সোমবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বিষয়টি উত্থাপন করেন। অন্যদিকে নিজের সংসদীয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দুঃখ প্রকাশ করেন।
বীণার ফেসবুক পোস্ট উল্লেখ করে চুমকি বলেন, বিয়ের নয় বছর পর বীণা অন্তঃসত্ত্বা হন। কিন্তু যখন তিনি চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষার জন্য যান তখন তিনি হঠাৎ করে জানতে পারেন যে তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি মানসিক চাপে পড়ে অসুস্থ হয়ে যান।
আওয়ামী লীগের এ সাংসদ আরও বলেন, পরে বীণা অপরিণত অবস্থায় (প্রিম্যাচিউর) একটি শিশুর জন্ম দেন এবং শিশুটি এখন হাসপাতালে সংকটপূর্ণ অবস্থায় আছে।
কার নির্দেশে বীণাকে ওএসডি করা হয়েছে তা জানতে চান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সেই সাথে তিনি জানান, তার নির্বাচনী এলাকায় ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ইউএনও বীণা সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
‘তিনি অন্তঃসত্ত্বা জেনে আমি এমনকি তাকে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে চাপ না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমি লজ্জিত যে এই সৎ ও সফল ইউএনওকে ওএসডি করা হয়েছে, যা তার প্রতি অবিচার ছাড়া আর কিছু নয়,’ যোগ করেন তিনি।
এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্বে করা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া আশা প্রকাশ করেন যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি বীণাকে ওএসডি করার পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৩১ সপ্তাহ বয়সী এক অপরিণত শিশুর জন্ম দেন।
এ ঘটনা নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন হোসনে আরা বেগম বীণা। তিনি অভিযোগ করেন, সন্তানসম্ভবা হওয়ায় কাজে অযোগ্য দেখিয়ে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা তাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পায়তারা শুরু করেছিলেন।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরও অত্যন্ত সফলভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে হোসনে আরা আরও লেখেন, ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে ওএসডি করার সংবাদ পেয়ে তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপ পান। ২০ এপ্রিল বাচ্চা জন্মের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও মানসিক চাপে তার ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং বাচ্চার অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পায়। এ ঘটনায় রাতেই তিনি হাসপাতলে ভর্তি হন এবং পরদিন সকালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ইউএনবিকে ফোনে জানান, ইউএনও বীণাকে শাস্তি হিসেবে নয়, অসুস্থ হওয়ায় ওএসডি করা হয়েছিল। ‘তিনি হাঁপানির রোগী। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকালে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তাছাড়া, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর একজন কর্মকর্তাকে বদলি করা যায় না। তাই তাকে ওএসডি করা হয়েছিল। এটা কোনো শাস্তি নয়।’
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, বীণা ফেসবুকে পোস্ট না দিয়ে তাদের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন।