খুলনা: অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো যান চলাচল করছে না। এ সুযোগে মাহেন্দ্র, মিনি পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসসহ ছোট যানগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে।
সকালে মহানগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও রয়্যালের মোড়ে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীরা এসে বাস চলাচল সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু চলাচল কখন শুরু হবে, কেউ তা বলতে পারছেন না।
আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন জানান, তার স্বজনরা ওমরা হজের জন্য ঢাকায় যাবেন। কিন্তু রয়্যালের মোড়ে বাস কাউন্টারে এসে দেখেন গাড়ি ছাড়ছে না। কীভাবে যাবেন তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।
আমেনা সুলতানা নামে আরেকজন জানান, ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাসের অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু সোমবার রাতে বাস কোম্পানি থেকে ফোন করে জানানো হয় ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবারের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
কুদ্দুস ও আমেনার মতো ভোগান্তিতে পড়া সাইফুল ইসলামকে বাসের আশা ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার ট্রেনের টিকিটের জন্য স্টেশনে ছুটতে দেখা যায়। সেখানে ছিল বিশাল লাইন ও যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়।
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বেবী বলেন, আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত শ্রমিকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন।
তিনি জানান, খুলনায় সোমবার ৯০ ভাগ বাস চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তা শতভাগ বন্ধ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন মালিক বলেন, ‘শ্রমিকদের এ ধর্মঘটের সাথে আমরা শতভাগ একাত্মতা প্রকাশ করেছি। কেননা কোনো চালক ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনা ঘটলে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। এত জরিমানা দেয়ার মতো টাকা কোনো চালকের নেই। ৫-৭ দিন কাজ না থাকলে যে চালকদের ঘরে চুলা জ্বলে না, তাদের কাছে এত টাকা জরিমানা হাস্যকর।’
সাতক্ষীরা: কোনো রুটে ব্যক্তি মালিকানাধীন যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করছে না। তবে সকালে ঢাকা থেকে কিছু পরিবহন সাতক্ষীরায় এসে পৌঁছায়। বিআরটিসির খুলনাগামী কিছু বাস চলছে। প্রায় সব রুটে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। কিন্তু তার পরিমাণ বেশ কম।
এ ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নছিমন, করিমন ও ইজিবাইক যোগে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে, ধর্মঘটের কারণে ভোমরা স্থলবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ট্রাক বন্দরের পণ্য পরিবহন করে। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে তা কমে দুই শ হয়ে গেছে। মালামাল পরিবহনে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গাজীপুর: সকালে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ কর্মসূচিতে দুর্ভোগে পড়েন শত শত যাত্রী। বিশেষ করে কর্মজীবী লোকজন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েন।
অন্যদিকে, ময়মনসিংহ ও ঢাকা থেকে বাস ছেড়ে না আসায় এ রুটে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল। ট্রাকও কম সংখ্যায় চলাচল করছে। অবশ্য জেলার আভ্যন্তরীণ রুটে সীমিত সংখ্যক বাস চলাচল করছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এসি (উত্তর) মাজহারুল ইসলাম জানান, নতুন আইনকে কেন্দ্র করে কোনো মহল যাতে সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে এবং আইনটি বাস্তবায়নে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঝালকাঠি: সকাল ১০টা থেকে অভ্যন্তরীণ ১৪ রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস ও মিনিবাস শ্রমিক সংগঠন। হঠাৎ করে এ কর্মসূচিতে ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য যাত্রী। তাদের ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল কিংবা অটোরিকশায় করে অধিক ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
ঝালকাঠি আন্তজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হলে বাস মালিক ও শ্রমিকদের নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে। তাই সরকার বাস মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করে আইনটি সংস্কার করবে, এমনটা প্রত্যাশা করছি। অন্যথায় বাস ধর্মঘট চলতে থাকবে।’
নওগাঁ: জেলায় তৃতীয় দিনের মতো চলছে বাস ধর্মঘট। বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে সব রুটের দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। অন্যান্য যানবাহনও কম হওয়ায় ভাড়া যেমন দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে তেমনি সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা নিয়ে দেখা দিচ্ছে অনিশ্চয়তা।
জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে চালকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তাদের একটাই দাবি, পাস করা নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করতে হবে। তা না হলে এ ধর্মঘট চলতে থাকবে।’
গত বছর রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে আগের আইন কঠোর করে ‘সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে ১৯ সেপ্টেম্বর পাস করা হয়। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় দায়ীদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এ আইন চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হলেও এটি সম্পর্কে সবার স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণ দেখিয়ে আরও দুই সপ্তাহ পর রবিবার থেকে পুরোপুরি কার্যকর করে সরকার। এরপর থেকেই বিভিন্ন জেলায় শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু করেন।