%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A6%BE
সয়াবিন লিটারে কমল ৫ টাকা, কার্যকর রবিবার
সরকার ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়েছে। লিটার প্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৯২ টাকা থেকে ১৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী রবিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে তেলের নতুন দাম কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণন কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিভিওআরবিএমএ) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
নতুন দর অনুযায়ী খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৭ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৮৭ টাকা। ৫ লিটারের বোতল সয়াবিন তেলের দাম ৯০৬ টাকা এবং পাম তেলের প্রতি লিটার ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য লিটার প্রতি ১৭২ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৯২৫ টাকা। এছাড়া পাম তেলের দাম লিটার প্রতি ১২১ টাকা।
রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এলসি জিরো মার্জিন অথবা নূন্যতম মার্জিন করা হয়েছে। পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাস পর সেই পণ্যের বকেয়া পরিশোধ করতে পারবেন।
এছাড়া এলসি ওপেনের কারণে অন্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বাংলাদেশকে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর ডায়াবেটিক সমিতির উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করে সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে আমদানি নির্ভর পণ্য ডাল, তেল, চিনি এগুলোর দাম কিছুটা বেড়েছে। কারণ বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বেশি। তবে দেশে কৃষিজাত পণ্যের দাম কম রয়েছে। দুই-তিন মাস এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে। এছাড়া দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তাই যতদিন পর্যন্ত প্রয়োজন ততদিন টিসিবি’র মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দেয়া হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে রেমিট্যান্সের টাকা কম দেয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। সে হিসাবে ডলারের মূল্য ধরে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাই অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে মুদ্রাস্ফীতি কম রয়েছে। এছাড়া আমদানি ব্যয় কমাতে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাশ্রয়ী হতে বলেছেন।
বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের শতকরা ৪০ ভাগ বিদ্যুত খরচ কম হয়েছে। বর্তমানে আমদানি ও রপ্তানি সূচকের মধ্যে পার্থক্য কমে এসেছে।
বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমিয়ে ডলার সাশ্রয় করা হচ্ছে।
দেশের চলমান রাজনীতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি আন্দোলন করবে এটা তাদের অধিকার। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের শেষ কথা।
রাজপথে থেকে কেউ কাউকে ক্ষমতা থেকে উঠিয়ে দেবে, এটা সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ করা উচিত।
পরে বাণিজ্যমন্ত্রী ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং পীরগাছা উপজেলায় তাম্বুলপুর ইউনিয়নে তাফসিল মাহফিলে যোগদান করেন।
আরও পড়ুন: রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
ইতালির সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ আছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
চাল, গম আমদানি: ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম এলসি মার্জিন রাখতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাজারদর সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ব্যাংকগুলোকে চাল ও গম আমদানিতে ন্যূনতম এলসি মার্জিন (নগদ অগ্রিম) রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধান ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আজ তা সব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
সার্কুলারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম স্তরে এলসি মার্জিন রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দিন, চাল ও খাদ্য সামগ্রী নিন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ বর্জ্যমুক্ত করতে বিদ্যানন্দের উদ্যোগ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের কারণে চাল, গম এবং ফসলের দাম ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখছে। ফলস্বরূপ, বিশ্বব্যাপী পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে, যা স্থানীয় বাজারে দামকে প্রভাবিত করে।’
চাল ও গমের আমদানি ও সরবরাহ চ্যানেল স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম এলসি মার্জিন রাখতে বলেছে।
রমজান মাসে তাদের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলার সময় আমদানিকারকদের কাছ থেকে ন্যূনতম নগদ অগ্রিম নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নির্দেশ দিয়েছে।
রমজানে সাধারণত ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, মশলা ও খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: রমজানে পণ্যের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে এলসি মার্জিন কমানো হয়েছে
বিদেশি মুদ্রা আদায়ে এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
রমজানের পণ্য আমদানি এলসির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
আসন্ন রমজানে ভোগপণ্যের চাহিদা মেটাতে ৮টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ‘ব্যবহারের মেয়াদ’ (সরবরাহকারী/ক্রেতাদের জন্য) ঋণ অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এই পণ্যগুলোর সরবরাহকারী/ক্রেতাদের জন্য ৯০ দিনের ক্রেডিট সুবিধার বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য একটি সার্কুলার জারি করেছে।
এই সুবিধাটি ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানি করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য থাকবে।
এটা এমন এক ধরনের এলসি ব্যবস্থা, যেখানে ইস্যুকারী ব্যাংক আমদানিকারকের জন্য অর্থায়ন করে। আমদানিকারক ফরোয়ার্ড পেমেন্ট করে এবং যেখানে রপ্তানিকারক ডিসকাউন্টিংয়ের জন্য দায়বদ্ধ উত্তোলনকারী ব্যাংক থেকে পাওনা সংগ্রহ করে।
ফলে ব্যবসায়ীরা সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ৯০ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধের চুক্তিতে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর আমদানির সুযোগ পান।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর এসব পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আমদানি এলসি খোলার জন্য নগদ মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে বিবি’র পর্যবেক্ষক
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের জন্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
জামানত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই ঋণ অনুমোদনের খবর প্রকাশের পর সোমবার এ সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিবি)। দুটি ব্যাংকই চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন।
বিবি’র মুখপাত্র মাজবাউল হক ইউএনবিকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী দুই ব্যাংককে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশাবলী অনুসরণ করা হচ্ছে কি না পর্যবেক্ষকরা তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক আবুল কালামকে ইসলামী ব্যাংকের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। আর পেমেন্ট সার্ভিস বিভাগের পরিচালক মোতাসিম বিল্লাহকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৩ ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ ‘কেলেঙ্কারি’: জড়িতদের তালিকা চান হাইকোর্ট
এর আগে ঋণ অনিয়ম ও জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বিবি।
এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ব্যাংকের বিভিন্ন সভায় যোগ দিতে থাকেন। ২০১৭ সালে, ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল যখন বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষণে ছিল।
এরপর ২০২০ সালের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষককে সরিয়ে দেয়। তৎকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষককে অপসারণের অনুমোদন দেন।
এখন আবার প্রশ্ন উঠেছে বিশাল ঋণ অনিয়মের।
ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ অনিয়ম সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের চেয়েও ভয়াবহ বলে মনে করেন ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: ৩ ইসলামী ব্যাংকের কেলেঙ্কারি তদন্ত করবে দুদক
৫ ইসলামী ব্যাংকে তারল্য সংকটে ৪০০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
রমজানে পণ্যের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে এলসি মার্জিন কমানো হয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) রমজানে স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ন্যূনতম মার্জিনে ব্যাংকগুলোকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে বলেছে।
রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধান ও নীতি বিভাগ এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে তাৎক্ষণিকভাবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
রমজান মাসে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মশলা, চিনি ও খেজুরের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি নির্দেশনা জারি করেছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পণ্যের আমদানি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) এর জন্য নগদ মার্জিনের হার সংরক্ষিত থাকবে।
সম্প্রতি বাণিজ্য সংস্থা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা এ নির্দেশনা জারি করেন। ব্যবসায়ী নেতারা তাদের সহজে এলসি খোলার অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি ৬৫ শতাংশ কমায় রপ্তানিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে: বিশেষজ্ঞরা
অভ্যন্তরীণ বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় আমদানি ঠেকাতে এলসি খোলার কড়াকড়ি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও পণ্যের এলসি মূল্য এবং তা নির্ধারিত সময়ে দেশে আসছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে। কারণ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বিবির তদন্তে দেখা যায়, আমদানির নামে কিছু ব্যবসায়ী অর্থ পাচার করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন মাসে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০০ শতাংশ করেছেন।
ফলস্বরূপ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওভার-ইনভয়েসিং এবং আন্ডার-ইনভয়েসিং থেকে রক্ষা করার জন্য এলসিগুলোতে কঠোর নজরদারি আরোপ করেছে।
আরও পড়ুন: এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে রিপোর্টের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
বিদেশি মুদ্রা আদায়ে এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বছরে দুবার মুদ্রানীতি: বিবি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বছরে দুইবার মুদ্রানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
সোমবার অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারিতে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন শুরু হবে বলে মঙ্গলবার ইউএনবিকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
‘আমরা দেশের অর্থনীতিবিদসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অর্থ সরবরাহ, রিজার্ভ কারেন্সি এবং সুদের হারসহ সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়েছে,’ তিনি যোগ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাসহ ১০ ভাষায় রেডিও সম্প্রচার বন্ধ করছে বিবিসি
হাবিবুর রহমান বলেন, অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে দুইবার মুদ্রানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে, সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বছরে একবার মুদ্রানীতি প্রণয়নের ঘোষণা দেন।
সে অনুযায়ী তিনি ওই বছরের ৩১ জুলাই ২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী অর্থবছর ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২-এ শুধুমাত্র একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে বছরে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষণার সুপারিশ করেছে।
কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। আর পরিসংখ্যান ব্যুরো বছরে দুবার এই তথ্য প্রকাশ করে। ফলে বছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানুয়ারিতে আর্থিক বছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন: মানি চেঞ্জাররা নগদ ২৫ হাজার ডলারের বেশি রাখতে পারবে না: বিবি
ব্যাংকগুলোকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এসিইউ লেনদেন বন্ধের নির্দেশ বিবি’র
এডিবি’র ১ বিলিয়ন: আলোচনার জন্য রাতে ঢাকায় আসছেন লাভাসা
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, বাজেট বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস-প্রেসিডেন্ট অশোক লাভাসা মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আসবেন।
প্রাইভেট সেক্টর অপারেশনস এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ইনচার্জ লাভাসা, তার সপ্তাহব্যাপী সফরে পরিকল্পনামন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন।
এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ব্যয়সহ অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা করবেন।
আরও পড়ুন: ঋণ পেতে আইএমএফের শর্ত মেনে কাজ করছে সরকার
এর আগে বাজেট সহায়তার জন্য ইআরডি এডিবিকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব পাঠিয়েছিল।
এডিবি’র ঢাকা কার্যালয় লাভাসার সফরের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
ঋণ প্রস্তাব ছাড়াও এডিবির সহায়তায় দেশে চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও আলোচনায় থাকবে।
এডিবি’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবেন।
এছাড়াও তিনি এডিবি-এর অর্থায়নে তৈরি পোশাক কারখানা এবং একটি বেসরকারি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা পরিদর্শন করবেন।
এর আগে আইএমএফ এবং বাংলাদেশ সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে। চূড়ান্ত হলে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে। এছাড়া বাজেট সহায়তা ঋণ হিসাবে বিশ্বব্যাংক থেকে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া যাবে। সম্প্রতি এ দুই সংস্থার প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ইউএনবিকে বলেন, ‘অন্যান্য দাতা সংস্থার তুলনায় এডিবি আমাদের ঋণের বড় অংশ দিয়েছে। আমি তাদের কাছে বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ চেয়েছি এবং প্রক্রিয়া চলছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ঋণ দেয়ার আগে এডিবি দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো পরীক্ষা করবে। কিছু শর্তও দেবে। এই ঋণের বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত ইতিবাচক।’
এডিবি’র ঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সংস্থাটি কখনোই বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ সহায়তা দেয়নি। কিন্তু কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এডিবি এ খাতে ঋণ সহায়তা দেয়া শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: ৩ ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ ‘কেলেঙ্কারি’: জড়িতদের তালিকা চান হাইকোর্ট
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ
নভেম্বরে বাংলাদেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৮.৮৫ শতাংশ
বাংলাদেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার নভেম্বরে শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশ কমে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ হয়েছে। এতে গত তিন মাসে ধারাবাহিক মূল্যস্ফীতির হার কমেছে।
বিগত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে গত এক দশকে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত দুই মাসে এর থেকে কমেছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।
আরও পড়ুন: সহিংসতায় দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না: পরিকল্পনামন্ত্রী
সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম স্বাভাবিক হওয়া, টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকিযুক্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ জোরদার করা ও শীতকালীন শাকসবজির উদ্বৃত্তের কারণে মূলতবাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) তথ্যে দেখা গেছে যে নভেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ও অন্যান্য মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ১৪ ও ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। যা অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৫০ ও ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
তবে, নভেম্বরে গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশে, যা অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।
শহরাঞ্চলে সাধারণ মুদ্রাস্ফীতি ৮ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: অক্টোবরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে ৮.৯১%
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি: আগস্টে ৯.৫% শতাংশ, ১২ বছরে সর্বোচ্চ
চাঁদপুরে ৩৯টি লবণ মিলই বন্ধ, বেকার হাজারো দিনমজুর
চাঁদপুর জেলার বিখ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র পুরানবাজার সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই কর্মাশিয়াল হাব হিসেবে খ্যাত। এর পাশেই নৌ, সড়ক ও রেলপথ থাকায় ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার লাভ করেছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা এখানে লেনদেন হয়। এখান থেকে পাইকারি দরে লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে জেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাণিজ্য করছেন।
এক সময়ে লবণ শিল্প ও লবণ ব্যবসা ছিল জমজমাট। সারাদিনই গম-গম আওয়াজ হতো এসব মিল কারখানায়। প্রতিদিন শত শত দিনমজুর জীবিকা করতো এসব মিলে কাজ করে। এখানে নদীর পাড়ে পাড়ে ৪০টি লবণ মিলে প্রতিদিন টনে টনে লবন উৎপাদন হতো আর প্যাকেটজাত করে পাঠানো হতো জেলা ও জেলার বাইরে শরিয়তপুর, ডামুডা, সুরেশ্বর, মতলব, গজারিয়া, ষাটনলসহ দূর দুরান্তের বিভিন্ন বাজারে নৌপথ ও সড়কের যানবাহনে।
কিন্তু কালের চক্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন রাজধানীসহ বড় নগরীতে বড় বড় শিল্প কারখানায় আরও উন্নত প্যাকে উন্নতমানের রিফাইন্ড লবণ জেলা উপজেলার হাট-বাজারে ও দোকানের দ্বারপ্রান্তে নিজস্ব যানবাহনে পৌঁছে দেয়ায় পুরানবাজারের এ লবণ ব্যবসায় নেমেছে ব্যাপক ধস। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে সব মিল ও লবণ ব্যবসা। এটা গত এক দশকের দৃশ্য–জানান ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই, বলছে বিএবি
বেকার হয়ে গেছে হাজারো দিন মজুর। প্রতিটি মিলে কাজ করতো একশ’ বা তার কিছু বেশি দিনমজুর। এখন এসব মিলগুলো পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। পুরানবাজারে ঘুরে ঘুরে দেখলাম এসব লবণ মিলগুলি এখন বন্ধ, তালা মারা, যেনো ভুতড়ে গলি।
মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় নদীর পাড়ে পুরানবাজারে জনতা সল্ট মিলের স্বত্বাধিকারী একে আজাদ ইউএনবিকে জানান- জেলার প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র পুরানবাজারে শুধু তার মিলটিই কোন রকমে টিকে আছে। পুরানবাজারে ৪০টি লবণ মিল ছিল। ব্যবসা ছিল জমজমাট। এখন ৩৯টি লবণ মিলই বন্ধ।
তিনি বলেন, ‘কমপিটিশন মার্কেটে, অনেক কষ্ট হচ্ছে টিকে থাকতে। শতাধিক দিনমজুর এখানে কাজ করছেন। দুই ধরনের লবণ এখানে উৎপাদন হয়। আমাদের জন্য আয়োডিনযুক্ত লবণ আর গো-খাদ্যের জন্য সাধারণ লবণ।
দিনমজুর হারুনর রশীদ, বাবুল মিয়া, বশির গাজীসহ অনেকেই জানান, আগে শত শত দিনমজুর ৩৯টি মিলে কাজ করতো। কত ব্যস্ত ছিল লবণ মিল এলাকাগুলো! র্দীঘনি:শ্বাস ফেলে এক লবণ শ্রমিক বললেন, ‘কোথায় গেলো সেই দিনগুলো! বেকার সব দিনমজুররা এখানে সেখানে কাজ করছে। কেউ কেউ না ফেরার দেশেও চলে গেছে।
কথা হলো প্রবীণ লবণ ব্যবসায়ী ও পুরানবাজারে অবস্থিত চাঁদপুর চেম্বার অব কর্মার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি আলহাজ্ব জাহাংগীর আখন্দ সেলিমের (৭৫) সঙ্গে। একান্ত আলাপনে তিনি বলেন, পুরানবাজার নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা হওয়ার কারণে, কাঁচামালের তীব্র সংকট, ব্যাংক লোন না দেয়া /না পাওয়া ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে চেষ্টা থাকা সত্বেও ব্যবসায়ীরা লবণ ব্যবসায় এগুতে পারেনি। তাছাড়া, কাংখিত লাভও হচ্ছিল না। উর্পযুপরি লস/ লোকসান হচ্ছিল। হতাশ ও নিরাশ হয়ে লবণ ব্যবসায়ীরা একে একে তাদের লবণের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে থাকেন। ফলে গত ৮/১০ বছরে লবণ শিল্প ও কারখানাগুলিতে তালা ঝুলছে। বেকার হয়ে গেছে হাজারো দিনমজুর। এরা আর সুদিন দেখবে বলে মনে হচ্ছে না। এসব লবণ মিল এখন পরিত্যক্ত বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার কবে লবণ শিল্প সমৃদ্ধ হবে বা আদৌ লবণ মিলগুলো আবার চালু হবে কি না-তা কেউ জানে না। এমনকি তাঁর নিজের লবণ মিলও বন্ধ ও পরিত্যক্ত।
আরও পড়ুন: ঋণ পেতে আইএমএফের শর্ত মেনে কাজ করছে সরকার
আরও ২০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিতে চিঠি