ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি সোমবার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা অনাস্থা জানান।
ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যাক্ত কারাগারের ভেতরে বসানো আদালতে এ মামলার বিচার কাজ চলছে।
আদালত ও বিচারক পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হবে জানিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি ২০ কার্যদিবস মুলতবির আবেদন করেন তারা।
বিচারক আক্তারুজ্জামান বিষয়টি শুনে মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখেন। একই সাথে আসামি মুন্নার জামিন বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে মনিরুলের জামিনের মেয়াদ মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ায় আদালত।
এদিন এ মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেয়ার আবেদন করলে বিচারক আগের মতই কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
এ সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন তার দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু।
সোমবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির জন্য আবেদন দাখিল করেন এবং বক্তব্য দিতে শুরু করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের পরও কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে হাসপাতালে ভর্তি করেনি। আপনি জেলকোডের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যান, আমরা কোথায় যাব?’
এ সময় খালেদা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করার আবেদন জানান মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
এ সময় অপর দুই আসামির পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও শেখ মো. আক্তারুজ্জামান বিচারকাজ ৩০ দিনের জন্য মুলতবি রাখার আবেদন করেন।
আসামিপক্ষের আবেদনের বিরোধীতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আবেদনগুলোর বিষয়ে আদেশ দেয়ার আবেদন জানান।
এ নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়।
এ সময় বিচারক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি কারাবিধি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে এবং একই ধারাবাহিকতায় তার জামিন বহাল থাকবে।’
এরপর আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করতে দুই আসামি মুন্না ও মনিরুলের পক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করেন বিচারক। এ পর্যায়ে দুই আইনজীবী আদালতের প্রতি অনাস্থার আবেদন প্রসিকিউশনের কাছে দেন।
এ সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কিছুটা হট্টগোল শুরু হলে দুদকের আইনজীবী কাজল আদালতকে বলেন, ‘উনারা জামিন চাইবেন, আবার অনাস্থার আবেদন করবেন, তা হতে পারে না। আপনি জামিন নামঞ্জুর করে দেন।’
তিনি বলেন, ‘এ বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আদালতের বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বাইরের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে তাদের পরামর্শ মতো কাজ করছেন। এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে ঘোলপানিতে মাছ শিকার করতে চান তারা। এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি করার কোনো বিধান নেই। তবু আদালত যুক্তিতর্ক শুনতে চেয়েছেন। কিন্তু আসামিপক্ষে যুক্তি তর্ক শুনানি না করলে তো মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।’
যুক্তিতর্ক শুনানি না করলে রায় দেয়ার জন্য তারিখ ধার্যের আর্জি জানান তিনি। তখন অনাস্থার আবেদনের বিষয়ে আদেশ দিতে মঙ্গলবার দিন ধার্য করে বিচারক জিয়াউল হক মুন্নাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন।