হাইকোর্টের যে বেঞ্চ জাহালমের ঘটনায় রুল জারি করেছে এবং শুনানি করছে সেই বেঞ্চের দুদক সংক্রান্ত মামলা শুনানির এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে সংস্থাটির করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, চেম্বার আদালত জাহালমের ঘটনায় হাইকোর্টের জারি করা রুলসহ এ মামলার সব কার্যক্রম ১৩ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছে। ওই দিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।
‘দুদক সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে বিশেষ বেঞ্চ রয়েছে। যে বেঞ্চ জাহালমের ঘটনায় রুল জারি করেছে এবং শুনানি করছে ওই বেঞ্চের দুদক সংক্রান্ত মামলা শুনানির এখতিয়ার নেই। নির্ধারিত বেঞ্চের বাইরে অন্য কোনো বেঞ্চ এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে না। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের একটি রায়ও আছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই চেম্বার আদালত আদেশ দিয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। এ নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটি একই দিনে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এবং তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
পরে সব পক্ষের বক্তব্য শুনে গত ৩ ফেব্রুয়ারি নিরপরাধ পাটকল শ্রমিক জাহালমকে অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওই দিনই মুক্তির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী তিনি মুক্তিও পান। একই সঙ্গে আদালত ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন হলফনামা আকারে দুদককে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে ৬ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে।
দুদকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩ মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী ও অভিযোগপত্রসহ যাবতীয় নথি তলব করে হাইকোর্ট।
জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেন- তার মুখ থেকে তা শুনতে তাকে আদালতে নিয়ে আসতে ১০ এপ্রিল আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী জাহালম ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজির হন।
অন্যদিকে, দুদক এক মাসেও নথি দাখিল করতে না পারায় ২ মে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ মামলার নথি ও দুদকের প্রতিবেদন জমা দিতে বলে আদালত। পাশাপাশি আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চায় হাইকোর্ট।
আদালত জানায়, ২ মে দুদক তাদের প্রতিবেদন দিলে তখনই হাইকোর্ট জাহালমের মুখ থেকে তার কথা শুনবে। এরপর দুদক গত ২১ এপ্রিল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে যায়।