বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মানসিকতা আমাদের নেই এবং আমরা সেটা করিও না। ঘটনাচক্রে হয়তো কিছু ঘটতে পারে।’
শেখ হাসিনা জানান, তার সরকার গত ১০ বছরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছে।
তিনি উল্লেখ করেন অপরাধীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহে কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম রয়েছে এবং তার সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশে পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
‘অপরাধীদের কাছ থেকে তথ্য নিতে অন্যান্য দেশে যা করা হয় তার বাইরে কিছু করা হয় না,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা তেমন একটা হয় না।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে তার বাবা-মা, ভাই ও কাছের স্বজনদের হত্যার পর দেশে অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়ার সংস্কৃতি শুরু হয় এবং এর ভুক্তভোগী তিনি নিজে।
এ সংস্কৃতি বন্ধে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়ার সংস্কৃতি প্রচলিত হয়। সে সময় সামরিক শাসকরা সরাসরি বা নাম (সরকারের) পরিবর্তন করে শাসন চালিয়েছে।
‘সেখান থেকে দেশকে সুষ্ঠু ধারায় ফিরিয়ে আনা কঠিন ছিল এবং আমরা এ কঠিন দায়িত্ব পালন করেছি,’ বলেন তিনি।
দেশে যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিরাজ করছে তখন একটি শ্রেণি অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে অসাংবিধানিক বা অস্বাভাবিক সরকার বা সামরিক আইন থাকলেই তাদের ভালো হয়।
ওই শ্রেণিটি সারাক্ষণ সরকারের পেছনে লেগেই আছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল মানুষ পাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অবশ্যই মানুষ এ সুফল পাচ্ছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০০৫-৬ সালে দেশে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ শতাংশ এবং তা বর্তমানে কমে ২১ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাথাপিছু আয় ৪০০/৫০০ মার্কিন ডলার থেকে প্রায় ২০০০ ডলারে পৌঁছেছে এবং দেশ গত অর্থবছর ৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
‘যখন উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় তখন স্বাভাবিকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। কিন্তু আমরা মূল্যস্ফীতি বাড়তে দেইনি এবং তা ৫ দশমিক ৫ বা ৬-এর মধ্যে রেখেছি,’ বলেন তিনি।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির এ সুফল খুব স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিবাসন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আদিকাল থেকে অভিবাসনের প্রবণতা চলছে, কিন্তু এর সাথে দারিদ্রকে যুক্ত করা যায় না।
ব্যাংকিং খাতের ‘নাজুক অবস্থা’ ও ঋণখেলাপি সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে যতটা প্রচার হয় তা ততটা না।
‘এর শুরু হয় সামরিক শাসকদের আমলে। যখন আমরা সরকারে এসেছি তখনই ঋণ আদায়ে চেষ্টা করেছি,’ বলেন তিনি।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। ‘এটা যদি না থাকত তাহলে আমার ও আমার সরকারের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে অপপ্রচার কীভাবে চলছে?’
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন স্বাধীনতা নেই। ‘কিন্তু স্বাধীনতা না থাকলে তারা এত কথা কীভাবে বলেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে তার সরকার কঠোরভাবে চেষ্টা করছে।
‘যদি উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া হয় তখন কেউ কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে?...না তারা থাকবে না। মানুষকে আগে নিরাপত্তা দিতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের যা করণীয় তা করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।