চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৮ হাজার ৯০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৫১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৮ মেট্রিকটন।
কিন্তু সদর ও নাচোল উপজেলার বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতে প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে দেখা দিয়েছে মাজরা পোকার আক্রমণ। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা।
তালপুকুর মাঠের চাষী মোজাম্মেল হক বলেন, আশ্বিন মাস এখন। ধানের শিষ কিছুদিনের মধ্যেই দেখা দিবে। ধানে নানা ওষুধ দিয়ে মানাতে পারছি না, মাথা গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার আমন চাষী সেরাজুল ইসলাম বলেন, তার জমিতে পোকা দমনে দুবার কীটনাশক স্প্রে করেছেন। কিন্ত কাজ হয় না, একটু কমছে আবার দেখা দিচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, এবার মাঠজুড়ে ধানের চেহারা ভালো ছিল। আর কদিন পরেই ধানের শীষ ফুটবে। ভালো ফলন আশা করছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ মাজরা পোকার আক্রমণে হতাশায় মুষড়ে পড়ছেন তারা।
কৃষকরা জানান, প্রতিষেধক ওষুধ প্রয়োগ করেও ফল পাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ মাঠে মাঠে এ অবস্থা বিরাজ করলেও কৃষি বিভাগের লোকজন কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছে না। নিজেরাই বাজার থেকে প্রতিষেধক ওষুধ কিনে প্রয়োগ করছেন, কিন্তু ফল হচ্ছে না। এ অবস্থায় ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছেন কৃষকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, এতে কৃষকদের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। উপযুক্তভাবে পরিচর্যা করলে, সুষম সার প্রয়োগ করলে, জমিতে ডাল পুতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে এটি দমন করা যায়। বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে তা ফলনে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
তিনি আরো জানান, ক্ষেতে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে সঠিক এবং পরিমিত কীটনাশক ব্যবহারে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া কৃষকদের আরো সচেতন করতে ইউনিয়ন পরিষদ, মসজিদের মাইকের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার শুরু করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা মাঠ এলাকার আমন চাষী আব্দুল সালাম ও মিয়াপাড়া মাঠের আমন চাষী মাইনুল ইসলাম বলেন, এবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় জমিতে সেচ দিয়ে ধানের আবাদ করতে হয়েছে, তার উপর পোকা দমনে একাধিকরার কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলনে মার খেলে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তারা।
সদর উপজেলার হোসেন ড্যাং নুনাপুকুর এলাকার আমন চাষী খাইরুল ইসলাম বলেন, এবার ৩ বিঘা ৯ কাঠা জমিতে আমন চাষ করেছি। ধান দেখে মনটা ভালো ছিল, ভালো ফলন আশা করছিলোম। কিন্তু হঠাৎ করে জমিতে পোকা দেখা দিয়েছে। এই পোকা ধান গাছের গোড়ায় ঢুকে থেকে গোড়া কেটে দিচ্ছে। বিষের দোকানদার বলছে এই বিষ দাও কাজ হবে কিন্তু কাজ হয় না।