বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সাথে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ২ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি বিএসটিআই ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেন। তবে বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ৫২ পণ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আদালতের আদেশ সংশোধন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালত তা আমলে নেওয়ার মতো কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি।
এ সময় আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রিটেস্ট অলরেডি বিএসটিআই শুরু করেছে।
তবে আদালত ৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ যদি তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পুনরায় টেস্ট করাতে চায় তাহলে ১৩ জুনের মধ্যে তাদের পণ্য টেস্ট করতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১২ মে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বাজার থেকে আইনানুসারে এসব পণ্য সরিয়ে নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। এই সঙ্গে ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে বৃহস্পতিবার আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
প্রতিবেদনে ৫২ পণ্যের একটির প্যাকেটও জব্দ করার বিষয়টি না থাকায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাকে তলব করেন। তবে সারা দেশে ৫২ পণ্য জব্দের প্রতিবেদন দেওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সাধুবাদ জানান আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি।
প্রাণ এগ্রোর পক্ষে ছিলেন এম কে রহমান, এসিআই’র পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সান চিপসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম,বাঘাবাড়ী ঘি’র পক্ষে মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী।
গত ১২ মে ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেছিলেন, আদালত সেই ৫২ সাব-স্ট্যান্ডার্ড পণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে আইন অনুসারে ব্যবস্থা (জব্দ বা ধ্বংস) নিতে বলছেন। একই সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়। দুইজন বিবাদী এ বিষয়ে ২৩ মে আদালত আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। এছাড়া আদালত রুল জারি করেছেন।
গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’র (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান এ রিট করেন।
এর আগে তারা ওইসব পণ্য প্রত্যাহার ও জব্দ করার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে দুই সচিবসহ ৫ জনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে ছিলেন।
বিএসটিআই পরীক্ষায় ওইসব কোম্পানির ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য ধরা পড়ে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেয়ায় গত ৬ মে ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ও ৪ মে বিএসটিআইয়ের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য তুলে ধরে নোটিশে বলা হয়েছে, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যেখানে ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল। বিএসটিআই ওই ৫২টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করেছে।