নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক নারীর ধর্ষিত হওয়া ও আত্মহত্যার ঘটনায় করা রিট আবেদনের শুনানিকালে মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
হাইকোর্ট বলে, ‘পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে প্রতিদিন দেখছি সারাদেশে দেড় বছরের শিশু থেকে শুরু করে ছয় সন্তানের জননী পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই দেশে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
এ ধরনের ঘটনা রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করে আদালত।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আদালতকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষও এ ধরনের ঘটনায় জড়িত হয়ে পড়ছেন।
তখন আদালত ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ব্যাপারে বলে, ‘ছাত্র-শিক্ষক, গভর্নিং বডি ও রাজনীতিবিদদের আরও সচেতন হতে হবে। গভর্নিং বডি প্রশ্রয় না দিলে মেয়েটার আজ এ অবস্থা হতো না।’
সুবর্ণচরের চরমাকছুমুল গ্রামে ২ মার্চ এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ধর্ষক আলাউদ্দিনকে হাতেনাতে ধরে স্থানীয় ইউপি মেম্বর নুরুর কাছে নেয়া হলে ওই নারী পরকীয়ায় জড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণে ঘটনার মীমাংসা করে দেন। পরে নির্যাতিত নারী আত্মহত্যা করেন।
এ ধরনের অপরাধ সালিশে মীমাংসাযোগ্য নয় জানিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান। তিনি শুনানিতে বলেন, ধর্ষণের ঘটনাটি ৬০ হাজার টাকায় মীমাংসা করে দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য। পরে ধর্ষককে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নারী বিচার না পেয়ে লোকলজ্জায় আত্মহত্যা করেন।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট তথাকথিত সালিশে ঘটনাটি মীমাংসা করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। একই সাথে এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, সুবর্ণচরের ওসি, ইউপি মেম্বর নুরু, ধর্ষক আলাউদ্দিনসহ মোট ছয়জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।