স্বামী চলাফেরায় শারীরিকভাবে অক্ষম, শুক্রবার নির্বিচারে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গুলি শুরু হলে নারীদের কক্ষ হতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশি হোসনে আরা পারভিন স্বামীকে বাঁচাতে ছুটেন পুরুষদের কক্ষের দিকে। স্বামীর কাছে পৌঁছার আগেই স্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জঙ্গির হামলার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে আরও রয়েছেন লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ ও তার স্ত্রী কিশোআরা। এই দম্পতি গত পাঁচ বছর ধরে দুই সন্তান নিয়ে নিউজিল্যান্ডে বসবাস করছেন।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় এদিন ৪৯ জন মুসল্লি নিহত হয়। আহত হন অন্তত ৪৮ জন।
নিহত হোসনে আরার পরিবার জানায়, স্বামী ফরিদ উদ্দিন শারীরিক অক্ষমতার কারণে একা চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে সাহায্য ও রক্ষা করতে গিয়েই পারভিন তার জীবন দিলেন।
অপরদিকেত নিহত ড. সামাদ কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার মধুর হাইলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। অবসর নেয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে পাঁচ বছর ধরে নিউজিল্যান্ডে বসবাস করছিলেন।
নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী আত্মীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে নিহত হোসনে আরা পারভিনের বড় বোন রওশন আরা বেগম বলেন, স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে সন্ত্রাসী হামলা শুরুর মাত্র ১৫ মিনিট আগে পারভিন তার স্বামীকে হুইলচেয়ারে করে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে নিয়ে আসেন।
এরপর স্বামীকে মসজিদের পুরুষ কক্ষে রেখে পারভিন নামাজ আদায়ের জন্য নারীদের কক্ষে যান। কিছুক্ষণ পরই নির্বিচারে গুলির শব্দে স্বামীকে বাঁচাতে পুরুষ কক্ষের দিকে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান পারভিন। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জঙ্গহাটা গ্রামে তার বাড়ি। পারভিনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রওশন আরা আরও বলেন, মসজিদে হামলা শুরু হলে হোসনে আরার স্বামীকে নিয়ে মসজিদ থেকে বাইরে বের হয়ে যান সাথের কিছু মুসল্লি। তিনি এখন ক্রাইস্টচার্চে তার আত্মীয়দের সাথে রয়েছেন।
গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক শিবলি ইউএনবিকে জানান, তিনি পারভিনের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তার আত্মীয়-স্বজনদের কথা বলেছেন।