বিশ্ব
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু, রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের নতুন আদেশ
বৃহস্পতিবার বালমোরালে ব্রিটেনের দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজপরিবারে নতুন উত্তরাধিকারের একটি তালিকা করা হয়েছে।
চার্লস ব্রিটেনের রাজা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ছেলে এবং নাতি-নাতনিরা রাজতন্ত্রের পরবর্তী উত্তরাধীকারী হলেন।
ক্রমানুসারে প্রথম ১৫ জনের তালিকা হলো-
১. প্রিন্স উইলিয়াম, চার্লস ও প্রয়াত রাজকুমারী ডায়ানার বড় ছেলে। তিনি কেমব্রিজের ডাচেস কেটকে বিয়ে করেছেন। তাদের তিন সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রে তাকে অনুসরণ করে।
২. ক্যামব্রিজের প্রিন্স জর্জ, ২০১৩ সালের জুলাইতে জন্মগ্রহণ করে
৩. ক্যামব্রিজের রাজকুমারী শার্লট, ২০১৫ সালের মে মাসে জন্মগ্রহণ করে
৪. কেমব্রিজের প্রিন্স লুই, ২০১৮ সালের এপ্রিলে জন্মগ্রহণ করে
৫. প্রিন্স হ্যারি, চার্লস ও ডায়ানার ছোট ছেলে
৬. আর্চি মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, ২০১৯ সালের মে মাসে সাসেক্সের ডাচেস হ্যারি ও মেগানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন
৭. লিলিবেট মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, ২০২১ সালের জুনে জন্মগ্রহণ করে
৮. প্রিন্স অ্যান্ড্রু, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের দ্বিতীয় বড় ছেলে
৯. প্রিন্সেস বিট্রিস, অ্যান্ড্রু ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সারা ফার্গুসনের বড় মেয়ে
১০. সিয়েনা এলিজাবেথ, বিট্রিস ও এডওয়ার্ড ম্যাপেলি মোজির কন্যা, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জন্মগ্রহণ করে
১১. রাজকুমারী ইউজেনি, অ্যান্ড্রু ও সারার ছোট মেয়ে
১২. আগস্ট ব্রুকসব্যাঙ্ক, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউজেনি এবং জেমস ব্রুকসব্যাঙ্কের জন্ম।
১৩. প্রিন্স এডওয়ার্ড, রানি ও ফিলিপের কনিষ্ঠ সন্তান
১৪. জেমস, ভিসকাউন্ট সেভার্ন, এডওয়ার্ডের ছোট সন্তান এবং তার স্ত্রী সোফি, ওয়েসেক্সের কাউন্টেস
১৫. লেডি লুইস মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর, এডওয়ার্ড ও সোফির কন্যা
বিশ্বজুড়ে রানির জন্য অশ্রু ও শ্রদ্ধা
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যার শাসনামলে যুক্তরাজ্যকে কয়েক দশকের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেখেছে ও অনুভব করেছে সারা বিশ্ব, তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ব্রিটেনের দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী রানিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষ জড়ো হয়।
বন্যা: পাকিস্তানকে সাহায্য করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি গুতেরেসের আহ্বান
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক মাসের মারাত্মক রেকর্ড বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে শুক্রবার পাকিস্তান সফরে গিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসে। এসময় খোলা তাবুতে আশ্রয় নেয়া পাঁচ লাখ মানুষের মানবেতর জীবনযাপন দেখেন তিনি। এরপর দেশটিকে সাহায্য করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি এই আহ্বান জানান গুতেরেসে।
বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য গুতেরেস জরুরি তহবিলের জন্য ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আবেদন করার দুই সপ্তাহেরও কম সময় পরে তিনি সফরটি করলেন। এই বন্যার ফলে কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে মারা গেছেন কমপক্ষে এক হাজার ৩৯১ জন মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ত্রাণবাহী বিমানসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য আসতে শুরু করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি ভোরে এক টুইটে বলেন, ‘ভয়াবহ বন্যার পর পাকিস্তানি জনগণের প্রতি গভীর সংহতি প্রকাশ করতে আমি পাকিস্তানে এসেছি। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ব্যাপক সহযোগিতার আহ্বান করছি, কারণ পাকিস্তান এই জলবায়ু বিপর্যয়ের শিকার।
জাতিসংঘের প্রধান গত সপ্তাহে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা জারি করেছেন।
তিনি সে সময় ইসলামাবাদে একটি অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ‘আসুন জলবায়ু পরিবর্তনের ঘুমন্তগতির মাধ্যমে আমাদের গ্রহকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া বন্ধ করি। আজ পাকিস্তান, আগামীকাল আপনার দেশ এর শিকার হতে পারে।’
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রধানকে এমন সময়ে পাকিস্তান সফরের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন যখন তিনি বলেন, পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে। তিনি বলেন, বন্যা দুর্গতদের সংকটকে বৈশ্বিক পর্যায়ে পৌঁছাতে তিনি এই সফর চান।
‘জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবের পরিণতি উপলব্ধি করতেও এই সফর সাহায্য করবে।’ বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি৷
আওরঙ্গজেব বলেন, গুতেরেসে শুক্রবার ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার আগে বন্যার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা একটি ব্রিফিং করবেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১২শ’ ছাড়িয়েছে
এখন পর্যন্ত, জাতিসংঘের সংস্থা এবং বেশ কয়েকটি দেশ প্রায় ৬০টি ত্রাণবাহী বিমান করে সাহায্য পাঠিয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ বলছে সহায়তাদানকারীদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন। কারণ তারা এখন পর্যন্ত ২৬টি ফ্লাইট পাঠিয়েছে যেগুলি সাহায্য বা বন্যার্তদের বহন করে।
বন্যা সমগ্র পাকিস্তানকে ছুঁয়েছে এবং ৩৩ লাখেরও বেশি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। হেরিটেজ সাইটগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মহেঞ্জো দারো, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা-সংরক্ষিত প্রাচীন শহুরে জনবসতি হিসেবে বিবেচিত।
সিন্ধু নদীর কাছে ১৯২২ সালে একটি ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং আজ পর্যন্ত, প্রাচীন মিশর এবং মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে মিলে যাওয়া সাড়ে চার হাজার বছর আগের সভ্যতার অন্তর্ধানকে তুলে ধরছে।
মহেঞ্জো দারো একটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং জাতিসংঘের ঐতিহ্য সংস্থা বৃহস্পতিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান পুনরুদ্ধারের জন্য তিন লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার জরুরি সহায়তা ঘোষণা করেছে।
পাকিস্তান সফরকালে গুতেরেসকে অভ্যর্থনা জানান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার। এই সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং অন্যান্য সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ
জাতিসংঘ মহাসচিব পাকিস্তানে আগমনের আগে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সফররত এক আমেরিকান কূটনীতিককে বলেছিলেন যে ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক বন্যা এড়াতে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত। স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেরেক চোলেট ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং সাহায্যের ব্যবস্থা করতে ইসলামাবাদ সফর করছেন।
সরকারের বিবৃতিতে চোলেট নিশ্চিত করেছেন যে বন্যার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জনগণের পুনর্গঠনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলছেন, শুক্রবার প্রথম আমেরিকান বিমানভর্তি ত্রাণ পাকিস্তানে পৌঁছাবে, ওয়াশিংটন বন্যা দুর্গতদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা ও আকাশ পথে দুর্গতদের সঙ্গে একটি মানবিক সহায়তা সংযোগ স্থাপন করবে।
জুন মাস থেকে ভারী বর্ষণ এবং বন্যা নগদ অর্থ সংকটে পড়া পাকিস্তানে নতুন বোঝা চাপিয়েছে এবং দরিদ্র জনসংখ্যার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব তুলে ধরেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশের জন্য পাকিস্তান দায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাড়ে ২১ শতাংশ, চীন ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইইউ ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির দেয়া তথ্যানুসারে দেশটিতে বন্যায় ১২ হাজার ৭২২ জন আহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা, ভেঙে পড়েছে সেতু এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্কুল ও হাসপাতাল।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
যুক্তরাষ্ট্রে এইচআইভি আক্রান্ত পুরুষদের মাঙ্কিপক্স টিকা দেয়া হতে পারে
মার্কিন কর্মকর্তারা এইচআইভি আক্রান্ত অনেক পুরুষ বা যারা সম্প্রতি অন্যান্য যৌন রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে মাঙ্কিপক্সের টিকা নেয়ার সুপারিশের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়েও অধিকহারে অন্যান্য যৌন সংক্রমণে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঘটছে।
দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. জন টি. ব্রুকস মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাব প্রতিক্রিয়ায় এই সমীক্ষাটিকে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে দেখছেন।
ব্রুকস বৃহস্পতিবার এপিকে বলেন, তিনি ভ্যাকসিনের সুপারিশগুলোর পরিধি বাড়ানো হবে বলে আশা করেছিলেন এবং হোয়াইট হাউস সিডিসি’র সঙ্গে একত্রে এটির বিষয়ে একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
বর্তমানে সিডিসি এমন ব্যক্তিদের টিকা দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে যাদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে, যাদের যৌন সঙ্গী গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে এবং সমকামী বা উভকামী পুরুষ; যাদের ভাইরাস সংক্রমিত এলাকায় গত দুই সপ্তাহে একাধিক যৌন সঙ্গী ছিল।
আরও পড়ুন: মাঙ্কিপক্স: ওয়াশিংটনের কিং কাউন্টিতে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদেরও টিকা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শেষের দিকে চারটি রাজ্য ও চারটি শহরে প্রায় দুই হাজার মাঙ্কিপক্সের ঘটনা দেখা গেছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও দেখা যায়, মাঙ্কিপক্স সংক্রমণে আক্রান্তদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাঙ্কিপক্স নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্পর্কে ১০টি বিষয়
ব্রিটেনের দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞী
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০২২ সালে তার সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্ণ করেছেন। এরমধ্য দিয়ে তিনি ব্রিটিনের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক ও দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর খেতাব অর্জন করেছেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি তার প্রপিতামহী রানী ভিক্টোরিয়ার রেকর্ড ভঙ্গ করেন, যিনি ৬৩ বছর সাত মাস রাজত্ব করেছিলেন।
২০১৬ সালে, থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুর পর এলিজাবেথ ছিলেন বিশ্বের দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞী।
২০২২ সালে তিনি ১৭ শতকের ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই এর পরে বিশ্ব ইতিহাসে দ্বিতীয়-দীর্ঘকাল-শাসনকারী সম্রাজ্ঞী হন। চতুর্দশ লুই, মাত্র ৪ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেছিলেন।
এলিজাবেথ ও ভিক্টোরিয়া ছাড়াও ব্রিটিনের ইতিহাসে অন্য চারজন রাজা ৫০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে রাজত্ব করেছেন। তারা হলেন- তৃতীয় জর্জ (৬৯ বছর), তৃতীয় হেনরি (৫৬ বছর), এডওয়ার্ড তৃতীয় (৫০ বছর) ও স্কটল্যান্ডের ষষ্ঠ জেমস (৫৮ বছর)।
বাড়িতে শিক্ষাগ্রহণ
তার সময়ের ও আগের অনেক রাজপরিবারের সদস্যদের মতো, এলিজাবেথও কখনই কোনো পাবলিক স্কুলে যাননি। তিনি তার ছোট বোন মার্গারেটের সঙ্গে বাড়িতেই শিক্ষা গ্রহণ করেন।
তিনি তার বাবার কাছেও শিক্ষা গ্রহণ করেন। এছাড়া তার শিক্ষকদের মধ্যে ইটন কলেজের একজন সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন ফরাসি ও বেলজিয়ান গভর্নেস তাকে ফরাসি শিখিয়েছিলেন এবং ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ তাকে ধর্ম শিখিয়েছিলেন।
এছাড়াও এলিজাবেথ বাইক চালানো, সাঁতার কাটা, নাচ, ফাইন আর্টস ও সঙ্গীত শেখেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
‘নং ২৩০৮৭৩’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, প্রিন্সেস এলিজাবেথ সংক্ষেপে ‘নং ২৩০৮৭৩’ নামে পরিচিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের হয়ে কাজ করার জন্য এলিজাবেথকে অক্সিলারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসে একজন সাবল্টার্ন (জুনিয়র অফিসার) করা হয়।
যুদ্ধের কাজে সম্পৃক্ত হতে তার বাবা-মায়ের অনুমতিতে তিনি অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক চালাতে ও প্রয়োজনে সেগুলো মেরামত করতে শিখেছিলেন।
‘গ্রেট মিমিকার'
এলিজাবেথ প্রায়ই চেহারায় ভারিক্কি অভিব্যক্তি বজায় রাখতেন, তাই অনেকেই তাকে ‘জুজু মুখো’ বলে অভিহিত করতেন। কিন্তু যারা তাকে কাছে থেকে চিনতেন, তারা তাকে একটি দুষ্টু, হাস্যরসিক ও অন্যের অভিব্যক্তি নকল করার অসামান্য প্রতিভাধর বলে বর্ণনা করতেন।
ক্যান্টারবারির সাবেক আর্চবিশপ রোয়ান উইলিয়ামস বলেছেন, রানি ‘ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত মজা করতে পারে। কেউ তার এ বিষয়টির প্রশংসা করে না যে, তিনি কতটা মজা করতে পারেন।’
রানির পারিবারিক যাজক বিশপ মাইকেল মান একবার বলেছিলেন যে ‘রানির কনকর্ড অবতরণ করাকে অনুকরণ করা আপনাদের দেখা সবচেয়ে মজার কাজগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে।’
এছাড়াও ইয়ান পাইসলি নামের একজন আইরিশ পাদ্রী ও রাজনীতিবিদ বলেছেন, এলিজাবেথ একজন ‘দারুন অনুকরণকার’ ছিলেন।
রাজকীয় করদাতা
তিনি রানি হয়েও ১৯৯২ সালে থেকে ট্যাক্স দিতেন।
১৯৯২ সালে যখন রানির অবকাশ যাপনের বাসভবন উইন্ডসর ক্যাসেল আগুনে পুড়ে যায়, তখন জনসাধারণ মেরামতের জন্য কয়েক লাখ পাউন্ড দেয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২) : ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
তখনন তিনি স্বেচ্ছায় তার ব্যক্তিগত আয়ের ওপর কর দিতে রাজি হয়েছেন।
রানি বলেছিলেন, মেরামত কাজের ব্যয়ের ৭০ শতাংশ তিনি পূরণ করবেন এবং তিনি অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে প্রথমবারের মতো বাকিংহাম প্যালেসে তার বাড়িটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ছোট্ট লিলিবেট
তার মা, মাতামহী ও প্রমাতামহীর সম্মানে রানিকে ইয়র্কের এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু শৈশবে তার পরিবাররের সদস্যদের কাছে তিনি ছোট্ট লিলিবেট নামেই পরিচিত ছিলেন। কারণ তিনি সঠিকভাবে ‘এলিজাবেথ’ নামটি উচ্চারণ করতে পারতেন না।
তার নানী কুইন মেরির কাছে একটি চিঠিতে, তরুণ রাজকুমারী লিখেছেন: ‘প্রিয় ঠাকুরমা। সুন্দর ছোট্ট জার্সির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা আপনার সঙ্গে স্যান্ড্রিংহামে থাকতে পছন্দ করি। আমি গতকাল সকালে সামনের একটি দাঁত হারিয়ে ফেলেছি।’ চিঠিটির শেষে লেখা- ‘লিলিবেটের পক্ষ থেকে ভালবাসা।’
প্রিন্স হ্যারি ও সাসেক্সের ডাচেস মেগান ২০২১ সালে তাদের মেয়ের নাম লিলিবেট ডায়ানা রাখার পরে রানির ডাকনামটি আরও ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
দীর্ঘ দাম্পত্যজীবন
এলিজাবেথ ও তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক উপভোগ করেছেন। তাদের এই বন্ধনের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার চার সন্তানের মধ্যে তিনজন দীর্ঘ বৈবাহিক জীবন কাটান। তারা হলেন- চার্লস, অ্যান ও অ্যান্ড্রু।
রানী তাদের ৫০তম বিবাহ বার্ষিকীতে ফিলিপ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তিনি খুব আন্তরিকভাবে এত বছর ধরে আমার অবলম্বন হয়ে আছেন।’
তাদের গল্প শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে, যখন গ্রিসের ১৮ বছর বয়সী সুদর্শন নৌ ক্যাডেট প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে ১৩ বছর বয়সী এলিজাবেথের দেখা হয় একদিনের জন্য। এর বেশ কয়েক বছর পরে ফিলিপকে ক্রিসমাসে উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজপরিবারে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এই দম্পতি ১৯৪৭ সালে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে বিয়ে করেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
তার ছেলে অ্যান্ড্রুর মতে, ফিলিপ যখন ২০২১ সালে ৯৯ বছর বয়সে মারা যান, তখন এলিজাবেথ তার জীবনে একটি ‘বিশাল শূন্যতা’ তৈরি হওয়ার কথা বলেছিলেন।
একাধিক জন্মদিন
এলিজাবেথ ১৯২৬ সালের ২১শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কবে তার জন্মদিন উদযাপন করা হবে তা জনসাধারণের জন্য কখনও কখনও বিভ্রান্তির বিষয়ে পরিণত হতো। কেননা তার ‘অফিসিয়াল জন্মদিন’ এর জন্য সর্বজনীনভাবে কোনো তারিখ নির্ধারিত ছিল না- এটা জুনের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শনিবার হতো, তবে কবে উদযাপিত হবে সরকার সেই সিদ্ধান্ত নিত।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় তার জন্মদিন জুনের দ্বিতীয় সোমবার উদযাপিত হতো।
শুধুমাত্র রানি ও তার কাছের মানুষেরা পারিবারিক পরিসরে তার প্রকৃত জন্মদিন উদযাপন করতেন।
অনেকগুলো কর্গির মালিক
এটি সর্বজনবিদিত যে এলিজাবেথ কর্গি (এক ধরনের ছোট জাতের কুকুর) ভালোবাসতেন। এমনকি প্রিন্সেস ডায়ানা এই কুকুরগুলোকে রানির ‘চলন্ত কার্পেট’ বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এগুলো তার সঙ্গে সর্বত্র চলাফেরা করতো।
তিনি অনেক বছর ধরে ৩০ টিরও বেশি কর্গির মালিক ছিলেন। তার দুটি ‘ডরগিস’ ছিল-ড্যাচসুন্ড ও কর্গির ক্রস ব্রিড। যাদের নাম ছিল- ক্যান্ডি ও ভলকান।
এলিজাবেথ ১৯৩৬ সালে ১০ বছর বয়সে একটি কুকুরকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছিলেন এবং তার ১৮ তম জন্মদিনে সুসান নামে তাকে একটি কর্গি দেয়া হয়েছিল।
১৯৩৩ সালে স্থানীয় ক্যানেল থেকে ডুকি নামে একটি পুরুষ কর্গি কেনার মধ্য দিয়ে তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ রাজপরিবারের সঙ্গে এই প্রাণীর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
রানি হিসেবে তিনি ব্রিটেনের উন্মুক্ত জলাশয়ের কয়েক হাজার রাজহাঁসের মালিক ছিলেন এবং ১৩২৪ সালের একটি আইন অনুসারে তার সমস্ত স্টার্জন, পোর্পোইজ, তিমি ও ডলফিন দাবি করার অধিকার ছিল।
‘এ প্রিটি নাইস গার্ল’
রানী অনিবার্যভাবে পপ গানের বিষয় হয়ে ওঠে।
দ্য বিটলসের পল ম্যাককার্টনির গাওয়া ‘হার ম্যাজেস্টি’ গানটি সেসময় মানুষের মুখে মুখে ফিরেছিল। রানিকে নিয়ে পল গেয়েছিলেন ‘হার ম্যাজেস্টি এ প্রিটি নাইস গার্ল, বাট শি ডাজেন্ট হ্যাভ আ লট টু সে…’। ১৯৬৯ সালে রেকর্ড করা সংক্ষিপ্ত এই গানটি ‘অ্যাবে রোড’ অ্যালবামের শেষে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
তবে তাকে নিয়ে রচিত অন্যান্য গানগুলো অবশ্য এতটা মধুর ছিল না। ১৯৭৭ সালে তার রজত জয়ন্তীর ঠিক আগে প্রকাশিত `দ্য সেক্স পিস্তল’ ব্যান্ডের রাজতন্ত্রবিরোধী ‘গড সেভ দ্য কুইন’ গানটি ব্রিটিশ টেলিভিশনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম
সাত দশকেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান।
তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক ঘটনাক্রম হচ্ছে:
২১ এপ্রিল, ১৯২৬: লন্ডনের মেফেয়ারে প্রিন্সেস এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের ভবিষ্যতের রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও রানি এলিজাবেথের প্রথম সন্তান তিনি। পরে তাকে রানির মা বলা হয়।
১০ ডিসেম্বর, ১৯৩৬: এলিজাবেথ তার চাচা রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড সিংহাসন ত্যাগ করার পর এবং তার বাবা রাজা হওয়ার পর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন।
১৩ অক্টোবর, ১৯৪০: যেসব শিশু বিমান হামলার (ব্লিটজ) সময় তাদের মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের উদ্দেশ্যে এলিজাবেথ ১৪ বছর বয়সে বিবিসি চিলড্রেনস আওয়ার অনুষ্ঠানে প্রথম বক্তব্য দেন।
১৯৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের হয়ে কাজ করার জন্য এলিজাবেথকে অক্সিলারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসে একজন সাবল্টার্ন (জুনিয়র অফিসার) করা হয়।
২০ নভেম্বর, ১৯৪৭: এলিজাবেথ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে গ্রিস ও ডেনমার্কের প্রিন্স ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনকে বিয়ে করেন।
১৪ নভেম্বর, ১৯৪৮: প্রিন্স চার্লস জন্মগ্রহণ করেন। ফলে তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন।
আরও পড়ুন: রানির মৃত্যু: অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও দাফন
১৫ আগস্ট, ১৯৫০: এলিজাবেথের দ্বিতীয় সন্তান ও একমাত্র কন্যা অ্যান জন্মগ্রহণ করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২: এলিজাবেথ তার বাবা জর্জ ষষ্ঠের মৃত্যুর পর রানি হন।
২ জুন, ১৯৫৩: ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে একটি জমকালো রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে তাকে মুকুট পরানো হয়। তিনি কমনওয়েলথ সফরে বারমুডা, ফিজি, টোঙ্গা, অস্ট্রেলিয়া ও জিব্রাল্টারসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে বের হন।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০: এলিজাবেথের তৃতীয় সন্তান প্রিন্স অ্যান্ড্রু জন্মগ্রহণ করেন।
১০ মার্চ, ১৯৬৪: এলিজাবেথের চতুর্থ সন্তান প্রিন্স এডওয়ার্ড জন্মগ্রহণ করেন।
মে, ১৯৬৫: এলিজাবেথ পশ্চিম জার্মানিতে এক ঐতিহাসিক সফর করেন। যা ছিল ৫২ বছরের মধ্যে কোনো ব্রিটিশ সম্রাটের প্রথম জার্মান সফর।
১৯৭৭: এলিজাবেথ সিংহাসনে বসার রজত জয়ন্তী উদযাপন করেন।
১৯৯২: এ বছরটি ছিল এলিজাবেথের ভাষায় ‘অনুস হরিবিলিস’ বা ভয়ংকর বছর। তার চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তানের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। সে বছর আগুনে উইন্ডসর ক্যাসেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মন্দার মধ্যে মেরামতের খরচ জোগাতে রানিকে আয়কর দিতে হয়।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২) : ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
৩১ আগস্ট, ১৯৯৭: প্রিন্সেস ডায়ানা প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তার দুঃখ প্রকাশের জন্য জনসাধারণের চাপের মুখে এলিজাবেথ ডায়ানার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি অভূতপূর্ব টেলিভিশন সম্প্রচার করেন।
২০০২: এলিজাবেথ তার সিংহাসনে আরোহণের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেন। এ বছরে এলিজাবেথের মা ও তার বোন মার্গারেটের মৃত্যু হয়।
২০ ডিসেম্বর, ২০০৭: ভিক্টোরিয়াকে ছাড়িয়ে এলিজাবেথ সবচেয়ে দীর্ঘজীবী ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী হন।
মে, ২০১১: এলিজাবেথ আয়ারল্যান্ডে এক ঐতিহাসিক সফর করেন। যা আইরিশ স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সম্রাটের প্রথম সফর।
২০১২: এলিজাবেথ সিংহাসনে তার হীরক জয়ন্তী পূর্ণ করেন।
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫: এলিজাবেথ রানি ভিক্টোরিয়াকে ছাড়িয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী সম্রাট হন।
১১ জুন, ২০১৬: ব্রিটেন এলিজাবেথের আনুষ্ঠানিক ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে তিন দিনের জাতীয় উৎসব উদযাপন করে।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭: প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে এলিজাবেথ সিংহাসনে ৬৫ বছর পূর্ণ করে নীল জয়ন্তী উদযাপন করেন।
মার্চ, ২০২০: করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে এলিজাবেথ ও ফিলিপ লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেস থেকে উইন্ডসর ক্যাসেলে চলে যান।
৯ এপ্রিল, ২০২১: প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে মারা গেলে এলিজাবেথের ৭৩ বছরের বিবাহিত জীবনের অবসান হয়।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
২০ অক্টোবর, ২০২১: এলিজাবেথ লন্ডনের একটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একটি রাত কাটান। ডাক্তারদের নির্দেশে তিনি পরবর্তী মাসগুলোতে তিনি শুধুমাত্র তুলনামূলক হালকা দায়িত্ব পালন করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২: এলিজাবেথ ৭০ বছরের সার্বভৌম সিংহাসন জীবনের মধ্য দিয়ে প্রথম ব্রিটিশ সম্রাট হিসেবে প্লাটিনাম জুবিলি পালন করেন।
জুন, ২০২২: প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপনে চারদিনের সরকারি ছুটির সময় এলিজাবেথ সীমিত পরিসরে জনসম্মুখে এসেছিলেন।
৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২: বরিস জনসন ও লিজ ট্রাসে এলিজাবেথের সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে রানির গ্রীষ্মকালীন বাসভবন বালমোরাল প্রাসাদে দেখা করেন। ঐতিহ্যগতভাবে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হলেও তার রানির চলাফেরার সমস্যার জন্য প্রথমবারের মতো এ বৈঠক বালমোরালে সম্পন্ন করা হয়।
৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২: এলিজাবেথ স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে ৯৬ বছর বয়সে মারা যান। তার বড় ছেলে তৃতীয় চার্লস রাজা হন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
রানির মৃত্যু: অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও দাফন
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর এখন কী কী হবে তা নিয়ে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ব্রিটেনের রাজতন্ত্র পরিবর্তনের ৭০ বছর হয়ে গেছে।
রানির মৃত্যুর পর একটি নির্বিঘ্ন ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে এবং তার ঐতিহাসিক রাজত্বকে যথাযথভাবে সম্মান জানাতে, যুক্তরাজ্য সরকার ও রাজপরিবার কয়েক বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এবিসি নিউজের এক রিপোর্ট অনুযায়ী আগামী কয়েক দিনের জন্য কিছু সম্ভাব্য আনুষ্ঠানকতা রয়েছে।
রানির শেষকৃত্য কখন ও কোথায় অনুষ্ঠিত হবে?
জাতীয় শোকের প্রথাগত নিয়মানুসারে বলা যায়, রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তার মৃত্যুর ১০ দিন পরে হবে।
এলিজাবেথ ১৭৬০ সাল থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে শেষকৃত্য সম্পন্নকারী প্রথম সার্বভৌম হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২): ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
আন্তর্জাতিক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও রাষ্ট্রের নেতারা রানির শেষকৃত্যে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে আট হাজার জনেরও বেশি লোকের আয়োজন, যেমনটি এটি রানির রাজ্যাভিষেকের জন্য করেছিল।
কোথায় হবে তার শেষ বিশ্রামের স্থান?
রানিকে সম্ভবত উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে ব্যক্তিগতভাবে সমাহিত করা হবে।
সেখানে রানি তার প্রয়াত প্রিয়তম স্বামী প্রিন্স ফিলিপ, তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ, বোন প্রিন্সেস মার্গারেট ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সেখানে অনন্তকাল বিশ্রাম নেবেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
জীবনভর প্রস্তুতি নিয়ে ৭৩ বছর বয়সে রাজা হলেন প্রিন্স চার্লস
অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে সিংহাসনে বসলেন প্রিন্স চার্লস।
চার্লস, ব্রিটিশ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি। তার মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার তৃতীয় চার্লস রাজা হন। তার রাজ্যাভিষেকের কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
তিনিই প্রথম রাজ উত্তরাধিকারী যিনি রাজপরিবারের প্রথাগত নিয়মানুসারে বাড়িতে শিক্ষা গ্রহণ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজকুমারী ডায়ানার সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ, রাজপরিবারের সদস্যদের জনসাধারণের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করে,পরিবেশ সুরক্ষা ও স্থাপত্য সংরক্ষণের মতো বিষয় নিয়ে একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন চার্লস।
ইতিহাসবিদ এড ওয়েনস বলেন, অবশেষে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন; জীবনের শরৎকালে এসে কীভাবে নিজেকে একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে তিনি তার ইমেজ প্রতিষ্ঠা করেন সেটা এখন দেখার বিষয়। কেননা কোথাও তার মায়ের মতো জনপ্রিয়তা তার নেই।
ওয়েন্স বলেন, চার্লসকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে কিভাবে ‘জনসাধারণের সমর্থন ও ভালোবাসার’ তৈরি করা যায়, ব্রিটিশ জনসাধারণের সঙ্গে এলিজাবেথের যে ধরনের সম্পর্ক ছিল।
অন্য কথায়, চার্লস কি তার প্রজাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে? এটি এমন একটি প্রশ্ন যা তার পুরো জীবনে বহুবার আলোচিত হয়েছে।
তার সিংহাসনে আরোহণ সম্ভবত ব্রিটেনের বৃহৎ আনুষ্ঠানিক রাজতন্ত্রের ভবিষ্যত সম্পর্কে বিতর্ককে উস্কে দেবে। কেউ কেউ এটিকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এবং অন্যরা এটিকে সামন্ততান্ত্রিক ইতিহাসের অপ্রচলিত চিহ্ন হিসেবে মনে করে।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২): ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘ মেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
চার্লস একাধারে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও পাপুয়া নিউ গিনি সহ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন।
২০১৮ সালের একটি ডকুমেন্টারি ‘প্রিন্স, সন অ্যান্ড হেয়ার: ৭০ বছর বয়সী চার্লস’-এ তিনি বলেছিলেন, রাজা হিসেবে তিনি কথা বলতে বা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কারণ প্রিন্স অব ওয়েলসের সার্বভৌম ভূমিকা আলাদা।
চার্লস বলেছেন যে তিনি রাজপরিবারের সদস্যদের সংখ্যা কমাতে চান, খরচ কমাতে চান ও আধুনিক ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করতে চান।
কিন্তু ডায়ানার সঙ্গে তার বিবাহের বিচ্ছেদের পর অনেকেই সিংহাসনের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
জীবনীকার স্যালি বেডেল স্মিথ, ‘প্রিন্স চার্লস: দ্য প্যাশনস অ্যান্ড প্যারাডক্সেস অব অ্যান ইম্পরোবেবল লাইফ’-এর লেখক বলেন, তার সৌভাগ্য সত্ত্বেও বরাবরই তাকে পরিবারের অন্যদের সামনে ম্লান বলে মনে হয়েছে।
স্মিথ পিবিএসকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি হতাশা এটা নয় যে তাকে সিংহাসনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল, আমি মনে করি তার প্রধান হতাশা হল যে সে অনেক কিছু করেছে এবং ... তাকে ব্যাপক ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৯৯৭ সালে প্যারিসের একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় ‘সাধারণ মানুষের রাজকুমারী’ মারা যাওয়ার আগে ডায়ানার সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক বিশ্বাসঘাতকতার জন্য চার্লসকে ক্ষমা করতে ব্রিটেনে অনেকেরই অনেক বছর লেগেছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে ক্যামিলা পার্কার বোলসকে বিয়ে করার পর জনসাধারণের মন নরম হয় এবং তিনি কর্নওয়ালের ডাচেস হন।
যদিও চার্লস ও ডায়ানার বিচ্ছেদে ক্যামিলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তবুও তার ব্যক্তিত্ব ও সেন্স অফ হিউমার অবশেষে অনেক ব্রিটিশের মন জয় করে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ জনসমক্ষে বলেছিলেন যে এটি তার ‘আন্তরিক ইচ্ছা’ ছিল যে তার ছেলে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পরে ক্যামিলাকে ‘কুইন কনসোর্ট’ হিসেবে পরিচিত করা উচিত।
প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ ১৪ নভেম্বর, ১৯৪৮ সালে বাকিংহাম প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। যখন তার মা ১৯৫২ সালে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন, ৩ বছর বয়সী রাজকুমার কর্নওয়ালের ডিউক হন। তিনি ২০ বছর বয়সে প্রিন্স অব ওয়েলস হন।
তার স্কুলজীবন সুখকর ছিল না, একটি স্কটিশ বোর্ডিং স্কুলে তিনি সহপাঠীদের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।
চার্লস কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে ইতিহাসে পড়েন এবং ১৯৭০ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্য হন।
এরপর তিনি রয়্যাল নেভিতে যোগদানের আগে রয়্যাল এয়ার ফোর্স পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। সেখানে তিনি হেলিকপ্টার চালানো শিখেছিলেন। তিনি ১৯৭৬ সালে একজন মাইনসুইপার এইচএমএস ব্রনিংটনের কমান্ডার হিসেবে তার সামরিক কর্মজীবন শেষ করেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
ক্যামিলার সঙ্গে চার্লসের সম্পর্ক নেভিতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই। তবে ক্যামিলা তখন একজন অশ্বারোহী অফিসারকে বিয়ে করেছিলেন।
অন্যদিকে, ১৯৭৭ সালে চার্লসের ১৬ বছর বয়সী লেডি ডায়ানা স্পেনসারের সঙ্গে দেখা হয়, যখন তিনি তার বড় বোনের সঙ্গে প্রেম করছিলেন। ডায়ানা ১৯৮০ সালে চার্লস ও রাজপরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আমন্ত্রিত হওয়ার পরেই তাদের বাগদানের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
তারা ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের বাগদানের ঘোষণা দেন।
এই দম্পতি ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে বিয়ে করেন। এর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বর্তমান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালে তার ভাই প্রিন্স হ্যারি জন্মগ্রহণ করেন।
তবে বহুল আলোচিত এই রূপকথার গল্প শিগগিরই শেষ হয়ে যায়। চার্লস ১৯৯৪ সালে এক টিভি ইন্টারভিউয়ে পরকীয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন।
এছাড়া আরেক সাক্ষাত্কারে ডায়ানা ক্যামিলার সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন: ‘এই বিয়েতে আমরা তিনজন ছিলাম।’
এই বিষয়গুলো চার্লসের জনপ্রিয়তা হ্রাস করেছিল।
তবে, ২০১৮ সালে তাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ৫৪টি দেশ নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে রানির মনোনীত উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। চলতি বছরের ১০মে পার্লামেন্টের রাষ্ট্রীয় উদ্বোধনের আগে রানি চার্লসকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব অর্পণ করে সভাপতিত্ব করতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৬৫ লাখ ১২ হাজার ছাড়াল
বিশ্বের বিভিন্ন অংশে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে বিশ্ব করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৬৫ লাখ ১২ হাজারের বেশি।
বৈশ্বিক ডাটা অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬১ কোটি ২৫ লাখ ২১ হাজার ৯৩২ জনে ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছেন ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৯৭২ জন।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮৭ জন।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ৬ লাখ ৯ হাজারের বেশি
বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতে মোট চার কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৪১১ জনের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৯০ জনে।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে নতুন করে ৩৮৮ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৩৩০ জন এবং শনাক্তের সংখ্যা ২০ লাখ ১৪ হাজার ৭৭ জনে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৬৫ লাখ এক হাজারের বেশি
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ২৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
এ সময় শনাক্তের হার সাত দশমিক ৪০ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ৬০ কোটি ৯৮ লাখ ছাড়াল
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ২২৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ২২ শতাংশ।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (১৯২৬-২০২২) : ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদী রাজত্বকারী সম্রাজ্ঞীর বিদায়
৭০ বছর রাজত্ব করার পর বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় দীর্ঘ মেয়াদী সম্রাজ্ঞী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে বালমোরাল ক্যাসেলে মারা গেছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি মারা যান বলে বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পর তার পরিবারের সদস্যরা স্কটল্যান্ডের এই প্রাসাদে জড়ো হন।
বর্তমান রাজা চার্লস, বর্তমান রানি ক্যামিলা, প্রিন্সেস অ্যানে আগে থেকেই রানির সঙ্গে বালমোরালে ছিলেন।
চার্লসের ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি পরিবার নিয়ে পথে রয়েছেন।
রানি ১৯৫২ সালে ব্রিটেনের সিংহাসন আরোহণ করেন এবং বিশাল সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী হন।
বিবিসি জানিয়েছে, তাঁর মৃত্যুর পর এখন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও প্রাক্তন প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স চার্লস ব্রিটেনের নতুন রাজা এবং তিনি ১৪টি রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিবেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখতে যাচ্ছেন স্বজনরা
এক বিবৃতিতে বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, রানি আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বালমোরালে শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন। রাজা প্রিন্স চার্লস ও রানি ক্যামিলা সন্ধ্যায় বালমোরালে থাকবেন এবং শুক্রবার লন্ডনে ফিরে আসবেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কার্যকাল যুদ্ধ-পরবর্তী কঠোরতা, সাম্রাজ্য থেকে কমনওয়েলথে উত্তরণ, স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যুক্তরাজ্যের প্রবেশ এবং ইইউ থেকে প্রত্যাহারের নানা ঘটনা ঘটে।
১৮৭৪ সালে জন্মগ্রহণকারী উইনস্টন চার্চিল এবং ১০১ বছর পরে এই সপ্তাহের শুরুতে রানি কর্তৃক নিযুক্ত হওয়া ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণকারী লিজ ট্রাসসহ তাঁর শাসনামলে ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
তিনি তাঁর শাসনামলে তার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাপ্তাহিক আলোচনার আয়োজন করেছিলেন।
লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে, রানির অবস্থার আপডেটের অপেক্ষায় থাকা মানুষরা তার মৃত্যুর কথা শুনে কাঁদতে শুরু করেন।
রানি ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের মেফেয়ারে এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসরের জন্মগ্রহণ করেন।
খুব কম লোকই ভাবতে পেরেছিলেন যে তিনি রানি হবেন। কিন্তু ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে তাঁর চাচা এডওয়ার্ড অষ্টম দুইবার তালাকপ্রাপ্ত আমেরিকান ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে
এলিজাবেথের বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১০ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন।
তিন বছরের মধ্যে ব্রিটেন নাৎসি জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এলিজাবেথ এবং তার ছোট বোন, প্রিন্সেস মার্গারেট যুদ্ধকালীন বেশিরভাগ সময় উইন্ডসর ক্যাসেলে কাটিয়েছিলেন যখন তাদের বাবা-মা তাদের কানাডায় সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেন এবং ফিলিপ এডিনবার্গের ডিউক উপাধি লাভ করেন।
৭৪ বছরের বিবাহিত জীবনের পর ২০২১ সালে ৯৯ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে ফিলিপ রানিকে তার ‘শক্তি এবং অস্তিত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
আরও পড়ুন: থ্যাঙ্কসগিভিং অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন না রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ