গ্রিন লাইনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি। গ্রিন লাইনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজি উল্লাহ।
১০ এপ্রিল রাসেলকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দেয় গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে তাদের এক মাস সময় দিয়েছিল হাইকোর্ট।
বুধবার গ্রিন লাইনের পক্ষে আবার সময় আবেদন করা হয়। এ সময় আদালত প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী অজি উল্লাহকে উদ্দেশ করে বলে, ‘টাকা দিয়েছেন?’ জবাবে অজি উল্লাহ বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য খরচ দিচ্ছি।’ তখন আদালত বলে, ‘বাকি টাকা (৪৫ লাখ) দিয়েছেন? কথা ছিল এক মাসের মধ্যে বাকি টাকা দেবেন। টাকা তো দেননি। আর চিকিৎসার খরচ নিয়ে তো আলাদা নির্দেশনা ছিল। সব চিকিৎসা খরচ দেবেন। টাকা দেননি কেন?’
জবাবে অজি উল্লাহ বলেন, ‘সময় চেয়েছি।’ এ সময় আদালত বলে, ‘একবার চাইলেন, সময় তো দিলাম। চার আনা পয়সাও পরিশোধ না করে সময় চাইলেন। আপনাদের (গ্রিন লাইন) কি ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে? আমরা কি রিসিভার নিয়োগ দিয়ে দেব? একেবারে খালি হাতে চলে আসলেন। এটা কি করে হয়! সামনে আদালতের অবকাশ আছে। তার আগে আদেশ পালন করেন। ২২ মে তারিখ রাখলাম। চিকিৎসার খরচ তো দেবেনই। যদি (ক্ষতিপূরণের) আংশিকও হয়, তাও দেন।’
আদেশের পর রিট আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী শামসুল হক বলেন, আদালত ক্ষতিপূরণের বাকি টাকার পুরোটা দেয়ার আদেশ দিয়েছে। তবে আংশিক দিলেও তারা সেটা বিবেচনায় নেবে।
রাসেল সরকার (২৩) ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারের চালক। গত বছরের ২৮ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ধোলাইপাড় এলাকায় গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি বাস তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়। পরে গাড়ি থামিয়ে বাসের সামনে গিয়ে বাসচালককে নামতে বলেন রাসেল। তখন বাসের চালক ও রাসেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে গ্রীন লাইন পরিবহনের চালক কবির হোসেন বাস চালানো শুরু করেন।
তখন রাসেল সরতে গেলে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে আটকা পড়েন। তার পায়ের ওপর দিয়েই বাস চলে যায়। এতে তার বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর পথচারীরা রাসেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গাড়িসহ চালক কবিরকে আটক করে।
এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
পরে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার পাশাপাশি তার চিকিৎসার খরচ দিতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়ে ৩১ মার্চ বিফল হয় গ্রিন লাইন।