%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE
নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
নানান ধরনের সামাজিক টানাপোড়েন ও সমাজে নারীদের অবস্থান, এগুলোকে উপেক্ষা করে নারীরা আজকে বিস্ময়করভাবে শত শত দেশ জয়ের রেকর্ড গড়ছেন। একজন বিচক্ষণ নারী পরিব্রাজক সব সময় বিশ্ব ভ্রমণে যাত্রার পূর্বে গন্তব্যের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে ভালোভাবে অবগত হয়ে নেন। এই আর্টিকেলটি নারীদের একাকী ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ১০টি শহর নিয়ে আলোচনা করবে।
যে ১০টি শহর নারীদের একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ
ভ্যানকুভার, কানাডা
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূল পর্বতমালা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এই শহরটি তার উপকূলীয় সৌন্দর্য্যের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। স্ট্যানলি পার্কে হাটাহাটি করার সময় পশ্চিম কানাডার এই বৃহত্তম মেট্রোপলিটন এলাকাটিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যাবে। ওয়েস্ট এন্ড এলাকার কফিতে চুমুক দেয়ার সময় টের পাওয়া যাবে কানাডিয়ানদের আতিথেয়তা এবং বন্ধুত্বটা।
ভ্যানকুভার আর্ট গ্যালারি, লুকআউট টাওয়ার বা ভ্যানকুভার অ্যাকোয়ারিয়ামে মগ্ন থাকার সময় অন্য শহরের সাথে এর তুলনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে। সেখানে একা ভ্রমণের কথা মনেই থাকবে না। তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য কোলাহলপূর্ণ জায়গা থেকে সবাই পালিয়ে এই ভ্যানকুভারেই আসতে চায়।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
বার্গেন, নরওয়ে
সাতটি পর্বত এবং উত্তর সাগরের উপকূলের পার্শ্ববর্তী নরওয়ের সবচেয়ে সুন্দর এই শহরটি যেন প্রকৃতির এক টুকরো আশীর্বাদ। এর রাস্তা ধরে হাটার সময় মৃদুমন্দ হাওয়া শীষ দিয়ে জানান দেবে যে, ঠান্ডা ফিওর্ড পথচারিকে আরো আপন করে নিতে চাইছে। ভেগান বন্দর দিয়ে ব্রিগেন বরাবর সঙ্গ দেবে পুরনো স্থাপত্য এবং ইতিহাস।
ফ্লোয়েন-এর তাজা খাবারগুলো স্বাদ দিবে অমৃতের। ছোট মাছের বাজার পরিদর্শন শেষে শহরের সীমান্ত আলিঙ্গন করলেও ভ্রমণ পিপাসাটা রয়েই যাবে। তখন সবেমাত্র নতুন আসা পর্যটক ঘুরে আবার ফিরে চলেন অন্তরঙ্গ বার্গেনের উদ্দেশ্যে। এ যেন খেয়াল-খুশীমত অবাধে বিচরণের এক অপূর্ব নগরী, যার অধিবাসীরা নবাগতকে অভিভূত করতে অভ্যস্ত।
ভেনিস, ইতালি
স্বপ্নময় ভেনিস শুধুমাত্র নব দম্পতিদের মধুচন্দ্রিমার জন্য নয়। ৬০০ বছর পুরনো এই নগরী একাকী ভ্রমণকারিনীদের জন্যও একটি নস্টালজিক জায়গা। এর ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভগুলো ঘুরে দেখার সময় অবলীলায় মনে হতে পারে, যে ঠিক এরকমি একটা জায়গা হয়ত বহুদিন ধরে স্বপ্নে লালণ করে আসছেন।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
শিল্পকলায় ভরা দ্য ডোজ প্যালেস এবং সেন্ট মার্কস ব্যাসিলিকা ঘুরে দেখার সময় টের পাওয়া যায় যে, ভেনিস তার মানুষকে কাঙ্ক্ষিত প্রাইভেসিটি দিতে পারে। তাই এখানে নিরাপত্তা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। আর সূর্য অস্ত যাওয়ার লগ্নটি উপভোগের জন্য একটি বারের জন্য হলেও এ সময়টি একা কাটানো উচিত।
আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ড্স
কিছুক্ষন পরপর লেক দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে, কেন আমস্টারডামকে উত্তরের ভেনিস নাম দেওয়া হয়েছে। শহরটি প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ ভ্রমণকারীর পদচারণায় ধূলিধুসরিত হয়। এত মানুষের ভিড়ে নিঃস্বঙ্গতা নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে না। কারণ প্রায় ১৫০০ টিরও বেশি সেতু দেখে শেষ করতে হবে। ভেনিসের মতোই এই শহরটি মন্ত্রমুগ্ধতা সৃষ্টি করবে, কিন্তু তাতে নিরাপত্তাহীনতার ভয় নেই। বরং আছে আদিম ও অকৃত্রিম প্লেটোনিক ভালবাসার রোমান্টিক অনুভূতি।
আমস্টারডাম বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে একটি। ওল্ড সেন্টারের লেক, কেনাকাটা এবং কফিশপ এবং প্লান্টেজের যাদুঘর শহরে যে কোন নতুন মুখের সান্নিধ্য পেতে সদা প্রস্তুত।
আরো পড়ুন: ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজক ৭ শহর ভ্রমণ
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
একা একা কোথাও হারিয়ে যাবার জন্য এই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলটি সেরা হতে পারে। ছোট শহরটি জুড়ে নর্ডিক মিথের গা ছমছমে আবহ নবাগতদের অবাক হওয়ার খোরাক যোগায়। কিন্তু এই চমকে যাওয়াটা নেতিবাচক নয়; বরং এর জন্যই কোপেনহেগেনে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা।
নাইহ্যাভেনের লেক আর ভেস্টারব্রোতে কেনাকাটার জন্য হাল্কা পদব্রজে ভ্রমণই যথেষ্ট। তবে ক্লান্ত হয়ে গেলেও ভয় নেই। বড় বড় শহরের জমকালো আলো না থাকলেও নিঝুম সড়ণীয় আড্ডাপ্রিয় প্রতিবেশীরা অকুন্ঠচিত্ত্বে বুঝিয়ে দেবে যে, পথচারিণী নিরাপদ আশ্রয়েই আছেন।
ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
শ্বাসরুদ্ধকর স্থাপত্য এবং ইউরোপের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক কেন্দ্রে পরিপূর্ণ ভিয়েনা নগরী। বারোক দুর্গ এবং ইম্পেরিয়াল প্রাসাদের মধ্যে আসা ভ্রমণ গ্রুপগুলো দর্শনীয় স্থান গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের প্রাচীন এই রাজধানী ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
এখানকার গথিক গীর্জা এবং স্মারক ভাস্কর্যগুলো দেখার সময় পরিচয় হবে প্রায় শখানেক নিঃস্বঙ্গ পর্যটকদের সাথে। কারো হয়ত ক্যামেরার শাটারে আঙ্গুল, কারো বা চোখে সৌন্দর্য্যের নেশায় মোহগ্রস্ত দৃষ্টি। কিন্তু পর্যটকদের স্রোতের অনুকূলে অবচেতনেই একই সাথে বয়ে চলছে গন্তব্যের দিকে।
এই নিরাপদ নগরীর সংস্কৃতির স্বাদ পেতে হলে হাজার পুলকিত দৃষ্টির সাথে এক হয়ে চোখ রাখতে হবে স্টেট অপেরায়। যোগ দিতে হবে ফিলহারমোনিকের কনসার্টে।
সিঙ্গাপুর সিটি
এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বের এই দ্বীপ নগরীটি জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে ১৮১৯ সালের ব্রিটিশ বাণিজ্য উপনিবেশের। বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্রে থাকা অত্যাধুনিক হয়ে ওঠা শহরটি প্রায় ৫৫ লাখ লোকের আবাসস্থল। এই কোলাহলপূর্ণ শহর জুড়ে অনেক বছর ধরেই নিজেদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করছেন হাজারো নারী পর্যটক। ঘনবসতিপূর্ণ হলেও এর ৫০-এরও বেশি সবুজ উদ্যান একে রীতিমত উদ্যানের শহর বানিয়ে ফেলেছে।
আরো পড়ুন: ভারতের টুরিস্ট ভিসা কীভাবে পাবেন: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রসেসিং ফি
এমনকি এগুলোতে ঘুরতে পায়ের চাপে পিষ্ঠ হওয়ার ভয় নেই। বরং এখানকার বাহারি খাবারে এশিয়ান ফিউশন এবং আমেরিকান খাবারের মিশ্রণ বহু জাতির মেলবন্ধনের সংকেত দেবে। এখানকার মরিচ কাঁকড়া খাওয়ার সময় অপরিচিতরা বৈঠকি ভঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে এর অদ্ভূত স্বাদের অনুভূতি শেয়ার করতে পারেন।
লিসবন, পর্তুগাল
লিসবন আটলান্টিক মহাসাগরের ধারে অবস্থিত এটি ইউরোপীয় শহরটি সগর্বে প্রকাশ করে এর সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতিকে। শহরটি সাতটি পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটিতে স্বভাবতই পাহাড় বেয়ে উঠতে আসেন হাজারো হাইকার। খাড়া ঢাল বেয়ে একা একা ওপরে ওঠার সময় সবাই সতর্ক থাকেন রহস্যময় পাথরযুক্ত রাস্তাগুলোর ব্যাপারে।
অ্যালফামা, কিয়াডো এবং বাইরো অ্যাল্টোর আশেপাশের এলাকাগুলোর প্রাণবন্ত দৃশ্য মন কেড়ে নেয়ার মত। আর সেখানের কোন খাবারের দোকানে খেতে যেয়ে দোকানীদের অপূর্ব ব্যবহার সেই ভূবন ভোলানো দৃশ্যকে যেন আরো ন্যায্যতা দেয়। এই জায়গাতে মুলত সবাই নতুন খাবারের স্বাদ পরখ করতে যেতে চায়।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
হংকং, হংকং
তিয়ান তান বুদ্ধের শহর হংকং নারীদের ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর অবিশ্বাস্য শান্ত পরিবেশের সাথে আধ্যাত্মিক ভাবগাম্ভীর্যের মিথস্ক্রিয়া এক পরম প্রাপ্তি। পো লিন মনাস্ট্রি পর্যন্ত ২৬৮টি ধাপ পেরনোর সময় হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় বুদ্ধে প্রতি তীর্থযাত্রীদের টানটা।
উন্নত অর্থনীতির শহর হওয়ায় এখানে অপরাধের হার খুবই কম। এমনকি প্রতি বছর তা আরো কমের দিকে যাচ্ছে। তবে ১ শতাংশ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য হলেও পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো গভীর রাত পর্যন্ত সক্রিয় থাকায় রাত ১২টার পর আলোকসজ্জাটা এখানে অদ্ভূত কোন ব্যাপার নয়। সে অনুসারে স্থানীয়রা অনায়াসেই রাতে চলাফেরা করতে পারেন। পরিবহন ব্যবস্থাও অনেক রাত পর্যন্ত চালু থাকে।
লন্ডন, ইংল্যান্ড
লন্ডনের সদা বিকশিত এবং বহুজাতিক সংস্কৃতির বিপজ্জনক গতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয়দের মনযোগ নিজেদের জীবন নিয়েই। তাই অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও পারস্পরিক বাক বিনিময় ও সৌজন্যতার ক্ষেত্রে এরা বেশ ভদ্র এবং সহানুভূতিশীল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
তবে এর গতিশীল লোকালয়ে একা ভ্রমণকারি নারী প্রায় সময় স্বাগত বোধ নাও করতে পারেন। তবে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাধীন ভ্রমণকারির জন্য লন্ডন দারুণ একটি জায়গা। শোরেডিচ, ব্রিক লেন বা ক্যামডেন টাউনের বাজারে একা একাই ঘুরে বেড়িয়ে লন্ডনের খাবার খ্যাতির সাথে পরিচিত হয়ে নেয়া যায়। থিয়েটার আর নাইট লাইফের জন্য হারিয়ে যাওয়া যাওয়া যেতে পারে গুঞ্জনপূর্ণ ওয়েস্ট এন্ডে।
শেষ কথা
অবাধে প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের জন্য বহু ভ্রমণপিপাসু নারী প্রতি বছর পারি জমাতে চান দেশের বাইরে। উপরোল্লিখিত ১০টি শহর নারীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য হতে পারে দারুণ সুযোগ। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির এখানে কোন স্থান নেই। জনজীবন এখানে নিজেদের জীবনধারণ নিয়েই বরং বেশি ব্যস্ত। এমনকি দিকভ্রান্ত কোন পথিক এখানে সাহায্য চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন না। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, নিঃস্বঙ্গ ভ্রমণকারী নির্দ্বিধায় এই জায়গাগুলোতে খুঁজে পাবেন নিজের ঘরের মত আরামদায়ক অনুভূতিটি।
কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
প্রথমবারের মত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ মঞ্চস্থ করার মাধ্যমে ইতিহাস গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কাতার৷ ৮টি সুসজ্জিত ফুটবল ভেন্যু সরাসরি দেখতে যারা দেশটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য অভাবনীয় চমক অপেক্ষা করছে এই প্রাকৃতিক নৈসর্গে। ঐতিহ্যবাহী আরব আতিথেয়তার সাথে আদর্শ শীতকালীন আবহাওয়া, খেলা দেখার স্বাদকে পরিপূর্ণতা দেবে। এই ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে চলুন দেখে নেয়া যাক কাতারের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো।
কাতারের বিভিন্ন শহরের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো
দোহার ইসলামী শিল্প যাদুঘর
চাইনিজ স্থপতি আইএম পেইয়ের নকশা করা ইসলামী শিল্প জাদুঘর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০০৮ সালে। কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত ভবনটিকে দূর থেকে একে অপরের উপরে রাখা কয়েকটি বাক্সের স্তুপের মতো দেখায়৷ এর ক্রিম রঙের চুনাপাথরের বাহ্যিক অংশটি ইউরোপীয়ান স্থাপত্যের আমেজ দেয়। পরিচ্ছন্ন জ্যামিতিক প্রান্তগুলো জানান দেয় এর মজবুত কাঠামোর কথা।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
সূর্যের আলোতে ধারগুলো ঝলমল করতে থাকে। ভবনের উপরে চোখের মতো স্লিটটি বানানো হয়েছে ১৩ শতকের ওজুর ফোয়ারা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যাদুঘরের কাছাকাছি হওয়ার জন্য লেকের উপর দিয়ে একটি সেতু অতিক্রম করতে হয়। বাইরের অবকাঠামোটি যতটাই সরল, এর অভ্যন্তর ভাগটি ঠিক ততটাই জটিল। এই বৈপরীত্য প্রতিটি দর্শনার্থীকেই হতবাক করে দেয়।
রোগীর প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
রোগীদের সেবার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্লিপশন) ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের অবশ্যই রোগীবান্ধব মানসিকতা নিয়ে সেবা দিতে হবে। রোগীদের সেবার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্লিপশন) ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে। যাতে রোগী ও ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা সহজেই বুঝতে পারেন। এজন্য আমি আরএস ও আরপিকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি।’
বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্হিবিভাগ-২ বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে অনলাইন রিপোর্টিং কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে রোগীর স্বাস্থ্যের প্রায় ১০০ ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।
বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাসুম আলমের নেতৃত্বে অনলাইন রিপোর্টিং এ সফটওয়ার নির্মাণ করা হয়। এ অনলাইন রিপোর্টিং এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রোগীর মোবাইল ও ই-মেইল আইডিতে পৌঁছে যাবে।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউতে এনটি-প্রো বিএনপি পরীক্ষা চালু
এর জন্য রোগীকে পরীক্ষার স্যাম্পল বা নমুনা প্রদানের সময় ছোট একটি ফরমে রোগীর নাম ও ই-মেইল আইডি লিখতে হবে। এ অনলাইন রিপোর্টিং কার্যক্রমের ফলে রোগীকে ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা নিরীক্ষার সেবা প্রদান করা যাবে।
২৪ ঘণ্টার মাঝেই রোগীর স্বাস্থ্য রিপোর্টরে ফল অনলাইনে প্রদান করা সম্ভব হবে।
প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলে নয় হাজার রোগী সেবা নিতে আসেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে আট হাজার রোগী প্রতিদিন সেবা নিতে আসত । বর্তমানে আগত রোগীদের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার রোগী বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আসেন। এসব রোগীরা অনলাইনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল গ্রহণের মাধ্যমে যেমন তারা সময় বাঁচাতে পারবে তেমনে যাতায়াত ভাড়াও বাঁচাতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এ অনলাইন সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের স্বপ্ন যাত্রায় উঠে পড়েছে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন আরেকটি ধাপে উন্নীত হল।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ইতিহাস যোগ হলো।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগে অতি দ্রুত চালু করা হবে।
বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাসুম আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েল বেসিক সাইন্স ও প্যারাক্লিনিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরফদার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. মতিউর রহমান, অধ্যাপক ডা. ফরহাদুল হক মোল্লা বক্তব্য দেন।
এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও নার্স, কর্মচারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ৮৮ শতাংশ করোনা রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত: বিএসএমএমইউ’র জরিপ
বিএসএমএমইউতে আগুন
সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
সমুদ্র ভ্রমণে উত্তাল ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে দেয়ার অমোঘ টান অনুভূত হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই উচ্ছ্বাস অনেক সময় জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্র সৈকতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক না থাকা, নির্দেশনা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব এবং সৈকতে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এর জন্য দায়ী। তাই চলুন, সমুদ্রে স্নানের সময় মৃত্যুর কারণ ও দুর্ঘটনা এড়িয়ে সতর্ক থাকতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
সমুদ্রে স্নানের সময় দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর কারণ
পর্যটকদের সৈকত নিরাপত্তা নির্দেশনা উপেক্ষা
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে নিষেধ সত্ত্বেও পর্যটকদের সমুদ্রের পানিতে নামা। গোসলের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলেও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে আরো গভীরে চলে যান। নিরাপত্তা রক্ষীদের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরেও দর্শনার্থীরা তা উপেক্ষা করেন। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টেই এই বিড়ম্বনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি বিপজ্জনক সময়গুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার সময়েও কিছু পর্যটকদের সামাল দিতে যেয়ে রীতিমত ঝামেলার সম্মুখীন হন নিরাপত্তা কর্মীরা।
ফলশ্রুতিতে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চলেছে। এছাড়া ভ্রমণের অফ সিজনে নির্জন সৈকতে পানিতে নেমেও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। এই অসতর্কতা ও নিরাপত্তাজনিত নির্দেশনা অমান্য করাই মুলত দায়ী প্রতি বছর মৃত্যুর ঘটনাগুলোর জন্য।
আরো পড়ুন বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
সৈকত নিরাপত্তা সংকেত সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব
সমুদ্রের মত বিপজ্জনক জায়গায় আগে থেকেই জোয়ার-ভাটার তথ্যটা সবার জেনে নেয়া উচিত। সৈকত প্রশাসন প্রতিটি বৈরী আবহাওয়ায় সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে সতর্ক সংকেত ও সংখ্যা দিয়ে বিপদের মাত্রা সম্পর্কে অবহিত করা হয় জনসাধারণকে।
কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এই সংকেত বা সংখ্যার অর্থ অনেকেই জানেন না। কোন রঙের পতাকা কি অর্থ বহন করছে সে বিষয়ে অনেকেরই কোন স্পষ্ট জ্ঞান নেই। সৈকতের কোন কোন প্রবেশদ্বারগুলোতে সমুদ্রস্নানের নির্দেশনা থাকলেও তা একবারের জন্য পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেন না কেউ। ফলে অসতর্ক হয়েই সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাজারো দর্শনার্থী।
সমুদ্র সৈকতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা
উপরোক্ত দুটি কারণের পাশাপাশি এই কারণটি বিপদের ভয়াবহতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পর্যটকরা নিজেরা সতর্ক থাকলে বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো। কিন্তু হাজার হাজার অসতর্ক পর্যটককে সামলানোর জন্য বর্তমান লাইফগার্ড কর্মীর সংখ্যা যথেষ্ট নয়। বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের বিপরীতে মাত্র ১১২ জন টুরিস্ট পুলিশকে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। কক্সবাজার সি সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিদিনের দুই শিফটে মাত্র ২৭ কর্মী নিয়োজিত থাকেন।
আরো পড়ুন চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
তাছাড়া সৈকত এলাকায় পর্যাপ্ত নজরদারি ছাড়াও অভাব আছে উদ্ধার সরঞ্জামের। এরকম নাজুক ব্যবস্থায় ক্রমাগত দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে সৈকত।
সমুদ্রে স্নানের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার
দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গা ও সময়ের ব্যাপারে আগে থেকেই জেনে রাখা
সমুদ্রস্নান করার জন্য এমন মৌসুমে যাওয়া উচিৎ যখন সমুদ্র শান্ত থাকে। এরপরেও অন্যান্য মৌসুমে যেতে হলে জোয়ার-ভাটার সময়গুলো ভালো ভাবে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। কক্সবাজারে পৌছার পর পরই স্থানীয়দের সাথে কথা বলে খোঁজ খবর করে নেয়া উচিত।
টুরিস্ট গাইড বা হোটেল বা স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা এবং তার স্পট সম্পর্কে জেনে নেয়া যেতে পারে। সৈকতে প্রবেশের মুখে উল্লেখিত নির্দেশনাগুলো মনযোগ দিয়ে একবার পড়ে নেয়া উচিত।
আরো পড়ুন ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
সাধারণত লাবণী পয়েন্ট ব্যতীত সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী, ডায়াবেটিস হাসপাতাল পয়েন্ট ও সিগাল পয়েন্টে গোসলে নামা নিষিদ্ধ থাকে। বিকেল ৫টার পর সমুদ্রের পানিতে নামা ঠিক নয়। এছাড়াও সমুদ্রে নামার আগে দিয়ে কর্মরত গার্ডের কাছ থেকে জোয়ার-ভাটাসহ আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থাটা জেনে নেয়া উত্তম। লাইফগার্ড নির্দেশিত স্থানগুলো ছাড়া অন্য কোনো পয়েন্ট থেকে সমুদ্রে গোসল করা ঠিক নয়। এমনকি সেখানে টায়ার বা যে কোন ভাসমান বস্তু নিয়েও পানিতে নামা উচিত হবে না।
সৈকতে বাতাসের গতিবিধি ও পানিতে নামা ঠিক হবে কি হবে না তা সহ যে কোন তথ্যের জন্য লাইফগার্ডরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকেন। যে কোন সময় তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য তাদের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করাটা উত্তম।
চিহ্ন এবং পতাকা ব্যাপারে জানা
সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রঙের পতাকা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো কখন ও কোথায় সমুদ্রের পানিতে যাওয়া নিরাপদ তার নির্দেশনা বহন করে। লাল রঙের পতাকা মানে সমুদ্রের পানিতে নামা যাবে না। এগুলো ভাটার সময় লাগানো হয়। আর সবুজ পতাকার অর্থ এখন আপাতত সমুদ্রে গোসল করা নিরাপদ। এই পতাকা লাগানো হয় জোয়ারের সময় লাইফগার্ড এলাকায়।
আরো পড়ুন বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
হলুদ পতাকা মানে সমুদ্রে ঢেউয়ের মাত্রা ১.৫ মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। তাই পানিতে সাঁতারের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
গোসলের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবুজ; সর্বোচ্চ হলুদ পতাকা লাগানো জায়গাগুলোতে থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই লাল পতাকা লাগানো জায়গা অতিক্রম করা যাবে না।
রিপ কারেন্ট থেকে সাবধান
রিপ কারেন্ট হল ঢেউয়ের শক্তিশালী অবস্থা যখন তা সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ঢেউ যে কোন দক্ষ সাঁতারুকেও খড়কুটোর মত দ্রুত সমুদ্রের গভীরে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এ সময় কোনভাবেই সমুদ্রের পানিতে নামা যাবে না। যথাসম্ভব আগে থেকেই গার্ডদের কাছ থেকে রিপ কারেন্টের সময়ের ব্যাপারে জেনে নিতে হবে।
আরো পড়ুন ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
অনেক সময় আচমকাও রিপ কারেন্টের সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তীর রেখার সমান্তরালে থেকে তীরের দিকে সাঁতার দিতে হবে। তবে এ সময় সাহায্যের জন্য চিৎকার করাটাই ভালো। তাহলে আশেপাশের লোকজন সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারবে।
সমুদ্রের পানিতে নামার সময় টায়ার বা লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা
খুব ভালো সাঁতারুদেরও সমুদ্রের পানিতে নামার সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা উচিত। সমুদ্রের আবহাওয়া যে কোন সময় পরিবর্তন হতে পারে। টায়ার বা লাইফ জ্যাকেট থাকলে এ অবস্থায় বাঁচানোর সুযোগটা থাকে। আর যারা সাঁতার জানেন না, তাদের জন্য সমুদ্রের পানিতে না নামাটাই উত্তম। নিদেনপক্ষে, সমুদ্রের একদম কূল ঘেষে গোসল করা যেতে পারে, তবে সাবধান থাকতে হবে।
চোরাবালি থেকে সাবধান
সমুদ্রে তীব্র স্রোত এবং গুপ্ত গর্ত সৃষ্টি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। জোয়ারের সময় সমতল থাকা জায়গাগুলো ভাটার সময় খাদে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আর ঘূর্ণিপাকে সৃষ্টি হয় ভয়ঙ্কর চোরাবালির। তাই এগুলো এড়িয়ে চলার জন্য লাইফগার্ডদের সাহায্য নিতে হবে। সবুজ পতাকা চিহ্নিত জায়গায় গোসল করা যেতে পারে। তবে সাবধানতার জন্য দলবদ্ধভাবে থাকা যেতে পারে, যেন কোন সমস্যা হলেই অন্যরা সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে।
আরো পড়ুন কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণ গাইডলাইন: ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় ঝিরিপথ
শিশু ও বয়স্কদের একা হতে দেয়া যাবে না
সমুদ্রস্নানের ক্ষেত্রে এই দলবদ্ধ থাকাটা খুবই জরুরি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের কোনভাবেই একা হতে দেয়া যাবে না। অসুস্থ বা দুর্বল শরীরের লোকদের নিয়ে সমুদ্রে হাঁটুপানির বেশি নামা যাবে না। তরুণদের মধ্যেও এরকম কেউ থাকলে বাকিদের উচিত তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও খাবার পানি রাখা
সৈকতে শঙ্খ, ঝিনুক জাতীয় জিনিসে লেগে অনেক সময় পা কেটে যায়। বিশেষ করে ইনানি সৈকতে এরকমটা বেশি দেখা যায়। এই পরিস্থিতির জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা বাঞ্ছনীয়। আর ক্লান্তি এড়ানোর জন্য সাথে রাখতে হবে খাবার পানি। কারণ পানের অযোগ্য সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পান হিতে বিপরীত করতে পারে। সর্বসাকূল্যে, ক্লান্ত বা ক্ষত নিয়ে সমুদ্রের পানির বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
পরিশিষ্ট
সমুদ্রে স্নানের সময় দুর্ঘটনা এড়িয়ে সতর্ক করণীয় সমূহ যথাযথ পালনের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাগুলো এড়ানো যেতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের জন্য সম্পদ, যা বিশ্ব পরিব্রাজকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো তাদের কাছে এই সম্পদের ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি করছে। তাই একদিকে সৈকতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি যেমন জরুরি, অন্যদিকে দেশীয় পর্যটকদেরও উচিত নিজের ও অন্যের প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে সমুদ্র ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকা।
আরো পড়ুন হাকালুকি হাওর ভ্রমণ: এক নিঃসীম জলজ মুগ্ধতা
আত্মহত্যার প্রবণতা: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
সাম্প্রতিক কিছু দুঃখজনক আত্মহত্যার ঘটনা পৃথিবীর উচ্চ আত্মহত্যা প্রবণতার দেশগুলোর তালিকায় নিয়ে এসেছে বাংলাদেশকে। ব্যাধিটা যখন মনের তখন স্বাভাবিকভাবেই তা সবার অলক্ষ্যে থেকে যায়। শারীরিক রোগ-বালাইয়ের মত তেমন গুরুত্বের সাথে নেয়া হয় না নিরাশা অথবা ভয়ের মত মানসিক অবস্থাগুলোকে। কিন্তু আত্মহত্যার মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কমাতে হলে এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। তাই সতর্ক হতে চলুন জেনে নেই আত্মহত্যার কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্বন্ধে।
তরুণ প্রজন্মের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ
নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার ধারণাটা গভীর হয়ে উঠতে পারে, যখন ব্যক্তি মনে করেন, যে তিনি তার চারপাশের অপ্রতিরোধ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আর সক্ষম নন। হতে পারে এটি আর্থিক সমস্যা, প্রিয়জনের মৃত্যু, কোন সম্পর্কের অবসান বা কোন জটিল রোগ বা শারীরিক সীমাবদ্ধতা।
যে কারণগুলো তরুণ প্রজন্মকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে সেগুলো হলো-
· পরিবারের কোন সদস্য/সদস্যদের সাথে মনোমালিন্য
· শারীরিক নির্যাতন, অবহেলা বা মানসিক আঘাত
· জন্ম থেকেই কোন মানসিক সমস্যা
· আত্মহত্যা করেছে এমন কাউকে জানা, এবং তাকে নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করা
· নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের সাথে চলাফেরা করা
· বেপরোয়া বা অতি আবেগপ্রবণ হওয়া
· সার্বক্ষণিক নির্জনতা বা একাকীত্ব অনুভব করা
· মানসিক সমস্যাগুলোর জন্য কারো মনোযোগ না পাওয়া
· কর্ম বা শিক্ষা ক্ষেত্রে ভয়াবহ জটিলতা বা ক্ষতিসাধন
· বন্ধু-বান্ধব বা প্রিয়জনের বড় কোন ক্ষতিসাধন
· শারীরিক অসুস্থতা বা জন্মগত কোন স্বাস্থ্য সমস্যা
· ভয় বা কলঙ্কের কারণে সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ
· জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম ও বর্ণ বৈষম্যের শিকার হওয়া এবং কুসংস্কারের কারণে দুশ্চিন্তা
· সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধ্বংসের কারণে ঐতিহাসিক ট্রমার মধ্যে থাকা
· মাদকাসক্ত থাকা
· আইনি ঝামেলা বা ঋণগ্রস্ততা
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়ের প্রক্রিয়া, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে শান্ত করার উপায়
· তাৎক্ষণিকভাবে তার আবেগ ও অনুভূতি সম্পর্কে সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে হবে। এমন সময় যদিও অনেক ক্ষেত্রে এটা কাজ না করতে পারে। কিন্তু মনপ্রাণ দিয়ে তার যা বলার আছে তা শোনা হলে এবং গুরুত্ব সহকারে নেয়া হলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
· তাকে উন্মু্ক্তভাবে যোগাযোগের জন্য একটি আরামদায়ক জায়গা দিতে হবে। তার লজ্জা, অপরাধবোধগুলোকে ইতিবাচক দিক দিয়ে তার কাছে তুলে ধরতে হবে। কারণ আত্মহত্যার চেষ্টা করতে যাওয়া ব্যক্তিরা এমনিতেই ভেতরে ভেতরে অনেক লজ্জিত, অপরাধী বা বিব্রত বোধ করেন। দোষ-ত্রুটি ধরে নয়; সমর্থন দিয়ে সহজ ভাষায় তাকে বোঝাতে হবে। মতামত প্রকাশের সময় তার কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। এ সময় যে কোন ধরনের বিতর্কে জড়ানোটা এড়িয়ে যেতে হবে।
· তার আবেগ-অনুভূতির ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তবে অনুভূতিগুলোর মূল্য দিতে যেয়ে তাকে পৃথিবীর একমাত্র দুঃখী মানুষে পরিণত করা যাবে না। বরং আবেগগুলোর গঠনমুলক প্রয়োগের ব্যাপারে কথা বলতে হবে। আর এ সময় সেই প্রায়োগিক কার্যক্রমের সাবলিলতা ফুটিয়ে তুলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তি যৌক্তিকভাবে চিন্তা না করলেও, তার আবেগগুলো বাস্তব। সেগুলো কোন ভাবেই মূল্যহীন হিসেবে প্রকাশ করা যাবে না। এতে পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে এবং ব্যক্তিটি নিজেকে নিজের মধ্যে আরো গুটিয়ে নিতে পারে।
আরও পড়ুন: চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
· আবেগের মূল্য দিয়ে যেয়ে তার আত্মহত্যার অনুভূতি গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া যাবে না। কারো জীবন বিপদের মধ্যে থাকলে এমন প্রতিশ্রুতি রাখা অবান্তর। বরং আরো কারো জানার ফলে যদি উপকার হয় তবে তা করাই উত্তম। এ বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এমনকি এ কাজে তাকেও সহযোগিতা করার অনুরোধ করতে হবে।
· যখন কেউ আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন তার মনে হয় এ থেকে উত্তরণের সব পথই বন্ধ। এ অবস্থা থেকে তাকে বের করার জন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সমূহ উপায়ের কথা তাকে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে যারা ইতোমধ্যেই এই অবস্থা থেকে উতড়ে যেতে পেরেছে তাদের জীবনের গল্পকে অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যক্ত করা যেতে পারে। সহজ রাস্তা পাওয়ার ফলে সে আবার জীবন নিয়ে চিন্তা শুরু করতে পারে।
· তাকে মাদক ব্যবহার এড়াতে উৎসাহিত করতে হবে। এ অবস্থায় ড্রাগ বা অ্যালকোহল ব্যবহার করা বেদনাদায়ক অনুভূতিগুলোকে সহজ করে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু দিন শেষে তা সবকিছুকে আরও খারাপ করে তোলে। ফলে তা বেপরোয়া আচরণ বা আরও বিষণ্ন বোধের দিকে ধাবিত করতে পারে। এক্ষেত্রে তাকে তার জীবনের সবথেকে প্রিয় কাজগুলো করার দিকে প্রলুব্ধ করা যেতে পারে। সে কাজগুলো করার সময় ধৈর্য্য ধরে তার সাথে পুরোটা সময় থাকতে হবে। সে যেন কিছুতেই ড্রাগ ব্যবহারের সুযোগ না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে এখানে তার প্রিয়জনদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে গায়ে আগুন দিয়ে রিকশাচালকের আত্মহত্যা!
· সম্ভব হলে তার হাতের কাছ থেকে আত্মহত্যার জন্য সম্ভাব্য বিপজ্জনক আইটেমগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। যেমন ছুরি, ক্ষুর, বন্দুক বা মাদক। এমনকি সাধারণ ওষুধও সরিয়ে ফেলতে হবে। তার শারীরিক উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধগুলোর সঠিক ডোজ সরবরাহের জন্য তার সাথে বেশি সময় নিয়ে থাকতে হবে। এর জন্য তার প্রিয়জনদের সাহায্য এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়
আত্মহত্যার দিকে প্ররোচিত করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না করাটাই এর প্রতিরোধের উপায়। এর জন্য সামগ্রিক ভাবে তার চারপাশটা তার জন্য আরামদায়ক করে তোলা জরুরি। এর জন্য যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে তা হলো-
· পরিবার এবং সমাজের সবার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখা
· যে কোন সমস্যা সমাধান এবং বিরোধ মোকাবেলা করার উপায়গুলোর সহজলভ্যতা
· এমন বিশ্বাসের ভিত স্থাপন করা, যা আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করে এবং নিজেকে ভালবাসার প্রতি উৎসাহিত করে
· আত্মসম্মানবোধ এবং জীবনের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নির্ধারণে সাহায্য করা
· সমাজের অন্যান্যদের প্রতি যত্নশীল হতে শেখানো। এতে সে অন্যান্যদের পক্ষ থেকেও যত্ন পাবে।
· তার চারপাশে এমন পরিবেশ গড়ে তোলা যেন ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে সে কোন রকম দ্বিধা বোধ না করে
· মাদকাসক্তির ক্ষতিকর প্রভাবগুলো ব্যাপারে সচেতন করা
· নিয়মিত ব্যায়াম করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
· নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি অনুপ্রাণিত করা
· প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমের জন্য উৎসাহিত করা
· গান শোনা বা ভ্রমণের ব্যাপারে উৎসাহিত করা|
আরও পড়ুন: গলায় ফাঁস দিয়ে চাঁদপুরে শিশুর আত্মহত্যা!
আত্মহত্যা প্রতিরোধে সাংগঠনিক উদ্যোগ
মানুষকে আত্মহত্যা থেকে বিরত রাখতে সদা তৎপর ইয়েশিম ইকবালের সংগঠন ‘কান পেতে রই’। বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকা আত্মহত্যার প্রবণতাকে কমাতে ২০১৩ এর ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা। এদের নির্দিষ্ট কিছু হেল্পলাইনের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত মানুষের কল গ্রহণ করে শোনা হয় তাদের দুঃখের কথাগুলো। অতঃপর কল রিসিভ করা প্রশিক্ষিত পরিশ্রমী তরুণ স্বেচ্ছাসেবী তাদের কথাগুলো শুনে তাদের নিরাশা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দূর করতে পরামর্শ দেন। এই কাউন্সেলিং-এর জন্য কোন রকম ফি নেয়া হয় না।
আন্তর্জাতিকভাবে কাউন্সিলিং-এর স্বীকৃত মডেল বিফ্রেন্ডিং-এর মাধ্যমে মানুষের নানা জটিলতার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের কলকারীদের পরিচয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য জিজ্ঞাসা করার কোন নিয়ম নেই। কাজ শুরুর পূর্বে স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তা সংরক্ষণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়।
কলকারি ব্যক্তিটি আবেগের বশে কোন ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ফেললেও তা নোট না করার জন্য প্রশিক্ষকরা স্পষ্ট নির্দেশনা থাকে। মূল কথা এখানে ব্যক্তি নয়; সমস্যা সমাধানই আসল। তাই কান পেতে রই’য়ের গ্রাহকদের মধ্যে কোন রকম অস্বস্তি নেই। বরং গ্রাহকদের রীতিমত নির্ভরতার জায়গা গড়ে উঠেছে সংগঠনটিকে ঘিরে।
আরও পড়ুন: স্মার্ট ফোন কিনে না দেয়ায় স্কুল ছাত্রের আত্মহত্যা!
পরিশিষ্ট
আত্মহত্যার প্রবণতাই যেখানে গোপন রয়ে যায়, সেখানে গোড়াতেই ধামা চাপা পড়ে যায় আত্মহত্যার কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্বন্ধে সতর্ক থাকার বিষয়গুলো। প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জনসংখ্যা সংক্রান্ত জটিলতার পাশাপাশি পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে জীবন ধারণে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই অতিরিক্ত আবেগের বিড়ম্বনা ও নিরাশাকে রুখতে পরস্পরের মাঝে নৈতিকতার শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রথা গড়ে তোলা জরুরি।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়ের প্রক্রিয়া, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা গত ২ দশক জুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে মারণাত্মক কীটপতঙ্গ জনিত মানব রোগে পরিণত হয়েছে এই ডেঙ্গু, যা সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পেছনের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই অনতিবিলম্বে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আবশ্যক।
ডেঙ্গু কি
ডেঙ্গু হলো এডিস গোত্রের স্ত্রী মশাবাহিত এক ধরনের ভাইরাস, যা ডেঙ্গি নামে পরিচিত। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু জীবাণু মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। কোন আক্রান্ত মানুষ থেকে আরেক মানুষে এই রোগ ছড়ায় না। তবে সংক্রমিত মানুষটিকে কামড়ানোর ফলে আক্রান্ত মশা অন্য মানুষকে কামড়ালে তখন সেই মানুষটি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গি ভাইরাসে সংক্রমণের ফলে ডেঙ্গু জ্বর হয়। সংক্রমিত মশার সংস্পর্শে আসা সব বয়সের মানুষই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপকান্ত্রিয় অঞ্চল বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার শহুর এবং মফস্বল শহরগুলোতে বেশি দেখা যায়। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা যায় ডেঙ্গু জ্বরে।
পড়ুন: নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে: বিশেষজ্ঞরা
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো হলো- হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পেশি ও অস্থিসন্ধিতে গুরুতর ব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা (যা জ্বর শুরু হওয়ার ২ থেকে ৫ দিন পরে দেখা দেয়) এবং হালকা রক্তপাত (যেমন নাক ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া)।
এই লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ৬ দিন পরে শুরু হয় এবং ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কখনও কখনও লক্ষণগুলো এতটাই হালকা হয় যে ফ্লু বা অন্য কোনও ভাইরাল সংক্রমণের মত মনে হতে পারে।
ডেঙ্গুর গুরুতর মাত্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর, রক্তনালীগুলোর ক্ষতি, নাক এবং মাড়ি থেকে অধিক রক্তপাত, লিভার এবং সংবহনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। এই লক্ষণগুলো এতটাই ভয়াবহ যে তা মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (ডিএসএস) বলা হয়।
পড়ুন: চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এবং সেইসাথে যাদের দ্বিতীয়বারের মত ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে, তাদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ের প্রক্রিয়া
২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ডেঙ্গু চিকিৎসার খরচ কমানোর প্রয়াসে সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার পূর্বে এবং চিকিৎসা সময়কালীন প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য হার নির্ধারণ করে।
জ্বরের তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এনএস-১ অ্যান্টিজেন টেস্টের সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। পরবর্তী পর্যায়ে ডেঙ্গু নির্ণয় করার জন্য অন্য দুটি পরীক্ষা - আইজিজি এবং আইজিএম-এর ফি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত মূল্য সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।
পড়ুন: মশা কেন আপনাকেই কামড়ায়?
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গু সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য আসলে কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য এর লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য সাধারণত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও স্বাস্থ্যকর পানীয় খাবার খাওয়া, প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নেয়া। তাৎক্ষণিক ব্যথা উপশমের জন্য ডাক্তাররা টাইলেনল বা প্যারাসিটামল প্রেসক্রাইব করে থাকেন, যা অনেক সময় জ্বর কমাতেও সাহায্য করে।
অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ননস্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধগুলো উপযুক্ত নয়, কারণ এতে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার
ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এগুলোর উপর চূড়ান্তভাবে নির্ভর করা উচিত নয়। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথেই উচিত অবিলম্বে ডেঙ্গু টেস্ট করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
গিলয় জ্যুস
গিলয় আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এক প্রকার ভেষজ উদ্ভিদ, সংস্কৃত ভাষায় যার নাম অমৃত; অর্থ অমরত্বের শিকড়। গিলয়ের শিকড় গুঁড়ো করে বা স্যুপে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিকারে গিলয় জ্যুসের বেশ খ্যাতি আছে। এটি বিপাকে সাহায্য করে এবং অনাক্রম্যতা তৈরি করে।
পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ডেঙ্গু জ্বর থেকে আরোগ্য লাভের প্রথম শর্ত। এই জ্যুস প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রোগীকে স্বস্তি দেয়। এক গ্লাস পানিতে গিলয় গাছের দুটি ছোট কান্ড সিদ্ধ করে তা খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া এক কাপ ফুটানো পানিতে কয়েক ফোটা গিলয়ের রস যোগ করে দিনে ২বার পান করা যেতে পারে। তবে গিলয় রস বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
পেঁপে পাতার জ্যুস
যেহেতু ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে প্লেটলেটের পরিমাণ কমে যায়, তাই এই সমস্যা সমাধানে পেঁপে পাতার জ্যুস একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। এই জ্যুস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। ডেঙ্গু জ্বরের সময় কিছু পেঁপে পাতা পিষে রস বের করে দিনে ২বার অল্প পরিমাণে পান করা যেতে পারে।
পেয়ারার জ্যুস
পেয়ারার জ্যুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এক কাপ পেয়ারার রস দিনে ২বার পান করা যেতে পারে। এছাড়া জ্যুসের বদলে তাজা পেয়ারাতেও ভালো প্রতিকার পাওয়া যায়।
পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
মেথি বীজ
এক কাপ গরম পানিতে কিছু মেথির বীজ ভিজিয়ে রেখে তা ঠান্ডা করতে হবে। অতঃপর এই পানীয় দিনে ২বার করে পান করলে জ্বর কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উপকার পাওয়া যাবে। ভিটামিন সি, কে এবং ফাইবার সমৃদ্ধ মেথির পানি অনেক স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকলে ডেঙ্গুর থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। দেহকে রোগ প্রতিরোধক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে লেবু, কমলা, জাম্বুরার মত সাইট্রাস জাতীয় ফল, রসুন, বাদাম, এবং হলুদ রাখা যেতে পারে।
বাংলাদেশে কখন ডেঙ্গু জ্বর হয়
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণের ঝুঁকি সারা বছরব্যাপীই বিদ্যমান থাকে। তবে বর্ষাকাল তথা জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ঝুঁকির মাত্রাটা সবচেয়ে বেশি থাকে।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো সংক্রামিত মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এর জন্য মশার বংশ বিস্তারের সব রকম পরিবেশ সমূলে ধ্বংস করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো হলো-
- বর্ষার মৌসুমে বাড়ির ভিতরেও মশা নিরোধক ব্যবহার করা
- বাইরে বেরলে লম্বা-হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট এবং পায়ে মুজা পড়ে পুরো শরীর ঢেকে রাখার চেষ্টা করা
- সন্ধ্যার আগে আগেই জানালা ও দরজা লাগিয়ে দেয়া। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা।
- মশার বংশবৃদ্ধির সম্ভাব্য সব জায়গাগুলো ধ্বংস করা। সাধারণত পুরানো টায়ার, বাড়ির সানশেড, ক্যান বা ফুলের টবে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা। ঘরের বাইরে পোষা পশু ও পাখির বাসার বিশেষ করে খাবারের পাত্রগুলো নিয়মিত পরিবর্তন করে দেয়া।
- বাড়িতে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা। এ সময় ঘর ও ঘরের আঙ্গিনা থেকে মশা নির্মুলের দিকে অধিক নজর দিতে হবে।
পড়ুন: টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
শেষাংশ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ব্যাপারে বিশদ জ্ঞানার্জন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রতিটি জনসাধারণকে সচেষ্ট হতে হবে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে। শুধু নিজেদের সুস্বাস্থ্যের জন্যই নয়; ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে হলে এখনি প্রয়োজন ডেঙ্গু নির্মূলে সোচ্চার হওয়া।
কদবেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কদবেল এমন একটি মৌসুমি ফল, যার বাইরের আবরণটি শক্ত, রুক্ষ ও বাদামী। ভেতরটা গাঢ় বাদামী সজ্জা বিশিষ্ট কুঁচকানো রজনী লোমের বীজযুক্ত। ভেতরের এই নরম শাঁসালো খাওয়ার অংশটি ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত। টক স্বাদের কারণে এটি জ্যাম এবং চাটনি তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। কদবেল মূলত ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় ফল। আজকের নিবন্ধটি কদবেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।
মৌসুমি ফল কদবেলের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলের মধ্যে ১৩৪ ক্যালরি শক্তি, সাত গ্রাম প্রোটিন, চার গ্রাম ফ্যাট, দুই গ্রাম খনিজ, পাঁচ গ্রাম ফাইবার, ১৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে।
কদবেলে রয়েছে ফাইটোকনস্টিটিউয়েন্ট মারমেনল, মারমিন, মারমেলোসিন, মারমেলাইড, সোরালেন, অ্যালোইম্পেরেটোরিন, রুটারেটিন, স্কোপোলেটিন, এজেলিন, মারমেলিন, ফ্যাগারিন, লিমোনিন, এ-ফেল্যান্ডরিন, বেটুলিনিক অ্যাসিড এবং অ্যানহাইড্রোমারমেলিন।
আরও পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
এছাড়াও ট্যানিন, রিবোফ্লাভিন এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এবং ম্যালিক অ্যাসিডের মত বিভিন্ন জৈব অ্যাসিডে ভরপুর কদবেল।
কদবেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডায়রিয়া প্রতিরোধ এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি
কদবেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ই. কোলাই এবং শিগেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট পাকস্থলীর সংক্রমণ বন্ধ করতে পারে। কদবেলের অপরিপক্ক ফল অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করা বন্ধ করতে পারে। আয়ুর্বেদ এবং লোকজ ওষুধ বহু শতাব্দী ধরে ডায়রিয়ার জন্য কদবেল ব্যবহার করে আসছে। এর ভেতরের রাসায়নিক উপাদান রাইবোফ্লাভিন এবং থায়ামিন শরীরকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এর রস কিডনির রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
বদহজমের প্রাকৃতিক ঔষধ
উচ্চ ফাইবার সামগ্রী এবং রেচক গুণের কারণে কদবেল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা হিসেবে সহায়ক।
আরও পড়ুন: রন্ধন পাঠশালা: ঢাকায় কোথায় রান্না শেখার কোর্স করতে পারবেন?
ছত্রাক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী
কদবেলে এমন যৌগ রয়েছে যা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাসিলাস সাবটিলিস, স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস, ই. কোলাই এবং সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসার মতো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর। এছাড়াও মেনিনজাইটিস, হেমোরেজিক কনজাংটিভাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস এবং এনসেফালাইটিস রোগগুলোর জন্য দায়ী কক্সস্যাকি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কদবেলের অ্যান্টি-ভাইরাল কার্যকারিতা রয়েছে।
হাঁপানির বিরুদ্ধে কার্যকারিতা
হাঁপানির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কদবেল পাতার নির্যাসের আয়ুর্বেদিক ব্যবহার আছে। উদ্ভিদের অ্যালকোহলযুক্ত নির্যাসটিতে অ্যান্টিহিস্টামাইন কার্যকলাপ রয়েছে, যা অ্যালার্জির ট্রিগারের কারণে অ্যাজমার উপসর্গগুলোকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এটি ফুসফুসের হিস্টামিন প্ররোচিত সংকোচন উপশম করতে সাহায্য করে।
মধুর সাথে ৮ থেকে ১৬ গ্রাম তাজা কদবেল পাতার নির্যাস হাঁপানির বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। কারণ কদবেল ফলের পাতায় থাকে অ্যালকালয়েড এবং এজেলিন দায়ী।
আরও পড়ুন: গোল্ডেন মিল্কের জাদুকরি উপকারিতা
ক্যান্সার থেকে প্রতিরক্ষা
কদবেলের নির্যাস স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারি কোষের বিস্তার বন্ধ করতে পারে। লুপেওল, ইউজেনল, সিট্রাল, সিনেওল এবং ডি-লিমোনিনের মত ফাইটোকেমিক্যালগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধের মতো কাজ করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
কদবেল ফল উচ্চ কোলেস্টেরল পরিচালনায় সহায়ক হতে পারে। এর পাতার গুঁড়া অপরিশোধিত ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস। জলীয় নির্যাসে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যালকালয়েড এবং ফেনোলিক্স মানবদেহে লিপিড-হ্রাসকারী প্রভাবের জন্য দায়ী। তাই এই ফলের রস দেহের জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হতে পারে।
আলসার নিরাময়
কদবেল পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে, কারণ এতে আলসার নিরাময়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কদবেলে ট্যানিক এবং ফেনোলিক উপাদান রয়েছে, যা মুলত উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর তাই পাইলস এবং আলসারের চিকিৎসায় এটি সহায়ক হতে পারে।
আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার সঠিক উপায়
কিডনির স্বাস্থ্য এবং রক্তচাপের জন্য ভালো
কদবেল একটি মূত্রবর্ধক, যা কিডনিকে সাহায্য করে প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম অপসারণ করতে। ফলে রক্তচাপ কমে যেয়ে রক্ত শিরা এবং ধমনী থেকে চাপ কমে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
শরীরে কার্বোহাইড্রেটের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে কদবেল ডায়াবেটিসের অগ্রগতি ধীর করে দেয়। এই সময় এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর চিনির বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কদবেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য
অতিরিক্ত কদবেল খাওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য পাচন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো পরিচালনার জন্য এই ফল খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
আরও পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
হাইপোগ্লাইসেমিয়া
রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর সম্ভাবনা থাকায় কদবেল একটি উপকারি ফল। কিন্তু এর অত্যধিক ব্যবহার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমিয়ে দেয়। এতে মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি এবং চেতনা শূন্যতা অনুভূত হতে পারে। এই ধরনের হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এলার্জি প্রতিক্রিয়া
এই মৌসুমি ফলে বেশ কিছু ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে, যা কখনো কখনো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বমি বমি ভাব, বমি, পেট খারাপ, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে ফুসকুড়ির মতো আরও গুরুতর লক্ষণের মাধ্যমে এই প্রতিক্রিয়াগুলো প্রকাশ হতে পারে।
কাদের জন্য কদবেল খাওয়া উচিত নয়
ফল খাওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত ফল খাওয়া বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। তাই অন্যান্য ফলের মতো এই ফলের বেলায়ও বিশেষজ্ঞগণ ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
থাইরয়েড সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদেরও এই ফল পরিত্যাগ করা উচিত। দীর্ঘ সময় ধরে কদবেল খেলে এতে থাকা ট্যানিন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দ্রুত গর্ভপাতের দিকে ধাবিত করতে পারে।
যারা বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই ফলটি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। বেশি পরিমাণে এই ফল খাওয়ার ফলে গ্যাস, ফোলাভাব এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর ফলে পরিপাকতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
নানা পরিবেশনে কদবেল ফল
একটি ছুরি দিয়ে কদবেল ফলের বাইরের শক্ত আবরণে ছিদ্র করার সাথে সাথেই এর ভেতরের শাঁসের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায়। পুরো ফলটিকে আপেলের মতো খোসা ছাড়িয়ে বা অর্ধেক করে কেটে ভেতরের অংশ বের করে নেয়া যেতে পারে। তবে বেশ শক্ত কদবেলের জন্য এটিকে ভারী ধারালো ছুরি কয়েকবার সজোরে আঘাত করতে হতে পারে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডালিমের খোসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
ভেতরের শাঁসটি যেমন আছে ঠিক তেমন ভাবেই খেয়ে নেয়া যায়। তবে বেশি টক হলে তাতে কিছুটা গুড় বা মধু মেশিয়ে নেয়া যেতে পারে। গুড়ের সাথে কদবেলের শাঁস মিশিয়ে তাতে একটু পানি যোগ করা যেতে পারে। তারপর তাতে গোলমরিচ এবং এলাচ গুঁড়ো দিলেই দারুণ একটি সতেজ পানীয় তৈরি হয়ে যাবে।
কদবেলের আবরণের ভেতরেই সজ্জায় চিনি, লবণ এবং মরিচ ভালোভাবে মিশিয়ে সুস্বাদু নাস্তা তৈরি করা যায়। তারপর তাতে ছোট কাঠি দিয়ে রাস্তাঘাটে বিক্রি করা হয়। এটি জনপ্রিয় একটি স্ট্রিট ফুড। এছাড়াও চাটনি এবং জ্যাম তৈরিতে কদবেল একটি বহুল ব্যবহৃত ফল।
পরিশিষ্ট
কদবেল এমন জায়গায় বেড়ে উঠতে সক্ষম, যেখানে অন্য গাছ টিকতে পারে না। এর গাছ মাটির প্রতিকূল পরিবেশ, জলাবদ্ধতা এবং অস্বাভাবিকভাবে ব্যাপক তাপমাত্রায় অনেকটাই সহনশীল। তবে এর বৃদ্ধি খুব ধীর গতি সম্পন্ন। প্রথম ফল আসতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগে।
আরও পড়ুন: গ্রীন কফি: উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বানানোর নিয়ম
মৌসুমি ফল কদবেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর বহুল ব্যবহার আছে। সবচেয়ে বড় ব্যবহারটি হলো কিডনির সমস্যার ওষুধ তৈরিতে। চিকিৎসার পাশাপাশি কদবেল ব্যবহারের আরও কিছু জায়গা আছে। থাইল্যান্ড এবং মায়ানমারের নারীরা কদবেলের শক্ত অংশটিকে প্রসাধনী বানানোর কাজে ব্যবহার করেন। কদবেলের বহিরাবরণটি ছোট বাক্স বা গোলাকার আকৃতির পাত্রে পরিণত করা যেতে পারে। কদবেলের আঠা বিভিন্ন রঙ এবং কালি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কাল থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন সাঁই’র তিরোধান উৎসব
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় শুরু হচ্ছে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই’র ১৩২তম তিরোধান উৎসব। সোমবার থেকে শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলবে।
ওই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রধান অতিথি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন।
তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে থাকছে লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। লালন একাডেমির শিল্পীবৃন্দসহ কলকাতার লালন শিল্পীরাও অনুষ্ঠান সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
ভারী ব্যাগ বহনে মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে উঠছে শিশুরা
শিশুদের জন্য স্কুলে ব্যবহৃত বেঞ্চ বা চেয়ারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এছাড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভারী স্কুলব্যাগ বহন করে। দীর্ঘসময় ভারী ব্যাগ বহনের কারণে অনেকের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়, পিঠে-ঘাড়ে চাপ পড়ে।
অল্প বয়স থেকেই তারা মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে। পরে তারা ৪০-৫০ বছরে পৌঁছলে অনেকেই মেরুদণ্ডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বাংলাদেশ নিউরো স্পাইন সোসাইটি আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ৮৮ শতাংশ করোনা রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত: বিএসএমএমইউ’র জরিপ
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বিগত দিনের তুলনায় স্পাইন রোগের চিকিৎসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমানে কমসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দেশের জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়েছে।
বর্তমান সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে মেরুদণ্ডের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে কাজ করে চলেছে।
সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বের ৫৪ কোটি মানুষের মেরুদণ্ডের সমস্যা ভুগছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের এ সমস্যা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রায় ২০ হাজার এ ধরণের রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। বাংলাদেশের এসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ২১২ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনেক সময় গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ও আঘাতজনিত সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অন্য রোগীদের ইনজেকশন, ওষুধ ও থেরাপি জাতীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত ৪০ হাজার রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। এদের অধিকাংশই থেকে যান চিকিৎসার বাইরে।
তাছাড়া ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকে চিকিৎসা ব্যয় বহনে অসমর্থ্য। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য শ্রেণিকক্ষে বসার ব্যবস্থা থাকে না। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাদেরও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সেমিনারে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে উন্নতমানের নিউরো স্পাইনের সব ধরণের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোকে বিশ্বমানের করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই বাংলাদেশে নিউরো সার্জারি এমএস কোর্স চালু করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউরো স্পাইন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ কামাল উদ্দিন। সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউতে আগুন
তিন ডোজ টিকা নেয়ার দাবিদার ফারুক বিএসএমএমইউতে
টাকা কীভাবে এলো? মানব সভ্যতায় টাকার ইতিহাস
হোক সেটা জীবনের মৌলিক চাহিদা, অথবা দীর্ঘদিন ধরে লালন করা স্বপ্ন; দুটোর যে কোনটি পূরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বস্তু কোনটি? হাজারো তর্ক-বিতর্কের পর দিন শেষে যে উত্তরটির দিকে পাল্লাটা বেশি ভারী হয়, তা হচ্ছে-টাকা। মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে ভাবলেও চূড়ান্ত গন্তব্যটি টাকার দিকেই নির্দেশ করে। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের সঙ্গে যেকোনো কাজে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, বহুদিন ধরে সুপ্ত থাকা প্রতিভাকে বিকশিত করা এবং প্রকৃতির বিস্ময়কে খুব কাছ থেকে পরখ করা; এ সবকিছুর জন্য দরকার আর্থিক স্থিতিশীলতার সমর্থন। আর সেই স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে টাকার পেছনে মানুষের নিরন্তর ছুটে চলা আবহমান কাল ধরেই। কিন্তু এর শুরুটা কোথায়? কীভাবে এলো টাকা? ঘুরে দেখা যাক, টাকার ঐতিহাসিক সময়রেখাটা।
প্রাগৈতিহাসিক লেনদেন ও টাকার ধারণা
পৃথিবীতে মুদ্রা ধারণা আসার আগে প্রচলন ছিল বিনিময় প্রথার। এক পণ্য বা সেবার বিনিময়ে আরেকটি পণ্য বা সেবা। ৯ হাজার থেকে ৬ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে গবাদি পশু পালন এবং ফসলের চাষকে কেন্দ্র করে গৃহস্থালি পশু-পাখি এবং উদ্ভিদজাত পণ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানে সমস্যা ছিল- কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফসল ফলার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। অর্থাৎ কৃষকদের যেকোনো কিছু কেনার প্রয়োজন হলে, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করার কোনো উপায় ছিল না। এ সময়ই উদ্ভব হয় বাকিতে কোনো কিছু নেয়া বা ঋণের ধারণার। ফলশ্রুতিতে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়- লিখিত বিবরণী বা প্রমাণপত্রের।
এখানে কৃষকটির সঙ্গে যিনি বিনিময় করবেন তিনিও ভুগতে থাকেন অবিশ্বাসের দোলাচলে। সব মিলিয়ে বিনিময়ের জন্য সঠিক লোক খুঁজে পাওয়া ছিল একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। আর এই সমস্যাটি সমাধানের জন্যই একটি নিরপেক্ষ তৃতীয় বিনিময় মাধ্যম তৈরির প্রবণতা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজক ৭ শহর ভ্রমণ
প্রথম কবে টাকা ব্যবহার করা হয়
তৃতীয় নিরপেক্ষ মাধ্যমটি এমন একটি বস্তু হবে, যার সাপেক্ষে অনায়াসেই লেনদেন করা যাবে পণ্য ও পরিষেবাটি। এই ধারণার আঙ্গিকে সর্বপ্রথম তিন হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি বিনিময় পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মেসোপটেমিয়ার শহরগুলোতে। তারা উদ্ভাবন করেছিল গচ্ছিত সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা। কৃষকরা তাদের শস্য মন্দিরে জমা করতো আর সেই জমার রেকর্ড থাকতো মাটির তৈরি এক ট্যাবলেটে। জমা করার সময় কৃষককে দেয়া হতো মাটির তৈরি টোকেন, যেটি রশিদের কাজ করতো। এটি দিয়ে তারা তাদের ঋণগুলো পরিশোধ করতো। এখান থেকেই সৃষ্টি হয় প্রতিনিধি মুদ্রার ধারণা।
পরবর্তীতে এই মেসোপটেমিয়ানরাই উদ্ভাবন করে ইতিহাসের প্রথম মুদ্রা-শেকেল। সময়টি ছিল আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। রৌপ্য দিয়ে তৈরি শেকেল দিয়ে মূলত ওজনের ভিত্তিতে লেনদেন করা হতো। এর ওজন ছিল প্রায় ১১ গ্রাম, যা নামমাত্র পরিমাণ বার্লির ওজনের সমতুল্য ছিল।
প্রথম ধাতব মুদ্রা এবং স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন
প্রায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনের ঝাউ রাজবংশের শাসনামলে ব্রোঞ্জের তৈরি মুদ্রার প্রচলন হয়। এর আগে অবশ্য কাউরি বা ঝিনুকের খোল দিয়ে মুদ্রা বানানো হতো। এগুলো প্রকৃতিতে খুব সহজলভ্য ছিল বিধায় বিকল্প হিসেবে ব্রোঞ্জে খোদাই করা মুদ্রার ব্যবহার শুরু হয়।
আরও পড়ুন: আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার জিতেছে বাংলাদেশের ২ প্রকল্প
খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার লিডিয়া রাজ্যে উদ্ভাবিত হয়েছিল ডিস্ক-আকৃতির, স্বর্ণ, রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ নির্মিত মুদ্রা। নকল থেকে আসল মুদ্রা আলাদা করতে এগুলোর উভয় পাশে খোদাই করা হতো দেবতাদের বা সে সময়কার রাজাদের প্রতিকৃতি। পরবর্তী শতাব্দীতে এগুলো গ্রিস অব্দি ছড়িয়ে পড়ে। এই মুদ্রা থেকেই বর্তমান সময়ের সমস্ত আধুনিক মুদ্রা এসেছে।
স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ব্যাপকতা লাভ করে ৬৫০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে। এ সময় খোদাইকৃত মুদ্রা দিয়ে সেনাবাহিনীর পারিশ্রমিক দেয়া হতো। মুদ্রা হিসেবে স্বর্ণ প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আধুনিক তুরস্কের প্রাচীন রাজ্য লিডিয়ায়। ইলেক্ট্রাম নামে পরিচিত রূপা ও সোনার একটি সংকর ধাতু ব্যবহার করা হতো মুদ্রাটি তৈরি করতে।
প্রথম কাগজের নোট
কাগজের মুদ্রা সর্বপ্রথম তৈরি করা হয় ৭০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দে চীনে। তৎকালিন চীনে কাগুজে মুদ্রা তৈরির কারখানাও ছিল। এই মুদ্রা বেশি দিন লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিরাজ করতে পারেনি। ১৪৫৫ সালের পরেই বন্ধ হয়ে যায় এই টাকার ব্যবহার। ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে চীন আবার তার ধাতব মুদ্রায় ফিরে যায় এবং পরবর্তীতে আবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই মুদ্রা।
আরও পড়ুন: বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
ব্যাংকিং ব্যবস্থার সূত্রপাত
মধ্যযুগে রেনেসাঁর একদম শুরুর দিকে ইতালির বিভিন্ন ধনী শহরগুলোতে অভিজাত সূচনা ঘটে ব্যাংকিং ব্যবস্থার। ইংরেজি ব্যাংক শব্দটি নেয়া হয়েছে ফরাসি শব্দ ব্যাংকু থেকে, যেটি এসেছে মূলত রোমান শব্দ ব্যাংকা থেকে, যার অর্থ টেবিল। এই ব্যাংকা শব্দটির উদ্ভূত আবার প্রাচীন জার্মান ব্যাংক থেকে, যার মানে বেঞ্চ বা কাউন্টার। রেনেসাঁর সময় ফ্লোরেনটাইন ব্যাংকারদের বেঞ্চগুলো অস্থায়ী ডেস্ক বা বিনিময় কাউন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
১৪ শতকের দিকে ফ্লোরেন্স জুড়ে ব্যাঙ্কিংয়ে আধিপত্য বিস্তার করে বার্দি এবং পেরুজি নামক রাজকীয় পরিবার দুটি। পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য জায়গাগুলোতেও তাদের একাধিক শাখা স্থাপিত হতে থাকে। এ সময় ব্যাপক হারে জনসাধারণকে ঋণ দেয়া এবং তাদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের কার্যক্রমগুলো ঘটতে থাকে। অবশ্য রোমান সাম্রাজ্য পতনের মধ্যে দিয়ে পুরো ব্যবস্থাটিই ধ্বংস হয়ে যায়।
আদর্শ স্বর্ণমান কেন্দ্রিক লেনদেন
১৮১৬ সালে স্বর্ণকে ইংল্যান্ডে আদর্শ মূল্যমান করা হয়; শুরু হয় গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের যুগ। এর অর্থ হলো প্রতিটি ব্যাংক নোট একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক ব্যাঙ্কনোট মুদ্রণ করা যাবে। এই নিয়মটি পূর্বে যাবতীয় অস্থিতিশীল মুদ্রা ব্যবস্থার বিড়ম্বনার অবসান ঘটিয়েছিলো। ১৯০০ সাল নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড আইনের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ২০ শতক জুড়ে প্রধান পরাশক্তি দেশগুলোর মধ্যে ঘন ঘন যুদ্ধের ফলে এই ব্যবস্থার অবনতি ঘটে। শেষ পর্যন্ত ১৯৩১ সালে যুক্তরাজ্য এবং ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পরিত্যাগ করে।
আরও পড়ুন: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ কেন জরুরি?
বাংলা টাকার আবির্ভাব
বাংলাদেশের বাংলা টাকার ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। এর উৎপত্তি হয়েছে ১৪ শতাব্দীতে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, ইউরোপ থেকে এশিয়ার বাণিজ্য পথ বিখ্যাত সিল্ক রোডের লেনদেনকৃত এক প্রসিদ্ধ মুদ্রা ছিল এই টাকা। শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ট্যাঙ্কহ থেকে।
সুলতানি টাঙ্কা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ১৩২৯ সালে দিল্লি সালতানাতের সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সময়। চীনের মঙ্গোল এবং পারস্যদের মুদ্রার আদলে তৈরি করা এই টাঙ্কা ব্যবহৃত হতো প্রতিনিধিত্বমূলক মুদ্রা হিসেবে। তামা ও পিতলের তৈরি এই মুদ্রার মূল্য সাম্রাজ্যের কোষাগারে স্বর্ণ ও রৌপ্য মজুদের সঙ্গে বিনিময় করা হতো। তুঘলগ রাজবংশের পতনের অনেক পরেও মুঘল সাম্রাজ্যের শুরুর দিকে কিছু অঞ্চলে প্রচলিত ছিল টাঙ্কা। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৩৮ সালে রৌপ্য টাকার জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করেছিলেন। বাংলার সুলতানদের জন্য এই মুদ্রা ছিল সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি রুপিতে উর্দু এবং বাংলায় দ্বিভাষিক শিলালিপি ছিল এবং একে রুপি ও টাকা উভয় নামেই ডাকা হতো। এটি ছিল বাংলা টাকার প্রথম কাগুজে সংস্করণ। বাংলা ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে টাকার স্বীকৃতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে টাকাকে বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে চালু করে।
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
শেষাংশ
টাকা কীভাবে এলো? শুধু এর উত্তরই নয়। টাকার ইতিহাস করচা কালক্রমে টাকার বিস্ময়কর রুপ বদলটাকেও স্পষ্টভাবে উন্মোচিত করেছে। যে রূপ বদল এখনো থেমে নেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড যেকোনো লেনদেনকে আগের চেয়ে আরও সহজ করে তুলেছে। একই সঙ্গে বাড়াচ্ছে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা। মোবাইল অ্যাপগুলোর কারণে ক্যাশ ছাড়াই লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্ব। এমনকি আগামী প্রজন্মের লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে চলে এসেছে ডিজিটাল মুদ্রা। সুতরাং বর্তমানের কাগজে নোটগুলোকে যাদুঘরে রাখার দিন আর বেশি দূরে নয়।