্রি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু নতুন করে উৎপাদনে না যাওয়ায় ফরিদপুরে ইট সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি উন্নয়ন কাজে ঠিকাদাররা ইট কিনে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে। আর নতুন ইট উৎপাদনের পর যে দামে বিক্রি হবে তা বর্তমান বাজার দরের দ্বিগুণ। তাই মাথায় হাত পড়েছে বাড়ি করতে চাওয়া সাধারন মানুষ ও নতুন করে কাজ পাওয়া ঠিকাদারদের।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে বাধা কাটল
করতোয়া নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ!
হুসাইন মালিক
ইজারা নেয়ার দাবি করে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার করতোয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। আর এই অভিযোগের আঙ্গুল উপজেলার বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) রবিউল ইসলাম ও তার অনুসারীদের দিকে।
এদিকে, করতোয়া নদীটি দীর্ঘদিন অবহেলায় বিলীন হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। পরে সরকার নদীটি খনন করে জনসাধারণ জন্য আবারও উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু খনন কাজ শেষ হতে না হতেই করতোয়া নদীর দিকে নজর পড়েছে দখলদারদের। এই নদীতে এলাকার মানুষ গোসল, মাছ ধরা থেকে শুরু করে নানা কাজে ব্যবহার করেন। সেই নদীতে হঠাৎ করে বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) রবিউল ইসলাম ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের বেশ কিছু প্রভাবশালী বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: প্রাণহীন জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি!
সংশ্লিষ্টরা জানান, জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের পাথিলা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর এই নদীর সরকারি জায়গার কিছু অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। আর কিছু অংশ রবিউল মেম্বার ও তার অনুসারীরা ইজারা নেয়ার দাবি করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। সরকারিভাবে নতুন করে খনন করা করতোয়া নদী আবারও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন তারা। এ মাছ চাষের কারণে কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
ওই ইউনিয়নের পাথিলা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের গ্রামের পাশ দিয়ে করতোয়া নদী বয়ে গেছে। নদীটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আবার ভারতে চলে গেছে। কিন্তু গঙ্গাদাশপুর গ্রামের আমিনুর রহমানের বাড়ির নিচ থেকে পাথিলা গ্রামের ব্রিজ পর্যন্ত বাঁধ দেয়া হয়েছে। বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পাথিলা গ্রামের রবিউল ইসলামসহ তার অনুসারীরা বাঁধটি দিয়েছেন। এক মাস হলো তারা হঠাৎ করে করতোয়া নদীতে আনুমানিক ১২ একর জলাকার এই বাঁধ দিয়ে আটকে ফেলে জলাশয়ে তারা মাছ ছেড়েছেন। পাথিলা গ্রামের মানুষ এই নদী নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। তাই দখলকারীকে বাঁধ না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তারা। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’
গ্রামবাসীর অভিযোগ, রবিউল ইসলাম স্থানীয় ইউপি সদস্য হওয়ায় কারও কোনো কিছুই মানতে চান না তিনি।
তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় জনসাধারণসহ সুধী মহল।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রবিউল ইসলামের বলেন, ‘এই নদীটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছ থেকে বদ্ধ জলাশয় হিসেবে ১৯৯০ সালে গণস্বাস্থ্য এনজিওর মাধ্যমে বরাদ্দ নেয়া হয়। পরবর্তীতে আমরা যুব সমবায়ের মাধ্যমে এ মাছ চাষ করে থাকি। এটা আমরা ইজারার মাধ্যমে করতেছি। প্রতি বছর আমরা খাজনা দিয়ে আসছি, এবছরও খাজনা দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ‘ফাতেমা’ জাতের ধানে বিঘায় ৫০ মণ ফলন
বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের জানান, তিনি ঘটনাটি জানেন না এবং এ ধরনের কোনো নদী ইজারা দেয়া হয়েছে কিনা, সেটাও তিনি জানেন না। তবে রবিউল
ইসলাম মেম্বার দীর্ঘদিন এ নদীতে মাছ চাষ করছেন বলে জানান তিনি।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
খুলনা-মোংলা রেললাইনে ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে
খুলনা-মোংলা রেললাইন স্থাপনের পর বেশ কিছু এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমান সড়ক থেকে প্রায় ১০-১২ ফুট উঁচু দিয়ে রেললাইন যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে সড়কগুলো দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এজন্য খুলনা ও বাগেরহাটের নয়টি স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে প্রকল্প সংশোধন করে আন্ডারপাস নির্মাণের অংশটি সংযোজন করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে আন্ডারপাস নির্মাণ শুরু হবে।
খুলনার ভেতরের আন্ডারপাসের স্থানগুলো হচ্ছে-খুলনার বিল ডাকাতিয়ার লতাপাহাড় সড়কে, আড়ংঘাটা পুরাতন সাতক্ষীরা সড়কের ওপর, লবণচরা থানার পেছনে প্রস্তাবিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এবং রূপসার জাবুসা বাজার মোড়ে।
বাগেরহাটের ভেতরে কাটাখালি স্টেশনের আগে বালিয়া ভট্টখামার এলাকা, চুলকাঠি বাজারের পাশে পিলজঙ্গ এলাকায়, মহিষ খামারের পাশে, বাঘার কবিরাজ বাড়ি এলাকায় এবং দিগরাজ বাজার থেকে কিছুটা সামনে অন্য পাঁচটি আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প থেকে জানা গেছে, খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইনের দৈর্ঘ্য হবে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। রেললাইন রূপসা নদীর ওপর দিয়ে যাবে। এ জন্য রূপসা সড়ক সেতুর অদূরে রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লোকবল সংকট : বন্ধ হলো নাটোরের আজিমনগর রেলস্টেশন
সূত্রটি জানায়, খুলনা থেকে মোংলার সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। জাতীয় মহাসড়ক (এন-৭) এর পাশ দিয়েই সমান্তরালভাবেই রেললাইন যাচ্ছে। নতুন রেললাইন যেই এলাকায় বসছে, এর মাঝে অসংখ্য গ্রামীণ সড়ক, বাজার এবং মহাসড়ক রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভূমি থেকে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় রেললাইন বসছে। এ জন্য রেললাইন এলাকায় ১০৬টি কালভার্ট ও ৩১টি মাঝারি আকৃতির সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে কিছু এলাকায় রেললাইন থেকে আগের সড়কগুলো ৪-৫ ফুট নিচু থেকে গেছে। কয়েকটি জায়গায় সড়ক থেকে রেললাইনের উচ্চতা ১০ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত। এতে রেললাইন অতিক্রম করতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আন্ডারপাসগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, রেললাইন থেকে সড়ক ১০-১২ ফুট নিচে হওয়া এবং ভারী যানবাহন চলাচল করায় এই নয়টি স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। সংশোধিত প্রকল্পে বিষয়টি অনুমোদনের পর মাটি পরীক্ষা হয়েছে। নকশা তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী বছরের শুরুতেই আন্ডারপাসের কাজ শুরু হবে। আপাতত ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নকশা তৈরির কাজ শেষ হলে পুরো ব্যয় জানা যাবে।
তিনি বলেন, কয়েকটি এলাকায় আন্ডারপাস বা ওভারপাসের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু প্রকৌশলীরা স্থানগুলো পরিদর্শন করে ওই সব এলাকায় ওভারপাস বা আন্ডারপাস সম্ভব নয় বলে মতামত দিয়েছেন। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যূনতম ৮-১০ ফুট উচ্চতা না থাকলে রেললাইন মেলানো যাবে না। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। প্রস্তাবিত এলাকায় উচ্চতা কম।
আরও পড়ুন: রেল খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী তুরস্ক
কেমন হবে আমাদের মেট্রোরেল?
উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর খুলনা-মোংলা রেল (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদন পাওয়া খুলনা-মোংলা ৬৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রথম ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। প্রথম দফা প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় বর্তমান ব্যয় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
তিস্তা নদী ভাঙনে দিশেহারা কুড়িগ্রামের মানুষ
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি গ্রামের অসুস্থ্ কৃষক সুবির উদ্দিন (৭০) চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন, ‘দুই দিনোত চাইর একর জমি তিস্তা গিলি খাইল বাহে। হামারগুলার বাড়ীঘর, জায়গাজমি সউগ শ্যাষ। হামরা এ্যালা কোটে যাই, কোটে থাকি। থাকপের কোন জায়গা নাই।’
তার বাড়ী লাগোয়া ছোট ভাই মহির উদ্দিনের ছেলে রহিমুদ্দি (৪৪) জানায়, ‘ওই যে পানি দেখছেন। ওই জায়গায় হামার দুই ভাই আর চাচার বাড়ি আছিল। বাড়ির পাশোত এক একর জমিত আলু লাগাইছিনু। নদীতে সব ধ্বংস। এখন হামরা নিঃস্ব হয়া গেইলং।’
এরকম সরব আর নিরব কান্না ভেসে বেড়াচ্ছে কুড়িগ্রামের তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকাকে ঘিরে। গত এক সপ্তাহে তিস্তা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা আর স্বপ্নকে।
আরও পড়ুন: স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় তিস্তাপাড়ের কৃষকেরা
বৃহস্পতিবার সরজমিন এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ভাঙনের তান্ডব লীলা। প্রচন্ড স্রোতের তোড়ে রামহরি গ্রামের বাড়ীঘর আর গ্রামের ফসলি জমির নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
এই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে কৃষক আব্দুল জলিল (৫২) জানান, ‘৬ বিঘা জমিতে ধান লাগাইছি। আর ১০/১২দিন পর কাটা যাইতো। সেই আধাপাকা ধানের জমির অর্ধেকটা নদী ভাঙনে শ্যাষ হয়া গেল। এখন বাকী ধান গরুকে খাওয়ার জন্য কাটা লাগছে।’
রামহরি ভূঁইয়াটারী গ্রামে রাহেলা বেগম (২৬) এর বাড়ীর কাছেই এসেছে নদী। স্বামী মমিনুল আর দুই সন্তানকে নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। রাহেলা জানান, ‘এবার নিয়া চারবার বাড়ী ভাঙছে। আমরা কামলা খাটি জীবন চালাই। নজিমুদ্দি ভূঁইয়া আমাদের দুরবস্তা দেখি এখানে থাকপের দিছে। এখন বাড়ি ভাঙলে আমাদের থাকবার বা বাঁচার কোন পথ থাকপে না।’ তার সাথেই বাড়ী ঢাকার গার্মেন্টস কর্মী আমিনুল ইসলামের। তার স্ত্রী পারভীন (২৮) জানান, ‘এই জায়গাতে ১০ বছর ধরি আছি। এতদূরে নদী আসবে কল্পনাই করি নাই। এখন বাড়ী ভাঙতে হবে ভাবতেই বুকটা হু-হু করি উঠছে।’
সবচেয়ে বেশি ভাঙছে ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের উজানে সরিষাবাড়ী আর গতিয়াসাম এলাকায়। এখানে প্রতিনিয়ত ভাঙছে তিস্তা নদী। গতিয়াসাম বগুড়া পাড়ায় দেড় থেকে দুইশ জন শ্রমিক কাজ করছে বাড়ী ভাঙ্গার কাজে। প্রতিটি বাড়ি থেকেই শোনা যাচ্ছে হাতুড়ির শব্দ। যত্নে লাগানো গাছগুলোও কাটছে কেউ কেউ। সড়ানো হচ্ছে আধাপাকা ঘরের ইট,বেড়া আর টিনের চাল। সবার চোখে মুখে হতাশা আর বোবা কান্না।
আরও পড়ুন: তিস্তায় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
এই গ্রামে নদী ভাঙনের শিকার লালবানু (৫০) সাংবাদিক দেখে ক্ষোভ নিয়ে জানালেন, ‘তোমরাগুলা ছবি তুলি কি করবেন। হামরা মরি যাই, আর তোমরা ছবি তোলেন। হামার যে ক্ষতি হয়া গেইল। তা কি সরকার দিবে।’
কলেজ পড়ুয়া শাওন সরকার (২২) জানায়, এখানে মন্ত্রী আসে, এমপি আসে, জেলা প্রশাসক, ইউএনও স্যার আসে। শুধু দুঃখ প্রকাশ করে শেষ। কিন্তু কোন কাজ হয় না। আমরা এই মূহূর্তে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ চাই।
প্রাণহীন জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি!
সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পরিচালনা কমিটির নিষ্ক্রিয়তা, নতুন বই ও প্রযুক্তি-আধুনিকতার অভাবসহ নানা কারণে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিটি এখন প্রাণহীন। বই পড়তে এখন আর কেউ লাইব্রেরিমুখী হয় না। ফলে প্রায় ১৮ হাজার মূল্যবান বই নষ্ট হওয়ার পথে।
সংশ্লিষ্ট জানায়, জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরির আদি নাম ছিল করনেশন রিডিং ক্লাব। ব্রিটিশ আমলে ব্রাহ্ম সমাজের সুধীজন এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৯ সালে জামালপুর পৌরসভার কার্যালয়ের একটি কক্ষে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি নামকরণ করে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময় এ এইচ সিদ্দিক নামে এক সাব-রেজিস্টার ও স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা লাইব্রেরি পরিচালনা পরিষদে ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় জেলার প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক-অ্যাডভোকেটসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার স্থানীয় ব্যক্তিরা লাইব্রেরি পরিচালনা করেন। ১৯৭৬ সালে ১৮ মে শহরের বকুলতলাস্থ কলেজ রোডে নিজস্ব একতলা পাকা ভবনে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণ কেন্দ্র এই লাইব্রেরি।
পাঠকদের বই লেন-দেন, বই মেলা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্রপ্রদর্শনী, বিতর্ক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসবসহ নানা উৎসব-আয়োজনে মুখরিত ছিল লাইব্রেরি প্রাঙ্গন। প্রতিদিন শতাধিক সদস্য এখান থেকে বই নিতেন, জমা দিতেন। বিকাল হলেই উন্মুক্ত পাঠকদের সংবাদপত্র পড়তে ভিড় জমে যেতো। গবেষণা এবং বিভিন্ন চাকরি প্রত্যাশীদের চাকরির খোঁজখবর ও তথ্য সংগ্রহ করতে একসময় এই পাবলিক লাইব্রেরির সংবাদপত্রগুলোই ছিল মূল উৎস।
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’
জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ আগে এই লাইব্রেরিতে ১৭৫ জন আজীবন সদস্য ছাড়াও ২৪৫ জন ছাত্র সদস্য ও ২৪৯ জন সাধারণ সদস্য ছিল। যারা প্রতিদিন লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ করে তাদের জ্ঞান ভাণ্ডরকে সমৃদ্ধ করতেন। এখন দিন বদলে গেছে, ডিজিটাল যুগে বইয়ের পাতায় জ্ঞান অন্বেষণ থেকে মানুষ সরে যাচ্ছে। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তাই কেউ লাইব্রেরিমুখী হতে চায় না। যে কারণে লাইব্রেরিতে দৈনিক পত্রিকা রাখাও দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে।
বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই লাইব্রেরির কার্যক্রম প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। ২০০৪ সালে তিন বছর মেয়াদি ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কার্যকরি কমিটি হয়। তারপর আর নির্বাচন হয়নি। মূলত ওই কার্যকরী কমিটির নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
বর্তমানে এখানে খুবই সামান্য বেতনে একজন করে গ্রন্থাগারিক ও পিয়ন কর্মরত আছেন। কিন্তু প্রায় ১২/১৩ বছর ধরে তারা বেতন পান না। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে লাইব্রেরির উন্নয়নে প্রতি বছর বই ও নগদ টাকা অনুদান হিসেবে আসতো কিন্তু পরিচালনা কমিটির নিষ্ক্রিয়তার জন্য চার/পাঁচ বছর সেটাও বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পাহাড় জমে গেছে। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে বর্তমানে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরির জীর্ণশীর্ণ ভবন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
স্থবির হয়ে থাকা লাইব্রেরির কার্যক্রমকে গতিশীল ও দ্রুত একটি নির্বাচন করে নতুন কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার লক্ষ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে গত বছর ২০ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসককে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। অথচ কমিটি গঠনের ১১ মাস অতিবাহিত হলেও লাইব্রেরির উন্নয়নে দৃশ্যমান কোনকিছু দেখাতে পারেননি কমিটির সদস্যরা।
আরও পড়ুন: বাস্তবে জীবিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা মৃত!
লাইব্রেরির বিলুপ্ত কমিটির একাধিকবার নির্বাচিত সদস্য, কবি ও লেখক আলী জহির বলেন, বইয়ের পাঠক আগের মতো আর নেই। ডিজিটাল যুগ আসার পর বই থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে প্রকৃত জ্ঞান অন্বেষণ হবে না। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে না। প্রযুক্তিবান্ধব তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে লাইব্রেরিকে আধুনিক করতে হবে, বইকে তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে, বই করতে হবে সহজলভ্য।
বিলুপ্ত কমিটির নির্বাচিত অপর সদস্য কবি, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সাজ্জাদ আনসারি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার চরম উৎকর্ষতার যুগে পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের সর্বোচ্চ প্রশংসার দাবিদার। জামালপুরেও এই উন্নয়নের ধারা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই উন্নয়ন দৃশ্যমান সবকিছুতেই হচ্ছে কিন্তু চেতনার উন্নয়ন হচ্ছে না। মানবিক চেতনার উন্নয়নের জন্য পাবলিক লাইব্রেরি একটি প্রধান মাধ্যম। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রায় দেড় যুগ ধরে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরির কমিটির অস্তিত্ব নেই।’
তিনি বলেন, ‘মানবিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমি মনে করি অবিলম্বে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরির নতুন কমিটি গঠন করে ব্যাপক কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করে লাইব্রেরিটিকে পুনর্জাগর প্রয়োজন। সম্ভবমত লাইব্রেরিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনা জরুরি।’
জাসদ জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি জাহিদ হাবিব জানান, বর্তমান কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের যুগে তরুণ প্রজন্মের আজ আর লাইব্রেরিমুখী হওয়ার ফুসরত নেই। পাঠকের আনাগোনা না থাকায় আড়ালে পড়ে যাচ্ছে এক সময় আলোর মশাল জ্বালানো জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোর্শেদা জামান জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে পড়া জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে এর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছি। লাইব্রেরির সামনে রাস্তার চলমান কাজ শেষ হলে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিকে গতিশীল করার লক্ষ্যে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যা যা করা প্রয়োজন তা দ্রুতই শুরু করা হবে।
প্রায় ১০ মাস ধরে মুখে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিপ্লবী বীর বাঘা যতীন!
দুর্বৃত্তদের ভেঙে দেয়ার দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত হলেও কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের সেই ভাস্কর্যটি সংস্কার করা হয়নি। চিঠি চালাচালির মাঝেই আটকে রয়েছে ভাস্কর্যটির সংস্কার কাজ। মুখে ক্ষতচিহ্ন নিয়েই এখন দাঁড়িয়ে আছেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের সেই ভাস্কর্যটি।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নে কয়া মহাবিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভেঙে রেখে যায়। হামলায় বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটির মুখ ও নাকের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঘটনার পরদিন কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের নামে মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আনিসুরের সহযোগী দুই যুবলীগ কর্মী সবুজ হোসেন ও হৃদয় আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন: বাঘা যতীন: যার বীরত্বে কেঁপে উঠেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
পুলিশ জানায়, যুবলীগ সভাপতি আনিসুর রহমানই ভাস্কর্যটি ভাংচুর করার মূল পরিকল্পনাকারী।
কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম জানান, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে তারা পুলিশকে জানায়, কয়া কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে অন্য নেতাদের ফাঁসাতে তারা চারজন মিলে পরিকল্পিতভাবে বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনার পর আনিসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করে কুমারখালী উপজেলা যুবলীগ।
এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান ও তাঁর দুই সহযোগী বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে এই মামলার অপর আসামি কয়া গ্রামের বাচ্চু শেখ পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর: যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩
এদিকে ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের ঘটনার প্রায় দশ মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বিল্পবী বীর বাঘা যতীনের সেই ভাস্কর্যটি সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
এতদিনেও কেন সংস্কার করা হয়নি বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি জানতে চাওয়া হলে কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ জানান, ভাস্কর্যটি সংস্কার করার জন্য চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার রিজু তামান্না স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে দ্রুত ভাস্কর্যটি সংস্কার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। একই সাথে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ওই চিঠির অনুলিপি প্রদান করা হয়।
আলোচিত এ ঘটনাটি নিয়ে মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকার কারণে আইনি জটিলতা এড়াতে কলেজের পক্ষ থেকে গত ৩ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুমারখালী আদালতের বিচারক সেলিনা খাতুনের আদালতে ভাস্কর্যটি সংস্কারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট আদালত গত ৭ মার্চ ভাস্কর্য সংস্কারের অনুমতি প্রদান করেন।
অধ্যক্ষ জানান, আদালতের অনুমতি পেয়ে তিনি ওই দিনই ভাস্কর্যটি সংস্কারের জন্য কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলার চার্জশীট প্রদান না করা পর্যন্ত ভাস্কর্যটি সংস্কার না করায় জন্য অনুরোধ জানানোর কারণে ভাস্কর্যটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।
তবে অধ্যক্ষের দাবি অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিখিত-মৌখিক এ ধরনের কোন নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি।
ভাস্কর্য সংস্কারের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসিল্যান্ড তামান্না তাসনিম বলেন, তিনি মাত্র কিছু দিন আগে কুমারখালীতে যোগদান করেছেন। মামলাটি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন রয়েছে সে কারণে ভাস্কর্য সংস্কার করা নিয়ে আইনি কোনো জটিলতা আছে কিনা এ বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো.সাইদুল ইসলাম জানান, ভাস্কর্যটি এতদিনেও কেন সংস্কার করা হলো না তা খতিয়ে দেখে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে দীর্ঘসময় পার হলেও ভাস্কর্যটি সংস্কার না হওয়ায় জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, এটি খুব লজ্জা এবং দুঃখজনক ঘটনা। কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান যে বীরের নাম শুনলে এক সময় ব্রিটিশ শাসক পর্যন্ত ভয়ে কাঁপত সেই বীরের ভাস্কর্যটি দুর্বৃত্তদের হামলার ক্ষত নিয়ে এভাবে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকবে এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি অতি দ্রুত ভাস্কর্যটি সংস্কারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের স্মৃতি ধরে রাখতে কুমারখালী উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে কয়া মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২০১৮ সালে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়।
স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় তিস্তাপাড়ের কৃষকেরা
তিস্তা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বাড়ছে দুর্ভোগ। অসময়ের বন্যা কৃষকের সোনালি ফসল কেড়ে নিয়েছে। এ কারণে তিস্তাপাড়ের লাখো কৃষকের চোখে মুখে এখন অজানা আতঙ্কের ছাপ। পরিবার পরিজন নিয়ে বাকি দিনগুলো কীভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
জেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত লালমনিরহাট সদর, আদিতমারি, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে সৃষ্ট এ বন্যায় বেশি ক্ষতির সম্মুখীন কৃষকেরা। কার্তিকে পানিশূন্যে তিস্তার বুকে শীতকালীন শাকসবজি ছাড়াও ভুট্টা, বাদাম, রসুন, পেঁয়াজ, আলু, মসুর ডাল, ধান ও অন্যান্য ফসল বুনেছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ ভারতের উজান থেকে ভাটিতে আসা পানিতে সবকিছু যেন শেষ হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় ফসলের চরম ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় ফসল হারিয়ে দিশেহারা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চর রুদ্রেশ্বর গ্রামের সাইদুর রহমান। কয়েক বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলেন তিনি। একদিনের বন্যায় তার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কীভাবে বছরের বাকিটা সময় তিনি পার করবেন তা নিয়ে পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।
আরও পড়ুন: তিস্তায় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী