বিশেষ-সংবাদ
রাসায়নিক দিয়ে পাঁকানো হচ্ছে আম, আতঙ্কে ক্রেতারা
খুলনাঞ্চলের বাজারে আমের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় কেনাবেচা কম। তবে রাসায়নিক প্রয়োগের আতঙ্কে অনেকেই আম কিনতে শঙ্কিত। আম খেতে মন চাইলেও বর্তমানে সচেতন মহল আম রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে পাঁকানো হচ্ছে, সেই আতঙ্কে আম কিনতে নারাজ।
জ্যৈষ্ঠ মাস পড়ে গেছে। সাধারণ এ সময় আম পাঁকে। তবে গাছ পাঁকা আম বাজারে পাওয়া দুস্কর। বর্তমান বাজারে যে আম পাওয়া যাচ্ছে তা হলো সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার আম। ফল ব্যবসায়ী আমের চালান কেনে। তারপর গাছ হতে আম পেরে মাটিতে নেড়ে ওষুধ স্প্রে করে। এরপর এই কাঁচা আম, কাঁচা অবস্থায় ঝাঁপিতে সাজানোর পর বাজারে আসতে আসতে মাত্র ৬ ঘণ্টায় সম্পূর্ণ পক্ক বা পেঁকে লাল হয়ে যায়। আর ব্যবসায়ীরা দোকানে সাজালে গাছ পাঁকা আমের মতোই রং হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু ১৫ মে থেকে
আম কিনতে আসা ক্রেতা অনুপ কুমার ঘোষ জানান, বাজারে প্রচুর আম উঠেছে। কিন্তু কিনতে ভয় লাগছে। বোঝার উপর নেই কোনটা ফরমালিন দিয়ে পাঁকানো আর কোনটা ফরমালিন ছাড়া আম। যদিও আম কিনি তবে বাড়িতে গিয়ে আগে আধা ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। সে অনুযায়ী সকল প্রকার গুটি আম ১৫ মে, গোপালভোগ ২০ মে, লক্ষনভোগ/লক্ষনা ও রানীপছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর/ক্ষিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আমরুপালি ১৫ জুন, ফজলী ১৫ জুন, আশ্বিনা ১০ জুলাই, বারী আম-(৪) ১০ জুলাই সংগ্রহ করার কথা।
কৃষি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বাজারে সে সকল আম পাওয়া যাচ্ছে তা এখনো সংগ্রহের সময়ের আগেই বাজারে এসেছে। আম চাষি বা ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথি প্লাস, ইথোফেন, ইথোলিন রাসায়নিক পদার্থ স্প্রেসহ ধোয়া ব্যবহার করে আম পাঁকিয়ে বাজার জাত করছে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ।
আরও পড়ুন: আড়তের ৭০ টাকার আম খুচরায় ২০০ টাকা!
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ দৌলতপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুন অর রশিদ বলেন, বারি কর্তৃক আম সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ নির্ধারিত সময়ের আগে বাজারে আসা আমে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আম পাঁকানো হয়। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ।
তিনি বলেন, পাঁকা আমে যথেষ্ট পরিমানে ক্যারেটিন বা ভিটামিন এ এবং খনিজ পদার্থ থাকে। যে কারণে আমের স্থান পৃথিবীর যে কোন ফলের উপরে। তবে বর্তমানে আম পাঁকার আগে চাষিরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আমে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করছে। যে কারণে সচেতন মহল আম কিনতে আতঙ্কবোধ করছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
খুলনাঞ্চলের গ্যাসের বাজার বেসরকারি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে
বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৯০৬ টাকা। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেসরকারি গ্যাস কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে। খুলনার বাজারে প্রতিটি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ থেকে ৯৮০ টাকা পর্যন্ত।
যশোরের চৌগাছায় অরক্ষিত ইন্ডিয়াপাড়া, ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়ানোর আশঙ্কা
যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার দৌলতপুর গ্রামের মাঝেই রয়েছে ইন্ডিয়াপাড়া। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে তিন পাশে বাংলাদেশ আর এক পাশে ভারত সীমান্ত।
দৌলতপুর গ্রামের সাথে ইন্ডিয়াপাড়ার মানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে এই এলাকা দিয়ে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে, সামাজিক সম্পর্কের কারণে সীমারেখা চলাফেরা, লেনদেন ও সামাজিক বন্ধনে বাঁধ সাধতে পারছে না। বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে অবাধ চলাফেরা। ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দারা বাগদা বাজারসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকাতে যাতায়াত করে। কিন্তু দেশে করোনার ভারতীয় নতুন ভেরিয়েন্ট দেখা দেয়ায় দৌলতপুর গ্রামবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তাই এলাকবাসী ইন্ডিয়াপাড়ার চারপাশে বিজিবি টহল জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সীমান্তবর্তী সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম দৌলতপুর। গ্রামটি ভারত ঘেষা। দৌলতপুর গ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব পাশ দিয়ে ভারত থেকে একটি সড়ক প্রবেশ করেছে গ্রামটির মধ্যে। এ গ্রামের একটি অংশে ভারতীয় নাগরিকরা বসবাস করেন। যা ইন্ডিয়া পাড়া বলে পরিচিত। এখানে ৮০-৮৫টি পরিবার রয়েছে। জনসংখ্যা দেড় শতাধিক। ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দারা ভারতের নাগরিক হলেও অবাধে বাংলাদেশ অংশে যাতায়াত করেন।
আরও পড়ুন: দৌলতপুর সীমান্তে আটকের ৪ ঘণ্টা পর কৃষককে ফেরত দিল বিএসএফ
সরেজমিনে সীমান্তবর্তী দৌলতপুর গ্রামে গিয়ে অবাধ যাতায়াতের প্রমাণও পাওয়া গেছে। সীমান্তবর্তী ৪৩নং পিলার সংলগ্নে বাংলাদেশ অংশের সড়কে বাইসাইকেল চালাতে দেখা যায় ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ইন্ডিয়াপাড়ার বাসিন্দা ও ভারতের নাগরিক আবুল কাশেমকে। তিনি মুখে মাস্ক পরিধান না করেই ঘোরাফেরা করছেন।
এ সময় আবুল কাশেম বলেন, কয়েক যুগ ধরে ইন্ডিয়া পাড়াতে বসবাস করছি। কেনাকাটা করতে যাই নিজ দেশের (ভারত) বাগদা বাজারে। কিন্তু করোনার কারণে আমরা বাগদা বাজারে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।তবে জমি জায়গা সব ভারতের মধ্যে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক আত্মীয় স্বজন আছে। ছোট বেলা থেকেই এভাবেই চলাচল করছি।
আরও পড়ুন: রৌমারী সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
দৌলতপুর গ্রামবাসী তরিকুল ইসলাম ও শরিফা খাতুন জানান, তারা বাগদা বাজারসহ সীমান্ত ঘেষা গ্রামেগুলোতে করোনার বিস্তার লাভ করেছে বলে খবর পেয়েছেন। ফলে ইন্ডিয়াপাড়াতেও করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় আছেন। কারণ বাগদা বাজার এলাকার আশপাশের গ্রামে তাদের আত্মীয় স্বজন রয়েছে।
দৌলতপুর গ্রামের পাশের গ্রাম আন্দুলিয়ার বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, দৌলতপুর ও ইন্ডিয়াপাড়ার পাশে আমাদের জমি আছে। প্রতিদিনই আসতে হয় কাজে।
এ করোনাকালীন সময় ইন্ডিয়াপাড়ার পাশে বিজিবি টহল আরও জোরদার করার দাবি জানান আব্দুল করিম সহ আরও অনেকেই।
আরও পড়ুন: বিএসএফ’র গুলিতে আহত ভারতীয় কিশোরকে হস্তান্তর
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও দৌলতপুর গ্রামবাসী তোতা মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের মধ্যেই ভারতের একটি ছোট গ্রাম রয়েছে। করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট নিয়ে আমরা চিন্তিত। ইন্ডিয়াপাড়া বসবাসকারীদের নিজ পাড়া হতে বাইরে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সাথে দৌলতপুর গ্রামবাসীকেও তাদেরকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
৪৯ বিজিবি আন্দুলিয়া ক্যাম্পের সুবেদার শাহীনুর রহমান বলেন, করোনার নতুন ভেরিয়েন্টের বিষয়ে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। ইতিমধ্যে দৌলতপুর গ্রাম এলাকাতে আমরা টহল জোরদার করেছি।
টবে চাষ হচ্ছে মরুভূমির ত্বীন ফল
বাংলাদেশে ছাদ বাগানের টবে চাষ হচ্ছে মরুভূমির ত্বীন ফল। সারা বছর ধরে ব্যাপক ফলন হওয়ায় দেশ জুড়ে ফল চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে ত্বীনের প্রতি। বাংলাদেশে মূলত একে সবাই ডুমুর নামেই চেনে।
সহজলভ্য ও দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ার কারণে বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ পরিসরে চাষ হচ্ছে ত্বীন ফলের। তাছাড়া পবিত্র কোরআন শরীফে ত্বীন ফলের উল্লেখ থাকায় অনেকেই এই ফল চাষে উৎসাহী হয়ে এগিয়ে আসছেন।
কেমন দেখতে এই ত্বীন ফল
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, ভারত, তুরস্ক ও জর্ডানে আঞ্জির হিসেবে পরিচিত এই ফলের গাছটি ৬ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল ধরে পাতার গোড়ায় গোড়ায় একটি করে। কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০টি ফল ধরে একটি গাছে। ফল আসার সময় সবুজ রঙের হয়ে থাকে বারো মাসী এই ফল গাছটি। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে জাত ভেদে লালচে, বাদামি, খয়েরি, হলুদ, গোলাপি রং ধারণ করে। আকারে সাধারণত এগুলো দেশীয় ডুমুরের থেকে বড় হয়। আর পাঁকলে বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়ে যায়। ওজনে সাধারণত ৭০ থেকে ১১০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। স্বাদে খুব মিষ্টি ও রসালো হয় একটি পরিপক্ক ত্বীন ফল। আঁটি ও বিচিহীন দৃষ্টিনন্দন এই ফল আবরণসহ খাওয়া যায়।
টবে ত্বীন চাষ পদ্ধতি
কোনও রকম রাসায়নিক সার ছাড়াই, শুধুমাত্র মাটিতে জৈব ও কম্পোস্ট সার মিশিয়ে ছাদে টবে লাগিয়ে এই ফল উৎপাদন করা সম্ভব। কান্ড খুব নরম হওয়ায় কাটিং করে বংশবিস্তার এবং বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে, দুই ভাবেই চাষ করা যায়।
একটি ত্বীনের কাটিং বা কলম চারা রোপণ করার ৪ থেকে ৫ মাস পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে। তাই লাগানোর ২ থেকে ৩ মাস পর থেকেই টবের গাছে নিয়মিত অল্প পরিমাণে সরিষার খৈল পঁচা পানি দিতে হয়। ১২ মাস পর টবের আংশিক মাটি বদলাতে হয়। ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকড়সহ মাটি ফেলে নতুন সার মেশানো মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে। শীতের আগে ও বর্ষার শেষে টবের মাটি বদলে দেয়াটা ভালো। ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর টব বা ড্রামের মাটি কিছুটা নেড়ে চেড়ে দিতে হয়।
বর্ষা ও শীতকালে মাঝে-মধ্যে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তখন ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই অনুমোদিত মাত্রার বেশী নয়। দোআঁশ মাটি এ গাছের জন্য খুব ভালো, কারণ এ গাছে আছে জৈব উপাদান যেগুলো পানি নিষ্কাশনে বেশ উপযোগী। এ গাছকে এমন জায়গায় রাখা উচিত যেখানে দিনে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা রোদ পড়ে।
আরও পড়ুন: সুস্থ থাকতে কলা নয়, খোসা খান
বাংলাদেশে ত্বীন চাষের সম্ভাবনা
ইতোমধ্যে যারা টবে ত্বীন চাষের সাফল্য পেয়েছেন তাদের মধ্যে সাতক্ষীরার সৌখিন ছাদবাগানী আসিফুর রহমান, গাজীপুরের মডার্ন এগ্রো ফার্ম এন্ড নিউট্রিশন-এর প্রতিষ্ঠাতা আজম তালুকদার, রাজশাহীর দম্পতি শিহাব উদ্দিন ও শামীম আরা, খুলনার কৃষক নিউটন মন্ডল উল্লেখযোগ্য। পূর্বে ড্রাই ফুড হিসেবে আমদানী করা হলেও এখন এগ্রো ট্যুরিজম ও অর্গানিক বাগানে ত্বীন গাছ সুদূরপ্রসারী সমৃদ্ধি লাভ করছে।
প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭ থেকে ১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি এভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে একটি ত্বীন গাছ। এ গাছ বাঁচে প্রায় ১০০ বছর। তিন মাসের মধ্যেই এ গাছ থেকে শতভাগ ফলন আসে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন তরমুজ বীজের উপকারিতা
পুষ্টিগত উপকারিতা বিবেচনায় ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে ত্বীন ফল খুবই কার্যকরী। এছাড়া উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, চোখের দৃষ্টিশক্তি বর্ধন, কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়ে, মানসিক ক্লান্তি দূরীকরণে এ গাছ সহায়তা করে।
পরিশেষ
সুতরাং ত্বীন ফল চাষের ফলে দেশের বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। কেননা, কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষি নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সাথে বিদেশে ত্বীন রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।
খাল পুনঃখনন: নতুন করে স্বপ্ন দেখছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫ হাজার কৃষক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেচ সুবিধা নিশ্চিতে মৃতপ্রায় ৪১ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছে কৃষকরা। এতে সেচ সুবিধা বাড়ায় ফসল উৎপাদনও বেড়েছে। পাশাপাশি সহজতর হয়েছে নৌ পথে যোগযোগ ব্যবস্থা।
ভরাট হয়ে যাওয়া এসব খাল খননের ফলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশাবাদী কৃষকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খাল পুনঃখননের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় অন্তত ১৮ হাজার মেট্রিক টন বেশি ফসল উৎপাদন হবে। যার বাজার দর ৪৫ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে খাল পুনঃখননে অনিয়মের অভিযোগ, আদালতে মামলা
জানা গেছে, পলি মাটি পড়ে কোনও খাল আংশিক আবার কোনও খাল পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে। এমনই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন খালের। আর এসব খাল পুনঃখননে গত বছর জানুয়ারি মাসে বিএডিসি কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে খাল খনন কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে জেলা সদর ছাড়াও বিজয়নগর, আখাউড়াসহ ছয় উপজেলায় সোয়া চার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪১ কিলোমিটার খনন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে আধুনিক সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব খালের খনন কাজ শেষ হয়।
জেলার সদর উপজেলা মজলিসপুর, কান্দুলিয়া ও পেদাখালী খালসহ বিভিন্ন খালের খনন কাজ শেষ হওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে স্থানীয়রা। এতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ায় বেড়েছে ফসলের উৎপাদন। সেই সাথে নৌ পথে যাতায়াত সহজতর হওয়াসহ অবকাঠামোগত সুবিধা পাচ্ছে এলাকাবাসী। বাড়ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাছের প্রজনন ও উৎপাদন। এসব খালের ন্যায় ভরাট হয়ে যাওয়া অন্যান্য খাল খননের দাবি স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: খরা মোকাবেলায় নাটোরে সরকারি জলাশয় পুনঃখনন
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী রুবায়েত ফয়সাল আল মাসুম জানান, খালগুলো পুনঃখননের ফলে ৫ হাজার কৃষক পরিবার উপকৃত হবার পাশাপাশি প্রায় ৪৫ কোটি টাকার বাড়তি ফসল উৎপাদিত হবে।
খুলনায় ঈদের প্রধান জামাত টাউন মসজিদে সকাল ৮টায়
খুলনায় ঈদ-উল-ফিতরের প্রধান ও প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় টাউন জামে মসজিদে।
এবারে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে উন্মুক্ত স্থানে বা মাঠে কোন ঈদের জামাত হবে না। খুলনায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঈদের দিন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও ভবনে সকালে যথাযথভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সূর্যাস্তের পূর্বে নামানো হবে।
আরও পড়ুন: করোনা উপেক্ষা করে খুলনায় জমজমাট ঈদ কেনাকাটা
জামাতে ইমামতি করবেন টাউন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় এবং তৃতীয় ও শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া কোর্ট জামে মসজিদে সকাল সাড়ে আটটায় একটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন মসজিদে সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে পৃথকভাবে নিজেদের সময় অনুযায়ী মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জেলার সকল মসজিদে ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় কর্মজীবী নারীদের ঘরে নেই ঈদ আনন্দ!
ঈদের নামাজ আদায়ের সময়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কাতারে দাঁড়াতে হবে। মসজিদের অযুর স্থানে সাবান ও স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
মুসুল্লিদের বাসা থেকে ওযু করে এবং মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো যাবে না। মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং মুসুল্লিগণ বাসা থেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
মসজিদের টুপি এবং জায়নামাজ ব্যবহার করা যাবে না। শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যে কোন অসুস্থ ব্যক্তি, অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পেতে নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করা হবে।
ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, খুলনা বিশেষ অনুষ্ঠানমালা এবং স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।
ঈদে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মহানগর ও মহানগরের বাইরের বিভিন্ন স্পটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঈদ-উল-ফিতরের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, রাস্তা বন্ধ করে স্টল তৈরি, উচ্চস্বরে মাইক, ড্রাম বাজানো, রঙিন পানি ছিটানো এবং বেপরোয়াভাবে মটর সাইকেল চালানো যাবে না।
ঈদ উপলক্ষে রাস্তায় যত্রতত্র গেট নির্মাণ, প্যানা বা ব্যানার টাঙালে রাস্তা সংকুচিত হয়ে দুর্ঘটনার আশংকা থাকে এবং শহরের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়। এজন্য গেট নির্মাণ, প্যানা বা ব্যানার টাঙানো যাবে না।
আরও পড়ুন: খুলনাঞ্চলে যেসব কারণে বোরোর আশানুরূপ ফলন হয়নি
ঈদ উপলক্ষে যানবাহানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও যাত্রী হয়রানি করা যাবে না। বাস টার্মিনালের শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলে সহায়তা করতে হবে। সরকার নির্ধারিত প্রতিটি যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিটের অর্ধেক যাত্রীর বেশি উঠানো যাবে না। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
যাকাতের একটি অংশের অর্থ সোনালী ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার চলতি হিসাব নম্বর-৩৩০০০৮৩৫, ইসলামী ব্যাংক খুলনা শাখার চলতি হিসাব নম্বর-২১৫ এবং জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার চলতি হিসাব নম্বর-৩৩০০৭৫৭ অথবা বয়রা খুলনার ইসলামিক ফাউন্ডেশরনর উপপরিচালক-এর নিকট সরাসরি প্রদান করা যাবে। উপজেলা সমূহেও স্থানীয়ভাবে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।
খুলনায় কর্মজীবী নারীদের ঘরে নেই ঈদ আনন্দ!
খুলনার কর্মজীবী নারীদের ঘরে নেই ঈদ আনন্দ। অনেকে হারিয়েছেন কাজ। কারো-কারো সংসার চলছে ঋণে। এমন পরিস্থিতিতে মহিলাদের ক্ষেত্রে সংসার চালানো হয়ে গেছে কষ্টকর। পাচ্ছেন না সরকারি ও বেসরকারি অনুদান। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দ নেই তাদের ঘরে।
নগরীর টুটপাড়া আমতলা মোড়ের ভাড়া বাসার বাসিন্দা দর্জি মালেকা বেগম জানান, তার স্বামী খোকন হাওলাদার ১৩ বছর আগেই দুই সন্তান ও স্ত্রীকে ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর থেকেই সংগ্রামী জীবন শুরু হয় মালেকা বেগমের। দুই ছেলেকে বড় করতে মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু লকডাউনে তার কাজ চলে যায়। একটি লেডিস টেইলার্সে দর্জির কাজ করে কোনও রকম সংসার চলে মালেকার। লকডাউন ও রমজানে কাজের চাপও কম। বড় ছেলে ইয়ামির হাওলাদার রাজমিস্ত্রীর সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও এখন কাজ তেমন নেই। ছোট ছেলে আজমাইন হাওলাদার নগরীর একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কাজ করতো, কিন্তু লকডাউনে তারও চাকরি চলে গেছে। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ জীবন চলছে মালেকার পরিবারের।
আরও পড়ুন: খুলনার বেসরকারি ১৭ পাটকল বন্ধ হওয়ার উপক্রম
স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি বা সরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়নি পরিবারটি। ঘর ভাড়া ও খাওয়ার খরচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনে ঈদ। কি করবে তা নিয়ে প্রতিটা সময় দুঃশ্চিন্তা মালেকার চোখে।
মালেকা জানান, বাড়ির কাজ থাকলে ভাত তরকারি পেতাম। যা দিয়ে দুই ছেলেকে খাওয়াতাম। কিন্তু কাজ না থাকায় খুবই সমস্যায় আছি। দর্জির কাজ করেও কিছু করতে পারছি না। দুই ছেলেরও কাজ নেই। গরীবের লকডাউনের কারণে কত সমস্যা হচ্ছে তার খবর কেউ রাখে না।
নগরীর রেল কলোনীর চা বিক্রেতা আকলিমা বেগম জানান, তার স্বামী সবুজ হাওলাদের সাথে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর নিজেই সংসারের হাল ধরেন। প্রথমে বাড়িতে রান্না করে বিভিন্ন দোকান ও অফিসে খাবার সরবরাহ করতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেই কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। এদিকে তিন ছেলে মেয়েকেই লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। বড় ছেলে আকাশ হাওলাদার ১০ম শ্রেণিতে, মেয়ে সুরাইয়া আক্তার ৯ম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে হাসান ৪র্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। সংসার ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে খুলনা কোর্টের সামনে অস্থায়ীভাবে একটি চায়ের দোকান দেন আকলিমা। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেখানেও মন্দা। এরপর আবার রমজান। সব মিলিয়ে কেনা-বেচা নেই বললেই চলে। সন্ধ্যার পরপরই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। যার ফলে যা বিকিকিনি হয় তা দিয়ে কিছু হয় না।
আরও পড়ুন: করোনা উপেক্ষা করে খুলনায় জমজমাট ঈদ কেনাকাটা
আকলিমা বলেন, ‘লকডাউনের কারণে পেশা বদল করলাম। কিন্তু তাতে কাজ হলো না। রমজান ও লকডাউন একত্রে আসায় সব শেষ হয়ে গেছে। মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এখন চলা লাগছে। ঈদে আল্লাহ যেভাবে কাটাবেন সেভাবে কাটবে।’
তিনি আরও বলেন, সবাই শুধু আশ্বাসই দেয়। কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত কোনও সহযোগিতা করেনি।
নগরীতে ফেরী করে পানি বিক্রি করেন জহুরা খাতুন।
তিনি জানান, দোকানপাট বন্ধ লকডাউনে। যার ফলে কাজ নেই অধিকাংশ মানুষের। দোকানে দোকানে পানি বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চলতো আমার। এক কলস পানি দিলে ৫ টাকা পেতাম। সারা দিন শহরে কাজ করেই রাতে চলে যাই জেলখানা ঘাটের ওপারের তেরখাদা উপজেলায়। মূলত ডিসি অফিস, আদালত পাড়া ও স্টেডিয়াম এলাকার চায়ের দোকান ও হোটেলে পানি বিক্রি করেই চলত আমার সংসার। লকডাউনে কাজ নেই। চায়ের দোকান দু’একটা খুললেও রমজানে পানির চাহিদা কম। যার ফলে সংসার চলছে কোন রকমে।
স্বামী আজিজ গাজী দিন মজুরের কাজ করে। কিন্তু তারও এখন কাজ নেই। সব মিলিয়ে খুবই বিপদের মধ্যে আছি। সংসারে চার ছেলে মেয়ে। বড় ছেলে ওবায়দুল হাফেজি পড়ালেখা করে, মেয়ে আছিয়া খাতুন এবার এইচএসসি পাস করেছে। হাসান ও ফাইজান নামে দুই ছেলে ঘরে। ছয় জনের সংসার ও লেখাপড়ার খরচ এখনও উঠে না। যার কারণে সংসার কি করে চলছে একমাত্র আল্লাহই ভাল জানে। গরীবের দিনই যাচ্ছে কোন রকম আর ঈদ দিয়ে কোন প্রস্তুতিই নেই।
আরও পড়ুন: খুলনাঞ্চলে যেসব কারণে বোরোর আশানুরূপ ফলন হয়নি
তিনি বলেন, সরকারি সহযোগিতাও পাচ্ছি না। আমাদের বাড়ি তেরখাদায়। কিন্তু কাজ করি সারাদিন শহরে। যার ফলে কারও কাছে সহযোগিতা চাইলে বলে যেখানে থাকেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা দিবেন। এইভাবে করে কোনও সহযোগিতা এখনও পর্যন্ত পাননি তিনি।
ঠোঙা বিক্রি করে চলছে মা-ছেলের লড়াই
এইচএসসি পাসের পর ২০০৮ সালে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আইডিয়াল কলেজ রোডের নাদিরা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল বেসরকারি এক কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে। বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় স্বামীর সাথে টুক-টাক ঝগড়া হলেও তাদের ঘরে জন্ম হয় ফুটফুটে ছেলে সানাউলের। ছেলের বয়স যখন এক বছর তখনই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপরেই শুরু হয় সন্তানকে নিয়ে তার জীবন-যুদ্ধের লড়াই।
ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা করেননি তিনি। ছেলে সানাউল ইসলাম ও বৃদ্ধা মা নিলুফা বেগমকে নিয়ে তিনজনের সংসার। বিবাহ বিচ্ছেদের পরেই তিনি উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য ডিগ্রিতে ভর্তি হন। কাগজের ঠোঙ্গা বানিয়ে বিক্রি করে নিজের লেখাপড়ার চালিয়ে গেছেন। পাশাপাশি শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। তাই আবারও লেখাপড়া ছেড়ে দেন। এরপরে শিশু সন্তান হাটতে শিখলে ফের খুলনার আমদা নাসিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন তিনি । চার বছরের নার্সিং সম্পন্ন করে এক বছরের ইন্টার্নিও সমাপ্ত করেন নাদিরা।
নার্সিং সম্পন্ন হলেও চাকরি মেলেনি তার। ফলে পরিবারের হাল ধরতে জীবিকার জন্য ঠোঙ্গা বানিয়ে তা দোকানে বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে চলছে এ তিনজনের জীবনযুদ্ধ।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর আর্তমানবতামূলক কার্যক্রমে অ্যাম্বুলেন্স দিল বারভিডা
নাদিরা বলেন, আমি এক বছর ইন্টার্ন করেছি খুলনা সদর হাসপাতাল থেকে। আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখনো যদি চাকরি পাই তাহলে ঠোঙা বানানোর কাজ ছেড়ে দিব।
তিনি বলেন, ‘ছেলের যখন এক বছর বয়স তখন থেকেই লড়াই শুরু। এখন ছেলের বয়স দশ বছর। সে মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমরা মা ও ছেলে ভালো আছি।’
নাদিরা বলেন, ‘আত্মবিশ্বাসই আমাকে এখানে নিতে পেরেছে। বাবা নেই তবু বাবার বাড়ির আশ্রয়টা এখনো আছে। এখন আর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের ভয় তাড়া করে না।’
নাদিরার মা নিলুফা বেগম বলেন, আমি পেটে ধারণ করেছি সন্তানকে, সবাই ফেলে দিতে পারে । আমি তো ফেলে দিতে পারি না। শুধু মাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নাদিরাকে ওর স্বামীর কাছ থেকে নিয়ে আসছি।
নাদিরার প্রতিবেশী মাইমুনা আক্তার মিতু বলেন, শুধু মাত্র তার আত্মবিশ্বাসের কারণে আজও জীবন যুদ্ধে লড়াইটা চালিয়ে আসতে পারছে।
দাকোপে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে নদী-খাল খননের দাবি
খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলা ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ভৌগলিক দিক থেকে তিনটি ব-দ্বীপে বিভক্ত এই এলাকার চাষিদের ভাগ্য উন্নয়নে নদী-খাল খনন সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
প্রচণ্ড খরায় নদী খালে পানি শুকিয়ে যাওয়াসহ নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে প্রতি মৌসুমে ফসল উৎপাদন করতে হয় এই এলাকার কৃষকদের।
জানা যায়, সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেরিতে লাগানো ৩০ শতাংশ তরমুজ চাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া এলাকায় জলাধার না থাকায় অনেক কৃষক তাদের চাষ করা জমিতে ঠিক মতো পানি দিতে পারেনি।
এদিকে, এলাকার বড় বড় খালগুলো বিশেষ করে বাজুয়া ইউনিয়নের কোচারখাল, চুনকুড়ি উত্তরপাড়ার দোয়ানীয়া ও তলতলা খাল, চড়া নদী, বানিশান্তা ইউনিয়নের আমতলার খাল, ভোজনখালি খাল, লাউডোব ইউনিয়নের কালিকাবাটি খাল, কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের কালীর খাল, দাকোপ ইউনিয়নের দাকুপী খাল সহ অসংখ্য নদী খাল ভরাট হয়ে গেছে।
কৃষকেরা জানান, শুকিয়ে যাওয়া খালের ওপর দিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে। অবিলম্বে খাল খনন না করলে আগামীতে চাষিরা ফসল ফলাতে পারবে না। তাই অবিলম্বে খাল খনন, পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থা, বাজুয়া এলাকায় তরমুজ প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপন, তিন পোল্ডারে তিনটি হিমাগার নির্মাণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ, ভর্তুকি মূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, তরমুজ মওসুমে এক মাসের জন্য পোদ্দারগঞ্জ ও পানখলি ঘাটে দুটি অতিরিক্ত ফেরির ব্যবস্থা করা, পোদ্দারগঞ্জ, পানখালি এবং বরনপাড়া ঘাট প্রশস্ত করা সহ ব্রীজ নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: খরা মোকাবেলায় নাটোরে সরকারি জলাশয় পুনঃখনন
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান খান বলেন,‘ ইতোমধ্যে খাল খননের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি।’
এ ব্যাপারে দাকোপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান বলেন, তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন মৎস্য দপ্তর ও কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নে এলজিইডি অফিসের মাধ্যমে কাজ চলমান রয়েছে। শুকিয়ে যাওয়া নদী-খাল পুনঃখনন করা হবে।
খুলনার বেসরকারি ১৭ পাটকল বন্ধ হওয়ার উপক্রম
যশোর-খুলনার নয়টি সরকারি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ থাকায় কাঁচামালের সরবরাহ বাড়ার কথা থাকলেও ফল হয়েছে উল্টো। কাঁচাপাট সংকটের কারণে খুলনার বেসরকারি ১৭ পাটকলের উৎপাদনের চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কাঙ্খিত উৎপাদন না হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ভারতের বাজার হারাতে বসেছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: বৈরি আবহাওয়া: দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন হয়নি কাঙ্ক্ষিত পাট
পরপর তিন বছর কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় ফরিদপুর, শরীয়তপুর, যশোর ও সাতক্ষীরার চাষিরা পাট উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে । গেলো মৌসুমে বন্যা ও আম্পানের কারণে পাট উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাজারে কাঁচাপাটের সংকট দেখা দেয়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোকাম দৌলতপুরে প্রতি মণ পাট দুই হাজার ৪০০ টাকার পরিবর্তে পাঁচ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচাপাটের মূল্য বেশি থাকায় উৎপাদন সংকটে পড়েছে ফকিরহাটের জয় জুট, মুনস্টার, এএমএম জুট, রূপসার সালাম, ওহাব, ডুমুরিয়ার শাহ চন্দ্রপুরী, বটিয়াঘাটার হাবিব জুট, দিঘলিয়ার সাগর জুট, জুট টেক্সটাইল, ফুলতলার আইয়ান জুট, সুপার জুট, মিশু জুট, এফআর জুট ও যশোর জুট প্রডাক্টস। ফকিরহাটের এএমএস জুট ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়েছে।
আরও পড়ুন: মৌসুম শেষ হলেও প্রণোদনা পায়নি ফরিদপুরে পাট চাষিরা
পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সুপার জুট মিল পাট কিনতে পারছে না। উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। তাদের উৎপাদন খরচ হচ্ছে না। বেসরকারি পাটকলগুলোর টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হচ্ছে।
পাট অধিদপ্তর খুলনার মুখ্য পরিদর্শক সরজিৎ সরকারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেসরকারি পাটকলগুলো পাট কিনছে কম। এমনিতেই তাদের হাতে পুঁজির সংকট। কাঁচাপাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাটকলে পাটের সংকট দেখা দিয়েছে। ৩৬ বছরে এমন সংকট কখনো হয়নি। ২০১৯ সালে কাঁচাপাটের মূল্য ছিল মন প্রতি দুই হাজার ৪০০ টাকা।সেখানে এ মৌসুমের মূল্য মণ প্রতি পাঁচ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে রূপসাস্থ সালাম জুট মিলের ম্যানেজার বশির আহমেদ জানান, প্রতিদিন এ প্রতিষ্ঠানে ১৬ মেট্টিক টন কাঁচাপাটের প্রয়োজন ছিল। সোমবার ও মঙ্গলবার কোনও সরবরাহ নেই। উৎপাদন কমে গেছে। এক সপ্তাহ আগেই শ্রমিকদের ঈদের ছুটি দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: তীব্র তাপদাহে যশোরে শুকিয়ে যাচ্ছে পাটগাছ: বিপাকে কৃষক
তার দেয়া তথ্য মতে, মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে চট ও সুতার বাজার সংকুচিত হয়েছে। মিশর ও চীনে অল্প-স্বল্প রপ্তান হচ্ছে।