লাইফস্টাইল
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ: কোথা থেকে এলো বাংলা ভাষা
বাংলাদেশ সহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসাম রাজ্যের বারাক উপত্যকার রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সহ ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ কোটি বাঙালির এই মুখের ভাষার শুরুটা খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরেরও আরো পেছনে। মহিমান্বিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের এই মাসে চলুন জেনে নেয়া যাক অতি প্রাচীন বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি
বাংলা ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রে। সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তির কিংবদন্তি থাকলেও বাংলা ভাষাবিদরা বিশ্বাস করেন, বাংলা মাগধী প্রাকৃত এবং পালির মতো ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে এসেছে।
ইন্দো-আর্য হল ইন্দো-ইরানীয় ভাষা উপবিভাগের একটি প্রধান শাখা, যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রের পূর্বাঞ্চলীয় ধরন। প্রখ্যাত ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জির মতে, বৈদিক এবং সংস্কৃত উপভাষাগুলোকে প্রাচীন ইন্দো-আর্য যুগের প্রতিনিধি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষাগুলোর মধ্যে আছে পালিসহ প্রাকৃতের বিভিন্ন রূপ, যেগুলো পাওয়া যায় সম্রাট অশোক এবং থেরাবাদ বৌদ্ধ কাননের শিলালিপিতে।
আরো পড়ুন: বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
প্রথম সহস্রাব্দে বাংলা যখন মগধ রাজ্যের অংশ ছিল, তখন মধ্য ইন্দো-আর্য উপভাষাগুলোর বেশ প্রভাব ছিলো বাংলায়। এই উপভাষাগুলো মাগধী প্রাকৃত নামে পরিচিত আর এটিই ছিলো আধুনিক বাংলা, বিহার, ও আসামের লোকেদের কথ্য ভাষা। এই ভাষারই বির্বতিত রূপ অর্ধ-মাগধী প্রাকৃত, যেখান থেকে প্রথম সহস্রাব্দের শেষের দিকে উদ্ভব হয় অপভ্রংশের। অতঃপর কালক্রমে এই অপভ্রংশ থেকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে জন্ম হয় বাংলা ভাষার।
বাংলা ভাষার বিবর্তন
বাংলা ভাষার বিবর্তনের তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে; পুরাতন, মধ্য এবং আধুনিক বাংলা।
পুরাতন বাংলা ছিল ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার পুরোহিত এবং পণ্ডিতদের সাহিত্যকর্মের ভাষা। এই সময়ের সাহিত্যের খুব কম চিহ্নই এখন অবশিষ্ট রয়েছে। সবচেয়ে প্রাচীনতম নিদর্শনের মধ্যে একমাত্র চর্যাপদ পাওয়া যায়। এটি বৌদ্ধধর্মের উপর ভিত্তি করে কবিতার একটি সংকলন, যা অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ কেন জরুরি?
চতুর্দশ শতকে বাংলায় শুরু হয় মুসলমানদের সালতানাত। সালতানাত বাংলাকে এই অঞ্চলের সরকারী দরবারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এই ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বাংলার স্থানীয় ভাষায় পরিণত হয় বাংলা।
ষোড়শ শতকে মুঘলরা বাংলা দখল করলে বাংলা ভাষার সাথে যোগসাজশ ঘটে ফার্সি ভাষার। বর্তমান বাংলা ভাষার আধুনিক রূপটি পাওয়া যায় ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের সময় বাংলার নদীয়া অঞ্চলে কথিত উপভাষায়। এই ভাষাটির দুটি ভাগ; শুদ্ধ এবং চলিত। এগুলোর ভিত্তি গড়েছে প্রধানত মাগধী প্রাকৃত এবং পালিসহ তুর্কি, পর্তুগিজ, ফার্সি ও ইংরেজি।
১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষা করার দাবিতে বাংলা ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে লালন করে। ফলে ১৯৭১ এ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
আরো পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
বাংলার উপভাষা
কথ্য বাংলায় আঞ্চলিক ভিন্নতার রেশ ধরে গঠিত হয় উপভাষা। ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জি পূর্ব মাগধী ভাষার উপভাষাগুলোকে চারটি গ্রুপে বিভক্ত করেছেন; রাঢ়ি, বঙ্গিয়া, কামরূপী এবং বরেন্দ্রী। দক্ষিণ-পশ্চিমের রাড়ী বা নদীয়া অঞ্চলের উপভাষা আধুনিক প্রমিত কথ্য বাংলার ভিত্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগের অনেকাংশে প্রচলিত উপভাষায় পশ্চিমবঙ্গের বচন ব্যবহৃত হয়।
বাংলার কিছু ধরন চাটগাইয়া এবং চাকমার স্বরের সাথে বিবর্তিত। রংপুরী, খরিয়া থার, এবং মাল পাহাড়িয়া পশ্চিমী বাংলা উপভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হলেও আলাদা ভাষা হিসাবে ধরা হয়। একইভাবে উত্তর বাংলার উপভাষার সাথে মিল থাকলেও হাজং একটি পৃথক ভাষা।
১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার প্রমিতকরণের সময় বাংলার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল ব্রিটিশ অধীন কলকাতা শহরে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উভয় ক্ষেত্রেই যেটি প্রমিত রূপ হিসেবে গৃহীত হয়েছে, তা মুলত নদীয়া জেলার পশ্চিম-মধ্য উপভাষার উপর ভিত্তি করে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
প্রায় ১৩০০ বছরের দীর্ঘ বিবর্তনে বাংলা ভাষার সাথে যুক্ত হয়েছে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় এবং বিদেশী শব্দ। বহু শতাব্দীর পর ১৯ শতকে এসে রাজা রাম মোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের হাতে বাংলা চূড়ান্ত রূপ পায়। আজ বাংলা মানব সভ্যতার ইতিহাসে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি স্বতন্ত্র ভাষা। বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা এবং ৩৭০ লক্ষ মানুষের দ্বিতীয় কথ্য ভাষা বাংলা। পৃথিবীর ভাষাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার অবস্থান পঞ্চম এবং শুধুমাত্র কথ্য ভাষা হিসেবে অবস্থান ষষ্ঠ।
পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
মাইকেল শিরোনামে নির্মিত হবে ‘কিং অফ পপ’ মাইকেল জ্যাকসনের বায়োপিক
‘কিং অফ পপ’ মাইকেল জ্যাকসনের জীবনকে উপজীব্য করে নির্মিত হতে যাচ্ছে চলচ্চিত্র; শিরোনাম ‘মাইকেল’। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিখ্যাত মুভি নির্মাণ ও সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান লায়ন্সগেটের প্রেসিডেন্ট জো ড্রেকের এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় এম জে (মাইকেল জ্যাকসন) ভক্তরা তাদের প্রিয় তারকাকে নতুন করে বড় পর্দায় দেখতে মুখিয়ে উঠলো। চার দশক ধরে পপ সঙ্গীতে আধিপত্য বিস্তার করা এই সেরা স্টেজ পারফর্মারকে নিয়ে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু তথ্যচিত্র। চলুন, সবেমাত্র নির্মাণের প্ল্যাটফর্মে ওঠা মুভিটি নিয়ে কিছু কথা জেনে নেয়া যাক।
মাইকেল জ্যাকসন দ্যা কিং অফ পপ
পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন; জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশের গ্যারি শহরে। জোসেফ ওয়াল্টার জ্যাকসন ও মা ক্যাথরিন এসথার জ্যাকসনের দশ সন্তানের মধ্যে তিনি আট-তম। আফ্রো-আমেরিকান দরিদ্র জ্যাকসন পরিবারের বসতি ছিল জ্যাকসন স্ট্রীটে। ইউএস স্টীলের ক্রেন অপারেটর হিসেবে বাবার চাকরি আর সিয়ার্সে খণ্ডকালীন কর্মরত মায়ের উপার্জন দিয়ে চলতো সংসারের খরচ। বাবা অবশ্য সংসারের খরচে সামঞ্জস্য আনার জন্য ফ্যালকন্স নামের একটি লোকাল ব্যান্ডের সাথে গিটারও বাজাতেন।
পড়ুন: ‘মাসুদ রানা’র লেখক-প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই
১৯৬৪ সালে বাবার সৃষ্টি করা ভাইদের নিয়ে জ্যাকসন ফাইভ ব্যান্ডের মাধ্যমে শুরু হয় মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গীত জীবনে পথ চলা। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর পঞ্চম একক অ্যালবাম ‘অফ দ্য ওয়াল’ তাকে একক সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মাইকেল জ্যাকসন সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গানের এ্যালবামের শিল্পীদের একজন। সারা বিশ্বে তাঁর বিক্রিত গানের রেকর্ড সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ৪০০ মিলিয়ন। তিনি একমাত্র পুরুষ শিল্পী হিসেবে ১৩ বার বিলবোর্ড হট হান্ড্রেডে শীর্ষস্থানে ছিলেন। এই তালিকায় প্রথম শিল্পী হিসেবে এককভাবে শীর্ষ দশ-এ ছিলেন গোটা পাঁচ দশক জুড়ে। তাঁর অর্জনের মধ্যে রয়েছে ১৫টি গ্র্যামি, ৬টি ব্রিট, একটি গোল্ডেন গ্লোব এবং সর্বকালের সবচেয়ে সফল এন্টারটেইনার সহ ৩৯টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। এছাড়াও রয়েছে দুইবার রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেম, ভোকাল গ্রুপ হল অফ ফেম, সং রাইটারস হল অফ ফেম, একমাত্র শিল্পী হিসেবে দ্যা ডান্স হল অফ ফেম, এবং রিদম অ্যান্ড ব্লুজ মিউজিক হল অফ ফেম।
আরও পড়ুন: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ কেন জরুরি?
মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়ে নতুন সিনেমার চিত্রপট
মাইকেল সিনেমার গল্পে একজন জটিল মানসিকতার মানুষের একজন পপসম্রাট হয়ে ওঠার দিকটি গভীরভাবে চিত্রিত করা হবে। এর সাথে পরিবেশন করা হবে জ্যাকসনের সৃজনশীলতার অসামান্য ছাপের ফলে সৃষ্ট ইতিহাসকে।
২০১৯-এ ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ শিরোনামের এইচবিও তথ্যচিত্রে জ্যাকসন কিংবদন্তির একটি কালো অধ্যায়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়। কোরিওগ্রাফার ওয়েড রবসন এবং প্রাক্তন শিশু অভিনেতা জেমস সেফচাকের শৈশব থেকে প্রয়াত গায়কের সাথে সম্পর্কের ঘটনা তুলে ধরা হয়। এখানে জ্যাকসনে বিরুদ্ধে আনা শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগগুলো বিশদ আকারে উপস্থাপন করা হয়।
পড়ুন: নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকে ট্রান্স মডেল হিসেবে বাংলাদেশের তাসনুভা আনান শিশির
তাকে নিয়ে নির্মিত সম্প্রতি ‘মিউজিক্যাল এম জে’ নামের ব্রোডওয়ে শোটিতে আলোকপাত করা হয় ১৯৯২ সালের একটি সময়কে, যখন বিপজ্জনক ওয়ার্ল্ড ট্যুরের জন্য জ্যাকসন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এটি ছিলো তাঁর বিরুদ্ধে আসা প্রথম শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কিছু সময় আগে।
জ্যাকসন সেই অভিযোগটি অস্বীকার করেন এবং অভিযুক্তের দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি করেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে তিনি আবারো শিশু শ্লীলতাহানির জন্য অভিযুক্ত হন এবং মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হন। ২০০৯ সালে ৫০ বছর বয়সে গায়ক মারা গেলেও কিংবদন্তিটির রেশ রয়ে যায় তাঁর নামের সাথে।
পড়ুন: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আফসান চৌধুরীসহ ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৬ লেখক
‘মিউজিক্যাল এমজে’ শো’তে সঙ্গীত শিল্পীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি থেকে সেই কালো অধ্যায়টি বাইরে রাখা হলেও মাইকেল সিনেমায় তার প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।
মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ কেন জরুরি?
যোগাযোগের চিরায়ত মাধ্যম ভাষা মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে মনের ভাব প্রকাশে সহায়তা করে। কিন্তু যখন শিক্ষা গ্রহণের প্রশ্ন আসে, তখন ভাব বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি সেখানে আরও কিছু নির্ণায়ক জুড়ে যায়। যুগ যুগ ধরে বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির বিকাশের চাকার ঘূর্ণনকে নানা দিকে বদলেছেন বিশ্ব শিক্ষার নীতি নির্ধারকগণ। সব কিছুকে ছাপিয়ে বারবার যে বিষয়টি এই অগ্রগতির রূপরেখায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছিল, তা হলো মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্ব। এই পরিপ্রেক্ষিতেই মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরা হলো এই ফিচারে।
সামঞ্জস্য বিধানের সহজাত দক্ষতা
স্কুলে যেয়ে একটি শিশু যখন তার পরিবারের লোকদের বলা কথাগুলোই শুনতে ও বুঝতে পারে, তখন তার ভেতরে ইতোমধ্যে সংরক্ষিত শব্দগুলো দিয়ে স্কুলের শেখানো শব্দগুলোর সামঞ্জস্য বিধান করতে পারে। ভিন্ন ভাষার শব্দ হলে তখন তার এই সামঞ্জস্য করার দক্ষতা বিলম্বিত হয়। প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। শিশুর যাচাই করার ক্ষমতার এই প্রাথমিক স্তরে কাঠামোর ভিত্তি গড়তে তাই প্রয়োজন তার মস্তিষ্কে তার মাতৃভাষার শব্দগুলোর প্রবেশ ঘটানো।
আরও পড়ুন: বর্ণিল আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
অনুশীলনের সুবিধা
পরিবারের গণ্ডিতে যে কথ্য ভাষায় তিন থেকে চার বছর শিশুটি লালিত হয়, সে ভাষাটি স্কুলেও পেলে শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তা নিয়ে তার অন্তর্নিহিত ভাবগুলো অনায়াসেই প্রকাশ করতে পারে। তাছাড়া স্কুলে দেয়া হোমওয়ার্কগুলো বাবা-মার সহায়তায় বাসায় চর্চার সুবিধা তো আছেই। বিশেষত নতুন কোন কিছু বা জটিল বিষয়গুলো শেখার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি কাজে দেয়। আশেপাশের মানুষদের সাথে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে অনুশীলনের ফলাফল হিসেবে অনুশীলনকৃত বিষয়টির ঠিক-বেঠিক নির্ণয়ে মাতৃভাষা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সৃজনশীলতার সহায়ক
শিশুটির মস্তিষ্ক যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শব্দভান্ডারে বিকশিত হয়, তখন সময় আসে সে সেগুলো নতুন করে ব্যবহার করতে পারছে কিনা তা যাচাই করে দেখার। অবশ্য এটি বিভিন্ন শিশুর মধ্যে তার পরিবেশ ও শিক্ষা গ্রহণের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন সময়ে পরিলক্ষিত হয়। তবে জীবনের প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ শিশু মস্তিষ্কে সৃজনশীলতার বীজ বুনতে সাহায্য করে। এমনকি, এর ওপর নির্ভর করে শিশুর স্বাভাবিক মানসিক ক্রমবিকাশ পরিচালিত হয়। এর পরিধি কয়েকটি বর্ণ মিলিয়ে একটি শব্দ গঠন থেকে শুরু করে নতুন অনুভূতি প্রকাশ করা পর্যন্ত বিস্তৃত।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে একুশে পদক পাবেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক
সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন
সংস্কৃতির মধ্যে নিহিত থাকে প্রতিটি মানুষের শিকড়। আর এর উপরেই মাটি ভেদ করে আকাশের দিকে ধীরে ধীরে ডালপালা গজাতে শুরু করে মূল্যবোধের বৃক্ষটির। ব্যক্তির আচার-আচরণ থেকে শুরু করে ভুল-শুদ্ধ নিরূপণের ভীত রচনা করার মোক্ষম হাতিয়ার সংস্কৃতি। মাতৃভাষা শুধু এই হাতিয়ার বানাতেই সাহায্য করে না বরং একজন পরিণত মানুষের জন্য এই হাতিয়ারকে শাণীত রাখার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ফলশ্রুতিতে নিজ গোষ্ঠী ও প্রথাগুলোকে মর্যাদাপূর্ণ করার পাশাপাশি ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গেও পারস্পরিক লেনদেনের উৎস উন্মোচিত হয়।
মাতৃভাষায় শিক্ষা পদ্ধতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
পাঠ্যক্রমগুলোতে মাতৃভাষার দারুণ প্রয়োগ দেখা যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। জাপান, জার্মানি, ও ফ্রান্স বিভিন্ন চড়াই-উৎড়াইয়ের পরেও দেশ গঠনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের মাতৃভাষা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকেনি। বরং সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাব্রত পালন করতে এই দেশগুলোতে ভীড় জমানোর সময় তাদের মাতৃভাষা শেখায় গুরুত্ব দেয়।
আরও পড়ুন: গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল: জাফর ইকবাল
বলিভিয়ার জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ আদিবাসী হওয়ায়, বলিভিয়ান ক্যাম্পেইন ফর দ্য রাইট টু এডুকেশন (সিবিডিই) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে। ২০১০ সালে বলিভিয়ার জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম প্রত্যেক শিশুকে স্প্যানিশ ছাড়াও একটি আদিবাসী ভাষা এবং সংস্কৃতি শেখার বিধান জারি করে।
জিম্বাবুয়ে স্কুল পরীক্ষা পরিষদ আদিবাসী ভাষা শিক্ষায় উৎসাহিত করতে সংখ্যালঘু ভাষায় পরীক্ষা চালু করেছে।
আরও পড়ুন: রাজু ভাস্কর্যের সামনে নৃত্যরত ইরা: সপ্রতিভ উত্থানে এক বাংলাদেশি ব্যালেরিনা
২০১৬ সালে মাদাগাস্কারের আনালাভরি কমিউনের একটি স্কুল তাদের মাতৃভাষা মালাগাসিতে লেখা গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) থেকে ৫৪টি পাঠ্যপুস্তক পেয়েছে। এগুলো শিশুদেরকে তৃতীয় গ্রেড পর্যন্ত তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা দিয়েছে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে তারা দেশের দ্বিতীয় সরকারী ভাষা ফরাসি শেখা শুরু করে।
২০১৪ সালে জিপিই-এর ৩৫ দশমিক দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের একটি অংশ দেয়া হয়েছিলো জাম্বিয়ার চাভুমা জেলায়। এতে করে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিশুরা তাদের মাতৃভাষা লুভালে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সে বছর থেকে জাম্বিয়ান প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো গণিত সহ উচ্চতর পরীক্ষায় ক্রমাগত সাফল্য পেয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আফসান চৌধুরীসহ ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৬ লেখক
১২৩ টিরও বেশি ভাষা থাকলেও নেপালি ভাষা নেপালের স্কুলগুলোর প্রধান ভাষা। ২০১৫ সালে নেপালি মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য নতুন সংবিধান চালু করা হয়।
শেষাংশ
শুরুটা হোক মাতৃভাষায়- এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে শিক্ষা লাভের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে একটি নিরবচ্ছিন্ন গতি দেয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রগুলোতে জাতীয়ভাবে যথাযথ সুযোগ-সুবিধার প্রণয়নে মাতৃভাষার পেশাগত মর্যাদার পাশাপাশি বজায় থাকবে সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ধারা। বিদেশি ভাষা বয়কট নয়; বরং বিশ্ব দরবারে মাতৃভাষাকে সমুন্নত করতেই বিদেশি ভাষা শিক্ষার নিমিত্তে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে হবে।
আরও পড়ুন: লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনীর সময় বাড়ল
বর্ণিল আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শনিবার বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর উপস্থিতিতে বিকাল ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে জাতীয় পতাকা ও একাডেমির পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্ববৃহৎ প্রতিকৃতি প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করা হয়। যা চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। জাতীয় চিত্রশালার দুই ও তিন নং গ্যালারিতে উদ্ধোধন করা হয় সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম নিয়ে ১০ দিনব্যাপী প্রদর্শনী। এটি চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে তানভীর তারেকের ‘স্মৃতিদহন’তাছাড়া বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে একাডেমির সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ২৪টি বইয়ের পাঠ উন্মোচন করা হয়।
আলোচনা পর্বের পর সাংকৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথমেই স্নাতা মাহরিনের পরিচালনা ও লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় ‘শুভেচ্ছা ভালোবাসা’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ।একাডেমির সংগীত শিল্পীদের পরিবেশনায় প্রয়াত পাঁচ প্রখ্যাত গুণীশিল্পী লতা মঙ্গেশকর, বাপ্পি লাহিড়ি, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সুবীর নন্দী ও এন্ড্রোকিশোরের গান নিয়ে ট্রিবিউট পরিবেশনা করা হয়।
আরও পড়ুন: গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল: জাফর ইকবাল
গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল: জাফর ইকবাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের আলোকে প্রকাশিত গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’কে ইতিহাসের এক ‘অসাধারল’ দলিল হিসেবে বর্ণনা করেছেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
শনিবার অমর একুশে বইমেলায় গ্রাফিক নভেল মুজিবের শেষ দুই খণ্ডের (নবম ও দশম) মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় জাফর ইকবাল বলেন, ‘মুজিব’ গ্রাফিক নভেল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে খুবই অসাধারণ একটি দলিল হয়েছে; এটি শুধু ছোট বাচ্চারা পড়বে তাই নয়, বড় মানুষরা এটা তাদের বাসায় সাজিয়ে রাখতে পারবে।
আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন’ (সিআরআই) প্রকাশিত এ গ্রাফিক নভেলকে একটি বড় ‘পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ছোট বাচ্চারা বড় বই পড়তে শেখেনি, কিন্তু ওদের ছবি দেখতে অনেক ভালো লাগে। আমি যখন ছোট ছিলাম, আমারও কমিক পড়তে অনেক ভালো লাগত। আমি মনে করি, এখন বাচ্চারা কমিক পড়তে খুবই পছন্দ করে। কাজেই তাদেরকে টার্গেট করে এই মুজিব কমিকটা প্ল্যান করা হয়েছে। এটা একটা বড় প্ল্যান।
শনিবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সিআরআইয়ের স্টলের সামনে শেষ দুই পর্বের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন লেখক আনিসুল হক, গ্রাফিক নভেলের শিল্পী সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়, কাহিনী বিন্যাস ও সংলাপ লেখক সিদ্দিক আহমেদসহ সহযোগী শিল্পীরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে গ্রাফিক নভেল হলেও বাংলাদেশে এটিই ছিল এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ। ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ গ্রাফিক নভেল মুজিবের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়। এরপর সিআরআই’র উদ্যোগে এর বিভিন্ন পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে নবম ও দশম খণ্ড, যার মাধ্যমে শেষ হল এ ধারাবাহিক প্রকাশনার।
এর দশটি খণ্ড একত্রে বই আকারে প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, সাত বছর সময় লেগেছে, ওরা ধৈর্য্য হারায়নি। কাজগুলো খুবই সুন্দর হয়েছে। আমি দেখেছি, প্রথম দিকে ছবিগুলো যেমন হয়েছে, আস্তে আস্তে ছবিগুলো কিন্তু অনেক সুন্দর হয়েছে। আমি অনুরোধ করব, সবগুলো পর্ব একটা বই আকারে বের করতে এবং যে ছবিগুলো ‘রিটাচ’ করা দরকার, সেগুলো যাতে এডিট করা হয়।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে একুশে পদক পাবেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক
বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করার নিয়ম
দেশের বার্ধক্যে পীড়িত মানুষের সহায়তা ও সামাজিক মর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে চালু করা উদ্যোগের নাম বয়স্ক ভাতা। এই কার্যক্রমের সূত্রপাত ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর থেকে। শুরুতে পাঁচ জন পুরুষ ও পাঁচ জন মহিলাসহ মোট ১০ জন গরিব বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে ১০০ টাকা হারে মাসিক ভাতা দেয়া হত। ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের জন্য বয়স্ক ব্যক্তিদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ লাখ এক হাজার। চলুন জেনে নেয়া যাক বয়স্ক ভাতা পাওয়ার আবেদন পদ্ধতির ব্যাপারে।
কাদের জন্য বয়স্ক ভাতা
সর্বপ্রথম বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। যেহেতু বয়স্কদের জন্যই এই ভাতা তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বয়স্কদের মধ্যে যারা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে উপার্জনে শারীরিকভাবে অক্ষম তাদের অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার অধিকারী যেমন ভূমিহীন, উদ্বাস্তু এবং নিঃস্ব ব্যক্তিরা এই ভাতার আওতাভুক্ত। এক্ষেত্রে কারো জমি ০.৫ একর বা তার কম পরিমাণের হলে তাকে ভূমিহীন ধরা হয়।
এছাড়া বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত, বিপত্নীক, নিঃসন্তান এবং সবশেষে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বয়স্ক ব্যক্তিগণ ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার পাবেন।
আরও পড়ুন: দৌড়ের সময় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি: কারণ এবং ঝুঁকি কমাতে করণীয়
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার শর্তাবলি
১) কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে।
২) জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকা আবশ্যক; নূন্যতম জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা যেতে পারে।
৩) বয়স যাচাইয়ের সময় পুরুষের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬৫ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে নূন্যতম ৬২ বছর গ্রহণ করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘বীরাঙ্গনা’ মাজেদাকে কেন ভাতা দেয়া হবে না জানতে চেয়ে রুল
৪) বায়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির বার্ষিক গড় আয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার মধ্যে হলে তাদের বয়স্ক ভাতা আওতায় আনা হয়।
৫) সর্বসাকূল্যে সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত বাছাই কমিটির মাধ্যমে এই ভাতা প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হতে হয়।
৬) সরকারি কর্মচারী অর্থাৎ পেনশন প্রাপ্তরা এই আওতার বাইরে।
৭) ভিজিডি (ভালনারেবশ গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট)-এর কার্ডধারীরা বয়স্ক ভাতা কার্যক্রমের বাইরে।
আরও পড়ুন: মুকেশ আম্বানিকে হারিয়ে এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি
৮) অন্য কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে নিয়মিত সরকারি বা বেসরকারি অনুদান/ভাতা/আর্থিক সাহায্য প্রাপ্তরা বয়স্ক ভাতা পাবেন না।
বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন পদ্ধতি
এখন সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট ফরম পূরনের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করা যায়
ফর্মের লাল তারকা চিহ্নিত শূন্যস্থানগুলো পূরণের দিকে অধিকতর সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। প্রথমেই আসবে সমাজসেবা কার্যালয় নির্বাচনের বিষয়টি। এখানে প্রার্থী যে এলাকায় বাস করছেন সেই উপজেলা বা শহরের সংশ্লিষ্ট সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের নাম দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিচারকদের ভাতা বৃদ্ধি: ২টি বিল পাস
ছবির আপলোডের জন্য আগে থেকেই প্রার্থীর এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি স্ক্যান করে রাখতে হবে। অতঃপর জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী প্রার্থীর প্রতিটি ব্যক্তিগত তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদান করতে হবে।
ফরমের শেষের দিকে প্রার্থীর নমিনীর পাসপোর্ট সাইজ ছবির স্ক্যান কপিসহ যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। বয়স্ক প্রার্থী অসুস্থ বা চলাফেরায় অক্ষম হলে তার পরিবর্তে যিনি ভাতা তুলতে যাবেন তার বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে এ অংশে।
সব তথ্য প্রদানের কাজ সম্পন্ন হলে এটি সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের ডাটাবেজে সংরক্ষিত হবে। একইসঙ্গে ফরমে প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে প্রাপ্তি স্বীকারমূলক বার্তার সঙ্গে একটি আইডি নম্বর দেয়া হবে। এই নম্বরটির মাধ্যমে পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে আবেদনের হালনাগাদ সম্পর্কে জানা যাবে।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
পরিশেষে অনলাইনে পাঠানো আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে। প্রিন্ট কপিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভা অথবা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের মাধ্যমে সত্যায়িত করে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের জমা দিতে হবে।
বয়স্ক ভাতা সংগ্রহের স্থান
প্রতিটি উপজেলাতেই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এর বিকল্প হিসেবে তফসিলি যে কোন ব্যাংক থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা তোলা যায়। এর জন্য উপজেলা হিসাব সংরক্ষণ কিংবা এলাকার সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রার্থীর ছবি, পরিচয় ও স্বাক্ষর রেজিস্টার করাতে হবে। এরপর সেখান থেকে পাস বই ইস্যু করা হবে, যা দিয়ে মাসিক ভাতা তোলা যাবে।
শেষাংশ
দেশজুড়ে ডিজিটাল লেনদেনের কার্যক্রমের প্রভাব পড়েছে বয়স্ক ভাতার ওপরেও। এখনো প্রক্রিয়াধীন থাকা এই পরিষেবাগুলো ব্যবহারের জন্য প্রার্থীদের পাশের মানুষটির তথা তাদের আত্মীয়দের সহায়তার প্রয়োজন। যদিও গ্রাম পর্যায়ের অনেক বায়োজ্যেষ্ঠদের কষ্ট হলেও বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রতিটি কার্যকলাপ সম্পন্ন করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার নিয়ম
শীতকালে কেনো বেশি ঘুম পায়?
বছরান্তে সময়টা যতই পৌষ-মাঘের কাছাকাছি হতে শুরু করে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে অত্যধিক ঘুম ঘুম ভাব প্রবণতা। এরকম অনস্বীকার্য শীতের ক্লান্তিটা প্রায়ই কাজের রুটিনটাকে ওলোট-পালোট করে দেয়। কখনো মনে হতে পারে সারাদিন শারীরিক পরিশ্রম বা অতিরিক্ত কাজের জন্য হয়ত ঘুম ঘুম ভাবটা বেড়েছে। কিন্তু শীতের মৌসুমে ঘুমের এমন অদ্ভূত আচরণটা স্বাভাবিক। চলুন জেনে নেয়া যাক, কেন এরকমটা হয়, আর এ থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কি।
শীতে যে কারণে বেশি ঘুম আসে
এক কথায় বলতে গেলে শীতকালে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাবের মুল কারণ হলো সূর্যালোকের তুলনামুলক ভাবে কম উপস্থিতি। অর্থাৎ দিনের স্বল্পতা এবং রাত দীর্ঘ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই শরীর প্রয়োজনের তুলনায় কম সূর্যালোক পেয়ে থাকে। এর প্রভাবেই শরীর ও মনে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা। সেগুলোর মধ্যে প্রধান তিনটি সমস্যা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
১। নিদ্রা উদ্রেক হরমোনের নিয়ন্ত্রণহীনতা
মেলাটোনিন হরমোন শরীরকে ঘুমের দিকে ধাবিত করার জন্য মুল ভুমিকা পালন করে। শীতকালে প্রাকৃতিক আলোর অভাবে শরীরের অভ্যন্তরে অত্যধিক মেলাটোনিন তৈরি হয়। ফলস্বরূপ, মানবদেহের অভ্যন্তরীণ সার্কাডিয়ান ছন্দ বা ঘুম ও জেগে ওঠার চিরায়ত চক্রকে ব্যাহত হয়। গরমের সময়ে সূর্যালোকের উপস্থিতি মেলাটোনিন নিঃসরণের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সে সময় ঘুম ঘুম ভাব থাকে না। বরং সার্কাডিয়ান ছন্দটি সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে গরমের দিনগুলোতে।
পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
২। শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি এবং নিদ্রাহীনতার মাঝে একটি লক্ষণীয় যোগসূত্র রয়েছে। অন্ধকার আকাশ এবং ঝাপসা আবহাওয়া এই পুষ্টির অপর্যাপ্ত মাত্রাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। এটি শুধুমাত্র ঘুম ঘুম ভাব বাড়িয়ে তোলা নয়; শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মন-মেজাজের ওপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।
৩। মানসিক অবসাদগ্রস্ততা
এসএডি (সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার) হলো একটি সাধারণ মানসিক অবস্থা, যা প্রায়ই শীতকালে দেখা দিয়ে থাকে। 'উইন্টার ব্লুজ' নামে পরিচিত এই অবস্থাটি মুলত প্রতি বছরের শীতনিদ্রা প্রবণতার প্রতিফলন হিসেবে ঘটে থাকে। এর কারণে প্রতি বছর শীত এলেই শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং সূর্যালোকের স্বল্পতা মস্তিষ্ক থেকে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এই হরমোনটি সুখের অনুভূতি উদ্দীপিত করে মেজাজ উন্নত রাখতে সাহায্য করে। শীতে এই হরমোনের ঘাটতি অবসাদগ্রস্ততার সৃষ্টি করে।
পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
শীতকালে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায়
১। প্রতিদিন ভোরবেলা শরীরচর্চা করা
শীতে দিন ছোট হলেও যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুর সদ্ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে ভিটামিন ডি-এর বিশাল উৎস ভোরের টাটকা সূর্যালোক কোন ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। নিত্য দিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে কমপক্ষে এক ঘন্টা সূর্যালোকে শরীরচর্চা অথবা খেলাধুলা করা সারাদিনের জন্য শরীরটাকে সতেজ রাখতে পারে। এছাড়াও মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় সূর্যালোকে হাটাহাটি করা যেতে পারে। এটি ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে অলসতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
২। পুষ্টিকর বিশেষত ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়া
সুষম খাবার গ্রহণ সব ঋতুর জন্যই প্রযোজ্য। আর শীতের ঘুম ঘুম ভাব কাটানো জন্য শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি-এর যোগান দিতে হবে। ডিমের কুসুম এবং মাশরুম ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস। এছাড়া প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গরুর দুধ ও মাংস বিশেষ করে কলিজা, সয়া দুধ, কমলার জুস ও পনির রাখা যেতে পারে। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খুব দ্রুত কাজ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পড়ুন: ঢাকার কোথায় ভালো পরিবেশে সাঁতার শেখা যায়
৩। ভ্রমণ করা
শীতকাল এমনিতে ভ্রমণের ঋতু হিসেবে জনপ্রিয়। আর এই ঘুমের রেশ কাটানোর জন্য দূরে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া খুব ভালো একটা উপায় হতে পারে। সাইক্লিং, হাইকিং, রাফটিং, ও ম্যারাথন শীতের স্বল্প দিনে শরীরকে অনায়াসেই কর্মক্ষম এবং রোগমুক্ত রাখতে পারে।
এভাবে শীতের প্রকৃতিগত একঘেয়েমি সহ ঘুম ঘুম ভাব ও ক্লান্তি কাটানো যেতে পারে। যদিও শীতপ্রিয় মানুষেরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই সময়টির জন্য, তবে অতিরিক্ত শীত অনেকের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তবে সঠিক রুটিন মেনে চলাটা বছরের যে কোন সময়েই শরীরকে ফিট রাখার জন্য সহায়ক হতে পারে।
পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
বাপ্পি লাহিড়ী: বলিউড সাম্রাজ্যে ডিস্কো সঙ্গীতের প্রবাদ পুরুষ
ভারতীয় উপমহাদেশের ডিস্কো সঙ্গীতের কথা বলতে গেলে যে নামটি বারংবার অনুরণিত হয়, তা হচ্ছে বাপ্পি লাহিড়ী। ৮০ ও ৯০ দশক জুড়ে বলিউডের সঙ্গীতাঙ্গন দাঁপিয়ে বেড়ানো এই কন্ঠের গায়কীর সমাপ্তি ঘটলো ৬৯ বছর বয়সে। গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সকলের প্রিয় বাপ্পি দা ভক্তদের হাজারো নতুন গানের অপেক্ষায় রেখে নিরবেই পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। বলিউড চলচ্চিত্রের উপর তাঁর কন্ঠের এতটাই প্রভাব যে, দর্শক মাতানো গান মানেই ভাবা হয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে আন্দোলিত হওয়া বাপ্পি লাহিড়ী কন্ঠের দীর্ঘ টান। এই সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গীত জীবনচরিত নিয়েই আজকের ফিচার।
সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারের সৃষ্টি বাপ্পি লাহিড়ী
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর ভারতের জলপাইগুড়ির এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবার; গানের দম্পতি অপরেশ লাহিড়ী এবং বাঁসুরি লাহিড়ীর কোল আলোকিত করে এলেন অলোকেশ লাহিড়ী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং শ্যামা সঙ্গীতে লাহিড়ী দম্পতির দুজনেরই বেশ ভালো দখল ছিল। গান ও তবলার সূত্রগুলো রপ্ত করতে একমাত্র সন্তান অলোকেশের তেমন বেগ পেতে হয়নি। ভারতের স্বনামধন্য গায়ক কিশোর কুমার ছিলেন তাঁর মামা। সঙ্গীতাঙ্গনে প্রবেশের পর এই অলোকেশ পরিণত হন বাপ্পি লাহিড়ীতে।
একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তাঁর নিজস্ব বেশভূষা তাকে অন্য শিল্পীদের থেকে আলাদা করে রাখতো। গায়কীর পাশাপাশি তাঁর বিশেষত্ব ছিল সোনার অলঙ্করণ, মখমলের কার্ডিগান এবং সানগ্লাস।
আরও পড়ুন: সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর: ভারতীয় সংগীতের জগতে অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল নক্ষত্র
১৯৭৭ সালের ২৪ জানুয়ারি বাপ্পি লাহিড়ী চিত্রানি লাহিড়ীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বাপ্পি লাহিড়ীর মেয়ে রেমা লাহিড়ীও একজন গায়িকা। ছেলে বাপ্পা লাহিড়ী বাবা পথ অনুসরণ করে সঙ্গীত পরিচালনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বাপ্পা লাহিড়ীর ঘরে বাপ্পির এক নাতিও আছে; নাম কৃষ লাহিড়ী।
ডিস্কো কিং বাপ্পি লাহিড়ী ও সঙ্গীতের সোনালী অধ্যায়
সঙ্গীত জীবনের প্রথম ১৫ বছর সুরকার হিসেবেই কাজ করেছেন বাপ্পি লাহিড়ী। ১৯ বছর বয়সে মুম্বাই এসে দাদু (১৯৭৪) নামের পশ্চিমবঙ্গের একটি বাংলা সিনেমায় প্রথম সুযোগ পান। সেখানে তাঁর পরিচালনায় গান গেয়েছিলেন ভারতের বিখ্যাত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ১৯৭৩-এর নানহা শিকারি ছিল প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্র যার জন্য তিনি সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। এখানে তাঁর রচিত গান ছিল তু হি মেরা চান্দা। তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ১৯৭৫ এর হিন্দি ছবি জাখমি। এই ছবির নাথিং ইজ ইম্পসিবল শিরোনামের গানটির সঙ্গীত পরিচালনায় তাঁর সাথে ছিলেন কিশোর কুমার এবং মহম্মদ রফি। এছাড়া তাঁর একক পরিচালনায় একই ছবির গান ‘জালতা হ্যায় জিয়া মেরা’ গানটি গেয়েছিলেন কিশোর কুমার ও আশা ভোশলে। ‘আভি আভি থি দুশমানি’ এবং ‘আও তুমে চান্দ’ গান দুটিতে কন্ঠ দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সবগুলো গান-ই সে সময় হিট করেছিল।
আরও পড়ুন: সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী আর নেই
তাঁর সুরে কিশোর ও লতার ডুয়েট ‘ফির জানাম লেঙ্গে হাম’ গানটি ভারতবর্ষ জুড়ে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৭৬ এর চালতে চালতে চলচ্চিত্রের সমস্ত গানই ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় অঙ্গনে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে স্বীকৃতি পান বাপ্পি লাহিড়ী।
একই বছর নিজের গায়কী নিয়ে প্রথমবারের মত হাজির হন সুলক্ষণা পণ্ডিতের সাথে দ্বৈত গান ‘জানা কাহান হ্যায়’-এর মাধ্যমে।
১৯৭৯-এর আপ কি খাতির, দিল সে মিলে দিল, পতিতা, লাহু কে দো রাং, হাতিয়া এবং সুরাক্ষা’র মতো চলচ্চিত্রের গানগুলো তাঁর সুরেলা সঙ্গীত পরিচালনার জন্য বেশ খ্যাতি পেয়েছিল।
পড়ুন: চমকে দেওয়ার দিনটিই ছিল বাপ্পিজির সঙ্গে শেষ দেখা: রুনা লায়লা
বাংলা গানের স্বর্ণযুগের শেষ তারকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
আধুনিক বাংলা গানের জীবন্ত দলিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। এছাড়াও নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, শাস্ত্রীয়সঙ্গীত, লঘু শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও হিন্দি চলচ্চিত্রেও ছিল তার বিস্তৃতি। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম এই গায়িকার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। এই প্রয়াত কিংবদন্তির জন্ম ৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে।
১২ বছর বয়সে প্রথম গান
কলকাতা আকাশবাণীর ‘গল্পদাদুর আসর’-এ ১২ বছর বয়সে প্রথম গেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেখান তার প্রথম পারিশ্রমিক ছিল পাঁচ টাকা। এক বছর পর তার প্রথম বেসিক রেকর্ড প্রকাশ হয় এইএমভির ব্যানার থেকে। গানের কথা ও সুর করেছিলেন গিরিন চক্রবর্তী। এক দিকে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়ে যারে’, উল্টো পিঠে ‘তোমারো আকাশে ঝিলমিল করে চাঁদের আলো।’ এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। দুই বছরের মধ্যে বাংলা সিনেমায় গানের সুযোগ পান তিনি। প্রথম ‘অঞ্জননগড়’ এর সংগীত পরিচালক ছিলেন রাইচাঁদ চট্টোপাধ্যায়।
পরিবার ছিল সন্ধ্যার সংগীতের হাতেখড়ি
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও মা হেমপ্রভা দেবী। ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ। সন্ধ্যার বাবা ছিলেন কৃষ্ণভক্ত। বাবার কাছেই প্রথম গান শেখা। সন্ধ্যার মা-ও গান গাইতেন। নিধুবাবুর টপ্পা ছিল প্রিয়। মায়ের গানে মুগ্ধ হতেন সন্ধ্যা। ভাবতেন, না শিখে একজনের গলায় এত সূক্ষ্ম কাজ আসে কী করে!
আরও পড়ুন: কিংবদন্তি গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর নেই
শচীন দেববর্মনের হাত ধরে বোম্বে যাত্রা
৪০’র দশকের শেষের কথা। এক সিনেমার গান রেকর্ডিং করে বাড়ি ফিরেছেন সন্ধ্যা। শচীন দেববর্মনের পরিচিত এক ব্যক্তি সন্ধ্যার বাড়িতে এসে জানান শচীন দেব তাকে বম্বে নিতে চান। এমনি তার স্ত্রী মীরা দেব সন্ধ্যার গান শুনতে চেয়েছিলেন। আর শুনেই ভালো লাগে তার। শচীনদেব নিয়ে গেলেও মুম্বাইয়ে প্রথম ‘তারান’ সিনেমায় প্লেব্যাকের সুযোগ হল অনিল বিশ্বাসের সুরে।
সন্ধ্যার সঙ্গে প্রায় দেখা করতেন লতা মঙ্গেশকর
অনিলের সুরে ‘তারানা’ সিনেমায় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে সন্ধ্যার পরিচয়। ‘বোল পাপিহে বোল রে, তু বোল পাপিহে বোল’ গানটিতে অভিনেত্রী মধুবালার লিপে লতার কণ্ঠ। সন্ধ্যার কণ্ঠ ছিল শ্যামার লিপে। পরিচয়ের কিছু দিনের মধ্যেই লতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়ে যায় সন্ধ্যার। লতা প্রায়ই আসতেন এভারগ্রিন হোটেলে সন্ধ্যার কাছে। সাধারণ বেশভূষা, আন্তরিক ব্যবহার। লতাকে ভালো লেগেছিল সন্ধ্যার। লতার সঙ্গে গান নিয়ে নানা আলোচনা হতো। পরবর্তীতে সন্ধ্যার ঢাকুরিয়ার বাড়িতেও এসেছেন লতা।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গেয়েছেন সন্ধ্যা
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলার মাটিতে। এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গাইলেন ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে’। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি গানটি প্রথম প্রচারিত হয় আকাশ বাণীতে।
আরও পড়ুন: সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী আর নেই
সফলতার ঝুলিতে অনেক পুরস্কার
'আমাদের ছুটি ছুটি' এবং 'ওরে সকল সোনা মলিন' হল গান দুটির জন্য ১৯৭১ সালে সেরা নারী প্লে ব্যাক সিঙ্গার ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। তাছাড়া ১৯৬৫ ও ১৯৭২ সালে দু’বার পেয়েছেন বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৯ সালে তাঁর ঝুলিতে এসেছে ভারত নির্মাণ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। ২০১১ সালে তাকে বঙ্গ বিভূষণ সম্মান দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
ফিরিয়ে দিয়েছেন ‘পদ্মশ্রী’
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ফোন দিয়ে বলা হয় ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে তাকে সম্মানিত করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়াত এই কিংবদন্তি জানিয়ে দিয়েছিলেন এই সম্মান গ্রহণ করবেন না তিনি। পদ্মশ্রী প্রত্যাখান করার কারণ হিসেবে এক প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘এভাবে কেউ পদ্মশ্রী দেয়? এরা জানে না আমি কে? ৯০ বছরে আমায় শেষে পদ্মশ্রী নিতে হবে? আর এই ফোন করে বললেই চলে যাব আমি?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি, আমার পদ্মশ্রীর কোনো দরকার নেই। শ্রোতারাই আমার সব। ‘আমার শরীরটা বেশ খারাপ। আমাকে পদ্মশ্রী নেয়ার কথা বলা হয়েছিল, দিল্লি থেকে ফোন করা হয়েছে। আমি বলেছি, না আমি পারব না এই সম্মান নিতে যেতে। তারা কারণ জানতে চায়, আমি বলেছি, আমার মন চাইছে না।’
আরও পড়ুন: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০ পাচ্ছেন যারা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য: গল্প নাকি সত্যি?
বিশ্বের সব থেকে রহস্যময় জায়গাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ডেভিল্স ট্রায়াঙ্গেল, সবাই যেটাকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল হিসেবেই জানে। আসলে মিথোলোজি ও সত্যি ঘটনার মাঝের নো ম্যান্স ল্যান্ডে লোক মুখে হাজারো কথা প্রচলিত থাকে, যেগুলো সেই সত্যি ঘটনাটির সামনে ধোয়ার মেঘ তৈরি করে। সব তর্ক-বিতর্কের ঊর্ধ্বে যে ভাবনাটি সময়ের দাবি তা হলো, এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অদ্ভুতুড়ে ব্যাপারগুলো যদি আসলেই নিরঙ্কুশ ঘটনা প্রবাহ হয়ে থাকে, তখন কি হবে! চলুন, নতুন করে হয়ে যাক এই পুরনো রহস্যটির জট ছাড়ানোর চেষ্টা।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ত্রিভুজ অঞ্চল
মায়ামির সান জুয়ান, পুয়ের্তো রিকো এবং বারমুডা। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের এই তিনটি স্থানে পড়েছে ত্রিভজাকৃতির অঞ্চলটির তিনটি শীর্ষবিন্দু। মাঝের জায়গাটির পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ থেকে ৩৯ লাখ বর্গকিলোমিটার। অবশ্য এটি একদম নির্ধারিত নয়। বিভিন্ন সময় যে অংশে রহস্যময় ঘটনাগুলো ঘটেছে তাকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত হয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল।
পড়ুন: নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকে ট্রান্স মডেল হিসেবে বাংলাদেশের তাসনুভা আনান শিশির
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যময় ঘটনাপ্রবাহের এক ঝলক
১৮৮০ সালের ৩১ জানুয়ারি এলেন অস্টিন নামের একটি জাহাজ ইংল্যান্ডের বারমুডা থেকে ফ্যালমাউথের উদ্দেশে রাজকীয় বন্দর ছেড়ে যায়। ধারণা করা হয়- জাহাজটি পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে পথভ্রষ্ট হয়ে বিশাল নাবিকদল নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে। ১৮৮১ সালে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় এবং বন্দরে নিয়ে আসা হয়। এর মাধ্যমেই শুরু হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের সূত্রপাত।