জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ‘এসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই কেবল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে হলে এজেন্ডা ২০৩০ এবং প্যারিস চুক্তি ও সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক সত্যিকার ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জলবায়ু সংশ্লিষ্ট দুর্যোগগুলোর প্রভাব মোকাবিলা’ শীর্ষক এক উন্মুক্ত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। এ দেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিধস ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা অত্যন্ত বেশি।
পরিবেশের অবনতির জন্য বাংলাদেশ দায়ী না হলেও জলবায়ু পরিবর্তন দেশের ১৬ কোটি জনগণের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি জানান, বৈশ্বিক তাপমাত্রা মাত্র ১ ডিগ্রি বাড়লে এবং সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বিশাল এলাকা তলিয়ে যাবে এবং এতে চলতি শতকের শেষ নাগাদ ৪ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যূত হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেসব স্থানে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি হতে পারে তা চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান ও প্রতিরোধে পুরো জাতিসংঘ ব্যবস্থাপনাকে একসাথে এবং সমস্বরে কাজ করতে হবে বলে মত দেন তিনি।
মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধের নিরলস যোদ্ধা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ‘বাংলাদেশ কার্বন বাজেটিং, কার্বনবিহীন উৎপাদন ও নিম্ন-কার্বন শিল্পায়নের মতো বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই সাথে জলবায়ু ও দুর্যোগ সৃষ্ট বহুমাত্রিক ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে সম্প্রতি যুগান্তকারী ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি পরবর্তী ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়নে আমাদের পথ দেখাবে।’
জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ থাকার পরও পূর্ব সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নয়ন, অবাধ তথ্য সরবরাহ, প্রয়োজনীয় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও সাড়াদান কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবীদের সক্রিয় ও নিবেদিত অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশ দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হার ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে পেরেছে, যা সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় সক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলে জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পদক্ষেপ যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘জিডিপির একভাগেরও বেশি আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় করছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি খাতকে জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষিখাতে রূপান্তরিত করছি। সারাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদন শতকরা ২২ থেকে ২৪ ভাগে উন্নীত করার পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। ইউনেস্কোর ঐতিহ্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন সংরক্ষণে আমরা ৫ কোটি মার্কিন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’