বিশেষ-সংবাদ
তিন দশক গান গেয়েই চলছে অন্ধ বাউলের সংসার
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পথে পথে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্ধ বাউল। গান গেয়ে পথচারীদের মন জয় করেই বেঁচে আছে পরিবারের তিন অন্ধ ভাইসহ আট সদস্যের একটি বড় পরিবার।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের পরিমল দাসের ছেলে অন্ধ বাউল শিল্পী শংকর দাস জন্ম সূত্রে অন্ধ। সংসারের ঘানি টানতে টানতে পার হয়ে গেছে জীবনের ৪০ বছর।
জানা গেছে, শংকর দাসের ছোট দুই ভাই দিপংঙ্কর দাস (২০) ও শুভংঙ্কর দাসও (১৪) জন্ম সূত্রে অন্ধ। তিন অন্ধ ভাইয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তাদের বৃদ্ধ বাবা। বাবার উপার্জনে তাদের সংসার চলে না। অন্য কোন কাজ করার সক্ষমতা না থাকায় ১০ বছর বয়স থেকে গান গেয়ে টাকা উপার্জনের পথ বেছে নেন শংকর দাস।
আরও পড়ুন: দু’হাত হারিয়ে জীবন যুদ্ধে লড়ছে ফরিদগঞ্জের জাহাঙ্গীর
এদিকে, ২১ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন। পল্লব দাস (৬) ও পার্থ দাস (৪) নামে তার দুই ছেলে রয়েছে।
জানা গেছে, ৩০ বছর ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে উপজেলার চুকনগর, আঁঠারোমাইল, কাঁঠালতলা ও খর্ণিয়া বাজারসহ কয়েকটি বাজারের রাস্তার উপর বসে গান গেয়ে পথচারীদের মন জয় করার চেষ্টা করেন শংকর। গান শুনে অনেকে খুশি হয়ে তাকে দুই, এক টাকা করে দেয়। তাতে প্রতিদিন প্রায় দুইশ টাকার মতো উপার্জন হয়।
সেই টাকা দিয়ে স্ত্রী, দুই ছেলে, বাবা-মা ও অন্ধ দুই ভাই নিয়ে মোট আট সদেস্যের সংসার কোনভাবে চলে যায়। কিন্ত বর্তমানে তিনি গান গাইতে গাইতে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তারপরও অভাবের এই সংসারে একদিন পথে বসে গান না গাইলে পুরো পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হয়। তাই নিরূপায় প্রায় প্রতিদিনই পথচারীদের মনোরঞ্জনের জন্য গান গেয়ে চলেছেন।
আরও পড়ুন: রমাকান্তরা আবার স্কুলে যেতে চায়
অন্ধ গায়ক শংকর দাস জানান, আজ তিনি বড়ই ক্লান্ত। অসুস্থতাসহ নানা কারণে আর হয়তো বেশিদিন তিনি গান গাইতে পারবেন না। তখন তার পরিবারের কী অবস্থা হবে, কে নেবে তাদের দায়িত্ব। কথাগুলো বলতে বলতেই এক সময় তিনি কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন।
আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায় বলেন, ‘অন্ধ বাউল শিল্পী শংকর দাসের ঘর বাড়িরও বেহাল দশা। তাই আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেষ্টায় কাঁঠালতলা আশ্রয়ন প্রকল্পে তার পরিবার নিয়ে থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তবে তার জন্য আরও কিছু আমাদের করা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল
পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
রাঙ্গামাটিতে জুমের সোনালী পাকা ধানে ছেয়ে গেছে পাহাড়। শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। জুম চাষিদের চোখে মুখে এখন আনন্দ। জুমিয়ারা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জুমের পাকা ধান কেটে বাড়িতে তোলা নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করছেন। নতুন ধানের গন্ধে পাহাড়ি জনপদগুলোতে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ। জুমের ফসল বাড়িতে তোলার পর পর পাহাড়ীদের ঘরে ঘরে শুরু হবে নবান্ন উৎসব।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সনাতনী কৃষিরা পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ করে। জুম চাষের প্রস্তুতিকালে প্রথমে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষের জন্য জমিকে উপযুক্ত করে তোলা হয়। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রস্তুতকৃত পোড়া জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ ইত্যাদি বীজ বপন করে জুমিয়ারা। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই জুমের ধান পাকা শুরু হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ঘরে তোলা হয় জুমের ফসল।
আরও পড়ুন: আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
জুম চাষিরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর জুমের ফসল ভালো হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রম করে তারা এবার ভালো ফসল পেয়েছে এবং জুম ধানের পাশাপশি মিষ্টি কুমড়া, তিল, আদা, হলুদ, ভুট্টা, শিম, মারফা, কাকন, মরিচ, তুলাসহ নানা প্রকার শাক-সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। সময় মতো ফসল ঘরে তুলতে পারলে পুরো বছর অনায়াসে কেটে যাবে এমনটাই আশা চাষিদের। আর খাদ্য সংকটে ভুগতে হবে না তাদের।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারনের উপ-পরিচালক শষ্য আপ্রু মার্মা জানান, চলতি বছর শুধু রাঙ্গামাটি জেলায় জুম চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৩০ টন। আর বর্তমানে যে উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে তা লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রমের ফলে এবং জুম চাষিরা জুমে সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আর পাহাড়ে জুমিয়ারা স্থানীয় জাতের ধানের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল ধান ও সবজির আবাদ করতে চাষিদের পরামর্শসহ যাবতীয় সুবিধা দিচ্ছে রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: রূপসা পাড়ে অফ সিজনাল তরমুজের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
গবাদিপশুর সাথে মানুষের বসবাস
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ভবদহ বিলপাড়ের হাজারো মানুষ রাস্তার উপর ঠাঁই নিয়েছে। এসব মানুষদের রাস্তার উপর টংঘর বানিয়ে গবাদি পশুর সাথে বসবাস করতে হচ্ছে।
এদিকে, টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটের সাথে গো খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক কাজ সারতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে করে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ভুক্তভোগী। এককথায় জলাবদ্ধতায় কারণে ভবদহ বিলপাড়ের ৮০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
আরও পড়ুন: প্রবল বর্ষণে ঝিনাইদহে জলাবদ্ধতা, তলিয়ে গেছে ২০ চাতাল
মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর, বাজেকুলটিয়া, হাটগাছাসহ একাধিক গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই সব এলাকার অধিকাংশ বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত ঘরবাড়ি হারা এসব ভুক্তভোগী মানুষ মনিরামপুর ও নওয়াপাড়া সড়কের হাটগাছা এলাকার সড়কের উপর টংঘর বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সচ্ছ পরিবারগুলো যাতায়াতের জন্য বাড়ির উঠানে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে নিলোও অসচ্ছল পরিবারগুলো রাস্তার উপর টংঘর বানিয়ে গৃহপালিত পশুর সাথে দিন পার করছে। একপাশে থাকছে গরু-ছাগল আরেকপাশে চৌকি বানিয়ে রাতযাপন করছেন তারা। সেখানেই চলছে খাওয়া দাওয়া।
আরও পড়ুন: রানীনগরে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে কয়েক গ্রামের মানুষ
স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণ শেষ পর্যায়ে
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম নির্মিত হল স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল (সুড়ঙ্গ সড়ক)। নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্তমান সরকারের অন্যতম এ মেগা প্রকল্প শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের প্রায় ৭৩ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। করোনাকালেও টানেল নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলেছে। একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি কর্মযজ্ঞ।
টানেলের প্রথম টিউবের ভেতরে গাড়ি চলাচলের জন্য পিচঢালা রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে দ্বিতীয় টিউব তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ এই চ্যানেলের খননকাজ শেষ হয়। পূর্ব ঘোষণা অনু্যায়ী, চ্যানেলটির মুখ খুলে দেয়া হচ্ছে আজ শুক্রবার।আগামী বছরের শেষ নাগাদ বহুল প্রত্যাশার এই টানেলের ভিতর দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু সেতুতে টানেল নির্মাণে সমীক্ষা চলছে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এই টানেল দিয়ে প্রথম বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে। কয়েক বছরের মধ্যে গাড়ি চলাচলের পরিমাণ ১ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছবে। এসব গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ কন্টেইনারবাহী ট্রেইলর, বিভিন্ন ধরণের পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে ১৩ লাখ বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস। ১২ লাখ কার, জিপ ও বিভিন্ন ধরনের ছোট গাড়ি।তিন দশমিক ৪০ কিলোমিটার মূল টানেলের সঙ্গে উভয় প্রান্তে পাচঁ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। নদীর তলদেশে এর গভীরতা হবে ১৮ থেকে ৩১ মিটার। চারলেনের টানেলে দুটি টিউব থাকছে। টানেলের ভেতরে দুটি টিউবে ওয়ানওয়ে গাড়ি চলবে। একটি দিয়ে শহর থেকে আনোয়ারামুখী গাড়ি যাবে, অপরটি দিয়ে আনোয়ারা থেকে শহরমুখী গাড়ি আসবে। একটি টিউব ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট চওড়া এবং উচ্চতায় হবে ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট।জানা যায়, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আনোয়ারা প্রান্ত থেকে টানেলের দ্বিতীয় টিউব নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রথম টিউব থেকে ১২ মিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতীয় ও শেষ টিউবটি। মাটির ১৮ মিটার থেকে ৪৩ মিটার নিচ দিয়ে যাবে টানেল বোরিং মেশিন। এছাড়া টানেলের শক্ত দেয়াল হিসেবে ২০ হাজারের বেশি সেগমেন্ট স্থাপন করা হবে দুটি টিউবে।
আরও পড়ুন: করোনার মধ্যেই কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ‘যুগান্তকারী’ সাফল্যচীনের জিয়াংসু প্রদেশের জিংজিয়ান শহরে টানেলের সেগমেন্টগুলো তৈরি হচ্ছে। চীন থেকে সেগমেন্টসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র আনার স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি সেগমেন্ট স্থাপন করে প্রথম টিউব তৈরি করা হয়েছে।কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সড়ক তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে টানেলের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রান্ত পর্যন্ত একটি টিউবের নির্মাণ আগেই শেষ হয়েছে। আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আরেকটি টিউবের কাজও গতকাল শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের একটি ইতিবাচক দিক হলো, এর মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হয়নি। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হচ্ছে। তবে আগেও শেষ হয়ে যেতে পারে।প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, কাজের গতি বাড়াতে জনবল ও যন্ত্রপাতি বাড়ানো হয়েছে। দ্রুতগতিতে চলছে কাজ। প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হচ্ছে। আগামী বছরের শেষ দিকে যাতে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করে, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রায় ৭৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে দুই সুড়ঙ্গের খননকাজই ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। সুরঙ্গ খনন শেষ হওয়ায় আনুসাঙ্গিক বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে বলে আশাবাদী তারা।এর আগে গত ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, নির্মাণকাজ শেষে আজ শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রাতে বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় চ্যানেলের মুখ খুলে দেওয়া হবে। আগেই টানেলের প্রথম চ্যানেলের মুখ খুলে দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার মধ্যরাতের মধ্যে দুই চ্যানেলেরই নির্মাণকাজই শেষ হবে। এ সময় তিনি আরও জানান, আগামী বছরের ২২ ডিসেম্বর টানেল চালুর কথা ছিল। এখন মনে হচ্ছে এরও আগে এটা চালু করতে পারব।
আরও পড়ুন: টানেলের মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করল বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রীএদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে দ্রুতগতিতে চলছে আনোয়ারা অংশের সংযোগ সড়কের কাজ। সড়ক ও টানেলকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার মানুষ। কর্ণফুলীর শিকলবাহা ওয়াই জংশন (ক্রসিং) থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সড়কটি ৬ লাইনে প্রশস্ত হচ্ছে। বর্তমানে দুই লাইনের ১৮ ফুটের সড়কটি হবে ১৬০ ফুট। সাড়ে ১১ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ২৯৫ কোটি টাকা।মূলত কর্ণফুলীর তলদেশে বাস্তবায়নাধীন টানেলের সংযোগ সড়ক হিসাবে ব্যবহার ও গাড়ির অতিরিক্ত চাপ সামলানোর জন্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রশস্ত এই সড়ক বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর চিত্র।আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউপি চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু টালেন বড় প্রকল্প। এটির কাজ শেষ হলে আনোয়ারার মানুষ উপকৃত হবে। তেমনি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষদেরও।তিনি বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বড় পর্যটনকেন্দ্র পারকি সমুদ্র সৈকত। সৈকতের পর্যটকদের জন্য যদি টালেন সড়ক ব্যবহারের জন্য একটি সংযোগ সড়ক করে দেয়া যায়, তবে ঢাকাগামী পর্যটকদের সৈকতে আসা সহজ হবে।
আরও পড়ুন: আগামী জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হবে: সেতুমন্ত্রী
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে নাকাল ভোক্তারা
আলাউদ্দিন চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের পিয়ন হিসেবে। বিয়ে করেছেন বছর দুয়েক হলো। যা বেতন আসে মাসের খরচ বাঁচিয়ে কিছু জমা রাখতেন। কিন্তু গত বছর বাচ্চা হওয়ায় আলাউদ্দিনের খরচ সামাল দিতে টানাটানি লেগে যায়।
এমনতিই জীবন চালানোর জন্য যা দরকার তাই কিনেন সবচেয়ে সস্তা দামে। তার ওপর হঠাৎ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় কপালে ভাজ পড়েছে তের হাজার টাকার এই বেসরকারি কর্মীর। মাসের খরচ কম করে হলেও দুই হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের মতো মানুষের যে কি নিদারুণ কষ্ট কেউ বোঝে না। বেতন তো আর বছর বছর বাড়ে না। এমন জীবন সত্যি দুঃসহ।
আরও পড়ুন: বেড়েছে চালের দাম, সবজি ও তেলের দামও বাড়তি
তাইতো টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নিতে দাঁড়িয়ে আছি যদি কিছুটা খরচ সাশ্রয় করা যায়। যতো বড় লাইন, মনে হয় না আজ পাবো। গতকাল মালিবাগের এই ট্রাকের সামনেই ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে চলে গিয়েছিলাম।
এমন দৃশ্য শুধু আলাউদ্দিনের না, অনেক সীমিত আয়ের মানুষের যাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছু করার নাই।
দফায় দফায় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় ভিড় সামাল দিতে তাই হিমশিম খাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পরিচালিত ট্রাকসেল কার্যক্রমও।
রাজধানী বিভিন্ন স্পটে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রাকের সামনে ৫০ থেকে ৬০ জন করে ক্রেতার লাইন যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয় এই প্রতিবেদকের কাছে।
আরও পড়ুন: শেরপুরে চালের দাম বাড়ানোর দাবি চালকল মালিকদের
কোনো কোন জায়গায় ট্রাক আসার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখা গেছে শহরের এসব উন্মুক্ত বিক্রয় স্থলে।
বিক্রেতারা জানান, আগে ট্রাক সেলে কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে আসতো নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, গাড়িচালক কিংবা গৃহকর্মী। তবে এখন সেই লাইনে পণ্য কিনতে মধ্যবিত্তরা ভিড় করছেন যা তাদের জন্য বাড়তি চাপও বটে।
টিসিবির ডিলার কামাল যিনি মেরাদিয়া এলাকায় ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইউএনবিকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লো মানুষ বেশি ভিড় করে আমাদের কাছে। আমরা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করি। এখন চিত্র ভিন্ন। সাধারণ বাজার থেকে কম বলে অনেকে ভিড় করছে।
‘আগে আমাদের মালামাল বিক্রি কার্যক্রম শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে যেতো। এখন তো ঘন্টা দুয়েকের ভিতর সব শেষ হয়ে যায়। আমাদের বরাদ্দ কম বলে অনেকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় অনেক কম,’ তিনি বলেন।
টিসিবির ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী হুমায়ুন কবির ইউএনবিকে বলেন, ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে টিসিবি এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করছে যা আগে এটি ছিল মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ। চাহিদা বাড়ায় ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিসিবি ডিলারের ৬ মাসের কারাদণ্ড
হুমায়ুন কবির বলেন, টিসিবির পণ্য সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে প্রতি মাসেই বিক্রি হয়েছে। কোনো মাস বাদ যায়নি। পণ্য বিক্রির পরিমাণও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।
তবে ক্রেতারা টিসিবির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি দাবি করেছেন সরকারের কাছে। যাতে তাদের খরচ কিছুটা হলেও সাশ্রয় হয়।
টিসিবি কর্মকর্তারা জানান, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ‘ট্রাক সেল’ বন্ধ থাকছে। ট্রাক সেলে সাশ্রয়ী মূল্যে তিনটি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা এবং মসুর ডাল ও চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হবে।
এক একটি ট্রাকে ৫০০-৮০০ লিটার তেল, ৪০০-৬০০ কেজি চিনি এবং ৪০০-৬০০ কেজি মসুরের ডাল বরাদ্দ থাকে বলে জানান।
আর খোলা বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, চিনি ৭৮ টাকা এবং দুই প্রকারের মসুরের ডাল ১০০ ও ৮০ টাকা করে।
আরও পড়ুন: আ’লীগ নেতার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য উদ্ধার
সুন্দরবনে পর্যটন: সেবা কার্যক্রম উন্নত করতে অটোমেশনের দিকে নজর
সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবস্থাপনাকে একটি স্মার্ট অ্যাপ দিয়ে অটোমেশন বা সয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আনার লক্ষ্যে সরকার আগামী ডিসেম্বরে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করবে। এতে একটি নির্দিষ্ট অ্যাপস’র মাধ্যমে একজন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণের যাবতীয় কার্যক্রম ঘরে বসেই সম্পন্ন করতে পারবেন। এর ফলে একদিকে পর্যটকদের ভ্রমণের বুকিং সংক্রান্ত কাজে ভোগান্তি ও সময় সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে বনবিভাগেরও পর্যটকদের সেবা কার্যক্রম আরও সহজ হবে। পাশাপাশি একটি সুশৃঙ্খল ভ্রমণ ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত হবে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশন-এর দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবন ভ্রমণ ব্যবস্থাপনার এই অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রস্তাবিত এ্যাপ্লিকেশনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সুন্দরবন’। দেশ বিদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে একজন পর্যটক এই অ্যাপস’র মাধ্যমে সুন্দরবন ভ্রমণের যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
এখানে পর্যটন কেন্দ্র ও নৌযানের তালিকা ও নৌযান মালিকের ঠিকানা ও নাম্বারসহ অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে একদিন বা তিনদিনের ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। কোন পর্যটক যদি একদিনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে চান তাহলে তিনি ওই এ্যাপস-এ ঢুকে একদিনের কেন্দ্রে চাপ দিলে করমজল, হারবাড়িয়া, কলাগাছিয়া ও শেখেরটেক পর্যটন কেন্দ্রের নাম চলে আসবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রের পাশে ওই কেন্দ্রে যেতে কয়টি নৌযান আছে সেগুলোর নাম, ছবি, ভাড়ার তালিকা ও ছাড়ার স্থান এবং নৌযান মালিকের নাম, ঠিকানা ও রাজস্ব ফিসহ বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছে কাশফুলের খোঁজে: গন্তব্য যখন শরতের শ্বেতশুভ্র স্বর্গ
দুর্গাপূজা: বাগরেহাটে ৬৩৩ মণ্ডপে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে
কদিন বাদে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ বছর বাগেরহাটে ৬৩৩টি পূজামণ্ডপে স্থাপন করা দেবদেবীর প্রতিমায় এখন রঙের কাজ চলছে। কাজ শেষ করতে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে প্রতিমায় রং করা হচ্ছে। করোনার কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে খরচ কমাতে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে প্রতিমার সাইজ অনেকটা ছোট করা হয়েছে। বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করা এই কারিগড়দের মন খুব একটা ভালো নেই। করোনার প্রভাবে প্রতিমার কাজ না থাকা আর দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে পূর্বপুরুষের পেশা ছাড়তে চায় তারা।
জানা গেছে, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলা মিলে জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর ৬৩৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গা উৎসবের আয়োজন চলছে। পূজামণ্ডপগুলোতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। এখন পূজামণ্ডপগুলোতে কারিগড়দের নিপুণ হাতের ছোয়া আর রং তুলিতে প্রতিমা সাজানো হচ্ছে। ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বেলগাছের নিচে বোধনের মধ্যে দিয়ে দেবী দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গ থেকে মত্তলোকে আসবেন। মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী পূজার মধ্যে দিয়ে দেবীকে আরাধনা এবং ১৫ অক্টোবর দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দোলায় চড়ে মা দুর্গা ফিরে যাবেন স্বর্গ লোকে।
দুর্গোৎসবকে ঘিরে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা এবং আনন্দঘন পরিবেশে উৎসবের জন্য জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পূজামণ্ডপগুলোতে পুলিশ এবং আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি র্যাবের টহল থাকবে। একই সাথেপূজা মণ্ডপগুলোর পক্ষ থেকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্বপালন করবে।
পড়ুন: দুর্গাপূজার মহোৎসবে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী ১০ পদের মিষ্টি
দু’হাত হারিয়ে জীবন যুদ্ধে লড়ছে ফরিদগঞ্জের জাহাঙ্গীর
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪নং দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ চর রামপুর গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর গাজী। বয়স ৪৩ বছর। দু’ হাত হারিয়ে এখনও জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জাহাঙ্গীরের স্বপ্ন ছিল সন্দুর জীবন গড়ার কিন্তু এক দুর্ঘটনা তার সব কিছু এলোমেলো করে দিলো।
আরও পড়ুন: রমাকান্তরা আবার স্কুলে যেতে চায়
তার সম্পর্কে জানাতে কথা হয় জাহাঙ্গীরের সাথে। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি একজন রড মিস্ত্রী ছিলাম। আমার দু’হাত ছিল, শরীরও ভালো ছিল। স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাবো, সুন্দর জীবন গড়বো। সংসার করবো। সেজন্য প্রচুর পরিশ্রম করতাম। শক্ত হাতে ঝটপট কাজও করতাম, নতুন কাজও শিখতাম, যাতে বিদেশ গিয়ে কোন অদক্ষতা চোখে না পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালের নভেম্বরের দিকে ঢাকার খিলগাঁওয়ে এক নির্মাণাধীন ভবনে একদিন কাজ করতে গিয়ে রড হঠাৎ বিদ্যুতের হেভী লাইনে লেগে গিয়ে শক খেয়ে ছিঁটকে পড়ি, মারাত্মক আহত হই। বাঁচার সম্ভাবনা ছিলই না। দু‘হাত, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে এক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে বেঁচে থাকার তাগিদে আমার দু‘হাতের কনুইয়ের উপর পর্যন্ত সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে বাধ্য হই। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দুখে দুখে বেঁচে আছি।’
আরও পড়ুন: কোটিপতি ছেলের বাসায় আশ্রয় হলো না মায়ের
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার দু‘হাত হারানোর পর বাড়ি ফিরে এলাম শুন্য হাতে। বাবা মারা গেছেন সেই ১৯৯২ সালে আর এক বছর আগে মাও মারা গেলেন। আমি বাবা-মা’র সবচেয়ে ছোট ছেলে। ঘৃনা করি ভিক্ষাকে। তাই লোন করে বাড়ির পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ছোট্ট দোকান দিলাম। এভাবেই কাজ শুরু করলাম, বাঁচতে তো হবে। ২০০০ সালে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করলাম। আমার তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে টানাটানির সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর অসহায় হয়ে গেলাম। দু’হাতের অভাবে না পারি কিছু ধরতে, না পারি কিছু করতে। আমি যে সম্পূর্ণ অচল, অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না।’
‘মহান আল্লাহপাকের ইচ্ছায় ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের এক বিধবা মেয়ে আমার অবস্থা দেখে আমাকে বিয়ে করতে সম্মত হওয়ায় আবার সন্তানদের নিয়ে নতুন সংসার জীবন শুরু হলো। আর্থিক অনটনে হলেও আমার সংসার জীবন মোটামুটি কেটে যাচ্ছে। করোনকালে কোন সাহায্য পাই নাই। চকলেট, কলম, খাতার দোকান দিয়ে ছেলেকে সাথে নিয়ে যা বেচা-বিক্রি হয়, তা দিয়েই অতি কষ্টে সংসার চলছে। আমার দোকানে মালামাল তেমন একটা নাই। টাকার অভাবে মালামালও কিনতে পারি না, দোকানও আর একটু বড় করতে পারি না। টাকার অভাবে ছেলে মেয়েদের ভালোভাবে পড়ালেখাও করাতে পারছি না। বড় মেয়ে তানিয়া আক্তার (১৬) এসএসসি দিবে। ছেলে তানভির সবার ছোট। হাত না থাকার কারণে আমাকে দোকানে সাহায্য করে।’
আরও পড়ুন:বান্দরবানের সুরের জাদুকর মং নু মং
তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোন সুযোগ সুবিধা পাই না। চার সন্তান আর আমরা দু‘জন মিলে ছয় সদস্যের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে বিধায় আমি প্রধান মন্ত্রী ও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সুদৃষ্টি ও সহানুভূতি কামনা করছি।’
এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন রিপন জানান, ‘জাহাঙ্গীর গাজী ভূমিহীন, তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। অতি কষ্টে ছেলে মেয়েকে পড়ালেখা খরচ চালাচ্ছেন।’
শৌলমারীতে কাঁটাতারের বেড়ায় বন্দী জীবন
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী শৌলমারী ও কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঝুকিঁ নিয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করছেন। শুধু শিক্ষকরাই নন, ক্ষুদে শিক্ষার্থীসহ শৌলমারী চরের মানুষজনও পড়েছেন চরম বিপাকে।
স্থানীয়রা বলছেন, এনিয়ে তারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। এই বিষয়ে চরবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জানা গেছে, তিস্তা নদীতে শৌলমারী চরে গড়ে উঠে কালিকাপুর ও শৌলমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যায়লের শিক্ষকরা উপজেলা শহর থেকে যার চরে। কিন্তু বিদ্যালয়ের এক মাত্র যাওয়ার রাস্তাটি কাঁটাতারে বন্ধ করে দিয়েছে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড। ফলে তারা কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে নুয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
এই রাস্তা দিয়েই মূলত চরবাসীর যোগাযোগ উপজেলার মূল ভূখন্ডের সাথে। সরকারিভাবে প্রতিবছরই রাস্তাটি মেরামত করা হয় বলেও জানান স্থানীয়রা। সেই রাস্তাটিও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নামে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’ এর সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাঁটাতারে ঘিরে দখলে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শৌলমারী সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইতি মনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তা দিয়েই স্কুলে যাওয়া আসা করছি। এখন সেই রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় বাধ্য হয়েই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে বেশ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। একজন নারী শিক্ষক হয়ে ওই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যাতায়ত কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো মুশকিল। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।
ওই স্কুলের আর এক সহকারি শিক্ষক সানিউর রহমান সানি জানান, ‘ওই রাস্তাটি দিয়ে শুধু আমরা না স্কুলের শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরাও যাতায়াত করেন। বর্তমানে সেটি কাঁটাতারে ঘেরা থাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি পথ ঘুরতে হয়। সে কারণে বাধ্য হয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করছি।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে বাংলাদেশি ২ যুবককে বিএসএফ’র মারধর
চারবাসীদের ভাষ্য মতে, বন্ধ থাকা ওই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মণ ফসল বিভিন্ন হাটে বাজারে যেত। আবার এলাকাবাসী চিকিৎসা, কেনাকাটার জন্যও ওই রাস্তা ব্যবহার করতো। কিন্তু সেই রাস্তা কাঁটাতারে ঘিরে রাখায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
বাগেরহাটে দেড় বছরে ৩১৭৮ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে
বাগেরহাটে গত দেড় বছরে তিন সহস্রাধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বাল্যবিয়ের শিকার এসব কিশোরী মেয়েরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তারা পড়ালেখা বন্ধ করে এখন স্বামীর সংসার করছে। এদিকে, বাল্যবিবাহ রোধ করতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন হওয়া জরুরি বলে জেলা প্রশাসক মনে করছে।
শিক্ষা বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলায় করোনাকালীন সময়ে তিন হাজার ১৭৮ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সময়ে প্রায় ৪০০ বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের সময় অনেক মা ও শিশু মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে।
করোনাকালে বাল্যবিয়ের শিকার নীলাঞ্জনা (ছদ্মনাম) বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। গত বছর নভেম্বর মাসে তার বিয়ে হয়। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা এবং লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে মা-বাবা সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে সে ওই বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা পেশায় একজন হকার।
বিয়ের তিন মাসের মধ্যে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়া নবম শ্রেণির ছাত্রী নীলাঞ্জনা জানায়, বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরিবারে অভাব অনটন মা-বাবাকে ভাবিয়ে তোলে। পরিবারের সিদ্ধান্তে সে বিয়েতে রাজি হয়। বিয়ের পর সে স্বামীর সংসারে চলে যায়। কিছুদিন পর স্বামী তার উপর নির্যাতন চালাতে থাকে। নির্যাতন সইতে না পেরে সে বাবার বাড়ি চলে আসে। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে সে তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছে। এখন সে আবারও পড়ালেখা করতে চায়। পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় নীলাঞ্জনা।
পড়ুন: বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সাংসদদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: স্পিকার