রাস্তার অলিতে-গলিতে ঘুরে ঘুরে রান্না করা খাবার অভুক্ত কুকুরদের মুখে তুলে দিচ্ছেন তারা। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পশুদের প্রতি এমন ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্তের ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন ওই দম্পতি।
তারা হলেন- কুষ্টিয়ার পোল্টি ও ফিস ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেএনবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রোটারি ক্লাব অব কুষ্টিয়া ওয়েস্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান কামরুজ্জামান নাসির ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান চামেলি জামান।
সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, নিজে গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন রাতে কুষ্টিয়া শহর এবং শহরতলীর প্রতিটি রাস্তা এবং অলি-গলিতে ঘুরে ঘুরে কুকুরের মুখে রান্না করা খাবার তুলে দিয়ে গভীর রাতে বাসায় ফিরছেন কামরুজ্জামান নাসির ও তার স্ত্রী চামেলি জামান।
করোনার কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর গত মার্চ মাস থেকে প্রতিদিন এভাবে প্রায় শতাধিক কুকুরের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন পশুপ্রেমী এ দম্পতি।
শুধু পশু নয় করোনার দুর্দিনে তারা দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিজ ইউনিয়ন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খোর্দ্দ আইলচারা এবং বটতৈল ইউনিয়নের এক হাজার দুস্থ মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন ১৫ দিনের খাবার। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেও অর্থ সহয়তা দিয়েছেন। এছাড়াও স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর মেয়রসহ ত্রাণ নিয়ে যারা কাজ করছেন সেসব প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন এই দম্পতি।
সোমবার দিবাগত রাত ১১টা। চারিদিকে শুন শান নীরবতা। রাস্তায় কুকুর ছাড়া কোনো মানুষজন নেই। এর মধ্যে কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ার রাস্তায় একটি কালো রংয়ের জিপ গাড়ি এসে থামলো। ৪-৫ টা কুকুর রাস্তায় শুয়ে আছে। গাড়ির শব্দ পেয়ে ওরাও উঠে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে কুকুরগুলোর দিকে এগিয়ে আসলেন একজন পুরুষ আর একজন নারী। খাবারের প্যাকেটগুলো রাস্তায় রেখে দিতেই কুকুরগুলো খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে গেল।
এ দৃশ্য দেখে ইউএনবির এ প্রতিবেদক গাড়ির সামনে এগিয়ে যান এবং পশুপ্রেমী ওই দম্পতির সাথে কথা বলেন।
কামরুজ্জামান নাসির বলেন, প্রাণী জগতে কুকুর প্রভুভক্ত ও মানুষের উপকারী বন্ধু। মনিবের জন্য জীবন দেয়ার মতো অসংখ্য নজির এদের রয়েছে। এদের একটি অংশ গৃহপালিত। তবে এদের বড় একটি অংশেরই পথেই জন্ম, পথেই বসবাস। তাদের খাবারের জোগান হয় ডাস্টবিন ও নালা-নর্দমায় ফেলে দেয়া গৃহস্থালি ও হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় এবং গৃহবন্দি মানুষের জীবনযাপনে সীমিত রান্না বান্নার কারণে ডাস্টবিন ও নালা-নর্দমায় খাবারের উচ্ছিষ্ট নেই বললেই চলে। এ কারণে পথের এসব কুকুরগুলোকে অভুক্তই থাকতে হচ্ছে।
‘মধ্যরাতে ক্ষুধাকাতর কুকুরের আকুল বিলাপে আমার মন কাঁদে এবং আমার মতো অনেকেরই হয়তো খারাপ লাগে। এই পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য নয়, খোদাসৃষ্ট সকল প্রাণীকূলের জন্যই এই পৃথিবী,’ বলেন তিনি।
এভাবে প্রতিদিন রাতে কুষ্টিয়া শহর এবং শহরতলীর এনএস রোড, মজমপুর, চৌড়হাস, হাউজিং, নিশান মোড়, বটতৈলসহ মূল সড়ক ও অলি গলিতে ঘুরে ঘুরে কুকুরদের রান্না করা খাবার দিচ্ছেন এই দম্পতি।
রোটারিয়ান চামেলি জামান বলেন, ‘মানুষের একতরফা কর্তৃত্বে মানুষই শ্রেষ্ঠ। শুধু মানুষই নয়, সকল প্রাণীও প্রকৃতির সঙ্গী। করোনা দূর্যোগকালীন দুঃসময়ে আমরা রাস্তায় ঘুরে কুকুরদের খাবার দিয়ে যাচ্ছি। এই দুর্দিনে মানুষের পাশাপাশি একটি পশু পাখিও যেন না খেয়ে থাকে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সে দিকে খেয়াল রাখা।’