মঙ্গলবার রাতে বিজিবি’র ‘লেজার ক্যান্টিনে’সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসীর সাথে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মো. মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘চোরাকারবারীরা’ পরিকল্পনামূলক জব্দকৃত গরু বিজিবির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় ধারালো দেশিয় অস্ত্র নিয়ে বিজিবির সদস্যদের ওপর ‘চোরাকারবারিরা’ হামলা করলে নিজেদের জীবন রক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয় বিজিবি। যার কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বিজিবির পাঁচ সদস্য আহত হয় বলেও জানানো হয়।
ঠাকুরগাঁও-৫০ বিজিবির অধিনায়ক আরও বলেন, উক্ত ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে মঙ্গলাবার গ্রামবাসী-বিজিবির সংঘর্ষের ঘটনায় হরিপুর উপজেলার বেতনা সীমান্তের বহরমপুর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিজিবি সদস্যেদের বিচার দাবি করেছেন নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী।
অপরদিকে ঘটনা তদন্তে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীলাব্রত কর্মকারকে প্রধান করেন সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, বহরমপুর গ্রামের এক ব্যক্তি কয়েক মাস আগে তার কেনা একটি গরু নিয়ে মঙ্গলবার যাদুরানীহাটে যাচ্ছিলেন। ওই গরু পাচার করে আনা হয়েছে সন্দেহে বেতনা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা তা জব্দ করে। গরুটি বিজিবি’র কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার সময় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ চলাকালে বিজিবি প্রায় অর্ধশত গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় প্রথমে চারজন নিহত হওয়ার কথা দাবি করলেও পরে তিনজনের নিহতের খবর নিশ্চিত করা হয়। গুলিবিদ্ধ হয় কমপক্ষে ১৫ জন।
বহরমপুর গ্রামের সিরাজুল ও রহমত জানান, বিজিবি কিছুদিন ধরেই এলাকায় অভিযান চালানোর নামে নিরীহ মানুষের গবাদি পশু ধরে নিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে টাকার বিনিময়ে তা ছেড়ে দেয়। বিজিবি সদস্যরা ইচ্ছে করেই গুলি করে মানুষ মেরেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি'র অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মাসুদ বলেন, ওইগুলো ভারতীয় গরু। সংঘবদ্ধ ‘চোরাকারবারীরা’ কোনো এক সময় এগুলো নিয়ে এসেছিল। তারা বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় সীমান্তের দুই কিলোমিটার ভেতরে আমাদের টহল দল তাদের ধরে ফেলে। গরুগুলি বিওপিতে (ফাঁড়ি) নেয়ার সময় কয়েকশ মানুষ সংঘবদ্ধভাবে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আমরা প্রথমে ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। তাতে আমাদের অস্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিজিবি গুলি করতে বাধ্য হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন।
সহিংসতা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হরিপুর থানার ওসি মো. আমিরুজ্জামান।