মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বৃস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে এক বিশেষ সভায় তিনি এ কথা বলেন বলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের ফেব্রুয়ারি মাসের সভাপতি ইকোটরিয়াল গিনি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের বিষয়ে ব্রিফ করেন। সেই সাথে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের বাইরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সভায় বক্তব্য রাখে।
পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমাদের পূর্ণ আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে দীর্ঘদিনেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করা যায়নি। এ থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে? প্রতিবেশী দেশের নাগরিক যারা নিজ দেশে বর্বরোচিত নৃশসংতা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার, এমন নিগৃহীত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তাদের মানবিক আশ্রয় দেয়ার জন্যই কি বাংলাদেশকে মূল্য দিতে হচ্ছে?’
সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এক ইঞ্চি ভূখণ্ড যাতে কোনোভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে না পারে সে বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু দুঃখজনক, মিয়ানমার প্রায়ই অভিযোগ করে থাকে যে আমরা তাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দিচ্ছি। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টির চেষ্টা বা সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দানে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ, ইচ্ছা, আগ্রহ ও উদ্দেশ্য নেই। বরং আমরা সর্বদাই সন্ত্রাস দমন বিষয়ে মিয়ানমারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।’
রোহিঙ্গা সংকটের শিকড় মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সেখানে রয়েছে বলে দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব। সেই সাথে তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দেয়ার ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত নানা সংকটের কথাও তুলে ধরেন।
শহিদুল হক আরও বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা-প্রণোদিত, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন ছাড়া আর কিছুই চাই না। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা নিরাপত্তা পরিষদের অব্যাহত অভিভাবকত্ব প্রত্যাশা করি।’
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের বিবেচনার জন্য তিনটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এগুলো হল- কফি আনান অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন, নিরাপত্তা পরিষদের পুনরায় কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত অসামরিক ‘সেফ জোন’ সৃষ্টি করা।
এছাড়া, প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া প্রস্তাব দেন পররাষ্ট্র সচিব। যার মধ্য রয়েছে- রোহিঙ্গাদের ওপর সৃষ্ট সহিংসতা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ঘটনার দায়বদ্ধতা নিরূপণ, ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির সাথে মিয়ানমারের হওয়া ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক পূর্ণ বাস্তবায়ন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অবস্থিত আইডিপি ক্যাম্পগুলো তুলে নেয়া ও সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া।
এদিকে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার বলেন, সংকট সমাধানে দৃশ্যমান পদক্ষেপ অত্যন্ত ধীর গতির হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সহযোগিতায় এর সমাধান সম্ভব হতে পারে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাথে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি উঠে আসে রোহিঙ্গা সংকট। দীর্ঘমেয়াদি এ সমস্যার বিষয়ে মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদারতা ও মানবিকতা দেখিয়েছে তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে যে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধন করে চলেছে তারও প্রশংসা করেন গুতেরেস।