বাংলাদেশ
মেডিটেশনকে ভ্যাটমুক্ত করার আহ্বান বিশিষ্টজনদের
প্রস্তাবিত চলতি বাজেট থেকে মেডিটেশনের উপর স্থায়ীভাবে ভ্যাট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, সংসদ সদস্যসহ বিশিষ্টজনেরা। মেডিটেশন বা ধ্যানকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে গ্রহণ করে এ সেবাকে পুরোপুরি ভ্যাটমুক্ত করার আহ্বান জানান তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, যেখান থেকে মানুষের সেবা শুশ্রূষা বা সুস্থতার একটা পদ্ধতি করা হয় মেডিটেশন হচ্ছে সেরকম একটা মাধ্যম বা পথ। এর উপর সাধারণত কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স হওয়ার কথা না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভলি এবং যৌক্তিকভাবে এটা রিভিউ করা দরকার।
কবি অসীস সাহা জানান, মেডিটেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত উপকার হয়, চিন্তা-চেতনার বিকাশও হয়। তাই মেডিটেশনের উপর যেন কোনো ভ্যাট আরোপ করা না হয়। এটা যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে এক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন, শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে-তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের লাখ লাখ মানুষ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তিনি মানবিক মানুষ এবং মানবিক কাজে তার ভূমিকা সর্বত্র নন্দিত। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীরও এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া উচিত। এবং তিনি যদি হস্তক্ষেপ করেন তবে এ ধরনের বৈপরীত্যমূলক কাজে যে ক্ষতি হয় সে ক্ষতিটা অন্তত হবে না এবং বহু মানুষ উপকৃত হবে। মেডিটেশন আরও বেশি বিস্তৃত হোক এবং সারাদেশে ছড়িয়ে যাক, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাক এটাই আমার প্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন, তাদের মনোজগত ও দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর পরিবর্তন ঘটে। তাদের হৃদয় পূর্ণ হয়ে ওঠে মমতা ও সমমর্মিতায়। এটি নিজের পরিবারের সদস্য ও আপনজনদের জন্যেই শুধু নয়, অচেনা অজানাদের জন্যেও তাদের সমমর্মিতা খুব গুরুত্ব পায়। এ অনুভূতিটা হয় সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ। ইতিবাচক এই দৃষ্টিভঙ্গি জীবনকে করে তোলে প্রশান্ত, স্থির। এতে ইতিবাচক আবেগের প্রাবল্যও বৃদ্ধি পায়। ফলে মস্তিষ্কের গঠন ও কর্মপন্থায় পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। ইলেক্ট্রো-এনসেফালোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হয়েছে। গবেষকরাও বলছেন, নিয়মিত মেডিটেশনের কথা। শারীরিক-মানসিক সুস্বাস্থ্য অর্জনসহ সবদিক থেকে ভালো থাকার এই চর্চা মেডিটেশন বা ধ্যানের উপর কর না নিয়ে এটিকে চিকিৎসা সহায়ক হিসেবে স্থায়ীভাবে ভ্যাটমুক্ত করা হোক।
এর আগে সংসদে চলতি বাজেট বক্তৃতায় মেডিটেশনের উপর ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। মঙ্গলবার নীলফামারী-৪ আসনের আহসান আদেলুর রহমান, এমপি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, আপদকালীন বরাদ্দ বাড়াতে হবে, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে হবে। মেডিটেশন সেবা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা। স্বাস্থ্য সেবা ভ্যাটের আওতামুক্ত। মেডিটেশন সেবাকেও স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে স্থায়ীভাবে ভ্যাটের আওতামুক্ত করার আবেদন করছি।
পটুয়াখালী-৩ আসনের এসএম শাহজাদা, এমপি সংসদে তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, কোভিডের কারণে অনেকেরই অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। এই যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এটা নেয়ার জন্য মেডিটেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ মেডিটেশনের ওপর আবার ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এই দুটি জিনিস পরস্পর-বিরোধী হয়ে যাচ্ছে। একদিকে সিগারেটের উপর ভ্যাট কম হচ্ছে, কর কম হচ্ছে অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য চর্চার জন্য যে মেডিটেশন তার উপর আবার ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আমি মনে করি, মানসিক স্বাস্থ্য থেকে ভ্যাট বসিয়ে ইনকামের যে টার্গেট নেয়া হয়েছে সেই টার্গেটই যদি আবার সিগারেটের উপরে আরও চড়াও করে দেওয়া হয় তাহলে সে টার্গেটটা অন্তত পূরণ হবে। এই দুটো জিনিস অর্থমন্ত্রীকে বিবেচনা করার জন্য স্পিকারের মাধ্যমে আবেদন করছি।
পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেটের কয়েকটি কর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা দরকার: ড. আতিউর
ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন, এমপি তার বাজেট বক্তৃতায় প্রশ্ন রেখে বলেন, মেডিটেশনকে মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিধায় একে করের বাইরে রাখা প্রয়োজন। কোভিড প্রতিক্রিয়ায় মানুষের মন যখন বিপর্যস্ত সেখানে মেডিটেশনের আশ্রয় নিলে তাকে বেশি মূল্য দিতে হবে। কেন মাননীয় স্পিকার?
সোমবার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রহুল হক বলেন, মেডিটেশনে ট্যাক্স দেয়া হয়েছে। সেটা কমিয়ে গতবারের মতো জিরো করার জন্য আমি আহ্বান জানাই।
খুলনা-৫ আসনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ তার বক্তব্যে বলেন, মেডিটেশন পরে একটি শুল্ক ধার্য হতে যাচ্ছে। এ শুল্ক যাতে ধার্য্য না হয় সে দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া সংসদের বাজেট বক্তৃতায় মেডিটেশনের উপর থেকে ভ্যাট আরোপ প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রস্তাব করেন বরিশাল-৪ এর পংকজ দেবনাথ এমপি।
প্রসঙ্গত, মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে। অথচ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জন্যে প্রকাশিত উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার গাইডলাইনে যৌথভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম চর্চার কথা বলা হয়েছে।
পড়ুন: বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন বড় চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই
বন্যা দুর্গতদের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ সহায়তা হস্তান্তর
সিলেটের বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণ সহায়তা হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) ও বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ত্রাণ সহায়তা হস্তান্তর করা হয়।
বিপিএমসিএ সভাপতি এম এ মুবিন খান এসোসিয়েশনের পক্ষ হতে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৫০ হাজার ব্যাগ শুকনো খাবারের প্রতীকী প্যাকেট হস্তান্তর করেন যার মোট মূল্য ২০ লাখ টাকা।
ত্রাণের এসব ব্যাগে চাল, ডাল, চিড়া, তেল, লবন, চিনি, গুঁড়ো দুধ, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট-সহ ১৫টি আইটেম রয়েছে এবং এগুলো ইতিমধ্যে সিলেটে পাঠানো হয়েছে বলে বিপিএমসিএ সভাপতি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: দুশ্চিন্তার কিছু নেই, বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসন করবে সরকার: সিলেটে প্রধানমন্ত্রী
এছাড়া বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি সাব্বির আহমেদ চৌধুরী এসোসিয়েশনের পক্ষ হতে সিলেটের বন্যা দুর্গত মানুষের ত্রাণ সহায়তার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসময় বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশনের এই মহতি উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানান।ড
এ সময় তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলে এবারের বন্যা অত্যন্ত প্রলয়ঙ্কারী। তবে সরকারের পক্ষ হতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানো হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত নৌযান না থাকায় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বন্যা দুর্গতদের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের লোকজন মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন।
কোরবানির পশুর বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে অপসারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আহ্বান
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানি ও কোরবানি করা পশুর উচ্ছিষ্টাংশ সুষ্ঠুভাবে অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য সকল সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যত্রতত্র পশু জবাই করা থেকে বিরত থাকতে এবং সুনির্দিষ্ট স্থানে গর্ত করে গর্তের মধ্যে রক্ত, গোবর ও পরিত্যক্ত অংশ রেখে মাটি চাপা দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কোরবানির বর্জ্য অপসারণ বা কোরবানির গোশত বিতরণে পরিবেশ সম্মত ব্যাগ/পাত্র ব্যবহার এবং জবাই করা পশুর উচ্ছিষ্টাংশ ডাস্টবিন অথবা নির্ধারিত স্থানে ফেলার অনুরোধ জানানো হয়।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানি করা পশুর উচ্ছিষ্টাংশ সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা ও অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে করণীয় বিষয়ে মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ অনুরোধ জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব(পরিবেশ) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আবদুল হামিদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ঈদুল আজহার প্রধান জামাত জাতীয় ঈদগাহে সকাল ৮টায়
সভায় কোরবানি করা পশুর উচ্ছিষ্টাংশ সুষ্ঠুভাবে অপসারণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চার লাখ কপি প্রচারপত্র সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগ ও জেলা কার্যালয়, জেলা প্রশাসন এবং জেলা তথ্য অফিস-সহ অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে দেশব্যাপী বিতরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও, পরিবেশ অধিদপ্তর মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারা দেশের মসজিদগুলো সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও মসজিদের ইমামদেরকে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে করণীয় সম্পর্কে জুম্মার নামাজে বক্তব্য রাখার আহবান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি চ্যানেলে ও প্রচার মাধ্যমে কোরবানির পশুর বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে অপসারণ সংক্রান্ত বার্তা প্রচারের অনুরোধ করা হয়।
আরও পড়ুন: ইবিতে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু ২ জুলাই
ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করতে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে ডিএসসিসি: তাজুল
ঢাকাকে একটি পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার লক্ষ্যে ৩০ বছর মেয়াদী সমন্বিত মহাপরিকল্পনা (২০২০-২০৫০) প্রণয়ন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
মঙ্গলবার সংসদে চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় মহাখালী বাস টার্মিনাল ভেঙে তা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, বিআরটি লাইন-৩ এর করিডোর সড়কও উন্নত করা হবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার বাতাসের মান আবারও 'অস্বাস্থ্যকর'
আব্দুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর পুরাতন চ্যানেলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রকল্প নেয়া হবে।
ঢাকা থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঢাকার উভয় সিটি করপোরেশন এলাকায় দৈনিক পানির চাহিদা ২৬০-২৬৫ কোটি লিটার।
অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদন ক্ষমতা ২৭০-২৭৫ কোটি লিটার।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা: প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে নেপিদোকে আহ্বান ঢাকার
তাই ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার চেয়ে বেশি এবং চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই বলে জানান এলজিআরডি মন্ত্রী।
বাংলাদেশে ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে বাংলাদেশি দুই জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ.৪/৫ শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক যশোরের দু’জন আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সংগৃহীত ভাইরাসের আংশিক (স্পাইক প্রোটিন) জিনোম সিকুয়েন্সের মাধ্যমে করোনার নতুন এই উপধরনটি শনাক্ত করে।
যবিপ্রবির গবেষক দলটি জানায়, আক্রান্ত দু’জন ব্যক্তিই পুরুষ। যাদের একজনের বয়স ৪৪ এবং আরেকজনের বয়স ৭৯ বছর। আক্রান্ত ব্যক্তির একজন করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ এবং অপরজন দুই ডোজ নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং আরেকজন বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের শরীরে জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তারা উভয়েই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে গবেষকরা ধারণা করছেন।
গবেষক দলটি আরও জানায়, বিএন.৪/৫ সাবভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনে ওমিক্রনের মতই মিউটেশন দেখা যায়। তবে তার সঙ্গে এই সাব-ভ্যারিয়েন্টে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মত স্পাইক প্রোটিনের ৪৫২ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডে মিউটেশন থাকে। এছাড়াও এই সাব-ভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ৪৮৬ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডেও মিউটেশন দেখা যায়। ওমিক্রনের এই দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছে। গত মে মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ ভারতে এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এই উপধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সাম্প্রতিককালে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ এর জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিরাও এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। আগামী দিনে এই সাব ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য সাব-ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ কোরিয়ায় ওমিক্রনে মৃত্যুর হার দ্রুত বাড়ছে
করোনার এই নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জেনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই সাব-ভ্যারিয়েন্টটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এ জন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, অচীরেই পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স করে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা সম্ভব হবে এবং এই সাব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণের কাজ জিনোম সেন্টারে অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে জিনোম সেন্টারে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের স্থানীয় সংক্রমনও শনাক্ত করা হয়।
যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বে করোনার নতুন এই সাব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসান, মো. আল-ইমরান, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর ইসলাম, ড. সেলিনা আক্তার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শোভন লাল সরকার, এ এস এম রুবাইয়াতুল আলম, মো. সাজিদ হাসান, জিনোম সেন্টারের গবেষণা সহকারী প্রশান্ত কুমার দাস, রাসেল পারভেজ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে প্রথম ওমিক্রন এক্সই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত
মীরসরাইয়ে ঝর্ণা দেখতে গিয়ে নিখোঁজ আরও এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা দেখতে গিয়ে নিখোঁজ আরও এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের একটি খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত যুবকের নাম তৌফিক আহম্মেদ তারেক (২২)। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন।
এ নিয়ে তিনদিনে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত রবিবার (১৯ জুন) রাতে উদ্ধার করা হয় তৌফিকের বন্ধু ইশতিয়াকুর রহমান এবং গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় উদ্ধার করা হয় তারেকের বড় ভাই ইউএসটিসির ছাত্র মাসুদ আহম্মেদ তানভীরের লাশ।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে তারেকের লাশ খালে ভেসে যেতে দেখে স্থানীয়রা রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। পরে তারেকের বন্ধুরা খোঁজ পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে দুজনের লাশ উদ্ধার
মীরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকালে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা থেকে চার কিলোমিটার দূরে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাগল খাইয়া ছড়া থেকে ভাসমান অবস্থায় তারেকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্ত ও মাসুদ আহম্মেদ তানভীরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, নগরীর হালিশহর থেকে দুই ভাইসহ তিন বন্ধু রবিবার সকালে মীরসরাইয়ের পাহাড়ি এলাকা নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা দেখতে যায়। সেদিন সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে তারা নিখোঁজ হয়। নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা চূড়া থেকে নিচে পড়ে যায় তানভীর, তার ভাই তারেক ও তাদের বন্ধু ইশতিয়াকুর। ওইদিন রাতে ইশতিয়াকুরের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে নিখোঁজ দুই সহোদর তানভীর ও তারেককে উদ্ধার করতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন থেকে ডুবুরি দল এসে উদ্ধার কাজ চালায়। পরে সোমবার বিকালে স্থানীয় একটি ছড়ার পানিতে নিখোঁজ তানভীরের লাশ পাওয়া যায়। সর্বশেষ মঙ্গলবার একই ছড়ার পানিতে তারেকের লাশ ভেসে উঠলে পুলিশ তা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ইশতিয়াক জনতা ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. জাকারিয়ার ছেলে। চট্টগ্রামের হালি শহরের বি-ব্লকে তার বাড়ি। আর তানভীর ও তারেকের বাবার নাম শাহাবুদ্দিন। তাদের গ্রামের বাড়ি মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের হলেও নগরীর হালিশহর বি-ব্লকে থাকেন সপরিবারে।
আরও পড়ুন: মীরসরাইয়ে ট্রেন থেকে পড়ে নিহত ১, আহত ১
জনগণের নিরাপত্তার শেষ অবলম্বন হিসেবে আস্থা অর্জন করুন, পুলিশকে প্রধানমন্ত্রী
জীবন ও মর্যাদার সুরক্ষার জন্য পুলিশের কাছে আসা মানুষের শেষ অবলম্বন হিসেবে বাহিনীটিকে গড়ে উঠতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে পুলিশকেও জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে যাতে জনগণ তাদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় এই বাহিনীকেই তাদের শেষ অবলম্বন বলে মনে করে। জনগণ তাদের আশ্রয় পেতে পারে।’
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর দুই পাশে নবনির্মিত দুটি থানাসহ-পদ্মা সেতু উত্তর থানা ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা- বাংলাদেশ পুলিশের পাঁচটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর উভয় পাশে ২ থানার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশকে বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি ও অপরাধের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান সফল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, মাদকের অপব্যবহার, সাইবার অপরাধ, অর্থপাচার, গুজব ছড়ানো, মানব পাচার এবং জনগণ ও দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সমাজে এ ধরনের অপরাধ রোধে বিশেষ নজর দিতে বলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আপনাদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।’
সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা রোধে পুলিশ চমৎকার ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশে শান্তি চাই। যদি একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করে, আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হব।’
বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি দেশে খাদ্য স্বনির্ভরতা অর্জন ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা ঠেকাতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: দুশ্চিন্তার কিছু নেই, বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসন করবে সরকার: সিলেটে প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ও মূল্যস্ফীতির হার সারা বিশ্বে বাড়ছে এবং তা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
উদ্বোধন করা অন্য প্রকল্পগুলো হলো- ১২টি নবনির্মিত জেলা পর্যায়ের পুলিশ হাসপাতাল, বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ছয়টি নারী ব্যারাক, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য অনলাইন জিডি (সাধারণ ডায়েরি) কার্যক্রম এবং গৃহহীন পরিবারের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত ১২০টি ঘর বিতরণ।
৬৪ জেলায় নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য পৃথক ব্যারাক নির্মাণের সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই ছয়টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে।
নবনির্মিত ১২০টি ঘরসহ পুলিশ এখন পর্যন্ত গৃহহীন পরিবারের জন্য মোট ৫২০টি ঘর সরবরাহ করেছে।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যৈষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন।
এছাড়া মুন্সীগঞ্জের পদ্মা সেতু উত্তর থানা, খুলনার কেএমপি নারী ব্যারাক, ময়মনসিংহ পুলিশ হাসপাতাল ও পিরোজপুর পুলিশ লাইন থেকে পুলিশ সদস্য ও সুবিধাভোগীসহ অন্য অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
বিয়ানীবাজারে ১২৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি, খোলা হয়েছে ২৮ আশ্রয়কেন্দ্র
সিলেটের বিয়ানীবাজারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলার ১২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এদিকে উপজেলার প্রায় দুই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
জানা গেছে, বিয়ানীবাজারে প্রতিদিন প্লাবিত এলাকার পরিধি বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্গত মানুষের সংখ্যা। বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার প্রায় সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে বিতরণের ধীরগতিতে এখনও অনেক দুর্গত এলাকার মানুষ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রোমান মিয়া বলেন, এখানকার ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৮টিতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে ২৩টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান জানান, উপজেলার ৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা) মধ্যে ৩১টি বন্যার পানি ওঠেছে। অন্যগুলোর মধ্যে পাঁচটিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বন্যায় স্থানীয় মানুষের সঙ্গে গবাদি পশু-পাখিও ক্ষতির শিকার হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই জানাতে পারছে না স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নূর জানান, বন্যা মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যাদের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে তাদেরকে কাছাকাছি আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সিলেট বিভাগে বন্যায় ৭ দিনে ২২ জনের মৃত্যু: বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
সিলেট বিভাগে সম্প্রতি বন্যায় ১৫ জুন থেকে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায়।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘এই পর্যন্ত বন্যায় সিলেট বিভাগে ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে সিলেটে ১৪ জন, মৌলভীবাজারে তিনজন ও সুনামগঞ্জের পাঁচজন মারা গেছেন।’
তাদের মধ্যে ডুবে যাওয়ার তিনদিন পর মঙ্গলবার সকালে সিলেটের জৈন্তাপুরে মা-ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
হিমাংশু বলেন, বজ্রপাত, সাপের কামড়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, ভূমিধস ও পানিতে ডুবে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
এর আগে সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান সিলেটে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুশরাত আজমিরী সদর উপজেলায় তিনজনের এবং ছাতক উপজেলায় আরও একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। দুই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সোমবার পর্যন্ত অন্তত ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলেন।
খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই জেলার বাসিন্দারা।
দেশে করোনায় মৃত্যু ১, শনাক্ত ৮৭৪
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮৭৪ জনের এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন। দেশে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ১৩৩ জন এবং শনাক্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪ জনে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮০ পরীক্ষাগারে সাত হাজার ৮৯৩ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ পরীক্ষা করা হয় সাত হাজার ৯২৭ নমুনা।
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, শনাক্তের হার ১০ শতাংশ ছাড়াল
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক তিন শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৮৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ পাঁচ হাজার ৯৮৩ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
বিশ্ব পরিস্থিতি
বৈশ্বিক ডাটা অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ কোটি ৪৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯০ জনে ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছেন ৬৩ লাখ ৪১ হাজার ৮২৭ জন।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা আট কোটি ৮০ লাখ ৫৪ হাজার ৮০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৩৮৫ জন।
আরও পড়ুন: একদিনে বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৭৬৬
বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতে মোট চার কোটি ৩৩ লাখ ৯ হাজার ৪৭৩ জনের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৯ হাজার ২১৭ জনে।
ব্রাজিল এ পর্যন্ত তিন কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১১৮৩ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি মৃত্যুবরণ করেছে ছয় লাখ ৬৯ হাজার ১০৯ জন।