%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC
জিম্মিদের ওপর যৌন সহিংসতা ইসরায়েলের হামলার বৈধতা দেয় না: জাতিসংঘ দূত
সংঘাতের সময় যৌন সহিংসতার বিষয় তুলে ধরে জাতিসংঘের দূত ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় অপহৃত হওয়া জিম্মিরা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন এমন ‘স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ পাওয়া গেলেও পরবর্তীকালে চালিয়ে যাওয়া হামলাকে এটি বৈধতা দেয় না।
সোমবার প্রমিলা প্যাটেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, গাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অকথ্য দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে এবং সমস্ত জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জন্য একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি নৈতিকভাবে অপরিহার্য।
এ সময় অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: গাজা ও সুদানে রমজান মাসে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
প্রমিলা আরও বলেন, ‘হামলা চালিয়ে যাওয়া, কোনোভাবেই, তাদের রক্ষা করতে পারে না। এটি যৌন সহিংসতাসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঝুঁকির পথ তৈরি করে দেয়।’
ইসরায়েলের আহ্বানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ডাকা এক কাউন্সিলের বৈঠকে প্যাটেন তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। যেখানে জানা যায়, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলাকালে হামাস ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন এবং নারীদের বিরুদ্ধে অন্যান্য নিষ্ঠুর ও অমানবিক কাজ করেছে এমন প্রমাণ মিলেছে। এ সময় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত ও ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
এখনও ১৩৪ জিম্মি বন্দি এবং গাজার ২ মিলিয়নেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক অসহায় অবস্থায় রয়েছে। তাদের স্বার্থে এখনই যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান আক্রমণে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ইসরায়েলি সমাজকে প্রতিরোধ ও ভয় দেখানোর জন্য হামাসের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব উচ্চস্বরে প্রতিবাদ জানাতে তিনি পরিষদে এসেছিলেন।
হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে ৭ অক্টোবর থেকে ৪০টিরও বেশি বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্থার উচিত চরমপন্থী গোষ্ঠীটিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা এবং অবিলম্বে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া।’
সোমবার মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে উল্লেখ করে কাটজ রমজানের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাকে আমাদের মুসলিম ভাইদের শুভেচ্ছা জানাতে সুযোগ দিন।’
কাটজ বলেন, হামাস মুসলিম বিশ্বের পক্ষে কথা বলছে না। মুসলিম ধর্মের নামে যে যৌন সহিংস অপরাধ তারা করেছে এর নিন্দা জানানো উচিত।
কাউন্সিলে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘সারা বিশ্বের মুসলমানরা রমজান পালন করছে কিন্তু গাজার সর্বত্র মৃত্যু ও দুর্ভোগ। খাদ্য ও আশা কোথাও পাওয়া যাবে না।’
তিনি কাউন্সিলকে বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চান না কারণ তার ‘রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য আক্রমণ চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে দিয়ে আমাদের জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে রাখা ইসরায়েলের উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
প্যাটেনের প্রতিবেদনে এক সপ্তাহের মধ্যে সভা ডেকে নিরাপত্তা পরিষদ যে ‘নজিরবিহীন’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষদের ওপর যৌন নিপীড়নের প্রতিবেদনেও সমানভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্যাটেনের মূল সুপারিশ হলো হামাসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান এবং স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রবেশাধিকার দিতে ইসরায়েলকে উৎসাহিত করা।
ফিলিস্তিনিরা এই তদন্তকে স্বাগত জানাবে উল্লেখ করে মনসুর ইসরাইলকেও তদন্তে স্বাগত জানানোর আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করতে প্যাটেনকে গাজা পরিদর্শন করতে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
বৈঠকে প্যাটেন কাউন্সিলকে বলেন, পশ্চিম তীরে তিনি ধর্ষণের কোনো তথ্য না পেলেও ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ আটকের সময় যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছেন।
প্রতিবেদনগুলো ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করেছেন জানিয়ে প্যাটেন বলেন, এসব কাজ প্রতিরোধের জন্য যারা তথ্য দিয়েছিলেন তারা অন্যান্য অভিযোগ লঙ্ঘনের তদন্ত করতেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, কিছু ‘রাজনৈতিক অভিনেতা’র দেয়া প্রতিবেদনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেসব অভিযোগগুলোর তদন্তের অনুমতি ছিল না বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি প্রত্যাখান জানিয়েছিলেন তারা।
আরও পড়ুন: উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জাতিসংঘ প্রধানের
মুসলিমদের বাদ রেখেই নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা ভারতের
ভারতে মুসলিমদের বাদ রেখেই ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নের জন্য বিধি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার।
সোমবার (১১ মার্চ) আসন্ন ভোটের কয়েক সপ্তাহ আগে তৃতীয় মেয়াদে দেশটির ক্ষমতায় যাওয়ার সময় এই ঘোষণা দেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে আসা হিন্দু, পার্সি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এই আইনে মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে, যারা উল্লেখিত তিনটি দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আইনটি ভারতের সংসদে ২০১৯ সালে অনুমোদিত হলেও রাজধানী নয়াদিল্লিসহ অন্যান্য স্থানে প্রাণঘাতী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মোদি সরকার এর বাস্তবায়ন আটকে দেয়। সেসময় কয়েকদিনের চলা সংঘর্ষে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয়।
২০১৯ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভগুলো সব ধর্মের অনুসারীদের দৃষ্টিগোচর হয়। সে সময় তারা বলেছিল, আইনটি ধর্মনিরপেক্ষ জাতি হিসেবে ভারতের ভিত্তিকে দুর্বল করে। মুসলমানরা বিশেষত উদ্বিগ্ন ছিল, সরকার তাদের কোণঠাসা করার জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধকের সঙ্গে আইনটি ব্যবহার করতে পারে।
অবৈধভাবে ভারতে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত ও নির্মূল করতে মোদি সরকারের প্রচেষ্টার অংশ হচ্ছে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি)। নিবন্ধনটি কেবল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি দেশব্যাপী অনুরূপ নাগরিকত্ব যাচাইকরণ কর্মসূচি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৩ বাংলাদেশির ভাগ্য নির্ধারিত হতে যাচ্ছে ভারতের আদালতে
মোদির সরকার ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব আইনকে মানবিক পদক্ষেপ হিসেবে বহাল রেখেছে। তাদের যুক্তি, এই আইন শুধু নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। এটি ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক টুইট বার্তায় বলেন, 'এই নিয়মের আওতায় এখন থেকে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘুরা আমাদের দেশের নাগরিকত্ব পাবেন।’
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টি এই ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছে, 'নির্বাচনের মেরুকরণের জন্যই এর ঠিক আগের সময়টিতে এটি ঘোষণা স্পটতই পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে এই আইনটিকে 'বৈষম্যমূলক' বলে উল্লেখ করেছে।
সংস্থাটি বলেছে, ‘এটি সমতাভিত্তিক সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী।’
এতে আরও বলা হয়, আইনটি 'ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যকে বৈধতা দেয়' এবং 'এর কাঠামো ও উদ্দেশ্য বর্জনীয়'।
আরও পড়ুন: নোম্যান্সল্যান্ডে যৌথভাবে বাংলাদেশ-ভারতের ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ ভারতে ২০ কোটি মুসলমান রয়েছে, যারা বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। তারা ভারতের প্রায় প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ২০১৪ সালে মোদির দল প্রথম ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা ধারাবাহিক হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, মুসলিমবিরোধী সহিংসতার বিষয়ে মোদির স্পষ্ট নীরবতা তার কিছু চরমপন্থী সমর্থককে উৎসাহিত করেছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরও ঘৃণামূলক বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
মোদি এমন একটি ফর্মুলায় ক্রমান্বয়ে ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছেন যা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, তিনি উত্তর অযোধ্যায় একটি মসজিদকে ধ্বংস করে সেখানে রাম মন্দির উদ্বোধন করেন। যা তার দলের দীর্ঘদিনের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রতিফলন।
বেশিরভাগ জরিপ বলছে, আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে মোদি আবারও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবেন।
আরও পড়ুন: ভারতে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা রোধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ
অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডগামী উড়োজাহাজে ‘যান্ত্রিক ত্রুটির’ কারণে ৫০ জন আহত
সোমবার সিডনি থেকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডগামী চিলির একটি উড়োজাহাজে 'যাত্রিক ত্রুটির' কারণে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়কে ‘জোরালো আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
লাতাম এয়ারলাইন্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উড্ডয়নের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উড়োজাহাজে ‘জোরালো আন্দোলনের’ সৃষ্টি হয়।
তবে কী ঘটেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।
ফ্লাইটটি অকল্যান্ডে অবতরণ করলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সের একজন জানান, ৫০ জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। যাদের অধিকাংশই কম আঘাত পেয়েছেন। ১৩ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। একজন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: কানাডায় ৬ জনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
যাত্রীরা জানান, ফ্লাইটটি (এলএ ৮০০) হঠাৎ অবতরণ করার সময় অনেকেই সিটবেল্ট পরেননি।
বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারটি পূর্ব নির্ধারিত সময়ে অকল্যান্ড বিমানবন্দরে অবতরণ করে এবং চিলির সান্তিয়াগোতে যাওয়ার কথা ছিল।
এয়ারলাইনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাতাম এই পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং তার অপারেশনাল স্ট্যান্ডার্ডের কাঠামোর মধ্যে অগ্রাধিকার হিসেবে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে।
আরও পড়ুন: ভারতে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা রোধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ
গাজা ও সুদানে রমজান মাসে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার পবিত্র রমজান মাসে গাজা ও সুদানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সোমবার পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এই মাসে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা শান্তি, পুনর্মিলন এবং সংহতির মূল্যবোধ উদযাপন করেন ও এই বার্তা ছড়িয়ে দেন। তারপরও গাজায় হত্যা, বোমা হামলা ও রক্তপাত অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার (১১ মার্চ) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদ চেম্বারের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
সাংবাদিকদের জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আজ আমার জোরালো আহ্বান- বন্দুকের স্তব্ধতা, রমজানের চেতনাকে সম্মান জানানো এবং জীবন রক্ষাকারী সাহায্যের সরবরাহে সব ধরনের বাধা প্রত্যাহার।’
গুতেরেস বলেন, বেসামরিক নাগরিক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে তার বছরগুলোতে নজিরবিহীন। তবে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ আসছে, তা যদি আদৌ আসে!
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
তিনি সতর্ক করেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর রাফাহতে ইসরাইলি হামলার হুমকি গাজার জনগণকে নরকের আরও গভীর বৃত্তে ফেলে দিতে পারে।
গুতেরেস রমজানে সুদানেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা, বিভীষিকা এবং অবর্ণনীয় কষ্টের মুখোমুখি সুদানের জনগণের স্বার্থে সেখানে লড়াই অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
মহাসচিব বলেন, ‘গাজায়, সুদানে এবং অন্যনায় জায়গায় এখন শান্তির সময়। আমি সর্বত্র রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সম্প্রদায়ের নেতাদের এই পবিত্র সময়কে সহানুভূতি, কর্ম এবং শান্তির সময় হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের ক্ষমতার মধ্যে সবকিছু করার আহ্বান জানাই।’
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
সম্পাদিত পারিবারিক ছবির জন্য দুঃখ প্রকাশ কেটের
পারিবারিক ছবিতে সম্পাদনার কারণে সৃষ্ট ‘বিভ্রান্তি’র জন্য ক্ষমা চেয়েছেন প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে কেট জানান, অন্যান্য অপেশাদার চিত্রগ্রাহকদের মতেই তিনি ছবি সম্পাদনার বিষয়ে পরীক্ষা করেন।
পোস্টে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমরা যে পারিবারিক ছবি শেয়ার করেছি তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকলে তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’
মা দিবস উপলক্ষে কেনসিংটন প্রাসাদ তিন সন্তান জর্জ, শার্লট ও লুইয়ের সঙ্গে কেটের ওই ছবিটি প্রকাশ করেছিল যা পরে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থা প্রকাশ করে। ছবি সম্পাদনার বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর ওই ছবি প্রত্যাহার করে নেয় সংবাদ সংস্থাগুলো। এপির ছবি নীতিমালা অনুযায়ী, ছবি সম্পাদিত হয়েছে মনে হলে তা ব্যবহার করা নীতিমালা লঙ্ঘন করে।
প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে, ছবিটি প্রিন্স উইলিয়ামের তোলা।
প্রায় দুই মাস আগে তলপেটে অস্ত্রোপচারের পর এটি ছিল কেটের প্রথম অফিসিয়াল ছবি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তার অবস্থান নিয়ে বেশ জল্পনা চলছিল। সেসব জল্পনা বন্ধ করতে এই ছবি দিলেও এটি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সৌদি আরবে আজ রোজা শুরু
সৌদি আরবে রবিবার(১০ মার্চ) সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই আজ সোমবার (১১ মার্চ) পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে।
এর আগে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার আহ্বান জানিয়েছিল সৌদি আরব। খালি চোখে বা দূরবীন দিয়ে যারাই অর্ধচন্দ্র দেখবেন, তাঁদের নিকটস্থ আদালতে রিপোর্ট করতে এবং পর্যবেক্ষণ নথিভুক্ত করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ব্রুনাইসহ আরও কয়েকটি দেশ ১২ মার্চ থেকে রমজান মাস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ওমানও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ১২ মার্চ, মঙ্গলবার পবিত্র রমজান মাস শুরু করবে, কারণ রবিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা যায়নি।
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ৩০০ শিক্ষার্থী অপহরণ
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি বিদ্যালয় থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছে সশস্ত্র ইসলামিক চরমপন্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) কাদুনা রাজ্যের কুরিগা শহরের প্রত্যন্ত শহরের একটি বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সহিংস হত্যাকাণ্ড, অনাচার ও ছিনতাইপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ওই রাজ্যে অপহৃত হওয়া শিশুদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন ১২ বছর বা তার চেয়ে কমবয়সী।
কুরিগার এ ঘটনাটি উত্তর নাইজেরিয়ায় গত সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত তৃতীয় গণ-অপহরণের ঘটনা। এর আগে গত সপ্তাহে শনিবারে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য সোকোটোর একটি স্কুল থেকে ১৫ জন শিশুকে অপহরণ করা হয়। তারও আগে উত্তর-পূর্ব বোর্নো রাজ্যে ২০০ জনকে অপহরণ করা হয়।
বার্তাসংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কোনো গোষ্ঠী এখনো এই অপহরণের দায় স্বীকার করেনি। তবে ইসলামিক চরমপন্থীরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ চালাচ্ছে। তারা বোর্নোতে অপহরণ চালিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর বিদ্যালয়ে অপহরণের জন্য ওই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করা সম্প্রদায়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত পশুপালকদের দায়ী করেছে স্থানীয়রা।
নাইজেরিয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অপহরণের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৪ সালে ইসলামিক চরমপন্থীরা বোর্নোর চিবোক থেকে দু’শোর বেশি স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেছিল।
অপহরণের কথা স্মরণ করে এলইএ প্রাইমারি অ্যান্ড সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক নুরা আহমেদ এপিকে বলেন, সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেবলই শ্রেণিকক্ষে অবস্থান নিচ্ছিল সে সময় মোটরসাইকেলে করে এসে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে।
গত বছরে নাইজেরিয়া জুড়ে ৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি লোককে অপহরণ করা হয়। এমনকি রাজধানীতে বাড়ি থেকেও কয়েকজনকে অপহরণ করা হয়।
নাইজারের সঙ্গে দীর্ঘ ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার সীমান্তের অনেকটা জুড়ে সাভানা বনভূমি। এই পথে অস্ত্র পাচার করে সেসব অস্ত্র অপহরণের কাজে ব্যবহার করে ইসলামিক চরমপন্থী বিদ্রোহীরা আর অপহৃতদের বনের গভীরে লুকিয়ে রাখে।
দেশটির সামরিক বাহিনীর দাবি, চরমপন্থীরা অপহৃতদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে যে কারণে আকাশপথেও বনে বোমাবর্ষণ করে হামলা চালানো সম্ভব হয় না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হাডসন ইনস্টিটিউটের পশ্চিম আফ্রিকার বিশেষজ্ঞ গবেষক জেমস বার্নেট বলেন, এই দলগুলো নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে আর চাঁদাবাজির মাধ্যমে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে আরও ছড়িয়ে পড়ছে।
কুরিগা শহর থেকে কাদুনা শহরে যেতে ৮৯ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। এ রাস্তায় এখন এক ডজনেরও বেশি চেকপয়েন্ট এবং সামরিক ট্রাককে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে সৈন্যদের শিগগিরই অন্যত্র মোতায়েন করা হতে পারে।
শুক্রবার নাইজেরিয়ার পুলিশ এবং সৈন্যরা নিখোঁজ শিশুদের সন্ধানের জন্য বনের দিকে রওনা করেছে বলে জানায় সামরিক বাহিনী।
কুরিগার বাসিন্দারা কেবল আশা করছেন তাদের সন্তানরা অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসবে এবং সামরিক কর্মীদের উপস্থিতিতে তারা এখন যে সুরক্ষা অনুভব করছে তা যেন স্থায়ী হয়।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
অবরুদ্ধ গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ একটি সমুদ্রপথ খুলে দিতে চাইছে, যা গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেবে।
তবে ত্রাণ কর্মকর্তারা বলছেন, স্থলপথে ট্রাক পাঠানোর চেয়ে জাহাজ বা সাম্প্রতিক এয়ারড্রপের মাধ্যমে সরবরাহ অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং অপর্যাপ্ত।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার গাজায় এয়ারড্রপ কার্যক্রমে বিপর্যয় ঘটে তা নিচে থাকা মানুষদের আঘাত করে এবং বাড়িঘরের উপর পড়ে। এতে ৫ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর গাজার বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, দেশটির এক-চতুর্থাংশ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি। গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো বসবাসরত আনুমানিক তিন লাখ মানুষের অনেকেই বেঁচে থাকার তাগিদে পশুখাদ্যে নির্ভর করছে। তা-ও কমে আসছে।
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, হামলা ও অবরোধের মুখে গাজায় গত কয়েক মাস ধরেই দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দেওয়া হচ্ছিল। এবার সেখানে শিশু মৃত্যুর হার বাড়তে শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন উত্তর গাজায় দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় তীব্র আকার ধারণ করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তরের কামাল আদওয়ান ও শিফা হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই শিশু - যাদের বয়স ১৫ বছরের মধ্যে আর একজন ৭২ বছর বয়সী পুরুষ।
অন্যদিকে দক্ষিণ গাজায় সাহায্য মিললেও দুর্বল শিশুরা মারা যেতে শুরু করেছে।
গত পাঁচ সপ্তাহে অপুষ্টিজনিত কারণে ১৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছে রাফাহর এমিরাতি হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক।
এই সপ্তাহের শুরুতে ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান অ্যাডেল খোদর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলাম তা শুরু হয়ে গিয়েছে।’
ইউনিসেফের শিশু পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অনুরাধা নারায়ণ বলেন, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে গাজায় ডায়রিয়াজনিত রোগ বাড়ছে যার ফলে অনেকেই ক্যালরি ধরে রাখতে পারছে না।
এপির প্রতিবেদনে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। কিছু দোকানে মিললেও দাম অনেক বেশি।
বেশিরভাগ লোক ‘খুবাইজা’ নামে লতা-পাতা সিদ্ধ করে খেয়ে বেঁচে থাকছে। উত্তর গাজায় দুই ছেলে এবং তাদের সন্তানদের সঙ্গে বসবাসকারী ৭০ বছর বয়সী ফাতিমা শাহীন বলেন, সিদ্ধ খুবাইজা তার প্রধান খাবার এবং খুব হিসাব করে খাবার তৈরি করতে হচ্ছে।
শাহীন বলেন, আমরা এক টুকরো রুটির জন্য মরছি।
গাজার উত্তরাঞ্চলের আরেক বাসিন্দা ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের গবেষক এবং অর্থনৈতিক সাংবাদিক কামার আহমেদ জানান, তার ১৮ মাস বয়সী মেয়ে মীরা বেশিরভাগ সেদ্ধ লতা-পাতা খায়। তার বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো খাবার নেই।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. হুসাম আবু সাফিয়া এপিকে বলেন, তার কর্মীরা বর্তমানে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ শিশুর চিকিৎসা করেন এবং তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই অপুষ্টিতে ভুগছে।
আবু ইউসুফ নাজ্জার হাসপাতালের শিশুদের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. জাবর আল-শায়েরের মতে, খাবারের অভাবে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালে আরও অপুষ্টির শিকার ৮০ শিশু রয়েছে।
এমিরাতি হাসপাতালের নার্সারি ইউনিটের ডেপুটি হেড ডক্টর আহমেদ আল-শাইর বলেন, অকাল শিশুদের মৃত্যুর মূল কারণ মায়েদের মধ্যে অপুষ্টি। অপুষ্টির কারণে কম ওজনের শিশুর জন্ম ও মৃত্যু হচ্ছে। যুদ্ধের সময় এ মৃত্যু বেড়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
চিকিৎসক আল-শাইর বলেন, হাসপাতালে ফেব্রুয়ারিতে ১৪টি এবং মার্চে এ পর্যন্ত আরও দুটি শিশু মারা গেছে। বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ১০ দিনের কম বয়সী ৪৪টি শিশু রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন তাদের চিকিৎসা করি কিন্তু ভবিষ্যৎ কী হবে আল্লাহ জানেন।’
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকে খাবার-পানি-ওষুধসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। শুধু দক্ষিণে দুটি ক্রসিং দিয়ে দুই-একটি সাহায্যকারী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়।
গাজায় ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার জন্য জাতিসংঘের এজেন্সিগুলোকে দায়ী করে ইসরায়েল বলেছে, গাজা ক্রসিংয়ে তারা সাহায্য দ্রব্যগুলো বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, ইসরায়েল কিছু পণ্য প্রবেশের অনুমতি দেয় না আর জটিল নিয়ম আরোপ করে যে কারণে ত্রাণ প্রবেশের গতি কমে যায়।
এছাড়াও গাজায় বিতরণ ব্যবস্থা প্রায় পঙ্গু হওয়ার পথে। যেসব সাহায্য বহনকারী ট্রাকগুলো ইসরায়েলি বাহিনী ফিরিয়ে দেয়। সেগুলো ফেরার সময় তারা কোনো নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যার ফলে ফেরার পথে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা ট্রাকে হামলা চালিয়ে সাহায্য ছিনিয়ে নেয়।
এছাড়াও খাবার বিতরণকালে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায়, যার ফলে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। ইসরায়েল দাবি করে খাদ্য বিতরণকারী ট্রাকগুলোতে ফিলিস্তিনিরা হামলা করছিল তাই আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হয়।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল জানিয়েছে, শিগগিরই উত্তর গাজায় সাহায্যের জন্য ক্রসিং খোলা হবে এবং সমুদ্রপথে চালান আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
কানাডায় ৬ জনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
কানাডায় ছয়জনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্রীলঙ্কার ১৯ বছর বয়সী এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। নিহতদের মধ্যে আড়াই মাস বয়সী শিশু কন্যা এবং শ্রীলঙ্কার একটি পরিবারের আরও তিন শিশু রয়েছে। অভিযুক্ত ওই ছাত্র ও ভুক্তভোগীরা একসঙ্গে বাস করতেন। বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) অটোয়া পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে।
অটোয়ার পুলিশ প্রধান এরিক স্টাবস বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম ফেব্রিও ডি-জয়সা। হামলাকারী 'ধারালো অস্ত্র' বা 'ছুরির মতো বস্তু' ব্যবহার করেছেন। তার বিরুদ্ধে ছয়টি হত্যা মামলা এবং একটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। কানাডায় এ ধরনের হত্যার ঘটনা বিরল।
স্টাবস আরও জানান, নিহতরা শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং তারা সম্প্রতি কানাডায় গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৩৫ বছর বয়সী এক মা, ৭ বছর বয়সী এক ছেলে, চার বছরের এক মেয়ে, দুই বছরের এক মেয়ে, আড়াই মাস বয়সী এক মেয়ে এবং সেইসঙ্গে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন। তিনি এই পরিবারের পরিচিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: গাজার হাত ও পরিবার হারানো শিশু ওমরের দ্বিতীয় জীবন শুরু
পুলিশ প্রধান বলেন, প্রথমে কর্মকর্তারা যখন বাড়িতে পৌঁছান তখন তারা দেখতে পান বাড়ির বাইরে পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি চিৎকার করে কাউকে বলছিলেন ৯১১ নম্বরে ফোন করার জন্য। এছাড়া বুধবার রাত ১০টা ৫২ মিনিটে দুইটি জরুরি কল পায় পুলিশ।
ওই ব্যক্তি গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
স্টাবস বলেন, ‘এটি ছিল একদম নিরীহ মানুষের উপর কাণ্ডজ্ঞানহীন সহিংসতা।’
শ্রীলঙ্কার হাইকমিশন জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী কলম্বোতে তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ডি-জয়সা আদালতে হাজিরা দেন এবং স্বীকারোক্তি দেন। এ সময় আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ওই পরিবারের ব্যক্তি এবং পুলিশের কাছে বিবৃতি প্রদানকারী অন্য চারজন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলতে নিশেধ করেন বিচারপতি।
এদিকে আইনজীবী খোঁজার জন্য সময় দিতে তার মামলাটি ১৩ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
বুধবার বেলা ১১টার আগে বারহাভেন এলাকার বাড়িতে পুলিশ ডাকা হয়েছিল। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয় এবং এবং পুলিশ জানায়- জননিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি নেই।
ডন পেরেরা নামে এক প্রতিবেশী জানান, গত শরতে পাশের ক্যাথলিক এলিমেন্টারি স্কুলে একটি হ্যালোইন পার্টিতে ওই বাড়িতে থাকা পরিবারের সঙ্গে তার দেখা হয়।
আরও পড়ুন: ভারতে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা রোধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শাহবাজ শরিফ