মেয়েকে শেষ বিদায় দিয়ে (দাফন শেষে) কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর আক্ষেপের সুরে সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড়ে বাসের ধাক্কায় নিহত শিশু আকিফার বাবা হারুন উর রশিদ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় মামলা করেন তিনি।
মামলায় বাসের চালক খোকন, সুপারভাইজার ইউনুস এবং ওই বাসের মালিক জয়নুলকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই ফরিদপুর জেলা সদরের বাসিন্দা।
এর আগে বৃহস্পতিবার বাদ এশা চৌড়হাস ঈদগাহ্ গোরস্থানে শিশু আকিফার দাফন সম্পন্ন হয়।
সন্ধ্যায় আকিফার লাশবাহী গাড়িটি বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রিয় সন্তানের নিথর দেহ কোলে নিয়ে বসে ছিলেন হতভাগা বাবা হারুন উর রশিদ। শিশুটিকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসে শত শত মানুষ রশিদ। এদিকে মা রিনা বেগমের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে চারিদিক।
এ ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ফুঁসে উঠে কুষ্টিয়ার সচেতন মহল। আলোচিত এই ঘটনায় গঞ্জেরাজ নামক যাত্রীবাহী বাস চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঘটনাস্থল কুষ্টিয়ার চৌড়হাসে গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় মানববন্ধন করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা, সাংবাদিক ও স্থানীয় সচেতন এলাকাবাসী। তাদের এই কর্মসূচী আজও অব্যাহত আছে।
সচেতন মহলের ব্যানারে কর্মসূচীর ডাক দেয়া আয়োজকদের একজন সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজু বলেন, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় মডেল থানায় রাতে মামলা হয়েছে। পুলিশ দ্রুত ঘাতক বাস ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
“নিরাপদ সড়ক চাই” কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী বাবু বলেন, শিশু আকিফা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে “নিরাপদ সড়ক চাই” জেলা শাখার পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, ঘটনার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক বাসটির নম্বর, মালিক ও চালকের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে অভিযান চালায়।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে শিশুটির মৃত্যু হলে রাতে তার বাবা থানায় এজাহার দায়ের করতে এলে আমরা মামলাটি তাৎক্ষণিক রুজু করি। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা গঞ্জেরাজ পরিবহনের একটি বাস শহরের চৌড়হাস মোড়ের কাউন্টারে এসে থামে। সে সময় থেমে থাকা বাসের সামনে দিয়ে এক বছরের শিশু কন্যা আকিফাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন মা রিনা বেগম। হঠাৎ কোন হর্ণ ছাড়াই চালক খোকন বাসটি চালিয়ে দেন। এতে মায়ের কোল থেকে রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে আহত হয় শিশু কন্যা আকিফা। বাসের ধাক্কায় রিনা বেগমও আহত হন। বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি। সে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকার সবজি ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদের মেয়ে।