তিনি বলেন, ‘বিগত দশকে আমরা অনেক উন্নত আঞ্চলিক ধারণা এবং উদ্যোগ দেখেছি। কেউ কেউ সফল হয়েছে, অন্যরা হতে পারেনি।’
পরবর্তী দশকে মৈত্রী ও সহযোগিতার মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা পরিচালনায় চারটি নীতি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ভারতীয় অর্থনৈতিক সম্মেলনের সমাপনী আলোচনায় এসব কথা বলেন।
‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী চিন্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে এবং তার অংশীদারিত্বমূলক সমৃদ্ধি ও দায়বদ্ধতায় বিশ্বাস করে বাংলাদেশ বিমসটেক, সার্ক, বিবিআইএন এবং বিসিআইএমের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে,’ বলেন তিনি।
প্রথম নীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই সংখ্যালঘু- সংখ্যাগরিষ্ঠ মানসিকতার বাইরে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বহুত্ববাদ দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় শক্তি। সুতরাং, আমাদের উচিত ধর্ম, জাতি এবং ভাষাতে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্র্যতা পালন করা চেষ্টা করা। এটি মৌলিক বিষয়।’
তৃতীয় নীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সম্প্রদায় এবং দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা মূল বিষয়। ‘আমাদের ভুল ধারণা এবং মিথ্যা আশঙ্কা থেকে উতড়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়’ বিষয়ে বাংলাদেশে যে নীতির কথা বলে গেছেন তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। ‘এ নীতিই আমাদের সব দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ভারতের সাথে গঙ্গা নদীর পানিবন্টন সমস্যার সমাধান করেছিল। ‘আমরা আপসে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রিত রেখেছি। বাংলাদেশ এবং ভারত এখন আন্তসীমান্ত নৌ চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। আমরা আন্তদেশীয় বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনছি।’
এ জাতীয় সহযোগিতামূলক সংস্কৃতি রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজে অপরিহার্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিতীয় নীতিমালা নিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুত বর্ধমান সমাজে বৈষম্য যাতে বেড়ে না যায় সে বিষয়টি আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদ বৃদ্ধি অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত যাতে নিম্নপর্যায়ের লাখ লাখ মানুষের কাছে সম্পদ পৌঁছানো যায়। স্বল্পোন্নত জাতি বা দেশগুলোকে পেছনে ফেলে রাখা উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও দাবি পূরণ করতে হবে। আমাদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-দক্ষতা-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে একে অপরের হাতে হাত রেখে কাজ করা দরকার।’
চতুর্থ নীতির বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। আসুন আমরা আমাদের জনগণের ভালোর জন্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রসার ঘটাই এবং ভারসাম্য বজায় রাখি। স্বল্প-মেয়াদি লাভের জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার কথা ভুলে গেল চলবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়াকে অবশ্যই একটি সংযুক্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামূলক অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে, যা অন্যান্য অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী হেন্জি সুই কেট, সিকোইয়া ক্যাপিটাল ভারতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈলেন্দ্র সিং, অ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপারসন শোবানা করমেনিণী, বুকিং ডটকমের চেয়ারম্যান গিলিয়ান ট্যানস প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।