%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE
স্ট্রোক চিকিৎসা সেবায় রুপান্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক সায়েন্টেফিক সেমিনার
দক্ষ, অভিজ্ঞ, মেধাবী বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এদের অনেকেই যে যার ক্ষেত্রে কাজ করছেন সুনামের সঙ্গে। এমনই কিছু বাংলাদেশের চিকিৎসক গেল ২০২০ সালের জুলাই মাসে গড়ে তোলেন প্ল্যানেটরি হেলথ অ্যাকাডেমিয়া- পিএইচ এ নামে একটি সংগঠন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের দেড়শ’র বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক যাদের লক্ষ্য দেশের চিকিৎসক- স্বাস্থ্য গবেষকদের সঙ্গে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের সেতুবন্ধন তৈরি করা। যে সেতুবন্ধনে ভাবনা, অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যাবে- কমিয়ে আনা যাবে জানা-বোঝার দূরত্ব।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের তরুণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগও তৈরি হবে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পিএইচএ এরইমধ্যে দুই বছরেরও বেশি সময়ে অনেকখানি এগিয়েছে।
সময়ের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির যেমন হচ্ছে তেমনি বাড়ছে নানারকম অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও।
গত শুক্রবার গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে প্ল্যানেটরি হেলথ অ্যাকাডেমিয়া আয়োজন করে সায়েন্টেফিক কনফারেন্সের পিএইচ চেয়ারপার্সন ড. তাসবিরুল ইসলামের উদ্বোধনী বক্তব্য দিয়ে শুরু হওয়া দিনব্যাপী কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়ে তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা ও সেমিনার
জানা গেছে,শুক্রবার, ১১ নভেম্বর গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে সায়েন্টেফিক কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। বিশেষ অতিথি জাতীয় নিউরোসায়েন্সে হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট এর পরিচালক ও বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএস এর সভাপতি ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক ড. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ, সোসাইটি অফ নিউরোলজিস্ট এর সভাপতি অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ কোরেশি, এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মইনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ড. তাসবিরুল ইসলাম বলেন, পিএইচএ সব সময় চায় সমসাময়িক উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতা দেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে আদান- প্রদান করতে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য গবেষণার সঙ্গে তরুণ ও মেধাবীদের সংযোগও ঘটাতে সংগঠনটির নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করোনা মহামারিতে পিএইচএ দূরে বসেও বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও বলেন ড. তাসরির।
তিনি বলেন, স্ট্রোকের ভয়াবহ পরিণাম ও বাড়তে থাকা রোগীর সংখ্যা উদ্বেগ জাগাচ্ছে সব মহলে,একইভাবে স্ট্রোক চিকিৎসাতেও রুপান্তর ঘটানোর সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন- সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: রোগীর প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
কনফারেন্সে নিউরোলজির প্রায় দেড়শ’ চিকিৎসক দেশের ও বিদেশের ১৬ জন বিশেষজ্ঞের বিভিন্ন সেশনে অংশ নেন। সবকটি সেশন শেষে অতিথি ও প্যানেলিস্টদের মাঝে প্রশ্নোত্তর পর্বও অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেশনে ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেম,এনএইচএস যুক্তরাজ্যের হেমাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ড. আমিন ইসলাম স্ট্রোকে দ্রুত চিকিৎসার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। চারটি বাস্তব উদাহরণে তিনি দেখান কিভাবে প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিক চিকিৎসা রোগীর জীবন বাঁচিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম চার ঘন্টা অত্যন্ত নাজুক। যত সময় যেতে থাকে স্ট্রোক রোগীর নিউরন ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে।
অন্যান্য সেশনে বক্তা হিসেবে ছিলেন, যুক্তরাজ্যের দি রয়্যাল লন্ডন হসপিটাল,বারটস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্ট এর কনসালটেন্ট ড. অলিভার স্পুনার, যুক্তরাজ্যের স্ট্রোক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড হারগ্রোভ, যুক্তরাজ্যের কেন্টের স্ট্রোককেয়ার বিশেষজ্ঞ ড. সাইদুর রহমানসহ অন্যরা।
প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। প্রতিকারওযোগ্য বটে। স্ট্রোকের রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া গেলে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
বিশেষ অতিথি ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে স্ট্রোক মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তাই এর আধুনিক চিকিৎসা জানা থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ ভবিষ্যতের যেন বহু মানুষ স্ট্রোকে পঙ্গুত্ব বরণ করে দেশের জন্য বোঝা না হয় তাই বৈশ্বিক স্ট্রোক চিকিৎসা গাইডলাইন ও প্রটোকল এখানেও প্রয়োগ করার ওপর জোর দেন তিনি।
অধ্যাপক ড.কোরেশী বলেন, ‘গেল কয়েক বছরে স্ট্রোকের চিকিৎসায় অসামান্য অগ্রগতি হয়েছে। উন্নত বিশ্বে রোগীর চিকিৎসা শুরু হয় বাড়িতেই। সেখানে জনসাধারণ স্ট্রোকের লক্ষণগুলো জানেন ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। এতে বহু মানুষ যেমন প্রাণে বেঁচে যান। পঙ্গুত্বের হাত থেকেও রক্ষা পান’।
স্ট্রোক নিয়ে সায়েন্টেফিক কনফারেন্সের সায়েন্টেফিক সহযোগী হিসেবে ছিল ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইউনাইটেড হাসপাতাল।
আরও পড়ুন: মার্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত উদ্বেগ মূল্যায়ন করা উচিত: বিশেষজ্ঞ দল
দুবলারচরে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৩ দিনের রাস উৎসব
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নোনা জলে পূণ্যস্নানের মধ্যে দিয়ে দুবলারচরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী তিনদিনের রাস উৎসব শেষ হয়েছে।
বাগেরহাটের সুন্দরবনের দুবলারচরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাস উৎসব উপলক্ষ্যে সোমবার রাতভর পূজা অর্চনা আর প্রার্থনা করা হয়। মঙ্গলবার সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণার্থীরা সাগরে নোনা জলে পূণ্যস্নানে অংশ নেন। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ পূর্ণার্থীরা শান্তি ও মঙ্গলকামনায় পূণ্যস্নান করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস রাস উৎসবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা অর্চনা আর প্রার্থনা করার পর সাগরে পূণ্যস্নানে অংশ নিলে সব পাপ মোচন হবে। মিলবে সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধি।
এবছরও দুবলারচরে রাস উৎসবে ধর্মীয় রীতি মেনে পূজা অর্চনা আর পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলা বা কোন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল না। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই অংশ নিয়েছে পূজায় আর পূণ্যস্নানে।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে শেষ হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দানোৎসব
রবিবার বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে নৌযানে করে সনাতনধর্মাবলম্বীরা রাস উৎসবে অংশ নিতে যান সুন্দরবনের দুবলার চরে। সোমবার পূজা অর্চনা আর মঙ্গলবার পূণ্যস্নানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় তিনদিনের রাস উৎসব।
জানা গেছে, লোকালয় থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় আলোর কোলে প্রায় ২০০ বছর ধরে শ্রীকৃষ্ণের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেখানে শ্রীকৃষ্ণের পূজা অর্চনার পাশাপাশি দরবেশ গাজী ও দরবেশ কালুর স্মরণে মানত দেয়া হয়।
মেলার প্রবর্তক হিসেবে কারও কারও মতে মতুয়া গুরু সন্ন্যাসী হরিজন ও রাজা প্রতাপাদিত্যর নাম শোনা যায়।
২০১৯ বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দুবলারচরে রাস উৎসব হয়নি। আর করোনার কারণে গত দুই বছর ২০২০-২০২১ সালে শুধু ধর্মীয় রীতি রক্ষার্থে পূজা অর্চনা আর পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়। এবছরও শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতি রক্ষায় পূজা অর্চনা ও পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, দুবলারচরে এবছরও রাস মেলা হয়নি। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলবম্বীরা পূজা অর্চনা আর পূণ্যস্নান অংশ নিয়েছে। নির্ধারিত পাঁচটি পথ (রুট) দিয়েই শুধুমাত্র পূণ্যার্থীরা দুবলারচরে প্রবেশ করেছে। আবার একই পথে তাদেরকে ফিরতে হয়। অন্য ধর্মের মানুষদের রাস উৎসবে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।
আরও পড়ুন: কাল থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন সাঁই’র তিরোধান উৎসব
কক্সবাজারে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উদযাপিত
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি খাবার
খাদ্য মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম মৌলিক চাহিদা। তবে ভোজনরসিকদের কাছে খাদ্য হল জীবনের ভালবাসা। আপনি যদি একজন ভোজনরসিক হন, তাহলে আপনি কি এমন কোনো খাবার খেতে প্রস্তুত, যার জন্য এক হাজার ডলার বা এক লাখ টাকারও বেশি খরচ হবে? আসুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি খাবারের নাম। কোটিপতি হলেই কেবলমাত্র এসব খাবারের স্বাদ নেয়া যাবে।
পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি ব্যয়বহুল খাবার
ওয়াগু গরুর মাংস
আপনি যদি মাস্টারসেফ অস্ট্রেলিয়া দেখে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই ওয়াগু গরুর মাংসের কথা জানবেন। কেবল জাপানি গরুর মাংসকেই ‘ওয়াগু বিফ’ বলা হয়। জাপানের চারটি ভিন্ন প্রজাতির গরুর থেকে এ মাংস পাওয়া যায়। এ গরুর মাংস চর্বিবহুলতার জন্য বিখ্যাত।
এছাড়াও এ মাংস আর্দ্র, কোমল যা মুখে দিলে গলে যায়। এর দাম এত বেশি হওয়ার কারণ, এসব গরু প্রতিপালনে খরচ অনেক। ওয়াগু মাংস হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য কঠোর নিয়ম-নীতি মেনে এই গরুগুলোকে পালতে হয়। যাতে তাদের পেশীর পরতে পরতে চর্বি জমে, সেজন্যে বাছুরগুলোকে একেবারে শুরু থেকেই বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ানো হয়।
জাপানে সবচেয়ে দামি ওয়াগু বিফ হচ্ছে 'কোবে বিফ'। যার প্রতি কেজির দাম ৬৪০ ডলার।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায়
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন আকাশের বুকে ধূসর প্রকাণ্ড পাহাড়ের ওপর একগুচ্ছ রঙিন আঁচড়। কখনো তা শ্বেত-শুভ্র, কখনো সূর্য-কমলা। ২৮,১৬৯ ফুট উচু এই চূড়া মাথায় নিয়ে মহান হিমালয়ের অবস্থান নেপাল ও ভারতের সিকিম রাজ্যের মাঝামাঝি সীমান্তরেখায়। আর বাংলাদেশ থেকে এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণে যেতে হবে। দেশের সর্ব উত্তরের এ উপজেলাতেই রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম স্থলবন্দর। চলুন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
পাঁচ গড়ের পঞ্চগড়
দেশের উত্তরাঞ্চলের শেষ বিভাগ রংপুরের জেলা পঞ্চগড়। ১৯৮৪ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি এটি বাংলাদেশের একটি জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এর পূর্বে ফাঁমাগড় প্রশাসন, পশ্চিমে ও উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণে ঠাকুরগাও ও দিনাজপুর জেলা।
জেলাটির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুটি প্রধান কিংবদন্তি। প্রথম কিংবদন্তি বলে যে, পঞ্চগড়ের নামকরণ হয়েছে পুণ্ডু নগর রাজ্যের পঞ্চনগরী নামক একটি অঞ্চলের নামানুসারে।
আরও পড়ুন: শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০ স্থান
আর দ্বিতীয় মতানুসারে, এই তল্লাটে ছিলো ৫টি দুর্গ বা গড়। যেগুলোর নাম- ভিতরগড়, হোসাইনগড়, মীরগড়, দেবেনগড় ও রাজনগড়। এই ৫ গড় থেকেই পরবর্তীতে জায়গাটি পঞ্চগড় নামে পরিচিতি পায়; যার অর্থ ৫ দুর্গ।
পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার উপায়
পঞ্চগড়ের কোন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়
পঞ্চগড়ের অন্তর্গত তেঁতুলিয়া দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা। এই সদরের প্রাণকেন্দ্রে আছে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো। অনেক আগের এই স্থাপনাটির নির্মাণ কৌশল অনেকটা বিলেতি ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। কথিত আছে- এটি নির্মাণ করেছিলেন কুচবিহারের রাজা।
জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত ডাকবাংলোটির পাশে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর একটি পিকনিক স্পট। দুটি স্থাপনা একসাথে দারুণ এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সৌন্দর্যমণ্ডিত এ জায়গাটি দেখার জন্য ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উচুতে উঠতে হবে। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্রোতস্বিনী মহানন্দা। নদীর ওপারে ভারত আর এপারে সুউচ্চ গড়ের ওপর এই ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পটটি। এই ডাকবাংলোর বারান্দা থেকেই দেখা যায় দূরের দিগন্তরেখায় ভেসে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
আরও পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
এছাড়া তেঁতুলিয়ার অন্যান্য জায়গার মধ্যে বাংলাবান্ধা, বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতু, ভিতরগড় থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।
পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সেরা সময়
সাধারণত শীতকালে দূরের মেঘমুক্ত আকাশে যেন ভেসে থাকতে দেখা যায় তুষারশুভ্র পাহাড়ের চূড়া। রোদের আলোয় চিকচিক করতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শোভা উপভোগ করার জন্য শীতই সবচেয়ে সেরা সময়। পাহাড় চূড়ার প্রাকৃতিক দৃশ্যটি সারা দিনের ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রুপ ধারণ করে। তাই বছরের যে কোন সময় না গিয়ে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টাতে যাওয়া উত্তম। এই সময়টাতে আকাশ একদম পরিষ্কার থাকে। মেঘের সঙ্গে বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার লুকোচুরি খেলার কোন উপায় থাকে না।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গায় দাড়ালে খুব ভোরে মেঘ ও কুয়াশামুক্ত নীল আকাশ জুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের খালি চোখেই এঁকে দেয় বিস্ময়ের চিহ্ন।
আরও পড়ুন: ইউএস-বাংলার বিমানে ভ্রমণ করলে হোটেল ফ্রি
ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যাওয়ার উপায়
বাস ও ট্রেন; ঢাকা থেকে কেবল এই দুই মাধ্যমে পৌছানো যায় পঞ্চগড় জেলায়। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল, শ্যামলী ও মিরপুর থেকে পঞ্চগড়ের বাস পাওয়া যায়। নন-এসি বাসে খরচ নিতে পারে মাথাপিছু ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা, আর এসি বাস ভাড়া পড়তে পারে ১৩০০ থেকে ১৯০০ টাকা।
পঞ্চগড় নেমে লোকাল বাসে করে যেতে হবে তেঁতুলিয়ায়। এ পথে সারাদিনি চলাচল করে এই বাসগুলো। বাসের ভাড়া পড়তে পারে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়ে পড়ে। ভাগ্য ভালো হলে এ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দূরের আকাশে চোখে পড়তে পারে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য।
ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ারও বাস আছে। এগুলোর ভাড়া জনপ্রতি ১১৫০ টাকা পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
ট্রেনে যেতে হলে ঢাকার কমলাপুর থেকে সরাসরি পঞ্চগড় ট্রেন আছে। শ্রেণীভেদে ট্রেন ভাড়া জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৫৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৯৪২ টাকা হতে পারে।
পঞ্চগড় নেমে এখানকার কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন ও চৌরঙ্গী মোড়ে পাওয়া যাবে প্রাইভেট কার ও মাইক্রো। এগুলোতে করে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যাবে। মাইক্রো ও প্রাইভেট কার রিজার্ভ করতে আনুমানিক কমপক্ষে ২,০০০ থেকে শুরু করে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া লাগতে পারে।
পঞ্চগড় ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
তেতুলিয়া উপজেলায় আবাসিক হোটেলের নন-এসি রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। এসি ডাবল বেডের ভাড়া পড়তে পারে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। মহানন্দা নদীর তীরের ডাকবাংলোতে থাকা যেতে পারে। তবে তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে। এই ডাকবাংলোতে কক্ষ প্রতি ভাড়া ৪০০ টাকা। এছাড়া আছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের জেলা পরিষদের ডাকবাংলো এবং বন বিভাগের রেস্টহাউস। এগুলোতেও থাকার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুন: পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
আর পঞ্চগড়ে এসে থাকতে চাইলে এখানে আছে সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল। এখানে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় আছে নন-এসি কক্ষ এবং ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে এসি কক্ষ।
পঞ্চগড়ের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে, যেগুলো এখনো গ্রামগুলোতে রান্না হয়ে থাকে। অবশ্য এগুলোর অধিকাংশই এখন বিলুপ্তির পথে। খাবারগুলোর মধ্যে ডিম ভূনা, তেঁতুলিয়া উপজেলায় হালকা, শীদলের ভর্তা, পাটা শাকের খাটা, কাউনের ভাত, সজির মুড়ার ছ্যাকা ও মোড়ত লাভা শাকের পেলকা অন্যতম।
পঞ্চগড়ের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় দৃশ্য ছাড়াও পঞ্চগড় ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক নিদর্শনের অপূর্ব উপচার সাজিয়ে রেখেছে। এগুলোর মধ্যে মহারাজার দিঘী, চা বাগান, ভিতরগড়, শাহী মসজিদ, মিরগড়, জিরো পয়েন্ট, রক্স মিউজিয়াম, এবং বারো আউলিয়া মাজার অন্যতম।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
পরিশিষ্ট
বাংলাদেশ থেকে সুদূর কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দর্শনে পঞ্চগড় ভ্রমণে পাওয়া যাবে এক অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের অভিজ্ঞতা। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নানা শ্রেণীর পর্যটকদের আসা-যাওয়ার ফলে এ অঞ্চলটিতে তৈরি হয়েছে পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধির সুযোগ। হাজার বছরের চমকপ্রদ ইতিহাস-ঐতিহ্য, পাথর ও চা শিল্প; সব মিলিয়ে ভ্রমণের জন্য এক পরিপূর্ণ এলাকা। শুধু প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়নের। বিশেষ করে সরকারি উদ্যোগে এখানে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে, এই ছোট্ট উপজেলাই পরিণত হতে পারে রাজস্ব আয়ের একটি কার্যকর উৎসে।
লা গ্যালারিতে অভিজিৎ চৌধুরীর একক চিত্র প্রদর্শনী
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে শুরু হলো শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর ১৫তম একক চিত্রপ্রদর্শনী।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) ‘নন হায়ারার্কিক্যাল অর্ডার অব ফর্মস’ শিরোনামে এই প্রদর্শনী উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এছাড়াও ছিলেন খ্যাতনামা অভিনেতা আফজাল হোসেন ও জাহিদ হাসান।
অভিজিৎ চৌধুরী বাংলাদেশের একজন প্রকৃষ্ট ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী হিসেবে পরিচিত। তিনি তার শিল্প অনুভূতির দ্বারা প্রকৃতির সব ধরনের উপাদান সযত্ন ও প্রতীতির সঙ্গে গ্রহণ করে তার চিত্রকলায় সেগুলিকে অভিরূপ উপায়ে ফুটিয়ে তোলেন।
আরও পড়ুন: কাল থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন সাঁই’র তিরোধান উৎসব
শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০ স্থান
শীতকাল মানেই ভ্রমণের মৌসুম। যে সময়ে নেই ভয়াবহ গরমে ক্লান্ত হবার ভয়, নেই বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত সড়কের ঝামেলা। ক্রমাগত উষ্ণ হতে থাকা বাংলাদেশ, শীতকালে তার চিরাচরিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ফিরে পায়। সেই সৌন্দর্যের মোহে আবিষ্ট হয়ে দীর্ঘ শিশির ভেজাপথ হেটে গেলেও ভর করবে না কোনো ক্লান্তি। তাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়টিতে দেশ জুড়ে পড়ে যায় বনভোজনের ধুম। চলুন, শীতকালে নিরাপদে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
এই শীতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের ১০টি জনপ্রিয় স্থান
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কথা যখন পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ নিয়ে, তখন সেখানে কোনো সময়ের বাধাই মানা যায় না। তাই বছরের পুরোটা সময়ই দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অখণ্ড সৈকতে শুধু উত্তাল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেয়া যায় সারাটা দিন।
ঢাকা থেকে স্থলপথে বাসযোগে ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে হলে আগে চট্রগ্রাম পর্যন্ত যেয়ে সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার যেতে হবে। চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কক্সবাজার যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজার
বাংলাদেশের এই একমাত্র প্রবাল দ্বীপকে স্থানীয়া নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণের মাত্র ১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির অবস্থান কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। একদিকে নিঃসীম নীল দিগন্তের কোণে ফেনিল সমুদ্রের মিশে যাওয়া, অন্যদিকে সারি সারি নারিকেল গাছ ঘেরা সাধারণ জীবন ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে অমোঘ আকর্ষণে কাছে টানে।
সেন্টমার্টিন যেতে হলে ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফ পৌঁছে সেখান থেকে জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। জাহাজগুলো সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন চলাচল করে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জাহাজগুলো। আর ফেরত আসে বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে।
কুয়াকাটা, পটুয়াখালী
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতের অবস্থান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার অন্তর্গত লতাচাপলি ইউনিয়নে। কক্সবাজারের মত অভিজাত না হলেও, এখানকার নিরিবিলি বেলাভূমি এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কুয়াকাটাকে করেছে অনন্য।
আরো পড়ুন: পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায় হচ্ছে নদী ও সড়ক পথ। পূর্বে সবাই ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে বাকি পথ বাসে কুয়াকাটা যেতো। তখন লঞ্চ ও বাস যোগে পুরো অর্ধেক দিন লেগে যেতো। তবে এখন পদ্মা সেতুর কারণে মাত্র ৫ ঘন্টায় বাসে করে সরাসরি পৌছনো যায় কুয়াকাটায়।
সুন্দরবন, খুলনা
বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী এবং ভারতের কিছু অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বন। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃত এই বনাঞ্চলটি বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণের আধার। এখানে জন্মান সুন্দরী বৃক্ষের কারণে সুন্দরবন নামেই বিশ্বখ্যাতি পেয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এই প্রধান বিচরণক্ষেত্রটি।
এখানে ঘুরতে যেতে হলে অবশ্যই বন অধিদপ্তরে নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমতি ও সাথে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে নিতে হয়। এর সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার একমাত্র মাধ্যম লঞ্চ ও ছোট জাহাজ।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
সুন্দরবন সাধারণত সবাই খুলনা বা মোংলা হয়ে যেতো। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে এখন সড়কপথেই সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে পারছে দেশের হাজারো মানুষ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজার
এক হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও আংশিক শ্রীমঙ্গল নিয়ে। দেশের ট্রপিকাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত এই জাতীয় উদ্যানটি জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২৪০ প্রজাতির পাখির আশ্রয়স্থল এই লাউয়াছড়া। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের সবচেয়ে বড় বিচরণ এলাকা হিসেবে এর সুখ্যাতি রয়েছে।
বনের ভেতরে আছে তিনটি ট্রেইল; যেগুলো ট্রেকিং করার সময় খুব কাছ থেকে দেখা যায় বনের সৌন্দর্যকে।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল পৌছে লাউয়াছড়া ভ্রমণ করা যায়।
কুতুবদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার
বাংলাদেশে বাতিঘর দেখতে হলে চলে যেতে হবে কক্সবাজার জেলার ছোট উপজেলা কুতুবদিয়ার এই দ্বীপটিতে। এখানকার প্রাচীন বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষটি এখনো যেন ভাটার সময় পুরানো ইতিহাসের গল্প বলে। ২১৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট এই দ্বীপে আছে নির্জন সমুদ্র সৈকত এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার।
বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও প্রাকৃতিক ভাবে লবণ চাষের জন্য এ জায়গাটি বেশ প্রসিদ্ধ। এই দ্বীপ ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার থেকে প্রথমে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড আসতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি করে মগনামা ঘাট পৌছে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে নেমে পড়তে হবে কুতুবদিয়া চ্যানেলে। আর এই কুতুবদিয়া চ্যানেলই পৌছে দিবে কুতুবদিয়া দ্বীপে।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
মনপুরা দ্বীপ, ভোলা
ভোলা জেলার এই বিচ্ছিন্ন ভূমিটি সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত এবং হরিণ দেখার জন্য পর্যটকদের প্রিয় স্থান। মেঘনা নদীর ভেতরে ৫০০ মিটার পর্যন্ত স্থাপন করা মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের ভীড় থাকে। দ্বীপ ভ্রমণে এসে দর্শনার্থীরা চৌধুরী প্রজেক্টের মাছের ঘের আর সারি সারি নারিকেল গাছের বিস্তৃত এলাকাতেও ঘুরতে আসেন। নদীর ধারে সাইক্লিং কিংবা সবুজের মাঝে ক্যাম্পিং-এর জন্য সেরা জায়গা মনপুরা দ্বীপ।
মনপুরা দ্বীপে যাওয়ার জন্য ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫টায় লঞ্চে উঠে পড়তে হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে থেকে সড়ক পথে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটে এসে সি-ট্রাকে করেও মনপুরা দ্বীপে আসা যায়। সি-ট্রাক ছাড়ার সময় বিকাল ৩টা।
নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালী
নোয়াখালীর হাতিয়া অঞ্চলে বঙ্গপসাগর ঘেরা ছোট্ট এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর। শীতের মৌসুমে পুরা নিঝুম দ্বীপ ভরে যায় অতিথি পাখিতে। এখানকার সবচেয়ে সেরা আকর্ষণ হচ্ছে চিত্রা হরিণ। একসাথে এত চিত্রা হরিণের দেখা দেশের আর কোথাও পাওয়া যায় না। নিঝুম দ্বীপের নামা বাজার সৈকত থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
সড়ক পথে যে যানবাহনই ব্যবহার করা হোক না কেন, নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে প্রথমে পৌছতে হবে চেয়ারম্যান ঘাটে। এখানকার হাতিয়া যাওয়ার সি-ট্রাক বা ট্রলারগুলো নলচিরা ঘাটে নামিয়ে দেবে। এবার মোটর সাইকেল দিয়ে পৌছতে হবে হাতিয়ার অন্য প্রান্ত মোক্তারিয়া ঘাটে। সেখান থেকে ট্রলারে চড়ে নিঝুম দ্বীপ।
তবে সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়ার লঞ্চে উঠে পড়া। হাতিয়ায় পৌছার পর তমুরদ্দী ঘাট থেকে পাওয়া যাবে সরাসরি নিঝুম দ্বীপের ট্রলার।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, হবিগঞ্জ
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা অবস্থিত সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। প্রায় এক হাজার ৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় ১৯৮২ সালে। এটি প্রায় ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রায় ৬২ প্রজাতির প্রাণী এবং প্রায় ১৬৭ প্রজাতির পাখির আবাস।
আরো পড়ুন: ভারতের টুরিস্ট ভিসা কীভাবে পাবেন: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রসেসিং ফি
এই অভয়ারণ্যে আছে অপরূপ সুন্দর তিনটি ট্রেইল, গোটা বনকে এক নজরে দেখার জন্য আছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌছে টমটমে চড়ে যেতে হবে নতুন ব্রীজ। সেখান থেকে সিএনজিতে চুনারুঘাট মধ্যবাজার পৌছে আরেকটি সিএনজিতে করে কালেঙ্গা বাজার নামতে হবে। তারপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই অভয়ারণ্যের প্রধান ফটক।
মালনীছড়া চা-বাগান, সিলেট
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা-বাগান এই মালনীছড়া চা-বাগান। এক হাজার ৮৪৯ সালে লর্ড হার্ডসনের তত্ত্বাবধানে এক হাজার ৫০০ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় এই চা-বাগান। বর্তমানে বেসরকারী তত্ত্বাবধানে থাকলেও চা-বাগানপ্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ পছন্দের একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ানো যায় বাগানে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বাস, ট্রেন অথবা বিমান; এই তিন রুটের যে কোনটি ব্যবহার করে ঢাকা থেকে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। অতঃপর শহরের যেকোন জায়গা থেকে রিক্সা কিংবা সিএনজি যোগে সহজেই পৌছা যাবে মালনীছড়া চা-বাগানে।
শেষাংশ
শীতকালে বাংলাদেশ ভ্রমণের জনপ্রিয় এই ১০টি স্থান হিম শীতল প্রকৃতিকে দারুণ ভাবে উপভোগ্য করে তোলে বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। তবে এই আনন্দটা ফিকে হয়ে যেতে পারে যদি যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়। এ সময় যাত্রা শুরুর সময় অবশ্যই সাথে গরম কাপড় নিয়ে নেয়া আবশ্যক। নিয়মিত ওষুধপত্রের সাথে ডেটল, স্যাভলন, ব্যান্ডেজ, তুলার মত কিছু ফার্স্ট এইড সামগ্রি সঙ্গে রাখা উচিত। একটি সুপরিকল্পিত পূর্বপ্রস্তুতিই পারে একটি ভ্রমণকে নিরাপদ নির্ঝঞ্ঝাট করে তুলতে।
রাঙামাটিতে শেষ হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দানোৎসব
শান্তি ও মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে লাখো পূর্ণার্থীর শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যের মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান উদযাপিত হলো। শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটির রাজবন বিহারে চীবর উৎসর্গের মধ্যদিয়ে শেষ হলো ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
এদিন দুপুরে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘন্টায় তৈরীকৃত চীবর রাঙামাটি মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত বনভন্তের শীর্ষ রাঙামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের হাতে চীবর উৎসর্গ করেন রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।
চীর উৎসর্গের সময় ভক্তদের সাধু,সাধু,সাধু কন্ঠধ্বনিতে রাজবন বিহারের সমগ্র আশেপাশে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
বিহার প্রাঙ্গণে আগত লাখো লাখো পুর্ণার্থীর সামনে রাঙামাটি রাজবন বিহারের প্রধান মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তের অমৃত কথা অডিও উপস্থাপন করা হয়। পরে আগত দায়ক দায়িকার উদ্দেশ্যে স্বধর্ম দেশনা দেন রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এসময় তিনি কৌশল কর্ম, সৎ চেতনা ও সৎ জীবন নিয়ে জীবনযাপন করার জন্য হিতোপোদেশ দেন।
আরও পড়ুন: বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ১ কোটি টাকা অনুদান দিলেন প্রধানমন্ত্রী
চীবর দান উৎসবে রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্হায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল জাহাঙ্গীর আলম, রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, বিএনপির নেতা দীপন তালুকদার, রাজবন বিহারের কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসাসহ দেশি-বিদেশি পূর্ণার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
প্রাচীন ইতিহাস, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি ও অকৃত্রিম সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতিপ্রেমী ও দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের জন্য অনেক উপাচারে সাজানো সুজলা-সুফলা এই দেশটি। সিলেটের হাওড় আর ঝিরি পথের ঝর্ণাগুলো যেন সে কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে অধিক বৃষ্টিপাতের সুফলটা দারুণভাবে উপভোগ করা যায় বর্ষা মৌসুমে। হাওড় ও নদী ভরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়গুলোও যেন সেজে ওঠে সাদা ঝর্ণায়। তেমনি এক অপরূপ জায়গা সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে ভ্রমণ নিয়েই আজকের নিবন্ধ।
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী: ভৌগোলিক অবস্থান ও নামকরণের ইতিহাস
নদীটির উৎপত্তি ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে মেঘালয়ের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়। বাংলাদেশের অংশে এর অবস্থান সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে। ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫৭ মিটার প্রস্থের সর্পিলাকার নদীটি রক্তি নামে মিলেছে সুরমা নদীর সঙ্গে। সবুজ বনে ঢাকা বারেক টিলা আর খাসিয়ার মাঝে পড়েছে আট মিটার গভীর এই নদী, যার অববাহিকার আয়তন ১২৫ বর্গ কিলোমিটার। বিশ্বম্ভরপুর থেকে দক্ষিণে জামালগঞ্জ উপজেলা শহরে প্রবেশ করায় সেখানে গড়ে উঠেছে আনোয়ারপুর ও দুর্লভপুর নদীবন্দর দুটি।
যাদুকাটা নদীর প্রাচীন নাম রেনুকা। অনেক আগে এই নদীতীরেই গড়ে উঠেছিলো প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে যাদুকাটা নদী।
আরো পড়ুন: ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
লোকমুখে এক গল্প প্রচলিত আছে এই নদীটিকে নিয়ে। একবার এক গাঁয়ের বধু তার শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে মাছ কাটছিলেন। হঠাৎ এক পর্যায়ে অন্যমনষ্ক হয়ে ভুলবশত মাছের জায়গায় তার কোলের শিশুটিকেই কেটে ফেলেন। সেই শিশুপুত্রটির নাম ছিলো যাদু, আর গ্রামটি ছিলো এই নদীর তীরে। আর মাছটি ছিলো এই নদীরই মাছ। এই গল্প থেকেই নদীটির সঙ্গে জুড়ে যায় যাদুকাটা নামটি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পর্যটন এলাকা
এই নদীর প্রবহমান স্বচ্ছ পানি, নীল দিগন্ত আর সবুজ গালিচার পাহাড়; সব মিলিয়ে প্রকৃতির যেন এক অপূর্ব মিথস্ক্রিয়া। নদীর প্রতিটি পাড় যেন প্রকৃতির আপন মহিমায় স্বযত্নে সাজানো। নৌকা দিয়ে ঘোরার সময় যাদুকাটা নদীতে চোখে পড়বে স্থানীয় শ্রমিকদের ব্যস্ত জীবন। সেই সুবহে সাদেকের সময় শুরু হয় তাদের কাজ আর সেটা চলতে থাকে সন্ধ্যা অবধি। তাদের পেশা নদী থেকে কয়লা, বালি ও পাথর আহরণ করা।
এ অপরূপ সৌন্দর্য্যের সঙ্গে জনজীবনের এক চিরন্তন মেলবন্ধন। আর এই রূপেই মুগ্ধ হয়ে এই নদীমুখী হন শত শত দর্শনার্থী। এমনকি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ-বিভুঁই থেকেও পর্যটকরা এসে ভিড় জমান যাদুকাটার যাদু দেখতে। এখানে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বর্ষার ঢলের সময় মেঘালয় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ১৮টি পাহাড়ি ছড়া থেকে বেরিয়ে আসে চোখ জুরানো ঝর্ণা। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শ্রী শ্রী অদ্বৈতা মহাপ্রভুর আশ্রম ও পূর্ণতীর্থ স্থান এবং শাহ আরেফিন আউলিয়ার আস্তানা। পশ্চিম তীরে দেখা যাবে এখানকার সবচেয়ে সেরা দর্শনীয় বস্তু; সুনামগঞ্জের আইফেল টাওয়ার। প্রায় ১৫০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারটি বারেক টিলা নামে সুপরিচিত। আর পাহাড়ি সবুজের সঙ্গে ছন্দ মেলাতে নদীর পাশের বৃহত্তর শিমুল বাগান তো আছেই।
ভারতের সারি সারি উঁচু-নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বারেক টিলার বুকে ঘন সবুজের সমারোহ পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে হলহলিয়া নামক গ্রামে গেলে পাওয়া যাবে ৮০০ বছর পুরানো প্রাচীন লাউড় রাজ্যের হাবেলি রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ।
মেঘালয় পাদদেশে থাকা গারো মানুষদের ভাঙা ভাঙা বাংলা কথা বেশ আনন্দ দেয় পর্যটকদের। কখনও ইঞ্জিনচালিত নৌকা, কখনও বা ডিঙ্গিতে ভেসে, কখনও বা তীর ঘেষে পায়ে হেটে যাদুকাটার মন্ত্রমুগ্ধতা বিমোহিত হয়ে উপভোগ করে পর্যটকরা।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে যাদুকাটা নদী ঘুরতে যেতে হলে প্রথমে সুনামগঞ্জ পৌছতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গার বাস টার্মিনালগুলো থেকে প্রতিদিনি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাস যাত্রা করে। এগুলোর মধ্যে নন-এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া লাগতে পারে প্রায় ৭০০ টাকা আর এসি-বাসে গেলে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মত। সুনামগঞ্জ পর্যন্ত পৌছতে সময় লাগতে পারে প্রায় আট ঘন্টা।
সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে মোটরসাইকেল অথবা সিএনজি চালিত অটোগুলো যাদুকাটা নদী পৌছে দেয়। মোটরসাইকেলের ভাড়া পড়তে পারে প্রায় ২৫০ টাকার মত। সিএনজি অটোতে সাত জন হলে পুরোটা রিজার্ভ নেয়া যায়। এছাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় যাদুকাটা যায়। ফেরার সময়েও একই পথে আসা যায়।
তবে পর্যটকরা সাধারণত একসঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওড়, টেকেরঘাটের নীলাদ্রী লেক, শিমুল বাগান ও যাদুকাটা নদী দেখে সুনামগঞ্জ ফিরে আসেন। এতে অল্প সময়ের মধ্যে ভ্রমণের খরচটা বেশ ভালো মতই পুষিয়ে নেয়া যায়। তাই হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে (কমপক্ষে দুই দিন) ঘুরে আসা যেতে পারে যাদুকাটা নদীসহ অন্যান্য দর্শনীয় জায়গাগুলো।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
যাদুকাটা নদী ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
যাদুকাটা নদীর আশেপাশে তেমন একটা থাকার ব্যবস্থা নেই। খুব বেশি ভিড় হলেও এখানকার পর্যটন সেবা বলতে তেমন কোন স্থাপনা গড়ে উঠে নি। বড়ছড়া বাজারে গেলে থাকার জন্য কয়েকটি গেস্ট হাউজ পাওয়া যাবে। এখানে একদিনের জন্য মাথাপিছু ২০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ পড়তে পারে। আর তাহিরপুর বাজারে আছে দুটি আবাসিক হোটেল। সব চেয়ে ভালো সুনামগঞ্জ শহরে এসে থাকা। শহরে বিভিন্ন মান ভেদে হোটেল ভাড়া ২০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
লেকের পাশে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা একটি চুনা পাথরের কারখানা আছে। এর গেস্ট হাউজটা খালি থাকলে রাত্রি যাপনের জন্য এখানে থাকা যেতে পারে। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতি নেয়া সাপেক্ষে অনেকে উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করে নেয়।
খাবারের জন্য লাউড়ের গড় বাজারে পাওয়া যাবে সাধারণ মানের দেশীয় খাবার। বারিক্কা টিলার নিচের হোটেলগুলোও দুপুরের খাবারের জন্য মোটামুটি। এছাড়া বড়ছড়া বাজার, টেকেরঘাট বাজার, তাহিরপুর বাজারে মোটামোটি মানের খাবার দিয়ে উদরপূর্তি করা যাবে। কিন্তু ভালো খাবারের জন্য চলে আসতে হবে সুনামগঞ্জ শহরে। এখানকার রেস্টুরেন্টগুলো খাবারের মানের দিক থেকে বেশ ভালো। নদী দেখতে যাওয়ার সময় প্রয়োজনে এখান থেকে সঙ্গে করে কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণে প্রয়োজনীয় টিপস
- যাদুকাটা নদীতে ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখা উচিত
- এখানে দলবল মিলে যাওয়াটাই উত্তম
- বজ্রপাতের সময় নৌকার ছইয়ের নিচে অবস্থান নিতে হবে
- খাবারের উচ্ছিষ্ট ও প্যাকেট পানিতে ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না
- নৌকাতে মাইক বা মোবাইলে গান বাজিয়ে শব্দ দূষণ পরিহার করা উচিত
- রাতের বেলা অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো জ্বালানো থেকে বিরত থাকতে হবে
- মাছ, বন্যপ্রাণী এবং পাখি ধরা যাবে না। এমন কোন কাজ করা যাবে না, যেখানে এদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে।
- নৌকার গলুই বা ছইয়ের ওপর দাড়িয়ে ছবি তোলার মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে
- ভ্রমণের পূর্বেই সিলেটের আবহাওয়ার সম্বন্ধে ভালো করে জেনে যেতে হবে। নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রতিকূল আবহাওয়া থাকলে নৌকায় চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- ভ্রমণের সময় কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বা হারিয়ে গেলে জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করে সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
- যাত্রা শুরুর সময় নিয়মিত ওষুধ, টয়লেট পেপার, কয়েকটি বড় বড় পলিথিন, ব্যাকআপ ব্যাটারিসহ টর্চ লাইট, পাওয়ার ব্যাংক, মগ, রেইনকোর্ট বা ছাতা, চাদর, খাবার পানি, গামছা বা রুমাল, এবং সহজে শুকায় এমন কাপড়-চোপড় সঙ্গে নেয়া উত্তম।
আরো পড়ুন: পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
পরিশিষ্ট
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে ভ্রমণ সারা জীবনের জন্য স্মরণীয় এক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে। আর এই অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করতেই বছরের সারাটা সময়ই টাঙ্গুয়ার হাওড়, টেকেরঘাট ও বারেক টিলা ঘুরে আসার সময় পর্যটকরা যাদুকাটা নদী দেখে আসেন। এখানে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে ইকোট্যুরিজম স্থাপন করা হলে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে জায়গাটি। শুধু যে সরকারেরই রাজস্ব আয় হবে তা নয়, স্থানীয় তরুণ সম্প্রদায়ও খুঁজে পাবে কর্মসংস্থানের জায়গা।
স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা ও সেমিনার
‘পদ্মা পেরিয়ে দক্ষিণ বাংলায়’- এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম ‘স্তন ক্যানসার সচেতনা দিবস’- ২০২২ উপলক্ষে গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা করেছে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি রবিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এসে পৌঁছায়। সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকালে কালীগঞ্জের সমবায় ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি মেডিকপস্ হাসপাতালের আয়োজনে বলিদাপাড়া গ্রামে সেমিনার, স্তন ক্যান্সার সচেতনা ও স্ক্রিনিং বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও সকাল থেকে স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত ২৩ জন রোগী দেখা হয়।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়ের প্রক্রিয়া, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন এর নেতৃত্বে চিকিৎসকসহ ২২জনের একটি টিম এই শোভাযাত্রা ও সেমিনারে অংশ নেন।
বক্তব্য রাখেন সেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যান সংস্থা হীল এর জেবুন নেছা, প্রকৃতি মেডিকপস্ হাসপাতালের সহভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভাত ব্যানার্জী, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের প্রোগ্রাম অফিসার শাহজাহান আলী বিপাশ প্রমুখ।
সেমিনারে প্রিভেনশন অব ক্যান্সার, আর্লি ডায়াগনোসিস, স্ক্রিনিং ইত্যাদির গুরুত্ব তুলে ধরেন চিকিৎসকরা।
এ সময় বক্তরা বলেন, সার্জিক্যাল ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিংয়ের জন্য সারা দেশে চারশটি ভায়া সেন্টার তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের স্ক্রিনিং করা যায়। যা অনেকে জানে না।
আরও পড়ুন: রোগীর প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
আত্মহত্যার প্রবণতা: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
পাহাড় হাইকিং ও ক্যাম্পিং ভ্রমণপিপাসুদের সবচেয়ে প্রিয় ক্রিয়াকলাপগুলোর মধ্যে অন্যতম। রোমাঞ্চকর ট্রেইলগুলোর প্রতি ধাপে ধাপেই যেন ওত পেতে থাকে হাজারও বিপদ। এই রুদ্ধশ্বাস যাত্রার সঙ্গে যখন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা যোগ হয় তখন সেই রোমাঞ্চও হুমকির মুখে পড়ে। পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সর্তকতা না নেয়া হলে পুরো যাত্রাটাই অশুভ হয়ে যেতে পারে। তাই চলুন, দুর্ঘটনাগুলোর কারণ ও নিরাপদ পাহাড় ভ্রমণে করণীয় জেনে নেয়া যাক।
পাহাড়ি অঞ্চলে মৃত্যুর কারণ
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুই কারণেই স্থানীয় সহ পর্যটকদের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়, যা অনেক সময় তাদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে। সাধারণত বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড়ী এলাকার প্রকৃতির কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে। বৃষ্টিতে ঢাল, গর্ত, খানা-খন্দ, চূড়া সহ পাহাড়ের প্রতিটি পথ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এ অবস্থায় রাস্তা খুব ভালো করে চেনা থাকার পরেও স্থানীয়রা বিপদে পড়েন। আর রাস্তা না জানা পর্যটকদের জন্য দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।
পাহাড়ে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর আরো একটি কারণ হলো পাহাড়ে ভূমিধ্বস। সাধারণত নদীর পানিতে ক্ষয় হয়ে, ঢালে গর্ত হয়ে, বৃষ্টির পানি জমে, ভূমিকম্পের কারণে ভূমিধ্বস হয়ে থাকে। এছাড়া বন উজাড়, ঢালের উপর বাড়ি-ঘর বা অন্যান্য কাঠামো বানানো, পাহাড় কাটা, সাপ্লাইয়ের পাইপলাইন ফুটো হয়ে পানি পড়া, যে কোন ধরণের কৃষি কাজের মত মানুষ সৃষ্ট কারণও দায়ী ভূমিধ্বসের জন্য। মৌসুমী বর্ষার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় পাহাড়ে প্রায়ই বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় সমূহ
আবহাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে জেনে নেয়া
এটি অবশ্যই সর্বপ্রথম কাজ; তাছাড়া গন্তব্য যখন পাহাড়ী এলাকা, তখন এর কোন ব্যতিক্রম করা উচিত নয়। পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। পাহাড়ে দিনের বেলা বেশ উষ্ণ হলেও গ্রীষ্মের রাত এবং ভোরবেলা বেশ ঠান্ডা হয়। তাই সব ধরণের আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা ভাল। তবে বৃষ্টির ব্যাপারে সাবধান!
এর জন্য ভ্রমণকারিদের যাত্রার শুরুতেই পাহাড়ী এলাকার আবহাওয়া সম্বন্ধে জানতে হবে। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই সিলেট বা চট্রগ্রামের তাপমাত্রা জেনে নেয়া যায়। ভেজা আবহাওয়ায় যাওয়ার পাহাড়ী রাস্তা তো পিচ্ছিল হয়ই; পাশাপাশি গন্তব্য পর্যন্ত যাওয়ার দীর্ঘ পথটুকুও দুর্গম হয়ে ওঠে।
পার্বত্য অঞ্চলে বাজ পড়া একটি সাধারণ ঘটনা, তাই বজ্রপাতের সময় পাহাড়ে আটকা পড়া এড়াতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়ার কোন বিকল্প নেই। অবস্থা শান্ত হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করে তারপর বের হওয়া উচিত। এটি প্রতিকূল পরিবেশে অবহেলার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পড়া থেকে বিরত থাকা যাবে।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
উপযুক্ত জামাকাপড় ও জুতা পরা
ঠান্ডা বা গরম যে কোন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত পরিধেয় বাছাই করা উচিত। আর পাহাড়ী এলাকার ক্ষেত্রেও পোশাক বিশেষ ভাবে বেছে নিতে হবে। ক্লান্তিকর হাইকিং-এর সঙ্গে মানিয়ে নেবার জন্য শরীরকে আরামদায়ক রাখতে উপযুক্ত পোশাক এবং জুতা সঙ্গে নেয়া জরুরি। এর জন্য ভ্রমণের আগেই পোশাক ও জুতা কিনে রাখতে হবে।
চট্রগ্রাম ও সিলেটের জন্য সাধারণত মজবুত জুতা, থার্মাল এবং হালকা ওজনের ডাউন ফেদার জ্যাকেটই যথেষ্ট। অবশ্য শীতের সময় সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গরম কাপড় নিতে হবে।
ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা রাখা
শীতে কাপড়-চোপড় বেশি লাগে মানে এই না যে ব্যাগ ভর্তি করে যাত্রা করতে হবে। পাহাড় চড়ার জন্য হালকা থাকা আবশ্যক। কেননা ব্যাগে প্যাক করা সমস্ত কিছু নিজেকেই বহন করতে হয়। ভ্রমণের জন্য যাবতীয় গ্যাজেট থেকে যেগুলো না নিলেই নয় সেগুলোই শুধু নিতে হবে। বেশি পোশাক নেয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য সরঞ্জামগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য রেখে প্যাক করতে হবে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- ভ্রমণকারির জন্য ব্যাগের ওজনটি সহজে বহন করার মত হচ্ছে কিনা।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি না নেয়া
ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত দুঃসাহসিক কাজ করতে যেয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে খারাপ আবহাওয়ার সময় দুর্ঘটনার মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে। কোন দুর্গম ট্রেইল পাড়ি দেয়া, অজানা কোন রাস্তায় আন্দাজ করে হেঁটে যাওয়া, লাফিয়ে কোন বড় গর্ত পার হওয়ার মত কাজগুলো অনেকেই ছোট করে দেখেন।
তাছাড়া অনেকে তাড়াহুড়া অথবা শর্টকাটে যাওয়ার জন্য বিপজ্জনক রাস্তা বেছে নেয়। এখানে মনে রাখা ভালো যে, পর্বতগুলো কিন্তু কোথাও যাচ্ছে না। তাই সতর্কতামুলক কাজে দেরি হলে কোন সমস্যা নেই। বরং তা অনেক খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচাবে।
সঙ্গে একজন গাইড নেয়া
একজন পর্বত আরোহীর দক্ষতা যে স্তরেরই হোক না কেন, প্রতিটি যাত্রাই ভিন্ন ভিন্ন ঝুঁকির হাতছানি দেয়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একজন পেশাদার গাইডকে সঙ্গে রাখা। সে শুধু ঝুঁকির সম্ভাবনা কমানোর কৌশলগুলো ব্যবহারেই সাহায্য করবে না, পুরো পাহাড়ী ট্রেইলটার একজন গাইড হিসেবেও কাজ করবে।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পর্যটকদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি পূরণ করে সে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। এক কথায়, সার্বিক ক্ষতি থেকে দূরে রেখে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে একজন গাইড পুরো পর্বত আরোহণটাকে নিশ্চিন্তে উপভোগ করার জায়গা করে দেয়।
পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার ও পানি নেয়া
যে কোন দীর্ঘ ভ্রমণের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হাইড্রেটেড থাকা এবং শক্তি বজায় রাখার জন্য খাবার খাওয়া। এ জন্য বিভিন্ন ফলমুলের পাশাপাশি হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে। পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণের জন্য একটি রিফিল-যোগ্য পানির বোতল সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
পর্বতারোহণের সময় সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরে খাদ্যের ভালো যোগান অপরিহার্য। এটি হাইকিং করার সময় যাত্রা অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত হাইকিং করার সময় ৩০০০ থেকে ৬০০০ ক্যালোরি খরচ হতে পারে, যা অবিলম্বে পুষিয়ে নেয়া দরকার।
আরো পড়ুন: ভারতের মেডিকেল ভিসা: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ভিসা প্রসেসিং ফি
আরও যে জিনিসগুলো সঙ্গে রাখা দরকার
সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে বাঁচতে এক জোড়া সানগ্লাস ও সানস্ক্রিন রাখা যেতে পারে। এর থেকেও দরকারি জিনিস হলো ফ্ল্যাশলাইট এবং পাওয়ার ব্যাঙ্ক সঙ্গে রাখা। যে কোন সময় বিপদ-আপদে ফোন করার দরকার হতে পারে। তাই অযথা ফোনের ব্যাটারি নষ্ট করা যাবে না।
বিশ্রামের জন্য বিরতি নেয়া
হাইকিংয়ের সময় বিশ্রামের জন্য সময় নেওয়া একটি মৌলিক উপায়, যা ভ্রমণকে নিরাপদ, আনন্দদায়ক এবং সতেজ করে তোলে। দীর্ঘ দূরত্বের দৌড়বিদরা ক্লান্ত হওয়া এড়াতে নিজেদের গতি বাড়ায়। কিন্তু একজন ভাল হাইকারকে উল্টোটা করতে হয়; অর্থাৎ ধীরগতিতে চলে যেতে হয়। এই বিশ্রাম নেয়ার হারটা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তন হয়। এই সময়টা নিছক বসে থাকা নয়; প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপভোগের একটি উপায়।
সর্বদা সতর্ক থাকা
পাহাড়ী রাস্তায় চলার সময় প্রতিটি পদক্ষেপে মনযোগ দিতে হবে। একটি ছোট ভুল পদক্ষেপের জন্য মারাত্মক বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। একটি পিচ্ছিল পাথর বা কাদা মাটিই যথেষ্ট গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য। তাই নিরাপদে থাকার জন্য প্রয়োজনে গতি কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। ঘন ঝোপ-ঝাড়, গর্ত, পিপড়ার ঢিবি, ঝিরি পথ পেরনোর সময় সতর্ক থাকা উচিত। কোন ভাবেই বেকায়দা পড়ে পা যেন মচকে না যায় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বিষাক্ত প্রাণী ও পোকামাকড়ের ব্যাপারে সচেতন থাকা
পাহাড়ী এলাকার প্রাণী ও পোকামাকড় শহরের মত ঝুঁকিহীন নয়। খুব ছোট কোন প্রাণীও বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। পাহাড়ী পিপড়া ও মশাগুলো বেশ বিপজ্জনক হয়। এগুলোর জন্য পোকামাকড় নিরধোক নেয়ার পরেও সতর্ক থাকতে হবে। কোন কোন এলাকাগুলো এ ধরণের উপদ্রব বেশি তার জন্য গাইড বা স্থানীয়দের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
শেষাংশ
দুর্ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদ পাহাড় ভ্রমণে প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা হলে পুরো ভ্রমণটা আনন্দদায়ক হয়ে থাকবে। দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো নিঃসন্দেহে জীবনের জন্য এক স্মরণীয় স্মৃতি স্বরূপ। কিন্তু তা করতে যেয়ে বেঘোরে প্রাণ হারালে সেই স্মৃতির আর কোন মূল্যই থাকবে না। তাই নূন্যতম নিরাপত্তার বেষ্টনীতে থেকে উত্তেজনাকর কার্যকলাপগুলো চেষ্টা করা যেতে পারে। নিদেনপক্ষে, বন্ধু-বান্ধবকে নিজের মুখে পাহাড় ভ্রমণের বিস্ময়কর গল্প বলার জন্য হলেও এই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।