মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন ওয়াসার আইনজীবী।
এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেন, ওই দুই জোনের পানি সংশোধন করা হয়েছে। পরে স্যাম্পল (নমুনা) নিয়ে তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
এরপর আদালত দুই প্রতিবেদনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মন্তব্য চেয়েছেন। মন্তব্য পাওয়ার পর প্রয়োজন হলে ফের পানি পরীক্ষার আদেশ দিবেন।
আদালতে ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাসুম এবং রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
আদেশের পরে এ এম মাসুম বলেন, ওই দুই জোনের পানি সংশোধন করা হয়েছে। বুয়েট ও আইসিসিডিআর’বি পানি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে আর কোনো ব্যাকটেরিয়া নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি যেখানে ক্লোরিন থাকবে সেখানে ব্যাকটেরিয়া থাকবে না। বৈজ্ঞানিকভাবে একসাথে ২টা থাকার সুযোগ নেই। এ কারণে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের রিমার্কস (মন্তুব্য) চেয়েছেন আদালত। রিমার্কস পাওয়ার পর পরবর্তী ছুটির পরে এটি আবার আসবে।
আইনজীবী মাসুম বলেন, আমরা এখন পদ্মা ও মেঘনার দিকে যাচ্ছি। পদ্মা এবং মেঘনার পানি অনেক ফ্রেশ (ভালো)। তখন এ ধরণের অভিযোগ আর থাকবে না।
তানভীর আহমেদ বলেন, আজকে ওয়াসা যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটাতে দেখা যায় যে, ওনারা স্বপ্রণোদিত হয়ে আইসিসিডিআর’বি এবং বুয়েটে পরীক্ষা করিয়েছে এবং সে পানি নিজেরা দিয়েছেন। এ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে পানি সুপেয়।
বিষয়টা যেহেতু ‘হাইলি টেকনিক্যাল’ তাই আদালত বলেছেন, ‘এ দুটি প্রতিবেদনে যারা বিশেষজ্ঞ ছিলো (আদালতের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি) তাদের কাছে যাবে। তারা এ প্রতিবেদনের আঙ্গিকে একটা মন্তব্য করবে, যে কি ধরণের পদক্ষেপ নিলে আমরা সুপেয় পানি পাবো। তিন মাস পরে এ মন্তব্য পাওয়ার পরে আদালত যদি দেখেন আরেকটা পরীক্ষার দরকার, তাহলে পরীক্ষা করবে।
এর আগে পানি পরীক্ষায় আদালতের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন গত ৭ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেই প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের ৩৪টি নমুনার মধ্যে আটটি পানির নমুনায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
গত ২৪ জুন এ এম মাছুম বলেন, সমন্বিত প্রতিবেদন আসার পর সেখানে জোন-১ ও জোন-৪। একটি মিরপুর অপরটি পাতলা খান লেনে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন। সেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হলে ফেকেল ও ই-কোলাই। ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে আমরা ওয়ান বাই ওয়ান রেক্টিফিকেশনে গিয়েছি।
সমন্বিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিটি ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের বিভিন্ন এলাকা থেকে দৈবচয়ন ও দূষণের অভিযোগ রয়েছে এমন ৩৪টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৮টি নমুনাতে ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ পাওয়া গেছে।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের নাম-উল্লেখ করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করার আদেশ দেন।
গত ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
কমিটির সদস্যরা হলেন, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মনিরুল আলম, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সাবিতা রিজওয়ানা রহমান।