জীবনধারা
উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা বেশি হয়ে থাকে। প্রতিটি মানুষের নিত্য-নৈমিত্তিক কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে তার রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই পরিবর্তন কখনো এতটাই জটিল আকার ধারন করে যে, মানবদেহের ভেতরে ধমনীর প্রাচীরে দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত রক্তচাপের সৃষ্টি হয়। একটি স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা প্রতি পারদ চাপে ১২০/৮০ মিলিমিটারের মধ্যে থাকে। রক্তচাপকে এই মাত্রার মধ্যে রাখার জন্য কিছু কিছু খাবার ও পানীয়ের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস পরিত্যাগ করা জরুরি। চলুন, সেই করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
উচ্চ রক্তচাপে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
লবণযুক্ত খাবার
উচ্চ রক্তচাপে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভূমিকা হচ্ছে লবণের, যার প্রধান উপাদান সোডিয়াম। বেশিরভাগ চিপস, ক্র্যাকার এবং পপকর্ন সোডিয়ামে ভরপুর থাকে। ১-আউন্স প্লেইন পটেটো চিপসে সোডিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৫০ থেকে ২০০ মি.গ্রা. (মিলিগ্রাম)। একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ২,৩০০ মি.গ্রা. বা এক চামচের বেশি সোডিয়াম খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও যে লবণযুক্ত খাবারগুলো প্রায় খাওয়া হয় সেগুলো হলো- রুটি, পনির পিজা, স্যান্ডউইচ, প্রোসেস করা মাংস, স্যুপ, এবং টাকোস।
আরো পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
চিনিযুক্ত খাবার
রক্তচাপ বাড়ানোর পেছনে কোন কোন ক্ষেত্রে চিনিযুক্ত খাবার লবণের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। চিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়ায়। এছাড়া উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ যুক্ত খাবার রক্তচাপ বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। এধরনের খাবারের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি, বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত খাবার, পিনাট বাটার অন্যতম।
ট্রান্স বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার
একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য নির্ধারিত দৈনিক ক্যালোরির ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি ক্যালোরি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে আসা উচিত নয়। এধরনের খাবার এখন খুব বেশি দেখা যায় আর এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
মিষ্টি খাবারের মধ্যে চকোলেট, টফি, কেক-পেস্ট্রি, পুডিং, এবং বিস্কুটে অনেক স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। লাল মাংস যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষে মাংস, আর প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, বার্গার এবং কাবাবের মধ্যে এ ধরনের ফ্যাট প্রচুর পরিমাণে থাকে। রান্নার চর্বি যেমন মাখন, ঘি, হাসের চর্বি থেকেও এই ফ্যাট আসে। এছাড়া তেলের মধ্যে আছে নারকেল তেল এবং পাম তেল আর পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন ক্রিম, দুধ, দই এবং পনিরও এধরনের খাবারের অন্তর্ভূক্ত।
আরো পড়ুন: হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
সস এবং মশলাদার খাবার
যারা অতিরিক্ত মশলাদার খাবার পছন্দ করেন তাদেরকে সাবধান হতে হবে। অতিরিক্ত মশলা মানেই উচ্চ পরিমাণে চিনি বা সোডিয়ামের যোগান। অনেক সময় নোনতা স্বাদের না হওয়া সত্ত্বেও মশলাগুলোতে সোডিয়াম ভরপুর থাকতে পারে। বেশিরভাগ টিনজাত টমেটো সস ও কেচাপ, পাস্তা সস, টমেটোর রস, চিলি সস, ও সয়া সসে সোডিয়াম বেশি থাকে।
আচারযুক্ত খাবার
আচারযুক্ত খাবার লবণের একটি ভালো উৎস। আচার তৈরির প্রক্রিয়াটাই এমন যে, এখানে খাবার লবণের সাথে অন্যান্য স্বাদ বর্ধক উপাদান মিশিয়ে খাবার সংরক্ষণ করা হয়। এই কারণে আচারযুক্ত খাবারে প্রায়শই লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। তাছাড়া খাবার লবণ যে কোন খাবারকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং এর মাধ্যমে খাবারটি দীর্ঘ সময় ধরে খাবারের উপযুক্ত থাকে। যাদের প্রায় আচার খাওয়ার অভ্যেস তাদের উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেশি।
আরো পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
উচ্চ রক্তচাপে যে পানীয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি, সোডা এবং এনার্জি ড্রিংক্স শরীরে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। অনেকেরই সাত সকালে ক্যাফেইন নেয়ার অভ্যেস আছে। এ বিষয়টি তাদের খেয়াল রাখা উচিত যে ক্যাফেইন গ্রহণটি নিমেষেই আসক্তিতে পরিণত হতে পারে।
আর ইতোমধ্যে যারা কফির প্রতি আসক্ত তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এখনি সাবধান হতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের ঘটনাগুলো প্রথমে অস্থায়ী থাকে তারপর ধীরে ধীরে জটিল সমস্যার সৃষ্টি করবে। সারাদিনে একবার এক কাপ কফি তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে কফি দিয়ে দিন শুরুর পর দুপুরের খাবারের সাথে ক্যাফেইনযুক্ত সোডা এবং বিকেলে এনার্জি ড্রিংক নেয়া সব মিলিয়ে দিনটিতে বিপজ্জনক মাত্রার ক্যাফেইন সরবরাহ করতে পারে।
চিনিযুক্ত পানীয়
লেবুর শরবতে হালকা চিনি তেমন ক্ষতিকর নয়। এমনকি সপ্তাহে দু’একবার চিনি একটু বেশি দিয়ে কোন মিষ্টি শরবত পান করাটা সমস্যা করবে না। কিন্তু শরীরে চিনির এই প্রবেশটা নিয়মিত হতে থাকলে রক্তচাপের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এমনকি, অনেক চিনিযুক্ত পানীয়তে ক্যাফেইন থাকে, যা রক্তচাপকে অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়িয়ে তুলতে পারে। উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপযুক্ত সোডা এবং ফলের রস এই পানীয়ের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
আরো পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
দোকানের স্যাকারিন দেয়া ফলের জুসগুলো সাময়িকভাবে গলা ঠান্ডা করলেও তা সামগ্রিকভাবে শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। প্রতিদিন যে কোন কাজে বা খেলাধুলার সময় এগুলোর একটি করে পান করা শরীরে প্রচুর চিনির যোগান দেয়। ফলে বেশ স্বল্প হারে বাড়তে থাকে রক্তচাপ। এরকম মিষ্টি স্বাদের জুস বা কার্বনেটেড পানীয় দিনে ৩৫৫ মিলিলিটারের বেশি পান করা মানেই শরীরে রক্তচাপের ভারসাম্য নষ্ট করা।
অ্যালকোহল
অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন নিশ্চিত ভাবে রক্তচাপের মাত্রা ছাড়িয়ে দিতে পারে। যারা রক্তচাপ সহ অন্যান্য রোগের জন্য নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছেন তাদের শরীরের জন্য অ্যালকোহল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কারণ অ্যালকোহল ওষুধগুলোকে রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় হতে দেয় না। এভাবে একসময় ঔষধগুলো কার্যকারিতা হারায়।
সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো, ঔষধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরে থেকে যাওয়ার দরুণ ঔষধ খাওয়ার ফলে উল্টো হিতে বিপরীত ঘটে। এছাড়াও অনেক অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়তে চিনি এবং ক্যালোরির পরিমাণ এতটাই থাকে যে, তা অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার কারণ হয়ে দাড়ায়। এ সবকিছু একত্রে উচ্চ রক্তচাপের দিকে ধাবিত করে।
আরো পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
উচ্চ রক্তচাপের সময় যে অভ্যাসগুলো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে
অতিরিক্ত ওজন এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব
যারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভাবছেন না তাদের জন্য রক্তচাপ অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ নিয়ে আসতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর ওজন শুধু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণই করে না; পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যারও সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত শরীরচর্চা এরকমাত্র উপায় এই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার। একটি প্রাপ্তবয়স্ক দেহে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা মাঝারি ব্যায়ামের চাহিদা থাকে। অল্প সময়ের জন্য ম্যারাথন হাঁটা হৃদপিণ্ডের স্পন্দন দ্রুত করে এবং ফুসফুসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অক্সিজেন প্রবেশ করে।
ধূমপান
প্রতিটি সিগারেট ধূমপান শেষ করার পর কয়েক মিনিটের জন্য রক্তচাপ বাড়ায়। এভাবে ঘন ঘন ধূমপান রক্তচাপ বাড়ানোর বিরতিটাকে কমিয়ে এনে বিপদের কারণ হতে পারে। তাই বলে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ধূমপান মানে এই নয় যে সে সময়টাতে ফুসফুস আবার তার আগের সুস্থতায় ফিরে আসবে।
আরো পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
অল্প ধূমপানও ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে মারা না গেলেও জীবনের আয়ু তো কমেই; পাশাপাশি শেষ বয়সে বিধ্বস্ত ফুসফুস নিয়ে মৃত্যুর দিন গুণতে হয়। যারা কখনো ধূমপান ছাড়েন নি, তাদের চেয়ে যারা ধূমপান ত্যাগ করেন তারা বেশি দিন বাঁচতে পারেন।
দীর্ঘ সময় যাবত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকা
দুশ্চিন্তা শুধুমাত্র মানসিক সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর দৈহিক প্রভাবও বেশ ভয়াবহ। সবচেয়ে বড় ফলাফল হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। আর এটিই দেহের মধ্যে অনেক বিপজ্জনক রোগের ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারে। অনেকে দুশ্চিন্তার কারণে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অ্যালকোহল পান বা ধূমপানের দিকে অগ্রসর হন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সারা দেহ উচ্চ রক্তচাপের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। জীবনের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব, বদরাগ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাও দুশ্চিন্তার সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর কারণেও রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে মাত্রাতিরিক্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
শেষাংশ
উচ্চ রক্তচাপের সময় ক্ষতিকর খাবার ও পানীয়গুলো এড়িয়ে চললে রক্তচাপকে স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে । এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগকে ফলপ্রসু করতে প্রয়োজন জীবন ধারণ পদ্ধতি তথা কিছু উপরোক্ত অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা। এ কথা অনস্বীকার্য যে, রাতারাতি সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হওয়া সম্ভব নয়। এখানে প্রয়োজন দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও আত্মবিঃশ্বাস। যৌবন থেকে বার্ধক্যে পদার্পণের পরেও সুস্থ দেহ ও মন নিয়ে দিন যাপনে স্বাস্থ্যচর্চার কোন বিকল্প নেই।
আরো পড়ুন: ‘মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়’
১৫৫ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়লেন নাজমুন নাহার
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পতাকা হাতে ১৫৫ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়লেন নাজমুন নাহার।
বাংলাদেশের পতাকা হাতে ১৫৫তম দেশ হিসেবে তাজিকিস্তান সফর করেন তিনি। ২৯ মে ২০২২ এ নাজমুন নাহার তাজিকিস্তানে পামির মালভূমির 'পৃথিবীর ছাদে' বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ১৫৫ দেশ ভ্রমণের এই ইতিহাস গড়ছেন। তার সাথে ছিল বিশ্ব শান্তির বার্তা।
স্বপ্ন আর সাহস কখনো মানুষকে থামিয়ে রাখতে পারে না-তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন নাজমুন নাহার। লড়াকু সৈনিক নাজমুন লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবী ভ্রমণ করছেন গত ২১ বছর ধরে। পৃথিবী ভ্রমণের সময় বহুবার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও সকল বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলছেন নাজমুন।
নাজমুন নাহার ৬ অক্টোবর ২০২১ বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে বিশ্বভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকার দেশ সাওটোমে ও প্রিন্সিপ ভ্রমণের মাধ্যমে। তারপর ২০২২ এর শুরুর দিকে তিনি আবার বেরিয়ে পড়েন আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার নতুন দেশ সফরের জন্য। তারুণ্যের এই অগ্রপথিক নাজমুন নাহার এবার অভিযাত্রা করেছেন ইরাক, সান মারিনো, মরিশাস, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান পর্যন্ত। বেঙ্গল এয়ারলিফটের সিস্টার কনসার্ন বেঙ্গল ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস লিমিটেডের সৌজন্যে তিনি এই পাঁচটি দেশ ভ্রমণ করেন। ইতিপূর্বে তিনি প্যারাগন বাংলাদেশের সৌজন্যে আফ্রিকার পাঁচটি দেশ সফর করেছেন।
তার পুরো বিশ্বভ্রমণ অনেক অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর। এবারের পাঁচটি দেশ তিনি পুরোপুরি ভিন্ন রুটে ভ্রমণ করেছেন। উজবেকিস্থান ও তাজিকিস্তানের পৃথিবীখ্যাত সিল্করুট ভ্রমণ করেছেন নাজমুন। এছাড়া উজবেকিস্তানের তাশখন্দ, সমরখন্দ, বুখারা শহরের মতো বিখ্যাত ঐতিহাসিক শহরগুলো তিনি ভ্রমণ করেছেন।
তাজিকিস্তান ও আফগানিস্তান পামির করিডোরের পৃথিবীর ছাদের ভয়ঙ্কর এক হাজার কিলোমিটার টানা সড়ক পথে দুর্গম পথে বেয়ে ভ্রমণ করেছেন। এরই মধ্যে পামিরের রাজধানী খরোগসহ পৃথিবীর ছাদের মুরগাব, ইশকাশিম, ওয়াকাহান মত পামিরের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ করেন- যা পৃথিবীর ছাদের অংশজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে।
পড়ুন: নারী দিবসে ৩ সম্মাননা পেলেন বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি পর্যটক নাজমুন নাহার
শিশুদের ই-পাসপোর্টের নিয়ম: কীভাবে আপনার অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পাসপোর্ট করবেন
২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট বা ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্ভূক্ত হয়। সেই থেকে বাংলাদেশের সব বয়সের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ই-পাসপোর্টের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তর অভিন্ন আবেদন পদ্ধতির মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করে থাকে। তবে বয়স ও পেশার ভিত্তিতে সেই আবেদনের নিয়মে অল্প কিছু পার্থক্য আছে। নবজাতক থেকে অনুর্ধ্ব ৬ বছর এবং তারপর থেকে অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশুদের জন্য আবেদনের প্রয়োজনীয় নথিপত্রে সামান্য তারতম্য থাকে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ই-পাসপোর্ট আবেদনের এই নিয়ম নিয়েই আজকের নিবন্ধ।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা শিশুদের ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম
শিশুদের ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদপত্রের অনুলিপি
হাতে লেখা বা কম্পিউটারে মুদ্রণকৃত জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র এখন আর ব্যবহৃত হয় না। তাই বাচ্চাদের ই-পাসপোর্টের জন্য প্রথমে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করে নিতে হবে। জন্ম সনদটি অনলাইনে নিবন্ধিত কিনা তা বাংলাদেশের জাতীয় জন্ম ও মৃত্য নিবন্ধনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। এখানে জন্ম সনদপত্রে থাকা জন্ম নিবন্ধন সংখ্যা ও জন্ম তারিখ দেয়ার পর যদি জন্ম সনদটি প্রদর্শিত হয়, তবেই তা ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুন: এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে কি করবেন ? এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
বাবা-মার জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি
বাংলাদেশ পাসপোর্ট নীতি অনুযায়ী ৬ থেকে ২০ বছরের নাগরিকদের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি বাবা ও মায়ের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি প্রয়োজন। বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের নামে ইংরেজি বানানের সঙ্গে সন্তানের জন্ম সনদে বাবা বা মায়ের নামের বানান মিল থাকা আবশ্যক। সামান্য ভুল থাকলেও তা আগে থেকেই সংশোধন করে নিতে হবে।
থ্রি-আর ছবি (শুধুমাত্র অনুর্ধ্ব ৬ বছরের শিশুদের জন্য)
ছয় বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসে ছবি তোলার সময় জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই এদের ক্ষেত্রে ল্যাবে প্রিন্ট করা থ্রি-আর সাইজের ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডের এক কপি ছবি আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় সঙ্গে করে পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু শিশুর বয়স ছয় বছরের বেশি হলে কোনো ছবির দরকার নেই।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান
ই-পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান অনলাইনে সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের প্রাপ্তি বাতায়ন ই-চালান ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে। অতঃপর তা পূরণ করে নিকটস্থ যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে জমা দেয়া যাবে। তাছাড়া ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান নিয়ে থাকে। চালান নেয়ার পর ব্যাংক থেকে চালানের গ্রাহক কপিসহ একটি জমা রশিদ দেয়া হবে।
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদনপত্র ও শিডিউল কপি
ই-পাসপোর্ট আবেদন সম্পন্ন হলে একদম শেষে প্রিন্ট সামারি থেকে এক পৃষ্ঠার অনলাইন ই-পাসপোর্ট শিডিউল কপি পাওয়া যাবে। আর ডাউনলোড অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম-এ ক্লিক করলে তিন পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন কপি পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
শিশুদের ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইন আবেদন পদ্ধতি
শুরুতেই বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে যেয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, ইমেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। অতঃপর ড্যাশবোর্ডের ওপরের মেনু থেকে অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে ক্লিক করে প্রথমে আবেদনকারির জেলা ও থানা নির্বাচন করতে হবে। এরপরের ধাপেই ব্যক্তিগত তথ্যাদি দেয়ার পালা। এ অংশে শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রের অনুরূপ তথ্য দিতে হবে। এখানে পেশার ক্ষেত্রে আদার্স তথা অন্যান্য নির্বাচন করাটা উপযুক্ত।
১৮ বছরের নিচে যে কোনো বয়সের শিশুর জন্য শুধুমাত্র পাঁচ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট নির্বাচন করতে হবে।
ই-পাসপোর্ট আবেদনপত্র জমা
যাবতীয় নথিসহ আবেদনপত্রটি জমার জন্য চলে যেতে হবে থানার আওতাধীন পাসপোর্ট অফিসে। এ সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রগুলোর সঙ্গে সেগুলোর মূল কপিও সঙ্গে রাখতে হবে। শিশুর থ্রি-আর সাইজ ছবি আলাদা রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: অনলাইনে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে প্রয়োজনীয় পাঁচ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
অনুর্ধ্ব ছয় বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নথিসহ আবেদনপত্র জমা নিয়েই ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ দেয়া হবে। কারণ ছয় বছরের কম বয়সীদের বায়োমেট্রিক নেয়া হয় না। থ্রি-আর ছবিটিকেই ই-পাসপোর্টে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ছয় বছরের বেশি বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিকের জন্য সাক্ষাতকারের শিডিউল দেয়া হয়। বায়োমেট্রিক নেয়ার পর পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ দেয়া হয়।
ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি
বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি সমান। দেশের ভেতরে ই-পাসপোর্ট ফিয়ের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট থাকে। পাঁচ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য নিয়মিত/সাধারণ ডেলিভারি ফি চার হাজার ২৫ টাকা। এক্সপ্রেস সেবার জন্য ছয় হাজার ৩২৫ টাকা ও সুপার এক্সপ্রেস হলে আট হাজার ৬২৫ টাকা দিতে হয়।
শিশুদের ই-পাসপোর্ট করতে কত দিন লাগে
নিয়মিত/সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ডেলিভারি স্লিপ হাতে পাওয়ার দিন থেকে ১৫ অথবা ২১ কার্যদিবস। এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে এই সময়টি কমে আসে সাত অথবা ১০ কার্যদিবসে। আর সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে পাসপোর্ট হাতে আসতে সময় লাগে মাত্র দুই কার্যদিবস। তবে এই সুপার এক্সপ্রেস সুবিধাটি শুধুমাত্র আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ শহর
সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে অনাপত্তিপত্র অথবা পিআরএল (অবসরোত্তর ছুটি) সনদের মাধ্যমে নিয়মিত/সাধারণ ফিতে এক্সপ্রেস ডেলিভারি সেবা পাওয়া যায়।
পরিশেষে
সবশেষে বলতে হয় যে বর্তমানে অনলাইন পদ্ধতির দৌলতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশুদের ই-পাসপোর্ট নিয়ম খুব সহজ হয়ে গেছে। এছাড়া এখন ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কাগজপত্রের সত্যায়ন প্রয়োজন হয় না। যেহেতু তারা কোনো ধরনের শিক্ষাগত সার্টিফিকেট প্রাপ্তির আগেই এই সেবা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে, তাই ভবিষ্যতেও তাদের পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র জনিত কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ এসএসসি, এইচএসসি, টিন সার্টিফিকেট সব ক্ষেত্রে একই তথ্য দেয়ার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের কাজগুলোতে কোনো রকম ঝামেলা পোহাতে হবে না।
শনিবার ‘দ্য প্যাশন অব ড্রয়িং-২’ আয়োজন করবে গ্যালারি কসমস
রাজধানী ঢাকার বারিধারার গার্ডেন গ্যালারিতে শনিবার একটি বিশেষ আর্ট ইভেন্ট ‘দ্য প্যাশন অব ড্রয়িং-২’ এর আয়োজন করছে গ্যালারি কসমস।
গ্যালারি কসমসের নির্বাহী আর্টিস্টিক ম্যানেজার সৌরভ চৌধুরীর মতে, চিত্রাঙ্কনের সর্বজনীন ও আনন্দময় শৈল্পিক আনন্দ উদযাপনের উদ্দেশে এই অনুষ্ঠান।
সারাবিশ্বে মানুষের পরিচিতিমূলক কার্যক্রমের একটি হিসেবে চিত্রাঙ্কন চিরকাল শিল্পীর সঙ্গে থাকে।
আরও পড়ুন: 'ইনসাইড আউট’: শিশুদের জন্য গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী পেইন্টিং ও অরিগামি ওয়ার্কশপ
এই মনোমুগ্ধকর বর্ষায় চিত্রাঙ্কনের সার উদযাপন করতে ‘দ্য প্যাশন অব ড্রয়িং-২’ শীর্ষক আর্ট ইভেন্টের দ্বিতীয় সংস্করণের আয়োজন করছে গ্যালারি কসমস।
এবারের আসরে দেশের ছয়জন শীর্ষ ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী অংশ নেবেন। তারা হলেন-বীরেন সোম, ফরিদা জামান, আবদুস শাকুর শাহ, কনক চাঁপা চাকমা, অনুকুল মজুমদার ও আবদুল্লাহ আল বশীর।
আরও পড়ুন: কালিদাস কর্মকারের স্মরণে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আয়োজন
এই বিশিষ্ট শিল্পীরা চিত্রাঙ্কন সেশনে অংশ নেবেন এবং তাদের নিজ নিজ চিত্রকর্ম নিয়ে দর্শকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
একইসঙ্গে চিত্রকর্মগুলো দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করা হবে।
কক্সবাজারে শুরু হয়েছে মানবিক নীতি প্রদর্শনী
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি),বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং সুইজারল্যান্ডের লুসানের ফটো এলিসি মিউজিয়ামের সহযোগিতায় যৌথভাবে ‘মানবিক নীতি: এখানে এবং এখন’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি (আর্ট ক্লাব) আয়োজিত হয়।
বৃহস্পতিবার প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স মিস সুজান মুলার, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জনাব মো. শামসুদ দৌজা এবং কক্সবাজারে আইসিআরসির অফিস প্রধান জনাব মানিশ দাস।
মানবিক সংকটে মানুষ কীভাবে দুর্দশাগ্রস্তদের ব্যক্তিগত বা সামষ্টিকভাবে সহায়তা করতে পারে? ‘মানবিক নীতি: এখানে এবং এখন’ শীর্ষক সমকালীন এই শিল্প উপস্থাপনা ও প্রদর্শনীটি সেইসকল মানবিক ও ব্যক্তিগত আবেগ এবং অনুসন্ধানের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করে।
সযত্নে নির্বাচিত ভিডিও ও আলোকচিত্রের সমন্বয়ে এই প্রদর্শনীটি দৈনন্দিন জীবনে মানবিক নীতির গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও তাৎপর্য এবং স্থানীয় প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব সম্পর্কে দর্শকদের অনুপ্রাণিত করবে। তাছাড়া প্রদর্শনীটি মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতা- এই চারটি মানবিক নীতিবিষয়ক আলোচনা এবং মতামত প্রকাশের একটি স্থান ও সুযোগ তৈরি করবে।
আরও পড়ুন: বিএনপির বইমেলা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রদর্শনী শুরু
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স মিস সুজান মুলার বলেন, ‘মানবিক নীতিগুলো সুইজারল্যান্ডের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের পাঁচ দশকব্যাপী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। সুইজারল্যান্ড ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ও (কক্সবাজারের) স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পাঁচ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা প্রদান করেছে। মানবিক সহায়তা প্রদান, উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং এই সংকটের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন,‘দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকালীন সময়ে এই প্রদর্শনীটি বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের শক্তিশালী এবং বহুমাত্রিক সম্পর্কের একটি প্রধান ক্ষেত্রকে তুলে ধরেছে।’
কক্সবাজারে আইসিআরসির অফিস প্রধান জনাব মানিশ দাস বলেন, ‘আইসিআরসির কার্যক্রমের মূলে রয়েছে মানবিক নীতি। এগুলোই হলো ভিত্তি স্তম্ভ যা আইসিআরসিকে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর আস্থাভাজন হয়ে, তাদের মানবিক চাহিদাগুলিকে সর্বোত্তম উপায়ে বোঝার এবং সমাধান করার চেষ্টা করার জন্য পরিচালিত করে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি এই প্রদর্শনী মানবিক নীতির গুরুত্ব তুলে ধরে সেগুলোর সঙ্গে মানুষের একাত্মতা তৈরি করতে সহায়তা করবে’।
‘মানবিক নীতি: এখানে এবং এখন’- প্রদর্শনীতে আলোকচিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে শিল্পীরা তাদের নূতন, স্থানিক এবং সমসাময়িক দৃষ্টিকোণ থেকে মানবিক নীতিগুলোর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। প্রদর্শিত ছবিগুলোতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে আইসিআরসি এবং সুইজারল্যান্ডের ভূমিকা ও কার্যক্রমের প্রতিফলন ঘটেছে। অধিকন্তু, ১০ জন সুইস আলোকচিত্রির লেন্সের মধ্য দিয়ে দেখা দৈনন্দিন জীবনে মানবিক নীতিগুলোর প্রতিফলন ঘটেছে তাদের নির্মিত ১০টি মৌলিক শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে। এছাড়াও পুরস্কারপ্রাপ্ত ৬টি আলোকচিত্রও রয়েছে প্রদর্শনীতে।
মানবিক নীতি ও এর তাৎপর্য বোধে উদ্দীপ্ত হতে এই প্রদর্শনীটি দর্শকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (আর্ট ক্লাব) প্রদর্শনীটি ইংরেজি এবং বাংলা দুই ভাষাতে উপস্থাপন করা হবে। যা উপভোগ করার জন্য সকল দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। প্রদর্শনীটি ৯ জুন থেকে ১৮ জুন ২০২২, প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু
বাগেরহাটে খানজাহানের বসতবাড়ির ধ্বংসাবশেষের পাঁচ দিনব্যাপী প্রদর্শনী
কোন ধরনের আগুন কীভাবে নেভাবেন?
আগুনের ব্যবহারের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ। কিন্তু শক্তির এই উৎসটিই হতে পারে মানুষের প্রাণনাশের কারণ। এর ভয়াবহতার পরিধি অবলোকন করা যায় ইতিহাস জুড়ে ধ্বংস যজ্ঞগুলোর দিকে ফিরে তাকালে। তাছাড়া সভ্যাতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নিয়ন্ত্রণহীনতা, অসাবধানতা ও অপপ্রয়োগের ঘটনা। ফলশ্রুতিতে, বহু উপকারের এই শক্তির উৎসটির কবল থেকে বাঁচার জন্য বের করতে হচ্ছে নানা উপায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘন ঘন আগুন লাগার দুর্ঘটনাগুলোর কারণে আগুন নেভানোর উপায়গুলো জানা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন, এই দুর্ঘটনাগুলোর সম্ভাব্য কারণসহ জেনে নেই বিভিন্ন ধরণের আগুন নেভানোর উপায়সমূহ।
আগুনের উৎপত্তির সাধারণ কারণ সমূহ
পুড়ে ছাই বা কয়লা হওয়া জিনিস
কাঠ, বাঁশ, প্লাস্টিক, কাগজ, পোশাক, মোমবাতি ও আবর্জনার মত কঠিন দাহ্য বস্তুগুলো এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত। এগুলো থেকে সৃষ্ট আগুন খুব সাধারণ এবং প্রাথমিক বা ক্ষুদ্র পরিসরে এগুলো তেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয় না। খুব ছোটখাট ব্যাপার থেকে এই আগুনের সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে কয়লা বা ছাই হওয়ার জিনিসের সংস্পর্শে কোন দাহ্য বস্তু আসাও অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টির কারণ হতে পারে। এই ক্যাটাগরির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড হলো বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট আগুন।
মানুষের চলাচলের বাইরে বড় ডাস্টবিনে সৃষ্ট হওয়া আগুন ক্ষতির কারণ হয় না। অনেক সময় আপনাতেই নিভে যায় বা কেউ খুব সহজে নিভিয়ে দেয়। তবে এক জায়গায় বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকায় এখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে জ্বলতে থাকা আগুন পরবর্তীতে লেলিহান শিখার জন্ম দিতে পারে। বাসা-বাড়ির চুলা বা গ্রামাঞ্চলের মাটির চুলার আগুনের সঙ্গে অন্য কোন দাহ্য বস্তুর সংস্পর্শ থেকে ছড়ানো আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
আরও পড়ুন: এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে কি করবেন ? এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
তেল ও তেলজাত তরল
তেল থেকে সৃষ্ট আগুনের নেপথ্যে থাকে আলকাতরা, অ্যালকোহল, পেট্রোলিয়াম গ্রীস, পেইন্ট বা তেলজাত রং, পেট্রল, ও কেরোসিন। এগুলো থেকে সৃষ্ট আগুন যে কোনও জায়গায় লাগতে পারে। তবে গুদাম ঘরের মতো জায়গায় যেখানে একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য তরল থাকে এমন জায়গায় অধিকাংশ অগ্নিকান্ড ঘটে।
আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবনগুলোর রান্নাঘরে ব্যবহৃত তেলেরও কখনো কখনো মারাত্মক রূপ দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ রান্না করতে গিয়ে তেল চর্বি থেকে অঘটন ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রীস, লার্ড, অলিভ অয়েল, মাখন, পশুর চর্বি এবং উদ্ভিজ্জ চর্বি বেশ বিপজ্জনক। অনেক সময় এগুলোর কারণে রেস্তোরাঁগুলোতে চুলা, ওভেন বা গ্রিলে স্ফুলিঙ্গ থেকে ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
গ্যাসীয় পদার্থ
বিউটেন, গ্যাসোলিন, মিথেন এবং প্রোপেন গ্যাস কোন নগ্ন শিখা বা ইগনিশনের উৎসের সঙ্গে মিলিত হয়ে মারাত্মক আগুন সৃষ্টি করতে পারে। আগুন চারপাশ অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ে বিধায় এটি আগুন লাগার শীর্ষকারণগুলোর মধ্যে একটি।
আরও পড়ুন: ৮৫ ঘণ্টা পর নিভল চট্টগ্রামের কন্টেইনার ডিপোর আগুন
গৃহস্থালি কাজে চুলার গ্যাস-পাইপ লিক এবং সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগার ঘটনাগুলো বাংলাদেশে খুব দেখা যায়। এছাড়া ফ্যাক্টরিগুলোতে বিশাল সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনাও দুর্লভ নয়।
বৈদ্যুতিক গোলযোগ
পুরনো বা ক্ষত-বিক্ষত বৈদ্যুতিক তার, ঘর-বাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, পুরানো যন্ত্রপাতি জরাজীর্ণ সার্কিট ব্রেকার বক্স বা ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি, অতিরিক্ত চাপযুক্ত সার্জ প্রোটেক্টর প্রভৃতি এই ধরনের আগুন লাগার মূল কারণ।
ট্রান্সফরমার ও মোটর জনিত বিস্ফোরণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় এলাকাতেই দেখা যায়। ত্রুটিপূর্ণ ওয়্যারিং অনেক দিন ধরে রেখে দেয়ার দরুণ ছোট শিখা থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা
ধাতব পদার্থ
পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জির্কোনিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সোডিয়াম, টাইটেনিয়াম, ও লিথিয়ামের মতো ধাতুগুলো থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে এই আগুন তৈরির জন্য অতিরিক্ত উচ্চ মাত্রার তাপ প্রয়োজন। তাই এই দুর্ঘটনাগুলো সাধারণত পরীক্ষাগার এবং বড় ফ্যাক্টরিগুলোতে দেখা যায়। এগুলোর অধিকাংশই ক্ষারীয় ধাতু, যা বাতাস বা জলের সংস্পর্শে এলে আগুন ধরে যায়। ধাতব পদার্থগুলোর গুঁড়োও বেশ মারাত্মক আকারের লেলিহান অগ্নিশিখা সৃষ্টি করতে সক্ষম।
বিভিন্ন ধরনের আগুন নেভানোর উপায়
নিরবচ্ছিন্ন পানির প্রবাহ
পানি আগুনের তাপ সরবরাহের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো থেকে বের হওয়া পানির চাপ অনেক বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে জনসাধারণের জন্য যে বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত তা হলো, পানি শুধু পুড়ে ছাই হওয়া বা কয়লা হওয়া থেকে উদ্ভূত আগুন নেভাতেই বেশি কার্যকর। আগুন লাগার অন্য উৎসগুলোতে পানি তো কাজ দেয়ই না বরং উল্টো ক্ষয়-ক্ষতি আরও বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুন: চকবাজারে প্লাস্টিক কারখানায় আগুন
তেল জাতীয় উপাদান থেকে সৃষ্ট আগুনের ক্ষেত্রে পানি জ্বলন্ত উপাদানটিকে নেভানোর পরিবর্তে আরও ছড়িয়ে দেয়। বৈদ্যুতিক আগুন নেভানোর জন্য পানি ব্যবহার করা রীতিমত বিপজ্জনক, কারণ পানি বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সৃষ্ট আগুনে পানি দিলে ব্যক্তির নিজেরও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ অবস্থায় সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হওয়ার পরেও নিরাপদ দূরত্বে থেকে পানি দেয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে পানির ছিটা যেন শরীরের কোন অংশে না লাগে।
কখনো কখনো পানি নির্বাপক যন্ত্রগুলো আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলে আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এটি রান্নার তেলের আগুনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ধাতব পদার্থের আগুন নেভাতে কখনই পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। পানি কোন কোন ধাতুর সংস্পর্শে এলে আগুন ধরে যায়।
বস্তা বা ভারী কাপড়
ছাই বা কয়লা থেকে উদ্ভূত আগুন নেভানোর জন্য ভেজা বস্তা বা ভারি কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। বস্তা বা ভারি কাপড় দিয়ে বাড়ি দিয়ে আগুনের হলকা দূর করা যেতে পারে। এভাবে প্রাথমিকভাবে গরম বাতাস বন্ধ করা যায়।
আরও পড়ুন: সিলেটে হকার্স মার্কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে
সিলিন্ডার অগ্নিকাণ্ডে সিলিন্ডারের অগ্নিমুখে ভেজা কাঁথা ও কম্বল দিয়ে চাপ দিয়ে বা নব ঘুরিয়ে পানির জোর ঝাপটা দিতে হবে। তেলের আগুনেও ভেজা বস্তা বা কাঁথা কাজ দিতে পারে।
পেট্রল বা ডিজেলের মতো তেলের আগুন যদি ক্ষুদ্র পরিসরে হয়, তবে বস্তা বা কাঁথার মতো ভারি কাপড় দিয়ে আগুন ঢেকে দেয়া যেতে পারে।
বালু
কাঠ কয়লা, চুলার আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে শুকনো বালি ব্যবহার করা যেতে পারে। ধাতব পদার্থের আগুনে শুকনো বালি দিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বালুর ছিটা তেলের আগুন বশে আনতে সাহায্য করে। পেট্রল বা ডিজেল থেকে লাগা ক্ষুদ্র আগুনে বালির নিক্ষেপ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
আরও পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
কার্বন-ডাই-অক্সাইড
চাপযুক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্বাপক যন্ত্র তেল বা গ্যাস থেকে সৃষ্ট আগুনের ক্ষেত্রে দারুণ কাজ দেয়। কার্বন ডাই অক্সাইড বিদ্যুৎ অপরিবাহী বিধায় বৈদ্যুতিক আগুনের শিখা দমনে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রাসায়নিক পদার্থ থেকে উদ্ভূত আগুন প্রাথমিকভাবে পানির কুয়াশা তৈরি করে আগুন নেভানো যায়। তবে এক্ষেত্রে কার্বন ডাই-অক্সাইড-ই সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
শুষ্ক পাউডার
বৈদ্যুতিক আগুন নেভানোর জন্য শুকনো পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো মূলত মনো অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা এবিসিই শুষ্ক পাউডার। শুকনো পাউডার নির্বাপক যন্ত্রগুলো অক্সিজেন থেকে জ্বালানী আলাদা করে বা আগুনের তাপ উপাদানকে সরিয়ে দেয়। এই পাউডারগুলো একটি আদর্শ নির্বাপক।
গ্রাফাইট পাউডার, গুঁড়ো তামা এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড শুকনো পাউডারের শক্তিশালী এজেন্ট হিসাবে স্বীকৃত। শুষ্ক পাউডারের তাপ শোষণ প্রভাব সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত রাসায়নিক পদার্থের আগুন নেভানোর জন্য। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, এজেন্টগুলো যেন রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়ায় আগুন তৈরিতে সহায়ক না হয়।
আরও পড়ুন: সরিষাবাড়ী ইউএনও কার্যালয়ে আগুন, নথিপত্র পুড়ে ছাই
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার পর বৈদ্যুতিক গোলযোগের সৃষ্ট আগুনেও শুকনো পাউডার ব্যবহার করা যায়। গ্যাস থেকে উদ্ভূত আগুনের ক্ষেত্রেও একইভাবে এই পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাবানের ফেনা বা ফোম
কয়লা বা ছাই থেকে সৃষ্ট আগুন পানির পাশাপাশি সাবানের ফেনা বা ফোম দিয়ে নেভানো যায়। এটি শুধু আগুন নিভিয়েই দেয় না, সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে। তেল জাত পদার্থের আগুনে শুধু ফেনা ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে সাবানের ফেনা বা ফোম একটু দেরিতে কাজ করে।
তবে বৈদ্যুতিক আগুন নেভানোর জন্য এই ফেনা বা ফোম সঠিক নির্বাচন নয়। কেননা পানির মত এটিও বিদ্যুৎ পরিবাহী। ধাতব ও রাসায়নিক পদার্থ থেকে অগ্নিকান্ডের আগুনের ক্ষেত্রে ফোমের প্রভাব নেতিবাচক।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সতর্কতা
শেষাংশ
আগুন লাগা থেকে বাঁচতে এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলোর পেছনের কারণগুলো থেকে পরিত্রাণে পূর্ব সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। কেননা এই দুর্ঘটনাগুলোর আকস্মিকতায় সম্বিত ফিরে পাবার আগেই অনেক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। উপরোক্ত উপায়গুলো এই ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণটা বেশ কমিয়ে আনতে পারে। এ বিষয়গুলো আয়ত্ত্বে থাকলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সময়টুকুতে যথাসাধ্য ব্যবস্থা নেয়া যায়। এ অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হলেও যারা আগুন থেকে মোটামুটি নিরাপদ অবস্থানে আছেন তাদেরকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো সংগ্রহ করতে হবে। পাশাপাশি এগিয়ে যেতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে।
তবে মনে রাখতে হবে যে সব ধরণের আগুন নেভানোর পদ্ধতি এক নয়। একেক ধরেন আগুন নেভাতে একেক পদ্ধতি কার্যকর। ভুল উপায়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে আগুন নিভে যাওয়ার পরিবর্তে আরো বেড়ে যেতে পারে। আগুন কিভাবে নেভাবেন তা অনেকাংশে নির্ভর করে আগুনের উৎপত্তির কারণের উপর। তাই আগুন কিভাবে লেগেছে সেটা জেনে সতর্কতার সঙ্গে অগ্নি নির্বাপক পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি।
আরও পড়ুন: নাটোরে চলন্ত পিকনিক বাসে আগুন
এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে কি করবেন ? এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
অটোমেটেড টেলার মেশিন বা এটিএম বুথ আর্থিক লেনদেনের একটি নিরাপদ ও ঝামেলা বিহীন মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরেও প্রগতিশীল এই সেবাটি ব্যবহারের সময় পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাটি হলো এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়া। জরুরি ভিত্তিতে টাকা তোলার প্রয়োজন হলে এটিএম মেশিন থেকে কার্ডটি আর বের না হলে চরম বিড়ম্বনায় পড়ে যান গ্রাহকগণ। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার হলে এ অবস্থায় তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তাই এটিএম কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। চলুন সেই বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক।
এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়ার কারণ
পরপর তিনবার ভুল পিন নাম্বার প্রবেশ
গ্রাহকরা তাড়াহুড়ো বা বেখেয়ালে অনেক সময় দ্রুত টাকা তুলতে গিয়ে কার্ডের পিন নাম্বার ভুলে যান। আবার অসাবধানতায় ভুল বাটনে চাপ দিয়ে ভুল পিন নাম্বার প্রবেশ করিয়ে ফেলেন। এটা এখন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে যে, যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে পরপর তিন বার ভুল পিন নাম্বার বা পাসওয়ার্ড দিলে সিস্টেম সাময়িকভাবে ব্লক হয়ে যায় । আর এটিএম মেশিনের ক্ষেত্রে কার্ডটি আটকে যায়।
আরও পড়ুন: রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা
বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক জনিত জটিলতা
এই বিষয়টি একদমি সকলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। যন্ত্র মানেই সেখানে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকবে। কার্ড ব্যবহারের সময় এটিএম মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগে ব্যাঘাত ঘটার দরুণ নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। আর তখন গ্রাহকের দেয়া তথ্যগুলো ঠিকমত কাজ নাও করতে পারে। যার পরিণতিতে কার্ডটি মেশিনের ভেতরে থেকে যায়।
মেয়াদোত্তীর্ণ কার্ড ব্যবহার
ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডগুলো সাধারণত দুই বা তিন বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। মেয়াদ অতিক্রান্ত কার্ড এটিএম-এ বারবার প্রবেশ করালে এটিএম কার্ডটি আটকে দেয়। কিছু মাস্টার কার্ড আছে যেগুলো ব্যবহারের জন্য কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে স্বল্প মেয়াদ নেয়া হয়। যেমন বিভিন্ন ধরনের গিফ্ট কার্ডের ক্ষেত্রে অনেকেই ভুলে যান যে তার কার্ডের অল্প মেয়াদটি অতিক্রম হয়ে গেছে। এ ধরনের কার্ডের ক্ষেত্রে প্রায়ই কার্ড বের করা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
আরও পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
এটিএম সার্ভার সমস্যা
এটিএম কার্ড আটকে যাওয়া এমনকি সরাসরি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে সমস্যার ক্ষেত্রেও একটি সাধারণ কারণ সার্ভার সংক্রান্ত জটিলতা। সার্ভারের গতি স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে অনেক সময় কার্ড এটিএম মেশিনে আটকে যেতে পারে।
বাহ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কার্ড ব্যবহার
এটিএম কার্ডটি মুলত একটি আয়তাকার পাতলা প্লাস্টিক বা ধাতব টুকরো। সব সময় সঙ্গে থাকায় বিভিন্ন কারণে কার্ডটিতে হাল্কা ফাটল বা কোন এক প্রান্তের দিকে অল্প ভেঙে যেতে পারে। এমন অবস্থা হলে ব্যবহারের সময় কার্ড আটকে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সতর্কতা
অসমর্থিত কার্ড ব্যবহার
অধিকাংশ এটিএম মেশিন মাস্টার ও ভিসা কার্ড সাপোর্ট করে থাকে। এগুলো ব্যতীত ব্যাংকের অন্য কার্ড এটিএম মেশিন অসমর্থিত হতে পারে। এ ধরনের কার্ড ব্যবহারে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয়
লেনদেন বাতিলের চেষ্টা ও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা
প্রথমেই লেনদেন বাতিলের জন্য ক্যানসেল বাটনে প্রেস করতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পুরো কার্যকলাপটি সম্পন্ন হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকলে ছোট ছোট লেনদেনও ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে যায়। এসময় সাথে সাথেই বুথ থেকে বেরিয়ে না এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা উচিত। কেননা এমনও হতে পারে যে, সময় বেশি নিলেও টাকা ঠিকই বেরিয়ে আসছে।
আর লেনদেন যদি বাতিল হয়েই যায়, তাহলে সেই অতিরিক্ত সময় পর কার্ডটি বেরিয়ে আসতে পারে। তাই বুথ ত্যাগ করার পূর্বে আর্থিক লেনদেনের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নেয়া জরুরি।
আরও পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
ঘটনার খুঁটিনাটির রেকর্ড নেয়া
এ অবস্থায় অস্থির না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে সমস্যার খুটিনাটি লিখে নিতে হবে। কোন ব্যাংকের কার্ড, কার্ডের নাম্বার, মেয়াদ, কোন অ্যাকাউন্টের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে তার নাম্বার, ঘটনার সঠিক সময় এবং কার্ড আটকানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত কিভাবে কার্ডটি ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি মনে করে নোট করে ফেলতে হবে।
বুথ কর্মকর্তা ও কাস্টমার কেয়ারে জানানো
সব নোট করা হলে এবার ধীর স্থির ভাবে প্রথমে বুথের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সব জানাতে হবে। প্রায় ক্ষেত্রে কর্মকর্তা সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। সমস্যার সমাধান না হলে তিনি রেজিস্ট্রি খাতায় তা লিপিবদ্ধ করে নিবেন। কর্মকর্তা না থাকলে নিদেনপক্ষে গার্ডকে জানিয়ে রাখতে হবে।
পরিশেষে ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে পুরো ঘটনা জানাতে হবে। বিশেষ করে কার্ডের যাবতীয় লেনদেন বন্ধ করতে বলতে হবে। সমস্যাটি চূড়ান্তভাবে সমাধানের জন্য কাস্টমার কেয়ার থেকে সম্ভাব্য সব রকম নির্দেশনা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটি কাটানোর জন্য ঢাকার কাছাকাছি সেরা কয়েকটি রিসোর্ট
ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করা
ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের সাথে যোগাযোগ সম্ভ না হলে একমাত্র উপায় হলো ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় চলে যাওয়া। এখানে যে বুথে সমস্যা হয়েছে সেটি আর কার্ডটি যদি একই ব্যাংকের তাহলে কার্ডটি দ্রুত ফিরে পাওয়া যাবে। কিন্তু বুথটি অন্য ব্যাংকের হলে কার্ডটি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় কার্ড প্রতিস্থাপন অর্থাৎ যে ব্যাংকের কার্ড সেখানে যেয়ে নতুন কার্ড-এর আবেদন করাই একমাত্র উপায়।
নতুন কার্ড হাতে পেতে ব্যাংকভেদে ৭ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আবেদনের সময় সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র, বর্তমান ঠিকানার যে কোন ইউটিলিটি বিল ও দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি থাকতে হবে।
শেষাংশ
মুলত গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই কার্ড নির্ভর ব্যাংকিং সেবার অবতারণা হয়েছে। এটিএম কার্ডের উপযুক্ত ব্যবহারে এর শতভাগ সুবিধা আদায় করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
চলমান এই ট্রেন্ডটির সাথে মানিয়ে নিতে সাবধানতার সাথে এটিএম কার্ডটি বুথে কার্ড প্রবেশ করতে হবে এবং যে কারণগুলোতে কার্ড আটকে যেতে পারে সেগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। উপরোল্লিখিত পদক্ষেপগুলো নেয়া হলে এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে। এরপরেও এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে আতংকিত না হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।
ইমাম খোমেইনী ছিলেন বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের নেতা
ইমাম খোমেইনী (রহ.) ছিলেন বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি ইসলামী বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বের অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আশার আলো যুগিয়েছেন। তিনি চিন্তা ও সৃষ্টিশীলতার জগতে এতো বেশি বিষয়ের সমন্বয় ঘটিয়েছেন যা সত্যিই বিস্ময়কর। তিনি শুধু ইরানকে নয়, বরং গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিপ্লব আজ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য উন্নয়নের এক রোল মডেল।
শনিবার (০৫ জিুন) বিকালে ইসলামি বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেইনীর (রহ.) ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আ ন ম মেশকাত উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অবস্থিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের হেড অব মিশন জনাব আলী পিরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ইমাম খোমেইনী (রহ.) ছিলেন একাধারে একজন দার্শনিক, ফকীহ, রাজনৈতিক নেতা এবং আধ্যাত্মিক সাধক। তার ইরফানী ব্যক্তিত্ব অন্য সব গুণের চাইতে বেশি সমাজকে প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুন: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী আজ
ইমাম খোমেইনী এমন একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, যিনি রাজনীতিকে ধর্মের জন্য, ক্ষমতাকে জনগণের জন্য আর সমস্ত কিছুকে আল্লাহর জন্য চাইতেন। আল্লাহকে অন্বেষণ, খোদাভীতি আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, এই তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল ইমাম খোমেইনীর সাফল্যের রহস্যকথা এবং জনগণের মাঝে তার উচ্চ মর্যাদার কারণ। তিনি জনগণের হৃদয়ে শাসন করতেন।
ইমাম খোমেইনীর আদর্শ ও চিন্তাধারা ছিল তাওহীদি চিন্তাধারা ও হোসাইনী আন্দোলন থেকে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি। যে চিন্তাধারার উৎস ছিল অনন্ত অসীম মহান আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। ঠিক সেই সূর্যের ন্যায় যার কোনো অস্ত নেই। আর এই কারণেই ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও ইমামের আন্দোলনের জ্যোতি বিশ্বের সকল দেশ ও জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আর তার সত্যকামী ও গৌরবময় চিন্তাধারা পৃথিবীর দূরবর্তীতম প্রান্তেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী আজ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার।
রাজনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য সংগ্রাম করে বিদ্রোহী কবির খেতাব পাওয়া কাজী নজরুল ১৮৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
নজরুল তার জ্বালাময়ী কবিতার মাধ্যমে মানুষকে ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যায় ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে নজরুল ইন্সটিটিউট ও শিল্পকলা একাডেমি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
নজরুল ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, কাজী নজরুল বাকশক্তি হারানোর আগে ২১ বছরের কর্মজীবনে দুই হাজার ৬০০টি গান, ৬০০টি কবিতা, তিনটি উপন্যাস ও ৪৩টি প্রবন্ধ লেখেন।
পিতার মৃত্যুর পর পরিবারকে সহযোগিতা করতে কাজী নজরুল তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে চাকরি নেন এবং মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবেও কাজ করেন। ৯ বছর বয়সে চুরুলিয়াভিত্তিক একটি পেশাদার ‘লেটো’ দলে যোগ দেয়ার জন্য তাকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
দলের কাজ করার সময় তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হন। এক বছর পরে তিনি স্কুলে ফিরে আসেন এবং মাথারুন ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে আবারও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেড়ে দেন।
কিছুদিন পর পুলিশ কর্মকর্তা কাজী রফিজুল্লাহ তাকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করেন।
১৯১৭ সালে সৈনিক হিসাবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন কাজী নজরুল। এর কয়েক বছরের মধ্যে তিনি সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন। ১৯২১ সালে তাঁর কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হয়। এক বছর পরে তিনি ‘ধূমকেতু’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা শুরু করেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তিনি বেশ কয়েকবার ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের হাতে কারাবন্দি হন। কারাগারে থাকাকালীন কাজী নজরুল ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ রচনা করেন এবং তার সৃষ্টি পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে উৎসাহিত করে।
পড়ুন: কবি নজরুলের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী বুধবার
তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তবে তাঁর গান ও কবিতা সবচেয়ে প্রশংসিত সাহিত্য সৃষ্টি। তিনি বাংলা গজল সুরকে জনপ্রিয় করেছিলেন এবং লেখায় আরবি ও ফারসি শব্দের উদার ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত তিনি।
কাজী নজরুল ‘নজরুল গীতি’ নামে সংগীতে একটি নতুন ধারা তৈরি করেছেন। এটি চার হাজার গানের সংকলন যা তিনি লেখেন এবং সঙ্গীত তৈরি করেন।
১৯৪২ সালে কাজী নজরুল দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে তার কণ্ঠস্বর ও স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেন। পরে ভিয়েনার একটি মেডিকেল টিম তার অসুস্থতাকে পিকস ডিজিজ হিসেবে চিহ্নিত করে।
তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে কবির পরিবার বাংলাদেশে ভ্রমণ করেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশিষ্ট অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ১৯৭৪ সালে সম্মানসূচক পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি প্রদান করে। তিনি ১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
৭৭ বছর বয়সে বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির বর্ণাঢ্য জীবন এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদান তুলে ধরে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পড়ুন: ডিআরইউ’র ‘কবি কাজী নজরুল ইসলাম লাইব্রেরি’ উদ্বোধন
কবি নজরুলের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী বুধবার
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী বুধবার উদযাপন করা হবে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য সংগ্রাম করে বিদ্রোহী কবির খেতাব পাওয়া কাজী নজরুল ১৮৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
নজরুল তার জ্বালাময়ী কবিতার মাধ্যমে মানুষকে ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যায় ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।
দিবসটি উপলক্ষে নজরুল ইন্সটিটিউট ও শিল্পকলা একাডেমি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
আরও পড়ুন: ডিআরইউ’র ‘কবি কাজী নজরুল ইসলাম লাইব্রেরি’ উদ্বোধন
নজরুল ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, কাজী নজরুল বাকশক্তি হারানোর আগে ২১ বছরের কর্মজীবনে দুই হাজার ৬০০টি গান, ৬০০টি কবিতা, তিনটি উপন্যাস ও ৪৩টি প্রবন্ধ লেখেন।
পিতার মৃত্যুর পর পরিবারকে সহযোগিতা করতে কাজী নজরুল তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে চাকরি নেন এবং মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবেও কাজ করেন। ৯ বছর বয়সে চুরুলিয়াভিত্তিক একটি পেশাদার ‘লেটো’ দলে যোগ দেয়ার জন্য তাকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
দলের কাজ করার সময় তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হন। এক বছর পরে তিনি স্কুলে ফিরে আসেন এবং মাথারুন ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে আবারও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেড়ে দেন।
কিছুদিন পর পুলিশ কর্মকর্তা কাজী রফিজুল্লাহ তাকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করেন।
১৯১৭ সালে সৈনিক হিসাবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন কাজী নজরুল। এর কয়েক বছরের মধ্যে তিনি সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন। ১৯২১ সালে তাঁর কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হয়। এক বছর পরে তিনি ‘ধূমকেতু’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা শুরু করেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তিনি বেশ কয়েকবার ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের হাতে কারাবন্দি হন। কারাগারে থাকাকালীন কাজী নজরুল ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ রচনা করেন এবং তার সৃষ্টি পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে উৎসাহিত করে।
তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তবে তাঁর গান ও কবিতা সবচেয়ে প্রশংসিত সাহিত্য সৃষ্টি। তিনি বাংলা গজল সুরকে জনপ্রিয় করেছিলেন এবং লেখায় আরবি ও ফারসি শব্দের উদার ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত তিনি।
কাজী নজরুল ‘নজরুল গীতি’ নামে সংগীতে একটি নতুন ধারা তৈরি করেছেন। এটি চার হাজার গানের সংকলন যা তিনি লেখেন এবং সঙ্গীত তৈরি করেন।
আরও পড়ুন: শতকণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা
১৯৪২ সালে কাজী নজরুল দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে তার কণ্ঠস্বর ও স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেন। পরে ভিয়েনার একটি মেডিকেল টিম তার অসুস্থতাকে পিকস ডিজিজ হিসেবে চিহ্নিত করে।
তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে কবির পরিবার বাংলাদেশে ভ্রমণ করেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশিষ্ট অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ১৯৭৪ সালে সম্মানসূচক পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি প্রদান করে। তিনি ১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
৭৭ বছর বয়সে বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির বর্ণাঢ্য জীবন এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদান তুলে ধরে পৃথক বাণী দিয়েছেন।