রাজধানীর এক হোটেলে কসমস সংলাপে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সম্পর্কের এক বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে উন্নয়নশীল জায়ান্ট হিসেবে তাদের ন্যায্য জায়গায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি জানান, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক সুযোগ রক্ষায় দুই দেশ একসাথে কাজ করতে পারে।
‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতার গল্পের ওপর গড়ে উঠা যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বিস্তৃত করতে আমরা আগ্রহী,’ বলেন হাইকমিশনার।
ডিকসন বলেন, ব্রেক্সিটের পর নতুন অংশীদারিত্বের জন্য ব্রিটেন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত-বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর দিকে নজর দেবে।
তিনি উল্লেখ করেন যে অধিক ভারসম্যপূর্ণ যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক উভয় পক্ষের জন্য ভালো হবে।
হাইকমিশনারের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্মুক্ত ও অবাধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সমর্থনের মতো বিষয়গুলোতে জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ একসাথে কাজ করতে পারে।
কসমস ফাউন্ডেশন তাদের অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের দ্বিতীয় সংস্করণের অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক: ভবিষ্যতের জন্য পূর্বাভাস’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের (আইএসএএস) প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।
ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মধ্যকার গভীর আবেগময় বন্ধনের বিষয়টি উল্লেখ করে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা ক্রিকেট ও সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্য, অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ দ্বারা আবদ্ধ, যা আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে পূর্ণতা দিয়েছে।’
ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে এখন উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয় এবং এর সম্ভাবনা শুধু সমুদ্র অর্থনীতি নয়, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো-প্যাসিফিক) পরিবেশেও বাড়ছে।
হাইকমিশনার ডিকসন বলেন, ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশে থাকা সুযোগ-সুবিধাগুলো তুলে ধরতে লন্ডনের বাংলাদেশি হাইকমিশনের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যও কাজ করবে।
প্রতি বছর ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি পাওয়া সাড়ে ১৬ কোটি সম্ভাব্য ভোক্তার একটি দেশ ব্যবসার জন্য এক আকর্ষণীয় প্রস্তাব হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যেসব বিষয় বাংলাদেশে ব্যবসা করা কঠিন করে তুলে সেগুলো সমাধানে আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে তা বেসরকারি মূলধন আকর্ষণে ভালো হবে।
‘২০২১ সালে বাংলাদেশের ৫০তম জন্মদিন উদযাপনকালে আমরা আমাদের অংশীদারিত্ব এবং এখানে যুক্তরাজ্যের অনন্য ভূমিকা তুলে ধরব,’ যোগ করেন তিনি।
‘রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারে তৈরি’
ডিকসন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা হচ্ছে এমন বিষয় যার সাথে বাংলাদেশের কিছু করার ছিল না, তবে দেশটি ‘অবিশ্বাস্যভাবে উদার’ হয়েছে।
‘এ সমস্যা মিয়ানমারে তৈরি’ জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব আইনের বাইরে থেকে গিয়ে ‘মৌলিক অবিচারের’ শিকার হয়েছে।
মিয়ানমার জাতিগত নিধনে অংশ নিয়েছে জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, ‘এটা রোহিঙ্গাদের জন্য...অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য...মিয়ানমারের জন্যও একটি সমস্যা।’
এ কঠিন সমস্যা সমাধানে প্রত্যেককে সাহায্য করার উপায় বের করতে যুক্তরাজ্য আলোচনা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক সেলিনা মহসিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এটিএম জহিরুল আলম, একে খান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি সচিব সালাউদ্দিন কাশেম খান, অ্যাডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খানের মতো বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব এবং সাবেক কূটনৈতিকরা বক্তব্য দেন।
তারা দুদেশের মধ্যে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও শিক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। সেই সাথে রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ কমনওয়েলথ ও চলমান বৈশ্বিক ইস্যুগুলো আলোচনায় স্থান পায়।