%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE
‘ব্রেভহার্ট’: বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে গ্যালারি কসমস
জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষে গ্যালারি কসমস শুক্রবার রাজধানীর কসমস সেন্টারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্রেভহার্ট’- শিরোনামে দিনব্যাপী চিত্রশিল্প, আলোকচিত্র ও ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে এতে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী রফিকুন নবী, বীরেন সোম এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও যোগ দেবেন গ্যালারি কসমসের পরিচালক তাহমিনা এনায়েত এবং কসমস গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ জামিল খান।
বহুমাত্রিক এই প্রদর্শনীতে সহযোগী হিসেবে থাকছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কসমস গ্রুপের জনহিতকর সংস্থা কসমস ফাউন্ডেশন। এ আয়োজনে মিডিয়া ও নলেজ পার্টনার হিসেবে থাকছে ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্যুরিয়ার।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনের আগে ১২ জন শিশু শিল্পী ও চিত্রশিল্পীদের একটি দল প্রদর্শনীর স্থানে এক বিশেষ গ্রুপ আর্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করবে এবং জাতির পিতার প্রতি তাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে।
প্রদর্শনীতে শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বীরেন সোম, অলকেশ ঘোষ, নাসির আলী মামুন, আফরোজা জামিল কঙ্কা, ভাস্কর রাশা, শাহাজাহান আহমেদ বিকাশ, আজমীর হোসেন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, আবু কালাম শামসুদ্দিন, দেবদাস মালাকার, দিলীপ কর্মকার, সৌরভ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল বশির, ইকবাল বাহার চৌধুরী, মানিক বনিক, কামরুজ্জোহা, আজমল হোসেন, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মজুমদার শাকিল ও মো. রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে।
দর্শকরা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর মালিবাগের কসমস সেন্টারে আয়োজিত এই প্রদর্শনীটি উপভোগ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম ভার্চুয়াল প্রদর্শনী শুরু
শনিবার ‘দ্য প্যাশন অব ড্রয়িং-২’ আয়োজন করবে গ্যালারি কসমস
টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন ই-মেইল পড়তে, টেক্সট পাঠাতে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ চেক করতে। সব মিলিয়ে যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৭০০ থেকে ১৪০০ ঘন্টা। সম্প্রতি এই বিষয়টি এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে মার্কিন কাইরোপ্র্যাক্টর ডিন ফিশম্যান এটিকে একটি স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে ‘টেক্সট নেক সিন্ড্রোম’- নাম দিয়েছেন।
টেক্সট নেক সিন্ড্রোম মুলত প্রচণ্ড ঘাড় ব্যথার পুনরাবৃত্তি, যা দীর্ঘ সময় ধরে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে রাখার জন্য ঘটে থাকে। এই অবস্থাটি ‘টার্টল নেক পশ্চার’, ‘অ্যান্টেরিয়র হেড সিন্ড্রোম’ এবং ‘টেক নেক সিন্ড্রোম’ নামেও পরিচিত। এই আসুন অভিনব এই স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের কারণ
টেক্সট নেক সিন্ড্রোম মোবাইলের মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত হলেও এটি বর্তমানের যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমন ট্যাবলেটে সম্পাদিত বিভিন্ন কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর মধ্যে আছে- ওয়েব ব্রাউজ করা, গেম খেলা বা কোন ডাটা প্রসেস করা। এ সময় স্বাভাবিক ভাবেই মাথা একটু সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে। টিভি এবং কম্পিউটারের তুলনায় স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের স্ক্রিনগুলো দেখার জন্য সাধারণত টেবিল বা হাতে কাছাকাছি নিয়ে নির্দিষ্ট কোণে মাথা বাঁকা করতে হয়।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
বর্তমানের টাচস্ক্রিন সেটগুলো কাঁধ এবং মাথাকে আরও সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে আনে। স্মার্টফোনে ওয়েব ব্রাউজিং বা ভিডিও দেখার তুলনায় ম্যাসেজ করার সময় মাথার ভঙ্গি বেশি থাকে। ম্যাসেজ করার ক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে দুই হাতের ব্যবহার এবং আঙুলগুলো স্ক্রিনে স্পর্শ করে রাখার দরকার পড়ে। এর ফলে স্মার্টফোন ব্যবহারকারিকে নিজের কাঁধ আরও সামনের দিকে বাঁকা করে রাখতে হয়।
এছাড়া কিন্ডেলে বই পড়া, কিচেনে থালা বাসন ধোয়া, ঘর ঝাড়ু দেয়া প্রভৃতি কাজও মাথা কাত করতে বাধ্য করে। এখানে সময়টা গুরুত্ব বিষয়, কেননা, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটগুলো সাধারণের থেকে অনেক বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হয়। এমনকি এই দীর্ঘ সময়টাতে ব্যবহারকারিরা তাদের অবস্থানও পরিবর্তন করেন না। ফলে শরীর তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও পেশীর প্রয়োজনীয় নড়াচড়া থেকে বঞ্চিত হয়। এটি শরীরের নির্দিষ্ট অংশে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার দরুণ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি হয়।
যখন মাথা ১৫ ডিগ্রি সামনে কাত হয়, ঘাড়ের ওপর তখন ২৭ পাউন্ড ভর চাপে, ৩০ ডিগ্রি হলে ৪০ পাউন্ড, ৪৫ ডিগ্রির বেলায় ৪৯ পাউন্ড এবং ৬০ ডিগ্রির ক্ষেত্রে চাপটা ৬০ পাউন্ডে ওঠে যায়। ঘাড়ের এই বাড়তি চাপটা বুঝার জন্য ৮ বছর বয়সী কোন বাচ্চাকে দুই থেকে চার ঘন্টা ধরে ঘাড়ে নিয়ে চলার কথা কল্পনা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের লক্ষণ
স্মার্টফোন ব্যবহার করার সময় তাৎক্ষণিকভাবে উপরের পিঠ বা ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হবে। দিনের শেষ ভাগে বা রাতে ঘুমাতে যাবার সময় ঘাড়ে বা কাঁধে তীব্র ব্যথা বাড়তে থাকবে। সাধারণত প্রাথমিকভাবে কাঁধে হাল্কা ব্যথা এবং চাপের মাধ্যমে এই ব্যথা তীব্রতার দিকে এগিয়ে যায়। নিচের দিকে তাকালে বা কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মাঝে মাঝে অথবা ক্রমাগত মাথাব্যথা হবে। ধীরে ধীরে এই ব্যথা অসহনীয় হয়ে উঠবে। কোন একটি নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় দাড়িয়ে থাকতে সমস্যা হবে। এমনকি দাঁড়ানো অবস্থা, কোন এক দিকে ঝুঁকে পড়া বা নড়াচড়াতেও সমস্যা হবে।
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের স্বাস্থ্য ঝুঁকি
দীর্ঘক্ষণ সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে মেরুদণ্ড, ঘাড় ও কাঁধের পেশী এবং আনুষঙ্গিক অস্থি বন্ধনীগুলো বাঁকা হয়ে যেতে পারে। চরম পর্যায়ে ঘাড় এবং কাঁধ বরাবর পেশীগুলোর ন্যূনতম ব্যথা হাড় বা মেরুদণ্ডের ডিস্কের অবক্ষয় করতে পারে। এ অবস্থায় হাত দিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সমস্যা হতে পারে। এমনকি কাজ ছাড়া অবস্থাতেও বাহুর ব্যথা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। ব্যথা তীব্রতায় রূপ নিলে ঘাড় বরাবর মেরুদণ্ড বা স্নায়ু অবশ বা অসাড় হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
টেক্সট নেক সিন্ড্রোমের প্রতিকার
মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্কতা
স্মার্টফোন সহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার সময় শরীরের ভঙ্গিমা এবং ব্যবহারকারির ডিভাইস ব্যবহারের আচরণকে সামঞ্জস্য করার মাধ্যমে এই জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ঘাড়কে মেরুদণ্ড বরাবর যতটা সম্ভব সমান রাখার চেষ্টা করা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে কাঁধ যেন কুঁচকে না যায় এবং পিঠ বাঁকা না থাকে।
দীর্ঘ সময়ের জন্য ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর শরীরের ভঙ্গিমা পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে। ম্যাসেজ করা বা অন্য যে কোন কাজ করা হোক না কেন, চেষ্টা করতে হবে মোবাইল ডিভাইসটিকে একদম চোখের সঙ্গে একই স্তরে ধরে রাখা। একটু নিচে বা ওপরে কোন কোণ করে নয়; একদম ঘাড় সোজা রেখে চোখের দৃষ্টি বরাবর। কিছুক্ষণ পরপর চিবুকটি সোজা রেখে কাঁধের ব্লেডগুলো পিছনের দিকে বৃত্তকারে ঘোরোনো অনুশীলনটা করা যেতে পারে।
প্রতি ১৫ মিনিট পর মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারে বিরতি নিতে হবে। শরীরের ভঙ্গিমা এমনকি পুরো অবস্থান পরিবর্তন করা যেতে পারে। বাচ্চাদের জন্য ডিভাইসটিকে হাতে বা মেঝেতে না রেখে টেবিলে বাচ্চাদের চোখের সামনাসামনি রাখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কোথায় ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়
সঠিক শয়ন পদ্ধতি
মেঝে বা শক্ত পৃষ্ঠে পিঠ দিয়ে শুতে হবে। ঘাড়ের নিচে একটি পরিপাটি করে ভাঁজ করা তোয়ালে রাখতে হবে, যাতে করে ঘাড় একটি আরামদায়ক মঞ্চ পায় আর চিবুকটা একটু উঁচু হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বালিশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য শয়নের পদ্ধতিটি আরামদায়ক হতে হয় তাই এখানে অবশ্যই আরামপ্রদ অবস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শরীরের ভঙ্গিমাকে সুস্থ ঘুমের অনুকূলে রাখতে বালিশের বিকল্প নেই।
হাঁটুর কাছে পা বাঁকা করে রাখতে হবে এবং শরীরের পাশে দুই হাত সমান ভাবে ফেলে রাখতে হবে। উপুর হয়ে শোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যে কোন এক পাশ বা চিত হয়ে ঘুমানো প্রায়শই পিঠের ব্যথা উপশমের জন্য সহায়ক। যে কোন এক পাশ ফিরে ঘুমানোর সময় পায়ের মাঝে কোল বালিশ রাখা যেতে পারে। চিত হয়ে ঘুমানোর ক্ষেত্রে হাঁটুর নিচে বালিশ রাখা যেতে পারে।
সঠিক ভাবে বসার ভঙ্গিমা
দুই পা সমান ভাবে পাশাপাশি মেঝেতে রাখতে হবে। পা মেঝে অব্দি না পৌঁছলে সমান ভাবে পাশাপাশি মুক্ত ভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তবে গোড়ালি সহ পায়ের পাতা হাঁটু থেকে একটু সামনে রাখা উত্তম। কিন্তু কোন ভাবেই পায়ের ওপর পা তুলে, বা ক্রস আকৃতিতে রাখা যাবে না। হাঁটুর পশ্চাৎ ভাগ চেয়ারের সঙ্গে একদম ঠেস দিয়ে রাখা যাবে না। হাঁটুর পিছন এবং আসনের মধ্যে অল্প একটু ফাঁক রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
হাঁটু এবং কোমড়ের মাঝে ৯০ ডিগ্রী কোণ রাখা একটি স্বাস্থ্যকর বসার উপায়।
পিঠের নিচ থেকে শুরু করে মধ্য ভাগ পর্যন্ত চেয়ারের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে। মাঝে ফাঁক রেখে হেলান দিয়ে থাকা যাবে না। কাঁধকে শিথিল রাখতে হবে এবং দুই হাতের কনুই থেকে হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত অংশকে মাটির সমান্তরালে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সঠিক ভাবে বসার অনুকূলে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ আসন বাছাই করা আবশ্যক। তবে দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থানে বসে থাকা যাবে না।
সঠিক ভাবে দাড়ানোর ভঙ্গিমা
প্রাথমিকভাবে পায়ের আঙ্গুলের অংশের ওপর দেহের ওজন ফেলতে হবে। হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে রাখা ভালো। কাঁধের প্রস্থের সমান দূরত্ব রাখা উচিত দু’পায়ের মাঝে। কাঁধ পিছনে টান দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। দেহের ওজন পায়ের আঙ্গুল থেকে পেছনে হিল পর্যন্ত স্থানান্তর করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে দাড়িয়ে থাকার ক্ষেত্রে এক পা থেকে অন্য পায়ে ভর স্থানান্তর করা উচিত।
আরও পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
পরিশিষ্ট
মোবাইল ফোন নিঃসন্দেহে জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার যে কোন নেশাজাত দ্রব্য অতিরিক্ত সেবনের থেকে কম কিছু নয়। তাছাড়া এখানে মানুষ ও যন্ত্রমানবের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ করা যায়। রোবট দীর্ঘ সময় ধরে একটি কাজ কোন সমস্যা ছাড়াই করে যেতে পারে। কিন্তু মানুষের বিরতি প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হয় হাওয়া বদলের এবং দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও পেশীগুলো সঞ্চালনের।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার প্রবণতা ‘টেক্সট নেক সিন্ড্রোম’ বা আরো জটিল ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই কাজ ও সময় থেকেও অধিক যত্নশীল হওয়া উচিত স্বাস্থ্যের প্রতি। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তবেই সময়গুলোকে কাজে ভরিয়ে দিয়ে ফলপ্রসূ করে তোলা যাবে।
অপরাজিতা ফুলের নীল চা: জাদুকরী স্বাস্থ্যগুণ, বানানোর পদ্ধতি
শুধু সৌন্দর্য্য দিয়ে নয়; প্রকৃতি তার বিস্ময়কর সব উপাচার দিয়ে অকুণ্ঠচিত্তে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে মানুষের সেবায়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান অবস্থার পেছনে প্রকৃতির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এখনো গবেষণায় বেরিয়ে আসছে নানান উদ্ভিদের বিস্ময়কর ক্ষমতার কথা। তবে বাটারফ্লাই পি ফ্লাওয়ার বা অপরাজিতা ফুলের নীল চা খুব একটা নতুন বিষয় নয়। এশিয়ায় জন্মানো এই আকর্ষণীয় উদ্ভিদটির নীল রঙ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগের উপস্থিতির কথা জানান দেয়। এই উদ্ভিদ থেকে তৈরি করা যায় অনেক স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন ভেষজ চা। চলুন, অপরাজিতা ফুলের চায়ের গুণাগুণ ও চা বানানোর পদ্ধতি জেনে নেয়া যাক।
নীল অপরাজিতা ফুলের চায়ের উপকারিতা ও স্বাস্থ্যগুণ
ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
প্রসাধনী নির্মাতারা স্কিনকেয়ার সিরাম থেকে শুরু করে চুলের মিস্ট এবং শ্যাম্পু সব কিছুতেই অপরাজিতা ফুলের কার্যকারিতা নিয়ে গর্ব করেন। এর নির্যাস সাময়িক প্রয়োগের এক ঘন্টা পরে ত্বকের হাইড্রেশন ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া চুলের বৃদ্ধিতে এটি মিনোক্সিডিলের চেয়েও বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই এটি চুল পড়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ পণ্য। এটি চুলের ফলিকলগুলোকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে।
ওজন কমানো
অপরাজিতা ফুলের নির্যাস দেহের কিছু কোষের অগ্রগতিকে নিয়ন্ত্রণ করে চর্বির গঠনকে ধীর করে দিতে পারে। এতে থাকা টার্নেটাইন্স শরীরের চর্বি কোষের সংশ্লেষণ ব্লক করতে পারে।
পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
রক্তে শর্করার মাত্রার ভারসাম্যতা বজায়
অপরাজিতা ফুল ডায়াবেটিস সম্পর্কিত লক্ষণগুলোর ঝুঁকি কমাতে পারে। এর নির্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। এতে থাকা ফেনোলিক অ্যাসিড এবং ফেনোলিক অ্যামাইড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এর অ্যান্টিহাইপারগ্লাইসেমিক প্রভাবে ইনসুলিন নিঃসরণ উন্নত হয়, গ্লুকোজ বিপাক নিয়ন্ত্রণ হয় এবং শরীরের কোষগুলোর দ্বারা শর্করার অতিরিক্ত শোষণ প্রতিরোধ হয়। এমনকি এটি খালি পেট এবং ভরপেট খাওয়ার পরে উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করে।
হতাশা এবং উদ্বেগের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা
নীল চা পাতা একটি ভাল অ্যাডাপ্টোজেন। অ্যাডাপ্টোজেন এমন অণু, যা হতাশা এবং উদ্বেগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাড়াতে পারে। ফলে শরীর তার স্বাভাবিক এবং সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে।
হৃদপিন্ডের সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা
আয়ু বৃদ্ধির সর্বোত্তম উপায় হল যে কোন বয়সেই হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখা। এই কাজটি বেশ সুচারুরূপে করতে পারে নীল চা। এই সুস্বাদু পানীয়টি এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং শরীরে এইচডিএল বা ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি হার্ট অ্যাটাক, রক্ত জমাট বাঁধা এবং হৃদযন্ত্রের জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসাবে কাজ করে। এই সব কার্ডিওভাসকুলার সুবিধার পাশাপাশি নীল চা হাইপারলিপিডেমিয়া বা রক্তে অত্যধিক চর্বি জমা থেকেও রক্ষা করে।
পড়ুন: বাংলাদেশের বাহারি আম এবং তাদের উৎপাদনকারী অঞ্চল
মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বৃদ্ধি
অ্যাসিটাইলকোলাইন মস্তিষ্কের কার্যকরী স্নায়ু কোষ যোগাযোগের জন্য অপরিহার্য একটি অণু। বয়সের সাথে এই যৌগটি হ্রাস পেতে শুরু করে, বিধায় স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় এবং অন্যান্য মস্তিষ্কের ব্যাধি সৃষ্টি হয়। এই নীল চায়ে রয়েছে অ্যাসিটাইলকোলাইন যৌগ যেটি স্নায়ুকে শান্ত করার সময় স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধ করে। এটি এমনকি মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিদের জ্ঞানীয় ক্ষমতাও বাড়ায়।
বার্ধক্য বিরোধী বৈশিষ্ট্য
নীল চা অ্যান্থোসায়ানিনে পূর্ণ, যেটি এমন একটি যৌগ যা ত্বকের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। এটি ত্বকের কৈশিকগুলোতে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে ত্বককে তরুণ করে তোলে। এটি গ্লাইকেশন প্রক্রিয়াকেও ধীর করে দেয়, যা ত্বকের টান টান ভাব হারানোর জন্য দায়ী।
হজমের স্বাস্থ্যের উন্নতি
খালি পেটে নীল চা পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। সুতরাং লিভার, অগ্ন্যাশয় এবং অন্ত্রগুলো যে ভালভাবে পরিষ্কার থাকবে সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকা যেতে পারে। আর এই পরিশুদ্ধি পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সপ্তাহে এক বা দুবার খালি পেটে এক কাপ নীল চা পান করা সিস্টেমে জমে থাকা টক্সিনগুলোকে বের করে দেয়।
পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
ব্যাথানাশক ঔষধ
এক কাপ নীল চা প্যারাসিটামলের মত কাজ করে। ফলে এটি পেইন কিলারের উপর নির্ভরশীলতা কমায়। এর প্রদাহ বিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো জ্বর সহ যে কোন ধরনের শরীর ব্যাথা উপশম করতে সক্ষম। নীল চায়ের নির্যাসের চেতনানাশক বৈশিষ্ট্য ব্যথা এবং ফোলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য
নীল চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রোগ-সৃষ্টিকারী প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট কার্যকর। এতে উপস্থিত উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী। এটি কেবল প্রদাহ কমাতেই সাহায্য করে না বরং অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষা করে। নীল চা বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় প্রদাহের চিকিৎসায় সমানভাবে কাজ করে। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে শরীর প্রদাহ এবং অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়ে ওঠে।
অপরাজিতা ফুলের চা বানানোর পদ্ধতি
অপরাজিতা ফুলের চা তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান
নীল চা তৈরিতে যেগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে সেগুলো হলো শুকনো নীল অপরাজিতা ফুলের চা দানা, গরম পানি, লেবু বা চুন, মধু বা মিষ্টি, ঠান্ডা চায়ের ক্ষেত্রে বরফের টুকরো। তাজা বা শুকনো অপরাজিতা ফুল ব্যবহার করা যেতে পারে। চায়ের স্বাদ কতটুকু গাঢ় হবে তার উপর ভিত্তি করে ফুলে সংখ্যা কম বেশি করতে হবে। বেশি পুষ্টি অথবা স্বাস্থ্যগুণের সুবিধা ভালো ভাবে পেতে হলে বেশি ফুল ব্যবহার করতে হবে। তবে হালকা নীল চা থেকে অমৃতের স্বাদ পেতে এক চুমুকই যথেষ্ট।
পড়ুন: রন্ধন পাঠশালা: ঢাকায় কোথায় রান্না শেখার কোর্স করতে পারবেন?
ধাপে ধাপে অপরাজিতা ফুলের চা তৈরির পদ্ধতি
প্রথমে উচ্চ তাপে চায়ের কেটলিতে পানি গরম করতে হবে। ২ কাপ বা তার বেশি পরিমাণে পান করতে চাইলে একটি বড় পাত্রে পানি সিদ্ধ করে অতঃপর ছোট পাত্রে চা ঢেলে নেয়া যেতে পারে।
এক-চতুর্থাংশ কাপ নীল চা দানা ছাকনী যুক্ত বলে নিতে হবে। অতঃপর একজনের জন্য তা একটি বড় মগে যোগ করতে হবে। আর ২ জনের জন্য ৪ কাপে যুক্ত করা যেতে পারে।
চায়ের বলের উপর গরম পানি ঢেলে দিয়ে ৩ থেকে ৮ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। চা কতটা গাঢ় স্বাদের হবে তার উপর নির্ভর করে এই সময়টা বাড়ানো যেতে পারে। তবে সতর্ক থাকতে হবে, কেননা ১০ মিনিটের বেশি হয়ে গেলে চা একদম তেতো হয়ে যাবে।
পড়ুন: গোল্ডেন মিল্কের জাদুকরি উপকারিতা
ঠান্ডা চায়ের জন্য একটি গ্লাসে ১ কাপ বরফ রাখতে হবে। এই বরফের উপর ঢেলে দিতে হবে গরম নীল চা। পরিমাণ মত লেবুর রস যোগ করা যেতে পারে। এছাড়া আরো মুখরোচক করার জন্য মধু দেয়া যেতে পারে।
নীল রঙকে ভালো ভাবে পেতে হলে ফুলগুলোকে কয়েক মিনিটের জন্য গরম পানিতে ভিজতে দিতে হবে। আরো রঙ বের করতে কাপের বিপরীতে ফুলগুলোকে চামচের উল্টো পিঠ দিয়ে পিষে নেয়া যেতে পারে। অনেক বেশি পরিমাণে এই চা বানালে সাধারণত ২ থেকে ৩ দিনের জন্য ফ্রিজে রাখা যেতে পারে। তবে লেবুর রস দিয়ে পান করতে চাইলে পান করার জন্য প্রস্তুত করে অর্থাৎ পান করার ঠিক আগ মুহুর্তে লেবুর রস যোগ করতে হবে।
পরিশিষ্ট
অপরাজিতা ফুলের নীল চায়ের জাদুকরী উপকারিতার জন্য এটি ভেষজ খাবারের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত এবং বহুকাল ধরে এটি আদিম চিকিৎসায় রোগীদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই বহুমুখী পানীয়টির তেমন একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ানেই। তাই এটি যে কোন ডায়েটে একটি দুর্দান্ত সংযোজন। অতিরিক্ত সেবনে সর্বোচ্চ হালকা বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে। তবে গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে নীল চা পান করার আগে তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
ঘুরতে ভালোবাসেন অথচ চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেননি এমন বাংলাদেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য অনেকে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান চলে যাবার সময় চট্টগ্রামে নামতে ভুলে যান। কিন্তু পর্বতপ্রেমি পর্যটকদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নামের সাথে জড়িয়ে আছে শত বছরের ইতিহাস। ঢাকার মত এই ছিমছাম শহরটিও ইতোমধ্যে ফ্লাইওভারে ঢেকে গেছে। পাশাপাশি যানযটের দিক থেকে ঢাকার সাথে সাদৃশ্য থাকলেও এর দর্শনীয় স্থানগুলো এখনো আকর্ষণ হারায়নি। আজকের ভ্রমণ করচা এই ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম নগরীর দর্শনীয় স্থান নিয়ে।
চট্টগ্রাম শহরে জনপ্রিয় ১০টি দর্শনীয় স্থান
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতটি বাংলাদেশের অত্যাশ্চর্য এবং বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম। কর্ণফুলী নদী ও সাগরের মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। এছাড়া বন্দরে ছোট-বড় জাহাজের সারি এক ভিন্ন পরিবেশের ছোঁয়া দিবে। এখানে সমুদ্রে ভেসে বেড়ানোর জন্য আছে স্পিডবোট ও সি বাইক। অনেকে ঘোড়ায় চড়ে পুরো সৈকত ঘুরে বেড়ান। পতেঙ্গার আশেপাশে অন্যান্য সুন্দর জায়গার মধ্যে আছে বাংলাদেশ নৌ ঘাঁটি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের বাটারফ্লাই পার্ক।
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৪ কিমি দক্ষিণে পতেঙ্গায় গাড়ি, সিএনজি বা লোকাল বাসে করে যাওয়া যায়। সিএনজিতে গেলে ভাড়া পড়বে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা আর লোকাল বাসে নিবে ৫০ টাকা।
পড়ুন: ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে পথ চলা শুরু হয় দেশের একমাত্র জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটির। চট্টগ্রাম জেলার আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বাদামতলী মোড়ের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। ১.২৫ একর জমির উপর গড়ে তোলা জাদুঘরটি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। জাদুঘরে ২৯টি জাতিগোষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি এবং জীবন প্রবাহের জন্য নিবেদিত ১১টি প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে। উপরন্তু বিশ্বব্যাপী ২৫টি বাংলাদেশী জাতিগোষ্ঠী এবং ৫টি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনামূলক বিশ্লেষণ জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করেছে। জাতিগত জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। এটি প্রতি রবিবার এবং সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগান
১৮৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কোদালা টি এস্টেট বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চা বাগানগুলোর মধ্যে একটি। ঐতিহ্যবাহী এই চা বাগানটি চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া সদর উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কোদালা ইউনিয়নে অবস্থিত। বাংলাদেশের মোট ১৬২টি চা বাগানের মধ্যে কোদালা চা বাগান গুণগত পরিমাণ ও আয়ের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান হয়ে কোদালা চা বাগানের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই রোডে বাসে চড়ে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান বা সরফভাটা গোডাউন এলাকায় যাওয়া যেতে পারে। তারপর সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে লিচুবাগান থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কোদালা চা বাগান।
পড়ুন: হাকালুকি হাওর ভ্রমণ: এক নিঃসীম জলজ মুগ্ধতা
কালুরঘাট সেতু
বহদ্দারহাট থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পাশে একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান এই কালুরঘাট সেতু। ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স হাওর নামে একটি সংস্থা ১৯৩০ সালে সেতুটি নির্মাণ শুরু করে। সে সময় ৭০০ গজের কালুরঘাট সেতুটি শুধুমাত্র ট্রেন চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেতুটিতে অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঐতিহাসিক কালুরঘাট সেতুর কারণে বহদ্দারহাটের কাছে বেত কেন্দ্র ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। আর এই বেত কেন্দ্রের নামেই হয় কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, যেটি বাংলাদেশ বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাটালী পাহাড়
চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে টাইগার পাস এলাকায় অবস্থিত বাটালী হিল শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। বাটালী পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তা পাকা হওয়ায় এটি জিলাপি পাহাড় নামেও পরিচিত। পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম শতায়ু অঙ্গন। ২৮০ ফুট উচু পাহাড়ের চূড়া থেকে প্রায় গোটা চট্টগ্রাম শহর ও বঙ্গোপসাগর দেখা যায়।
পড়ুন: কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণ গাইডলাইন: ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় ঝিরিপথ
২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাটালী পাহাড়ে জলপাই, কাঁঠাল, কালোজাম, লিচু, কমলা, আম, জাফরান, চন্দন, কফি এবং অর্জুন জাতীয় বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১২,৫০০ গাছ লাগানো হয়। পাহাড়টি বাংলাদেশ গণপূর্ত বিভাগের অন্তর্গত এবং পাহাড়ের শীর্ষে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অফিস ও বাংলো রয়েছে।
চালন্দা গিরিপথ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরকার বিভিন্ন রকমের রোমাঞ্চকর স্থানের মধ্যে এই গিরিপথ আশ্চর্যজনক এক দর্শনীয় স্থান। গিরিপথের চারিদিকে সবুজ আর স্রোতের স্বচ্ছ জলের প্রকৃতি মনকে প্রশান্ত করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের খুপরির কাছে পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রপাত সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।
চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকে বাস বা সিএনজিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যায়। চট্টগ্রামের বটতলী রেলওয়ে স্টেশন থেকে শাটল ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যায়। এখান থেকে জিরো পয়েন্টে যেয়ে টমটম নিয়ে কলা অনুষদে যাওয়া যাবে। কুঁড়েঘর থেকে ৭ থেকে ৮ মিনিট হাঁটার পরে পাওয়া যাবে জলধারার সরু পথ। এই এক ঘন্টার পায়ে হাটা পথটিই চলে গেছে চালন্দায়।
পড়ুন: ভ্রমণের উপকারিতা: দেশ বিদেশ ভ্রমণ আপনার মধ্যে কি পরিবর্তন আনতে পারে?
ফয়ে'স লেক ও বিনোদন পার্ক
প্রায় ৩২০ একর জমির উপর স্থাপিত ফয়ে’স লেক চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলী অঞ্চলে অবস্থিত। পাহাড়ে ঘেরা এই হ্রদটি ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার মিস্টার ফয়ের নামে নামকরণ করা হয় লেকটির। বাংলাদেশের নামকড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপ এই পার্কটিকে বর্তমান রূপ দিয়েছে। এখন এটির নাম ফয়'স লেক কনকর্ড। এর ছোট্ট চিড়িয়াখানাটি পার্কটিকে আরও জাঁকজমক করে তুলেছে।
চট্টগ্রাম শহরের যে কোন জায়গা থেকে ফয়ে’স লেক যাবার অটোরিকশা, সিএনজি এবং মিনিবাসে পাওয়া যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম শহর থেকে পাহাড়তলী পর্যন্ত রেলপথও আছে।
মহামুনি বৌদ্ধ বিহার
বৌদ্ধ বিহারটি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পার্বত্য গ্রাম মহামুনিতে অবস্থিত। ১৮১৩ সালে ছাইঙ্গা ঠাকুর নামে একজন বৌদ্ধ ধর্মগুরু মহাপুরুষ গৌতমবুদ্ধের মূর্তি স্থাপন করে এই বৌদ্ধ বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কারণেই গৌতমবুদ্ধের নামে মহামুনি মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে। মহামুনি বৌদ্ধ বিহারের কাঠামোটি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন।
পড়ুন: ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
১৮৪৩ সালে মং সার্কেল রাজা মহামুনি চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকে বৌদ্ধ বিহার কমপ্লেক্সে একটি মেলা প্রবর্তন করেন, যা সারা দেশে মহামুনি মেলা নামে পরিচিত হয়।
চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই সড়কের রাউজান পাহাড় দিয়ে বাস, সিএনজি বা রিকশায় মহামুনি বৌদ্ধ বিহারে যাওয়া যায়।
লাল দীঘি
১৭৬১ সালে চট্টগ্রাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে অর্পিত হওয়ার পর ভূমি তফসিল অফিস (বর্তমানে যেটি মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস) দ্বারা লাল রঙ করা হয়েছিল। সেই সময় এটি লালকুঠি নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে লালকুঠির পূর্ব পাশের কারাগারটিও লাল রঙ করা হয় এবং লালঘর নামে পরিচিত হয়। একই ঘটনায় লালঘর ও লালকুঠির পাশের দীঘিটি লালদীঘি নামে পরিচিতি পায়।
পড়ুন: বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
আবদুল জব্বার ১৯১০ সালের ১২ বৈশাখে লালদীঘির তীরে প্রথম বলি খেলার (খেলার নাম) আয়োজন করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর ১২ই বৈশাখে একই স্থানে জব্বারের বলি অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকে বাস, সিএনজির মতো লোকাল পরিবহনে লালদীঘি ময়দানে যাওয়া যায়।
প্রজাপতি পার্ক
চট্টগ্রাম জেলার শাহ আমানত বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির ১৫ নম্বর রোডে দেশের প্রথম বাটারফ্লাই পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও পার্কটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের অক্টোবরে। পার্কটিতে প্রায় ২০০ প্রজাতির ১০০০টিরও বেশি প্রজাপতি রয়েছে।
পড়ুন: বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান
এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এখানে প্রজাপতির কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। সর্বাধিক প্রজাপতি দেখার জন্য যেতে হবে সকাল ৯ টা থেকে ৪ টার মধ্যে। প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের জন্য প্রজাপতি পার্কের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা, আর শিশুদের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট থেকে গাড়ি, সিএনজি বা লোকাল বাসে করে এক ঘন্টার মধ্যে পতেঙ্গা যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে সড়ক, ট্রেন এবং আকাশপথে তিন মাধ্যমেই চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। ঢাকার যাত্রাবাড়ি সায়াদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে এসি-নন এসি বিভিন্ন পরিবহন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। মানের ভিত্তিতে এগুলোতে ভাড়া পড়তে পারে সিট প্রতি ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
পড়ুন: ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ গাইড: দর্শনীয় স্থান সমূহ, খরচ
কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে গেলে ভাড়া পড়তে পারে ২৮৫ থেকে ১১৭৯ টাকা। আর সবচেয়ে কম সময়ের চট্টগ্রাম পৌছনোর জন্য চট্টগ্রামগামী ফ্লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে সাধারণত শুধু যেতে একজনের খরচ পড়ে ৩৩০০ থেকে ৯০০০ টাকা।
শেষাংশ
চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলো ঐতিহাসিক বন্দর নগরীকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। শহরটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এই জায়গাগুলোরও প্রতি নজর দেয়া জরুরি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই শহরটিকে অচিরেই পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। তাই এর পরিবেশ রক্ষার্থে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে জনসাধারণকেও। ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি মনোরম পর্যটন শহর উপহার দেয়ার জন্য চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলোর সৌন্দর্য্য ধরে রাখা প্রয়োজন।
পড়ুন: ঘুরে আসুন মালদ্বীপ: অপরূপ এক দ্বীপদেশ ভ্রমণ গাইড
ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
থাইল্যান্ডের ড্যামনোয়েন সাদুয়াক বাজার অথবা ইতালির ভেনিসের রিও সান বার্নাবা বাজার নয়। ভাসমান পেয়ারা বাজার বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে বাংলার ভেনিস বরিশালের ভাসমান হাটকে।
বিগত কয়েক বছর ধরে দর্শনীয় স্থানটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যাওয়ায় দেশীয় পর্যটকদের ভাসমান বাজারের অভিজ্ঞতা নিতে আর বিদেশমুখী হতে হচ্ছে না। উল্টো বাইরে থেকে বিদেশি পরিব্রাজকরা হাতে ডিএসএলআর নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন বাংলাদেশের দক্ষিণের এই ভাসমান কাঁচাবাজারে। চলুন, ঐতিহাসিক বরিশালের সৌন্দর্য্যে দারুণ এই সংযোজনটির সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
ভাসমান পেয়ারা বাজারের অবস্থান
ভাসমান পেয়ারা বাজার বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তিনটি খালের সঙ্গমস্থলে এই ভাসমান বাজার। ঝালকাঠি, বরিশাল এবং পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করায় এটি এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারা বাজার। বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের ২৬টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ৩১ হাজার একর জমিতে বিস্তৃত এই পেয়ারা বাগানের ওপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
ভাসমান পেয়ারা বাজারের নামকরণ
২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভাসমান পেয়ারা বাজারটি গড়ে উঠেছে। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর সীমারেখায় অবস্থিত ছোট্ট গ্রামের নাম ভিমরুলি। এখানেই চর্তুমুখী ছোট-বড় খালের মোহনায় প্রতিদিন বিপণী শুরু হয়। তাই ভিমরুলি গ্রামটির নাম-ই শেষমেষ বাজারটির নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জুড়ে যায়। স্থানীয় ব্যক্তিদের মুখে অবশ্য এই বাজারকে উদ্দেশ্য করে কথা বলার সময় গোইয়ার হাট নামটা শোনা যায়।
ভাসমান বিপণীর প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য
ছোট খাল জুড়ে সপ্তাহের প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজার চলে। পেয়ারা বোঝাই শত শত নৌকা দেখলে বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ফল চাষিরা ফল দিয়ে নৌকা বোঝাই করে এবং ক্রেতাদের সন্ধান করে। ভিমরুলির আশেপাশের সব গ্রামেই অসংখ্য পেয়ারা বাগান রয়েছে। কৃষকরা এসব বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে নৌকায় করে সরাসরি হাটে নিয়ে আসে। ভাসমান বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের ওপর একটি ছোট সেতু আছে, যেটি এখানকার মূল আকর্ষণ। কেননা সেতু থেকে বাজারের পুরোটা খুব ভালোভাবে দেখা যায়।
মজার ব্যাপার হলো এই বাজারে পেয়ারা বহনকারী সব নৌকার নকশা ও আকার প্রায় একই। মনে হয় একই কারিগর সব নৌকা বানিয়েছে।
আরও পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
পেয়ারা বাগানে প্রবেশের জন্য ছোট ছোট পরিখা করা হয়েছে। ছোট নৌকা নিয়ে সেখানে ঢুকে চাষিরা পেয়ারা পাড়েন। খাল সংলগ্ন প্রতিটি বাড়িতে একটি করে ডিঙ্গি নৌকা থাকে। স্থানীয়রা এগুলোকে কষা নৌকা বলে। এগুলো দিয়েই বাজার-হাট, যাতায়াত যাবতীয় কাজ করা হয়। ছোট নৌকাগুলো সরাসরি পরিখা দিয়ে বাগানে ঢুকে পড়তে পারে। বড়গুলোকে পাড়ে রেখে চাষিরা বাগানে নেমে পড়ে।
খাল সংলগ্ন বাড়িঘর, স্কুল, ব্রিজ, রাস্তাঘাটের দৃশ্য যে কাউকে বাংলার বুকে এক টুকরো থাইল্যান্ড বা ইতালির ভেনিসের অনুভূতি দেবে। আর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে কোনো ভ্রমণপিপাসু মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ার অবকাশ পাবেন না।
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
ভিমরুলি বাজারে ব্যস্ততম সময় দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা। এই সময়ে খালে নৌকা সংখ্যার চমকপ্রদভাবে বেড়ে যায়। এমনকি কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়। সারা বছর ভাসমান বাজার বসলেও পেয়ারার মৌসুমে প্রাণ আসে। মৌসুম জুলাই ও আগস্ট মাস হলেও মাঝে মাঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজার চলে। ভাসমান পেয়ারা বাজার ঘুরে আসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় আগস্ট মাস। পেয়ারা বাজারের ভিড় বেলা ১১টার পর হালকা হয়ে যায়, তাই এর আগে বাজারে উপস্থিত থাকা ভালো।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
ঢাকা থেকে ভাসমান পেয়ারা বাজার যাবার উপায়
ঢাকা থেকে বরিশালে পৌঁছানোর জন্য সড়কপথ, নৌপথ দুইভাবেই যাওয়া যেতে পারে। তবে জলপথে ভ্রমণ সবচেয়ে আরামদায়ক, সুবিধাজনক এবং আনন্দদায়ক।
ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু লঞ্চ বরিশালের পথে যাতায়াত করে এবং ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে পৌঁছায়। ডেকের ভাড়া জন প্রতি ২০০ টাকা, যেখানে নন এসি সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ৯০০ টাকা এবং নন এসি ডাবল কেবিন ভাড়া ১৮০০ টাকা।
বরিশাল লঞ্চ ঘাট থেকে অটোরিকশার মাধ্যমে চৌরাস্তায় এসে তারপর বাসে স্বরূপকাঠি লঞ্চ ঘাটে যেতে হবে, যেখানে ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা। স্বরূপকাঠি লঞ্চ ঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে অপরূপ সন্ধ্যা নদী পেরিয়ে আটঘর, কুড়িয়ানা এবং ভীমরুলি বাজার ঘুরে দেখা যায়। ভালো দর কষাকষি করলে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকায় ট্রলার ঠিক করে নেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
আরেকটি বিকল্প উপায় হচ্ছে- স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ২০ টাকায় অটো ভাড়ায় কুরিয়ানা বাজারে পৌঁছা। তারপর সেখানকার আশেপাশের বাজার এবং খালগুলো দেখার জন্য ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করা। তবে এ পথে ভিমরুলিতে গেলে ভাড়া বেশি পড়ে।
এছাড়া রাস্তা ভালো থাকলে অটোতে করে আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলি বাজার ঘোরা যায়। তবে রাস্তা ও সেতুর অবস্থা ভালো কিনা তা এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে অটোতে করে ব্রিজপ পর্যন্ত এসে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে আবার অটো নিতে হবে।
আর বাসের পথটা এখন অনেকাংশে উন্নত হয়েছে। যে পথ অতিক্রমে আগে দুই দিন লাগতো পদ্মা সেতুর কল্যাণে সেই যাত্রা এখন একদিনেই শেষ করা যাবে। এমনকি পানিপথের প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কায় পড়া লাগবে না। এখন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে পিরোজপুর বাসে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণ গাইডলাইন: ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় ঝিরিপথ
অতঃপর পিরোজপুর থেকে ওপরে উল্লেখিত পথে ভিমরুলি চলে যাওয়া যাবে। অর্থাৎ খুব ভোরে রওনা হলে দুপুরেই মধ্যেই ভাসমান বাজারে পৌঁছে যাওয়া যাবে। অতঃপর ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে আবার রাতেই ঢাকায় ফেরা যাবে।
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
রাত্রি যাপন করতে হলে চলে আসতে হবে ঝালকাঠি শহরে। সেখানে ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়। নদীর ধারে রাত্রিযাপন করতে চাইলে স্বরূপকাঠিতে নদীর ধারে হোটেল পাওয়া যাবে। তবে ভালো মানের হোটেল নির্বাচনের জন্য চলে যেতে হবে বরিশাল সদরে।
ভোজন রসিকদের জন্য ভিমরুলি দারুণ একটি জায়গা। এখানকার ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে ভিমরুলি বাজারের সাদা ও লাল মিষ্টি, কুরিয়ানা বাজারের ঋতুপর্ণার গরম মিষ্টি, বউদির হোটেলে দুপুরের খাবার এবং গুঠিয়ার মিষ্টি। এ ছাড়া বটতলা এলাকার শশির রসোমালাই, নয়াবাজার মোড়ের নিতাইয়ের স্পঞ্জ মিষ্টি।
আরও পড়ুন: বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
তাছাড়া বিবি পুকুর পাড়ের ছোটপটি, দধিঘরের দই, ঢেঁড়স, ও ঝোলা চালের মিশ্রণ লোকালয়ে বেশ জনপ্রিয়। সুযোগ পেলে বরিশাল শহরের পুরান বাজারে রসোমালাই, রসগোল্লা এবং ছানা চেখে দেখা যেতে পারে।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থানসমূহ
ভাসমান পেয়ারা বাজার থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে ঘুরে দেখা যেতে পারে গুঠিয়া মসজিদ এবং দুর্গাসাগর দীঘি। ২০০৮ সালে গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু নিজ উদ্যোগে গুঠিয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের স্তম্ভগুলো কাবা শরীফ, মসজিদে নববী, যমযমের পবিত্র পানিসহ বিশ্বের পবিত্র স্থানগুলোর মাটি দিয়ে তৈরি।
১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ পরগণার রাজা শিবনারায়ণ স্থানীয়দের পানির সংকট দূর করার জন্য মাধবপাশায় দুর্গাসাগর দীঘি খনন করেন। দীঘির কাছে ৩০০ বছরের পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটিও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ১০ শহর
কুড়িয়ানা বাজার থেকে জনপ্রতি ১৫ টাকায় অটোতে করে প্রথমে নারায়ণকাঠি নামতে হবে। সেখান থেকে অটো বদলে মাথাপিছু ১০ টাকা ভাড়ায় গুটিয়া মসজিদ যাওয়া যায়। সেখান থেকে দুর্গাসাগর দিঘীর দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার।
পরিশেষে
ভাসমান বাজারে নৌকায় ভেসে যাওয়ার সময় লাইফ জ্যাকেট পরে নেয়া ভালো। বাগান থেকে কিছু খেতে চাইলে বাগান মালিকের অনুমতি নিতে হবে। পানিতে ময়লা ফেলে খালের পরিবেশকে নষ্ট করা যাবে না।
শেষ কথা হচ্ছে, বরিশালের ভাসমান পেয়ারা বাজার দারুন একটি ডে-ট্যুর হতে পারে। গ্রাম্য চাষিদের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়া নিমেষেই ভুলিতে দিতে পারে শহরের কৃত্রিম শপিং মলের যান্ত্রিকতা। আগস্টের যে কোনো ব্যস্ত দিনে দলবেধে হারিয়ে যাওয়া যেতে পারে এই অদ্ভুত কোলাহলে।
আরও পড়ুন: হাকালুকি হাওর ভ্রমণ: এক নিঃসীম জলজ মুগ্ধতা
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক পাচ্ছেন ৫ নারী
এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক ২০২২’ দেয়া হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, দেশপ্রেম, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাহসকিতা, ত্যাগ ও অনুপ্রেরণার উৎস বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিবসকে সরকার ৮ আগস্ট ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে প্রতি বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ দেয়া হয়। এ বছর সরকার, ‘রাজনীতি’ ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, ‘অর্থনীতি’ ক্ষেত্রে কুমিল্লা জেলার সেলিমা আহমাদ এমপি, ‘শিক্ষা’ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবা ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) কে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদকে ভূষিত করা হবে।প্রতিমন্ত্রী শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সম্মেলন কক্ষে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ প্রদানের বিস্তারিত গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২১ পাচ্ছেন দুই ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠান
প্রতিমন্ত্রী এসময় সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ আগস্ট সকাল ১০টায় গণভবন থেকে অনলাইনে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন। ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবং অনলাইনে আরও সংযুক্ত থাকবে জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব নিজ জীবনের কঠিন দুঃসময়েও অসহায় মানুষের আর্থিক সহায়তা করেছেন এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যুগিয়েছেন। বঙ্গমাতার এই মহানুভবতাকে স্মরণ করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বঙ্গমাতার জন্মদিনে অস্বচ্ছল নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন ও আর্থিক অনুদান দিয়ে আসছে। এবারও সাম্প্রতিক বন্যাকবলিত পাঁচটি জেলাসহ সারাদেশে অস্বচ্ছল ও অসহায় নারীদের প্রায় পাঁচ হাজার সেলাই মেশিন এবং পঞ্চাশ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই দিনে একই সময়ে এ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার ওপর তাঁর রচিত ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা আমার মা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করবেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অন্যান্য কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলগুলো বিভিন্ন মহীয়সী নারীর নামে নামকরণ করা হয়েছে। ঢাকার মিরপুরে নওয়াব ফয়জুন্নেছা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল এবং খিলগাঁও বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল রয়েছে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সংকটে, সংগ্রামে ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে নারী অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী পুনর্বাসন কার্যক্রমে অসামান্য অবদান রেখেছেন। এ বিবেচনায় বিদ্যমান নীলক্ষেতে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলটি ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। ঢাকায় কর্মজীবী নারীর আবাসনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ হোস্টেল কমপ্লেক্সে একটি নতুন ১০তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত ভবনে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট, জীম, বিউটি পার্লার, ইনডোর গেম, সিসি ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক এক্সেস কন্ট্রোল ডিভাইস, এলইডি মনিটর, সুপরিসর তিনটি লিফট, জরুরী বহিগর্মনসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নবনির্মিত দশতলা ভবন নির্মাণের ফলে আরও ২৫৪ জন কর্মজীবী নারীকে আবাসন সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। এ কমপ্লেক্সে ৫০৩টি আসন বিশিষ্ট আরও দুটি ভবন রয়েছে। এখন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের মোট আসন সংখ্যা হবে ৭৪৮টি। যার ফলে আরও বেশি সংখ্যক কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত হবে।
আরও পড়ুন: রোকেয়া পদক পেলেন ৫ বিশিষ্ট নারী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার জন্মদিন ৮ আগস্টে নীলক্ষেতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের নবনির্মিত দশতলা সম্প্রসারিত ভবনের উদ্বোধন করবেন। যা দেশের কর্মজীবী নারীদের জন্য বড় প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলন প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মহীয়সী বঙ্গমাতার চেতনা, অদম্য বাংলাদেশের প্রেরণা’। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবন ভিত্তিক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন, অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান, জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাকিউন নাহার বেগমসহ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সারাদেশে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপনে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহ বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপন করবে। যার মাধ্যমে দেশের নতুন প্রজন্ম বঙ্গমাতার সংগ্রামী জীবন, আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অপরিসীম অবদান এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা তথ্য জানতে পারবে। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে ক্রোড়পত্র ও পোস্টার প্রকাশ করা হবে। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার গৌরবময় কর্মজীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। বঙ্গমাতার কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হবে।
হাকালুকি হাওর ভ্রমণ: এক নিঃসীম জলজ মুগ্ধতা
নদীমাতৃক বাংলাদেশে আসল নৈসর্গ ধারণ করে আছে এর হাওরগুলো। তন্মধ্যে হাকালুকি হাওর ভ্রমণ পর্যটকদের জলজ সৌন্দর্য্যের স্বাদ প্রাণ ভরে আস্বাদন করতে দেয়। মুগ্ধতার প্রধান বৈশিষ্ট্য যখন জল তখন সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাওয়ার একমাত্র সময় হচ্ছে বৃষ্টির মৌসুম। হাওরের আয়নায় মেঘাচ্ছন্ন আকাশের সাজগোজ দেখার ঝোঁক কোন ভ্রমণপিপাসু হৃদয়ই এড়াতে পারে না। আশেপাশের নানা প্রজাতির গাছ-গাছালি যেন সেই আয়নার চৌহদ্দিতে সবুজ কারুকাজ হয়ে থাকে। এমনি সুন্দরের আধার হাকালুকি হাওর ভ্রমণের আদ্যোপান্ত নিয়ে আজকের ভ্রমণ বিষয়ক ফিচার।
হাকালুকি হাওরের অবস্থান
বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত হাকালুকি হাওর একটি মিঠাপানির জলাভূমি। এই বাস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থাটি কুশিয়ারা নদীর সাথে উত্তরে সোনাই বরদল নদী, পশ্চিম ও দক্ষিণে ফেঞ্চুগঞ্জ-কুলাউড়া রেলপথ এবং পূর্বে কুলাউড়া-বিয়ানীবাজার সড়ক দ্বারা পরিবেষ্টিত।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারতের সীমান্তবর্তী এই হাওরটির মোট আয়তন প্রায় ১৮,৪০০ হেক্টর। এর ১৮১.১৫ বর্গকিলোমিটার উপরিভাগের মধ্যে প্রায় ৪০.০১ শতাংশ তথা ৭২.৪৬ বর্গকিলোমিটার পড়েছে বড়লেখা উপজেলায়। এছাড়া এটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা সহ সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ পর্যন্ত প্রশস্ত। এই বিস্তীর্ণ জলাধার হাকালুকিকে বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর এবং এশিয়ার বৃহত্তর জলাভূমিগুলোর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছে।
পড়ুন: ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
হাকালুকি হাওরের নাম নিয়ে মজার গল্প
বহু বছর আগে ত্রিপুরায় ওমর মানিক্য নামে এক শক্তিশালী রাজা ছিলেন। হ্যাঙ্গর সিং ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের কুকি উপজাতির নেতা। ওমর মানিক্যের প্রতাপের কারণে হ্যাঙ্গর সিং তাকে বেজায় ভয় পেতেন। একবার হাঙ্গর সিং রাজ্যের ক্ষমতা নিয়ে রেষারেষির সময় পালিয়ে যান হাওর এলাকায়। এলাকাটির স্থানীয় ভাষায় হাওর মানে লুকি। তাই লোকেরা এই অঞ্চলটিকে হ্যাঙ্গর লুকি নামে ডাকতে শুরু করে। সময়ের বিবর্তনে এই হ্যাঙ্গর লুকিই পরবর্তীতে হাকালুকিতে পরিবর্তিত হয়।
হাকালুকি হাওরের প্রধান আকর্ষণ
বাংলাদেশ সহ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় হাওরটিকে দেখতে প্রায়ই পর্যটকরা এখানে ভিড় জমান। ১০টি নদী ও ২৪০টি বিলের এই হাকালুকি হাওর ভ্রমণ মানে রীতিমত পানির উপর জীবন যাপন। বাংলাদেশের পাঁচটি উপজেলা নিয়ে এই মিঠা পানির হ্রদ। জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে এখানে এত পানি থাকে যে মনে হয় সমুদ্র। আর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়টা পুরোটাই থাকে পরিযায়ী পাখিদের দখলে। জলাভূমি দিয়ে যত দূর যাওয়া যায় ততদূর দু’চোখ ভরে শুধু অতিথি পাখি দেখার জন্য জনপ্রিয় জায়গা হাকালুকি হাওর। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন জাতের জলপাখি বা জলকুক্কুট প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি।
এছাড়াও স্থানীয়দের জীবন এবং বিস্তীর্ণ জলের মাঝে কিছু দূর পর পর ঊঁকি দেয়া দ্বীপগুলো দারুণ রোমাঞ্চ দেয়। এর ওয়াচ টাওয়ারগুলোও এখন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। নৌকা ঘাট থেকে প্রথম ওয়াচটাওয়ারে পৌছতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লেগে যায়। এরপর আরও তিনটি ওয়াচ টাওয়ার আছে, যেগুলো ইঞ্জিন নৌকাতেই যেতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। এছাড়া বড়লেখা শহর থেকে একটু ভেতরে হল্লা এলাকায় এই হাওরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র। এখানেও নৌকা করে ঘোরা ও ওয়াচটাওয়ারের ব্যবস্থা আছে।
পড়ুন: বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
ঢাকা থেকে হাকালুকি হাওর যাওয়ার উপায়
মৌলভীবাজার সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই হাওরে যেতে হলে ঢাকা থেকে প্রথমে মৌলভীবাজারে যেতে হবে। মৌলভীবাজার থেকে বাসে করে বা সিএনজি অটোরিকশায় হাকালুকি হাওরের নৌকা ঘাটে যাওয়া যায়। বিকল্প উপায় হিসেবে সিলেট রেলস্টেশনের আগে মাইজগাঁও হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে যাওয়া যেতে পারে। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশাতে করে ঘিলাসরা জিরো পয়েন্ট। এখান থেকেই হাওর ঘোরার জন্য নৌকা ভাড়া করা যায়।
ঢাকার আবদুল্লাপুর, গাবতলী, মহাখালি, ফকিরাপুল, ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি সিলেটের অনেক বাস আছে । এগুলো ৩৫০ থেকে ৯০০ টাকা ভাড়ায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নামিয়ে দিবে। ট্রেনে কুলাউড়া যেতে হলে ক্লাস ভেদে খরচ পড়বে প্রায় ২৮০ থেকে ৬৩৯ টাকা। সময় বাঁচাতে বিমানে করেও সিলেট যাওয়া যেতে পারে। সিলেট পৌছে সেখান থেকে বাসে করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া। কুলাউড়া থেকে সরাসরি অটোরিকশায় ঘিলাসরা জিরো পয়েন্টের নৌকা ঘাটের ভাড়া প্রায় ৬০ থেকে ১০০ টাকা।
বড়লেখার পর্যটনকেন্দ্রটি দেখতে হলে কুলাউড়া থেকে বাসে বা সিএনজি অটোরিকশায় করে বড়লেখায় যেতে হবে। অতঃপর সেখান থেকে আবার অটোরিকশা বদলে যেতে হবে শহর থেকে ১১ কিলোমিটার ভেতরে হল্লায়।
পড়ুন: ঘুরে আসুন মালদ্বীপ: অপরূপ এক দ্বীপদেশ ভ্রমণ গাইড
মাইজগাঁও হয়ে যেতে হলে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ঠিক আগের স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বের ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে যেতে হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে বাসে করেও ফেঞ্চুগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে আসা যায়।
সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে হাকালুকি হাওরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার ক্ষেত্রে সিলেট থেকে মাইজগাঁওতে আসা যেতে পারে। ট্রেনে ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা আর ফেঞ্চুগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে ৭০ টাকা। পৌছাতে প্রায় ৪৫ মিনিট লাগতে পারে। সেখান থেকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়ায় চলে যেতে হবে ঘিলাসরা জিরো পয়েন্ট। এবার দরদাম করে নৌকা ঠিক করার পালা।
ঘাট থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জনের জন্য একটি নৌকা ঠিক করে পার হতে হবে কুশিয়ারা নদী। ছোট্ট দল হলে বড় গ্রুপের সাথে অন্তর্ভূক্ত হওয়া যেতে পারে। এক দিনের জন্য নৌকার ভাড়া প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এই নদীই হাকালুকি হাওরে পৌছে দেয়।
পড়ুন: ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ গাইড: দর্শনীয় স্থান সমূহ, খরচ
হাকালুকি হাওর ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
যাদের ডে-ট্যুর দেয়ার পরিকল্পনা নেই তাদের রাত্রি যাপনের জন্য হাকালুকি হাওর ভ্রমণ শেষ করে সিলেটে ফিরে আসাই ভালো। কারণ সেখানে রাতে থাকার ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। মৌলভীবাজার শহরে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শ্রীমঙ্গল ও নিকটবর্তী উপজেলার আশেপাশে আছে বেশ কয়েকটি ৫ তারকা রিসোর্ট।
অবশ্য জলাভূমির ইজারাদারদের কটেজে থাকার অনুমতি চাওয়া যেতে পারে। আর শীতকাল হলে শুকনো বিস্তীর্ণ ভূমিতে তাঁবু বানিয়ে রাত কাটানো যেতে পারে। এই ক্যাম্পিং অভিজ্ঞতা বাকি জীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাই শীতকালে হাকালুকি যাওয়ার আগে ক্যাম্পিংয়ের সরঞ্জাম নেয়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
আর খাবারের ক্ষেত্রে চাল-মাছ-মুরগী সাথে নিয়ে গিয়ে হাওর এলাকার শ্রমজীবী মানুষকে সামান্য কিছু টাকা দিলে পছন্দ মতো রান্না করে দিবে। তাদের সাথে সুস্বাদু খাবার বা টাটকা মাছের ঝোলের তরকারি নিমেষেই শেয়ার করা যেতে পারে। নৌকায় উঠার আগে কী আনতে হবে সে সম্পর্কে মাঝিদের সাথে কথা বলা যেতে পারে। অতঃপর প্রয়োজন মত বাজার করে নিয়ে নৌকায় উঠা যেতে পারে। কিছু টাকার বিনিময়ে নৌকার মাঝিই সুন্দর করে রান্না করে দিতে পারে। নৌকায় উঠার সময় বিশুদ্ধ পানির সাথে চা, বিস্কুট ও পাউরুটির মত শুকনো খাবার সাথে নিয়ে উঠা উচিত।
পড়ুন: ভ্রমণের উপকারিতা: দেশ বিদেশ ভ্রমণ আপনার মধ্যে কি পরিবর্তন আনতে পারে?
শীতকালে ক্যাম্পিং-এর পাশাপাশি বার বি কিউয়েরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্ষা-শীত দুই ঋতুতেই হাকালুকির নানা জাতের তাজা মাছ ভোজনে তৃপ্তি দেবে। ভোজন বিলাসী পর্যটকরা হরহামেশাই হাকালুকির পাড়ে মাছ ভেজে রান্না করে রসনা বিলাসে মেতে উঠেন।
শেষাংশ
বর্ষনমুখর দিনে হাকালুকি হাওর ভ্রমণ নিঃসন্দেহে দারুণ একটি অভিজ্ঞতা কিন্তু এ সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
বিশেষ করে বর্ষার ঠিক পরে বন্যার কারণে এই হাওর অঞ্চল বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাই একদিনের জন্য গেলেও সাথে যথেষ্ট ওষুধপত্র নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া কাদা-পানিতে চলার মত উপযোগী জুতা, পোকা-মাকড় নিরোধক এবং শুকনো খাবার সাথে রাখা উচিত।
স্থানীয়দের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে, কেননা কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সবার আগে তারাই সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়। দিক-নির্দেশনা থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নেওয়ার সময় বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে।
পড়ুন: বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান
কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণ গাইডলাইন: ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় ঝিরিপথ
কমলদহ ও সহস্রধারা-২ দুটি ঝর্ণাই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত এবং সবচেয়ে সহজ ঝিড়ি পথগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্ষাকালে ভারী বর্ষণের দরুণ স্বাভাবিকভাবেই দেশের অন্যান্য ঝর্ণার মত এ দুটিও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তাই জুন-জুলাইয়ের যে কোন দিন চলে যাওয়া যেতে পারে সীতাকুণ্ডের পথে এ দুটি ঝর্ণা দেখার জন্য। এক কমলদহ ঝর্ণা দেখতে যেয়ে যখন পুরো ট্রেইল জুড়ে আরো ঝর্ণার দেখা মিলে, তখন পুরো ভ্রমণটাই যেন ষোল আনা পুর্ণ হয়। চলুন, কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণের ব্যাপারে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
কমলদহ ঝর্ণায় যাওয়ার উপায়
কমলদহ সহ আরো বেশ কিছু অপূর্ব ঝর্ণার সমন্বয়ে গঠিত মোটামুটি সহজ কমলদহ ট্রেইল। কম সময়েই পুরো ট্রেইলটি ঘুরে আসা যায় বিধায় ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে জনপ্রিয় স্থান এই কমলদহ। সীতাকুণ্ডের বড় দারোগার হাট বাজার থেকে মহাসড়ক ধরে ঢাকার দিকে কিছুদূর এগিয়ে গেলে রাস্তার ডানে পড়বে একটি ইটভাটা। এর পাশ দিয়েই নেমে গেছে একটি মাটির পথ। এই পায়ে হাটা পথটিই চলে গেছে কমলদহের ঝিরিপথ পর্যন্ত। এক ঘণ্টার ট্রেইল পথের পুরোটা পায়ে হেটেই পার হতে হবে।
তিন ধাপের কমলদহ ঝর্ণাকে নিচ থেকে দেখলে শুধু প্রথম ধাপই চোখে পড়ে। বাকিগুলো দেখার জন্য ঝর্ণার একদম উপরে উঠতে হয়। উপরের দিকে ট্রেইল দুটি ঝিরি পথে ভাগ হয়ে গেছে। ঝিরি পথ দিয়ে সামনে এগোতে থাকলেই একটার পর একটা ঝর্ণা আর ক্যাসকেড চোখে পড়বে। বায়ের ঝিরি পথ ধরে সোজা এগিয়ে যাওয়ার পর পড়বে ছাগলকান্দা ঝর্ণা। এর শীর্ষে উঠতে হলে পাশের পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে উঠতে হবে।
পড়ুন: ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
ছাগলকান্দা ঝর্ণা থেকে ফিরতি পথে হাতের বায়ে আরেকটি ঝিরিপথ পড়ে। এ পথে সামনে এগুলেই একটা ক্যাসকেড পড়বে। এই ক্যাসকেড বেয়ে উপরে ওঠার সময় সাবধান থাকতে হবে। ওপরে উঠে সামনে আবারো দুটি ঝিরিপথ, যার শেষ প্রান্তে আকস্মিক দুটি ঝর্ণা অবাক করে দেবে। ঝর্ণা দুটি উপভোগ করে কমলদহ ঝর্ণার কাছে প্রথমে যেখানে ঝিরিপথ দুভাগ হয়েছিল সেখানে ফিরে আসতে হবে।
এবার ডানের ঝিরি পথে যেতে হবে যেখানে কাছেই অপেক্ষা করছে দারুণ একটি ঝর্ণা। এই ঝর্নার পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে পাওয়া যাবে আরো একটি ঝিরিপথ। এ পথে এগিয়ে গেলে পড়বে আরেকটি ক্যাসকেড। এর উপরের ঝিরিপথে স্বাগত জানাবে ছোট্ট একটি ঝর্ণা। ঝর্ণাটির পাথর বেয়ে উপরে উঠে যাওয়ার সময় মনে হবে কোন অন্ধকার সুরঙ্গ গিলে ফেলতে যাচ্ছে। এই পথটি ২ মিনিট পরই পৌছে দেবে পাথরভাঙ্গা ঝর্ণার কাছে।
এই ঝর্ণা দেখার পর ফিরতে হবে সেই ছোট ঝর্ণার ক্যাসকেডের কাছে। ক্যাসকেড পার হয়ে হাতের বামে পাহাড়ে ওঠার ছোট্ট রাস্তা পাওয়া যাবে। পাহাড়ে ওঠার পর দেখা যাবে রাস্তা আবারো দুভাগ হয়ে গেছে। যেটি পাহাড়ের উপরের দিকে সে রাস্তা ধরে এগোলে তুলনামূলক বড় রাস্তায় তিন মোড়ে পড়বে। এখানে ডান দিকের রাস্তাটি ঝরঝরি ঝর্ণার পথ। আর সামনে এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে পাঁকা রাস্তা। এ পথে নায়নআশ্রম ও ফরেস্ট অফিস হয়ে সোজা বড় দারোগার হাট স্টেশনে পৌছা যাবে।
পড়ুন: বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
সহস্রধারা-২ ঝর্ণায় যাওয়ার উপায়
কমলদহের মত সহস্রধারা-২ ঝর্ণার ট্রেইলটিও সহজ। তবে এই ট্রেইলে ঝর্ণা ছাড়াও আছে চমৎকার সহস্রধারা লেক, ওয়াটার ডেম, এবং পুরোনো মন্দির। সহস্রধারা-২ ঝর্ণার ট্রেইলে প্রবেশ করতে হলে প্রথমে সীতাকুণ্ডের ছোট দারোগার হাট বাজার থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে মাটির রাস্তা পর্যন্ত আসতে হবে। এখানে ভাড়া ২০ টাকা নিতে পারে। মেটে পথ ধরে সহস্রধারা লেক পর্যন্ত যেতে প্রায় ২৫ মিনিট হাটতে হবে। সহস্রধারা-১ নামে পরিচিত ঝর্ণাটির অবস্থান সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের ভেতর।
মাটির রাস্তা ধরে হেটে গেলে প্রথমেই পড়বে সহস্রধারা সেচ প্রকল্প; এটিই সহস্রধারা লেক নামে পরিচিত। ঝর্ণার পানি ব্যবহার করে সেচ প্রকল্পের কাজ চলে। এই পথটি উভয় পাশে প্রচুর গাছ-গাছালিতে ভরপুর। এখানেই পুরোনো মন্দির, বুদবুদকুন্ড এবং ওয়াটার ডেম সব একসাথে পাওয়া যায়।
মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে আশেপাশের এলাকায় প্রতি বছর স্থানীয় মেলা বসে। লেকের বামপাশের পথ ধরে এগিয়ে গেলে ঘাট থেকে সহস্রধারা-২ ঝর্ণায় যাওয়ার নৌকা পাওয়া যাবে। নৌকা ভাড়া মাথাপিছু ৪০ টাকা পড়তে পারে। লেক দিয়ে ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এই ঝর্ণাটি মুল সহস্রধারা ঝর্ণা নামেও অনেকের কাছে পরিচিত। খুব সরু ও তুলনামূলক উচু এই ঝরনাটির ওপরে ওঠা বেশ কষ্টকর।
পড়ুন: বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান
সহস্রধারা ছাড়াও এই ট্রেইলটি আরো ২ থেকে ৩ টি ঝর্ণার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। এ সবকিছু দেখে ছোট দারোগার হাটে ফিরতে পুরো অর্ধেক দিন লেগে যায়।
ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-সভ্যতার অগ্রগতি জানার জন্য জাদুঘর একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক জাদুঘরগুলোও যেন ঠিক সেভাবেই ধরে রেখেছে পুরো বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যকে। শুধু তাই নয়, দর্শনীয় স্থান হিসেবেও ঢাকার জাদুঘরগুলো অনন্য। নতুন প্রজন্ম এই জায়গাগুলোতে বিচরণের মাধ্যমে শত বছরের বাংলাকে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারে। তাই ঢাকার শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প সময়ের শিক্ষাসফরের জন্য এর জাদুঘরগুলো হতে পারে উপযুক্ত স্থান। চলুন, জেনে নেয়া যাক ঢাকার কয়েকটি সেরা জাদুঘরের ব্যাপারে।
বাংলাদেশের ইতিহাস সমৃদ্ধ ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ
প্রাক-ইতিহাস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম এই চমৎকার সংগ্রহশালাটি। এটি পাথর, ধাতু ও কাঠের ভাস্কর্য, সোনা, রুপা ও তামার মুদ্রা, পোড়ামাটির নিদর্শন এবং অন্যান্য পুরাকীর্তিতে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ১৯১৩ সালের ২০ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ঢাকা জাদুঘর’ নামে। ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট বাংলার তৎকালীন গভর্নর থমাস গিবসন-কারমাইকেল আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেছিলেন। ১৯১৫ সালের জুলাই মাসে এটি ঢাকার নায়েব-নাজিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বর এর নাম ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর’ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, ধানমন্ডি
ধানমন্ডি ৩২-এ অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনটি ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’ নামে পরিচিত। এখানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবর রহমানকে তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এখান থেকেই ১৯৬২ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, অসহযোগ আন্দোলন, এমনকি ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের রূপরেখাও তিনি তৈরি করেছিলেন এই বাড়ির কনফারেন্স টেবিলে।
১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্টের উদ্যোগে এই বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
স্বাধীনতা জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
এই দৃষ্টিনন্দন জাদুঘরটি মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়াও এটি ১৬ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের শাসনামল থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা পর্যন্ত সমগ্র জাতির ইতিহাস প্রদর্শন করে। এটিই দেশের প্রথম এবং একমাত্র যাদুঘর,যা মাটির নিচে নির্মিত হয়েছে। জাদুঘরটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৬৭ একর কমপ্লেক্সের অংশ, যা আগে রমনা রেসকোর্স নামে পরিচিত ছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের দশটি প্রাচীন মসজিদ: দেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন
জাদুঘরটি ২০১৫ সালের ২৫শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। জাদুঘরটির ওপরে ঠিক মাঝখানে আছে আলোর টাওয়ারটি, যা স্বাধীনতা স্তম্ভ নামে পরিচিত। প্রায় ৫০ মিটার উঁচু টাওয়ারটি কাচের প্যানেল দিয়ে তৈরি, যা সাধারণত রাতে আলোকিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, আগারগাঁও
১৯৭১-সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এক বিরল সংগ্রহ এই জাদুঘর। প্রদর্শিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে যোদ্ধাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, অস্ত্র, মানুষের দেহাবশেষ, যুদ্ধ সম্পর্কিত নথি ও অন্যান্য সরঞ্জাম। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৪৫ বছর ধরে জাদুঘরটিতে ২১ হাজারেরও বেশি নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়েছে।
২০০৯ সালে জাদুঘরের নতুন ডিজাইনের জন্য একটি স্থাপত্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এখানে স্থপতি তানজিম হাসান সেলিম ও নাহিদ ফারজানা তাদের নকশার জন্য প্রথম পুরস্কার জিতেছিলেন। এই নকশার ভিত্তিতেই ২০১৩ সালে আগারগাঁওয়ে নতুন ভবনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং নির্মাণকাজ শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন প্রাঙ্গণ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৭-এর ১৬ এপ্রিল উন্মুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
আহসান মঞ্জিল, ইসলামপুর
ঢাকার নবাবদের অফিসিয়াল আবাসিক প্রাসাদ ও আসন ছিল এই আহসান মঞ্জিল। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৫৯ সালে, আর সম্পন্ন হয়েছিল ১৮৭২ সালে। বাংলাদেশের এই অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শনটি ইন্দো-সারাসেনিক রিভাইভাল স্থাপত্যে নির্মিত হয়েছিল। ভবনটির রাজকীয় সম্মুখ অংশটি বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে প্রশস্ত। নদীর ধারে এর খোলা প্রশস্ত সিঁড়ি বিশাল ত্রি-খিলানযুক্ত পোর্টালগুলো পর্যন্ত নিয়ে যায়। সিঁড়ির সামনের বাগানে একসময় একটি ফোয়ারা ছিল, যা আজ নেই। বিল্ডিংটির উত্তর ও দক্ষিণ পাশের বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে একটি খোলা বারান্দা।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর, আগারগাঁও
২০১৪ সালের অক্টোবরে ঢাকার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এই বিশেষ জাদুঘরটি। এখানে রয়েছে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বিভিন্ন ধরনের বিমান ও যুদ্ধ সরঞ্জাম। বিএএফ (বাংলাদেশ এয়ারফোর্স) জাদুঘরে আছে চারটি প্রধান গ্যালারি। এর মধ্যে এয়ার ফোর্স গ্যালারিটিতে আছে কিছু স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক ছবি। মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বিভিন্ন বছরের পদক ও ইউনিফর্ম নিয়ে রয়েছে গোটা একটি গ্যালারি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি সেনাদের মূল্য প্রদর্শনের জন্য সর্বশেষ গ্যালারিটির নাম ‘শান্তিরক্ষী কর্নার’। এগুলো ছাড়াও আছে ‘স্যুভেনির কর্নার’, যেখান থেকে জাতীয় বিমান বাহিনীর মনোগ্রামসহ পোস্টার, মগ ও টি-শার্ট কেনা যায়।
বিএএফ জাদুঘর স্থাপিত হয় ১৯৮৭ সালের ১৭ জুন। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর এখানে তিন দিনব্যাপী আর্মি অস্ত্রশস্ত্রের শোসহ মিলিটারি মার্চ অনুষ্ঠিত হতো।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, আগারগাঁও
এই জাদুঘরটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সংযুক্ত বিভাগ। ১৯৬৫ সালের ২৬ এপ্রিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নির্বাহী আদেশে এটি গঠিত হয়।
জাদুঘরে বেশ কয়েকটি গ্যালারি রয়েছে, যেমন ভৌত বিজ্ঞান গ্যালারি, ফান সায়েন্স গ্যালারি, জৈবিক বিজ্ঞান গ্যালারি, প্রযুক্তিগত গ্যালারি, আইটি গ্যালারি ইত্যাদি।
এগুলো ছাড়াও রয়েছে একটি বিজ্ঞান পার্ক, একটি আকাশ পর্যবেক্ষণ, এবং একটি বিজ্ঞান গ্রন্থাগার। জাদুঘরটি বিভিন্ন ধরণের শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম যেমন- জনপ্রিয় বিজ্ঞান বক্তৃতা, বৈজ্ঞানিক চলচ্চিত্র শো এবং শিশুদের বিজ্ঞান উৎসব ইত্যাদির আয়োজন করে। তরুণ বিজ্ঞানীদের কাজের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে একক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরটি।
আরও পড়ুন: ভ্রমণের উপকারিতা: দেশ বিদেশ ভ্রমণ আপনার মধ্যে কি পরিবর্তন আনতে পারে?
বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অবদানকে স্মরণার্থে নির্মিত এই জাদুঘর। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করে। বাঙালি পুলিশ অপ্রত্যাশিতভাবে আক্রমণের শিকার হয়ে রাইফেলসহ হাতের কাছে অন্য যা কিছু পেয়েছিলো তাই নিয়েই নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করে। অনেক পুলিশ সদস্য নিহত হন সেই রাতে।
দেশ স্বাধীনের বহু বছর পর ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় এই জাদুঘর। এতে থাকা বিভিন্ন উপকরণ ও প্রতীক যুদ্ধের সময় পুলিশ সেনাদের আত্মত্যাগকে চিহ্নিত করে। জাদুঘরের গবেষণা ইউনিট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ কাউন্সিল চত্বরে নিহত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে শনাক্ত করেছে।
টাকা জাদুঘর, মিরপুর
দেশের বিশিষ্ট শিল্পী, স্থপতি ও ইতিহাসবিদরা জাদুঘরটি চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একত্রে কাজ করেছেন। এই জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন উপায়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও নোট সংগ্রহ করেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। এখানে আছে পাল, সেন, গুপ্ত, সুলতানী, মুঘল ও ব্রিটিশ আমলের হাজার হাজার মুদ্রা ও নোট। বাংলাদেশ নিউমিসম্যাটিক কালেক্টরস সোসাইটি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা জাদুঘরে বিভিন্ন যুগের ১০০টি মুদ্রা হস্তান্তর করেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকার সেরা ভাস্কর্যগুলো
ঐতিহাসিক এই সংগ্রহশালায় রয়েছে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ আমলের ৪৮টি মুদ্রা, নাসিরুদ্দিন নুসরত শাহের ২৯টি, শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের চারটি, সিকান্দার শাহের পাঁচটি, গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের তিনটি, রুকুনউদ্দিন বারবক শাহের তিনটি, নাসিরুদ্দিন মাহমুদের দুটি, মাহমুদ শাহের একটি, শাহজাহানের একজন, বাদশা আলমগীরের দুইটি, ইসলাম শাহের একটি এবং শাহ আলমের যুগের একটি মুদ্রা।
বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর, শেরেবাংলা নগর
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জনগণকে জানাতে সামরিক জাদুঘরটি উন্মুক্ত করা হয় ২০০৪ সালে। নভো থিয়েটারের পাশে অবস্থিত এই জাদুঘরটিতে জনসাধারণ বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারেন। বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর ১৬ ডিসেম্বর এবং ২৬ মার্চ ছাড়া অন্যান্য সরকারি ছুটিগুলোতে বন্ধ থাকে। হলের ভিতরে দুটি বড় কক্ষ রয়েছে এবং বাইরের মাঠে রয়েছে ২৬টি বিভিন্ন মডেলের ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সাঁজোয়া যুদ্ধযান।
শেষাংশ
ঢাকার সেরা এই জাদুঘরগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর সময় দর্শনার্থীদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। এগুলোর অধিকাংশতেই ছবি তোলা নিষেধ। তাই প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারও সীমিত করা হয়েছে। উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে শুরু করে জাদুঘর প্রাঙ্গনে খাবার বা পানি নিয়ে প্রবেশ করার মত ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। অধিকাংশ নিদর্শন কাঁচ দিয়ে ঘেরা থাকে। তবে উন্মুক্ত জিনিসগুলো হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করা ঠিক নয়। এখানে অনেক বিদেশি দর্শনার্থীও ঘুরতে আসেন। তাদের সঙ্গে সৌজন্যমুলক ও সম্মানসূচক ব্যবহার করতে হবে। সর্বোপরি, এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো আমাদের দেশের সম্পদ।
আরও পড়ুন: বাঘা যতীন: যার বীরত্বে কেঁপে উঠেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
বান্দরবান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর বিশেষত্ব শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি জেলা হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর জেলা হিসেবেও বান্দরবান জনপ্রিয়। এখানকার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাঁড়ে এর সবুজে ঢাকা পাহাড়, উন্মত্ত জলপ্রপাত এবং ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর মানুষগুলো। এই অভিজ্ঞতাগুলো পেতে হলে জানতে হবে কীভাবে এই সৌন্দর্য্যকে আলিঙ্গন করা যায়। বার জেনে নিন বান্দরবান ভ্রমণের খুঁটিনাটি সম্পর্কে।
বান্দরবানের সেরা ১০ দর্শনীয় স্থান
নীলাচল, বান্দরবান সদর
নীলাচল বান্দরবান প্রধান শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফুট উপরে অবস্থিত। নীলাচলের বাইরের দিকটা ছিন্নভিন্ন পাহাড় দ্বারা সজ্জিত হলেও ভেতরটা খুব প্রশান্ত। কোথাও বিস্তীর্ণ দিগন্তের ঢালে ঘোরাঘুরির রাস্তা, কোথাও পাহাড়ি পাড়া, আর তার সঙ্গে রূপালী নদী যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। মেঘহীন আকাশে নীলাচল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা।
শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে বাঁ দিকের ছোট্ট রাস্তাটি নীলাচলের পথ। এ পথে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ে উঠতে হবে।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান
নীলগিরি, থানচি
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০০ ফুট উপরে অবস্থিত নীলগিরি বাংলাদেশের অন্যতম একটি উঁচু শৃঙ্গ। পুরো এলাকাটি মেঘে ঢেকে থাকার কারণে দর্শনার্থীরা নীলগিরিকে মেঘের দেশ বলে থাকেন। নীলগিরির সূর্যোদয়ের মুহূর্তটি আশ্চর্যজনক এবং কুয়াশাচ্ছন্ন শীতকালে এটি যেকোনো পর্যটককে চমকে দিতে পারে। মনোরম হেলিপ্যাড নীলগিরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর একটি। পর্যটন এলাকাটির রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত আছে বাংলাদেশের আর্মি ব্রিগেড।
চিম্বুক পাহাড়, থানচি
বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। চান্দের গাড়ি দিয়ে চিম্বুক ভ্রমণের সময় এর চারপাশের নয়নাভিরাম প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়। দর্শনার্থীরা যখন এই জায়গা থেকে নিচের দিকে তাকায়, তারা মেঘের ভেলা দেখে অবাক হয়ে যায়।
বান্দরবান শহর থেকে পৌঁছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিকাল ৪টার পর চিম্বুক-থানচি রুটে কোনো যানবাহন চলবে না। তাই চিম্বুক পাহাড়ে যেতে হলে সেই সময়ের আগেই যেতে হবে। সাধারণত পর্যটকরা চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, এবং শৈলোপ্রপাট ঝর্ণা একসাথে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ গাইড: দর্শনীয় স্থান সমূহ, খরচ
শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, থানচি
মিলনছড়ির এই জলপ্রপাতটি থানচি থানা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। এর অত্যন্ত ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ পানিতে প্রচুর পাথর দেখা যায়। ঝর্ণাটি স্থানীয়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির একটি বড় উৎস। জলপ্রপাতের বাইরে একটি বাজারও রয়েছে যেখানে পর্যটকরা তাঁত পণ্য এবং স্থানীয় খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারেন। এখান থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী জীবন গভীরভাবে অবলোকন করা যায়।
বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণ চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরির পথের মাঝেই পড়ে শৈলপ্রপাত। তাই নীলগিরি ভ্রমণের গাড়ি মাঝ পথে থামিয়ে এই ঝর্ণা দেখে নেয়া যায়।
বগা লেক, রুমা
বিস্ময়কর এই নীল পানির লেকটির সৌন্দর্য দেখতে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন। বর্ষাকালে রাস্তার বেহাল দশার কারণে বগা লেকে যাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। শীতের মৌসুমে পর্যটকরা ক্যাম্প ফায়ার করতে পারেন, যা নিঃসন্দেহে একটি দারুণ স্মৃতি।
আরও পড়ুন: সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। আর রুমা বাজার থেকে বগা লেক পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের পথ। বর্ষার সময় গাড়ি সরাসরি বগা লেক পর্যন্ত যায় না। তাই নতুন পর্যটকদের বগা লেক পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
স্বর্ণ মন্দির, বান্দরবান সদর
এই বৌদ্ধ মন্দিরটির আসল নাম বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির, যেটি বান্দরবানের সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহের একটি। মায়ানমারের কারিগরদের কাঠের তৈরি এই অনন্য মন্দিরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।
এই স্বর্ণ মন্দিরে যেতে হলে অবশ্যই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে যেতে হবে। আর সকালে যেতে না চাইলে দুপুর পৌনে ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যেতে হবে। ২০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে মন্দিরটিতে প্রবেশ করে দর্শনার্থীরা এর স্থাপত্য এবং চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন: হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ
তিন্দু, থানচি
বাংলাদেশের নায়াগ্রা নামে পরিচিত তিন্দুর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী সাঙ্গু। পাহাড়, মেঘ, নদী, জলপ্রপাত, রহস্য, রোমাঞ্চ সবই এখানে পাওয়া যায়, তাই তিন্দু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণকারীদের জন্য অন্যতম প্রিয় আকর্ষণ।
বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার। বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়ার পথে মিলনছড়ি, চিম্বুক, নীলগিরি পড়ে। এই দীর্ঘ পথে চারপাশের সুন্দর প্রকৃতি দেখতে দেখতে চোখ ও মন দুটোই সতেজ হয়ে যায়। থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করে প্রায় দুই ঘণ্টায় থানচি থেকে তিন্দু পৌঁছানো যায়। এ সময় যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর মনোমুগ্ধকর রূপের অভিজ্ঞতা নেয়া যায়।
কেওক্রাডং, রুমা
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ১৭২ ফুট উঁচু এই পর্বতটি রুমা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ছোট-বড় পাহাড়-পর্বতের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দুর্গম এলাকা। কেওক্রাডং বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য, শীতল ঝর্ণা, আঁকাবাঁকা পথ, পাহাড়ি রাস্তার ধারে, পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের লুকোচুরির খেলা; এই সব কিছু মিলে মনে নেশা ধরিয়ে দিবে।
আরও পড়ুন: ভ্রমণের উপকারিতা: দেশ বিদেশ ভ্রমণ আপনার মধ্যে কি পরিবর্তন আনতে পারে?
রুমা থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে মাঝে পড়বে দার্জিলিং পাড়া নামে একটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের গ্রাম। অনেক পর্যটকই যাত্রা বিরতি দিয়ে এই অপূর্ব গ্রামটিতে বিশ্রাম নেন।
জাদিপাই জলপ্রপাত, রুমা
কেওক্রাডং পাহাড় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটারের পথ জাদিপাই জলপ্রপাত। তিন হাজার ৬৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বান্দরবানের সর্বোচ্চ গ্রাম পাশিংপাড়া অতিক্রম করে জাদিপাইপাড়ার পথে উঠে গেছে খাড়া রাস্তা। পাশিংপাড়ার উপর থেকে জাদিপাই পাড়ার দিকে তাকালে মনে হবে সবুজের কোলে ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট গ্রাম। বর্ষায় এই রাস্তাটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই বর্ষা-পরবর্তী মৌসুমে এখানে বেড়াতে আসাটা উত্তম।
জাদিপাই ঝর্ণায় যেতে হলে যেতে হবে বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে বগালেকে এবং তারপর কেওক্রাডং পাহাড়ের চূড়ায়। কেওক্রাডং পাহাড় থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে থাকা পাশিংপাড়ার খাড়া পথ ধরে ৪০ মিনিট হাটলেই জাদিপাই জলপ্রপাত পৌঁছানো যায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
নাফাখুম, রেমাক্রি
নাফাখুমের খুমের মানে হচ্ছে জলপ্রপাত আর এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাতগুলোর একটি। স্থানীয় লোকজন এটিকে রেমাক্রি জলপ্রপাত বলে থাকে। এখানে একবার ভ্রমণ করলে ভ্রমণকারীরা বারবার আসতে চায়। লোকেরা একে বাংলাদেশের নায়াগ্রা জলপ্রপাত বলে ব্যাখ্যা করে।
সাঙ্গু নদী থেকে নৌকা নিয়ে রেমোক্রি হয়ে নাফাখুমে যেতে হয়। এই যাত্রা পথে তিন্দু, রাজাপাথর এবং পদ্মঝিরিও দেখে নেয়া যায়। বর্ষাকালে নদীতে পানির প্রবাহের অনেক চাপ থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাফাখুম যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া যায় না। অন্যদিকে শীতের মৌসুমে পানির স্তর অনেক নিচে থাকায় নৌকা নিয়ে যাওয়া যায় না। তদনুসারে, নাফাখুম ভ্রমণের সর্বোত্তম সময় বর্ষাকালের পরে এবং শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগে।
ঢাকা থেকে বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়ার উপায়
প্রথমেই বান্দরবান যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি শুধুমাত্র বাস আছে। তবে চট্টগ্রামে সরাসরি যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমান, ট্রেন, বাস; তিনটির যে কোনটি ব্যবহার করা যেতে পারে। অতঃপর চট্টগ্রাম থেকে লোকাল বাসে করে বান্দরবান। এবার বান্দরবান থেকে উপরোক্ত দর্শনীয় জায়গাগুলো ভ্রমণের জন্য আছে লোকাল বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, জিপ এবং চান্দের গাড়ি।
আরও পড়ুন: ঘুরে আসুন মালদ্বীপ: অপরূপ এক দ্বীপদেশ ভ্রমণ গাইড
তিন জনের টিম হলে সাধারণত সবাই বড় গ্রুপগুলোর সঙ্গে একসাথে হয়ে চান্দের গাড়িতে ভ্রমণ করে। এই গাড়িগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই জায়গাগুলো ভ্রমণের একটি প্রয়োজনীয় ব্যাপার হচ্ছে- এ জায়গাগুলোতে গাইড অবশ্যই নিতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হয়। গাইডরা ভ্রমণের যান ঠিক করা থেকে শুরু করে এই অনুমতি নেয়ার যাবতীয় কাজ সমাধা করে দেয়।
এছাড়া বান্দরবানের সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ ভ্রমণে যে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেটি হচ্ছে- আর্মিদের চেকিংয়ের সুবিধার্তে সঙ্গে সব ধরনের পরিচয়পত্র থাকা বাঞ্ছনীয়। গাইড নেয়ার সময় অবশ্যই সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত গাইড সমিতি থেকে গাইড ভাড়া করা উচিত। বিকাল ৪টার পর আর্মি ক্যাম্প থেকে আর অনুমতি মেলে না। একই সঙ্গে যানবাহন পাওয়ারও কোনো উপায় থাকে না। তাই পুরো যাত্রাটি অনেক সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা উচিত। বর্ষাকালে বান্দরবানকে অধিক সুন্দর দেখালেও এই সময় জায়গাগুলোর বিপজ্জনক অবস্থার কথাও মাথায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট