রাজনীতি
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে খালেদা জিয়ার যোগদানের প্রশ্নই আসে না: বিএনপি
১০ ডিসেম্বর রাজধানীর বহুল আলোচিত সমাবেশে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়ে কিছু বিরোধী নেতার উগ্র মন্তব্যে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও, বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, প্রোগ্রামে তাকে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।
তারা আরও বলেন, রাজধানীতে তাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ বিএনপির অন্যান্য ৯টি বিভাগীয় কর্মসূচির মতো যেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিবেন এবং দলের পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন।
তবে দলের নেতারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, তারা যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চান। কারণ তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার এবং ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচির পর সরকারের পদত্যাগের দাবি আদায়ে আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবেন।
আরও পড়ুন: আইজিপির কাছে ‘গায়েবী’ মামলার প্রতিকার চাইল বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের ঢাকার সমাবেশ নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। এটি অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো। আমি জানি না কেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এবং কিছু মিডিয়া আমাদের চেয়ারপার্সনের সমাবেশে অংশগ্রহণের কথা বলছে। আমাদের স্থায়ী কমিটি কখনই এই বিষয়ে আলোচনা করেনি এবং আমাদের এমন কোনো পরিকল্পনাও ছিল না।’
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তারা তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন।
তিনি বলেন, কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করে তাদের আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে মোড় নেয়ার কোনো সুযোগ তারা দেবেন না। আমরা আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দেব না, কোনো বিবেকহীন পদক্ষেপ নেব না।গত ৮ অক্টোবর ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশ পরিচালনার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে।
দুই দিন পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, খালেদা জিয়া ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগ দেবেন এবং পরে দলের আরও কিছু নিম্ন-স্তরের নেতা আমান ও ফারুকের মতোই কথা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা অবশ্য বলেছেন, খালেদাকে নিয়ে আমান ও ফারুকের বক্তব্য তাদের ব্যক্তিগত মতামত।এমন জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শর্তসাপেক্ষে সাময়িকভাবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া খালেদা ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগ দিলে আদালত ব্যবস্থা নেবে।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে মুক্ত করা হয়েছে। কারণ তার পরিবার একটি আবেদন জমা দিয়েছে যে তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন বলে তিনি চলাচল করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এখন যদি ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশে যোগ দেন, তাহলে প্রমাণ হবে যে তার পরিবারের আবেদনে যা লেখা ছিল তা মিথ্যা ছিল।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদাকে ছয় মাসের জন্য কারাগার থেকে মুক্তি দেয়।
দুর্নীতির দুই মামলায় জেল থেকে তার শর্তসাপেক্ষে মুক্তির মেয়াদ কয়েকবার বাড়িয়েছে সরকার। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন ৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপার্সন।
২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক জনসভার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি। ইতোমধ্যে আটটি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে এবং নবম সমাবেশ শনিবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে বিশাল জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করবে বিএনপি।
দলটি নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সরকার।জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ঢাকার জনসভায় খালেদার অংশগ্রহণ গণমাধ্যম ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘আমাদের দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ এ বিষয়ে কথা বলেননি।’
লাখো মানুষের অংশগ্রহণে সমাবেশ সফল করতে তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। ‘এটি অবশ্যই একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। আমাদের কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সব ধরনের চক্রান্ত ও উসকানি সম্পর্কে সতর্ক থাকব আমরা।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের অংশ হিসেবে জনসভায় খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করে মন্তব্য করছেন।
‘ম্যাডাম (খালেদা) গৃহবন্দি এবং তিনি খুব অসুস্থ। আমরা কখনই বলিনি যে সে আমাদের প্রোগ্রামে অংশ নেবে। কিন্তু সরকার এই ইস্যুতে খারাপ খেলা খেলছে।’
‘আমরাও রাজধানীতে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করব এবং তারপর বাড়ি ফিরব। আমাদের অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই।’বৃহস্পতিবার পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতা বলেন, নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে তারা তাকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর। কোনো ভেন্যু নিয়ে আমাদের অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই।’
আরও পড়ুন: খোলা মাঠ থাকতেও কেন সড়কে সমাবেশ: বিএনপিকে জয়ের প্রশ্ন
না’গঞ্জে বিএনপি-জামাত-গণঅধিকারের ১৯৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
খোলা মাঠ থাকতেও কেন সড়কে সমাবেশ: বিএনপিকে জয়ের প্রশ্ন
বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনের সড়ককে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের স্থান হিসেবে পছন্দ করার বিষয়টির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, সড়কটি দখল করলে সীমাহীন যানজট ও নগরবাসীর অপরিসীম ভোগান্তির কারণ হবে।
তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টে তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাঠে সমাবেশের আয়োজনের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনা করেন।
আরও পড়ুন: ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবির মাধ্যমে চূড়ান্ত স্বাধীনতার বীজ বোনা হয়: জয়
তাদের অভিপ্রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি মন্তব্য করেন যে এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো সরু সড়কে বেশী লোকের সমাগম দেখানো।
ওই পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘দলীয় কর্মীদের নিয়ে রাস্তায় বসে আর না উঠার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। ২০১৪-২০১৫ সালের মতো লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে দেশে আবারও জ্বালাও-পোড়াও করতে চায়।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পুলিশ পক্ষ থেকে তাদের প্রস্তাব করা হয়েছে যে যেহেতু বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি তাই সোহরাওয়ার্দী মাঠ তাদের জন্য ভালো হবে। আওয়ামী লীগ সেখানে নিয়মিত সমাবেশ করে। একই সঙ্গে নগরীর মানুষ ব্যাপক যানজট থেকে মুক্তি পাবে।’
তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, ‘রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তায় ফেলে বাংলাদেশের জনবিচ্ছিন্ন দল বিএনপির অপরাজনীতি বন্ধ হোক।’
আরও পড়ুন: ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠনের পর হত্যাকাণ্ড চালাতে জঙ্গিদের ভাড়া করে: জয়
মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি: জয়
মিছিল নিয়ে রাজশাহীর সমাবেশে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন
আগামী কালের গণসমাবেশকে কেন্দ্র রাজশাহীতে বিএনপির নেতাকর্মীরা দুই দিন আগে থেকেই আসতে শুরু করেছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বুধবার রাত থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা যে যার মতো সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন। সমাবেশের পাশে ঈদগাহ মাঠে শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছেন তারা। সমাবেশস্থলে ঢুকতে পুলিশের বাধা থাকায় পাশেই ঈদগাহ মাঠে নেতকর্মিরা অবস্থান নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন জেলে উপজেলা থেকে নেতা কর্মিরা মিছিল নিয়ে নগরীতে প্রবেশ করে। সিএনজি, অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপ ভাড়া করে, ট্রেনে করে, কেউ পাঁয়ে হেটে মিছিল নিয়ে রাতেই সমাবেশস্থলে পৌঁছেন।
রাজশাহীর ঈদগাহ মাঠে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা ত্রিপল বিছিয়ে ছাময়ানা টাঙ্গিয়ে শুয়ে রাত কাটিয়েছেন। এক পাশে চলছে রান্নার কাজ।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা থেকে গতকাল সমাবেশস্থলে এসেছেন ষাটোর্ধ তবিবুর রহমান।
তিনি জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সিএনজি, অটোরিকশা, পায়ে হেঁটে পুলিশের বাধা পেরিয়ে রাজশাহী আসতে সময় লেগেছে ১২ ঘন্টা। এখানে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সরকারে অনিয়মের প্রতিবাদ করতেই অনেক দূর থেকে কষ্ট করে গনসমাবেশে এসেছেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশের পূর্বে পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তি
রওশন এরশাদের সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এবং জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় গুলশানের একটি হোটেলে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি না দিলে সংসদে যাবে না জাপা
সাক্ষাৎকালে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন। এসময় বিরোধীদলীয় নেতা চীনের সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য রাহগির আল মাহি (সাদ) এরশাদ এবং বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরেছেন রওশন এরশাদ, জাপায় ঐক্যের ডাক
আইজিপির কাছে ‘গায়েবী’ মামলার প্রতিকার চাইল বিএনপি
দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা নতুন ‘গায়েবী’ মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএনপি।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলুর নেতৃত্বে বিএনপির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি’র সঙ্গে দেখা করে এবং এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি চিঠিও তাকে হস্তান্তর করে।
বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি দলটি দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা এবং ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে দলের পরিকল্পিত সমাবেশ নিয়ে আইজিপির সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন:ফরিদপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পাঁয়তারার অভিযোগ
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বুলু বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বোমা নিক্ষেপ করে গায়েবী মামলা করছে। ‘আমাদের লোকজনকে গায়েবী মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাই আমরা
আমাদের মহাসচিবের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আইজিপির কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছি।’
তিনি জানান, তারা আইজিপিকে আরও বলেছেন যে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং গায়েবী মামলায় গ্রেপ্তারের জন্য তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ‘আমরা এর একটি প্রতিকার চেয়েছি এবং তিনি আমাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।’
বিএনপি নেতা বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও তাদের দলের ৫০ নেতাকর্মীকে হাইকোর্টের গেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢাকার জনসভায় যোগদানের আহ্বান জানিয়ে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে নরসিংদীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবী’ মামলা করা হয়েছে। ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানালে আমরা বোমা ফাটাবো কেন?
বিএনপি মহাসচিবের চিঠি দিয়ে বুলু বলেন, ২২ আগস্ট থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় হাজার ৭২৩ জনের নাম উল্লেখ ও ১৫ হাজার ৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৬৯টি গায়েবী মামলার তালিকা আইজিপিকে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিন: ফখরুল
এছাড়া গ্রেপ্তার ৫৫৯ বিএনপি নেতাকর্মীর তালিকাও পুলিশ প্রধানের কাছে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা সমাবেশের বিষয়টি তুলে ধরেন। ‘আমরা বলেছি নয়াপল্টনে সভা করতে চাই। আমরা ১৩ নভেম্বর এবং ২০ নভেম্বর নয়াপল্টন আমাদের সভাস্থলের জন্য দু’টি চিঠি (ডিএমপিতে) পাঠিয়েছিলাম। আমরা দ্বিতীয় কোনো ভেন্যু চাইনি।’
তিনি বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করার আহ্বান জানিয়ে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন। ‘আমরা বলেছি এটা আজ আমাদের বিষয় নয়...আমাদের স্থায়ী কমিটি এবং মহাসচিব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।’
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল।
বৈঠকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার(২৯ নভেম্বর) ২৬ শর্তে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ডিএমপি।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নয়াপল্টনে তাদের দল যাতে সমাবেশ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশের পূর্বে পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তি
ফরিদপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পাঁয়তারার অভিযোগ
ফরিদপুরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার পর উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের পাঁয়তারার অভিযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিএনপির আহ্বায়ক এএফএম কাইয়ুম ও সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তারা এ অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে নেতারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বুধবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের জুলুম, নির্যাতন এবং ভুয়া ও গায়েবি মামলার প্রতিবাদে সারা দেশে আহুত প্রতিবাদ সভার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম।
বিবৃতিতে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি মঞ্চে ওঠার আগে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা নিজেরা মাথায় পুলিশের মতো হেলমেট পরে বেপরোয়াভাবে ইট, পাটকেল, লাঠিসোঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সভায় অতর্কিতভাবে হামলা চালায়।
এ সময় তারা স্টেজের চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে সভা বানচাল করে দেয় এবং সভার ব্যানার পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়। এ সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বন্দুকের গুলি ছোড়ে, ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় এবং সভায় উপস্থিত নেতা কর্মীদের ওপর বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে।
এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ. এফ. এম. কাইয়ুম জঙ্গী ও মহানগর মহিলা দলের সভাপতির স্বামী ও বিএনপিকর্মী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এছাড়া এই আওয়ামী লীগের আক্রমণে ফরিদপুর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
এ সময় পুলিশ বিএনপির প্রায় ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে এবং ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেয়ার পরিকল্পনা করে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়ার পাঁয়তারা করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে সন্ধ্যায় আহতদের সমবেদনা জানাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম, বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক ও মহানগর মহিলা দলের সভাপতির বাড়িতে উপস্থিত হন।
নেতারা এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র প্রতিবাদ এবং গ্রেপ্তারদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ: আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বিএনপির প্রতিনিধি দল
১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলের সমাবেশের অনুমতি এবং দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কথা বলতে পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বিএনপির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলুর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি পুলিশ সদর দপ্তরে গেলে দুপুর ১টার দিকে বৈঠক শুরু হয়।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল।
আরও পড়ুন: ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিন: ফখরুল
ইউএনবি’র সঙ্গে আলাপকালে এ্যানি বলেন, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে তাদের দলকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে এবং সমাবেশের আগে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ করতে আইজিপিকে অনুরোধ করবেন।
এর আগে মঙ্গলবার ২৬ শর্তে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে পারে বিএনপি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে আ.লীগের ফাঁদে পা দিবে না বিএনপি: গয়েশ্বর
রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশের পূর্বে পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তি
বিএনপির গণসমাবেশের পূর্বে ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পরিবহন মালিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাত্রীরা দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরীতে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রাজশাহী বাস টার্মিনাল থেকে বিআরটিসির একটি বাস ছেড়ে গেলেও অন্যান্য বাস কাউন্টার বন্ধ পাওয়া গেছে।
নগরীর তালাইমারী মোড়ে পরিবহনের অপেক্ষায় থাকা আশরাফুল ইসলাম ইউএনবি সংবাদদাতাকে বলেন, নাটোর হয়ে বগুড়া যেতে তাকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমার মতো যাত্রীরা।’
আরও পড়ুন: রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু বৃহস্পতিবার
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউর হক টিটু বলেন, ধর্মঘট চলায় রাজশাহী থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি এবং অন্যান্য স্থান থেকে প্রবেশও করেনি।
নাটোরে সব ধরনের গণপরিবহনের উপস্থিতি খুবই কম, অন্যদিকে যাত্রীদের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
কিছু যাত্রীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটতে দেখা গেছে।
বুধবার রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের কার্যালয়ে যৌথসভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট পালন করছে।
তারা দাবি করেছেন যে বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই, কারণ তারা পূর্বেই তাদের দাবি পূরণের আল্টিমেটাম দিয়েছে।
গত ২৬ নভেম্বর বিভাগীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংহতি পরিষদ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দেয়।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাতিল এবং মহাসড়কে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অবৈধ থ্রি-হুইলার ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা ধর্মঘটের ডাক দেয়।
অন্যদিকে বুধবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আট শর্তে সমাবেশের অনুমতি দিলে সমাবেশস্থল মাদরাসা মাঠে জড়ো হতে শুরু করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশ আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস দুলু বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরা আজ থেকে সমাবেশস্থলে অবস্থান করবেন এবং সমাবেশ সফল করে বাড়ি ফিরবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় ও গুরুত্বপূর্ণ শহরে ধারাবাহিক সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা ছাড়া বিভিন্ন শহরে সব সমাবেশের আগে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দেন।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করবে বিএনপি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরে দেশজুড়ে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে পণ্য খালাস বন্ধ
রাজশাহীতে মালিকদের পরিবহন ধর্মঘটের ইঙ্গিত
রাজশাহীতে শনিবারের সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অনুমতির পর শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহী মহানগরীতে নবম বিভাগীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি।
আরএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম বুধবার ইউএনবিকে বলেন, রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে বিএনপির সমাবেশের অনুমোদন আটটি শর্তে দেয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে অনুমোদন ও শর্তগুলোর বিষয়ে জানানো হয়েছে।
এদিকে অন্তত ১৫ লাখ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ হবে বলে দাবি করছেন দলটির নেতারা।
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, আট শর্তে গণসমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশের দেয়া শর্তগুলো হলো-
১। মাদরাসা ময়দান চত্বরের মধ্যে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমাবেত হওয়া এবং যান ও জন চলাচলে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য সমাবেশে আগতদের চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে।
২। দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব ও সমাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কার্যকলাপ এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
৩। সমাবেশে আসা-যাওয়অর পথে শোভাযাত্রা ও মিছিল করাসহ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এরূপ কার্মকাণ্ড করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ও পতাকাতে কোনো লাঠি-সোঠা ও রড ব্যবহার করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে আ.লীগের ফাঁদে পা দিবে না বিএনপি: গয়েশ্বর
৪। আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
৫। আগামী ৩ ডিসেম্বর সমাবেশ শুরুর পূর্বে সমাবেশস্থলে প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবে না। সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম ওইদিন দুপুর ২ টা থেকে শুরু করে ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। সমাগত নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বা আয়োজকদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশস্থলের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর/মাইক/সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করা যাবে না।
৭। যানবাহন শহরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। পার্কিং এর জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনো পার্কিং করা যাবে না।
৮। এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
এদিকে, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে বিভিন্ন জেলায় দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করে পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। বুধবার দুপুরে মহানগরীর মালোপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আগামী ৩ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ বানচাল করতে কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়েছেন। বিভাগজুড়ে এ পর্যন্ত শতাধিক মামলা করা হয়েছে। তারপরও রাজশাহীতে দেশের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ হবে। অন্তত ১৫ লাখ নেতাকর্মী যোগ দেবেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণসমাবেশ কমিটির সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত রাতেই অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সমাবেশে যেন নেতাকর্মীরা আসতে না পারে সে জন্য ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে আগে থেকেই সমাবেশে আসতে চাইলে নেতকার্মীদের থাকার ব্যবস্থা করতে দেয়া হচ্ছে না। এর পরও যে কোন মূল্যে এই সমাবেশ সফল করা হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, বিএনপির নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও রাসিকের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপি নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন প্রমুখ।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে পারে বিএনপি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আপেক্ষিক স্বস্তির মধ্যেই কুমিল্লায় বিএনপির অষ্টম বিভাগীয় সমাবেশ শুরু
১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিন: ফখরুল
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি যাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নয়াপল্টনে তাদের সমাবেশ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা এক মাস আগে নয়াপল্টনে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিলাম। কোনো রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এর আগে এখানে বহু মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং, আমাদের চিঠি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন, কারণ আমরা এখানে আমাদের সমাবেশ করব। এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া আপনাদের দায়িত্ব।’
বুধবার এক সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে এই বিএনপি নেতা আশ্বস্ত করেন যে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোট ও অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করবেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের বিরোধিতার বিষয়ে ফখরুল বলেন, চারিদিক দেয়াল ঘেরা অনুষ্ঠানস্থলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে তাদের দল স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। ‘এখানে থেকে সহজে প্রবেশ করার এবং বেরিয়ে আসার কোন রাস্তা নেই। একটি মাত্র গেট আছে, যেখান দিয়ে দু-একজন লোক ঢুকতে পারে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতাদের কারাগারে রেখে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার: ফখরুল
এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাদের দলকে শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
অন্যথায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এই বিএনপি নেতা।
দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখা।
এর আগে মঙ্গলবার ২৬ শর্তে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
মিথ্যা মামলা বন্ধ করুন
ফখরুল বলেন, নয়াপল্টনে জনসভা হলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হবে বলে সরকার খোঁড়া অজুহাত দেখাচ্ছে। ‘শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় এ ধরনের কোনো যানজটের সৃষ্টি হবে না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, দেয়ালে লেখা ও জনগণের চোখের ভাষা বুঝতে চায় না বলেই সরকার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
এর পরিণতি বিবেচনা করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা করা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এখন জনগণও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই বানোয়াট মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার বন্ধ করে জনগণের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চলতে দিন।
আরও পড়ুন: তুলনামূলক সহজ পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির কুমিল্লা সমাবেশ
ঢাকা সমাবেশ চ্যালেঞ্জ
এই বিএনপি নেতা বলেন, ১০ ডিসেম্বরের জনসভা সফল করা ঢাকাবাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ।
ফখরুল বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের জনগণ নতুন আশা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটি (১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ) ঢাকা ও এই বিভাগের জনগণের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ইনশাআল্লাহ সমাবেশ সফল হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার অকারণে বিএনপির সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। ‘এটা আপনাদের (সরকার) জন্য মোটেও ভালো হবে না। আপনারা পথ খোলা রাখছেন না। আমি আবারও আপনাদেরকে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলছি।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য সর্বস্তরের মানুষ এতে যুক্ত হওয়ায় বর্তমান আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, সারা দেশের মানুষের সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, সরকার ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, গোটা দেশ ও এর সব সেক্টরকে ধ্বংস করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন: ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে আ.লীগের ফাঁদে পা দিবে না বিএনপি: গয়েশ্বর