বিশেষ-সংবাদ
নয়নাভিরাম ‘মুজিব শতবর্ষ পার্ক’: নতুন রূপে আলফাডাঙ্গা
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের মাত্র ৫ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে মুজিব শতবর্ষ পার্ক। যার প্রতিটি ইঞ্চিই সাজানো হয়েছে সবুজ প্রকৃতি আর নির্মল বিনোদনের নানা উপকরণে। এক সময়ের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ পাল্টে সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নির্মল বিনোদনের নানা উপকরণের মিশেলে গড়ে উঠেছে নজরকাড়া উদ্যান।
জেলা সদর থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে মধুমতি নদীর তীরে, খুলনা বিভাগের অধীন বৃহত্তর যশোরের নড়াইল জেলার সীমানালগ্ন আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরে গড়ে তোলা হয়েছে এই মনোমুগ্ধকর বিনোদন কেন্দ্র।
বিনোদন কেন্দ্রটির নাম দেয়া হয়েছে ‘মুজিব শতবর্ষ পার্ক’। কোভিড -১৯ এ মহামারির সময়ে জনসাধারণের জন্য উন্মোক্ত না হলেও গত শুক্রবার উদ্বোধন করেন ফরিদপুর-১ আসনের এমপি মনজুর হোসেন বুলবুল।
এসময় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জাহিদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদ এলাহী, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম জানান, এই পুরো বিষয়টি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জাহিদের।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৩২ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখানে এসেছেন আর গেছেন। বেশির ভাগই ভারপ্রাপ্ত। কেউ ছয় মাসের বেশি থাকতে চান না। বিষয়টি নিয়ে ভাবার পরে দেখলাম আসলে এখানকার পরিবেশ পছন্দ না হওয়ায় তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখানে থাকতে চাইত না। সেজন্য পরিবেশের উন্নয়নে এই চেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘এটি বাস্তবায়নে সরকারের নিকট বড় বরাদ্দ চাইতে গেলে পাশ হবে কিনা অনিশ্চয়তা ছিল, তাই একটু একটু করে কাজ এগিয়ে নিয়েছি। এভাবে দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে সকলের আন্তরিকতায় এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।’
উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাহাত ইসলাম বলেন, পার্কটি বাস্তবায়নে অন্যান্য উপজেলার মডেল দেখে সুবিধা-মাফিক পরিকল্পনা নিয়েছি।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারি: মাটি কাটার কাজ করছেন শিক্ষকরা!
বাংলাদেশে করোনা: বেশি ঝুঁকিতে বয়স্করা
করোনা মহামারি: মাটি কাটার কাজ করছেন শিক্ষকরা!
নন-এমপিভুক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করেন নুরুল ইসলাম। দীর্ঘ নয় বছর ধরে বিনা বেতনে ওই এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এতে চরম বিপাকে পড়েন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আত্মমর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে নুরুল ইসলামের মতো আরও চার শিক্ষক কাজ নেন সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে। কিন্তু সেখানে তারা প্রতারিত হয়েছেন। পাননি ন্যায্য মজুরিও। যাও পেয়েছেন তাতে উপজেলা চেয়ারম্যান থাবা বসিয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে নুরুল ইসলাম জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় এমপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন: মহামারি-পরবর্তী বিশ্ব: বন্ধ হবে কি শ্রম অধিকার লঙ্ঘন?
ঘটনাটি ঘটেছে জেলার উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নে।
অভিযোগে জানা গেছে, গত ৯ বছর আগে দুর্গম চরাঞ্চল ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ১০ জন শিক্ষক নিয়ে ‘দৈ খাওয়ার চর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়’ গড়ে তোলেন। তখন থেকে এসব শিক্ষকরা বিনা বেতনে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান করে আসছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন জাতি গড়ার এসব কারিগররা। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলে, নুরুল ইসলামসহ তার বিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষক সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ নেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই ধাপে ৮০ দিন কাজ করেন তারা। দুইশ টাকা মজুরি হারে তাদের ১৬০০০ টাকা পাওয়ার কথা। গত ৩০ জুলাই ওই ইউনিয়নে শ্রমিকদের মজুরির টাকা বিতরণ করা হয়।
নুরুল ইসলামের অভিযোগ, ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মজুরির টাকা নিয়ে বের হতেই বারান্দায় বসে থাকা আলী হোসেন, ইউসুফ আলী ও আয়নাল হক মৃধা ওই তিন ব্যক্তি উপকারভোগীদের কাছ থেকে জোর করে চার হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেয়। শিক্ষকরা চার হাজার করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, ইউসুফ আলী গংরা নানান হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। সেই সাথে তারা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর নির্দেশে টাকা তুলতেছি। টাকা না দিলে এর পরিণাম ভালো হবে না বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি। নিরুপায় হয়ে তিনিসহ তাঁর স্কুলের শিক্ষক মনসুর আলী, শাহীন আলম, শহিদুল আলম ও, শহিদুল ইসলাম তাদের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিতে বাধ্য হন। পরে তাদের প্রদেয়ও ২০ হাজার টাকার ১০ হাজার ফেরত চেয়ে হাতে পায়ে ধরলেও মন গলেনি ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের। বরং তারা উল্টো তাদের হুমকি দেন।
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি মোবাইল নাম্বার থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিচয় দিয়ে অশ্লীল গালাগালিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে, জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মহামারির বছরে আকাশ থেকে খসে পড়া তারারা
স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, একজন শিক্ষক কতটুকু অসহায় হলে শ্রমিকের কাজ করেন। আর তাদের ন্যায্য মজুরি জোর করে হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ঘৃণিত। শুধু এসব শিক্ষকদের নয়, সেখানে বেশিরভাগ উপকারভোগীর কাছ থেকে একইভাবে চার হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাই। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করব।
বাংলাদেশে করোনা: বেশি ঝুঁকিতে বয়স্করা
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭.৫ শতাংশ ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি, ফলে কোমরবিডিটি এবং দুর্বল ইমিউনের কারণে করোনা আক্রান্ত বয়স্কদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে।
তারা বলছেন, সরকার ৭ আগস্ট থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে। দেশে ক্রমবর্ধমান কোভিডে মৃত্যুর হার কমাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বয়স্ক নাগরিকদের টিকা দেয়ার কৌশল নেয়া উচিত।
বিশ্লেষকরা বলেন, বয়স্ক ব্যক্তিদের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে টিকা নিশ্চিত করার জন্য কমিউনিটি এনগেজমেন্ট এবং ভ্রাম্যমাণ ভ্যাকসিনেশন টিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বয়স্করা টিকা সম্পর্কে কম সচেতন। এছাড়া তাদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ এবং টিকা কেন্দ্রে যেতে অক্ষম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রবিবার বলেছেন, ৭ থেকে ১৪ আগস্ট এই সাত দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের মানুষকে অন্তত ১ কোটি টিকা দেয়া হবে।
কম সংক্রমণ, উচ্চ মৃত্যুহার
ইউএনবির সাথে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু এই গ্রুপে মৃত্যুর হার অনেক বেশি কারণ তাদের অনেকে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।
তিনি বলেন, বয়স্ক নাগরিকদের বেশিরভাগই তরুণদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের ৮০ শতাংশ ভাইরাস সংক্রমণে মারা যাচ্ছে। আমাদের তথ্য অনুসারে, দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ কোভিডের মৃত্যু ৬০ বা তার বেশি বয়সের লোকদের মধ্যে রয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম নূর উন নবী বলেন, ‘৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রবীণরা দেশের মোট জনসংখ্যার ৭. ৫ শতাংশ (১২.৫ মিলিয়ন)। বয়স্ক ব্যক্তিরা সাধারণত যে কোনো রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল রোগে ভোগে। তাই, সারা বিশ্বে বয়স্ক কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর হার খুব বেশি।’
আরও পড়ুন: সিনোফার্মেরর সাথে যৌথ টিকা উৎপাদনে সমঝোতা স্মারক প্রস্তুত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
টিকাদানে অগ্রাধিকার
ডা. রোবেদ বলেন, আসন্ন গণটিকা কর্মসূচিতে সরকার বয়স্ক নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা বয়স্কদের জন্য আলাদা সারি থাকবে।
রোবেদ বলেন, ‘বয়স্ক নাগরিকরা শুধুমাত্র এনআইডি কার্ড দেখিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবে। যাদের এনআইডি কার্ড নেই তারা অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ডকুমেন্ট যেমন পাসপোর্ট, জন্মসনদ বা জনপ্রতিনিধিদের অন্যান্য সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভ্যাকসিন নিতে পারবে।’
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয় যাতে বয়স্করা সহজেই কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই টিকা গ্রহণ করতে পারে। যদি আমরা সফলভাবে বয়স্ক নাগরিকদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারি, তাহলে কোভিডের মৃত্যুর হার পরবর্তীতে হ্রাস পাবে।’
বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেল সাড়ে ১৬ হাজার চিংড়িঘের
বাগেরহাটে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে হাজার হাজার চিংড়িঘের আর শত শত পুকুর ডুবে গেছে। ভেসে গেছে চাষিদের স্বপ্নের চিংড়ি, কাঁকড়া আর বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ। কোটি কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছে চিংড়ি চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছরই নানাভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে এই জেলার চিংড়িঘেরগুলো। অতিবৃষ্টি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অতিরিক্ত খরা আর ভাইরাসে চিংড়িঘের উজাড় হচ্ছে। এতে করে পুঁজি হারিয়ে অনেক চিংড়ি চাষি এখন সর্বশান্ত হওয়ার পথে। এ অবস্থায় এই অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা হতাশায় ভুগছেন। তাই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চাইলেন চিংড়ি চাষিরা।
আরও পড়ুন: বরিশালে ৩ কোটি টাকার চিংড়ি রেনু জব্দ, ৪ জনকে জরিমানা
বাগেরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, সম্প্রতি অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলার ৯ উপজেলার আট উপজেলায় ৯ হাজার চিংড়িঘের, সাত হাজার ৫০০ পুকুর ও ২৭০ কাঁকড়াঘের ডুবে গেছে। ৪৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এসব মৎস্যঘের ও পুকুর ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি টাকা। তবে চিংড়ি চাষিদের দাবি তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
জানা গেছে, প্রায় প্রতিবছরই একের পর এক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে চিংড়ি শিল্প। চিংড়ি পোনা সংকট, ঘেরে ভাইরাস, দরপতন আর পানিতে চিংড়ি ভেসে যাওয়ার ঘটনা এখন প্রতিবছরই ঘটছে। এছাড়া প্রায় প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগতো লেগেই আছে। সর্বশেষ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ভারি বৃষ্টিপাত ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটে ৯ হাজার চিংড়িঘের ডুবে গেছে। এর আগে ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছাসে বাগেরহাট সাড়ে ছয় হাজার মৎস্যঘের ডুবে যায়।
বাগেরহাটের চাষিদের তথ্য মতে, ইয়াসে প্রভাবে তাদের ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
ফরিদপুর মেডিকেলের আইসিইউতে জনবল সংকট, চিকিৎসা সেবা ব্যাহত
ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালের ১৬ শয্যার অত্যাধুনিক ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) প্রথম শ্রেণির সব পদই শূন্য রয়েছে। ২০১৬ সালে স্থাপিত এই আইসিইউতে এখন পর্যন্ত কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।
বর্তমানে ওই হাসপাতালের একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন রোস্টারের মাধ্যমে করোনা রোগীদের জন্য কোনমতে ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট জনবল না থাকায় এখানে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু জীবনের বিনিময়ে এর খেসারত দিতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই আইসিইউতে একজন সহকারী অধ্যাপক, দুজন জুনিয়র কনসালটেন্ট, দুজন সহকারী রেজিস্ট্রার ও দুজন মেডিকেল অফিসার নিয়মানুযায়ী থাকার কথা। তবে প্রথম শ্রেণির এই সাতটি পদই এযাবত পর্যন্ত শূন্য রয়েছে। নির্ধারিত জনবল না থাকায় বর্তমানে বিএসএমএমসি হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অনন্ত কুমার বিশ্বাস অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হিসেবে এই আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
ফরিদপুর সনাক সভাপতি ও নাগরিক মঞ্চের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, বিএসএমএমসি হাসপাতালের এই আইসিইউ বিভাগটি অত্যাধুনিক মানের। এখানে সেন্টাল অক্সিজেন সাপ্লাই, ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো, নজেল ক্যানোলাসহ অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কাঙ্খিত উৎপাদনের আশায় ফরিদপুরের‘সোনালী আঁশ’ চাষিরা
তিনি বলেন, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্য কোন হাসপাতালে এই অত্যাধুনিক সুবিধা না থাকায় পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও গুরুতর রোগীদের এখানে প্রেরণ করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের একমাত্র এই সম্বল আইসিইউতে রোগী সেবা পাওয়ায় বহু মানুষের জীবন রক্ষা পায়।
তিনি জরুরি ভিত্তিতে এই প্রতিষ্ঠানের আইসিইউ বিভাগে প্রয়োজনীয় জনবল দেয়ার দাবি জানান।
স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন ইবির কেন্দ্রীয় মসজিদ
স্থাপত্যশৈলীর অনেক নিদর্শনের মধ্যে মসজিদ অন্যতম। এরকমই এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিদ্যালয়ের (ইবি) নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় মসজিদ। বৃহৎ জায়গা জুড়ে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যাবে যে কারোরই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশমিক ২৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে নির্মিত হচ্ছে এ মসজিদটি। চারতলা বিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদটি সিরামিক ও শ্বেতপাথরে নির্মিত। সূর্যের আলোয় দিনের বেলায় মসজিদটির গা থেকে যেন উজ্জ্বল আভা ছড়ায়। সুউচ্চ গম্বুজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এর মহিমা জানান দিয়ে যাচ্ছে।
মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের আয়তন ৫১ হাজার বর্গফুট। চারতলার মূল মসজিদে মোট সাত হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। এছাড়া মসজিদের সামনের পেডমেন্টে নামাজ পড়তে পারবে আরও ১০ হাজার মুসল্লি। মসজিদের সামনের অংশের উপরে রয়েছে ৯০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বৃহৎ গম্বুজ। নিচতলা থেকেও ভেতর দিয়ে গম্বুজটির একদম উপরের অংশ দেখা যায়। বিশাল এ গম্বুজটি মসজিদের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া মসজিদের বাউন্ডারির চারপাশে চারটি মিনার স্থাপিত হবে। যার প্রতিটির উচ্চতা হবে ১৫০ ফুট।
পড়ুন: মডেল মসজিদ মানুষকে ইসলামের মাহাত্ম্যে উৎসাহিত করবে: প্রধানমন্ত্রী
মসজিদের তিন পাশ দিয়ে থাকবে প্রবেশ পথ। প্রতিটি প্রবেশপথে থাকবে একটি করে গম্বুজ। মসজিদ ভিত্তিক ক্যাম্পাস গড়ার জন্য প্রতিটি অনুষদীয় ভবন থেকে মসজিদে আসার জন্য রয়েছে প্রশস্ত পথ। মসজিদের নিচতলায় একটি লাইব্রেরি ও গবেষণা সেন্টারের প্রস্তাবনা রয়েছে। যেখানে দেশ ও বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্লভ বইগুলো স্থান পাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধর্মীয়সহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন এখানে।
নিমার্ণকাজ শেষ হলে মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন ১৭ হাজার মুসল্লি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, অনন্য স্থাপত্যকর্ম মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। সরকারি অর্থায়নে কাজ শুরু হলেও পরে সহায়তা আসে বিদেশ থেকেও। তবে মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করায় ও সঠিকভাবে কাজে না লাগানোয় অর্থ ফেরতও নেয় বিদেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে দীর্ঘ ২৬ বছরে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর ২০০৪ সালে ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হলে তৎকালীন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসাইন শাহজাহান উদ্বোধনের মাধ্যমে নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেন মসজিদটি। এরপর দীর্ঘ ১৩ বছর নির্মাণ কাজ থেমে থাকে। ফলে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি হারাতে বসে তার শৈল্পিক সৌন্দর্য। পরে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী সময় দুই দফায় নির্মাণ কাজ সম্প্রসারণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।
প্রকৌশল অফিস জানায়, মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে এখনো ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে বরাদ্দ না থাকায় নির্মাণ কাজ চলছে না। অর্থ পেলে এক বছরের মধ্যে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। নকশা অনুযায়ী নির্মাণ শেষ হলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা মসজিদগুলোর একটি হবে এই মসজিদ। সেই সাথে পরিণত হবে ধর্মীয় দর্শনীয় স্থানে।
পড়ুন: মডেল মসজিদ: মুজিববর্ষের অনন্য এক উপহার
করোনায় ইবির আরেক অধ্যাপকের মৃত্যু
এদিকে, অনন্য সাধারণ স্থাপত্য মডেলের কেন্দ্রীয় মসজিদটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার দাবি সকলের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল বলেন, এই মসজিদটি সম্পূর্ণ নির্মিত হলে দেশের অন্যতম ধর্মীয় দর্শনীয় স্থাপনায় পরিণত হবে। মসজিদটির নির্মাণকাজ ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে, সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হতে আরও ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। টাকার ব্যবস্থা হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।
প্রয়োজনীয় টাকা প্রাপ্তির জন্য গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
নড়াইল পৌরসভায় যত্রতত্র গতিরোধক, বাড়ছে দুর্ঘটনা
জানা যায়, পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মহিষখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যুব উন্নয়ন সড়কে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ৬ টি গতিরোধক! যার ভেতর কয়েকটি প্রয়োজনীয় হলেও অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। এছাড়াও ২ নং ওয়ার্ডের বরাশুলা এতিমখানা রোডে মাত্র ১৫০ মিটার সড়কের ভেতর স্থাপন করা হয়েছে ৪ টি গতিরোধক। যার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে হলেও বাকি দু’টি গায়ের জোরে স্থাপন করেছেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি।
পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের আলাদাতপুর এলাকার পাসপোর্ট অফিস সড়কে ১০০ মিটারেরও কম জায়গার ভেতর পরপর তিনটি গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে নেই কোনো গতিরোধক চিহ্ন। ফলে দূর থেকে টের না পেয়ে গাড়ি চালানোর সময় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: নড়াইলের জেলা আ’লীগ কমিটিতে সদস্য মাশরাফি, উপদেষ্টা বাবা
সেখানকার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘রাস্তায় আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করবে। তাই আমরা ঠিকাদারকে বলে গতিরোধক দিয়েছি।’ এছাড়াও পৌরসভার পানি মসজিদ থেকে পাসপোর্ট অফিস সড়কেও তিনটি গতিরোধক রয়েছে। যার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হলেও বাকি দু’টি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়।
আরও দেখা গেছে, নড়াইল পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ডুমুরতলায় নবনির্মিত জাহাতাব উদ্দিন বেগ সড়কে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি গতিরোধক। যার একটি মসজিদের সামনে হলেও বাকি দু’টি প্রভাবশালীদের বাড়ির সামনে স্থাপন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব গতিরোধকের অধিকাংশই যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেখানে নেই কোনও গুরুত্বপূর্ণ মোড় বা স্থাপনা। রাস্তা নির্মাণের সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গায়ের জোরে ঠিকাদারদের চাপ দিয়ে নিজেদের বাড়ি বা দোকানপাটের সামনে স্থাপন করেছেন এসব অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক।তাছাড়া এসব গতিরোধকের গায়ে নেই কোনো চিহ্ন। ফলে রাতের বেলায় পথচারীরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়। যত্রতত্র এসব গতিরোধক স্থাপনের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও।
আরও পড়ুন: মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে নড়াইলে পালিত পিতা কারাগারে
এ বিষয়ে নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা ইউএনবিকে বলেন, ‘নতুন নির্মাণ করা সড়কগুলোর অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। এটা স্থানীয় কিছু লোকেরা করেছে। যেহেতু এটা করা হয়ে গেছে তাই এখন তো আর ভেঙে দিতে পারছিনা। সেক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুম শেষ হলে গতিরোধকগুলোর ওপর আমরা রঙ করে দিবো।’
নড়াইলের একজন সচেতন ব্যক্তি বলেন, ‘সাধারণ জনগণের চলাচলের রাস্তায় দু'চারজন প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজ স্বার্থে যেখানে সেখানে গতিরোধক স্থাপন করতে পারেন না। গাড়ির গতি সীমিতকরণে গতিরোধকের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। তবে, প্রয়োজনহীন গতিরোধক স্থাপন কাম্য নয়। পৌর মেয়রের উচিত অবিলম্বে এসব অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক উচ্ছেদ করা এবং গতিরোধক দেয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।’
২০২২ সালেই চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল
বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত প্রথম মেট্রোরেলের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক।
এমএএন সিদ্দিক ইউএনবিকে জানান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়টি কোচ বিশিষ্ট চারটি ট্রেন ইতোমধ্যে জাপান থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেছে এবং আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও পাঁচ সেট ট্রেন আসার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মেট্রোরেলের ৬৩.২ শতাংশ কাজ শেষ: কাদের
প্রকল্প সূত্রমতে, মোটি ১৪৪ টি কোচ নিয়ে ২৪ টি ট্রেন রাজধানীর আগারগাঁও, ফার্মগেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং মতিঝিল হয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রুটে চলাচল করবে। এই রুটে মোট ১৭ টি স্টেশন থাকার কথা রয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলেন ‘দেশের চলমান করোনা পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রকল্পের কাজ এখন দ্রুত গতিতে চলছে। মেট্রোরেলের সামগ্রিক কাজের উন্নতি বর্তমানে ৬৮ শতাংশ। প্রাথমিক নির্মাণ পরিকল্পনা অনুসারে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের তৃতীয় পর্যায়ের ৮৭.৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
আরও পড়ুনঃ মেট্রোরেলের প্রথম মেট্রোট্রেন এসে পৌঁছেছে
২৩ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রথম ট্রেন সেট আসার পর উত্তরার ডিএমটিসিএল ডিপোতে এ পর্যন্ত ১৯ ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ট্রেন সেট জুনে ঢাকায় পৌঁছানোর পর একই ধরনের পরীক্ষা করা হয়।
এমএন সিদ্দিক বলেছেন, ‘মেট্রোরেলের জন্য আরও পাঁচটি ট্রেন সেট আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছাবে। ২০২২ সালের মধ্যে সমস্ত ট্রেনসহ ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোরেল চালু করা হবে।’
আরও পড়ুনঃ মেট্রোরেলের কর্মীদের জন্য ২টি ফিল্ড হাসপাতালের উদ্বোধন
তিনি বলেন দু’টি ট্রেন সেট ইতোমধ্যে মংলা বন্দরে রয়েছে আরও দুই সেট আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় আসবে। বাংলাদেশে এখন চারটি ট্রেন সেট রয়েছে।
বিশ্বনাথে অসমাপ্ত সংস্কার কাজে ‘জনদুর্ভোগ’
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় নির্ধারিত সময় পার হলেও ১৩ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ এখনো অর্ধেক বাকি। যে পরিমাণ সংস্কার হয়েছে তার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে অর্ধেক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দ নিয়ে। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর যাতায়াতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বনাথ জিসি থেকে জগন্নাথপুর সীমানা পর্যন্ত ১৩.০৯ কিলোমিটার সড়ক ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংস্কার কাজ শুরুর অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। ২৩ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৭১.০৯৭ টাকা বরাদ্দের এ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাওন এন্টারপ্রাইজ। ১৩.০৯ কিলোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন অংশে আরসিসি ঢালাই ধরা হয় প্রায় ১৮ মিটার।
আরও পড়ুন: ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’র অর্থায়নে ৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার
করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে অনুমতির ৬ মাস পর কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিছু দিন কাজ করার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আরও ৩-৪ মাস কাজ বন্ধ রাখে ওরা। এ অবস্থায় তার টেন্ডার বাতিল হবার উপক্রম হলে, তার অন্য সহযোগীকে কাজ বুঝিয়ে দেন তিনি। ফের শুরু হয় কাজ। সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেন তারা। ফের করোনার প্রকোপ, কঠোর লকডাউন আর বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে কাজ। এর মধ্যেই চলে যায় কাজের নির্ধারিত সময়। বর্তমানে দেড়-দুই মাস ধরে একরকম বন্ধই আছে কাজ। এ অবস্থায় বাকি অংশ সংস্কার নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, মূল কাজের আরসিসি অংশের মধ্যে বাকি আছে ৭-৮ মিটার প্রায়। ইতোমধ্যে সাব ভেইজ ৯ কিলোমিটার, ডাবু বিএম ৮ কিলোমিটার ও কার্পেটিং ৫ কিলোমিটারের মতো সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আর বাকি প্রায় অর্ধেক কাজই অসমাপ্ত রয়েছে। করোনার কারণে লকডাউন ও ঈদ মিলিয়ে শ্রমিক ছুটিতে রয়েছে। অল্প ক’জন আছে সাইটে। ছোট-খাটো ত্রুটি ধরা পড়লে ঠিক করছে তারা।
স্থানীয়রা বলেন, সময় মতো কাজ শুরু হলে এ ভোগান্তি পোহাতে হতো না আমাদের। অর্ধেক অবশিষ্ট থাকায় বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে অবস্থা হয়েছে আরও নাজুক। ছোট-বড় ডোবা আর কাঁদা-মাটিতে একাকার পথ। কাজ শেষ হওয়া অংশেও রয়েছে ত্রুটি।
আরও পড়ুন: ঢাকার খালগুলো দখলমুক্ত করে সংস্কার করবে দুই সিটি করপোরেশন
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ জানান, ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। করোনা, বৃষ্টি সব মিলিয়ে কিছুটা পিছিয়েছে নিয়িমিত সংস্কার কর্মকাণ্ড।
লকডাউন শিথিল হলে শ্রমিক বাড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব কাজটি সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানান।
কাঙ্খিত উৎপাদনের আশায় ফরিদপুরের‘সোনালী আঁশ’ চাষিরা
পাটের জেলা ফরিদপুর, তাইতো সরকারিভাবে এই জেলার স্লোগান ‘সোনালী আঁশে ভরপুর, ভালবাসি ফরিদপুর’। চলতি মৌসুমে জেলার অধিকাংশ কৃষক-কৃষাণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
ফরিদপুর জেলা জুড়ে এখন চলছে ‘সোনালী আঁশ খ্যাত’ পাট ঘরে তোলা প্রক্রিয়ার কাজ। কেউ ক্ষেত থেকে কাটছে, কেউ আবার আটি বেধে জাগ দেয়ার জন্য ছুটছে নদ-নদী কিংবা জলাশয়ের ধারে। কেউ আবার পানি থেকে তুলে পাটের আঁশ বাছাই করে ধুয়ে রোদে শুকানোর কাজে সময় পার করছে। আর যারা আগেভাগেই এই প্রক্রিয়া শেষ করেছে তারা বাজারের নিয়ে বিক্রয় করার কাজে ব্যস্ত।
আরও পড়ুনঃ পাটের বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে: পাট মন্ত্রী
ফরিদপুর জেলার নয় উপজেলায় চলছে এমন চিত্র। প্রতি বছর পাট চাষের মৌসুমে জেলার আবাদি জমির অধিকাংশতেই পাটের চাষ করে চাষিরা। এই জেলায় পাট চাষের উপযোগী মাটির স্বাস্থ্য, অনুকূল আবহাওয়ায় কারণে গুণগত ও মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন হয়। যা সারা পৃথিবী জুড়ে সমাদৃত। চলতি মৌসুমে জেলার দেড় লক্ষাধিক চাষি তাদের জমিতে পাটের চাষ করেছে।
ফরিদপুর পাট গবেষণা অফিস সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরে দুই জাতের (তোসা জিআরও ৫২৪-ভারতীয় এবং মাস্তে ও-৯৮৯৭ দেশী জাত) পাট আবাদ হয়। এর মধ্যে ভারতীয় জাতের পাটের বীজ ৯০ শতাংশ চাষ হয়ে থাকে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ২০১০-১১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে চাষিরা, এর বিপরীতে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়।
আরও পড়ুনঃ দেশের পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারত পাকিস্তানে
চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল)। গত দশ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে নয় হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।
ফরিদপুর পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট (পিএসও) ড. রনজিৎ কুমার ঘোষ জানান, ফরিদপুরে আষাঢ়-শ্রাবন মাসে জমি থেকে পাট কর্তন করা হয়। এই মৌসুমে খরা ও বৃষ্টি প্রবণ হওয়ায় এই অঞ্চলে পাটের আবাদ ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, জেলায় দেড় লক্ষাধিক চাষি পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, এছাড়াও প্রতিবছরই নতুন নতুন চাষি যুক্ত হয় পাটের সঙ্গে।
আরও পড়ুনঃ পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে: পাটমন্ত্রী
জেলার সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পাট চাষি হাবিব মোল্লা ও আকমল খান জানান, যদি পাটের দাম প্রতিমণ ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার থাকে তাহলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
বোয়ালমারীর বিভিন্ন মাঠের পাটচাষী দাবি করেন, বিগত বছরগুলোর অধিকাংশ সময়ই পাটের ন্যায্যমূল্য পায়নি, তবে গত দুই বছর যাবত তুলনামূলকভাবে ভালো দর পাচ্ছেন।
একই উপজেলার ঘোষপুরের পাট চাষি মজিবুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় দুই হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ক্ষেতে পাটের ফলনও বেশ হয়েছে। আশা করছি উৎপাদন ভালো হবে।’
জেলার পাট চাষের অন্যতম নগরকান্দার পাট চাষি আবজাল হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ বেশি করেছি। আশা করছি ভালো দামও পাব। তবে বপনের সময় প্রচণ্ড রোদের কারণে কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। এখন ভালো বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতের পাট ভালো হয়েছে।’
আরও পড়ুনঃ পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার সচেষ্ট: পাট মন্ত্রী
ফরিদপুর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, আবহাওয়াগতভাবে ফরিদপুর অঞ্চল পাট আবাদের জন্যে উপযোগী, এ জেলার মাটির স্বাস্থ্য পাট চাষে শ্রেষ্ঠ, যে কারণে এর আঁশ গুনগত মানসম্পন্ন।
তিনি বলেন, এবারের বপন মৌসুমে প্রচণ্ড খড়া থাকায় চাষিদের দুই থেকে তিন বার সেচ দিতে হয়েছে, এতে চাষিদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।
হযরত আলী বলেন, জেলার চাষিরা এই মৌসুমে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল পাট উৎপাদন করবে আশা করছি।