বিশ্ব
সিরিয়া ও তুরস্ককে ১০ লাখ ডলার অনুদান দেবে অলিম্পিক মুভমেন্ট
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অলিম্পিক সম্প্রদায়কে ১০ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দেবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি), অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়া (ওসিএ), ইউরোপিয়ান অলিম্পিক কমিটিস (ইওসি) এবং অলিম্পিক রিফিউজ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ)।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইওসি সভাপতি থমাস বাখ বলেন, 'আমি তুরস্কের ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (এনওসি) সভাপতি এবং সিরিয়ার ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (এনওসি) প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের কাছ থেকে জেনেছি যে এই ভূমিকম্প স্থানীয় অলিম্পিক সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে।’
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে
তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্কে আমাদের প্রথম ধাপের জরুরি সহায়তা অলিম্পিক রিফিউজ ফাউন্ডেশন এবং তাদের অংশীদারদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সিরিয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ করতে সক্ষম এমন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করবো।’
আইওসি আরও ঘোষণা করেছে যে ওআরএফ খাদ্য, বস্ত্র ও কম্বলসহ মানবিক সহায়তার জন্য মূলত ‘স্পোর্টস ফর সলিডারিটি’- প্রোগ্রামকে সমর্থন করার জন্য পরিকল্পনা করা তহবিল থেকে এই সহায়তা করছে।
আরও পড়ুন: একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে উল্লাস
তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা বিপর্যয়কারী ভূমিকম্পের চার দিন পরও শুক্রবার ধ্বংসস্তূপ থেকে এক ডজনেরও বেশি জীবিত মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডা, ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও গুরুতর আহত হওয়ার পরও এই মানুষদের জীবিত উদ্ধার করতে পেরে উদ্ধারকারীরাও আনন্দ উল্লাস করেছেন এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেছেন।
গত সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় কয়েক হাজার বিল্ডিং ধসে পড়েছে। এতে কমপক্ষে ২৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন এবং কয়েক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
একজন উদ্ধারকর্মী বলেছেন, কিলিঙ্ক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষদের সঙ্গে ক্রু সদস্যরা মজা করছিল, এর মাধ্যমে তারা আহতদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছিল।
উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের উৎপত্তির কেন্দ্রের সবচেয়ে কাছের শহর কাহরামানমারাসে উদ্ধারের পর প্রতিটি মানুষকে আলিঙ্গন করছিলেন এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন।
হ্যাবারতুর্ক টেলিভিশন এক প্রতিবেদনে জানায়, আদিয়ামানে মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৪ বছর বয়সী ইয়াগিজ কমসুকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করার পর উদ্ধারকারী ও আশেপাশের মানুষ উল্লাস করে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে
উদ্ধারকারীরা ইয়াগিজকে একটি জেলি বিন দেয় এবং এরপর তারা তার ২৭ বছর বয়সী মা আইফার কমসুকে উদ্ধার করে।
১৩ দশমিক ৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এই ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই জাপানের ফুকুশিমা ভূমিকম্প ও সুনামির চেয়ে বেশি লোক মারা গেছে। আরও অনেক লাশ উদ্ধার করা এবং গণনা করা বাকি রয়েছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে তুরস্কের শহর গাজিয়ানটেপের একটি বেসমেন্ট থেকে উদ্ধারকারীরা ১৭ বছর বয়সী আদনান মুহাম্মাদ কোরকুটকে উদ্ধারের পর আত্মীয়রা কান্নাকাটি করে।
আদনান ৯৪ ঘন্টা ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলেন এবং বেঁচে থাকার জন্য নিজের প্রস্রাব পান করতে বাধ্য হয়।
সে উদ্ধারকারীদের বলে, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ আপনারা এসেছেন।’
হ্যাবারতুর্ক টেলিভিশন বলেছে, উদ্ধারকারীরা ইস্কেন্দারুনের একটি উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসাবশেষের ভিতরে আটকে পড়া ৯ জনকে শনাক্ত করেছে এবং তাদের মধ্যে ছয়জনকে টেনে বের করেছে, যার মধ্যে একজন নারীও রয়েছে। বের করে আনার পর যখন তাকে স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আশেপাশের মানুষেরা চিৎকার করে বলেন ‘আলালাহু আকবর!’
এই ভবনটি ভূমধ্যসাগর থেকে মাত্র ৬০০ ফুট (২০০ মিটার) দূরে ছিল।
কাহরামানমারাসের আরেকটি উদ্ধার প্রচেষ্টার ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন জরুরি কর্মী তার স্মার্টফোনে একটি পপ গান বাজিয়ে দুই কিশোরী বোনকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলেন, যখন তারা মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
একটি জার্মান দল বলেছে যে তারা কিরিখানের একটি ধসে পড়া বাড়ি থেকে একজন মহিলাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তারা ৫০ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে উদ্ধার কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
হ্যাবারটার্ক টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে একজন আটকে পড়া নারীকে একটি দলের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।
তিনি উদ্ধারকারীদের বলেছিলেন যে তিনি বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আটকে পড়া ব্যক্তিরা এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় বাঁচতে পারে, তবে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দ্রুত কমে আসছে।
মর্গ ও কবরস্থানগুলো লাশে ভরে উঠেছে এবং কিছু শহরটির রাস্তায় কম্বল, পাটি ও কাপড়ে মোড়ানো লাশ পড়েছিল।
তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে এবং অনেক লোকের কোন আশ্রয় নেই।
তুর্কি সরকার লাখ লাখ গরম খাবার এবং তাঁবু ও কম্বল বিতরণ করেছে। তবে এখনও অনেক অভাবী মানুষ সাহায্যের জন্য লড়াই করছে।
দুর্যোগ সিরিয়ার ১২ বছরের গৃহযুদ্ধের দ্বারা বেষ্টিত অঞ্চলটিতে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। গৃহযুদ্ধ দেশের কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদেরকে মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল করে রেখেছে। যুদ্ধের ফলে আরও লক্ষাধিক মানুষ তুরস্কে আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি জমায়।
জাতিসংঘ বলেছে যে প্রথম ভূমিকম্প-সম্পর্কিত ত্রাণবাহী জাহাজটি শুক্রবার তুরস্ক থেকে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা অনুমান করেছে যে সিরিয়ায় প্রায় ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর-এর সিরিয়ার কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শিভাঙ্কা ধানপালা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, তারা তাঁবু, প্লাস্টিকের চাদর, কম্বল, ঘুমানোর ম্যাট এবং শীতের পোশাক সরবরাহের দিকে মনোনিবেশ করছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আলেপ্পো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে জীবিতদের দেখতে যান। দুর্যোগের পর এটি ছিল দেশের কোনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নেতার প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
এরপর তিনি শহরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকারীদের পরিদর্শন করেন।
আলেপ্পো বছরের পর বছর ভারী বোমাবর্ষণ ও গোলাবর্ষণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এবং এবারের ভূমিকম্পে সবচেয়ে বিধ্বস্ত শহরগুলোর মধ্যে এটি একটি।
সিরিয়া সরকারও ঘোষণা করেছে যে তারা উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে থাকা এলাকাগুলো সহ দেশের সমস্ত অংশে সাহায্য পৌঁছানোর অনুমতি দেবে।
এছাড়াও শুক্রবার, নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে।
তুরস্কের দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলেছে যে তুরস্কে এই দুর্যোগে এ পর্যন্ত ২০ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৮০ হাজার মানুষেরও বেশি আহত হয়েছে।
সিরিয়ায় ৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যার ফলে মোট মৃতের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজারে পৌঁছেছে।
তুরস্কের পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনা মন্ত্রী মুরাত কুরুমের মতে, তুরস্কের প্রায় ১২ হাজারটি ভবন ধসে পড়েছে বা গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় বলেছেন, ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
চীনের বেলুন গোয়েন্দা সংকেত সংগ্রহ করতে সক্ষম: যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে চীনা বেলুনটি ভূপাতিত করেছে সেটি মূলত একটি বিশাল আকারের সামরিক সুবিধাসংযুক্ত বিমান নজরদারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোয়েন্দা সংকেত শানাক্ত এবং সংগ্রহ করার জন্য সজ্জিত ছিল।
যা ৪০টিরও বেশি দেশকে লক্ষ্য বস্তু করেছিল বলে মার্কিন ইউ-২ গুপ্তচর বিমানের ছবি উদ্ধৃত করে বাইডেন প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে চীনা গুপ্তচর বেলুনের সন্ধান মিলেছে: পেন্টাগন
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বেলুনের একটি বহর পিপলস লিবারেশন আর্মির নির্দেশে পরিচালিত হয় এবং বিশেষভাবে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহৃত। যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ্যবস্তু থেকে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহের জন্য ডিজাইন করা উচ্চ প্রযুক্তির সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত। পাঁচটি মহাদেশের ওপর দিয়ে একই ধরনের বেলুন চলাচল করেছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার একটি বিবৃতি আটলান্টিক মহাসাগরে গত সপ্তাহান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূপাতিত বেলুনের সঙ্গে চীনের সামরিক বাহিনীকে সংযুক্ত করার সবচেয়ে বিশদ বিবরণ দিয়েছে। এই কর্মসূচির পরিধি ও সক্ষমতা সম্পর্কে জনসাধারণের বিবরণের উদ্দেশ্য ছিল বেলুনটি গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বলে চীনের ক্রমাগত অস্বীকারকে অস্বীকার করা, যার মধ্যে বৃহস্পতিবার দাবি করা হয়েছিল যে বেলুন সম্পর্কে মার্কিন অভিযোগ গুলি তথ্য যুদ্ধের সমতুল্য।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
বেইজিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন তথ্য প্রকাশ করার আগে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জোর দিয়ে বলেছিলেন যে বিশাল মনুষ্যবিহীন বেলুনটি একটি বেসামরিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বেলুন।
আরও পড়ুন: পরিবেশ, সুশাসন ও মানবাধিকার পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত
যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রের উপর চীনা বেলুন ধ্বংস করল, ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প ও ধারাবাহিক পরাঘাতে তিন দিনেরও বেশি সময় পরে আরও অনেক লোককে জীবিত খুঁজে পাওয়ার আশা ম্লান হতে শুরু করেছে, কারণ এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৭০০ এরও বেশি মানুষ মারা গেছে।
ডিএইচএ নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, আন্তাকিয়ার পূর্বে দিয়ারবাকিরে উদ্ধারকর্মীরা ভোরে একটি ধসে পড়া ভবন থেকে আহত এক নারীকে উদ্ধার করলেও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তার পাশে থাকা তিনজনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
তুরস্কে ১২ হাজার ৮৭৩ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ৬০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। সিরিয়ার সীমান্তে তিন হাজার ১৬২ জন নিহত এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে আজ
ধারণা করা হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। আন্তাকিয়ার একটি ধসে পড়া ভবনের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার রাতভর বাইরের আগুনের আশেপাশে জড়ো হয়ে ছিলেন, নিজেদের চারপাশে কম্বল শক্ত করে মুড়ে উষ্ণ থাকার চেষ্টা করছিলেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বৃহস্পতিবার ভূমিকম্পকবলিত গাজিয়ানটেপ, ওসমানিয়া ও কিলিস প্রদেশে যাওয়ার কথা ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া এবং মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেতে অক্ষমদের বেঁচে থাকার জানালা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা বলছেন যে আশা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প ও সিরিজ আফটারশকে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। দুর্ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার তীব্র ঠান্ডা ও ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ধ্বংসস্তূপের মাঝে আটকে পড়া জীবিতদের বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
এখনও কয়েক হাজার মানুষ ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে জড়ো হয়ে খাবার ও পানির জন্য অপেক্ষা করছে।
উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও বেশি লোককে জীবিত বের করার জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তুরস্কের আন্তাকিয়া শহরে কয়েক ডজন মানুষ শিশুদের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণকারী একটি ট্রাকের সামনে সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আহমেত তোকগোজ বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
যদিও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারানো কয়েক হাজার মানুষ তাঁবু, স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য অস্থায়ী বাসস্থানে আশ্রয় পেয়েছে। তবে এখনও অনেক মানুষ সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে বাইরে রাত কাটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিশেষ করে এই ঠান্ডায় এখানে বসবাস করা সম্ভব নয়। ‘লোকেরা ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে কিছুটা উষ্ণতা পায়, তবে ক্যাম্পফায়ারগুলো পর্যাপ্ত উষ্ণতা দিতে অপ্রতূল ... যদি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে মারা না যায়, তবে তারা ঠান্ডায় মারা যাবে।’
এদিকে, ভূমিকম্পের পর বৃহস্পতিবার সকালে তুরস্ক থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় জাতিসংঘের সাহায্য পাঠানো প্রথম ট্রাক প্রবেশ করেছে। ছোট কিছু সাহায্য সংস্থা কিছু পণ্য পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প: বাংলাদেশে ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
শীতকালীন আবহাওয়া ও ভূমিকম্পের ফলে রাস্তা এবং বিমানবন্দরে হওয়া ক্ষতি, ইতোমধ্যে সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি গৃহযুদ্ধের ফলে বিপর্যস্ত অঞ্চলকে আরও বেশি বিধ্বস্ত করে ফেলেছে।
গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার লক্ষাধিক লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং দেশটির অনেক মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সাহায্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি আরও কয়েক লাখ মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত দিয়ে তুরস্কে পাড়ি জমায়।
অন্যদিকে, তুরস্কের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা খুব ধীর ছিল।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সরকার এই সংকটে অব্যবস্থাপনা করেছে এমন কোনো অভিযোগ যদি ওঠে, তবে আগামী মে মাসে হতে যাওয়া নির্বাচনে তিনি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হবেন।
তবে এরদোয়ান বৃহস্পতিবারও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা সফর করে সমালোচনা কমানোর চেষ্টা করেছেন।
এদিকে, সীমান্তের উভয় পাশে জরুরি কর্মীরা জীবিতদের খুঁজে বের করতে রাতভর কাজ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বা মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পেতে অক্ষমদের বেঁচে থাকার আশা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তুরস্কের এলবিস্তান শহরে উদ্ধারকারীরা মানববন্ধন করেন।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে রেস্তোরাঁ ধসে ৪ জনের মৃত্যু
ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাপুয়ায় একটি অগভীর ভূমিকম্পে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার পাপুয়ার উত্তর উপকূলের কাছে জয়পুরায় আবাসিক এলাকায় পাঁচ দশমিক এক মাত্রার এই ভূমিকম্পে একটি ভাসমান রেস্তোঁরা সমুদ্রে ধসে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ২২ কিলোমিটার (১৩ মাইল) গভীরে। প্রায়ই অগভীর ভূমিকম্প পৃথিবীর পৃষ্ঠে আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পাপুয়ার রাজধানী জয়পুরার বাসিন্দা ত্রি আসিহ বলেছেন, ‘বাসিন্দারা সত্যিই আতঙ্কিত ছিল। আমি একটি গাড়িতে ছিলাম এবং আমার মনে হয়েছিল যেন গাড়ির চাকাগুলো ওপরে উঠে গেছে।’
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কারণে একটি ভাসমান রেস্তোরাঁর ভেতরে থাকা চারজন লোক সাগরে পড়ে মারা যায়।
ন্যাশনাল ডিজাস্টার মিটিগেশন এজেন্সির মুখপাত্র আবদুল মুহারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নিহত চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হতাহতরা ক্যাফের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছিল এবং রেস্তোরাঁর ছাদ তাদের ওপর পড়েছিল।’
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ: পদদলিত হয়ে নিহত বেড়ে ১৭৪
উদ্ধারকারী ডুবুরিরা সম্ভাব্য জীবিতদের সন্ধানে ক্যাফেটেরিয়ার আশেপাশের এলাকায় অনুসন্ধান চালায়।
মুহারি বলেন, বাড়িঘর, ভবন ও চিকিৎসা সুবিধাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের হাসপাতালের কিছু রোগীকে এর উঠানে সরিয়ে নেয়া হয়।
পাপুয়াতে জানুয়ারি মাস থেকে একটি শক্তিশালী সিরিজ ভূমিকম্প আঘাত হানে। আবহাওয়া, জলবায়ুবিদ্যা এবং জিওফিজিক্স এজেন্সি জানিয়েছে যে তারা ২ জানুয়ারি থেকে জয়পুরা শহর এবং আশেপাশের এলাকায় এক হাজার ৭৯টি ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে ১৩২টি বাসিন্দাদের অনুভূত হওয়ার মতো শক্তিশালী ছিল।
ইন্দোনেশিয়া একটি বিস্তীর্ণ দ্বীপপুঞ্জ এবং ২৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের আবাসভূমি। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অববাহিকার চারপাশে সিসমিক ফল্টের একটি আর্ক ‘রিং অব ফায়ার’ এর অবস্থানের কারণে প্রায়শই ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের শিকার হয় দেশটি।
পশ্চিম জাভায় ২০২১ সালের নভেম্বরে পাঁচ দশমিক ছয় মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৩৩১ জন নিহত হয়। সুলাওয়েসিতে ২০১৮ সালের ভূমিকম্প এবং সুনামিতে প্রায় চার হাজার ৩৪০ জন নিহত হওয়ার পর এটি ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে মারাত্মক ছিল।
এছাড়া ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকম্প সুনামির সৃষ্টি করেছিল যার কারণে প্রায় এক ডজন দেশে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল, যার বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার সৈকতে আরও ১৮৩ রোহিঙ্গার অবতরণ
ভালোবাসা দিবসে গরুকে আলিঙ্গনের আহ্বান
ভারতের সরকারচালিত প্রাণী কল্যাণ বিভাগ দেশটির নাগরিকদের এই বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে’কে রোম্যান্স দিবস হিসেবে উদযাপনের পরিবর্তে ‘গরু আলিঙ্গন দিবস’ হিসেবে উদযাপনের আহ্বান করেছে।
বুধবার ভারতের পশু কল্যাণ বোর্ড বলেছে, ‘গরুকে আলিঙ্গন করা মানুষের মানসিকতাকে সমৃদ্ধ করবে এবং ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সুখ বৃদ্ধি করবে।’
গরুকে পবিত্র বলে পূজাকারী হিন্দুদের মতে, পশ্চিমা এই দিবসটি ভারতের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের বিপরীত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিন্দু কট্টরপন্থীরা ভারতের বিভিন্ন শহরের দোকানে অভিযান চালিয়ে কার্ড ও উপহার পুড়িয়ে দিয়েছে এবং রেস্তোরাঁ ও পার্ক থেকে হাত ধরা বিভিন্ন জুটিকে তাড়িয়ে দেয়। তাদের দাবি ভ্যালেন্টাইনস ডে অশ্লীলতার প্রচার করে।
শিবসেনা ও বজরং দলের মতো কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো জানায়, এই ধরনের কর্মকাণ্ড (‘গরু আলিঙ্গন দিবস’) হিন্দু পরিচয় পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করবে।
আরও পড়ুন: হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারতের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আদানির
তবে, দেশের তরুণ শিক্ষিত মানুষেরা ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণত ছুটির এই দিনটিতে পার্ক ও রেস্তোরাঁয় বেড়াতে বা খেতে যায়, উপহার বিনিময় করে এবং অন্যান্য ভারতীয় উৎসবের মতোই আনন্দ করার জন্য পার্টি আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার, বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দু আধিপত্যবাদী দেশে পরিণত করার এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির প্রায় এক দশমিক ৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু। মুসলমান ১৪ শতাংশ এবং বাকি ৬ শতাংশ খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন।
গরু দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু মানসিকতায় গভীরভাবে মিশে আছে এবং অনেকেই এটিকে নিজেদের মায়ের মতোই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে। ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যই গরু জবাই নিষিদ্ধ করেছে।
পশু কল্যাণ বোর্ডের আবেদন হলো, ১৪ ফেব্রুয়ারি মানুষকে বাইরে যেতে এবং গরুকে আলিঙ্গন করতে বলা।
নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় নামক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, এটা ‘একদম পাগলামি। এতে কোনও যুক্তি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল এটি এখন সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। এটি রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে আরও একটি রেখা মুছে দিল। এখন রাষ্ট্র তাই করছে, যা করার জন্য রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মুম্বাই ম্যারাথনে শাড়ি পরে দৌড়ালেন ৮০ বছরের ভারতী
প্লাস্টিকের ভয়াবহতা বোঝাতে বাংলাদেশে ভারতীয় যুবক
ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া হাজার হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে উদ্ধারকারী দল। তবে উদ্ধার কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছে তারা।
এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পে বুধবার মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলে আরও সাহায্য পাঠানোর জন্য তুর্কি সরকারের প্রতি আহ্বানের মধ্যে, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান কাহরামানমারাসে একটি ‘তাঁবুর শহর’ পরিদর্শন করেছেন। মানুষ বাধ্য হয়ে সেখানে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে তাবুতে বসবাস করছে।
তিনি প্রতিক্রিয়ার প্রথম দিকে ঘাটতি স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কাউকে ‘রাস্তায় পড়ে থাকতে দেয়া হবে না।’
দুই ডজনেরও বেশি দেশের উদ্ধারকারী দল হাজার হাজার স্থানীয় জরুরী কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর শক্তিশালী আফটারশকগুলো থেকে ধ্বংসের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে সিরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যেখানে অনেকেই এখনও সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন৷
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ৯০০০ জনের বেশি নিহত
প্রাক্তন সাংবাদিক ওজেল পিকাল জানায়, তুরস্কের শহর মালতয়াতে উদ্ধার করা লাশগুলোকে মাটিতে পাশাপাশি রাখা হয়েছিল। কম্বলে আবৃত ছিল, যখন উদ্ধারকারীরা ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন কিংবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য যানবাহনের আসার অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তিনি ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি লাশ উদ্ধার করার দৃশ্যও দেখেছিলেন।
পিকাল নিজেও উদ্ধার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তাপমাত্রা মাইনাস ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস (২১ ফারেনহাইট) এ নেমে যাওয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষ ঠান্ডায়ও মারা যেতে পারে।
পিকাল টেলিফোনে এপিকে বলেন, ‘আজকের দিনটি সুখকর নয়, কারণ আজ পর্যন্ত মালত্যায় কোনো আশা নেই।’ ধ্বংসস্তূপ থেকে কেউ জীবিত বের হচ্ছে না।
পিকাল বলেন, শহরে একটি হোটেল ভবন ধসে পড়েছে, যেখানে শতাধিক লোক আটকে থাকতে পারে।
তিনি জানান, যে এলাকায় তিনি ছিলেন সেখানে উদ্ধারকারীদের ঘাটতি ছিল এবং ঠান্ডা স্বেচ্ছাসেবক ও সরকারি দলের উদ্ধার প্রচেষ্টা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই অঞ্চলে
রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলাফেরা ও প্রবেশাধিকারও ব্যাহত হয়েছে।
পিকাল বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে আমাদের হাত কিছুই তুলতে পারে না। কাজের জন্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।’
সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি গৃহযুদ্ধের কারণে একটি অঞ্চলে দুর্ভোগের মাত্রা খুবই বেশি ছিল। যুদ্ধের কারণে দেশের অভ্যন্তরে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেক মানুষ তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে কত মানুষ আটকা পড়ে থাকতে পারে তা স্পষ্ট নয়।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা সাড়ে আট হাজার পেরিয়েছে।
হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন জানায়, সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে এবং বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ জন মারা গেছে।
সোমবারের ভূমিকম্প এবং একাধিক শক্তিশালী আফটারশকের পর নিহতের মোট সংখ্যা ১১ হাজারে পৌঁছেছে। আহত হওয়ার সংখ্যা আরও কয়েক হাজার।
জাপানের কাছে ২০১১ সালে উৎপত্তি হওয়া একটি ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। তুরস্ক বা সিরিয়া এখনও নিখোঁজদের সংখ্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ না করলেও ‘বিধ্বংসী’ ভূমিকম্পের পরে পোপ ফ্রান্সিস তার সাপ্তাহিক সাধারণ শ্রোতাদের প্রার্থনা এবং সংহতি প্রদর্শনের জন্য বলেছেন।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৬৪০
সিরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, তুরস্কে ভূমিকম্পের সময় মারা যাওয়া ১০০ জনেরও বেশি সিরীয়দের লাশ বাব আল-হাওয়া সীমান্ত দিয়ে দাফনের জন্য দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সীমান্তের সিরীয় অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা মাজেন আলুশ বলেছেন, আরও ২০টি লাশ সীমান্তে তাদের পথে রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, তারা সবাই সিরিয়ান শরণার্থী যারা যুদ্ধকালীন দেশ থেকে পালিয়ে গেছে।
এখনও আটকে পড়াদের জন্য উদ্বেগ বাড়ছে, তুরস্কে উদ্ধারকারী টিম পোলিশ জানায়, তারা ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন পর্যন্ত ৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে দুই সন্তানের বাবা-মা এবং ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।
ভূমিকম্পের প্রায় দুই দিন পর উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কেন্দ্র কাহরামানমারাসের একটি ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তিন বছর বয়সী ছেলে আরিফ কানকে উদ্ধার করে।
ছেলেটির শরীরের নীচের অংশ কংক্রিটের স্ল্যাব এবং পেঁচানো রডে আটকে থাকার কারণে ঠান্ডা থেকে রক্ষায় জরুরি কর্মীরা তার ওপর একটি কম্বল দিয়ে দেয়। কারণ আরেকটি ধসের আশঙ্কা মাথায় রেখে তারা সাবধানে তার কাছ থেকে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলে।
ছেলেটির বাবা এরতুগ্রুল কিসিকে আগেই উদ্ধার করা হয়েছিল। যখন তার ছেলেকে উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিল তখন তিনি কাঁদছিলেন।
তুর্কি টেলিভিশনে দেশে নাটকীয় উদ্ধারের ঘটনাটি সম্প্রচারের সময় একজন সাংবাদিক ঘোষণা করেছিলেন যে ‘আপাতত কাহরামানমারাসে আশার নাম আরিফ কান।’
কয়েক ঘন্টা পরে আদিয়ামান শহরে তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীরা ১০ বছর বয়সী বেতুল এদিসকে উদ্ধার করে। এসময় উপস্থিতরা করতালির দেয় এবং তার দাদা তাকে চুম্বন করেছিলেন। তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার সময় তার সঙ্গে আদর করে কথা বলেছিলেন।
সোমবার বিকালে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি শহরে, বাসিন্দারা একটি কান্নারত নবজাতককে তার মৃত মায়ের সঙ্গে নাভির কর্ড দ্বারা সংযুক্ত দেখতে পান।
শিশুটির স্বজনরা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)কে জানিয়েছেন, ছোট্ট শহর জিন্ডারিসে একটি ভবন ধসে বেঁচে যাওয়া শিশুটির পরিবারের বাকি সবাই মারা গেছে।
কিন্তু এই ধরনের গল্পগুলো ভূমিকম্পের দুই পরও ছিল। সোমবার ভোরের এই ভয়াবহ ভূমিকম্প একটি বিশাল এলাকাকে ধ্বংস করে দেয়। হাজার হাজার বিল্ডিং ধসে পড়ে। হিমশীতল তাপমাত্রা এবং চলমান আফটারশকগুলো উদ্ধার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তোলে।
তুরস্কে বেঁচে যাওয়া অনেককে গাড়িতে, বাইরে বা সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমাতে হয়েছে।
২৭ বছর বয়সী আয়সান কার্ট এপিকে বলেছেন, ‘আমাদের তাঁবু নেই, গরম করার চুলা নেই, আমাদের কিছু নেই। আমাদের বাচ্চাদের অবস্থা খারাপ। আমরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি এবং আমাদের বাচ্চারা ঠান্ডায় বাইরে আছে। আমরা ক্ষুধা বা ভূমিকম্পে মারা যাইনি, তবে আমরা ঠান্ডায় জমে মরব।’
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৬৪০
সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ এবং রাশিয়া-সমর্থিত সরকারি বাহিনী বেষ্টিত সীমান্তে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার কারণে সহায়তা প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সিরিয়া নিজেই যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে একটি পরিত্যক্ত এলাকা।
অঞ্চলটি প্রধান ফল্ট লাইনের ওপরে থাকায় প্রায়শই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। ১৯৯৯ সালে উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে অনুরূপ শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
পেরুতে প্রবল বর্ষণে ভূমিধসে ৩৬ জনের মৃত্যু
অবিরাম বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে দক্ষিণ পেরুর বেশ কয়েকটি গ্রামে কাদা, পানি এবং পাথর ধসে কমপক্ষে ৩৬ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার দেশটির কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে।
কামানা প্রদেশের মারিয়ানো নিকোলাস ভালকারসেল পৌরসভার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা উইলসন গুতেরেস স্থানীয় রেডিও আরপিপিকে বলেছেন যে মিসকি নামক একটি প্রত্যন্ত এলকায় ৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পেরুতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু
নিহতদের পাঁচজন একটি ভ্যানে চড়েছিলেন যা কাদার ঢেউয়ের কারণে একটি নদীতে পড়ে গিয়েছিল।
স্থানীয় কর্মকর্তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার তিন কিলোমিটার (প্রায় দুই মাইল) বিস্তৃত ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার জন্য ভারী যন্ত্রপাতি পাঠানোর জন্য আবেদন করেছেন।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন যে আনুমানিক ৬৩০টি বাড়ি ভূমিধসের পরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যা সেতু, খাল এবং রাস্তাগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
পেরুতে ফেব্রুয়ারিতে অবিরাম বৃষ্টিপাত হয় এবং প্রায়শই মারাত্মক ভূমিধসের সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, সংঘর্ষে নিহত ১৩
মাঝে মাঝেই ‘ভয়ঙ্কর’ দুঃস্বপ্ন দেখেন সালমান রুশদি
বক্তব্য দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় ছুরিকাঘাতে একটি চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার কয়েকমাস পর প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আলোচিত লেখক সালমান রুশদি। তিনি ডান চোখ হারিয়েও লেখালেখি করতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তবে মাঝে মাঝেই ‘ভয়ঙ্কর’ দুঃস্বপ্ন দেখেন।
হামলার পর তিনি প্রথম সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার এখনও কৃতজ্ঞতার অনুভূতি রয়েছে।
তিনি সোমবার প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে নিউ ইয়র্কের ডেভিড রেমনিককে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, আপনি জানেন, আমি আরও ভাল ছিলাম।’ ‘কিন্তু, যা ঘটেছে তা ভাবলে, আমি এতটা খারাপ নেই।’
রুশদি তার শারিরীক অবস্থার বিষয়ে বলেন, ‘মূলত, বড় ইনজুরিগুলো সেরে গেছে।’ ‘আমি আমার বুড়ো আঙুলে এবং তর্জনীতে এবং তালুর নীচের অর্ধেক অনুভব করছি। আমি অনেক হাতের থেরাপি নিয়েছি এবং আমাকে বলা হয়েছে যে আমি খুব ভালো করছি।’
রেমনিক রুশদির সঙ্গে ম্যানহাটনে তার এজেন্টের অফিসে জুমের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন যে বুকার পুরস্কার বিজয়ী এই লেখক ৪০ পাউন্ডের (১৮
কিলোগ্রাম) বেশি ওজন হারিয়েছেন এবং বেশিরভাগই একটি আইপ্যাডের মাধ্যমে পড়েন যাতে অক্ষরের আকার তিনি আলো সামঞ্জস্য করতে পারেন।
রেমনিক লিখেছেন ‘তার মুখের ডানদিকে টিস্যুতে দাগ আছে। তিনি বরাবরের মতোই সাবলীলভাবে কথা বলেন, কিন্তু তার নিচের ঠোঁট একদিকে ঝুলে পড়ে। তার বাম হাতের উলনার নার্ভ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে ফেসবুক পোস্টে হা হা রিঅ্যাক্ট দেয়ায় বন্ধুকে ছুরিকাঘাত
বিতর্কিত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ এর জন্য ১৯৮৯ সালে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। এরপর ৭৫ বছর বয়সী রুশদি বছরের পর বছর আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু তিনি অনেক আগে থেকেই ন্যূনতম নিরাপত্তাসহ অবাধে চলাফেরা করেছিলেন। গত আগস্টে পশ্চিম নিউইয়র্কের একটি অলাভজনক শিক্ষা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র চৌতাকুয়া ইনস্টিটিউশনে উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে কোনো ঝুঁকি অনুভব করেননি।
রুশদি যখন মঞ্চে ছিলেন তখন কালো পোশাক পরা এক যুবক ছুরি নিয়ে কাছে আসে। অভিযুক্ত আততায়ী হাদি মাতার হামলা ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে দোষী নন বলে দাবি করেছেন। তার নিউইয়র্কারে দেয়া সাক্ষাৎকারের সময় রুশদি মাতারকে ‘মূর্খ’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। তবে তিনি কোনও রাগ প্রকাশ করেননি।
তিনি বলেন, ‘আমি এই কয়েক বছর ধরে নিন্দা ও তিক্ততা এড়াতে অনেক চেষ্টা করেছি। আমি শুধু মনে করি এটি একটি ভাল চেহারা নয়। এই পুরো জিনিসটির সঙ্গে আমি যেভাবে মোকাবিলা করেছি তার মধ্যে একটি হলো সামনের দিকে তাকানো এবং পিছনে না যাওয়া। গতকাল যা ঘটেছে তার চেয়ে আগামীকাল কী ঘটবে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ।’
রুশদির নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’ প্রকাশের প্রাক্কালে এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হলো। যা তিনি হামলার শিকারের এক মাস আগে শেষ করেছিলেন। ২৪৭ বছর বেঁচে থাকা একজন নায়কের বৈশিষ্ট্যযুক্ত ‘বিজয়’ একটি কাল্পনিক প্রাচীন কবিতা সম্পর্কে একটি চরিত্রগতভাবে পরাবাস্তব এবং উচ্ছ্বসিত বর্ণনা যা অত্যন্ত অনুকূল পর্যালোচনা পেয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের রন চার্লস লিখেছেন যে ‘রুশদির জাদুকরী শৈলী বিস্ময় প্রকাশ করে।’
রুশদি সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েক মাস ধরে নীরব ছিলেন। কিন্তু এই উপলক্ষ্যে টুইট করেন এবং এমনকি অপমানের জবাব দেন। গত সপ্তাহে যখন একজন টুইটকারী তাকে বলেছিলেন যে তিনি একটি ‘অসম্মানজনক জীবনযাপন করছেন,’ । রুশদি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ওহ, অন্য একজন ভক্ত! খুবই খুশি।’
সাক্ষাৎকারের সময় তিনি দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন যে ছুরিকাঘাতের পরে তার বইয়ের বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল, বিপদে পড় যেন তিনি আরও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু আমি প্রায় মারা গেছি, সবাই আমাকে ভালোবাসে। এটা আমার ভুল ছিল। শুধু বাঁচিনি, ভালোভাবে বাঁচার চেষ্টা করেছি। খারাপ ভুল। ১৫টি ছুরিকাঘাতের ক্ষত রয়েছে, অনেক ভালো।’
সোমবার তিনি সরাসরি ক্যামেরার লেন্সের দিকে তাকিয়ে আছেন, নিজের এমন একটি ছবি টুইট করেছেন। ছুরিকাঘাতের আগের ছবির তুলনায় তার মুখ পাতলা, চশমার ফ্রেমে একটি গাঢ় লেন্স দিয়ে তার ডান চোখ ঢাকা।
তিনি এখনও সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছেন। রুশদি লিখেছেন যে ফতোয়ার পরে কল্পকাহিনী লিখতে তার প্রথম দিকে অসুবিধা হয়েছিল। এখন সময় আরও কঠিন। তিনি বলেছেন যে তিনি কাজ করতে বসবেন এবং ‘কিছুই হবে না’ শুধুমাত্র ‘শূন্যতা ও আবর্জনার সংমিশ্রণ।’
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কে লেখক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত