এরপর থালেদার আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতেই আদালত দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করেন।
যুক্তিতর্কে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার আবেদন করেছেন।
শুনানি শেষে আদালত সার্বিক বিষয়ে বুধবার পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেছেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপমি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আদেশে হাইকোর্ট বলেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ মামলার আপিল শুনানি শেষ করতে আপিল বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। এ অবস্থায় আমরা এই ধরণের আবেদনের শুনানির অনুমতি দিতে অনচ্ছিুক। তাই আবেদনটি খারিজ করা হলো।
তখন খালেদার আইনজীবীরা আদালত ত্যাগ করেন। এ অবস্থায় অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের আইনজীবী তাদের যুক্তির্ক অব্যাহত রাখেন। বেলা ১২টা ৫০ পর্যন্ত আপিলকারী পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিল না।
বেলা ১১টার দিকে শুনানির এক পর্যায়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, সোমবার মামলার অর্থের উৎসের বিষয়ে আপনারা যে আদেশ দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব। জবাবে আদালত বলেন, আপনারা আপিল বিভাগে যেতে পারেন। এরপর এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন। জবাবে আদালত বলেন, মুলতবির আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হল।
এ সময় এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, সে ক্ষেত্রে আমরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করছি না। আমরা শুনানি থেকে বিরত থাকছি। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন।
এরপর আদালত বলেন, ৩১ অক্টোবর আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে। এরমধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। এরপর অতিরিক্ত সাক্ষ্য নেয়ার আবেদন খারিজ করেদেন হাইকোর্ট।
এসময় এ জে মোহাম্মদ আলী ছাড়াও জয়নুল আবেদীন, আবদুর রেজাক খান, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, আমিনুল ইসলাম, এ এইচ এম কামরুজ্জামন, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মো. আখতারুজ্জামান, মো. ফারুক হোসেনসহ আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রথমে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান শুনানি করেন। তারপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।
এর আগে সোমবার অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থের উৎসের বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।
আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থ ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা কুয়েতের আমির জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষার্থে এতিমখানা করতে দিয়েছেন বলে খালেদা জিয়ার পক্ষে দাবি করা হয়েছে। অপর দিকে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই অর্থ এসেছে সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে। সোমবার শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অ্যাডিশনাল এভিডেন্সের জন্য কুয়েতের আমির যে অর্থ পাঠিয়েছেন এটা প্রমাণের জন্য যে ব্যাংকের মাধ্যমে (সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক) অর্থ পাঠানো হয়েছে তার কাগজপত্র চেয়ে আবেদন করেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ৪২৮ ধারা অনুযায়ী আপিলেট কোর্টও প্রয়োজনে অতিরিক্ত সাক্ষ্য নিতে পারেন। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন রেফারেন্স দেখান। তারা বলেন, এই মামলার অর্থের উৎস পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। অর্থের উৎস পাওয়া গেলে মামলার মূল বিবেচ্য বিষয় ট্রাস্টের অর্থ পাবলিক ফান্ড না প্রাইভেট ফান্ড তা পরিষ্কার হতো।
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছেন, এই মামলার অর্থের উৎস সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়টি মামলার ২৬তম সাক্ষীর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে। এই পর্যায়ে ২৬ বা ২৭ দিন যুক্তি উপস্থাপনে শেষে অতিরিক্ত সাক্ষ্যগ্রহণের এই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ২৬তম সাক্ষী ও তৎকালীন বাংলাদেশের সৌদি রাষ্ট্রদূত খন্দকার আবদুস সাত্তার সাক্ষ্যে বলেছেন, সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক সাম্বা গ্রুপে একীভূত হয়েছে। তিনি অর্থের উৎসের বিষয়ে সাম্বা গ্রুপের মি. তালাতের কাছে চিঠি লিখেছেন। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবং তা পাওয়া মাত্র দেয়া হবে। তবে এরপর অর্থের উৎসের বিষয়ে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ জন্য আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অর্থের উৎস নিশ্চিত হতে হলে অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই থেকেই তিনি কারাবন্দী রয়েছেন। তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচ আসামিকে দেন ১০ বছর করে কারাদন্ড। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া আপিল করেন। এছাড়া কারাবন্দী দুই আসামিও আপিল করেন। গত ১২ জুলাই থেকে এই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।