রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, ‘যদিও কিছু দেশ বিরোধিতা করতে পারে, তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের গণহত্যার বিষয়টি আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরব।’
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে বাংলাদেশ এবং এর জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা স্মরণ করেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যার শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা ৩০ লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করে, দুই লাখ মা ও বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় লাঞ্ছিত মা-বোনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন।
প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করে অ্যাডামা ডিয়েং বেলেন, ‘গণহত্যার জন্য দায়ীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে আরও চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল।
অ্যাডামা ডিয়েং বলেন, জাতিসংঘ চায় যে, রোহিঙ্গারা তাদের নিজ প্রদেশ রাখাইনে ফিরে যাক এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক।
বাংলাদেশে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের চেয়ে বেশি। যার ফলে স্থানীয় মানুষ অনেক কষ্ট ভোগ করছেন।
রোহিঙ্গাদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য একটি দ্বীপের উন্নয়ন করছে।
রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু তার সরকার শক্ত হাতে তাদের মোকাবিলা করেছে।
তিনি বলেন, সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
বৈঠকে অ্যাডামা ডিয়েং বিশ্বের তিন নারী নেত্রী অসামান্য নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন। তারা হলেন- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আরডের্ন।
দেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আপনি নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক।’
অ্যাডামা ডিয়েং আশা প্রকাশ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এমডিজি'র মতো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও শান্তির মানুষ হিসেবে অভিহিত করেন।
‘আপনি (শেখ হাসিনা) বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন,’ বলেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা অল্পের জন্য এই হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল উভয়ই হামলার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন, যে হামলায় ৫০ জন নিহত এবং অর্ধ-শতাধিক আহত হয়।
সেভ এন্ড সার্ভ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ নাজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন।