জীবনধারা
পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
নতুন বছরে উষ্ণ এপ্রিলের অন্দরমহলে হালকা ঝড়ো হাওয়ায় আয়োজন চলছে চৈত্র সংক্রান্তির; রূপরেখায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৯। ১৪ এপ্রিল তারিখটি বাঙালিদের বিশেষ করে বাংলাদেশের উৎসব প্রিয় বাঙালিদের জন্য একটি আবেগের বিষয়। প্রকৃতির দেখাদেখি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নতুন করে বছর শুরুর উন্মাদনার আরেক নাম পহেলা বৈশাখ। শুধু ঝড় এলো বলে জীবনের বিপণীগুলো গুটিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌছা নয়, বাঙালির জীবন ও জীবিকার হিসেব-নিকেষ জড়িয়ে আছে গ্রীষ্মের এই প্রথম দিনটির নেপথ্যে। বেশ কয়েক শতাব্দি লেগেছে এই প্রথার ইতিহাস সমৃদ্ধ হতে। চলুন, নতুন করে আবারো হয়ে যাক বাংলা নববর্ষ কড়চা।
বাংলা নববর্ষের সূচনালগ্ন
বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তনের খোঁজে ফিরে যেতে হবে অনেক অনেক আগে অবাংলা অধ্যূষিত এলাকায়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে প্রাচীন ভারতের রাজা বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে হিন্দু বিক্রমী পঞ্জিকা প্রণয়ন করা হয়েছিলো। এই পঞ্জি অনুসারে ভারতের পূর্বাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও নেপালের বিভিন্ন অংশে বসবাসরত গ্রামীণ বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে নিছক একটি ঋতু উৎসব হিসেবে প্রচলিত ছিলো পহেলা বৈশাখ।
তবে তার আমেজ বাংলা অব্দি পৌছতে চলে এসেছিলো ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ। ৭ম শতকে বাংলা বর্ষের প্রমাণ সময়ে বেশ পরিবর্তন এনে বাংলার বুকে বাংলা দিনপঞ্জির উদ্ভব ঘটান বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতি গৌড়েশ্বর মহারাজাধিরাজ শশাঙ্ক মহাদেব।
পড়ুন: দুই বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত ঢাবি
বাংলা পঞ্জিকা ও বাংলা নববর্ষ
ভারতবর্ষে মুঘল শাসনামলে আরবী হিজরী পঞ্জিকা অনুযায়ী কৃষি পণ্যের খাজনা আদায়ের কাজ করা হতো। কিন্তু এই বর্ষপঞ্জি কৃষিকাজের জন্য উপযোগী ছিল না, কারণ চন্দ্র বছরের ৩১ বছর সৌর বছরের ৩০ বছরের সমান। কৃষিকাজ সৌর বছরের হিসাবের ওপর নির্ভর করা সত্ত্বেও চন্দ্র বছরের হিসাবেই কৃষকদের রাজস্ব প্রদানে বাধ্য করা হতো। তাছাড়া চন্দ্র বছরের ৩৫৪ দিন আর সৌর বছর ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনের মধ্যে ১১ বা ১২ দিনের ব্যবধান। ফলে রাজস্ব আদায় সহ অন্যান্য কাজকর্মে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতো। এমতাবস্থায় ১৫৮৫ সালের ১০ কিংবা ১১ মার্চ-এ মুঘল সম্রাট আকবর এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে প্রবর্তন করেন প্রাথমিক বাংলা সন তারিখ-এ-এলাহী। এই গণনা পদ্ধতির হিসেব কার্যকর হয়েছিলো সম্রাট আকবরের সিংহাসনের অধিষ্ঠিত হওয়া সময় অর্থাৎ ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। তিনি একটি কর্মপোযোগী, বৈজ্ঞানিক, ও সার্বজনীন বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের লক্ষ্যে সে সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমীর ফতুল্লাহ সিরাজিকে নতুন বর্ষপঞ্জি তৈরির নির্দেশ দেন। এভাবে রাজস্ব আদায়ের সংস্কারের পটভূমিতে জন্ম নেয় আধুনিক বাংলা সন। প্রথমে ফসলি সন নামে প্রকাশ পেলেও, পরে তা বহুলভাবে পরিচিতি পায় "বঙ্গাব্দ" বা বাংলা বর্ষ হিসেবে।
মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু
পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়ি বান্দরবান রাঙ্গামাটির মারমা সম্প্রদায় অত্যন্ত আনন্দ-উল্লাসে সাংগ্রাই উৎসব পালন করছে। পুরনো বছরের বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে মারমারা সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকে সুপ্রাচীন কাল থেকে।
মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সাংগ্রাই উৎসবের উদ্বোধন করেন শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পরে মারমা উন্নয়ন সংসদ ও মারমা যুব কল্যাণ সংসদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পানখাইয়া পাড়ায় এসে শেষ হয়।
আরও পড়ুন: নদীতে ফুল উৎসর্গের মধ্যদিয়ে পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসব শুরু
এসময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশিরুল হক ভূঁইয়া, সেনা বাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের জিটুআই মেজর জাহিদ হাসান, পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী ও পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হাজারো নারী-পুরুষের অংশগ্রহনে মারমা নৃগোষ্ঠীর মানুষের বর্ণিল পোষাকে বৈচিত্র্য ও বর্ণাঢ্যতা ছিল দেখার মতো। এরপর মারমাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যকলা পরিবেশিত হয়।
পরে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন মারমাদের ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ৫ দিনব্যাপী বৈসাবি মেলা আয়োজন
এবারও হচ্ছে না চট্টগ্রামের শত বছরের জব্বারের বলি খেলা
এবছরও হচ্ছে না চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা ও তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর অনুষ্ঠিত হয়নি শত বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এ বলিখেলা। তবে এবার করোনা নয়, ঐতিহাসিক লালদীঘির মাঠটি সংস্কারের পর উদ্বোধন ও উন্মুক্ত না করায় এবার বলিখেলা হবে না বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হল আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: রমজানে বাংলা নববর্ষ কিভাবে উদযাপন করবেন? কোথায় ঘুরতে যাবেন?
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ১১০ বছর ধরে এই বলীখেলা লালদীঘি মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। তবে এবার সংস্কার কাজ শেষে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা মাঠটি এখনও উন্মুক্ত করা হয়নি। তাই এ বছরও জব্বারের বলি খেলা অনুষ্ঠিত হবে না।
আয়োজকরা এসময় বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পরিচিত আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও মেলাসহ চট্টগ্রামের সকল ধরনের অনুষ্ঠান পুনরায় ফিরে পেতে লালদীঘির মাঠ দ্রুত উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান।
রমজানে বাংলা নববর্ষ কিভাবে উদযাপন করবেন? কোথায় ঘুরতে যাবেন?
গত বছরের মত আবারও একই সময়ে হাজির হলো রমজানে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের উৎসবমুখর মৌসুম। তবে এবার আর লকডাউনের ভয় নেই। মাহেন্দ্রক্ষণটি বৃহস্পতিবার হওয়াতে একসঙ্গে টানা তিনদিনের ছুটি কাটাতে অনেকেই সময়টাকে স্মরণীয় করে রাখার পরিকল্পনা করছেন। অবশ্য রোযা মুখে ছুটি কাটানো অন্য দিনগুলোর থেকে একটু আলাদাই হবে। নিদেনপক্ষে, যে কোন সময় হুট করে কিছু খেতে চাইলেই খেয়ে ফেলা যাবে না। কিন্তু দিন শেষে ইফতারে জম্পেশ খাবার ও আড্ডা ভুলিয়ে দিতে পারে সারাদিনের ক্লান্তিকে। চলুন, রোযার দিনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেয়ার কিছু উপায় জেনে নেয়া যাক।
ইফতারে বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী খাবার
ইফতার মানেই দিনের শেষে বাহারি খাবারের সমাহার। আর তার সঙ্গে বাংলা নববর্ষ যুক্ত হয়ে পুরো আনন্দটাকে রীতিমত এক মহোৎসবে রূপ দিয়েছে। একদিকে ইফতারের খেজুর সহ বিভিন্ন ধরনের ফলমুল, নানা পদের শরবতের সঙ্গে পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ছোলা-মুড়ি, জিলাপি। অন্যদিকে পহেলা বৈশাখের মিষ্টান্ন ভান্ডার। এ দুয়ে মিলে এক নতুন মাত্রা যোগ করে ভোজন রসিক বাঙালির ঐতিহ্যে। নববর্ষের সঙ্গে একদম অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক না থাকলেও যুগ যুগ ধরে চলে আসা সর্ষে ইলিশ দারুণ ভাবে মানিয়ে যেতে পারে ইফতারের দ্বিতীয় পর্বে।
রোযা মুখে দুপুরের পর থেকে শুরু হয়ে যায় রকমারি খাবারের আয়োজন। সেখানে নতুন নতুন রেসিপিতে মেলবন্ধন গড়তে পারে ইফতার ও নববর্ষের খাবার আইটেমের।
পরিবেশনের মুহুর্তে দারুণ সংযোজন হতে পারে নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী মুরালি, খৈ, বাতাসা, খাগড়াই, কদমা ও কালিজিরা ছিটানো হালকা গেরুয়া রঙের মচমচে নিমকি। হরেক রকমের নাড়ুর মধ্যে বাঙালির ঘরে ঘরে প্রচলিত আছে চিনার নাড়ু, তিলের নাড়ু, ঢ্যাপের নাড়ু, চিড়ার নাড়ু, ও নারকেলের নাড়। সেই পরিবেশনে শোভাবর্ধন করতে পারে পহেলা বৈশাখের নামকরা মিষ্টান্নগুলো। এগুলোর মধ্যে আমিত্তি, সরভাজা, হাওয়াই মিঠাই, সন্দেশ, রসে টইটম্বুর ধবধবে সাদা বড় রাজভোগ, আর খেজুর গুড়ের পায়েস পরিপূর্ণ করতে পারে বাংলা বর্ষবরণকে।
আরও পড়ুন: বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
ফুল ও পশু-পাখির প্রতীতি হাতে হাজারো মানুষের কলতান; আবহ সঙ্গীতে কালবৈশাখী ও শ্রেষ্ঠাংশে চৈত্র সংক্রান্তি। এভাবেই মঙ্গল শোভাযাত্রা শিরোনামে বাংলার সরণীকে রঙিন করে স্বাগতম জানানো হয় নববর্ষকে। সহস্র পদব্রজের প্রতিধ্বনিতে অনুরণিত হতে থাকে ধর্ম ও বর্ণের বৃত্ত ভাঙার শব্দ। প্রতিটি পাড়া থেকে শহুরে রাজপথ; ধুলোয় ধূসরিত বাঙালির গন্ড থেকে বাংলা সংস্কৃতি; মিলে মিশে একাকার হয় এক মঞ্চে। এরই চিত্রপট জুড়ে থাকে তিন যুগের পুরোনো এই আনন্দ মিছিলের ইতিহাসের কথা। বাঙালি ঐতিহ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের পর্বগুলো নিয়েই আজকের ফিচার।
মঙ্গল শোভাযাত্রা কি এবং কেন
প্রত্যেক বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেয়ার মহোৎসব এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এর আয়োজনে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ। এই শোভাযাত্রার বিস্তৃতি ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ, রমনা ও এর আশেপাশের এলাকা নিয়ে।
বৈশাখের প্রথম দিনে এই আনন্দ মিছিলটি নিমেষে পরিণত হয় বাংলার সর্বস্তরের ও বিভিন্ন বয়সের মানুষের মহা সম্মেলনে। উৎসবের সব থেকে চোখ জুড়ানো বিষয়টি হচ্ছে বিভিন্ন ফুল, পশু-পাখি ও রূপকথার চরিত্রের রঙ-বেরঙের শিল্পকর্ম।
নিছক আনন্দ মিছিল ছাড়াও মঙ্গল শোভাযাত্রার নেপথ্যে রয়েছে নতুন বছরে সকল অপশক্তির অবসানপূর্বক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যতার প্রত্যয়।
পড়ুন: পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার
নদীতে ফুল উৎসর্গের মধ্যদিয়ে পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসব শুরু
পুরনো বছরকে বিদায় ও বাংলা নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু তথা বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব ‘বৈসাবি’কে স্বাগত জানিয়ে খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
৩ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসব শুরু আজ
করোনার কারণে দুই বছরের মলীন উদযাপনের পর মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নববর্ষ উৎসব ‘বৈসাবি’।
'বৈসাবি' শব্দটি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈশুক, মারমাদের সাংগ্রাই এবং চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু উৎসবের বাংলা সংক্ষিপ্ত রূপের সংমিশ্রণ।
দুই জেলার চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সদস্যরা তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বিজু উৎসবের প্রথম দিন 'ফুল বিজু'তে চাঙ্গি নদী ও বিভিন্ন খালে ফুল বিসর্জন করেন।
ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে যুবতী ও শিশুরা সকালে নদীতে ফুল ডুবিয়ে মা গঙ্গার কাছে আশীর্বাদ কামনা করেছে। এসময় করোনা এবং আগের বছরের সমস্ত হতাশা ও দুঃখের দ্রুত অবসানের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
প্রতি বছর, রাঙামাটিতে বসবাসকারী ১৩টির মতো জাতিগত সম্প্রদায় বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু, জল উৎসব এবং বাংলা নববর্ষের মতো উৎসব উদযাপন করে।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ৫ দিনব্যাপী বৈসাবি মেলা আয়োজন
উৎসবের আগে রাঙামাটিতে ৫ দিনব্যাপী মেলা শুরু হয় ৫ এপ্রিল থেকে, যেখানে বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
১৩ এপ্রিল, 'মুল বিজু', 'বৈশু' বা 'বিশু' নামে পরিচিত উৎসবের দ্বিতীয় দিন। উৎসবের মূল আকর্ষণ হল 'পাচন' নামে একটি দেশীয় খাবার যা প্রতিটি বাড়িতে রান্না করা হয়।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের দিন ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হবে মারমা সম্প্রদায়ের ‘জলকেলি’ নামে তিন দিনব্যাপী পানি নিক্ষেপ উৎসব।
জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নে এবারও আয়োজন করা হয়েছে জমকালো জলকেলি উৎসব।
আরও পড়ুন: বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার পেলেন ড. আতিউর রহমান
ক্রিকেট এবং রাজনীতির বাইরে ইমরান খানের বর্ণীল জীবন
শুধু পাকিস্তানেই নয়, গোটা ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনন্য নাম ইমরান খান। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় এখনো পাকিস্তানকে স্বতন্ত্রভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে এখনো তাঁর কৃতিত্ব লিপিবদ্ধ আছে আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) ক্রিকেট হল অফ ফেম-এ। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইস্তফা দিয়ে তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নেন নিজেকে। পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলনেতা থেকে নিজেকে পুরো বদলে ফেলে পরিণত করেছেন একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ-এ। ২০১৮ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে হেরে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে অপসারিত হন। এর বাইরে থাকা ব্যক্তি ইমরানের ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে আজকের ফিচার।
ক্রিকেটার ইমরান খান-এর প্রাথমিক জীবন
খান ১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজী এবং মা শওকত খানম। তাদের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে ইমরান দ্বিতীয় ও একমাত্র পুত্র। বড় বোন রুবিনা খানম এবং ছোট তিন বোন আলিমা খানম, উজমা খানব ও রানি খানম। বাবা-মা দুজনেই প্যাশতোন বংশোদ্ভূত। বাবার দিক থেকে ইমরান ১৬ শতকের সুলতান শের শাহ সুরির প্রধান সেনাপতি ও পাঞ্জাবের তৎকালীন গভর্নর হাইবত খান নিয়াজির বংশধর। অন্যদিকে মায়ের দিক থেকে তিনি সুফি, যোদ্ধা, কবি ও প্যাশতোন বর্ণমালার উদ্ভাবক পীর রোশানের বংশধর।
তাঁর চাচাতো ভাই জাভেদ বুরকি এবং মজিদ খান ক্রিকেটার ছিলেন। শান্ত ও লাজুক ছেলে ইমরান খান বেড়ে উঠেছেন সচ্ছল ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে।
বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার পেলেন ড. আতিউর রহমান
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.আতিউর রহমান বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২১ পেয়েছেন।
রবিবার এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক নুরুন্নাহার খানম।
আতিউর রহমান বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির স্বাতন্ত্র্য ও আভিজাত্যের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রেখেছেন। বাঙালির নান্দনিক চর্চাকেও তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ ব্যক্তি
ড. আতিউর বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ শুধু একজন লেখকই নন, একজন মহান অর্থনীতিবিদও। তিনি কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের কথা অনবরত বলেছেন।
তিনি সমাজের বঞ্চিত মানুষকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, আত্মনির্ভরশীলতার পথ খুঁজেছেন। তাই তার আর্থ-সামাজিক চিন্তাধারাকে আরও তুলে ধরতে হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন: বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার ও ফেলোশিপ প্রদান
বাংলা একাডেমির ‘গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার’ ঘোষণা
‘নীরব ঘাতক স্লিপ এপনিয়া’
ঘুমের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াকে বলা হয় স্লিপ এপনিয়া। চিকিৎসকেরা মনে করেন, এ রোগ মানুষের জন্য একটি নীরব ঘাতক। এই রোগে ঘুমের মধ্যে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া’ বিষয়ক শীর্ষক সেন্ট্রাল সেমিনারে চিকিৎসকেরা এ কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের মিলনায়তনে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি এর আয়োজন করে।
সেমিনারে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ২ ভাগ মহিলা থেকে ৪ ভাগ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে শহুরে জনসংখ্যার শতকরা পুরুষ ৪ দশমিক ৪৯ ভাগ ও মহিলারা ২ দশমিক ১৪ ভাগ আক্রান্ত।সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যাদের নাক ডাকার সমস্যা, যাদের ঠিক মত ঘুম হয় না, যারা শরীর স্থূলাকার, তারা এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। ক্ষেত্রে বিশেষে কোন কোন রোগীর সার্জারির প্রয়োজন হয়। স্লিপ এপনিয়া রোগ সম্পর্কে মানুষ জানে না। তাদের এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা হয়। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন এ উপাচার্য।
আরও পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
এছাড়াও সেমিনারে স্পিকার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, স্লিপ এপনিয়া সারা বিশ্বের একটি অবহেলিত ঘাতক ব্যাধি। তবে এখনও স্লিপ এপনিয়ায় শতকরা ৯০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার আওতার বাইরে। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন রোগের চিকিৎসা রয়েছে। আমাদের দেশে এই রোগ সম্পর্কে চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের এখানে দুটি স্লিপ ল্যাব রয়েছে। গত পাঁচ বছর এখান থেকে আমরা স্লিপ এপনিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি।চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, স্লিপ এপনিয়ার সচেতনার লক্ষে প্রত্যেক চিকিৎসককে সচেতন হতে হবে। সচেতনার জন্য প্রত্যেক চিকিৎসকের উচিত রোগীর হিস্ট্রির নিতে হবে। কম করে হলেও মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড সময় বেশি ব্যয় করে চিকিৎসকদের উচিত রোগীর ঘুমের হিস্ট্রি নেয়া। এ রোগের ফলে মানুষের রেসপিরটারি, স্ট্রোক, হার্ট এটাক কার্ডিয়াক ফেলিউরের মত জটিল রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন। সেমিনারে স্পিকার হিসেবে আরও বক্তব্য দেন নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার । সেমিনারে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলামের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। সেমিনারে বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক ও চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার
‘মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্লান্টের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’