বাংলাদেশ
শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদকে ব্রিফ করলেন রাষ্ট্রদূত মুহিত
শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের (পিবিসি) সভাপতি হিসেবে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদ আয়োজিত ‘আফ্রিকাতে শান্তি ও নিরাপত্তা: টেকসই শান্তির জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্ত বিতর্কে বক্তব্যে দিয়েছেন।
উন্মুক্ত বিতর্কটিতে শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত মুহিত। এসময় তিনি আফ্রিকার শান্তি বিনির্মাণ অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা জোরদার করার ক্ষেত্রে পিবিসি’র প্রসারিত সহায়তা দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
এছাড়া টেকসই উন্নয়ন, অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায়বিচার, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীদের সমান অংশগ্রহণ, যুবদের ক্ষমতায়ন এবং আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক শান্তি বিনির্মাণ উদ্যোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে পিবিসির অতীত এবং চলমান কর্মকাণ্ডসমূহ তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা জাতিসংঘ মহাসচিবের
আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক আর্থিক সংস্থাগুলির সাথে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি এবং আফ্রিকার জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা আরও এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান পিবিসি’র সভাপতি।
তিনি আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংস্থাগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের শান্তি ও নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
আফ্রিকায় সক্ষমতা তৈরিতে সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মূহিত।
রাষ্ট্রদূত মুহিত আফ্রিকায় শান্তি বিনির্মাণ ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তার ক্ষেত্রে শান্তিবির্নিমাণ তহবিলের অমূল্য অবদানের স্বীকৃতি দেন এবং শান্তি বিনির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত, অনুমানযোগ্য এবং টেকসই অর্থায়নের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
আারও পড়ুন: জুলাইয়ে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমেছে: জাতিসংঘ
পিসবিল্ডিং কমিশন (পিবিসি) হল ৩১ সদস্যের একটি আন্তঃসরকারি উপদেষ্টা সংস্থা যা সংঘাত-আক্রান্ত দেশগুলিতে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান।
শাবি অধ্যাপকের উদ্ভাবন: স্থলজ পরিবেশে হবে সামুদ্রিক শৈবাল
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়ার গবেষণায় দেশে প্রথমবারের মতো সামুদ্রিক শৈবালের স্থলজ পরিবেশে চাষ প্রযুক্তির উন্নয়নের বিষয়টি উঠে এসেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র, কক্সবাজার পরিচালিত ‘সী উইড কালচার এন্ড সী উইড প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ কোস্ট’ রিসার্চ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে প্রথম বারের মতো ‘সী উইড সীডলিং প্রোডাকশন থ্রো বায়োটেকনোলজি: হ্যাচারি টু ফিল্ড এসেসমেন্ট’ শিরোনামে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া ও অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম একটি গবেষণা সম্পন্ন করেন।
জানা যায়, এই গবেষণায় ১১টি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল যথা উলভা লেক্টোকা, উলভা ইন্টেস্টাইনালিস, হাইড্রোক্লেথ্রাস ক্লেথ্রাটাস, সারগেসাম অর্নোডিয়েনাম, কলারপা রেসিমোসা, এন্টেরোমর্ফা ক্লেথ্রাটা, হিপ্নিয়া ভেলেন্টেই, গ্রেসিলারিয়া ভেরোকোসা, গ্রেসিলারিয়া কর্টিকাটা, পাদিনা বরিয়ানা ও কল্পোমেনিয়া সাইনোসা এর ইনভিট্রো প্রক্রিয়ায় চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে চাষ পদ্ধতির উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। প্রকল্পের পর্যবেক্ষকগণের নেতৃত্বে ২টি ভিন্ন পরিবেশে ২টি ল্যাবের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
এতে সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করে কক্সবাজারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র এবং কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে এই গবেষণার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
গবেষণা পর্যবেক্ষণের প্রধান পর্যবেক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া বলেন, উভয় পরিবেশেই ইনভিট্রো পদ্ধতিতে সামুদ্রিক শৈবালের উৎপাদন সম্ভব। তবে স্বাভাবিকভাবেই সামুদ্রিক পানি সামুদ্রিক শৈবালের স্থলজ চাষে অধিক উপযোগী।
তিনি মত প্রকাশ করেন যে, ১১টি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালের মধ্যে বেশির ভাগই যেমন উলভা লেক্টোকা, উলভা ইন্টেস্টাইনালিস, কলারপা রেসিমোসা, এন্টেরোমর্ফা ক্লেথ্রাটা, হিপ্নিয়া ভেলেন্টেই, গ্রেসিলারিয়া ভেরোকোসা, গ্রেসিলারিয়া কর্টিকাটা এর ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে সারাবছরই সামুদ্রিক শৈবাল চাষ করা যেতে পারে।
পড়ুন: নিহত বুলবুলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দিচ্ছে শাবিপ্রবি প্রশাসন
পবিত্র আশুরা আজ
সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ পবিত্র আশুরা পালিত হচ্ছে।
হিজরি ৬১ সনের এই দিনে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা সমুন্নত রাখতে মহানবী (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম তাঁর পরিবারের সদস্য ও ৭২ জন অনুসারীসহ কারবালার মরুভূমিতে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন।
আশুরা উপলক্ষে মঙ্গলবার সরকারি ছুটির দিন।
দিবসটি উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা শহরে তাজিয়া মিছিল বের করবে।
পুরান ঢাকার ইমামবাড়া হোসেনী দালান থেকে একটি তাজিয়া মিছিল শুরু হবে যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে।
পবিত্র আশুরা নির্বিঘ্নে পালন নিশ্চিত করতে ইমামবাড়া হোসেনী দালান ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বিগত বছরের মতো এবারও পবিত্র আশুরার অনুষ্ঠানস্থলে ব্যাগ, ধারালো অস্ত্র বা দাহ্য বস্তু বহনকারী কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
এদিন নগরবাসীকে আতশবাজি পোড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পড়ুন: পবিত্র আশুরা পালিত হবে মঙ্গলবার
হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বেইজিং
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি হল রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রের সম্পর্কের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ‘যাদু হাতিয়ার’।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘চীনের অবস্থানের প্রতি তাদের বোঝাপড়া এবং সমর্থনের জন্য আমরা সেই দেশগুলোর প্রশংসা করি।’
সোমবার ঢাকার চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, যেহেতু আজকের বিশ্বে সময়ে সময়ে একতরফা গুন্ডামিমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আরও স্পষ্ট ঐকমত্যে পৌঁছানো এবং আরও জোর দিয়ে কথা বলা, যাতে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক আইন নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নিয়মগুলোকে সমুন্নত রাখতে এবং বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা যায়।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার কথা তুলে ধরে চীন বলছে, বিশ্বে চীনের শক্তি ও কণ্ঠস্বর প্রয়োজন এবং বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে চীনের পাশে দাঁড়াবে।
রবিবার অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে বৈঠকের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছু দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বড় হতে এবং শক্তিশালী হতে দেখতে চায় না এবং বিভিন্ন বাধা সৃষ্টির জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করে।
দুই পক্ষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাংস্কৃতিক বিনিময় (নবায়ন) এবং সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিষয়ক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
পড়ুন: চীনে ৯৯ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর: ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যে ৪ চুক্তি-সমঝোতা সই
বঙ্গমাতার ত্যাগ ও অকুণ্ঠ সমর্থনেই শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘বঙ্গমাতার নীরব আত্মত্যাগ, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও অকুণ্ঠ সমর্থনে শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু, আর বঙ্গবন্ধু থেকে হয়ে উঠেছিলেন জাতির পিতা।’
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজেই লিখেছেন, আমার জীবনের দুটি বৃহৎ অবলম্বন; প্রথমটি হলো- আত্মবিশ্বাস, আর দ্বিতীয়টি হলো- আমার স্ত্রী আকৈশর গৃহিণী।’
বঙ্গমাতার চারিত্রিক দৃঢ়তা সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দিনের পর দিন কারাগারে কাটিয়েছেন, তবে ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারে বেড়ে ওঠা দৃঢ়চেতা বঙ্গমাতা নিজে যেমন ভেঙ্গে পড়েননি তেমনি বঙ্গবন্ধুকে সাহস যুগিয়েছেন এবং সুপরামর্শ দিয়েছেন।’
বঙ্গমাতার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না থেকেও তাঁর যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল তা অনেক প্রাজ্ঞ, বর্ষীয়ান নেতার মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায় কঠিন।” তিনি বলেন, “বঙ্গমাতা কোমল স্নেহে ও কঠোর অনুশাসনে সন্তানদের সুযোগ্য করে গড়ে তুলেছিলেন।’
বঙ্গমাতার চিন্তাধারা অত্যন্ত পরিপক্ক ও দূরদর্শী ছিল উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখনই জেলে যেতেন, তখনই তাঁকে লেখার জন্য বঙ্গমাতা তাগিদ দিতেন, সেই সাথে খাতা পৌঁছে দিতেন। বঙ্গমাতার কারণেই আমরা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর লিখিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজ নামচা’, আর এগুলো এখন আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ।’
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর মনের কথা অকপটে ঘোষণার ক্ষেত্রে বঙ্গমাতার মূল্যবান পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম করেছে বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র উপদেষ্টা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
স্মরণসভায় বঙ্গমাতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গমাতা আত্মীয়-স্বজনকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আত্মীয়-স্বজনকে দেখাশোনা করাসহ সবসময় তাদের খোঁজ খবর তিনি রাখতেন।’
কাজী আকরাম বলেন, ‘বঙ্গমাতা অত্যন্ত অতিথি পরায়ণ ছিলেন এবং তিনি মানুষকে নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াতে ভালোবাসতেন। বঙ্গমাতা অনেক রাজনীতিবিদের চেয়েও অনেক দূরদর্শী ছিলেন বলে কাজী আকরাম উদ্দিন উল্লেখ করেন।’
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম পথ প্রদর্শক ফজিলাতুন্নেছা মুজিব: প্রতিমন্ত্রী
চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের প্রথম ট্রায়াল জাহাজ মোংলা বন্দরে
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ি প্রথমবারের মতো ভারতীয় ট্রায়াল রানের (পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন) কার্গো জাহাজ দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় ভেড়ে। বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি রিশাদ রাইহান’- নামে এই কার্গো জাহাজটি সোমবার সকালে বন্দরের ৯নং জেটিতে নৌঙ্গর করে।
বাণিজ্যে মোংলা বন্দর ব্যবহার বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি অনুয়ায়ী ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে ১ আগস্ট কার্গো জাহাজটি ছেড়ে আসে। ট্রায়াল রানে যুক্ত থাকা ৪টি জাহাজের এটি প্রথম কার্গো জাহাজ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মোংলা-তামাবিল এবং মোংলা-বিবিরবাজার (কুমিল্লা স্থলবন্দর) রুটে ট্রয়ালের জন্য ট্রানজিট কার্গোটি বর্তমানে মোংলা বন্দরে অবস্থান করছে। পণ্যবাহী ওই কার্গো জাহাজটি মোংলা বন্দরের নোঙ্গর করার মধ্যে দিয়ে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ট্রায়াল কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবারহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে এই চুক্তি হয়। জাহাজটিতে মার্কস লাইনের দুটি কন্টেইনারের মধ্যে একটি কন্টেইনারে ইলেক্ট্রোস্টিল কাস্টিংস লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজে ১৬.৩৮০ টন লোহার পাইপ এবং বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর সীমান্ত পয়েন্টে ব্যবহার করে আসামের জন্য ও আরেকটি কন্টেইনারে ২৪৯ প্যাকেজে ৮.৫ টন প্রিফোম রয়েছে।
জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে নৌযান থেকে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য খালস কাজ শুরু হয়। ওই নৌযান থেকে সরাসরি খালাস করে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য টার্মিনাল ট্রাক্টরে ওঠানো হয়। এর পর নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টার দিকে সেই পণ্য নিয়ে টার্মিনাল ট্রাক্টরটি সড়ক পথে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়।
কলকাতা বন্দর থেকে নৌযানে আসা দুটি কন্টেইনারের মধ্যে একটি তামাবিল সীমান্ত হয়ে ভারতে মেঘালয়ে এবং অপর কন্টেইনারটি বিবিরবাজার সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসামে যাবে।
আরও পড়ুন: প্রথমবার জাপান থেকে ১২৮০টি গাড়ি নিয়ে মোংলা বন্দরে জাহাজ
মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-ভারত প্রোটোকল রুট অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভারত থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য মোংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং স্ট্যান্ডর্ড অপারেটিং পদ্ধতি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ১৩তম বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী মোংলা বন্দর এটি প্রথম ট্রায়াল কার্গো জাহাজ।
ভারতের সহকারি হাইকমিশনার ইনডার জিত সাগর বলেন, ভারত-বাংলাদেশ প্রোটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস ও পরিবহন শুরু হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সাথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আজ একটি মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
‘এমভি রিশাদ রাইহান’- নামে ওই কার্গো জাহাজটি জেটিতে নোঙ্গর করার সময় উপস্থিত ছিলেন- ভারতের সহকারি হাইকমিশনার ইনডার জিত সাগর, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, মোংলা কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমানসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পরে তারা জেটি পরিদর্শন শেষে বন্দরের সভা কক্ষে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণসামগ্রী নিয়ে মোংলায় ভিড়েছে প্রথম জাহাজ
ইউক্রেন হামলার পর প্রথম রুশ জাহাজ মোংলায় পৌঁছেছে
কক্সবাজারে কটেজ থেকে চারজন উদ্ধার, ‘দালালচক্রের’ ১১ সদস্য আটক
কক্সবাজার শহরের কলাতলীর কটেজ জোনের বন্দিদশা থেকে রবিবার রাতে চারজনকে উদ্ধার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এসময় ১১জন ‘দালাল’কে আটক করা হয়েছে।
কলাতলীর শিউলি কটেজ থেকে এই বন্দীদের আটক করা হয় এবং বিভিন্ন স্থান থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দালালদের আটক করা হয়।
উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে দুইজন শিশু ও দুইজন যুবক রয়েছে। শিশু দুটির বাড়ি কক্সবাজার বাসটার্মিনাল এলাকার দক্ষিণ ডিককুল ও দুই যুবকের বাড়ি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সাতকানিয়া।
আরও পড়ুন: ভারতে অনুপ্রবেশের সময় মহেশপুর সীমান্তে দালালসহ আটক ৯
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, ‘দালালরা ভুল বুঝিয়ে কটেজ জোনের শিউলি কটেজে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন পর্যটককে আটকে রাখার খবর পায় ট্যুরিস্ট পুলিশ। এই খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বন্দি চারজনকে উদ্ধার করা হয়। তবে পিছনের গোপন পথ দিয়ে পালিয়ে যায় অপরাধীরা।’
তিনি আরও জানান, ‘সারারাত কটেজ জোনের বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে ১১জন দালালকে আটক করা হয়।’
উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগীদের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকতা বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের দুইজন রোগী নিয়ে হাসপাতালে এসে রাত কাটানোর জন্য সস্তা কক্ষ খুঁজতে কটেজ জোনে যায়। সেখানে পথিমধ্যে দালালের খপ্পরে পড়ে তারা। দালালরা কম দামের কক্ষের কথা বলে শিউলি কটেজে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে আরও অধিক দাম দাবি করে। তা না দেয়ায় তাদের কক্ষের মধ্যে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কটেজ জোন কেন্দ্রিক একটি গড়ে ওঠা অপরাধীরা নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এর মধ্যে পর্যটক হয়ররানি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, অসামাজিক কার্যকলাপসহ আরও নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।’
এসব অপরাধী আইনের আওতায় আনতে ট্যুরিস্ট পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে হাসপাতাল থেকে দালালচক্রের ৬ সদস্য আটক
চট্টগ্রামের বিআরটিএ কার্যালয় থেকে ৩০ দালাল আটক
পবিত্র আশুরা পালিত হবে মঙ্গলবার
সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার পবিত্র আশুরা পালিত হবে।
হিজরি ৬১ সনের এই দিনে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা সমুন্নত রাখতে মহানবী (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম তাঁর পরিবারের সদস্য ও ৭২ জন অনুসারীসহ কারবালার মরুভূমিতে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন।
দিবসটি উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা শহরে তাজিয়া মিছিল বের করবে।
আরও পড়ুন: পবিত্র আশুরা ৯ আগস্ট
পুরান ঢাকার ইমামবাড়া হোসেনী দালান থেকে একটি তাজিয়া মিছিল শুরু হবে যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে।
পবিত্র আশুরা নির্বিঘ্নে পালন নিশ্চিত করতে ইমামবাড়া হোসেনী দালান ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাজশাহী সিটির ৯৫২ পুকুর সংরক্ষণের নির্দেশ
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) এলাকার ৯৫২টি পুকুর সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রাজশাহী শহরে যেন আর কোনো পুকুর দখল ও ভরাট না হয় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
সোমবার পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি’র) এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এ আদেশ বাস্তবায়নে রাসিক মেয়র, রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
অন্য এক আদেশে রাজশাহী শহরের পুকুরগুলো যেন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় তা নিশ্চিত করার জন্যও বলা হয়েছে। এছাড়া মামলাটি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এইচআরপিবি’র প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলার আসামিদের অব্যাহতি, দুদকের আইওকে হাইকোর্টে তলব
মনজিল মোরসেদ বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় পুকুর ভরাট বন্ধের দাবিতে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। হাইকোর্ট তখন রুল জারির পাশাপাশি সিটি করপোরেশন এলাকায় কতগুলো পুকুর আছে, তা জানতে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেন।
রুলে রাজশাহী মহানগরে (রাসিকের) ভেতরে পুকুর ভরাট বন্ধে এবং সেগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এরপর ওই আদেশ অনুযায়ী রাজশাহী জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন পাঠান। তাতে দেখা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯৫২টি পুকুর রয়েছে।
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, সবশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘প্লট করে বিক্রির জন্য সংরক্ষিত দীঘি ভরাট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদ সংযুক্ত করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার সব পুকুর সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করি। সম্পূরক আবেদন ও রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষিকা সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ: হাইকোর্ট
সেলিম খানের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বকেয়া রাজস্ব আদায়ের নির্দেশ
চাঁদপুরের মেঘনা তীরবর্তী ২১ মৌজা থেকে বালু উত্তোলন বাবদ আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের কাছে সরকারের বিপুল অঙ্কের বকেয়া রাজস্ব নির্ধারণ পূর্বক তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেন। রায়টি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে রিট আবেদনকারী (সেলিম খান) সরকারকে কোনো ধরনের রয়্যালটি (রাজস্ব)না দিয়েই স্বেচ্ছাচারীভাবে ওই মৌজাগুলো থেকে বালু উত্তোলন করেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এতে সরকারের ইতিমধ্যে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
হাইকোর্ট বিভাগ যেদিন (২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল) রায় দিয়েছিলেন, সেদিন থেকে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে আপিল বিভাগ যেদিন (চলতি বছরের ৪ এপ্রিল) আদেশ দিয়েছিলেন-এই সময় পর্যন্ত সেলিম খানের কাছ থেকে ওই রয়্যালটি আদায় করতে বলা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে। অর্থাৎ বালু উত্তোলনের জন্য মো. সেলিম খানকে চার বছরের রয়্যালটি দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে রুল
রায়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, হাইকোর্টে এ বিষয়ে জারি করা রুলের বিরোধীতা করে কোন এফিডেভিট দাখিল না করা এবং সে সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তার ভূমিকা বেশ সন্দেহজনক। এছাড়া চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময় এ বিষয়ে নিশ্চিুপ ছিলেন। আদালত রায়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের দীর্ঘ সময় নিশ্চুপ থাকা এবং তখনকার আইন কর্মকর্তাদের ভূমিকায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে গত ২৯ মে রায় দেন আপিল বিভাগ যে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, হাইকোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সাল থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন সেলিম খান। সেই রায় বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা ২০১০ এর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং আইনের লঙ্ঘন। এই বিবেচনায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আপিলের বিস্তারিত শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। সে রায় আজ প্রকাশিত হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে বেশকিছু নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর সদরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর ডুবোচর থেকে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে বালু তুলেছেন। ফলে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, মেঘনা নদীর চাঁদপুর ও হাইমচর উপজেলায় অবস্থিত ২১টি মৌজায় নিজ খরচে সেলিম খান হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট করেন। নৌপথ সচল করার কথা বলে রিটটি করা হয়েছিল। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৯ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। এরপর রুল নিষ্পত্তি করে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারির চিঠি উল্লেখ করে বলা হয়, এতে প্রতীয়মান হয় যে, ওই মৌজাগুলোতে পর্যাপ্ত বালু-মাটি রয়েছে এবং তা তুলতে কোনো বাধা নেই। আপত্তি জানিয়ে বিবাদীদের (ভূমি সচিব, নৌ-পরিবহন সচিব, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের পরিচালক) পক্ষ থেকে কোনো জবাব (হলফনামা) দায়ের করা হয়নি, যাতে বিষয়টি (বালু থাকা) বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। রায়ে ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে ৮৬ দশমিক ৩০ কিউবিক মিটার (৩০ কোটি ৪৮ লাখ ঘনফুট) বালু সেলিম খানকে উত্তোলনে অনুমতি দিতে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলার আসামিদের অব্যাহতি, দুদকের আইওকে হাইকোর্টে তলব
হাইকোর্টের এই রায়ের চার বছর পর গত মার্চে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলে বলা হয়, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে কোনো নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ প্রতিবেদনই যে একক ভিত্তি নয়, তা হাইকোর্ট উপলব্ধি করতে পারেননি। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে, পরিবেশ, পাহাড়ধস, ভূমিধস অথবা নদী বা খালের পানির স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন, সরকারি স্থাপনার (যথা ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, ফেরিঘাট, হাটবাজার, চা বাগান, নদীর বাধ ইত্যাদি) এবং আবাসিক এলাকার কোনো ক্ষতি হবে কি না, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত গ্রহণ করবেন জেলা প্রশাসক।
এছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন করার ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ নষ্ট বা সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত ও জনস্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ওই বালুমহাল বিলুপ্তির প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন জেলা প্রশাসক। লিভ টু আপিলে আরও বলা হয়, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে ডুবোচরের বালু উত্তোলনের বিষয়ে কোনো ধরনের মূল্যায়ন হয়নি। এমনকি রিটে উল্লিখিত মৌজাগুলো বিভাগীয় কমিশনার বালুমহাল হিসেবেও ঘোষণা করেননি। তাই হাইকোর্ট বিভাগ বিবাদীকে (সেলিম খান) বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা বাতিলযোগ্য। হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে নদীর তলদেশে কোথায় কত দূরত্বে মাটি রয়েছে, তা আধুনিক পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা বা এর মানচিত্র তৈরি করা হয়। ডুবোচর কাটতে হলে প্রথমে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের এই লিভ টু আপিল গত ৪ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানি হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে ওই রায় দেন।