তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী পর পর ১০ বছর যাবৎ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের সপ্তাহে যোগ দিয়ে যাচ্ছেন এবং গুটিকয়েক বিশ্ব নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন যিনি এমডিজি ও এসডিজি উভয়টি গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার বাংলাদেশ মিশন জানায়, সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বহুপাক্ষিকতাবাদ ও শান্তির কূটনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের প্লেনারি সভায় বক্তব্য প্রদানকালে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূথ মাসুদ বলেন, বহুপাক্ষিকতাবাদ অর্জন সম্ভব হবে যদি জাতিসংঘ ও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা সার্বিকভাবে সকল অংশীজন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে এজেন্ডা ২০৩০ সহ অন্যান্য প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এবং নবসৃষ্ট সুযোগগুলো পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে একযোগে কাজ করে যায়।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবারই প্রথমবারের মতো ‘বহুপাক্ষিকতাবাদ ও শান্তির কূটনীতি’ বিষয়টির স্মরণে এবং এ জাতীয় পদক্ষেপগুলো আরও বেগবান করতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ আন্তর্জাতিক দিবসটি পালন করে।
সভায় বহুপাক্ষিকতাবাদ ও শান্তির কূটনীতির প্রেক্ষাপটে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণের কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
জাতির পিতার সেই ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, ‘এই দুঃখ দুর্দশা সংঘাতপূর্ণ বিশ্বে জাতিসংঘ মানুষের ভবিষ্যত আশা আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল’।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ ‘শান্তির সংস্কৃতি’ ধারণাটি জাতিসংঘের মূল ধারায় সংযুক্ত করা, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই শান্তি ধারণাটি সমর্থন ও এগিয়ে নেয়াসহ বহুপাক্ষিক প্লাটফর্মে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক আশ্রয়দানের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, জাতিসংঘের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার এ এক অনন্য নজির।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্বিপাক্ষিক পদক্ষেপও অব্যাহত আছে মর্মে তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সরকার উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং টেকসই উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডার বাস্তবায়নে ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জাতিসংঘ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পদক্ষেপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এর থেকে প্রতীয়মান হয় বহুপাক্ষিকতাবাদ এর প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ও বিশ্বাস কতটা গভীর।
জলবায়ু পরিবর্তন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, সংঘাত, উগ্র-জাতীয়তাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, অসাম্য, সাইবার আক্রমণ, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট ইত্যাদি বিষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাষ্ট্রদূত মাসুদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ভাবি শুধু উন্নয়নশীল দেশের জন্যই বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রয়োজন অন্যদের জন্য নয় তাহলে আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে শুধু চ্যালেঞ্জই রয়েছে এটি ঠিক নয়, আমরা এর নেতিবাচক দিকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং এর অফুরান সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে মানব জাতির কল্যাণ সাধন করতে পারি।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘বহুপাক্ষিকতাবাদ ও শান্তির কূটনীতি’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বহুপাক্ষিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং শান্তির কূটনীতির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বিরোধসমূহের মীমাংসার ক্ষেত্রে এই দিবসটি পালন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে গৃহীত রেজ্যুলেশনটিতে বিধৃত রয়েছে।