তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই উন্নয়ন প্রকল্প নেব, কিন্তু উন্নয়ন হতে হবে মানুষের জন্য। মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কোনো উন্নয়ন (প্রকল্প) হওয়া উচিত নয়।’
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্প উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ লেখক মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয় তাদের যথা সময়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য মানুষের জীবনমান উন্নত করা এবং তারা সবাই যাতে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে।
কক্সবাজারের উন্নয়ন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় উপকূলীয় জেলাগুলো অবহেলিত ছিল এবং সেখানকার লোকজন অমানবিক জীবনযাপন করতেন। ‘এক সময় কক্সবাজারে কিছু ছিল না এবং পুরো অঞ্চলের মানুষ শুধুমাত্র লবণ ও পান চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তার সরকার কক্সবাজারকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার জেলার মাতারবাড়ীসহ চর এলাকাগুলোতে শিল্প কারখানা স্থাপন করছে।
তিনি বলেন, মাতারবাড়ীতে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লা জেটি ও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া, সেখানে একটি বহুমুখী সমুদ্রবন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সড়ক, রেল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
জাপান, চীন, ভারত ও কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যে মাতারবাড়ীতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মাতারবাড়ী শুধু ওই অঞ্চল নয়, দেশের অর্থনীতিতেও বিরাট বড় ভূমিকা পালন করবে, যোগ করেন তিনি।
কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক সমুদ্র সৈকত রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকার সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার-লেন মহাসড়ক নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কক্সবাজারের সাথে রেল সংযোগ বসানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ রুটে দ্রুত গতির ট্রেন চালু করা হবে, বলেন তিনি।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ার কাজ চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এমআইডিআই প্রকল্পের একটি মহাপরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবদের পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তাদের মতে, মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত কোস্টাল ইকোনমিক করিডর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এ করিডরের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সীতাকুণ্ডু অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্প এবং সাবরাং ইকো ট্যুরিজম পার্ক।
এমআইডিআই প্রকল্পটি একটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ কর্মসূচি জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রকল্প এলাকায় ভূমি ব্যবহার জরিপের খসড়া তৈরির কাজ করছে।
প্রকল্প এলাকায় চিহ্নিত ৩৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১৫টি নিজেদের বিনিয়োগে বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান সরকার। জাইকা প্রস্তাবিত এ বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার,’ জানান কর্মকর্তারা।