জীবনধারা
শীতে বাড়তি যত্ন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর উপায়
শীত এসে গেছে! যদিও শীতল বাতাস উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে, তবে ঠাণ্ডায় ত্বক নিস্প্রাণ হয়ে যায়। কেউ কেউ অভিযোগ করেন শীতে তাদের ত্বকে কিছুটা কালো ছোঁপ পড়ে যায়।
তবে প্রত্যেকেই চায় সকল ঋতুতেই স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর ত্বক পেতে। আর তাই শীতকালে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
শীতে অল্প কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে এবং তারুণ্য বজায় রাখা সম্ভব হবে।
১.সঠিকভাবে আপনার ত্বক পরিষ্কার করুন ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
নারী-পুরুষ প্রত্যেকের জন্যই স্কিনকে পরিষ্কার করা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে, শীতের আসার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক অত্যধিক শুষ্ক হয়ে যায়, তাই সবার আগে দরকার একটি ভালো মানের ক্লিনজার ব্যবহার করা। এরপর শীতকালে উজ্জ্বল ত্বক পেতে ময়েশ্চারাইজিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখে। শীতকালে আমাদের ত্বক শুকিয়ে যায়, কারণ বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে।
এই পরিস্থিতিতে আপনার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে এবং বাড়তি ক্ষতি এড়াতে হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
২. একটি ভারী ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করুন
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ত্বকের যত্নের পরিবর্তন বাধ্যতামূলক, কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আর্দ্রতার মাত্রা পরিবর্তিত হয়। কারণ আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি এবং ত্বক শ্বাস নিচ্ছে; তার আর্দ্রতা পরিবর্তিত হয়। তাই গ্রীষ্মের ঋতুটিতে আমরা হালকা জেলভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি, কিন্তু শীতকালে এমন একটি ময়েশ্চারাইজার বাছাই করা উচিৎ; যাতে ভিটামিন ই ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের মতো উপাদানগুলো থাকে।
এছাড়া নারকেল তেল, ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, বাটারমিল্ক ও শসার মতো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে এডেলউইসের পণ্যের সমাহার নিয়ে এলো দ্য বডি শপ
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড়
এবারও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজার। ৩১ ডিসেম্বরকে ঘিরে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজার যেন পর্যটকের মেলায় পরিণত হবে।
বছরের এই দিনটিতে তরুণ-তরুণীরা হইচই আর আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। বাদ যান না শিশু আর প্রবীণরাও।
আর তাই শহরের হোটেল-মোটেল ও পর্যটন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা করে প্রস্তুত রয়েছে। ইংরেজি নতুন বছরকে বরণে বিভিন্ন হোটেলে থাকছে ইনডোর আয়োজন। তবে কয়েক বছরের মতো এবারও সমুদ্রসৈকতসহ আউটডোরে কোনো আয়োজন নেই।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম আনু জানান, ইংরেজি বছরের শেষ দিন মানে থার্টি ফার্স্ট। দেশের সব পর্যটকদের দৃষ্টি থাকে কক্সবাজারে। কারণ সৈকতে ২০২২ সালের শেষ সূর্যাস্ত উপভোগ এবং বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রোমাঞ্চকর অনুভূতি কক্সবাজার থেকে পাওয়া যায়। তাই ইতোমধ্যে কক্সবাজারে পর্যটকরা চলে এসেছে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজারও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাইরে বড় কোনো অনুষ্ঠান না থাকলেও বিভিন্নভাবে বড় পরিসরে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন হবে কক্সবাজারে। শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় ও রাতে বিভিন্ন হোটেলের ইনডোরে নতুন বছরকে বরণ করতে থাকছে নানা আয়োজন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। সে বিষয়কে কেন্দ্র করে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসগুলো আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, নববর্ষের সাজসজ্জাসহ নানা ধরনের কারুকার্য সম্পন্ন করেছে। থার্টি ফাস্ট নাইটকে ঘিরে ২৯ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকরা আসছেন। ৩০ ডিসেম্বর থেকে প্রায় ৭০ ভাগ হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গেছে। তবে অন্যান্য বছর থার্টি ফাস্ট নাইটের, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের আগে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বুকিং হয়ে যায়। আউটডোরে অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলে শতভাগ পর্যটক ভরপুর থাকতো।
আবুল কাশেম সিকদার জানান, তারকামানের হোটেলগুলোতে বরাবরের মতোই ফুল বুকিংয়ের প্রত্যাশা রয়েছে। সবকটি তারকা হোটেল থার্টি ফার্স্ট নাইটের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম টিকিটও বিক্রি শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ইনানীর তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাভেদ চৌধুরী বলেন, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের হোটেল শতভাগ অগ্রিম বুকিং রয়েছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও নতুন বছর বরণে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। দুইজন তারকা শিল্পী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন।
একইভাবে তারকামানের হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইস, কক্স টুডে, সায়মন বিচ ও লং বিচেও নানা জমকালো আয়োজন থাকবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও কিছু বড় মানের হোটেলেও নানা অনুষ্ঠান থাকবে।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। একইভাবে জেলা প্রশাসন বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবারও উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোনো আয়োজন করা যাবে না। তাই কক্সবাজারেও কাউকে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, কক্সবাজারে সাড়ে চারশ’ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত্রিযাপন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি জানান, ১ জানুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল শুরু হলে সেখানে ও হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেক জোনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজার শুধু দেশের নয় পৃথিবীর একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। তাই যেকোনো বিশেষ দিন উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় থাকে। এবারও পর্যটকরা থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারমুখী হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে।
আরও পড়ুন: নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বড়দিন উদযাপনে পাহাড়ে খ্রিস্টান পল্লীতে উৎসবের আমেজ
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
নদীমাতৃক বাংলাদেশে দীর্ঘ ভ্রমণে যাওয়ার ব্যাপারে যে কোনো বয়সের ভ্রমণপিপাসুদের মনেই প্রথম যে নামটি আসে তা হল সেন্টমার্টিন দ্বীপ। হাজারো পর্যটকের বিস্ময়ের ফেনিল সাগরের বুকে জেগে ওঠা এই একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির অবস্থান দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে সর্ব দক্ষিণে।
কক্সবাজারের টেকনাফ জেটি থেকে জাহাজে করে প্রায় দুই ঘন্টার অন্তহীন জলপথ পাড়ি দেবার সময় দৃষ্টি সীমানায় জাদুর মতো ভেসে উঠবে তিন বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ছোট্ট দ্বীপটি। দেশের ভেতরে ও বাইরের পর্যটকদের জন্য অতি আকর্ষণীয় এই সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবারে ভ্রমণ ফিচার।
সেন্টমার্টিন নামটির পেছনের গল্প
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা কামাল পাশার মতে, আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের সময় দ্বীপটি আরবের ব্যবসায়ীদের নজরে আসে। সওদাগররা সে সময় দ্বীপটির নাম দিয়েছিলেন জাজিরা; মানে উপদ্বীপ। পরে স্থানীয়রা একে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ বলতে শুরু করে, যার অর্থ ‘নারকেলের দ্বীপ’।
আরও পড়ুন: নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় দ্বীপটি ব্রিটিশ-ভারতের এখতিয়ারভুক্ত হয়। কামাল পাশার সহকর্মী অধ্যাপক বখতিয়ার উদ্দিন দাবি করেন যে, চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মার্টিনের নামে নামকরণ করা হয়েছিল দ্বীপটির। কিন্তু বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, মার্টিন নামের লোকটি ছিলেন মূলত একজন খ্রিস্টান সাধু। আর এই সাধুর নামটাই পরবর্তীতে যুক্ত হয়ে যায় দ্বীপের নামের সঙ্গে।
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
শুধুমাত্র কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটানোই নয়, ফেনিল সাগরের মাঝে কোনো দ্বীপ ভ্রমণ করা শরীর ও মন দুটোর জন্যই স্বাস্থ্যকর। দ্বীপের সৈকতে এসে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ যে কোনো মনের অস্থিরতাকে শান্ত করতে সক্ষম। তাছাড়া দ্বীপের সুস্থ কোলাহল অতি বার্ধক্যে পীড়িত মানুষের ভেতর থেকেও বের করে আনতে পারে শিশুসুলভ চঞ্চলতা। দ্বীপদেশ না হলেও নদীমাতৃক বাংলাদেশের আঙ্গিনার চরগুলো এই অভিজ্ঞতার ষোল আনাই পূরণ করতে পারে। আজকের আয়োজনে থাকছে সেরকম একটি অকৃত্রিম জায়গা- নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের নানা দিক।
নিঝুম দ্বীপ: সাগরের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ
বাংলাদেশের দক্ষিণের বিভাগ চট্টগ্রামের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার ছোট একটি দ্বীপ এই নিঝুম দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এই চরটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। চর ওসমান, বাউল্লারচর, কামলার চর, ও মৌলভির চর- এই চার চর নিয়ে পুরো নিঝুম দ্বীপ।
প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের এই দ্বীপটি সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠে ১৯৪০ সালে। তারও প্রায় এক দশক পড় গড়ে ওঠে জনবসতি। দ্বীপটিকে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল। ২০১৩ সালে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র একটি ইউনিয়নের মর্যাদা পায় নিঝুম দ্বীপ।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
নিঝুম দ্বীপের নামকরণ
জনবসতি গড়ে ওঠার একদম শুরুর দিকে এই দ্বীপের নাম ছিল চর ওসমান ও বাউল্লার চর। লোকমুখে শোনা যায়, এখানে বসতি গড়া প্রথম মানুষটির নাম ওসমান। তিনি ছিলেন একজন বাথানিয়া; আর তখন তার নামানুসারেই দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছিল। শুধু সৈকতই নয়, দ্বীপের মাটিও বালুতে চিকচিক করতো। দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতো বালুর ঢিবি বা টিলার মতো জায়গা। আর এই কারণেই বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চর শব্দগুলো এই দ্বীপের নামের সঙ্গে জুড়ে যায়। এমনকি এখনও নিঝুম দ্বীপের অবস্থান জানার জন্য স্থানীয়দেরকে বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হয়।
প্রথম বসতি গড়ের ওঠার সময় চরে প্রচুর চিংড়ি পাওয়া যেতো। চিংড়ির স্থানীয় নাম ইছা; তাই স্থানীয়দের কেউ কেউ একে ইছামতির চরও বলতো। ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটি একদম জনমানব শূন্য হয়ে যায়। ঝড় শেষে হাতিয়ার তৎকালীন সংসদ সদস্য আমিরুল ইসলাম কালাম দ্বীপটিতে পরিদর্শনে গিয়ে নাম বদলে দ্বীপের নাম নিঝুম রাখেন।
নিঝুম দ্বীপের দর্শনীয় স্থানসমূহ
নিঝুম দ্বীপের বিশেষত্ব হচ্ছে চিত্রা হরিণ ও শীতকালের অতিথি পাখি। একসঙ্গে এতো চিত্রা হরিণ দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। আর সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের ডাক শিরদাঁড়া দিয়ে রোমাঞ্চের ঢেউ তোলে।
পাখি, হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। আগে থেকেই কোনো স্থানীয় গাইডকে বলে রাখা যেতে পারে। তাহলে সঠিক জায়গায় যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। স্থানীয় ছোট ছোট ছেলেরাই গাইডের কাজ করে। ওরাই সাধারণত পর্যটকদের ম্যানগ্রোভ বনের হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায়
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এখানকার সেরা জায়গা নামা বাজার সৈকত। নামা বাজার থেকে পায়ে হেটে ১০ মিনিটের মধ্যেই সৈকতে পৌঁছা যায়। বারবিকিউয়ের জন্যও এ জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়।
নিঝুম দ্বীপ ছাড়া পাখিদের মেলা বসে পাশের দ্বীপ কবিরাজের চর ও দমার চরে। পড়ন্ত বিকেলে কবিরাজের চরের কাছে চৌধুরীর খাল দিয়ে নৌকা করে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়বে চিত্রা হরিণ। ট্রলার রিজার্ভ করা হলে মাঝিই হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। ১০ থেকে ১৫ জনের জন্য ট্রলার ভাড়া পড়তে পারে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
তাজা ইলিশ খাওয়ার জন্য কমলার দ্বীপ সেরা জায়গা। জাতীয় উদ্যান এলাকা থেকে সাগর ঘোরার জন্য ৪০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার বোট ভাড়া দেয়া হয়।
শীতের অতিথি পাখি দেখার জন্য এখানকার আরো একটি দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে ভার্জিন আইল্যান্ড। দমার চরের দক্ষিণে নতুন সৈকতটিই ভার্জিন আইল্যান্ড। দমার চর ঘুরে আসতে হলে ট্রলার ভাড়া পড়বে প্রায় তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা। নিঝুম দ্বীপ থেকে একটু দূরের পথে দেখা মিলবে ভোলার ঢালচর আর চর কুকরি-মুকরি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময়
নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য্যে আপাদমস্তক অবগাহন করার জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে শীত ও বসন্তকাল। হেমন্তের শেষলগ্নে তথা অক্টোবর থেকে এপ্রিলের ঠিক মাঝামাঝি সময়টাই উপযুক্ত সময়। এ সময় রাস্তাঘাট শুকনো থাকায় আশেপাশের যে কোনো জায়গায় যাওয়া যাবে। এছাড়া হরিণ দেখার জন্য বনের পথে হাটতে সুবিধা হবে।
বর্ষাকালে গেলে হাটু সমান কাদায় পুরো দ্বীপ হেটে ঘুরতে হবে। যানবাহন নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে। তবে ভোসন রসিকদের জন্য সুখবর হল যে এ সময়টাতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় সেখানে। এছাড়া বছরের বাকিটা সময় মেঘনা নদী ও সাগর অনেক উত্তাল থাকে।
ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার উপায়
সাগরের মাঝখানে হওয়ায় নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রার শুরুটা সড়ক পথে হলেও শেষব্দি জলপথ ব্যবহার করতেই হবে। বাসে চড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল অথবা ধানমন্ডির জিগাতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাসের ধরণের উপর ভিত্তি করে এসব বাসে ভাড়া পড়তে পারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
আরও পড়ুন: বনভোজনের জন্য ঢাকার কাছেই ১০টি মনোরম জায়গা
বড়দিন উদযাপনে পাহাড়ে খ্রিস্টান পল্লীতে উৎসবের আমেজ
রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) শুভ বড়দিন। পাহাড়ের খ্রিস্টান পল্লীগুলোতে বড়দিন উদযাপনে এখন উৎসবের আমেজ। পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চলছে নানা আয়োজন। বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোকে ফুল দিয়ে আকর্ষণীয় নানা রঙে সাজানো হয়েছে। গির্জায় গির্জায় করা হয়েছে আলোকসজ্জা।
রাঙামাটি জেলাসহ প্রত্যন্ত এলাকায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের গ্রামগুলো লাল, নীল বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে। এছাড়া ক্রিসমাস ট্রি, ধর্মীয় প্রার্থনা, বাইবেল পাঠ, যিশুর জন্মের সে গোশালাও তৈরি করা হয়েছে।
গির্জাগুলোও সাজানো হয়েছে নানান সাজে। আর ঘরের ওপরে টাঙানো হয়েছে রঙিন কাগজে বানানো তারা চিহ্নিত আলোক সজ্জা। বসতবাড়ির আঙ্গিনায়ও দেখা গেছে নানা রঙের কারুকাজ।
এছাড়া শহরের তবলছড়ি বন্ধু যীশু টিলা গির্জায় দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে এ উৎসবে মেতে উঠেছে বাঙালিরাও। আর বড়দিন উপলক্ষ্যে কেক কেটে রাঙ্গামাটিসহ প্রত্যন্ত এলাকায় উৎসবের সূচনা করবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা।
গত দুই বছর করোনার কারণে স্বল্প পরিসরে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বড়দিন পালন করলেও এ বছর করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবার স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব মেনে আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপন করছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। শিশুরা মেতে উঠেছে বড়দিনের আনন্দে।
আরও পড়ুন: রবিবার শুভ বড়দিন
রাঙামাটি শহরে সাতটি খ্রিস্টান পল্লী রয়েছে। এরমধ্যে আসামবস্তি, নতুনবস্তি, বন্ধু যীশুটিলা ও রির্জাভমুখসহ অন্যান্য গ্রামের মানুষ গির্জায় প্রার্থনা করে নানা আয়োজনে প্রভু যীশুর জন্মদিনের উৎসব পালনে ব্যস্ততার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে।
বড়দিন উদযাপনে পাহাড়ের খ্রিস্টান পল্লী গুলোতেও চলছে উৎসবের আমেজ। রাঙামাটিসহ কাপ্তাই চন্দ্রঘোনা, বাঘাইছড়ি সাজেক ইউনিয়ন ও বিলাইছড়ির পাংখোয়া পাড়ায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী পাংখোয়া ও খিয়াং সম্প্রদায়ের মানুষ বড় দিন উদযাপন করতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আবার কেউ কেউ এলাকায় আয়োজন করেছে প্রীতিভোজের।
অন্যদিকে, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন উপলক্ষে রাঙামাটি আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
খ্রিস্টান পল্লীগুলোর আশে-পাশে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
রাঙামাটি ক্যাথলিক চার্চপাল পুরোহিত ফাদার মাইকেল রয় জানান, ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ রূপে যীশু এসেছিলেন মানবতার কল্যাণে মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে। পাহাড়ে শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে প্রভু যীশুর জন্মদিন। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় জেলা শহরসহ রাঙ্গামাটির বিভিন্ন গির্জায় বড়দিন উদযাপিত হবে। এ উৎসবের মধ্যে মিশে যাবে সকল হিংসা, সংঘাত। সৃষ্টি হবে সম্প্রীতি মেলবন্ধন।
দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধির পাশাপাশি পাহাড়ের শান্ত পরিস্থিতি ও করোনার পরিস্থিতিতে সকল মানুষ যাতে সুস্থ ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে প্রভু যীশুর জন্মদিনে এমনটাই প্রার্থনা করছে সকলে।’
আরও পড়ুন: বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে বরিশালের ১শ গীর্জায় কঠোর নিরাপত্তা
গাজীপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বড়দিন উদযাপিত
রবিবার শুভ বড়দিন
যীশু খ্রিস্টের জন্মকে স্মরণ করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো রবিবার দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায় বড়দিন উদযাপন করবে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবটি হলো যীশু খ্রিস্টের পুনর্জন্ম উদযাপন, একটি নতুন সূচনা, ক্ষমা ও শান্তি এবং ঈশ্বর ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা।
রঙিন বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, বিশেষ প্রার্থনা, শিশুদের মধ্যে উপহার বিতরণ এবং আনন্দ বার্তা আদান-প্রদান এ উৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
সারা দেশের গীর্জাগুলোতে প্রার্থনা সেশনের আগে ও পরে ক্রিসমাস ক্যারোল ও স্তোত্র গাওয়া হবে।
শনিবার বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বার্তায় বলেছেন, ‘খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ সবার জন্য বড়দিন বয়ে আনুক অনন্ত আনন্দ ও কল্যাণ। সকলের জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক।’
আরও পড়ুন: বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে বরিশালের ১শ গীর্জায় কঠোর নিরাপত্তা
প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ সকল নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন এবং একটি সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপূর্ণ জাতি গঠনে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।
এ উপলক্ষে রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এক সংবর্ধনার আয়োজন করবেন।
সচিব, সামরিক সচিব এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় নেতা ও পেশাজীবীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অতিথিদের সঙ্গে এক চা পার্টিতে যোগ দেবেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার এবং বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বড়দিন উদযাপিত
বড়দিন: বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
২০২২ সালে শীর্ষ ১০ এশিয়ান সুন্দরী
যুগ যুগ ধরে বহু মডেল ও অভিনেত্রী ফ্যাশন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের সৌন্দর্যের ছাপ রেখে গেছেন। তবে কিছু নারী তাদের অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্যে অন্য সবাইকে পেছনে ফেলে যান। এই নিবন্ধ থেকে আমরা ২০২২ সালের শীর্ষ ১০ এশিয়ান সুন্দরীর সম্পর্কে জানবো।
শত দেশের হাজার চলচ্চিত্র নিয়ে ৩য় সিনেমাকিং চলচ্চিত্র উৎসব ফেব্রুয়ারিতে
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মর্যাদাবান সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (সিআইএফএফ) ৩য় অধিবেশন ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার সিআইএফএফ প্রতিষ্ঠাতা ও উৎসব পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, উৎসবটি হওয়ার কথা ছিলো ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে, পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করা হয়।
মনজুরুল ইসলাম মেঘ বলেন, ৩য় সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শতদেশের হাজার চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা করছে, ১০০০ চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিচালককে ইতোমধ্যেই আমরা ইমেইলের মাধ্যমে সিলেকশনের বিষয়ে নিশ্চিত করেছি।
মেঘ আরও জানান, বিভিন্ন দেশের ডেলিগেটরা এইবার অংশগ্রহণ করবে, সেইভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। পৃথিবীর বড় বড় উৎসবের পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো আমাদের উৎসবে জমা পড়েছে, আমরা সে সব চলচ্চিত্র সেন্সর করে বাংলাদেশের দর্শকদের দেখাতে চাই। এই অধিবেশনের আয়োজনটা বড়, এর আগে এশিয়া মহাদেশের কোন চলচ্চিত্র উৎসবে হাজার চলচ্চিত্র সিলেকশন হয়নি। আমরা এই রেকর্ড গড়তে চাই। তাই সুন্দর আয়োজনের জন্য আমাদের কিছু বাড়তি সময় প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ২য় সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ১২১টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিলো। সিআইএফএফ অধিবেশন দক্ষিণ এশিয়ায় অনুষ্ঠিত উৎসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেশ অংশগ্রহণ করা চলচ্চিত্র উৎসবের রেকর্ড গড়ে এবং বাংলাদেশে সর্বকালে সবচেয়ে বেশি দেশের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক উৎসবের খেতাবপ্রাপ্ত হয়।
আরও পড়ুন: কসমস ফাউন্ডেশনের প্রদর্শনীতে আলেকজান্দ্রু পোটেকা ও নিপার শিল্পকর্ম
উৎসব পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ জানিয়েছেন, দেশের সবচেয়ে বড় মেগাপ্রজেক্ট বাস্তবায়ন করায় ৩য় সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উৎসর্গ করা হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। এই উৎসবের মাধ্যমে শতাধিক দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলীদের কাছে পদ্মা সেতু তুলে ধরা হবে। এইবার উৎসবের থিম সাজানো হয়েছে পদ্মা সেতু।
উৎসব পরিচালক জানান, ২য় সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চারটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এইবারের উৎসবে আন্তর্জাতিক সেমিনারের পাশাপাশি, মাস্টারক্লাস, ওপেন ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও আগামী মার্চ মাস থেকে নিয়মিত প্রত্যেক মাসে আট বিভাগে আটটি বিভাগীয় চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্মাতাদের চলচ্চিত্র নিয়ে স্পেশাল উৎসব।
উল্লেখ্য, বাংলা চলচ্চিত্র সারাবিশ্বে পরিচিত করতে এবং বিভিন্নি দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিতে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ২০২০ সালে থেকে নিয়মিতো এই উৎসবের আয়োজন করে আসছে ঢাকা ফেস্টিভাল।
১ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে উৎসর্গ করা হয়েছিলো।
২য় সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১ এ বিশ্বের ১২১ টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিলো, উৎসর্গ করা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের’।
আরও পড়ুন: আলোকচিত্র প্রদর্শনী 'প্রত্যাশা: অভিবাসীদের আশা' শুরু মঙ্গলবার
ঢাকায় ১৯তম এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
পোকেমনে আর দেখা যাবে না অ্যাশ-পিকাচুর বন্ধুত্ব
হাসিমুখে চার পায়ে দৌড়ে হলুদ রঙের ছোট্ট এক প্রাণী এক বালকের কাঁধে উঠে বসল। বালকটি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই বলে উঠল ‘পিকা, পিকা…’। আশা করি এরপর আর বর্ণনা দিতে হবে না। কার্টুন যারা ভালোবাসেন তারা নিশ্চয়ই বুঝে নিয়েছেন পিকাচুর কথা বলা হচ্ছে। আর বালকটি হচ্ছে অ্যাশ কেচাম। নব্বইয়ের দশকের শিশুদের টেলিভিশন পর্দায় নিত্য সঙ্গী পোকেমন-এর মুখ্য দুই চরিত্র।
শুধু যে শিশুদের তা কিন্তু নয়, বড়রাও যারা অ্যানিমে পছন্দ করেন তারা দিব্বি দেখে চলেছেন পোকেমন। চলেছেন এ কারণে যে, এই কার্টুন সিরিজ বা অ্যানিমে সিরিজ এখনও চলছে। আরও অনেকদিন চলবে। তবে দুঃখ করেই বলতে হয় পোকেমনের প্রযোজকরা ঘোষণা দিয়েছেন যে অ্যাশ ও পিকাচুকে দেখা যাবে না নতুন পর্বগুলোতে। তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের এপ্রিলে সিরিজটিকে নতুন আঙ্গিকে আনা হবে এবং সেখানে থাকবে না অ্যাশ-পিকাচু জুটি।
আরও পড়ুন: খাদ্যতালিকায় ৫ খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখবে ডায়াবেটিস
২০০৬ সাল থেকে কেচামসহ বেশ কয়েকটি চরিত্রের ইংরেজি কণ্ঠ দেয়া অভিনেত্রী সারাহ নাটোচেনি বলেন, আমার জন্য এটি একটি অসাধারণ সুযোগ ছিল। শেষ অধ্যায়ে যাই থাকুক না কেন, অন্তত কয়েক প্রজন্ম ধরে বহু মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে অ্যাশ-পিকাচু।
জাপানি এই অ্যানিমে শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। যার কয়েকটি সিনেমাও রয়েছে। অ্যাশের স্বপ্ন সে হবে পোকেমন মাস্টার। পোকেমন মাস্টারদের কাজ হচ্ছে পিকাচুর মতো পোকেমন সংগ্রহ করে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং তাদের দিয়ে বিশ্বজুড়ে অন্যান্য মাস্টারদের পোকেমনের সঙ্গে লড়াই করা। ঠিকভাবেই বিশ্বজুড়ে পোকেমনের সেরা মাস্টার হওয়া যায়। সে লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার সময় মাত্র ১০ম জন্মদিনে তার দেখা হয় পিকাচুর সঙ্গে।
অ্যাশের স্বপ্ন গতমাসে পূরণ হয়েছে। ‘পোকেমন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর খেতাব তার দখলে চলে এসেছে।
আগামী বছরে অ্যানিমেটিতে প্রধান নতুন দুই চরিত্র দেখা যাবে। লিকো নামের ছোট্ট এক মেয়ে এবং রয় নামের এক ছেলে। সঙ্গে থাকবে তিনটি ‘পালডে স্টার্টার পোকেমন’।
প্রযোজকরা বলেছেন, ‘এতে অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, বন্ধুত্ব ও পোকেমন, অ্যানিমে অনুরাগীদের ভালবাসার সবকিছুই উপস্থাপন থাকবে।’
তার আগে, ১৩ জানুয়ারিতে দেখা যাবে ‘পোকেমন জার্নি ইন দ্য ওয়েস্ট’ শিরোনামে ১৩ পর্বের উপসংহার সিরিজ। যেখানে বলা হবে অ্যাশ ও পিকাচুর চূড়ান্ত অধ্যায়ের গল্প।
আরও পড়ুন: সাংস্কৃতিক চীন: কাল ও দেশের সীমা পেরিয়ে চীনা চায়ের সুবাস
প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
লিওনেল মেসি: দরিদ্রতা, রোগ আর প্রতিকূলতা জয় করে আজ মহানায়ক
১৩ বছর বয়সী মেসি একটা ইউজ ন্যাপকিনে বার্সেলোনার সঙ্গে তার প্রথম কন্ট্রাক্ট সাইন করেন। কারণ তিনি এতটাই উৎসাহিত ছিলেন যে তিনি চেয়েছিলেন ডিনারটা শেষ হওয়ার আগেই যেন তাকে সাইন করিয়ে নেয়া হয়। যে কারণে স্পোর্টিং ডিরেক্টর কার্লস রেসজ্যাগ তখনই সেস্টুর্যান্ট এর ওয়েটারকে ডাক দেন।
তার কাছ থেকে একটা ন্যাপকিন নিয়ে তাতে একটা কন্ট্রাক্ট লিখে ফেলেন। যে ন্যাপকিনটা এখন মেসির উকিলের অফিসে ঝোলানো রয়েছে। যেটাকে বর্তমানে মোস্ট সেলিব্রেটেড পেপার ন্যাপকিন হিসেবে গণ্য করা হয়। ইতিহাস রচনার সূচনাটা হয়েছিল টিস্যু পেপারে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির মাধ্যমে। কে জানত, ওই টিস্যু পেপারের মাধ্যমে হওয়া এক চুক্তি একদিন ফুটবল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে।
ভিনগ্রহের প্লেয়ার বা রেকর্ড এর বরপুত্র যে নামেই ডাকুন না কেন, বর্তমান বিশ্বের সবথেকে বিধ্বংসী ও ট্যালেন্টেড ফুটবলার – লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। ত্রিশ বছর বয়সেই মেসি যে পরিমাণ এবং যে মাপের রেকর্ড এর মালিক তা কেবল ভিনগ্রহের কারও পক্ষেই সম্ভব।
নিজের শেষ বিশ্বকাপে শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে বিশ্বকাপ খেলতে নেমে শুরুতেই বড় হোঁচট। সৌদি আরবের বিপক্ষে অঘটনের হারের পর গ্রুপপর্বেই বিদায়ের শঙ্কা জেঁকে বসেছিল। সেখান থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে একের পর এক বাঁচা-মরার লড়াই পেরিয়ে, এখন সোনালি ট্রফিটা থেকে নিঃশ্বাস দূরত্বে মেসির আর্জেন্টিনা।
আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই হয়তো এটা জানেন যে মাত্র ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি রোগ ধরা পড়ে। লোকাল পাওয়ার হাউস, রিভার প্লেট তার প্রগ্রেস এর প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিল। কিন্তু তারা তার চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে জরুরি ৯০০ ডলার খরচ করতে রাজি ছিল না। কার্লস রেসজ্যাগ যিনি সেই সময় এফ সি বার্সেলোনার স্পোটিং ডিরেক্টর ছিলেন। সৌভাগ্যবশত মেসির ট্যালেন্ট সম্পর্কে তিনি অবগত হন। কারণ ওয়েস্টার্ন ক্যাটালোনিয়া লিডাতে তার কয়েকজন আত্মীয় ছিলেন। যার ফলে মেসি ওতার বাবা এফ সি বার্সেলোনা টিমের সঙ্গে একটা ট্রায়াল অ্যারেঞ্জ করতে সফল হন।
আরও পড়ুন: মেসি-আলভারেজ জাদুতে ৩-০ গোলে ফাইনালে আর্জেন্টিনা
এক সাক্ষাতকারে মেসি বলেন, “টাকা আমার কাছে কোনদিনই অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল না। টাকা আমাকে কোনদিনই অনুপ্রেরণা যোগায় না। আমাকে আরও ভালো খেলতে কোনোভাবেই উৎসাহিত করে না। আমি শুধুমাত্র আমার পায়ে একটা ফুটবল থাকলেই খুশি। আমার অনুপ্রেরণা আসে খেলাটা থেকে, যে খেলাটাকে আমি এতটা ভালবাসি। যদি আমি একজন প্রফেশনাল ফুটবলার নাও হতাম, তাও আমি কোন কিছু ছাড়াই সারা জীবন ফুটবল খেলে যেতাম।”
মেসি অন্যান্য গ্রেট ফুটবলারদের মত অতটা লম্বাও নন, অতটা স্বাস্থ্যও ভালো না। কিন্তু তবুও লিও মেসি সারাবিশ্বের সামনে একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ হিসেবে গিয়ে এসেছেন। প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য শরীরই না সেটা ছাড়াও যেটা অনেক বেশি জরুরি তা হল অদম্য মানসিক শক্তি।
মেসিকে অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছিল যখন মেসি আর্জেন্টিনা ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে একটা নতুন জীবন শুরু করার উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মেসি যা কিছু করেছিলেন শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য। মেসির স্বপ্নকে পূরণ করতে।
এই কারণেই আমি অত বেশি পার্টি বা অন্যান্য মজার জিনিস গুলো করে বেড়াই না। এখনো পর্যন্ত তার সব থেকে বেশি আবেগপ্রবণ সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনার সেই ছোট তারকাটি বলেছিলেন, যে ঠিক কতটা কষ্ট সহ্য করেও তিনি তার পরিবারকে ছেড়ে, সমস্ত বন্ধুদেরকে ছেড়ে, সমস্ত ইনভাইটেশনকে না করে সে বিদেশ চলে এসেছিল একটা নতুন জীবন শুরু করতে।
এত ছোট বয়সেও তিনি এত বড় একটা ডিসিশন নিয়েছিল। কারণ একদম ছোটবেলা থেকেই তার লক্ষ্য সম্পূর্ণ পরিষ্কার ছিল। সে সব দিনই চেয়েছিল একজন মহান ফুটবলার হতে। আর অন্য কোনো কিছুই তার কাছে তার জীবনে কোনদিনই এর থেকে বেশি মূল্যবান ছিল না।
আরও পড়ুন: লিওনেল মেসি: দুনিয়া কাঁপানো ফুটবলার হয়ে উঠার সচিত্র গল্প
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড মেসির দখলে
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল করার মাধ্যমে ফুটবল বিশ্বকাপে ১১ গোল হলো লিওনেল মেসির। এর মাধ্যমে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড নিজের দখলে নিলেন তিনি। বিশ্বকাপে বাতিস্তুতার গোল ১০টি।
তাছাড়া ফুটবল বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২৫টি) খেলার রেকর্ডেও জার্মানির লোথার ম্যাথিউসের পাশে নাম লিখিয়েছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামার মধ্য দিয়ে মেসি ছাড়িয়ে গেছেন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসাকে। ক্লোসা বিশ্বকাপে খেলেছেন ২৪ ম্যাচ।
সাত ব্যালন ডি’অর জয়
লিওনেল মেসি তার ক্যারিয়ারে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন সাতবার। ব্যালন ডি’অর জেতার দিক থেকে মেসির চেয়ে এগিয়ে আর কেউ নেই।
সবচেয়ে বেশি গোল্ডেন শু জয়ী
ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বর্ষসেরা হওয়ার কীর্তি মেসির। এক মৌসুমে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটাও তার। ক্যারিয়ারে ছয়বার তিনি জিতেছেন এ ট্রফি। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯–এই তিন বছর টানা তিনটি গোল্ডেন শু জিতেছিলেন তিনি।
এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোল
শেষ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মেসি খেলে যাচ্ছেন সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়ে। তবে ২০১২ সালটাকে মেসির জন্য আলাদা করে রাখতেই হবে। সে বছর মেসির গোলের বাঁধ যেন ভেঙেই গিয়েছিল।
এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল
লিওনেল মেসি গত বছর বার্সেলোনা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে। তবে তার আগে মেসি ১৭ বছর বার্সেলোনার হয়ে যা করেছেন, তা হয়তো কেউ আর করে দেখাতে পারবে না। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তিনি করেছেন ৬৭২ গোল। এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় তার ধারেকাছে কেউ নেই।
আমরা তাকে নিয়ে অনেক কিছু বলেছি। খবরের কাগজের হেডলাইনে তাকে অবিশ্বাস্য, অতুলনীয়, অদ্বিতীয়, আশ্চর্য থেকে শুরু করে মেসি হলেন ফুটবলের ভগবান। এই অব্দিও বলা হয়েছে। এক্স বাসেলোনা কোচ পেপ গোর্ডেলিও একবার বলেছিলেন, “তার ব্যাপারে কিছু লিখে লাভ নেই। তাকে বর্ণনা করার চেষ্টা করাও বৃথা। শুধু তার খেলাটা দেখুন। আর উপভোগ করুন।”
আরও পড়ুন: বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মেক্সিকোর মুখোমুখি মেসির আর্জেন্টিনা