রাজনীতি
গণতন্ত্র ছাড়া মুক্ত গণমাধ্যম সম্ভব নয়: ফখরুল
পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় কাজ করা গণমাধ্যমগুলো করপোরেট মিডিয়ায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র ছাড়া মুক্ত গণমাধ্যম সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশে অনেক মিডিয়া দেখছি, কিন্তু তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না… দেশে কৌশলে করপোরেট মিডিয়া তৈরি করা হয়েছে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোই সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের মালিক।’
সোমবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে 'বাংলাদেশের গণমাধ্যম: দুঃশাসনের দেড় দশক' শীর্ষক এক সেমিনারে বিএনপির এই নেতা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘করপোরেট মিডিয়া মালিকরা সরকার ও ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা ভোগের পাশাপাশি ব্যবসা করছেন। ব্যাংক থেকে টাকা পাচারকারীদের রক্ষা করতে এসব গণমাধ্যম করপোরেশনে পরিণত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: এবার অবশ্যই শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হবে: ফখরুল
তিনি বলেন, অদ্ভূত বিষয় হলো, এখন একটি করপোরেট গণমাধ্যম আরেকটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এবং এক ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করছে। তারা সবাই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ফখরুল বলেন, ‘মূল কথা হচ্ছে গণতন্ত্র ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় এবং স্বাধীনতা না থাকলে গণমাধ্যম সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।’
তিনি বলেন, সর্বব্যাপী ফ্যাসিবাদ আমাদের দেশকে গ্রাস করেছে এবং ফ্যাসিবাদের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্টদের প্রয়োজন জনগণকে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। আর এজন্য প্রয়োজন গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা, যা বর্তমান সরকার গত দেড় দশক ধরে সূক্ষ্মভাবে করে আসছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এখন আমাদের বলতে হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই।’
তিনি বলেন, এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্পষ্টভাবে বলছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, এখানে নির্বাচন হয় না। এখানে মানুষের অধিকার ও মানবাধিকারকে হরণ করা হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে দলের নেতা-কর্মীরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: মানুষ বিএনপিকে 'হিন্দুবিরোধী' বলে বিশ্বাস করে না: ফখরুল
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতা মজবুত করার পুরোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এর অংশ হিসেবে তারা সংবিধান পরিবর্তন করে সংসদ, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
সরকার পুরো সমাজকে কলুষিত করে রাজনীতি ও দেশের সব অর্জনকে ধ্বংস করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই অন্ধকার ঠেলে আলোর দিকে এগিয়ে যাই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, আমাদের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় ১৯৭১ ও ৯০-এর দশকের মতো সাহস ও শক্তি নিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে।’
তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ ভেঙে দিয়ে আওয়ামী লীগকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে খেলতে ইসি ‘অচেনা’ দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে: ফখরুল
১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় বিএনপি ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রধান সুবিধাভোগী হলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় বিএনপি এখনও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি বাংলাদেশকে বিদেশিদের ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়।
আরও পড়ুন: আ. লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে অসাধ্য সাধন করতে পারে: তথ্যমন্ত্রী
রবিবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও আগামীর বাংলাদেশ’-শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধান সুবিধাভোগী হিসেবে জিয়াউর রহমান পরবর্তীতে সংসদে ইনডেমনিটি বিল এনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যারা জড়িত ছিলেন তারাসহ ষড়যন্ত্রকারীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে দেশে-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর কাজটিও করেন জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এবং সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সোনার বাংলা গড়ার যে প্রক্রিয়া বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, তার হাত ধরেই আগামীর বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ও বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, বিএফইউজে সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেমিনার, মিট দ্য প্রেস ও আন্তর্জাতিক লিয়াঁজো উপ-কমিটির আহ্বায়ক জুলহাস আলম।
আরও পড়ুন: খাদের কিনারে বিএনপি, নির্বাচন বর্জন করলেই পতন: তথ্যমন্ত্রী
পান্না কায়সারের প্রয়াণ বাঙালির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি: তথ্যমন্ত্রী
এবার অবশ্যই শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হবে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার যতই কৌশল অবলম্বন করুক না কেন এবার সরকারে অবশ্যই পরিবর্তন হবে।
তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন আসবেই, সত্য ও সুন্দরের জয় হবে এবং গণতন্ত্রের জয় হবে ইনশাআল্লাহ।
ফখরুল বলেন, তাদের দল জনগণের শক্তি এবং গণতন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, যা এখন সমগ্র বিশ্বের দ্বারা প্রশংসিত।
আরও পড়ুন: ভয়-প্রতিহিংসা থেকে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে আ. লীগ: ফখরুল
তিনি বলেন, এ কারণেই আমরা এখন এতটা আশাবাদী। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন কেন আমি সবসময় এমন হাসি মুখে থাকি। আমি হাসি কারণ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে এই ভয়ংকর দানব (সরকার) জনগণের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে দিয়ে আমাদের বুক থেকে সরে যাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করতে সারা বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। তারা (জনগণ) সত্যিই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে চায়।
ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০ শতাংশ আসনও পাবে না।
বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দলের একটাই দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিদেশিদের ভয় দেখানোর জন্য সরকার
ফখরুল অভিযোগ করেন, চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে এবং বিদেশিদের জুজুর ভয় দেখানোর জন্য মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান চালিয়ে সরকার নাটক করেছেন।
তিনি বলেন, তারা (সরকার) কতটা ভয়ংকর তার প্রমাণ হলো তারা কুলাউড়ার একটি প্রত্যন্ত বাড়ি থেকে আকস্মিক জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে ৪ জন পুরুষ, ৫ জন মহিলা এবং ১ জন শিশুকে আটক করেছে। এ ছাড়া তারা ৩ কেজি বিস্ফোরক ও ডেটোনেটরও জব্দ করেছে।
তবে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা হঠাৎ কোথা থেকে ওই বাড়িতে গেল এবং কারা তাদের নিয়ে এল এবং কীভাবে তারা সেখানে বিস্ফোরক ও ডেটোনেটর নিয়ে এসেছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, সরকার সবসময় জঙ্গিদের নিয়ে নাটক করে।
তিনি বলেন, এটা একটা অশুভ লক্ষণ। এখন দেখবেন তারা জঙ্গিদের কথা বলে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
তিনি আরও বলেন, তারা আবার ক্ষমতায় না এলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না- এই কথা বলে পশ্চিমা বিশ্বকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তারা।
খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ
ফখরুল বলেন, বর্তমানে খুবই অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। অন্য কোনো সভ্য দেশে হলে সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিত।
তিনি বলেন, চিকিৎসকরা বারবার বলছেন- তার যে চিকিৎসা দরকার তা দেশে সম্ভব নয় এবং তার চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যেতে হবে।
বিএনপির এই নেতা আক্ষেপ করে বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে সব সময় চায় খালেদা জিয়া চিরতরে পৃথিবী থেকে চলে যান।
রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অল্প বয়সে আরাফাত রহমান ইহলোক ত্যাগ করেছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার উদাসীন
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার উদাসীন।
তিনি আরও বলেন, শিশুসহ হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক মানুষ।
এ ছাড়া সরকার যখন কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্পের এত কথা বলেন তারা কেন এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন?
বিএনপি নেতা বলেন, দেশের জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এ কারণে তারা বিরোধী দলকে দমন ও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারছেন না। এমনকি রাজনীতিতে যাদের সম্পৃক্ততা নেই তারাও রেহাই পাচ্ছেন না। বিএনপির কর্মীদের খুঁজে না পেলে তাদের বাবা-ভাইদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন ফখরুল।
আরও পড়ুন: মানুষ বিএনপিকে 'হিন্দুবিরোধী' বলে বিশ্বাস করে না: ফখরুল
ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য: ফখরুল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০
আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা নিয়ে মতবিরোধের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১২ আগস্ট) বিকালে পৃথক কর্মসূচি পালনকালে জেলা বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ বাধে।
জানা যায়, গত ১০ আগস্ট বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
এরপরই জেলা বিএনপির একটি বিরাট অংশের নেতা-কর্মী ঘোষিত কমিটিকে ফরমায়েশি কমিটি আখ্যা দেন। তারা এই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকালে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
শনিবার বিকালে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম পৌর এলাকার শেখ হাসিনা সড়ক সেতু এলাকায় একটি শোভাযাত্রা বের করে।
অন্যদিকে, একই সময়ে জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি এবং নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনের নেতৃত্বে পাওয়ার হাউজ রোডে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও কেক কাটার আয়োজন করে।
শোভাযাত্রা বের হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।
আরও পড়ুন: বিএনপি বাংলাদেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে, তাদের প্রতিহত করুন: কাদের
প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ।
জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আনন্দ শোভাযাত্রা শেষ করে আমি ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। পরে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি।’
জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, ‘এমন ব্যক্তিকে আহ্বায়ক করায় জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিব্রত। এই কমিটি বাতিল করে নতুন করে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হোক। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু নেতা-কর্মী সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসাইন জানান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। বিকালে একপক্ষ আনন্দ র্যালি বের করে এবং অন্যপক্ষ কোকোর জন্মদিন উপদযাপনের কথা বললেও মূলত আনন্দ মিছিলকে প্রতিহত করার জন্য মাঠে নামে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
তিনি বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং একজনকে আটক করে।
আরও পড়ুন: বিএনপির ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ করা উচিত: ওবায়দুল কাদের
খেলা হবে তারেক ও হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি উন্নয়নের সুবিধা নেয় কিন্তু প্রশংসা করতে পারে না: ওবায়দুল কাদের
সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণতন্ত্র আছে বলেই উন্নয়নের মুখ দেখছে বাংলাদেশ। বিএনপি এটার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু দেশের উন্নয়নে তারা প্রশংসা করতে পারে না।
শনিবার (১২ আগস্ট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় কাদের বলেন, ‘সংবিধানের কাটাছেঁড়া বা সংশোধনী করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পার্লামেন্ট বিলুপ্তি, শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ বিএনপির কোনো দাবি মেনে নেওয়া হবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, মন চাইলে নির্বাচনে আসবেন, না হয় যা মন চায় তা করেন।’
আরও পড়ুন: বিএনপি বাংলাদেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে, তাদের প্রতিহত করুন: কাদের
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে প্রতিপক্ষভাবে, আর তারা আওয়ামী লীগকে শত্রুভাবে। সেটার যাত্রা শুরু করেছিল ২১ আগস্ট। ১৫ আগস্ট কিংবা একুশে আগস্টসহ সব হত্যাকাণ্ড ও ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড জিয়া পরিবারের সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনে তাদের কী দশা হবে। এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে এদেশের ৭০ ভাগ ভোট শেখ হাসিনা পাবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই ওয়াশিংটন হস্তক্ষেপ করতে পারে না, শুধুমাত্র বাংলাদেশেই চুন থেকে পান খসলেই তারা ভিসা নীতির কথা বলে।
যেকোনো সংকট কিংবা সমস্যায় শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখতে সারাদেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
আরও পড়ুন: দেশের রাজনীতিতে বিএনপি ভয়ঙ্কর বিষফোঁড়া: কাদের
নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো চাপে নেই আওয়ামী লীগ: কাদের
মানুষ বিএনপিকে 'হিন্দুবিরোধী' বলে বিশ্বাস করে না: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপিকে হিন্দুবিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগের অপপ্রচার জনগণ বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে এমন অপপ্রচার চালায়, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের। তারা বলেন, বাংলাদেশে বিএনপি হচ্ছে একটা হিন্দুবিরোধী সংগঠন।’
শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ফখরুল তাদের কাছে জানতে চান, তারা বিশ্বাস করেন কি না- যে বিএনপি হিন্দুবিরোধী দল।
তিনি বলেন, ‘আমরা জোর গলায় বলতে পারি, বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা (হিন্দুরা) নিরাপদে থাকে। সব সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার রয়েছে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে খেলতে ইসি ‘অচেনা’ দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে: ফখরুল
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় গণতন্ত্র অপরিহার্য। তাই গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমাদের জয়ী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কথায় কথায় বলে, তারা দেশের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক দল। তারা কতটা অসাম্প্রদায়িক তা আপনারা জানেন। আমরা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল দেখেছি। আওয়ামী লীগের লোকেরা এই দেশে আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করেছে।’
বর্তমান সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর এবং কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ বিহার ও সম্প্রদায়ের উপর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের জমি ও সম্পত্তি দখল করার জন্য আক্রমণ করেছিল। তারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অপমান করার জন্য তাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার জন্যও এটি করেছিল। মানুষ এখন এটা বুঝতে পেরেছে এবং তারা এটাকে বিশ্বাস করে না এবং মেনেও নেয় না।’
১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদে হামলার সময় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য তৎকালীন বিএনপি সরকারের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন তিনি।
আরও পড়ুন: এক দফা আন্দোলন: বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার বিশাল মিছিল
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ-ই নিরাপদ বোধ করেন না। যে কোনো সময় কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো যেতে পারে বলে সাধারণ মানুষও নিরাপদ বোধ করে না।’
গণতন্ত্র ও হারানো সব অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ফখরুল যুবকদের অনুরোধ করেন, তাদের কমিউনিটির সদস্যসহ সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং অনুপ্রাণিত করতে হবে যে গণতন্ত্রের এই লড়াইয়ে তাদের জিততে হবে।
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে তাদের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেককে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য: ফখরুল
শেখ হাসিনার সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি: শিক্ষামন্ত্রী
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বেশি থাকে এবং তা তিনি পূরণ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি হওয়ার কারণ তিনি মানুষ যা চায়, তা তিনি বার বার দেন। তিনি দিচ্ছেন এবং দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন বলে মানুষ চায় তার কাছে। যে কোনোদিন দেয়নি, সে দিতেও পারে না। যার দেওয়ার কোনো সক্ষমতা নেই, দেওয়ার কোনো ইচ্ছা, দরদও নেই, তার কাছে কেউ চায়ও না।
শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউজে জেলা সদরের বিষ্ণুপুর ও ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নে নদীভাঙন এবং চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে তাদের কাছে কেউ চায়নি। কারণ জানে, তারা পাবে না এবং ইতিহাস তাই বলে। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল কিছুই হয়নি। তাদের এমপি-মন্ত্রীর বাড়ির সামনের রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট আমাদের করে দিতে হয়েছে। কাজেই মানুষের প্রত্যাশা আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে। আর চাঁদপুরে নদীভাঙন প্রতিরোধে যতটুকু কাজ হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, চাঁদপুরে আগামীতেও নদীভাঙন প্রতিরোধে কাজ হবে।
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটাকে পচিয়ে ফেলেছে বিএনপি: দীপু মনি
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকের সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদী ভাঙনের যে চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছে তা দেখেছি। বিভিন্ন স্থানে ভাঙন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ। আমি বিষয়গুলো জানি এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি আবারও চাঁদপুরের নদীভাঙন প্রতিরোধের প্রকল্পগুলো নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’
জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান।
এ ছাড়াও নদী উপকূলীয় এলাকার চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরেরা তাদের নিজ নিজ এলাকার ভাঙন চিত্র সভায় তুলে ধরেন।
পাউবো, চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল হক, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হেদায়েত উল্যাহ, সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বেপারী, আবিদা সুলতানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি’র ষড়যন্ত্র রুখতে আওয়ামী লীগের শক্তি জনগণ ও সংগঠনের ঐক্য: দীপু মনি
সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান দীপু মনির
নির্বাচন নিয়ে খেলতে ইসি ‘অচেনা’ দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মদদে নির্বাচনের নামে চক্রান্তের অংশ হিসেবে দুটি ‘অচেনা’ দলকে নিবন্ধন দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কতটা নির্লজ্জ... তারা দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। এই দলগুলোকে কেউ চেনে না। কেউ কি তাদের চেনেন? আপনারা কি জানেন কেন তাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে? তাদের দ্বারা নির্বাচন নিয়ে একটি খেলা খেলতে চায়। এই খেলা এইবার খেলতে দেওয়া হবে না।’
শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার গণমিছিলের উদ্বোধনকালে এ অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা।
তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ এখন তাদের অধিকার রক্ষা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ।
ফখরুল বলেন, ‘এবার আমাদের লড়াই জীবন রক্ষার জন্য। কোনো ভয়, কোনো জেল বা দমন-পীড়ন এবার আমাদের দমন করতে পারবে না।’
এর আগে বৃহস্পতিবার, ইসি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নিবন্ধনের অনুমোদন দেয়।
বিবৃতিতে ইসি বলেছে, সর্বসম্মতিক্রমে দল দুটিকে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
ফখরুল বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তারা বর্তমান ‘দানব’ সরকারকে পরাজিত করে শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন। ‘আমরা একটি নতুন সংগ্রাম শুরু করেছি। মিছিলের মাধ্যমে আমরা তাদের (সরকার) কাছে একটি বার্তা দিতে চাই যে তোমাদের দিন শেষ।’
ফখরুল সরকারের উদ্দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মর্যাদার সঙ্গে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
অন্যথায় রাজপথে বিষয়টির মিমাংসা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এই নেতা।
আরও পড়ুন: এক দফা আন্দোলন: বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার বিশাল মিছিল
এক দফা আন্দোলন: বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার বিশাল মিছিল
চলমান এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর বাড্ডা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকা থেকে মালিবাগের দিকে পৃথক দুটি মিছিল নিয়ে আসে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।
বিরোধী দলের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এই বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, সরকার দমনমূলক কর্মকাণ্ড ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার কোনোভাবেই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পারবে না। ‘কোনোকিছুই এবার আমাদের দমাতে পারবে না।’
ফখরুল বলেন, সরকার যাতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনের নামে আরেকবার খেলা করতে পারে, তাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) দুটি অখ্যাত দলকে নিবন্ধন দিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ এবার ক্ষমতাসীন দলকে কোনো অন্যায় খেলা খেলতে দেবে না।
আরও পড়ুন: ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য: ফখরুল
খাদের কিনারে বিএনপি, নির্বাচন বর্জন করলেই পতন: তথ্যমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ক্রমাগত নির্বাচনবিমুখতা এবং চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে ব্যক্তির লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হতে যাওয়া বিএনপি আজ খাদের কিনারে এবং আগামী নির্বাচন বর্জন করলেই পতন হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি এমন একটা দল, যে দল করলে সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন দূরে থাকুক, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচনও করা যায় না। তাদের নেতা-কর্মীদের আমি জিজ্ঞাসা করব- যেই দল করলে কোনো নির্বাচনই করা যায় না, আপনাদের কী ঠ্যাকা পড়েছে সেই দল করে তারেক রহমানের লাঠিয়াল বাহিনী হয়ে থাকার!’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ছায়াকেও ভয় পেতেন খুনিরা: তথ্যমন্ত্রী
শুক্রবার (১১ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত 'বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘তারেক রহমান যতদিন নির্বাচন করতে না পারবেন, ততদিন বিএনপির কেউ ইউনিয়ন মেম্বার নির্বাচনও করতে পারবেন না-এটিই এখন তাদের নীতি। বিএনপিকে বলব-গণতন্ত্রের পথে হাঁটলেই তাদের লাভ। তাদের সিনিয়র নেতাদের বলব, আর কতদিন আপনারা চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন?’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এ সময় বলেন, 'বিএনপি দেখতে পেল, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি বিদেশিরা কোনো সমর্থন জানালো না এবং তারা যা চেয়েছিল তার কিছুই হচ্ছে না। এখন তারা ভিন্ন সুরে কথা বলা শুরু করেছে। এখন তারা বলছে, ভারত কী বলল তাতে কিছু আসে-যায় না, যুক্তরাষ্ট্র বা ইইউ কী বলল তাতেও কিছু যায়-আসে না।'
হাছান মাহমুদ বলেন, 'এই দেশ বাংলাদেশের মানুষের, অন্য কারও নয়। যদি যেতে হয়, জনগণের কাছে যেতে হবে।'
এর আগে বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী বঙ্গমাতা ও তাদের পরিবারের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান অসামান্য।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন, তখন বঙ্গমাতা দল এবং সংসার দুটোই সামলেছেন।’
আরও পড়ুন: পান্না কায়সারের প্রয়াণ বাঙালির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি: তথ্যমন্ত্রী
আ. লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে অসাধ্য সাধন করতে পারে: তথ্যমন্ত্রী