স্থানীয়রা তাকে ‘স্মার্ট’ রিকশাচালক বলেন। কারণ স্মার্ট লোকজন তার রিকশাতেই বেশি চড়তে পছন্দ করেন। ফ্যাশনের দিকে বিশেষ নজর দেয়ার পাশাপাশি তিনি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলারও চেষ্টা করেন। তার বুদ্ধিমত্তা ও আচরণে মুগ্ধ হন যাত্রী ও অন্য সবাই। তাই অধিকাংশ যাত্রীর কাছ থেকে তিনি বকশিশ হিসেবে পান বাড়তি ভাড়া।
মো. ওমর আলী কচুয়া উপজেলার ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের কাদিরখিল গ্রামের বাসিন্দা মো. আবিদ আলীর ছেলে।
ওমর আলী জানান, তিনি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। এরপর অভাবের কারণে তার লেখাপড়া এগোয়নি। বর্তমানে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে তার অভাবী সংসার।
ওমর আলী বলেন, তিনি প্রায় এক বছর ধরে কচুয়াসহ ও পাশ্ববর্তী এলাকায় রিকশা চালান। স্মার্ট হয়ে রিকশা চালানোতে তিনি সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই শখ করে আমার রিকশায় ঘুরে বেড়ায়, আমার সাথে সেলফি তোলে, আমায় চা-বিস্কুট খাওয়ায়। এগুলো আমার বেশ ভালো লাগে। এছাড়া অনেকেই আমার আচরণে খুশি হয়ে ২০ টাকার ভাড়া অনেক সময় বেশি দিয়ে থাকেন। এভাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হয়। স্মার্ট হওয়ায় তাকে কোনো যাত্রী তুচ্ছ করে না। খারাপ ব্যবহারও করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার আটটি প্যান্ট, আটটি শার্ট, তিন জোড়া জুতা, তিনটি টাই আর শীতে ব্যবহারের জন্য দুটি ব্লেজার আছে। এসব আমি রিকশা চালিয়ে রোজগারের টাকা দিয়েই কিনেছি।’
কেনো এই বেশে রিকশা চালান? এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর আলী বলেন, আমাদের জন্য তো কোট-স্যুট টাই পড়া নিষেধ না, আজকাল ‘মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুন্দর করে সাজানো হয়। তাই আমিও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পরিপাটি/ স্মার্ট হয়ে সুন্দর পোশাক পরে প্রতিদিন রিকশা চালাতে রাস্তায় বের হই। এতে করে একই সাথে দুটো লাভ হয়, প্রথমত যাত্রী বেশি পাই, দ্বিতীয়ত ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়। তাই শরীর-মন দুটিই ভালো থাকে।
তিনি আরও বলেন,‘ইনশাল্লাহ যতদিন বাঁচবো, সুন্দর পোশাক পরে রিকশা চালানোর চেষ্টা করব।’
ওমর আলীর এই অবস্থা জানতে চাইলে অন্য রিকশাচালক অহিদ, মজিব, শুক্কুরসহ কয়েকজন বলেন, ‘আমাগো (আমাদের) গর্ব ওমর আলী। হেয় (সে) ভালা (ভালো), আধুনিক স্মার্ট’, হেয় অইলো (হলো) ডিজিটাল যুগের রিকশাচালক।’