নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল এবং দ্য হেগের ডেপুটি মেয়র সাসকিয়া ব্রুনস বৃহস্পতিবার শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন।
এ সময় নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, ইয়েমেন ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এবং দ্য হেগের কূটনৈতিক সম্প্রদায়, ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস শুক্রবার জানায়, দূতাবাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে ‘শান্তি এবং ন্যায়বিচারের’ শহর হিসেবে খ্যাত দ্য হেগের পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের ঐতিহাসিক জাউদার পার্কে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য একখণ্ড জমি বরাদ্দ করে।
শান্তি এবং বহু ভাষাতত্ত্বের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াসে যৌথ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ শহীদ মিনার নির্মাণের খরচ বাংলাদেশ সরকার এবং নকশা প্রণয়নের খরচ ডাচ সরকার বহন করে।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহীদ এবং ঢাকার চকবাজারে অগ্নি দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং এ শহীদ মিনার নির্মাণে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য দ্য হেগের পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত বেলাল ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে স্মরণ করেন এবং সেই আন্দোলনকে ধারণ করে বাংলাদেশ কীভাবে বঙ্গবন্ধুর সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল তা তুলে ধরেন।
দ্য হেগের ডেপুটি মেয়র সাসকিয়া ব্রুনস তার বক্তব্যে শহীদ মিনার সফলভাবে নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস এবং দ্য হেগ পৌরসভাকে অভিনন্দন জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, নেদারল্যান্ডে মোট ২০ ধরনের ভাষা ব্যবহৃত হয় এবং প্রত্যেক ভাষার ব্যবহারই গুরুত্বপূর্ণ। ‘বিভিন্ন জাতির মানুষের পারস্পরিক সহাবস্থানের মাধ্যমে যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠিত হয় তেমনি সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য প্রত্যেকটি ভাষারই প্রচলন থাকা প্রয়োজন।’
তিনি মন্তব্য করেন যে জাউদার পার্কে নির্মিত শহীদ মিনার কেবল দ্য হেগকেই গৌরবান্বিত করবে না, একইসাথে মাতৃভাষাকে রক্ষা এবং এগিয়ে নিতে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
শহীদ মিনার নির্মাণে জমি বরাদ্দে মুখ্য ভূমিকা পালন করা দ্য হেগের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রবিন বলদেভসিং অনুষ্ঠানে বহু ভাষাতত্ত্ব এবং বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং উল্লেখ করেন, দ্য হেগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা মন্যুমেন্ট নির্মাণে এই ধারণা তাদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, দ্য হেগের ডেপুটি মেয়র, অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্য, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এ শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন।